মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ১৫

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ১৫
মুসতারিন মুসাররাত

গ্রীষ্মের দুপুর। গলির রাস্তা ফাঁকা, গাছপালার ছায়া ছড়ানো, হালকা হাওয়া বইছে। কলেজ থেকে বাসায় ফিরছে প্রত্যাশা। স্কুটির হ্যান্ডেলে দুইহাত রেখে হেটে হেটে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে যাচ্ছে। আর মাঝেমাঝে গালে থাকা সেন্টার ফ্রুট চিবাচ্ছে তো আবার ফুলাচ্ছে। পাশে হ্যাপি চিপস খেতে খেতে হাঁটছে, অপর পাশে নাহিদ সাইকেলে চড়ে। হঠাৎ পিছন থেকে রোহান দৌড়ে আসল। কোনো কিছু না বলেই ঝাঁপিয়ে নাহিদের সাইকেলের পেছনে বসে পড়ল। সাইকেলের ভারে একটু হেলে পড়তে পড়তে, কোনোরকমে নাহিদ সামলে নিলো। পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল,

-” আরেএএএ ব্যাটা, আরেকটু হলেই তো যাচ্ছিলাম। একদম ড্রেনে পড়তাম। সাইকেল তো যেতোই, সাথে এক ডজন সাবান লাগত। গা থেকে ড্রেনের পঁচা গন্ধ দূর করতে।”
ওপাশ থেকে প্রত্যাশা চেঁচিয়ে বলল,
-” নাহিদ সমস্যা ছিলো না, ওর বড়লোক শ্বশুরের থেকে বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে, একটা বাই-সাইকেল আর এক বক্স সাবান নিয়ে তোকে দিতো।”
রোহান বলল,
-” শালার হবু শ্বশুর ঘ্যাড়ত্যাড়া। মেয়েই দিচ্ছে না। মেয়ের সাথে এক টাকার লজেন্স পাব কী না সন্দেহ! সেখানে এসব পাব, ভাবাও বিলাসীতা। ছ্যাহ!”
প্রত্যাশা হাসতে হাসতে স্কুটিতে চেপে বসল। পরপর হ্যাপি পিছনে। গল্প গুজবের মাঝে হঠাৎ প্রত্যাশা নাটকীয় ভাব নিয়ে স্কুটির হ্যান্ডেল থেকে হাত সরিয়ে ফেলল। তারপর ওদের দেখিয়ে চিৎকার করে বলল,
-” এই দ্যাখ দ্যাখ! আমার হাত নেই!”
নাহিদ কপালে বিরক্তির ছাঁট ফেলে, সিরিয়াস গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” এ আবার এমন কী? দ্যাখ!”
বলেই সাইকেল চালাতে চালাতে সেও দু’হাত ছাড়ল। প্রত্যাশা মুখ বাঁকাল। নিজেকে আরেক ধাপ উঁচুতে রাখতে দুষ্টু হাসল। দাঁত কেলিয়ে স্কুটির সিটে সোজা হয়ে বসে দু’পাশে একটু পা ছড়িয়ে বলল,
-” এবার দ্যাখ। আমার পা-ও নেই, হুঁ।”
নাহিদ বলল,
-” মেরি বোন, অতো রিস্ক নিতে চাইছি না…”
রোহান উসকানিমূলক সুরে বলল,
-” দেখিয়ে দে না ওকেও। নাহলে কনফিডেন্স কই? আমি পিছে আছি তো মামা। টেনশন নেই।”
নাহিদ হাসতে হাসতে বলল,
-” না মামা! পা নাই বলতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করলে… পরে বলতে হবে; দাঁতও নেই রে!”
হ্যাপি মুখে চিপস পুরে চিবাতে চিবাতে বলল,
-” দোস্ত ফাজলামি বাদ দিয়ে ঠিকঠাক চালা। আমি এখন হেলমেট ছাড়া হ্যাপি সিং। এক্সি’ডেন্ট হলে নাম হবে; লাস্ট স্ন্যাক উইদ হ্যাপি চিপস।”
প্রত্যাশা অনেকটা এগিয়ে গেছে। নাহিদের ম্যাড়মেড়ে শব্দ করা সাইকেলটা যেন হাঁপাচ্ছে। চলছে ধীর গতিতে। পেছন থেকে রোহান বিরক্ত হয়ে জিভে একটা ‘চ’ শব্দ তুলে বলল,
-” তোর এই সাইকেল দেখি, জটিল আর কঠিন রোগে ভুগছে। যেন কোনাে হার্ট পেশেন্ট এক্সারসাইজে নামছে। মামা তাড়াতাড়ি একে নিয়ে কলিকাতা হারবালের শরনাপন্ন হ। এক ফাইলই যথেষ্ট। এর ঘ্যাড়ঘ্যাড়ে শব্দে আমার মাথা ন’ষ্ট।”
এই বলে রোহান পিছন থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ল।

