ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫৯ (৩)
মিথুবুড়ি
‘টেনে ছিঁড়ে ছুড়ে ফেলল কাউচে। শিরদাঁড়া গুঁড়িয়ে যাওয়ার মতো ধাক্কায় শরীরটা মোচড় দিয়ে উঠল এলিজাবেথের। চোখের পাতা না ফেলতেই রিচার্ড ঝাঁপিয়ে পড়ল। হাঁটু ঠেকিয়ে উরুতে চেপে ধরল অন্য হাতে চোয়াল এমনভাবে চেপে ধরল যেন হাড় ফেটে যাবে। সমুদ্রের নীলাদ্রি রক্তিম রঙে রঞ্জিত। ক্রোধে মটমট করতে থাকে চোয়ালের নিঃশ্বাসেও আগুন। নিস্তব্ধ কেবিনে কেবল তার রাগের শব্দ শোনা যায়। রিচার্ড গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা হিংস্র জন্তুর মতো গর্জন তুলল,
“এই আল্লাহর বান্দি এই, বল তুই কার?”
‘এলিজাবেথের ঠোঁট কাঁপছে, চোখ ছলছল করছে। তবুও মুখ খুলছে না।
“কুত্তার বাচ্চা বল তুই কার।”
‘উত্তর আসে না। এই নীরবতা যেন আগুনে ঘি ঢালে রিচার্ডের ভেতর। হঠাৎ পকেট থেকে রিভলভারটা বের করে ঠাণ্ডা ধাতব নল ঠেলে ঢুকিয়ে দিল এলিজাবেথের মুখে। গভীরে, আরও গভীরে। গর্জে উঠল পূনরায়,
“বল!”
‘এলিজাবেথের চোখ পিঠের দিকে উলটে যায়। ঘেন্না আর ভয় মিশে বমি উঠে আসে। নিশ্বাস নিতে পারছে না। গলা শুকিয়ে কাঠ। শব্দহীন ফিসফিস করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আ-আপনার…”
‘রিচার্ডের মুখে বিকৃত তৃপ্তি। তাতে কোমলতা নেই, আছে কেবল দখলের উন্মাদনা। থুতু গিলে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“তুই রিচার্ড কায়নাতের। তোর প্রতিটি শ্বাস, তোর প্রতিটি তিল আমার নামে লেখা। যে-ই সৌন্দর্য শুধু আমার দেখার কথা, তা অন্য কাউকে দেখানোর কথা চিন্তা করিস কি করে?কে দিয়েছিল সাহস তোকে এই ড্রেস পরে বাইরে আসার?”
‘রিচার্ড রাগে গিজগিজ করতে করতে রিভলভারটা ওর মুখ থেকে বের করে নিয়ে ছুঁড়ে মারল পাশে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে থাকে। এলিজাবেথ ধপ করে উঠে বসে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে। ঘৃণায় পোড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“কেবিনেটে থাকা সব ড্রেস আপনার নিজের হাতে কেনা ছিল।”
‘রিচার্ড ঘূর্ণির মতো ঘুরে দাঁড়ায়। আগুন ছোঁয়া পায়ে এগিয়ে এসে এক ঝটকায় কণ্ঠনালী চেপে ধরে। রুক্ষ গলায় ফিসফিসিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আমার কেনা ছিল, শুধু আমি দেখব বলে। আমি ছাড়া আর কোনো পুরুষ তোকে দেখুক সেটা আমি সহ্য করব না”
“আমার… লাগছে।”
“লাগছে?”বিদ্রূপে ফেটে পড়ে রিচার্ড, “ওহহহ স্যরি, বেবি গার্ল।”
‘অধরের কোণে এক টুকরো বাঁকা হাসি ফোটে। রিচার্ড সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে লম্বা পা ফেলে এগিয়ে যায় ডেস্কের দিকে। ড্রয়ার খুলে সিগারেট বের করে। লাইটার জ্বালিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে এলিজাবেথের দিকে।
“রিচার্ড কায়নাতকে আবারো তার স্বরূপে ফিরিয়ে আনার মাশুল আপনাকে গুনতেই হবে মিসেস কায়নাত৷”
‘ভিতরটা কেঁপে ওঠে এলিজাবেথের। কণ্ঠনালী থরথর করে কাঁপতে থাকে। নিজেকে গুটিয়ে নেয় কাউচের কোণে। কম্পিত গলায় বলে,
“এগোবেন না… কী করতে চাইছেন আপনি?”
‘রিচার্ডের ঠোঁটে ঠাণ্ডা হাসি। নিরেট ঠান্ডা স্বর,
“নাথিং! জাস্ট আ লিটল পানিশমেন্ট, মাই লাভলি ওয়াইফি।”
‘নিশব্দে এগিয়ে আসে রিচার্ড একটা বিষাক্ত ছায়ার মতো। এলিজাবেথ শরীরজুড়ে গড়িয়ে পড়েছে কাউচে নিস্তেজ, নিঃস্ব হয়ে। রিচার্ড ওর গায়ের ওপর ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল ,
“নাথিং হার্মফুল, ওয়াইফি৷ জাস্ট আ লিটল হেল ফর ইউ, উইথ লাভ।”
‘সঙ্গে সঙ্গে জ্বলন্ত সিগারেটটা ঠেসে ধরে ওর নগ্ন কাঁধে। ছ্যাঁকা শব্দে ফুটে ওঠে চামড়ার গন্ধ। মাংসের ভেতর গেঁথে যায় আগুন। এলিজাবেথ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে চাইল কিন্তু মুখের উপর চেপে ধরা রিচার্ডের হাত সবকিছু গ্রাস করে নেয়। ওর পা দুটো ছুটে ছুটে ধাক্কা মারে বাতাসে৷ কিন্তু নিস্ফল, অসহায়। এক পৈশাচিক আনন্দে ডুবে আছে রিচার্ড৷ মুখ বিকৃত, চোখে তীব্র হিংস্রতা। হঠাৎই আরেকটা চাপ, বাঁ কাঁধে এবার। ফোসকা পড়ে দগ্ধ হয়ে ওঠে কোমল ত্বক। এলিজাবেথের চোখ দুটো ফেটে যায় নিঃশব্দ কান্নায়। গালে গড়িয়ে পড়ে পুড়ে যাওয়া চোখের জল। রিচার্ডের সেই গা ছমছমে সমুদ্র-নীল চোখে ছায়া ফেলে নরকের আগুন।
‘রিচার্ড সিগারেটটা চেপে ধরে রাখে দাঁতে দাঁত চেপে। যেন প্রতিটি সেকেন্ডে ছিঁড়ে ছিঁড়ে দগ্ধ করতে চায় এই অবাধ্য নারীকে। এলিজাবেথের নরম দেহ একটু পরপর ঝাঁকিয়ে উঠছে৷ নিঃশ্বাস ভারি হয়ে কেঁপে উঠছে কণ্ঠ। অসাড় হয়ে আসে শরীর তীব্র বেদনায়। প্রতিটা নিরব গোঙানি কণ্ঠ রুদ্ধ যন্ত্রণার সুর হয়ে ভেসে আসে বাতাসে। ঘরটা হয়ে ওঠে এক ভয়াল অত্যাচার কক্ষ। নিস্তব্ধতা ভেঙে কেবল ভেতর থেকে ফুঁসে উঠছে নিপীড়নের বিকারগ্রস্ত স্তব্ধ রাগে।
‘রিচার্ড আচমকা থেমে যায়। জ্বলন্ত সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় পাশে। এলিজাবেথের কাঁধে ধোঁয়া উঠছে! জ্বলন্ত চামড়ার গন্ধে ভারি হয়ে আছে বাতাস। এলিজাবেথ তখনও নিঃশ্বাস ফেলছে ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবে। শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে যেন ভয় জমে আছে। হঠাৎই রিচার্ড ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। যেন কিছুই হয়নি৷ অদ্ভুত ঠাণ্ডা ভাব তার চোখে। পায়ের নিচে পড়ে থাকা সিগারেটটা নিভে ছড়িয়ে থাকে কার্পেটে।
“আই হেইট ডিস সাইলেন্স রেড। তোমার চুপ থাকা আমাকে পাগল করে তোলে।”
‘এলিজাবেথ কিছু বলতে পারে না। গলা শুকিয়ে কাঠ। ঠোঁট কাঁপছে অনবরত। কিন্তু আওয়াজ নেই। ওর সারা শরীরটা একেকটা কাঁপুনিতে সেঁধিয়ে যাচ্ছে কাউচে। রিচার্ড ধীরে ধীরে ওর মুখের খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। দু’ আঙুলে এলিজাবেথের থুতনিটা তোলে। ওর মুখের দিকে চেয়ে হেসে ওঠে। ভয়ংকরী ঠাণ্ডা, নির্মম এক হাসি।
“তুমি জানো না, আমি কীভাবে ভালোবাসি।
তুমি শুধু আমার,যতক্ষণ না আমি ভেঙে ফেলি তোমায়। আর কখনো এমন ভুল করবে না, ওকে?”
