ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫২

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫২
মিথুবুড়ি

‘রাতের চতুর্থ প্রহর চলমান। অনবরত বাজতে থাকা কলিং বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দের ইস্তফা ঘটিয়ে দরজা খুলতেই ঘাবড়ে যায় ডক্টর মালিহা,বিধ্বস্ত অবস্থায় রিচার্ডকে দেখে৷ রিচার্ডের অর্ধ শরীর রক্তে রঞ্জিত। সেদিন হসপিটালে রিচার্ডকে চিনতে না পারলেও পরবর্তীতে খুব ভালো করেই চিনতে পেরেছিলেন ডক্টর মালিহা। বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা ভয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে উদ্যত হলে ভেসে আসে রিচার্ডের কণ্ঠস্বর। ভাঙা, নিস্তেজ সংমিশ্রণে।

“ওর এমন কোনো অংশবিশেষ আছে, যেটা দিয়ে ওকে অনুভব করতে পারব?”
‘আশ্চর্য হলেন ডক্টর মালিহা। চোখজোড়া কিঞ্চিৎ ছোট হয়ে এল,”মানে?”
“মানে আমার ছেল,,শব্দটা কণ্ঠনালিতে পিষে দিল রিচার্ড।অতঃপর শক্ত ঢোক গিলে বলল,” আমার সন্তান। ওকে অনুভব করার মতো অবশিষ্ট কি কিছু আছে?”
‘ডক্টর মালিহা স্তব্ধ। তাকে স্তব্ধ থাকতে দেখে রিচার্ড এবার ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠল,”স্পিক আপ৷ কোথায় আমার সন্তানের ধ্বংসাবশেষ?”
‘শিউরে উঠলেন মহিলা। নতজানু হয়ে বলল,”দেখুন মিষ্টার, ওটা তিন মাসের একটা ভ্রূণ ছিল,রক্তের স্রোতে ভেসে গিয়েছে।”এই বলে বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা আবারও দরজা লাগিয়ে নিতে চাইলে রিচার্ড পা দিয়ে আঁটকে দেয়। কোমরে গুঁজে রাখা গান বের করে সরাসরি তাক করল তার মস্তক বরাবর।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘নিস্তব্ধ করিডোরের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে রিচার্ড। বাতাস ভারী, সময় যেন থমকে গেছে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ডক্টর মালিহা তার হাতে তুলে দিল রক্তে ভেজা এক টুকরো সাদা বেডশিট। রিচার্ড জানে এটা তার সন্তানের রক্ত নয়। যেদিন এলিজাবেথের গর্ভপাতে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল আর সেদিন সেই বেডশিটও ধৌত করে ফেলা হয়েছে,যা সিক্ত হয়েছিল ঝরে পরা ফুলের বিধ্বস্ততায়। তবুও এক উন্মাদ পিতাকে শান্তনা দিতে সত্যকে ছলনার মোড়কে ঢেকে দিয়েছে তারা। কারণ রিচার্ড তার সন্তানের রক্তকে স্পর্শ করে হলেও তাকে অনুভব করতে চাইছে। ব্লাড ব্যাংকের রক্ত মেখে সাজানো এই কৃত্রিম স্মৃতিচিহ্ন তুলে দেওয়া হল রিচার্ডের হাতে। রিচার্ড নিজেও জানে এটি শুধু একটা ভ্রান্ত সান্ত্বনা।

তবুও সে মেনে নিল। নিজের মনকেও সেই মিথ্যেতেই প্রবোধ দিল। রক্তমাখা কাপড়খণ্ড বুকে চেপে ধরতেই তার ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে গেল। নিঃশব্দে চোখ বুজল সে। যেন অন্তত এই ছলনাতেই একবার সন্তানের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে। তারপর ধীর পায়ে এক বোবা যন্ত্রণার সঙ্গী হয়ে করিডোর ছাড়ল রিচার্ড।
‘রিচার্ডের গাড়ি থামল গোরস্থানের সামনে। নিস্তব্ধ রাত। মাথার উপর চাঁদ ফ্যাকাসে আলো ছড়িয়ে রেখেছে। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে সে দাঁড়াল বাবার কবরের সামনে। কিছুক্ষণ একগুঁয়ে দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুকনো ঝরঝরে মাটির পানে। যেন কোনো অদৃশ্য সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নীরবে একপাশে বসে মাটি সরিয়ে ছোট্ট একটা গর্ত করল। তারপর রক্তে মোড়ানো বেডশিটটা গর্তে রেখে মাটি চাপা। অতঃপর হাত বুলিয়ে দিল সদ্য তৈরি ছোট্ট কবরটার উপর। আঙুলের ছোঁয়ায় মাটি ঝরে পড়ল। সে হঠাৎ করেই আনমনে ফিসফিসিয়ে বলল,