তিন রাস্তার মোড়ের কাছাকাছি যেতেই প্রত্যাশার চোখদুটো বিস্ময়ে সরু হয়ে যায়। নীরবের মতো লাগছে। পিছনের দৃশ্য দেখে কপালে চিন্তার ছাপ পরে…ওইতো দেখা যাচ্ছে, কালো বাইকের পিছনে একটা বাচ্চা মেয়ে বসে। পিঠে স্কুল ব্যাগ, দুইহাতে শক্ত করে বাইকারের পেট পেঁচিয়ে ধরে আছে। কালো বাইক, ইউনিফর্ম, পিছনের অবয়ব। মন বলছে ওটা নীরব। তবে বাচ্চা মেয়েটা কে? আনিশা? উঁহু! আনিশা এর থেকে একটু বড়। আর আনিশার চুলগুলো একটু কুকড়ানো। বাইকার সহ, মেয়েটির পিছন সাইড দেখা যাচ্ছে। বাইকটা মূহুর্তেই অপর রাস্তা দিয়ে ছুটে আড়াল হয়ে গেল। কত পুলিশই তো আছে। তাদের কেউ হবে হয়তো! বাচ্চাকে স্কুল থেকে…এসব ভেবে প্রত্যাশা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল! কয়েক সেকেন্ড আগের দৃশ্য আর ভাবনা।

ইচ্ছেকে মনা উপরে নিয়ে যায়। তানিয়া ড্রয়িংরুমেই ছিলেন। নীরবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-” বসো বাবা।”
তারপর সার্ভেন্টকে ঠান্ডা পানীয় আনতে বললেন। নীরব সোফায় বসল। ভেতরে ভেতরে ওর এক ভাবনা চলছে। কীভাবে প্রসঙ্গ উঠাবে ভাবছে। এরমধ্যে হন্তদন্ত পায়ে, একহাতে সাইড ব্যাগ ধরে, অন্যহাতে শাড়ির কুচি আগলে এগিয়ে আসছে প্রীতি। খানিকটা দূর থেকেই বলল,
-” মা, ইচ্ছে আসছে?”
বলতে বলতে দৃষ্টি গেল নীরবের দিকে। তানিয়া বললেন,
-” এই তো একটু আগেই নীরব নিয়ে এল।”
-” ওহ্।”
ছোট করে জবাব দিয়ে সোফায় এসে বসল প্রীতি। তানিয়া বলতে থাকলেন,

-” সার্থ বলল, ড্রাইভার নাকি অসুস্থ। আবার সার্থও তো ক্যাম্পেইনে শহরের বাইরে গিয়েছে। তাই তোকে ফোন দিয়ে ইচ্ছেকে আনতে বলল। তোকে ফোন দিলাম, ফোন বন্ধ দেখাল। তাই শেষমেষ উপায়ান্তর না দেখে নীরবের কাছে ফোন দেই।”
প্রীতি ব্যাগের সাইড থেকে ফোন বের করতে করতে জবাবে বলল,
-” তখন একটা মিটিং এ ছিলাম। মিটিং শেষে ফোন ওপেন করতেই ভাইয়ার কল দেখলাম। ব্যাক করার পর… শুনেই, ছুটে এলাম। স্কুলে এসে ইচ্ছে নেই শুনে মাথা ঘুরে গিয়েছিল। তারপর গেইট পাশের স্বাক্ষর চেক করে; নীরবের নাম দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।”
এরমধ্যে ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাসের ট্রে এনে টি-টেবিলে নামায়। তানিয়া খান আদুরে গলায় নীরবকে নিতে বললেন। নীরব গ্লাসটা হাতে তুলল। বলল,
-” আন্টি আমার একটা কথা বলার ছিলো…”