‘একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল রিচার্ডের হাতে তপ্ত শিলার উপর পড়া শিশিরবিন্দুর মতো। সেই একফোঁটা অশ্রুর মধ্যে যেন ছটফট করছিল স্ফটিক আগুন আর তা-ই বিস্ফোরিত হয়ে নেমে এলো ঝড়ের বর্ষণে। রিচার্ড ধীরে ধীরে ফিরতে থাকে সজ্ঞানে৷ চেতনালয়ে হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠে। চোখ তুলে তাকায় সামনের ভেজা আঁখিপল্লবের দিকে। একসময় যার মুখাবয়বে ছিল সৌন্দর্যের দীপ্তি এখন তা বিধ্বস্ত, ধূলিমলিন। রিচার্ডের মনে বাসা বাঁধা হিংস্রতা কেমন করে গলে যেতে থাকে সেই নারীর নিঃশব্দ, কাতর চাহনিতে। টনক নড়ে তার। মুহূর্তেই এলিজাবেথকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের ডেস্কে বসিয়ে দেয়। আচরণে আসে অস্বাভাবিকতা৷ মাথার চুল আঁকড়ে ধরে পায়চারি করে পুরো কেবিন জুড়ে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে ওঠে. প্রতিটি শ্বাসে জমে থাকা অনুশোচনা ছিঁড়ে ফেলছে কেবিনের নিস্তব্ধতা।
‘এলিজাবেথ সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে রিচার্ডের এই উন্মত্ততায়। রিচার্ড ব্যাকুল হয়ে কিছু খুঁজতে থাকে। বিশাল কেবিনের ডান প্রান্তেভারি পর্দার আড়ালে থাকা বিশ্রামের ঘরের দিকে ছুটে যায় সে। এলিজাবেথের চোখের জল থেমে যায়। কিছুক্ষণ পরই রিচার্ড ফিরে আসে হাতে বরফ আর একটি মলম নিয়ে। রিচার্ডকে দেখে এলিজাবেথের চাহনি স্থির হয়ে যায়। এই তো সেই মানুষ—যে খানিক আগেই হিংস্র উন্মাদনায় সিগারেটের উল্কা ছুঁইয়ে দিয়েছে তার কাঁধে। আর এখন? এখন সেই পুড়ে যাওয়া ক্ষতের উপর নিজ হাতে বরফ ঢলছে, মলম দিচ্ছে, ছটফট করছে যেন সেই যন্ত্রণাটা রিচার্ডের শরীরেই বাজছে।উত্তেজনায় বারবার ফুঁ দিচ্ছে পোড়া জায়গায়। রিচার্ডের ফর্সা মুখজুড়ে ফুটে উঠেছে এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ -উৎকণ্ঠা, অপরাধবোধ আর একরাশ অনুশোচনা। এলিজাবেথ সেই ব্যথার আর্তনাদ ভুলে যায় এই উন্মাদ ভালোবাসার অব্যক্ত স্পর্শে।
‘রিচার্ড গিজগিজে রাগে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে বসে পড়ল এলিজাবেথের সামনে চেয়ারটায়। হঠাৎ এক হেঁচকায় এলিজাবেথের শরীরটা ছিটকে গেল তার দিকে। পাথরের মতো শক্ত, ঠান্ডা বুকের সঙ্গে আছড়ে পড়ল এলিজাবেথ। এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করল না রিচার্ড। আজ তার হাতে সময় নেই অথচ বলার মতো হাজার কিছু জমে আছে। রিচার্ড নিঃশব্দে এলিজাবেথের দু’পা নিজের উরুর দুই পাশে রেখে তার তুলতুলে শরীরটা জড়িয়ে নিল নিজের খোলসের মধ্যে। মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরল বুকের একেবারে মাঝখানে, যেখানে হৃদস্পন্দনটা এখন গর্জে উঠছে। একেকটা শব্দ যেন কান ফাটিয়ে দিচ্ছে। এলিজাবেথ কেঁপে উঠল। এমন করে রিচার্ড আগে কোনোদিন তাকে জড়িয়ে ধরেনি। লোকটা যেন দুই বাহুর ভিতরে একটা দুর্গ গড়ে তুলেছে, যাতে কিছুতেই ঢোকা যায় না, কিছুতেই বাইরে বেরনো যায় না। রিচার্ডের নিঃশ্বাস এখন উন্মত্ত ঘোড়ার মতো ছুটছে। দম ফুরিয়ে এলেও থামছে না। এলিজাবেথ বুঝতে পারে না এই অস্থিরতার উৎস। তবু ভেতরে কোথাও টের পায় লোকটার পাশে থাকাটা এখন খুব দরকার। কিছু একটা পুড়ছে ভেতরে দাউদাউ করে।
‘রিচার্ডের হাতের বাঁধন এতটাই জোরালো হয়ে ওঠে যে হাড্ডিতে হাড্ডি লেগে মটমট শব্দ হয় কেবিনের নিস্তব্ধতায়। এভাবে তো কাউকে ধরা হয় তখনই, যখন তাকে হারানোর ভয়টা ছায়ার মতো পেছন থেকে এসে জাপটে ধরে। এলিজাবেথের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। মুখ ঠেসে আছে রিচার্ডের বুকের সঙ্গে। চোখের সামনে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। অস্পষ্ট গলায় ফিসফিসিয়ে আওড়ায়,
“আমি… নিশ্বাস নিতে পারছি না।”
‘রিচার্ড কিছু বলে না। তার বাঁধনে নড়চড় নেই। কেবল ঘাড়টা ঝুঁকে মাথা পড়ল এলিজাবেথের কপালে। চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করা। নিঃশব্দে ফিসফিস করে একটাই কথা বলে শুধু ক্লান্ত হেরে যাওয়া সৈনিকের মতো,