“তোমার মাম্মা তো তোমাকে পাপার ধ্বংসের মন্ত্র হিসেবে আনতে চেয়েছিল। কিন্তু তুমি তো না এসেও আমাকে ধ্বংস করে দিলে, বাবা।”
‘সন্তান হারানোর শোকে দু’জনেই বিধ্বস্ত অথচ পরিস্থিতি তাদের সেই কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার সুযোগটুকুও দিচ্ছে না।রিচার্ড কষ্ট চেপে রাখে আর সেই চেপে রাখা ব্যথা তাকে তিলে তিলে শেষ করছে। প্রতিশোধস্পৃহায় জ্বলতে থাকা সে একে একে শেষ করে যাচ্ছে দোষীদের। তার হাতে রক্ত জমছে কিন্তু বুকের শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ হচ্ছে না। অপরদিকে এলিজাবেথ—সে নিজেকে সংযত করতে পারে না। বুক ভাসিয়ে কাঁদে অথচ তার অশ্রু ফুরায় না।ঘুম তার কাছ থেকে বহু দূরে। রিচার্ড বেরিয়ে যেতেই হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সন্তানহারা মায়ের বুকে দগদগে শূন্যতার ক্ষত আরও গভীর হয়ে যায় রাত্রির গভীরতার সাথে।

‘সূর্যের স্বর্ণালি আলো ছড়িয়ে পড়েছে ধরিত্রীর বুকে। রিচার্ড সকালে বেরিয়ে বেলা গড়াতেই ম্যানশনে ফিরল। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ল এলিজাবেথ সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে অথচ চোখজোড়া লালচে, ফুলে আছে। রিচার্ডের দিকে একপলক তাকিয়ে এলিজাবেথ আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রিচার্ড ঠিকই দেখল তার দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। মুখে নিঃসঙ্গ এক বাঁকা হাসি এঁকে, হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বিড়বিড় করল রিচার্ড,
“যাক বাবা, এখন তাকালেও বুঝি ফোস্কা পড়ে! চোখ দিয়ে খাওয়া যায় না, খেতে হলে কাছে আসতে হয়—যেটা আমার বউ আপাতত দিচ্ছে না।”
“আর কখনো দিবেও না।”
‘রিচার্ড মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াল। ওমা! এই মেয়ের কান এত খাড়া হল কবে? শুনে ফেলল নাকি! সে সামান্য অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“না দিলে নেই। আমি কি লোভী নাকি? এক-দুইবার নেউরা হয়ে পিছন ঘুরব, তৃতীয়বার সোজা দরজা আটকে বেডে চেপে ধরব!”

‘সূক্ষ্ম বিদ্রুপে ভরপুর গলায় এলিজাবেথ দ্বিগুণ ঝাঁঝালো স্বরে বলল,”একবার চেপে ধরেই দেখুন না? সোজা চাচার বাড়ি চলে যাবো!”
‘রিচার্ড ঠোঁট বাঁকিয়ে কুটিল হাসল,”যাওয়ার জন্য তো আগে পা নিচে ফেলতে হবে। টাস্ট মি রেড, আমি একবার চেপে ধরলে তুমি সহজে সোজা হতে পারবে না। বলছি কিন্তু পাস্ট এক্সপেরিয়েন্স থেকেই!”
‘এলিজাবেথ ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল, ঠোঁটে একটুখানি বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলল,”ওহ তাই বুঝি? তাহলে চলুন না, সকাল সকাল একটু বিসমিল্লাহ করি!”
‘রিচার্ড কুণ্ঠিত চোখে চাইল, তবে মুখে ধরা দিল না বিস্ময়।
“সকাল সকাল বিসমিল্লাহ মানে?”
‘এলিজাবেথ ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, কণ্ঠে ছলনার মিষ্টি সুর,”ওই-যে… একটু কাছে এলাম, একটু আলাপ করলাম, একসাথে কিছু খেলাম… তারপর, নাহয় মুভ আসলে বিসমিল্লাহ করলাম!”