প্রীতি ঝুঁকে একটা গ্লাস হাতে নিচ্ছিল। আড়চোখে ভ্রু কুঁচকে নীরবের দিকে তাকাল। পরপর গ্লাসটা হাতে নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসল। তানিয়া একগাল হেসে বলল,
-” বলো বাবা, এতে জিজ্ঞেস করার কী আছে? একটা কেনো, হাজারটা বলো। কোনো সমস্যা নেই।”
কোমল পানীয়ের গ্লাসে ছোট্ট করে চুমুক দেয় নীরব। তারপর নির্লিপ্ত ভঙিতে বলল,
-” আমি চাইছি খুব দ্রুতই ইচ্ছেকে ওর নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে। ওখানে অনেকে আছে, ইচ্ছের দেখাশোনার কোনো সমস্যা হবে না। পরিপূর্ণ একটা পরিবার পাবে। ও যে ধাক্কাটা পেয়েছিলো, মানসিক বিকাশে বিঘ্ন হচ্ছিল; আশাকরি সবার মাঝে থেকে নতুন কোনো আঘাত পেলেও; সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। সবার ভালোবাসায় , আদরে সুন্দর একটা লাইফ পাবে।”
প্রীতি তাচ্ছিল্য হাসল। কৌতুকের সুরে বলল,

-” কী বললে তুমি? হাউ ফানি! ওটা ইচ্ছের নিজের বাড়ি? কবে থেকে শুনি?”
নীরবের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। গলার স্বর ভারী হয়ে গেল,
-” ইচ্ছের শরীরে আমাদের বংশের র°ক্ত বইছে, এটা অস্বীকার করতে পারবে? ইচ্ছে আমাদের পরিবারের মেয়ে। এটা যেমন মিথ্যে নয়, তেমনি___”
প্রীতি মাঝখানেই থামিয়ে দিল নীরবকে। ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের ছাপ নিয়ে ব্যঙ্গ কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
-” আগে আমায় বলো, ওটা ইচ্ছের বাবার বাড়ি কখনো ছিলো?”
প্রীতির ত্যাড়া কথায় রাগে নীরবের মাথার মধ্যে দপদপ করতে লাগল। নীরবকে সুযোগ না দিয়ে প্রীতি নিজেই উত্তর দিল,
-” তোমরা তো সেই বাড়িকে ওর বাবার ঠিকানা বানাতে দাওনি কখনো। ইচ্ছে তো ওখানে বেড়ে ওঠেনি। কখনো ওখানে পা ফেলার সুযোগই পায়নি। ইভেন তোমাদের বাড়ির কেউ কখনো দেখতেই আসেনি। তুমি এখন বলছো, ওটা ওর বাড়ি? কবে থেকে, নীরব? টেল মি?”
নীরব তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল। ঠাণ্ডা স্বরে বলল,

-” যেটা কাগজে-কলমে বাবার ঠিকানা, সেটা নিয়ে আমি অহেতুক তোমার সাথে তর্ক করতে চাইছি না। ইচ্ছের খোঁজখবর নেয়নি। এখানে শুধু আমার পরিবারেরই দোষ ছিলো না। তোমরা নিজেরাই দূরে থেকেছো। আর যেকোন কিছুর সুযোগ আপনাআপনি বয়ে আসে না, সুযোগ করে নিতে হয়। না নীবিড় কখনো করেছিল, না তো তুমি। তোমাদের বিয়ে মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে তোমরা কখনো গিয়েছিলে মানাতে? কখনো গিয়ে ক্ষমা চেয়ে, কাছে থাকার সুযোগটুকু চেয়েছিলে?, আমি যতটুকু জানি তোমরাই কোনো যোগাযোগ রাখনি।”
-” আমাকে ব্লেইম করছো? সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছো। তোমার ভাইকে বলেছিলাম, পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আমায় বিয়ে করতে?”
তানিয়া ব্যাকুল চোখে দুজনের তীব্র দ্বন্দ্ব দেখছেন। পরিস্তিতিটা স্বাভাবিক করতে দু সেকেন্ড ভাবলেন। তারপর একটু দুশ্চিন্তার সুরে বললেন,
-” তোমার মা রাজি হবে তো নীরব?”
-” নীবিড়ের কিছু ভুল ছিলো। মা একটু বেশিই অভিমানী; সেটাও মানছি। তবে মায়ের মনটা খুব নরম। আমি জানি, মা যদি একবার ইচ্ছের চোখে চোখ রাখে, আর না বলতে পারবে না। মা’কে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার। বাবা ফিরলেই দু’জনকে একসাথে বসিয়ে সব বুঝিয়ে বলব। সেটা আমার উপর ছেড়ে দিন।”
প্রীতি এবার রীতিমতো চেঁচিয়ে উঠল,