“আরেকটু সয়ে জান, আরেকটু।”
‘শক্ত, গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বরের পরিবর্তে বুঝি এমন বিধ্বস্ত স্বরই মানায়? এলিজাবেথ সয়ে নেয়। শ্বাসের ঘন ঘন টানে ক্ষীণ হয়ে আসে মুখাবয়ব তবুও সয়ে নেয়। সেই সয়ে নেওয়ার ভঙ্গিমায় লেপ্টে থাকে স্বামীর বুকে। চেয়েছিল দু’টি হাত দিয়ে রিচার্ডকে নিঃশব্দে জড়িয়ে ধরতে নরম, সংবেদী আবরণে। কিন্তু হাত পথ হারায় সেই চেনা বাঁধন ফিরিয়ে আনে না কিছুই। উপায় না পেয়ে দুপাশ দিয়ে কোমর ঘিরে ধরে রিচার্ডকে। দীর্ঘ সময় পর রিচার্ড আলগা করে বাঁধন। কিন্তু সেই মুহূর্তেই তার হাতের শিরায় দাপিয়ে ওঠে এক তীব্র অধিকারবোধ।হঠাৎই সেই জড়িয়ে ধরা রূপ নেয় হিংস্রতায়।রিচার্ড এক হাতে চেপে ধরে এলিজাবেথের চুল, অন্য হাতে বুকের সাথে টেনে নেয় আরো শক্ত করে। ভেতরের সমস্ত ভঙ্গুরতা, উত্তেজনা, আর দুর্বোধ্য তেজ ছাপিয়ে ওঠে কণ্ঠে৷ ভাঙা, ক্ষত-বিক্ষত স্বরে রিচার্ড ফুসিয়ে ওঠে,
“ভালো আর লাগে না
এত কেন মায়া
যত কাছে আমি লাগে শুধু সান্ত্বনা
অবুঝ ভালোবাসা
যত কাছে আমি লাগে শুধু সান্ত্বনা
জানি এ নয় খেলা
তবু এ মনে হয় ছাড়া তোমায় বাঁচবো না
তুমি যদি আমাকে
কাছে এসে ভালোবাসো,,,, ”
‘হাতের বাঁধন আলগা হয়। এলিজাবেথ হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায়। তবে পারে না। রিচার্ড আবারও দু’হাতে চেপে ধরে ওর মুখ। শক্ত হলেও এলিজাবেথ অনুভব করে এই হৃদয়হীন, নিষ্ঠুরতার প্রতীক, গ্যাংস্টার বস রিচার্ড কায়নাতের ড্রাগনের ট্যটু খচিত শক্তপোক্ত এই দু’টি হাত কাঁপছে। এলিজাবেথ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে রিচার্ডের চোখে। লোকটার আচরণ আজ ভীষণ অচেনা। সমুদ্রনীল চোখে ক্লান্তি আর সংকীর্ণতার রেখা, কিন্তু তা পড়তে ব্যর্থ হয় এলিজাবেথ। রিচার্ড তাকিয়ে থাকে অপলক।দীর্ঘদৃষ্টিতে যেন যুগ যুগ পরে ফিরে পাওয়া কারো খোঁজ। অতঃপর এলিজাবেথের দৃষ্টি পড়ে রিচার্ডের বুকে। সদা খোলা শার্টের বোতাম থেকে উঁকি দেয় শক্তপোক্ত, বিস্তীর্ণ বক্ষ। আজ সেখানেই থমকে যায় সব। সুবিস্তৃত,শক্তপোক্ত সুঠোম বুক আজ ক্ষতচিহ্নে ছিন্নভিন্ন, রক্তশুষ্ক চামড়ায় অজস্র দাগ। চারটি গুলির চিহ্ন, অসংখ্য ছুরির আঁচড়। কিছু শুকিয়ে গেলেও অনেক দগদগে আজও।চোখ কেঁপে ওঠে এলিজাবেথের। হাত রাখে একটিতে। রিচার্ড চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে গিলে নেয় সমস্ত ব্যথা। এলিজাবেথের চোখ ছলছল করে ওঠে।সে একে একে খুলে দেয় বাকি বোতামগুলো। দেখে তাণ্ডবের নীরব সাক্ষ্য। কম্পিত কণ্ঠে জানতে চায় কঠিন অধিকারবোধে মোড়া স্নিগ্ধ ভালোবাসায়,
“এসব কি করে?”
‘রিচার্ড হঠাৎই জাপ্টে ধরে এলিজাবেথ’কে। গলা দিয়ে উঠে আসে অদ্ভুত গোঙানি। ভেতরটা চিৎকার করে বলতে থাকে,
“তোকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।
কেউ নিতে পারবে না তোকে। ওরা কেউ আসবে না।
তুই শুধু আমার, এলি জান শুধুই আমার!”
‘এলিজাবেথ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
রিচার্ড কী বলছে,আর কেনই বা বলছে এমন অস্থির, অধিকারবোধে ভরা কথা! রিচার্ডের মুখটা নিজের দিকে ঘোরায়। তীক্ষ্ণ চোয়ালে আলতো চাপ দেয় নিজের নরম আঙুলে। ভেজা গলায় প্রশ্ন করে,
“এজন্যই আপনি এতোদিন আমার সামনে আসেননি?”
‘রিচার্ড নীরব।তার চোখের ভেতর জমে থাকা গভীর কোনো যন্ত্রণা শব্দহীন বিস্ফোরণ ঘটায়। রিচার্ডের বুকের গুলিটা এতটাই গভীরে গিয়েছিল জ্ঞান ফিরেছিল আটদিন পর।এই আটদিনই রিচার্ডকে এলিজাবেথ থেকে দূরে রেখেছে।এজন্যই রিচার্ড এতোদিন এলিজাবেথের সাথে যোগাযোগ করেনি, এবং বাংলাদেশে ফিরতে দেরি হয়। পরিকল্পনা পুরোপুরি সুস্থসবল হয়ে ফেরার। তবে অস্থির মনের রেহাই নেই। এলিজাবেথ আবারও কাঁপা কণ্ঠে বলে ওঠে,
“আপনি আবারও কি মরণের খেলায় মেতে উঠেছেন?”