“কি করলাম?”
“ওটাই, যেটা করতে খুব ইচ্ছে করছে।”
“কি ইচ্ছে করছে?”
‘এলিজাবেথ এবার আরেক ধাপ এগিয়ে এলো৷ স্বর আরও মোলায়েম, আরও রহস্যময়।
“যেটার জন্য মন ছটফট করছে।”
‘রিচার্ড ঠোঁট ভেজাল, গলা শুকিয়ে এল যে, “কিসের জন্য ছটফট করছে?”
‘এলিজাবেথ একদম সামনে এসে দাঁড়াল, শ্বাস প্রায় মিশে গেল রিচার্ডের সাথে। হিসহিসিয়ে বলল,”অনেক বেশি ইচ্ছে করছে, বিশ্বাস করুন। আমি আর একটু পারছি না।”
‘রিচার্ড শুকনো ঢোঁক গিলল, তার ঠোঁট শুকোতে শুরু করছে ইতিমধ্যে। গাঢ় কণ্ঠ শব্দ তুলল,
“আমি শুরু করব, না তুমি?”

‘এলিজাবেথ চোখ নামিয়ে এক মায়াবী হাসি দিল, তারপর পুরুষালী রুক্ষ চিবুকে আঙুল ছুঁইয়ে ফিসফিস করল,”আজকে না-হয় আমিই করলাম। টাস্ট মি, মি. রিচার্ড… এত সুখ দেবো, কোনোদিন ভুলতে পারবেন না!”
‘বলেই এলিজাবেথ হাঁটু গেঁড়ে দিল রিচার্ডের চাঁদে। মুহূর্তেই কুকড়িয়ে গেল শক্ত গোছের রিচার্ড। ব্যথায় চোখ-মুখ খিঁচে উঠে তবুও শরীর টলেনি। এলিজাবেথ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দূরে সরে গিয়ে ক্ষুব্ধ স্বরে বলল,
“দ্বিতীয়বার আমার কাছে আসার কথা কল্পনাও করলে, আমার হাঁটু আরেক দাপ উপরে উঠবে বলে দিলাম।”
‘রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে যন্ত্রণার ঢেউ সামলে নিল। তারপর শান্ত গলায় বলল,
“এখন চোখের দিকে চেয়ে কথা বলছ নাহ? টাস্ট মি, রেড… তোমাকে নিয়ে আমি যা কল্পনা করি, সেসব জানতে পারলে লজ্জায় তুমি কখনো আমার সামনেই আসতে পারতে না।”

‘এলিজাবেথ থতমত খেয়ে গেল। যেন গ্যাসবিহীন বেলুন, মুহূর্তেই নিস্তেজ হয়ে গেল তার রাগ। রিচার্ডের ঠোঁটে এক ধরনের বাঁকা হাসি ফুটে উঠেছে। তার নজর এবার গেল এলিজাবেথের ব্লাউজের দিকে। একটু বেশিই ফিট, যার জন্য এলিজাবেথ বারবার আঁচল ঠিক করছে, পিঠ ঢাকার চেষ্টা করছে। রিচার্ড নাক কুঁচকালো। স্বামীর সামনে এত লজ্জা কিসের? মেয়েদের কাজ তো স্বামী পকেট মারা আর হক মারা! সে হাতঘড়ি খুলে এলিজাবেথের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