-” মাথা ঠিক আছে তোমার? আমি আমার মেয়েকে দিতে পারব না। আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে।”
নীরব শান্ত কিন্তু স্পষ্ট গলায় বলল,
-” তোমার থেকে ইচ্ছেকে আলাদা করার কথা বলেছি? বলিনি তো। আর না তো এরকম ইনটেনশন আছে। ইচ্ছে যেখানেই থাকবে, ওর মাম্মাও সাথে থাকবে। যদি তুমি চাও। আশাকরি তুমি ব্রেনি।”
আর বাড়তি কথা না বলে নীরব গ্লাসটা টেবিলে নামাল। পরপর তানিয়ার দিকে চেয়ে ভদ্রতা দেখিয়ে বলল,
-” আমি তাহলে উঠি।”
শব্দহীন পায়ে প্রস্থান করে নীরব। যতই প্রীতি মেয়ে-মেয়ে করুক। এ কদিনে নীরব ঢের অনুমান করেছে; প্রীতি মেয়ের প্রতি বড্ড উদাসীন। এমন একটা উদাসীন মায়ের কাছে ইচ্ছে মোটেই সেভ নয়। বিভিন্ন কিছু লক্ষ্য করে নীরব শেষমেষ ইচ্ছেকে নিজেদের বাড়িতে রাখার কথা ভাবে। এখন মা’কে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মানাতে পারলেই হয়।

পূর্ণিমার রাত। হঠাৎই চাঁদের থালাটা ধীরেধীরে মেঘের আঁচলে ঢাকা পড়ে গেল। এক ঝটকায় দমকা হাওয়া বইতে শুরু করল, সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা। হাওয়ার সাথে বৃষ্টির প্রথম ফোঁটাগুলো এসে গাল ছুঁয়ে দিল। নীরব কফির মগ হাতে এসে সোজাসুজি দোলনায় বসল। আদেশের সুরে বলল,
-” প্রত্যাশা….সরে দাঁড়াও, বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে যাচ্ছো তো।”
প্রত্যাশা বিরক্ত মুখে ঘুরে নীরবের দিকে তাকাল। ঠোঁট উল্টে বায়না করে বলল,
-” ভিজি না? দারুণ লাগছে তো!”
-” উঁহু! ঠান্ডা লাগবে, জ্বর আসবে।”
কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে নীরব বলল। প্রত্যাশা ঠোঁট ফুলিয়ে মুখ ভার করে রইল। কিছুপল ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে কিছু ভেবে নীরবের পাশে গিয়ে বসল। আলাপ জমাতে পা দুটো দুলাতে দুলাতে বলল,
-” বৃষ্টি আপনার ভালো লাগে না?”
-” হুম।”

উত্তরটা প্রত্যাশার মনোঃপুত হলো না। ও মুখ ভেঙিয়ে বলল,
-” হুম…এই একটা উত্তর হলো। আপনার যায়গায় অন্যকেউ থাকলে, এই ঝুম বৃষ্টির রাতে, আমার মতো একটা কিশোরী মেয়েকে পাশে নিয়ে; নির্ঘাত একটা কবিতা-টবিতা লিখে ফেলত। শুধু কবিতাই নয়, রোমান্টিক গানটানও গাইত, হুম। সাথে বৃষ্টিতেও ভিজতো। আপনি তো সেসব কিছুই করবেন না। ভিজবেনও না। আমাকেও ভিজতে দিবেন না।”
নীরব নিরুত্তর। নীরবের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে প্রত্যাশার রাগ হলো। ও ঝটিকায় উঠে দাঁড়িয়ে তর্জনী আঙুলে নাক ঘষে নিয়ে ঘনঘন বলল,
-” আপনি খুব আনরোমান্টিক। এখানে আপনার সাথে থাকলে রাগ বাড়বে বৈ কমবে না। তারচেয়ে বরং রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ব্যাড নাইট। বোরিং নাইট।”
এই বলে পা চালিয়েছে আর অমনি শাড়ির আঁচলে টান পড়ল। নীরব বাম হাতের কফির মগ নামিয়ে, ডান হাতে শাড়ির আঁচলটা পেঁচাতে পেঁচাতে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
-” কী বললে, আমি আনরোমান্টিক? অন্যকেউ হলে কবিতা তারপর গানও গাইত। তাই বলছিলে, রাইট?”
প্রত্যাশা একহাতে শাড়ির আঁচল টেনে বলল,