‘রিচার্ড এবার মুখ তোলে। চোখে আগুন, কণ্ঠে দৃঢ়তা আর তীব্র জেদের ঝাঁজ,
“এবারের লড়াই রিচার্ড কায়নাতের অর্ধাঙ্গিনীকে রক্ষা করার লড়াই। তাকে পবিত্র করার লড়াই।
এই যুদ্ধে আমি মরব নয় জিতব!”
‘এলিজাবেথের আত্মা কেঁপে ওঠে। কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সেই নিদারুণ কোমলতায় ভরা ডাক ভেসে আসে,
“এলি জান।”
‘জবাব আসে বিরতিহীন, নিঃশব্দে গলে যাওয়া সুরে,
“হুমম।”
‘রিচার্ড হঠাৎই এলিজাবেথের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে।
তার চোখে ভয়, কণ্ঠে শপথের আগুন,
“আমি থাকতে তোর কিছু হতে দিবো না ওই খোদাকে সাক্ষী রেখে বললাম। রিচার্ড কায়নাত আজ তার সকল তেজ, অহংকার তোর পায়ের নিচে পিষে দিয়ে একটাই জিনিস চাইবে। দিবে?”
‘এলিজাবেথ বিস্মিত গলায় ফিসফিস করে,”আপনি এভাবে কেন বলছেন?”
“বল, দিবে?”
“বলুন…”
“আমি হারিয়ে গেলেও তুমি অন্যকারোর হবে না।”
“এসব কেন বলছেন আপনি!”
“জান,কথা দাও!”
“হুুমম!”
“আমি এলিজাবেথ ইমরা এরিন
রিচার্ড কায়নাত ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের ঠাঁই দিবো না এ জীবনে।”
‘এলিজাবেথের চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সে আরও জোরে চেপে ধরে রিচার্ডের হাত।চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমি এলিজাবেথ ইমরা এরিন,
আমার স্বামী রিচার্ড কায়নাত ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের ঠাঁই দিবো না এ জীবনে।”
‘রিচার্ডও পেছনে সরে না একচুল। সেও দৃঢ়, শুদ্ধ, শপথের মতো উচ্চারণ করল,
“আমি রিচার্ড কায়নাত, আমার স্ত্রী এলিজাবেথ ইমরা এরিন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারীর দিকে ফিরেও তাকাবো না। মৃত্যুর ঘণ্টা যখন কানের পাশে ধ্বনিত হবে সেই শেষ মুহূর্তেও আমার দৃষ্টি থাকবে কেবল আমার স্ত্রীর মুখের উপর।”
‘দুটো খাদযুক্ত দৃষ্টি এক বিন্দুতে মিলল। স্বকীয়তা যেন এক নিমিষে বিলীন। অলিন্দের গভীর কোনো গোপন প্রেম হঠাৎই উথলে উঠল চোখে।রিচার্ডের উষ্ণ হাতের ওপর হাত রাখল এলিজাবেথ; আরেক হাতে আলতো ছোঁয়াল রিচার্ডের গাল। এক নিঃশব্দ, নিগূঢ় চুম্বন রাখল ললাটে। কণ্ঠে নিদারুণ কোমলতা,
“আমার স্বামী যদি মৃত্যু নিয়ে আসে, তবে সে মৃত্যুর সাক্ষাৎ যেন সর্ব প্রথম আমার সঙ্গে হয়।”
‘এরপর হাত নামিয়ে রাখল রিচার্ডের বুকের ক্ষতগুলোর ওপরে, একে একে মৃদু স্পর্শে ছুঁয়ে দিল। এবার কণ্ঠে এক অদ্ভুত ভাঙন,
“আমার স্বামীর বুক লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা সমস্ত বন্দুকের ঝাঁঝ যেন পথ বদলে আমার বুকে পড়ে।”
‘এলিজাবেথ এবার রিচার্ডের হাত মুঠোয় নিল,
“আমার স্বামীর হাতে রক্ত ঝড়ার আগে সেই হাত আমার হাতের ছোঁয়া পাক।”
‘সবশেষে কপালে কপাল ছুঁইয়ে দিল৷ ঘন নিঃশ্বাসে, স্তব্ধতার বুক চিরে উচ্চারিত হল,
“সবশেষে, আমার স্বামী আমারই থাকুক।”
‘রিচার্ড সুচারু চোখে তাকিয়ে রইল এলিজাবেথের দিকে। ঠান্ডা, স্থির গলায় বলল,
“স্বামী নামক সেই লোকটা কিন্তু খুব খারাপ।”
‘এলিজাবেথ নিঃসংশয়ে উত্তর দিল,”তবুও সে আমার স্বামী।”
‘রিচার্ডের কণ্ঠে এবার একটুখানি তীক্ষ্ণতা,”সে কিন্তু ভয়ংকর।”
“আমার জন্য সে কেবলই আগলে রাখার আশ্রয়স্থল। যেদিন,,,,,
‘রিচার্ডের চোখে কিঞ্চিত কৌতূহলে,”যেদিন?”
‘এলিজাবেথের চোখ আগুনের মতো ঠান্ডা,”যেদিন সে আমার জন্যও ভয়ংকর অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে, সেদিনই শেষ দিন হবে তার।”
‘রিচার্ডের অবয়বে কোনো অপ্রত্যাশিত অভিব্যক্তির রেখা পড়ল না। কিঞ্চিৎ হাসল মাত্র। তারপর এলিজাবেথকে কোলে তুলে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে গেল। আচমকাই আঁতকে উঠে রিচার্ডের কোমর দু’পা দিয়ে জড়িয়ে ধরল এলিজাবেথ।রিচার্ড ধীরে এলিজাবেথ’কে বসাল কাউচের পাশের ছোট এক বুকশেলফে। নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“এটা কি শুধু স্বামীর ক্ষেত্রেই?”
“না, সকলের জন্য।”
‘হঠাৎ থেমে গেল। চোখমুখে জ্বলে উঠল এক ঝলক আগুন রুষ্ট কণ্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“আমি স্বচ্ছ থাকা সত্ত্বেও যারা আমার চরিত্রে দাগ লাগিয়েছে,আমার সুন্দর জীবনে অভিশপ্ত করেছে,
যেদিন ক্ষমতা আসবে আমার হাতে, সেদিন সেই লোকগুলোর মাথা থাকবে আমার পায়ের নিচে।”
‘থেমে,
“আঘাত থেকেই জেদ জন্মায়। কথার আঘাতে মানুষের ব্যাক্তিত্ব নষ্ট করে ফেলে, মানুষকে পরিবর্তন করে ফেলে!”