“কি হয়েছে?”
‘এলিজাবেথ নড়েচড়ে উঠল, আঁচল শক্ত করে ধরে বলল,
“চোখের দৃষ্টি সংযত করুন। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
‘রিচার্ড ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল, “কেন?”
“ব্লাউজটা একটু বেশিই ফিট।”
“কেন? আগের সাইজেরই তো এনেছিলাম।”
‘এইটুকু বলেই থামল রিচার্ড। এলিজাবেথের মুখ লজ্জার আভায় ঢেকে গেছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, চোখ নামিয়ে রেখেছে। রিচার্ড মেয়েটাকে নিরবে কিছুক্ষণ দেখল—স্নিগ্ধ, মায়াবী, অথচ ভয়ানক অবাধ্য এই মেয়েটা। শান্ত স্বভাবের হলেও, ঠোঁটকাটা রিচার্ড কায়নাতের মজার ইচ্ছেটা সকাল সকাল জেগে উঠল। সে তার অবাধ্য নারীকে আরেকটু হেনস্তা করতে ভ্রু নাচিয়ে রাশভারী গলায় বলল,

“আমার রাশি খুবই ভালো বুঝলে রেড?যেটা ছুঁই, সেটাই বৃদ্ধি লাভ করে।”
‘কানের সরু পথ বেয়ে গলিত লাভার মতো কথা গড়িয়ে পড়ল, শিরায় শিরায় ছড়িয়ে গেল তপ্ত শিহরণ। এলিজাবেথ শিউরে উঠে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল সাথে সাথে। রিচার্ডের ঠোঁটে এক চতুর হাসি। তবু সে সংযত ভঙ্গিতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। পেছন থেকে এলিজাবেথের স্বর ভেসে এল। নরম, শীতল আগুনের মতো
“সেই ছোঁয়া পুরো কায়াতে মেখে দিন না। আপনাতে যে বিলীন হওয়ার সাধ জাগছে, সাহেব।”
‘পদক্ষেপ থমকে গেল রিচার্ডের। ধীরে ধীরে ঘুরে তাকাল রিচার্ড।এলিজাবেথের চোখের দিকে চোখ পড়তেই হাত থেকে শার্ট খসে পড়ল মেঝেতে। তার ইস্পাতের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণে যেন এক লহমায় চিড় ধরল। এলিজাবেথ আলগোছে কাঁধ থেকে আঁচল ফেলে দিল। উন্মুক্ত লালচে ত্বকে চোখ পড়তেই রিচার্ড অনুভব করল এক দুর্নিবার টান তাকে গিলে খাচ্ছে। তার কণ্ঠস্বর গভীর খাদে নেমে গেল, শব্দেরা ভারী হয়ে এল,

“সত্যিই তুমি চাচ্ছো?”
‘এলিজাবেথ কোনো শব্দ করল না, শুধু নিঃশব্দে মাথা নড়াল। রিচার্ডের গলা শুকিয়ে আসে পুরোপুরি। আরও একবার ঢোঁক গিলল সে। অতঃপর দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেল এলিজাবেথের দিকে—একটি মাত্র স্পর্শে মিলনের সীমানা মুছে দিতে।
“তাহলে চলো, আজ বিড়ালটা মারায় যাক মাই ফাকিং ডার্ রেড।”
‘সে এক ধাপে এগোতেই এলিজাবেথ বিদ্যুৎগতিতে ছিটকে দূরে সরে গেল। চোখ কুঁচকে বলল,
“ছিঃ! এত বড় গ্যাংস্টার হয়ে সামান্য বিড়াল মারার কথা বলছেন? আমি তো আরো অধীর আগ্রহে বসে আছি বাঘ কাবু করার জন্য! আহ, দূর! মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল। সরুন তো! মুড এলে পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। ধন্যবাদ! এখন আসতে পারুন।”