-” ছাড়ুন তো।”
আঁচল ছাড়িয়ে প্রত্যাশা পা বাড়াল। আচমকা বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের সাথে আকর্ষণীয় সুর কানে এল,
-” Kisi shayar ka dil banke, Baristi hain boondein tumpe…”
প্রত্যাশা থমকে দাঁড়ায়। ধীরেধীরে পেছনে ফিরে তাকায়। নীরব ওর দিকেই চেয়ে মুখে স্নিগ্ধ হাসি। প্রত্যাশার ভ্রু কুঁচকে গেল। ও সরু চোখে চাইল।
-” Nazara uff kya hota hai, Guzarti hain jab julfon se…”
তারপর প্রত্যাশার একদম কাছাকাছি এসে চুলের ভাঁজে মুখ ডুবায়। প্রত্যাশা কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল। প্রত্যাশার হাত ধরে নীরব আঁটকে দিল,
-” Doori kahin ab jao na tum….”
পরপর একহাতে বৃষ্টির জল ধরে, আকাশের দিকে মুখ তুলে,
-” Sun sun sun barsat ki dhun sun…”
প্রত্যাশা থেমে স্থির দাঁড়িয়ে। নীরব ওর চোখে চোখ রেখে,
-” Dil mein yahi ek gham rehta hai…”
প্রত্যাশা ভ্রু কুঁচকে হাত নেড়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে–কী?
নীরব এবার মুচকি হেসে একহাতে প্রত্যাশার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। মুখটা অসহায় বানিয়ে,

-” Sath mere tu kom rehta hai..”
প্রত্যাশার মুখে হাসি ফোটে। চোখের ভাষায় বলে,
-” তাই নাকি?”
-” Chhod ke ab hi haaun…”
প্রত্যাশা বিনিময় মিষ্টি হাসল। চোখের ভাষা বলছে– আচ্ছা। বাতাসে বৃষ্টির ছাপটা এসে দু’জনের গায়ে পড়ছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি দু’জনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। প্রত্যাশার ঠোঁটে বৃষ্টির জল জমে চিকচিক করছে। সেই চিকচিক আলোয় প্রতিফলিত হয় নীরবের চোখের আকুলতা। নীরব ঘোরলাগা দৃষ্টিতে প্রত্যাশার দিকে চেয়ে। ঠান্ডা বাতাসে প্রত্যাশার শরীর থেকে থেকেই কাঁপছে। বাড়ছে বুকের কম্পনও। নীরবের মুখটা এগিয়ে আসে। দু’জনের ঠোঁট ছুঁইছুঁই। প্রত্যাশা চোখ বুঁজে নেয়। ঠিক স্পর্শের আগ মুহূর্তে, আকাশে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে! তীব্র শব্দ হলো; প্রত্যাশা আঁতকে উঠল। ঠাস করে চোখ মেলে তাকায়। ধড়ফড় করে উঠে বসে। রুমময় নজর বুলিয়ে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। জানালার বাইরে ঝুম বৃষ্টি, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মেঘ গর্জে উঠছে। কয়েক মূহুর্ত পর ঠাহর করে এটা স্বপ্ন ছিলো। চোখেমুখে লজ্জার ছায়া ফুটে ওঠে। কপালে হাত রেখে ভাবল,

-” ও মাই আল্লাহ! এমন স্বপ্ন! তাও আবার এএসপি সাহেবকে নিয়ে। ইশশ! কী লজ্জা! কী লজ্জা!”
রাতে প্রিয় সিঙ্গার জুবিন নটিয়ালের এই গানের ভিডিও দেখতে দেখতে শুয়ে ছিলো প্রত্যাশা। আর স্বপ্নে কী না নিজেকে এএসপি সাহেবর সাথে দেখলো। তবে একটা আফসোস থেকে গেল—ইশশ গানটা সম্পূর্ণ হলো না।
একটা বালিশ কোলের উপর নিয়ে আয়েশ করে বসল প্রত্যাশা। সেদিনের কথা ভাবল– সেদিন তো হঠাৎ আব্বুর ডাকে এএসপি সাহেব নিরাপদ দূরত্বে সরে দাড়াল। তারপর বলল; মিষ্টি বিদায়টা পাওনা রইল। পরেরবার সুদসহ নিব।

আজ স্বপ্নের মধ্যেও মেঘের গর্জন ভিলেন হয়ে দাঁড়াল। এএসপি সাহেবের দেখছি পোড়া কপাল। না জানি এভাবে কতবার ব্যর্থ হওয়ার পর….সফল হন। নাকি ব্যাটার কপালে শনি আছে। প্রকৃতিও যে তার রোম্যান্সে বাগড়া দিলো। তাহার কপালে বউয়ের সোহাগ বুঝি নেই।
এইভেবে প্রত্যাশার ভীষণ হাসি পেল। একহাতে মুখ চেপে হাসল। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় ঘুম আসছিলো না। ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপে গেল। বন্ধুদের গ্রুপে একটা মেসেজ দিল,
-” জেগে আছিস কেউ?”
অনেকক্ষণ হওয়ার পরও মেসেজ delivered হলো না। প্রত্যাশা বিরক্ত হয়ে আবার লিখল,
-” সব কটা গুললায় গিয়েছে।” সাথে একটা অ্যাংরি ইমুজি দিয়ে এফবিতে ঘুরাঘুরি করছিলো। হঠাৎ মেসেজ নোটিফিকেশন এলো। প্রথম মেসেজে নাহিদের রিপ্লাই,