‘রিচার্ডের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ফুটল। এলিজাবেথের গ্রীবার পেছনে হাত রেখে চুল টেনে ধরল দৃপ্ত ভঙ্গিতে। উৎফুল্ল গলায় বলল,”ইয়েস, রেড ইয়েস! এই তেজটাই দেখতে চেয়েছিলাম তোমার চোখে।”
“এই তেজের স্বীকার কিন্তু আপনিও হবেন। এখনও সময় আছে, শান্তির পথে ফিরে আসুন, মি. কায়নাত।
আমি কিন্তু সব জ্বালিয়ে দেবো।”
‘রিচার্ড এক ধরণের বাঁকা হাসি হেসে দু’কদম পিছিয়ে গেল।
কণ্ঠে ছিল বিদ্রুপের আগুন,
“আমাকে জ্বালাতে এসো না, মেয়ে। উল্টে ঝলসে যাবে।”
‘এলিজাবেথ শক্ত চোখে তাকিয়ে রইল রিচার্ডের দিকে।
রিচার্ড নরম কণ্ঠে জানতে চাই,
“কেন ভালো করতে চাইছ আমায়?”
“আমি সুখের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে কিভাবে আপনাকে দুঃখের মাঝে রাখি? যদি অন্ধকারের সঙ্গীই হবেন, তবে আমাকে কেন জড়ালেন?”
“অন্ধকারের সাথে যার সন্ধি, তাকে আলোর দিকে ফেরানোর চিন্তা করা নেহাৎ ই বোকামি৷”
“রুপে রুপান্তর, সময় কিন্তু জাদুকর।
আজকে আপনার,কালকে আমার৷
পাপে জয়, পাপে ক্ষয়।
অতি পাপে মরণ হয়
সময় কিন্তু কথা কয়।”
‘রিচার্ড গালের ভিতর জিভ ঘুরিয়ে হাসল। জলদগম্ভীর গলায় বলল,
“গুড, এতোদিন গলার টোন রিচার্ড কায়নাতের ওয়াইফের মতো হয়েছে। আই লাইক ইট বেবি। তবে যতো চেষ্টাই কর না কেন, রিচার্ড কায়নাত, রিচার্ড কায়নাত ই থাকবে। সে আর কখনো রিদ হবে না।”
‘এলিজাবেথের কণ্ঠে প্রবল আত্মবিশ্বাসের, “ধৈর্য মানুষকে ঠকায় না বরং উত্তম সময়ে শ্রেষ্ট উপহার দেয়৷”
“খুব ধৈর্য ধরেছি। এবার আমার পালা। তোমার বেস্ট টা আজ আমি চাই ওয়াইফি।”
‘অকস্মাৎ রিচার্ডের কণ্ঠস্বরের গভীরে নামে রহস্যময় আঁধার। চমকে ওঠে এলিজাবেথ, তবু চোখের পাতা ফেলে না। রিচার্ড এগিয়ে আসে স্বতঃস্ফূর্ত অথচ অবিচল পদক্ষেপে। এক নিশ্বাসেই দু’জনের মধ্যেকার শূন্যতা ঘুচিয়ে দেয়। কিছু বোঝার আগেই এলিজাবেথের পা নিজের পায়ের ফাঁকে আবদ্ধ করে নিয়ে দু-হাত দৃঢ়ভাবে পিঠের পেছনে গেঁথে ধরে। রিচার্ডের শরীর থেকে ওঠা গাঢ় পারফিউমের সুগন্ধ এলিজাবেথের নিঃশ্বাস চুরমার করে। কণ্ঠ কেঁপে ওঠে,
“এমনটা করবেন না… প্লিজ।”
‘রিচার্ডের চোখে ক্ষুধার মতো আকুলতা। বুকভরা এক দহন। এগিয়ে আসে আরেক ধাপ। মুখ এলিজাবেথের মুখের এত কাছাকাছি যে ওদের নিঃশ্বাস মিশে যায়। রুদ্ধ কণ্ঠে ফিসফিসায়,
“আমি তো তুমিতেই হারিয়ে যাচ্ছি, রেড।”
“না, প্লিজ।”
“আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে রেড৷”
‘এলিজাবেথ হাঁসফাঁস করতে করতে কাঁপা স্বরে বলল,
“আমি- আমি ম্যানশনে ফিরব।”
‘রিচার্ডের ঠোঁটে একরোখা, ব্যগ্র হাসি। “নিশ্চয়ই ফিরবে। ফিরে আমরা একসাথে শাওয়ার নেবো, রেড।”
“প্লিজ… আমার একটুখানি সময় চাই।”
‘রিচার্ড থেমে যায় না। দৃষ্টি এলোমেলো।
“আমার চোখে চোখ রাখো, রেড। বলো তো, কিছু অনুভব করছো না?”
“আ,,,,,এলিজাবেথের ঠোঁট কাঁপে, কিছু বলতে যায়। ঠিক তখনই রিচার্ডের তর্জনী ওর ওষ্ঠে। নাকে এক ক্ষীণ চুমু ছুঁইয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“হুঁশ! এখন শুধু তোমাকেই চাই। আর কোনো বাড়তি শব্দ নয়।”
‘এরপর কোনো পূর্বাভাস না দিয়েই রিচার্ডের অধর ছাপিয়ে বসে এলিজাবেথের ওষ্ঠে৷ উগ্র, দাবদাহময় চুম্বনে আবদ্ধ করে নেয়। এলিজাবেথ ছটফট করলেও রিচার্ড অবিচল। মগ্ন, নিটোল, প্রবল। এই মুহূর্তটির দাবিদার সে অনেকদিন ধরেই। অধর ছেড়ে গ্রীবায় নামে রিচার্ড। হঠাৎ খ্যাক শব্দে গ্রীবাদেশ হতে মুখ তুলে রিচার্ড। সামনে তাকাতেই দৃশ্যমান হয় ন্যাসোর উপস্থিতি।থতমত মুখে ন্যাসো দাঁড়িয়ে। হাতে ধরা ফাইলটা যেন এক মুহূর্তে ভারী হয়ে গেছে। সে এসেছিল কনফারেন্স রুমের মিটিংয়ের কাগজপত্র নিয়ে। কিন্তু গোটা রুম ফাঁকা দেখে অবাক হয়ে উপরের ফ্লোরে উঠে আসে। সেখানটাও নিঃস্তব্ধ, জনমানবশূন্য। কৌতূহলে রিচার্ডের কেবিনের দিকে পা বাড়ায় ন্যাসো। রিচার্ড তখন দরজাটা ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে চাপা দিলেও লক করেনি। ন্যাসো ভাবেনি এমন দৃশ্যের মুখোমুখি হবে সে। এলিজাবেথ তখন লজ্জায় রিচার্ডের বুকে মুখ গুঁজে রেখেছে। রিচার্ডের চোখে জ্বলে ওঠা বিরক্তির দৃষ্টি দেখে ন্যাসো বিব্রত ভঙ্গিতে শুকনো হাসল। বলদের মতো হাসতে হাসতে বলল,
“ড্রাইভার গাড়ি ঘুরাও, ভুল যায়গায় এসে গেছি!”