‘রিচার্ড বিস্ময়ে এক দফা, দুই দফা তাকিয়ে থাকল। এই মেয়ে ইচ্ছাকৃতভাবেই তাকে হেনস্তা করছে বুঝতে অসুবিধা হলো না। মাথায় হাত চলে গেল তার। বউ গবেষণারগভীর চিন্তায় ডুবে গেল।
“এটা কার বউ? আমার বউ তো এমন ছিল না। রাতারাতি এত বড় পরিবর্তন কিভাবে? এটা কি আসলেই আমার বউ? নাকি অন্য কারোর বউ তুলে নিয়ে এলাম!”
“ভরণপোষণ দিতে না পারলে তুলে নিয়ে এসেছেন কেন? ফাজলামো হচ্ছে? কিছু দিতে না পারলে বলেন, এখনই বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি।”
‘রিচার্ড বিস্মিত চোখে চাইল, “মানে?”
‘এলিজাবেথ ভেঙিয়ে বলল, “মানে লাগাচ্ছেন আবার! জামাকাপড় কোথায়? শাওয়ার নিয়ে কি পরব? একটা শাড়ি কতক্ষণ পরে থাকা যায়?”

‘রিচার্ড ঠোঁটের কোণে একপ্রস্থ দুষ্টু হাসি টানল,”বেশি কষ্ট হলে খুলে ফেলো। আমার সামনে এটাও পরার দরকার নেই। আফটার অল, আমরা আমরাই তো।”
“থাকুন আপনি আপনার অসভ্যতামি নিয়ে! চলে যাচ্ছি আমি।”
‘বলেই গমগমে পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল সে। রিচার্ড হতবিহ্বল। এক দৌড়ে এলিজাবেথের পথ আটকাল।
“কুল রেড! প্লিজ, কাম ডাউন ওয়াইফি। সবকিছুর অ্যারেঞ্জ করা হচ্ছে, প্লিজ গিভ মি সাম টাইম!”
‘এলিজাবেথ ভেংচি কাটল। একটুও ভয় না পেয়ে সোজা তাকাল রিচার্ডের তীক্ষ্ণ চোখে। এখন আর তার চোখে জড়তা নেই, ভয় নেই, কেবল অটল দৃঢ়তা। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“আমি পারব না এই ভূতুরে বাড়িতে সংসার করতে। আমি স্বাভাবিক মানুষ, দুনিয়ার মানুষ। আমার সংসার হবে স্বাভাবিক দুনিয়ার মতো। আমার সংসারে যেন আপনার অন্ধকার দুনিয়ার ছায়া না থাকে—সাফ বলে দিলাম!”
‘রিচার্ডের চোখমুখ বদলে গেল। ক্রোধ তড়তড়িয়ে বাড়ছে। মটমট করছে চোয়াল। এলিজাবেথ কেমন মিইয়ে গেল। তবে রাগল না রিচার্ড। ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলল। এতে গলার স্বর আরও ভারী হয়ে এলো।
“ওকে। কালকেই ম্যানশনের রঙ চেঞ্জ করা হবে। ভিতরে যাও এখন।”
‘এলিজাবেথ আড়ালে ঠোঁট কামড়ে হেসে ভেতরে যেতে যেতে বলল,

“আমি এই সংসারের কর্তী, খুনির আসামি নই। আমাকে নজরদারিতে রাখার জন্য পাঠার মতো দেখতে এত এত লোক রাখার দরকার নেই টাকা খরচ করে। দুপুরে লনে আমি স্লিভলেস ব্লাউজ পরে হাঁটতে চাই। আমি চাই না,আমার সৌন্দর্য আমি অন্য কোনো পরপুরুষের সামনে ফুটে উঠুক৷
‘রিচার্ড চোখ বুজে স্মিত হাসল। সেই চিরচেনা হাসি, যা দন্তপাটে কখনো দেখা দেয় না, বরং গভীর হয়ে জমে থাকে ঠোঁটের কোণে। ধীর পায়ে এগিয়ে এলিজাবেথের পিছু নিল।

মেঝেতে পড়ে থাকা শাড়ির আঁচল তুলে নিয়ে কাঁধে পেঁচিয়ে দিয়ে ভারী প্রতিশ্রুতির ছায়ায় ঘেরা স্বরে বলল,
“ওকে, সবাইকে সরিয়ে দেবো। এই সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধু আমার আর আমিই দেখবো।”
‘কাঁধে শক্ত হাতের শীতল স্পর্শ লাগতেই শিরশিরে অনুভূতিতে কেঁপে উঠল অভ্যন্তর। এলিজাবেথ মিইয়ে গিয়ে তাকাল রিচার্ডের দিকে। চোখে চোখ পড়তেই মুহূর্তের ঝড় বয়ে গেল তার ভেতর দিয়ে। এরই মাঝে রিচার্ড বাকানো কোমর হাত দিয়ে পেঁচিয়ে মেয়েটাকে বুকের উপর এনে আঁচড়ে ফেলল
“আ-আপনি…!”