-” নাহ। ঘুমিয়ে আছি, মেরি বোন।”
প্রত্যাশাও সাথে সাথে লিখল,
-” তা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অনলাইনে কী করছিস মেরি ভাই? স্বপ্নে এদেশ ওদেশ পারি দিয়ে আয়।”
নাহিদ হা হা রিয়েকট দিয়ে, চটজলদি মেসেজ সেন্ট করল,
-” আমার আত্মা অনলাইনে, দেহটা চার্জে আছে! তাই আজ আর যেতে পারছি না। চার্জ ফুল হোক।”
প্রত্যাশা হা হা দিয়ে অনলাইন থেকে বেরিয়ে আসলো। হঠাৎ কিছু ভেবে কল লিস্টে গিয়ে উপরে থাকা নম্বরে কল দিলো। খুব বেশি সময় না হলেও, প্রতিদিন রাতে কথা হয় মিস্টার আনপ্রেডিক্টেবলের সাথে। উনি নিজেই রাতে কল দেয়, ভালো-মন্দ টুকটাক কথা হয়। রিং হয়ে বেজেবেজে অবশেষে রিসিভ হলো। ঘুম জড়ানো স্বর এলো,
-” হ্যালো?”
প্রত্যাশা সাড়া দিলো না। নীরব কয়েক সেকেন্ড পর আবার বলল,

-” হ্যালো… প্রত্যাশা?”
প্রত্যাশা তবুও নিশ্চুপ। এবার এলো,
-” ফোন রেখে দিবো?”
প্রত্যাশা তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,
-” এই না না…”
নীরব ঘুমঘুম কণ্ঠেই বলল,
-” হঠাৎ এত রাতে! ঘুমাওনি?”
-” ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম আসছিলো না। তা….”
-” ইটস্ ওকে। নো এক্সপ্লেইন।”
প্রত্যাশা ছোট করে শ্বাস ফেলল। আলতো স্বরে বলল,
-” শুনুন না?”
নীরবের কণ্ঠেও প্রশ্রয় প্রকাশ পেল,
-” হুম, শুনছি তো। বলো।”
-” জানেন….এই প্রথম আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলাম। তাও আবার রোমান্টিক স্বপ্ন।”
নীরবের মাঝে কোনো ভাবাবেগ, এক্সাইটেড প্রকাশ পেল না। ও স্বাভাবিক ভঙিতেই বলল,

-” তাই?”
-” হুম।”
ছোট করে জবাব দিয়ে। নড়েচড়ে বসল প্রত্যাশা। তারপর কণ্ঠে একটু আক্ষেপ মিশিয়ে বলল,
-” ইশশ্! জানেন কী হয়েছে? স্বপ্নটা না সম্পুর্ন দেখতে পারিনি। দেখছেন না আকাশে মেঘের কী তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তীব্র মেঘের গর্জনে ঘুম ভেঙে গিয়েছে। রোমান্টিক স্বপ্নটা কমপ্লিট হওয়ার আগেই… যাহ দিল ঘুমটা ভেঙে।”
-” আবার ঘুমিয়ে পড়ো। অসম্পূর্ণ স্বপ্নটা সম্পূর্ণ করো।”
-” ধ্যাত! একবার ঘুম ভেঙে গেলে, পুনরায় আবার সেই স্বপ্ন দেখা যায় নাকি?”
-” যায় না?”
নীরবের প্রশ্নে প্রত্যাশা অল্প-স্বল্প রাগি স্বরে বলল,
-” এই এই আপনি আমার সাথে ফাজলামি করছেন নাকি? আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি, হু।”
নীরব নিঃশব্দে হাসল। বলল,