‘বলেই পাশে তাকায়; মুহূর্তেই মনে পড়ে সে তো একাই এসেছে। দ্বিতীয় দফায় ধাক্কা, অপমান, লজ্জা। আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না ন্যাসো। উল্টে ঘুরে সোজা পায়ে বেরিয়ে যায়। রিচার্ড তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে এলিজাবেথকে ছেড়ে দিয়ে দরজাটা চুপচাপ লক করে এগিয়ে আসে। এই সুযোগে এলিজাবেথ ছুটে পালাতে চাইলে রিচার্ড দৌড়ে গিয়ে পিছন থেকে তার কোমর জড়িয়ে শূন্যে তুলে নেয়। চুলের ভেতর মুখ গুঁজে হিসহিসিয়ে বলে,
“You belong to me.”
‘এলিজাবেথ হাত-পা ছুঁড়তে থাকে। রিচার্ড ওকে নিয়ে আবারো বুকসেলফের উপর বসায়। এলিজাবেথ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তাকে। রিচার্ড শরীর সহজ করে রেখেছিল, ফলে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। তবু ক্রোধ নেই চোখে, শুধু ঠোঁটের কোণে গাঢ় রহস্যের ছায়া। এলিজাবেথের শরীর ক্ষীণ কাঁপছে। পালানোর পথ নেই। এত সহজে সে আত্মসমর্পণ করতে চায় না৷ এখনও অনেক অজানা রয়ে গেছে তাদের মাঝখানে। হঠাৎ রিচার্ড নিজের কোট খুলে ছুড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে। ধীরপায়ে বেল্ট খুলতে খুলতে এগিয়ে আসে এলিজাবেথের দিকে। এলিজাবেথের দেহের সংকীর্ণতা যেন শিথিল হয়ে আসে বিভ্রান্তিতে। রিচার্ড এগিয়ে এসে গাউনের প্রান্ত টেনে উপরে তুলতে গেলে এলিজাবেথ কম্পিত হাতে খামচে ধরল রিচার্ডের হাত। ভাঙা স্বরে বলে,
“কি করছেন… কি?”
‘রিচার্ডের দৃষ্টি গভীর, অদ্ভুত আবেশময়। কণ্ঠও কেঁপে ওঠে কেমন অচেনা সুরে,
“ইট’স হাসবেন্ড, ওয়াইফ টাইম, বেইবি। আমি বাবা হতে চাই, রেড। প্লিজ আজ আমাকে বাঁধা দিও না।”
‘একটা কথাই যথেষ্ট ছিল। এলিজাবেথের ভেতর জমে থাকা সকল জড়তা মুহূর্তেই গলে গেল। এলিজাবেথ শরীর ঠেলে সম্পূর্ণভাবে রিচার্ডের সাথে মিশে গেল। রিচার্ডের চোখে তখনও ছিল অনুনয়ের ছায়া, অনুমতির অপেক্ষা। কিন্তু এলিজাবেথের এই আচরণ আর স্পর্শকাতরতায় ছোঁয়ার ঝিলিক রিচার্ডের চোখ দুটো তেতে উঠল দাহে।ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল বিজয়ের গাঢ় বাঁকা হাসি। এক মুহূর্তও দেরি করল না সে। ঝাঁপিয়ে গিয়ে ডেস্কের উপর থাকা সবকিছু ঝনঝন শব্দে ফেলে দিল নিচে। তারপর এলিজাবেথকে কোলে তুলে নিয়ে শুইয়ে দিল ডেস্কের উপর।নিজেকে এলিজাবেথের উপর ঝুঁকিয়ে এনে কানের কাছে মুখ নামিয়ে আগাম সতর্ক করল। স্বরটা গাঢ় ও আদেশময়,
“Eyes on me, ok babygirl?”
‘আপস্ট্রেয়ার পুরোটা এখন নিস্তব্ধ, ফাঁকা। রিচার্ড তখন কেবিনে ঢোকার আগেই চোখের ইশারায় একজন গার্ডকে সাবধান করেছিল। সেই মুহূর্তের উপস্থিত সকল এমপ্লয়ি এখন রিচার্ডের নতুন বেজমেন্টে। তাদের অপরাধ একটাই, রিচার্ড কায়নাতের সহধর্মিণীর দিকে তাকিয়েছিল তারা। পঁচিশ মিনিট কেটে গেছে। ন্যাসোর কপালের থমকালো রেখা এখনও মিলায়নি। সে একা ফাঁকা অফিসঘরে গম্ভীর মুখে বসে আছে। হঠাৎ তীব্র পদচরণের শব্দে সামনে তাকায় ন্যাসো। দেখে রিচার্ড আসছে, শার্টের ভেতর হাত ঢোকাতে ঢোকাতে, হন্তদন্ত ভঙ্গিতে। ন্যাসো চোখ বুলিয়ে নেয় রিচার্ডের আপাদমস্তক। চুল এলোমেলো, চ্যাটচ্যাটে ঘামে ভেজা। ঘাড়ে, গলায়, পিঠে অসংখ্য নখের আঁচড়ের দাগ। শার্টের উপরের বোতাম দুটো ছেঁড়া। হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ন্যাসো। রিচার্ড শার্ট ঠিক করে এগোয়, লিফটের দিকে যায়। ন্যাসোও ছুটে যায়। রিচার্ডের দীর্ঘ পায়ে তাল মেলাতে মেলাতে আমতা আমতা করে বলে,
“তাই বলে অফিসে বস?”
‘রিচার্ডের কণ্ঠ সোজাসাপটা, নির্দয় “সম্পূর্ণ হয়নি।”
“মানে?”
‘লিফটের বাটনে চাপ দেয় রিচার্ড, “আমাকে এক্ষুনি রাশিয়া যেতে হবে। লোকা নিডস হেল্প।”
‘এবার ন্যাসো বুঝতে পারে রিচার্ডের এত তাড়ার কারণ। সে বলে, “আমিও যাবো বস।”
“নো! তোমার এখানে থাকা দরকার। জেমস কিন্তু এখনও পিছু ছাড়েনি।”
‘ন্যাসো কথা বাড়ায় না। নীরবে মাথা নাড়ে।
লিফট থেকে বেরিয়ে বড় বড় পা ফেলে গাড়ির দিকে এগোতে এগোতে রিচার্ড বলে,”প্রাইভেট জেট রেডি?”
‘ন্যাসো নিচু গলায় জানায়,”বস… একটু ইন্টারনাল প্রবলেম।”
‘রিচার্ডের মুখ মুহূর্তেই কঠিন হয়ে যায়।শক্ত কণ্ঠে প্রশ্ন ছোড়ে,
“তাই বলে সবগুলোর?”
‘ন্যাসো মিইয়ে যায়। মাথা নত করে বলেল, “এক ঘন্টা পর একটা ফ্লাইট আছে বস… আপনি বললে আমি টিকিট বুক করে—”
‘রিচার্ড গর্জে ওঠে, “আমি এখন পাবলিক এয়ারলাইনে যাবো? আর ইউ ফাকিং ইনসেইন?”