‘ওষ্ঠপুটের তর্জনী ঠেকিয়ে থামিয়ে দিল রিচার্ড। তার চোখে গাঢ় এক দৃষ্টির ঝলক, কণ্ঠস্বর মুহূর্তেই বদলে গেল ক্ষনিকের মধ্যেই। সেই চিরচেনা গুরুগম্ভীর ভারিক্কি স্বর ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে,
“রিচার্ড কায়নাত ওয়াইফি। মাই নেম ইজ রিচার্ড কায়নাত।”
‘আঙুলগুলো কোমল মাংসের ওপর ছন্দ সৃষ্টি করতেই এলিজাবেথের শরীর শিহরণে ঝংকৃত হয়ে উঠল। তার গভীরের নিস্তরঙ্গ জলে ঢেউ খেলে গেল মুহূর্তেই। এতক্ষণ সে খেলছিল আর এখন খেলায় মেতে উঠেছে সে নিজেই।রিচার্ড স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার মুখের প্রতিটি রেখায়, প্রতিটি অভিব্যক্তিতে। সে শুনতে পেল এলিজাবেথের কণ্ঠ ভারী হয়ে উঠছে। তবুও উচ্চারণে স্পষ্ট এক কঠোরতা,

“শর্তের কথা ভুলে যাবেন না।”
‘রিচার্ড নিস্তরঙ্গ স্বরে অথচ ভিতরে চাপা এক আগুন নিয়ে বলল,
“তিন মাসের দীর্ঘ অপেক্ষা, প্রতিটি ছলচাতুরী ভেদ করে তোমাকে কাছে টানলাম। পরপুরুষের স্পর্শ থেকে সরিয়ে আনলাম, অবশেষে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে ঘরে তুললাম। তারপরও শর্ত? ছোঁয়া যাবে না? ফাক রেড। আমি শুধু ছুঁবো না, তোমার গভীরে প্রবেশ করব। ঠিক যেমন তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করেছিলাম।”
‘এলিজাবেথের ঠোঁট নড়ে, কিন্তু শব্দ বের হতে পারে না। গলায় জমাট বেঁধে থাকা আবেগ তাকে অবশ করে ফেলছে। তার গড়ন ক্ষীণ কাঁপনে কেঁপে ওঠেছে বার বার। যেন রিচার্ডের প্রতিটি বাক্যে শরীরও সাড়া দিচ্ছে।
রিচার্ড আরেকটু ঝুঁকে এল! তার উষ্ণ ভারি নিঃশ্বাস এলিজাবেথের ত্বকে ছাপ ফেলে গেল। রক্তিম হয়ে ওঠা কানের লতিতে সে মৃদু কামড় বসিয়ে হাস্কি টোনে বলল,