-” আচ্ছা রেগো না। আর ফাজলামি করবো না। তবে এখন কিন্তু মোটেই ফাজলামি করে নয়। একদম সিরিয়াসলি বলছি; তোমার রোমান্টিক ইনকমপ্লিট স্বপ্নটাকে কমপ্লিট করতে—আসবো কী?”
প্রত্যাশার মুখটা হা হয়ে যায়। দমকা হাওয়ায় জানালার পর্দা উড়ছে। বৃষ্টির পানি জানালার কাঁচ ছুঁয়ে দিচ্ছে অবিরাম। নীরব বিছানায় শুয়ে সেদিকে চেয়ে মৃদুস্বরে বলল,
-” ওয়েদারটা কিন্তু দারুণ রোমান্টিক আছে! ভেবে দ্যাখো।”
প্রত্যাশা গলায় কপট রাগ ঢেলে বলল,
-” আপনি তো দেখছি মশাই, মোটেই সভ্য পুরুষ নন।”
-” বউয়ের কাছে সভ্য হওয়া ঠিকও নয়।”
বর্ষায় ফোঁটা ফুলের মতোন কোমল লাজুক হাসল প্রত্যাশা। লজ্জায় লাল হওয়া থেকে রেহাই পেতে তড়িৎ বলল,
-” ঘুম পাচ্ছে রা….”
-” আমার ঘুম হারাম করে, এখন তোমার ঘুম পাচ্ছে।”
-” বাররে…আমি আবার আপনার ঘুমের কী করলাম?”
-” কিছুই করোনি?”
-” নাহ তো।”
-” আচ্ছা, তাহলে ঘুমিয়ে পড়। আর যদি স্বপ্নটাকে সম্পূর্ণ করতে চাও; তাহলে এখনো সময় আছে। বলো আসব নাকি?”
-” ধ্যাত তেরি!”
এতটুকু বলেই প্রত্যাশা কল কাটে। নীরব নিঃশব্দে হেসে চাদরটা গায়ে টেনে ঘুমিয়ে পড়ে।

কয়েকদিন পর….
আজ তিন-চার দিন হবে নীলা এ বাড়িতে এসেছে। সময়টা এখন গোধূলি। সন্ধ্যা নামনাম ভাব। মাহবুব সাহেব উমরাহ হজ্জ করে গতকাল ফিরেছেন। ওখানে থাকতে প্রত্যাশার হাতের কথা শুনেছিলেন, তারপর নীলাও এখানে। বিকেলে হুট করে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দেখতে এসেছেন।
অধরা ফোন হাতে মাঝে মাঝে প্রত্যাশার কাছে কল দিয়ে যাচ্ছে। ফোন বন্ধ বলছে। সন্ধ্যা নামছে, অথচ প্রত্যাশা প্রাইভেট থেকে এখনো ফেরেনি। এদিকে নীহারিকা বেগম আসার পর থেকে প্রত্যাশার কথা জিজ্ঞেস করছেন– রোজই এত দেরি হয় আসতে? এটাসেটা প্রশ্ন করছেন। অধরা কিছু বলে সামলে নিবে। তার আগেই নীলা– বন্ধুদের সাথে কোথায় ঘুরছে।
অধরা পড়েছে ফ্যাসাদে। সন্ধ্যার আগেই তো প্রত্যাশা চলে আসে। আজ এত দেরি হচ্ছে কেনো? এদিকে শ্বশুড়-শাশুড়ি এসেছেন। কী একটা জ্বা’লা। জ্বালা মানে বহুত জ্বা’লা। অধরা চিন্তায় চিন্তায় একশা হয়ে পড়ছে। অবশেষে বন্ধুদের নম্বরে কল দিলো।

সূর্যটা অস্ত যেতে থাকল। ছোট বড় যানবাহনের একপাশে প্রত্যাশার ছোট্ট স্কুটি। প্রাইভেট শেষে বন্ধুদের সাথে শহর থেকে অনেকটা দূরে বয়ে যাওয়া নদীর তীরে ঘুরতে আসছিলো। হ্যাপি প্রাইভেট থেকেই বাসায় যায়। প্রত্যাশার সাথে কোয়েল ছিলো। রোহানের বাইকে নাহিদ। তারও হঠাৎ কাজ পড়তে, মাঝ রাস্তায় নেমে যায়। ওরা তিনজন আসলেও ফিরছে প্রত্যাশা একা। রোহানের সাথে কোয়েল আবার লং ড্রাইভে গিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে যাবে দেখে প্রত্যাশা আর যায়নি। তবে কে জানত? ভাগ্য আজ অসহায় হবে। শহরে ঢোকার বিশ কিঃমিঃ দূরে যে ব্রীজ আছে, সেখানে ট্রাকের সাথে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটা বাসের সংঘর্ষ হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, একটা ছাত্র নাকি মা”রাও গিয়েছে। বেশ কয়েকজন গুরুতর আ’হত।

এই রোডে শতশত গাড়ি আটকে আছে। সামনে পু’লিশের ব্যারিকেড। পুলিশের ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, মানুষের ভিড়। সব মিলিয়ে এক অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। এদিকে প্রত্যাশা টেনশন করতে করতে অস্থির। ওর পাশে বাইকে দু’টো ছেলে বসে। ওর দিকে বাজে নজরে চেয়ে। একের পর এক সিগারেট খাচ্ছে, আর ধোঁয়া উড়াচ্ছে।
ফোনটাও বের করতে নিয়ে হাত ফস্কে পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খোলার নাম নিচ্ছে না। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে, রাস্তা ক্লিয়ার হতে দেড় দুই ঘন্টা লাগবে। ঘটনা পরিদর্শনে স্বয়ং এমপি আসবে, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ইতিমধ্যে আসছে। তবে এখান থেকে মূল জায়গাটা বেশ দূরে। সামনে অনেক গাড়ির ভিড়। প্রত্যাশা অনেক পিছে।
চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। চারিপাশের গাড়ির আলোয় জায়গাটা মৃদু আলোকিত। বাইকের ছেলে দুটোর তাকানো কুৎসিত। তারপর সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রত্যাশার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ও উঠে রাস্তার একপাশে যায়। চিন্তায় দরদরিয়ে ঘাম ছুটছে। জোরে জোরে শ্বাস নিল। সামনে তাকাতেই আঁতকে উঠল। বাইকের ছেলে দুটোও নেমে এসেছে। প্রত্যাশার গলা শুকে চৌচির। কোনো রকমে উপরে সাহস দেখিয়ে বলল,

-” এই আপনারা, এভাবে পিছু নিচ্ছেন কেনো? আর কী চাই? হ্যাঁ…”
লাল গেঞ্জি গায়ে অল্প বয়সী বখাটে ছেলেটা হাসতে হাসতে, অপর পাশের ছেলেটির গায়ের উপর পড়তে পড়তে ফের সোজা হয়ে বলল,
-” আরে ভাই মাইয়া দেহি ফিডার খায়। কিছুই বোঝেনা। ভাই উত্তরটা দিয়া দ্যান তো।”
গলায় চেইনসহ লকেট ঝুলানো, হাতে বালা পরিহিত ছেলেটি মুখের ভেতর থাকা সিগারেটের ধোঁয়া প্রত্যাশার মুখের উপর ছেড়ে বলল,
-” তোমাকে চাই ময়না। তোমাকে।”
ঠাস করে চ’ড় পড়ল ছেলেটির গালে। পাশের জন চমকে তাকাল। প্রত্যাশা চড় দিয়ে কলার চেপে ধরল। দাঁত খিচিয়ে বলল,
-” কুত্তা***”বাড়িতে মা বোন নেই। রাস্তায় মেয়ে দেখলেই কুকুরের মতো লালা ঝরে।”
আর কিছু বলতে পারল না প্রত্যাশা। তার আগেই পিছুন থেকে এসে ছাড়িয়ে, ওর হাত দু’টো মুচড়ে ধরল লাল গেঞ্জি পরিহিত ছেলেটি। প্রত্যাশা ব্যথায়–‘আহ’ বলে উঠল। থা”প্পড় খাওয়া ছেলেটি তেতে উঠল। একহাত নিজের গালে ডলল। পরপর বলল,
-” দাঁড়া তোরে তো…”
বলেই প্রত্যাশার কাঁধের উপর থাকা ওড়না একটানে ছুঁড়ে ফেলল। বাতাসে ওড়নাটা গিয়ে বেশ দূরে পড়ল। এগিয়ে বলল,

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ১৪

-” দাঁড়া, শা”___”
বি’শ্রী গালি দিয়ে প্রত্যাশার গাল চেপে ধরল একহাতে। প্রত্যাশা চিৎকার করতে পারছে না। প্রত্যাশার চোখে পানি টলমল করছে। ছেলেটি ওর দিকে এগিয়ে এলো লালসার দৃষ্টি নিয়ে। প্রত্যাশার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আচ্ছা এরা এখন ওর সাথে খা’রাপ কিছু করে মে*রে ফেলবে? নাকি কাল সকালে খবরের পাতায় ছাপা হবে; প্রত্যাশা নামের কিশোরীর ধ”র্ষণের নির্মম খবর। প্রত্যাশার ভেতরটা চিৎকার করে বলছে–ইয়া আল্লাহ! এর আগে আমার মৃ*ত্যু হলেও আমি খুশি হতাম। ইয়া রব! দয়া করো। সামনের ছেলেটা এগোতে থাকল। প্রত্যাশা চোখ বুঁজে নেয়। নিজেকে ছাড়াতে মুচড়ামুচড়ি করতে থাকে।

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ১৬