‘ন্যাসো নীরব। উপায় নেই আর। বাধ্য হয়ে শেষমেশ রাজি হতে হয় রিচার্ডকেই।
‘ন্যাসো চিন্তিত মুখে স্থির দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ পিছনে কারও নিঃশব্দ উপস্থিতি টের পেয়ে চমকে উঠল। ঘুরে তাকাতেই রিচার্ড। রাত তখন চারটে। এই সময় তো রিচার্ডের প্লেনে, আকাশে থাকার কথা। অথচ সে দাঁড়িয়ে আছে ক্লান্ত, বিমর্ষ মুখে। ন্যাসোর চোখের প্রশ্ন উপেক্ষা করে রিচার্ড সোজা রুমের ভেতর ঢুকে গেল। ভেতরে গিয়ে দেখল এলিজাবেথ ইবরাতের কোমর আঁকড়ে ধরে কাঁপছে। গলা গুঁজে রেখেছে বুকের কাছে। শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠছে মাঝে মাঝে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে উঠছে”এরিদ… এরিদ…”
‘রিচার্ড কাঁপা গলায় প্রশ্ন ছুড়ল, “কি হয়েছে?”
‘ইবরাতও বিস্ময়ে তাকায় রিচার্ডের দিকে। নিচু স্বরে বলল,
“প্যানিক অ্যাটাক।”
‘রিচার্ড গভীর তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল। এমনটাই আশঙ্কা করেছিল সে। প্লেনে ওঠার সময় ফোন সাইলেন্ট ছিল রিচার্ডের। ওঠার কিছুক্ষণ পরে ফোন বের করতেই প্রথমেই চোখে পড়ে এলিজাবেথের মেসেজ ‘I miss you’তিনটি শব্দ যেন বাঁধভাঙা জল হয়ে আছড়ে পড়ে। এরপর আর নিজেকে সামলাতে পারেনি রিচার্ড। তবে সে ছিল আকাশপথে। এখানে ইচ্ছে করলেই ফেরা যায় না। আকাশ তার নিয়ম মানে না। তবুও বেপরোয়া হৃদয় থেমে থাকেনিরিচার্ড ছুটে যায় ককপিটে। নেক্সট ডেস্টিনেশনে প্লেন ল্যান্ড করানোর নির্দেশ দেয়। তিনশো যাত্রী নিয়ে প্রথমে পাইলট রাজি হয়নি। শেষমেশ মাথায় রিচার্ড বন্দুক ঠেকালে বাধ্য হয় সে। পরবর্তী এয়ারপোর্টে নামতেই হেলিকপ্টার নিয়ে ছুটে আসে রিচার্ড।
‘তার অন্তর বলছিল এলিজাবেথ ভালো নেই। সন্তান হারানোর পর থেকে মেয়েটি বাইরের দিক থেকে যতই শক্ত থাকুক, ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়েছে। সে নিজে দেখেছে কীভাবে মেয়েটি ছটফট করত হারানো সন্তানের জন্য। বারবার প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হতো, আর সেই মুহূর্তগুলোতে শুধুই রিচার্ডকে খুঁজত। কারণ একমাত্র রিচার্ডই পারত তাকে শান্ত করতে। কণ্ঠে একফোঁটা আক্ষেপ চোখে নিঃশব্দ ভালবাসা নিয়ে রিচার্ড এগিয়ে গেল এলিজাবেথের দিকে।
“বস, লোকা?”
‘রিচার্ড এলিজাবেথের পাশে গিয়ে বসল। ক্লান্ত স্বরে বলল,
“বেকআপ পাঠানো হয়েছে। হি ইজ সেফ নাও।”
‘এলিজাবেথকে নিজের বুকে টানতে চাইলেও এলিজাবেথ আসেনি। সামলানো যায়নি তাকে। তাই ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এখন আধোঘুমে। রিচার্ড গভীর শ্বাস ফেলল। ইবরাত তা লক্ষ্য করল। জানত, আজ রিচার্ডের রাশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। অথচ যার জন্য মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছে, তার এমন আচরণে বিরক্তি চেপে রাখতে পারল না ইবরাত। কণ্ঠে সামান্য ঝাঁঝ এনে বলল,
“এলিজাবেথ, তুই ভাইয়ার সাথে এমন করছিস ক—”
‘কথা শেষ করতে দিল না রিচার্ড। তীক্ষ্ণ প্রতিবাদ ছুটে এল,
“আমার ওয়াইফ।”
ই’বরাত বুঝতে পারল না। ভ্রু কুঁচকাল। ন্যাসো আগাম সতর্কতায় বউয়ের পাশে দাঁড়াল, জিভ কাটল বউয়ের বোকামিতে। ইবরাত ছোট করে বলল,
“জি ভাইয়া?”
‘রিচার্ডের চোখে ঝলসে উঠল ক্রোধের আগুন। কথা ঝলকে পড়ল, “আমার স্ত্রী। যেমন খুশি, তেমন আচরণ করবে। যা ইচ্ছে, তাই করবে। তাকে শাসনের দায়িত্ব আমার। অন্য কেউ কিছু বললে মেনে নেব না আমি।”
‘বলে রিচার্ড এলিজাবেথকে হেঁচকা টানে বুকে জড়িয়ে নিল। ন্যাসোও নিজের বউকে টেনে নিল পাশে। ইবরাত আর কোনো জবাব দিল না। রিচার্ড নিচু চোখে তাকাল এলিজাবেথের ফ্যাকাসে মুখের দিকে। মুখের কোলে ঝরা চুলগুলো আলতো করে কানের পাশে গুঁজে দিয়ে ন্যাসোকে উদ্দেশ্য করল,
“ও খেয়েছে?”
“না বস।”
“খাবারের ব্যবস্থা কর।”
‘ইবরাত মাঝখান থেকে নরম গলায় বলল, “মা তো অসুস্থ সকাল থেকে। আর আমি তো রান্না জানি না।”
‘আবারও তপ্ত শ্বাস ফেলল রিচার্ড। এলিজাবেথকে বালিশে শুইয়ে ধীর পায়ে উঠে দাঁড়াল। চোখে মগ্নতা। কণ্ঠে স্থিরতা।
“Ok, I will cook for her”
‘ইবরাত কৌতূহলী দৃষ্টিতে উপর থেকে কিচেনের দিকে উঁকি দিল। রিচার্ড শান্তভাবে কাজ করছে। কালো শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো! গায়ে সাধারণ ধূসর এপ্রোন। হাতের ছুরিটা চেনা ভঙ্গিতে ধরেছে। আঙুলের চাপ ঠিকঠাক, ছুরি নিখুঁতভাবে পেয়াজ কেটে চলেছে। কাটাগুলো সমান, দ্রুত, কিন্তু অযথা তাড়াহুড়ো নেই। রিচার্ড পেয়াজ কেটে নিয়ে ফ্রাইপ্যানে ফেলে দিল। হালকা তেলের ছাঁকা শব্দ হলো। হাতের কবজি ঘুরিয়ে প্যানটা সামান্য ঝাঁকিয়ে নিল। প্রতিটি যেন স্বচ্ছন্দ অভ্যাসের কাজ। তারপর আলগা ভঙ্গিতে লবণ আর মসলা ছড়িয়ে দিল। চোখে-মুখে বিশেষ ভাব নেই রিচার্ডের। বরাবরের মতোই ধীর-স্থির মুখে এগোচ্ছে। একদম প্রফেশনাল সেফের মতো রান্না করছে রিচার্ড।ইবরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
‘হঠাৎ ইবরাতের পিছন থেকে ন্যাসো উঁকি দিল। কৌতূহলে জিজ্ঞেস করল, “কি করছ রাত?”
‘ইবরাত বিস্ময়ে চোখ মেলে রিচার্ডের রান্নার দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাইয়া তো দেখি রান্নাতেও দারুণ এক্সপার্ট।”
‘বউয়ের মুখে অন্য পুরুষের প্রশংসা ন্যাসোর পছন্দ হলো না। চোয়াল শক্ত করে হঠাৎই ইবরাতকে কাঁধে তুলে নিল সে। রুমের দিকে এগোতে এগোতে ঠান্ডা স্বরে বলল,”আমি-ও একটা জিনিসে খুব এক্সপার্ট। চলো, দেখাচ্ছি।”
‘নামকরা নিউরোলজিস্টের সামনে বসে আছে রিচার্ড আর ন্যাসো। ন্যাসো ক্লান্ত চোখে বারবার হাই তুলছে। রিচার্ড তাকে সকাল সকাল জাগিয়ে এখানে টেনে এনেছে। সকাল সাতটায় ঘুমিয়েছিল সে৷ শরীর জুড়ে ঘুমের ক্লান্তি জমাট। ডক্টর আনিল রিডিং চশমার ফাঁক দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকাচ্ছেন রিচার্ডের দিকে। রিচার্ডের কঠিন, শীতল চোয়ালের রেখা তাঁকে বাকরুদ্ধ করে রেখেছে। একসময় রিচার্ড নিজেই গলা খুলল। ন্যাসোর দিকে সামান্য ইশারা করে সুরেলা অথচ গম্ভীর স্বরে বলল,
“ওর স্মৃতির ভেতর থেকে কিছু মুহূর্ত মুছে দিতে হবে।”
‘ঠিক তখন আরেকটা হাই তুলতে যাচ্ছিল ন্যাসো কিন্তু রিচার্ডের কথা শোনামাত্র তার চোখ বিদীর্ণ হলো বিস্ময়ে।রিচার্ড ডক্টর আনিলের সংকুচিত মুখাবয়বের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বলল,”আমি আজকের মধ্যেই ওর,,কথার মাঝপথে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল ন্যাসো সেখানে নেই।
‘পুরো হাসপাতাল চষে ফেলার পরও ন্যাসোকে খুঁজে পাওয়া গেল না। রিচার্ড রাগে গিজগিজ করতে করতে গাড়ির দিকে এগোল। গিয়ে দেখল ন্যাসো কাচুমাচু হয়ে গাড়ির এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। কাল রাত থেকে অসংখ্যবার বলেছে সে কিছু দেখেনি, তবু রিচার্ডের বুকের গভীরে থেকে যাচ্ছে ক্ষতের মতো এক খচখচানি। কাল তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে এলিজাবেথের পোশাক ছিল খানিকটা এলোমেলো। সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছে সন্দেহের বিষবীজ। ন্যাসোর কথাতেও তা নির্বাপিত হচ্ছে না।
‘নতমুখে ন্যাসো আবার বলল, “বস, সত্যি বলছি, আমি কিছুই দেখিনি। বিশ্বাস করুন। আপনি চাইলে আমি আলাদা বাসা নেবো।”
‘রিচার্ড গম্ভীর নিশ্বাস ফেলে ড্রাইভিং সিটে বসে স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরল। আজ নিজেই গাড়ি চালাবে। কিছু মুহূর্ত পাথরের মতো ভারী হয়ে গড়িয়ে গেল। পিনপতন নীরবতা ভেঙে ন্যাসো জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ধীর কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“বস, ম্যামের অপারেশন?”
‘রিচার্ডের ভিতরটা আগুনের মতো জ্বলছিলই; আবারও স্ত্রীর প্রসঙ্গ শুনে চোখের কোণ আঁধার হলো। চোয়াল চেপে কণ্ঠ চিবিয়ে বলল,
“মেয়ে ডোনার পেলেই অপারেশন হবে। নয়তো, আমি যে-ই পরিকল্পনা করেছি, সেভাবেই হবে। ফারদার আমার ওয়াইফের নাম যেন তোমাদের কারও মুখে না শুনি।”
‘গাড়ি গিয়ে থামল সরাসরি ম্যানশনের সামনে। রিচার্ডের গম্ভীর পদক্ষেপ ম্যানশনের ভিতরে এগিয়ে যাচ্ছিল। পেছনে ন্যাসো নিঃশব্দে অনুসরণ করছিল তাকে। হঠাৎ রিচার্ড থমকে দাঁড়াল। দৃষ্টি শানিত করে ঘাড় সামান্য কাত করল। ন্যাসো কপাল কুঁচকে রিচার্ডের দিকেই তাকাল। ঠিক তখনই বিদ্যুৎগতিতে পকেট থেকে রিভলভার বের করে শূন্যে গুলি চালাল রিচার্ড। চমকে উঠল ন্যাসো। গুলির প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যেতেই সবুজ ঘাসের উপর ধপাস করে পড়ল একটি ধূসর ড্রোন। ন্যাসো অভিভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল রিচার্ডের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর দৃষ্টিশক্তিতে। ড্রোনটা ছিল এমন নিখুঁত ধূসর, খালি চোখে ধরা পড়ার সম্ভাবনা ছিল নগণ্য। তবু হাঁটার ফাঁকে সেটা নজরে এনেছে রিচার্ড।
‘রিচার্ড এগিয়ে গিয়ে ড্রোনটা হাতে তুলল।
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫৯ (২)
সেটার দিক লক্ষ্য করে উপরের দিকে তাকাতেই বুঝল ড্রোনটা তার বেডরুমের দিকেই যাচ্ছিল। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হলো তার। কিছু আঁচ করতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই ঘাসের ভেতর অনুসন্ধান শুরু করল।
ন্যাসো বিস্ময়ে স্তব্ধ। হঠাৎ রিচার্ডের হাতে উঠে এলো একটি পেনড্রাইভ। ড্রোনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল সেটা। রিচার্ড মুহূর্ত বিলম্ব না করে পেনড্রাইভ হাতে ম্যানশনের নিচের বাঙ্কারে চলে গেল। ল্যাপটপে পেনড্রাইভ লাগাতেই স্পিকারে ভেসে উঠল এক রহস্যময় অডিও। রিচার্ডের শিরদাঁড়া বেয়ে নামল শীতল ঘাম। চোখের কোণে স্পষ্ট হয়ে উঠল এক অজানা আতঙ্কের ছায়া।