“সময় দিচ্ছি, ছেড়ে দিচ্ছি না। আমাকে এত সহজ ভেবে ভুল করবেন না ম্যাডাম।”
‘রিচার্ড নিজে থেকেই সরে এল। এলিজাবেথ হাফ ছেড়ে বাঁচল। এতোক্ষণ ঘন নিঃশ্বাসের মধ্যে চারপাশে অদ্ভুত এক মৌনতা বিরাজ করছিল যেন সময়টুকুও স্থির হয়ে গিয়েছিল তাদের একান্ত মুহুর্তের সঙ্গী হিসেবে। রিচার্ড এক হাতে শব্দ করে তালি বাজাতেই কক্ষে প্রবেশ করল সবিতা বেগম। হাতে একগাদা লাল শাড়ি, একাধিক নকশা ও ডিজাইনে সাজানো। বেশিরভাগই ছিল লাল শাড়ি, যার সোনালী পাড়গুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করছিল। শাড়ির মধ্যে সবিতা বেগমের মুখ দেখায় যাচ্ছিল না। তিনি এখনও রিচার্ডের কাজের লোক হিসেবে রয়ে গেছেন। তিনিও নত হয়নি, রিচার্ডও মুক্ত করে দেয়নি৷ এলিজাবেথের উপর করা প্রতিটি অত্যাচারের প্রতিশোধ নিচ্ছে একটু একটু করে। এলিজাবেথ তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। সবিতা বেগমের মুখের আগের সেই জৌলুস আর নেই। শরীরের জৌলুস শুকিয়ে গেছে, গায়ের উজ্জ্বলতাও চাপা পড়ে গেছে। নিঃশব্দে শাড়িগুলো বিছানায় রেখে সবিতা বেগম চলে গেলেন, তাকায়নি অব্ধি এলিজাবেথের দিকে৷

‘সবিতা বেগম বেরিয়ে যেতেই রিচার্ড গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সে পেছনে ফিরে তাকাল। তার চোখে ছিল এক গভীর নেশা। যা এলিজাবেথের অভ্যন্তরীণ সত্তাকে শিহরণিত করে দেয়। চোখাচোখি হতেই তড়িঘড়ি চোখ নামিয়ে নিল এলিজাবেথ। রিচার্ড এগিয়ে এসে সোনালী পাড়ের একটি শাড়ি হাতে তুলে নিল। এক টানে এলিজাবেথকেও তুলে নিল। তার হাত এলিজাবেথের কুঁচির ভাঁজে পৌঁছাতেই এলিজাবেথ অনুভব করল তার শরীরের ওপর আরও এক চাপ। খামচে ধরল রিচার্ডের হাত৷
“কি করছেন?”
‘রিচার্ড তার চোখের মণিতে একধরনের বিভ্রম নিয়ে বলল,
“আমার কর্তিকে তৈরি করে দিচ্ছি।”

‘এই বলে একটানে কুঁচি খুলে ফেলল। বাঁধা দিতে চাইলেও এলিজাবেথ আর কিছু বলল না। কারণ শাড়ি পরা তার পক্ষেও সহজ ছিল না। রিচার্ড কালকের মতো দক্ষ হাতে ওকে শাড়ি পরাতে শুরু করল। এলিজাবেথ শুধু অবাক হয়ে লোকটির প্রতি নজর রাখছিল। কীভাবে মনোযোগ সহকারে কাজটি করছে লোকটা৷
“উমহু! এভাবে তাকিয়ে মনোযোগ কেড়ে নিও না। আমি কন্ট্রোল হারালে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
‘এলিজাবেথ বিস্ময়ে হতভম্ব। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল,
“আপনি শাড়ি পরানো শিখলেন কিভাবে?”
রিচার্ড তার কুঁচি ঠিক করতে করতে বলল,”শখ থেকে।”
‘হ্যাঁ লোকটা শখ করেই শিখেছিল। শিখেছিল যাতে প্রতিদিন তার বউকে নিজের হাতে শাড়ি পরিয়ে দিতে পারে।
“কিন্তু এখানে সব শাড়ি কেন? আর লাল ই কেন?”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫১ (২)

‘রিচার্ড কুঁচি গুঁজে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এলিজাবেথের কপালে একটি মৃদু চুম্বন দিয়ে বলল,” আমাদের বেড়ে ওঠা রাশিয়া, ইতালিতে হলেও প্রকৃতপক্ষে আমরা বাঙালি। আর আমি চাই আমার বউ সবসময় বাঙালি সাজেই থাকুক। বাঙালি বউদের ক্ষেত্রে লাল শাড়ির আধিক্য কিছুই নয়। এই লাল টুকটুকে সাজে আমি প্রতিদিন দেখতে চাই আমার এলি জানকে।”
‘বলেই রিচার্ড ওকে কাঁধে তুলে নিল। পাড়ি জমালেন এক ভয়ংকর গন্তব্যের দিকে যেখানে অপেক্ষা করছিল এক নতুন অধ্যায়।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫২ (২)