মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ২৬
মুসতারিন মুসাররাত
প্রত্যাশার কথা আচরণ বলে দিচ্ছে ও নিজের মধ্যে নেই। যা বলছে বেহুঁশে। তবুও হঠাৎ মেয়েলি স্পর্শে সার্থকের নিজেকে এলোমেলো লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে মৃদু কাঁপা হাতে নিজের কব্জি হতে প্রত্যাশার হাতটা ছাড়িয়ে নিতে থাকে। শুষ্ক খরখরে গলাটা ঢোক গিলে ভিজিয়ে কোনো রকমে শুধালো,
-” আর ইউ ওকে?”
প্রত্যাশা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে সশব্দে হেসে বলল,
-” ওকে-খোকে নয় টোকা-টুকি। ওই দ্যাখো দ্যাখো দেয়ালে টিকটিকি নাচছে!”
কথার কোনো মাথা-মুন্ডু নেই। সার্থকের ভুরু কুঁচকে যায়। বেহুঁশ মেয়েটাকে নিয়ে ফ্যাসাদে পড়ল বেচারা। তন্মধ্যে প্রত্যাশা এলোমেলো পা ফেলে সামনে এগোতে নিয়েই আরো বিপত্তি ঘটে। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে নেয়। সার্থক ঝটপট দু’হাত বাড়িয়ে প্রত্যাশাকে আঁকড়ে ধরল। প্রত্যাশা এলিয়ে পড়ে সার্থকের বুকের উপর। বাচ্চাদের মতন খিলখিলিয়ে হেসে বলল,
-” এএসপি সাহেব, তোমার গায়ে তো ঝড়ের মতো সেফটি-নেট। ঠিক আমাকে ধরে ফেললে।”
সার্থক হকচকায়। ওর হৃদস্পন্দন লাগামহীন ছুটছে। কোনো রকমে নিজেকে সামলিয়ে ধীরেধীরে প্রত্যাশাকে ঠিকঠাক করে বিছানায় বসিয়ে দেয়। যেই সরে দাঁড়াবে আর অমনি হালকা টান খেলো টিশার্টে। প্রত্যাশার গলার সোনালী চেইনটা টিশার্টের উপরের বোতামে আটকে গেছে। প্রত্যাশা বাচ্চাদের মতো নাকমুখ কুঁচকে একহাতে চেইন ধরে টান দিতেই সার্থকের মাথাটা প্রত্যাশার দিকে আরেকটু ঝুঁকে এলো। সার্থক তৎক্ষণাৎ জড়ানো স্বরে বলে উঠল,
-” স্টে…স্টে স্টিল, আমি ছাড়াচ্ছি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সার্থক আঙুল গলিয়ে চেইনটা ছাড়াতে থাকে। ছাড়াতে গিয়ে রীতিমতো আঙুল কাঁপছে। বুঝল বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। মেয়েটা চাইছে টা কি? নিজে তো হুঁশে নেই। আরেকজনের হুঁশেরও দফারফা করতে চাইছে। মেয়েটাকে ভালো লাগে। একটু-আকটু নয়। খুউববব বেশিই ভালো লাগে। দেখতে ভালো লাগে, তাকে একটু ছুঁয়ে দেওয়ার বাসনাও বেহায়া, নির্লজ্জ মনে জাগে। চাইলেই আজ মেয়েটাকে কাছে টেনে নেওয়া যাবে। যেখানে জোরজবরদস্তি থাকবে না। সার্থকের এক সত্তা উস্কানিমূলক চিন্তা নিউরনে জাগাচ্ছে।
বেসামাল করতে চাইছে। তবে বিবেক এসে দেয়াল তুলে দিল। একেতেই মেয়েটির উপর কোনো অধিকার নেই। তারওপর মেয়েটি অন্যকারো স্ত্রী। নিজের মনকে প্রসন্ন করতে, নিজের জীবনের প্রথম ভালোলাগা, ভালোবাসাকে পেতে বিবেক বিসর্জন দিলে, নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী কুকুরের থেকেও অধম হতে হবে। মনের আবেগে, রিপুর তাড়নে গা না ভাসিয়ে সার্থক বিবেক, মনুষ্যত্বের আহবানে সাড়া দিল। চেইনটা ছাড়ানো মাত্র সে এক ধাপ পিছিয়ে দাঁড়াল। ঝড়ো শ্বাস সামলাল। পিছুনে আর ফিরে না তাকিয়ে লম্বা পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ঘরের এই ক্ষুদ্র ক্ষণগুলো কি কেবল কংক্রিটের চার দেয়ালের ভেতরেই আটকা পড়ে থাকবে? নাকি কোনো যন্ত্র ইতিমধ্যেই নিঃশব্দে গিলে নিয়েছে প্রতিটি মূহুর্ত?
স্টুডেন্টরা বাসে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেই মূহূর্তে সে-কি বৃষ্টি। বৃষ্টির দরুণ***যাওয়ার প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করা হয়। সবাই হোটেলে ফিরে আসে। বৃষ্টি থামলে সন্ধ্যার আগেই রওনা হবে, এবারে ফেরার যাত্রা। হাবিবুর রহমান হঠাৎ হ্যাপিকে একলা দেখে দায়িত্ববোধ থেকে প্রত্যাশার কথা জিজ্ঞেস করেন। হ্যাপি বলতেই ভাগ্নির উপর কিছুটা চড়াও হলেন। একা একা কোন আক্কেলে ছেড়ে এলো। দ্রুত ফোন দিয়ে খোঁজ নিতে বলেন। কোন হোটেলে আছে। এ-ও বলেন স্বয়ং নিজে গিয়ে প্রত্যাশাকে আনবে।
ফোন দিলেও রিসিভ হচ্ছে না। এতক্ষণে সবার মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। প্রত্যাশাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিলকে তাল বানানোর মতো অবস্থাও হলো। কেউকেউ আজগুবি কথাবার্তা বলা শুরু করে দিল আড়ালে-আবডালে। দ্যাখো কোনো ছেলে-টেলের সাথে হাওয়া হলো না তো। আরো কত কি ফিসফিসানি চলতে থাকল।
বৃষ্টির বেগ কমলেও সকলের চিন্তা, উদ্বেগ বেড়েছে কয়েকগুণ। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পরেই রওনা দিবে। অথচ প্রত্যাশার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। হাবিবুর রহমানসহ আরেকজন টিচার হোটেলে খুঁজতে গেল।
কোয়েলের মুখ ভার। মাথা নুইয়ে অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে। হ্যাপির চোখের কোণ ভেজা। নাহিদ ফট করে হ্যাপির মাথায় চাটি মে”রে রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
-” দেবো ক ঘা চটকানি। হারামি কোথাকার! অ্যাই অ্যাই ছেমড়ি তোরা কোন আক্কেলে ওকে একলা ছেড়ে আসলি। আনার সময় তো উস্কিয়ে উস্কিয়ে বাড়িতে গিয়ে অবধি হ্যানোত্যানো বলে আন্টিকে কনভিন্স করালি। আর…”
হ্যাপি ফ্যাসফ্যাস করে কেঁদে উঠল। কোয়েল মিনমিনে স্বরে সহসাই বলে উঠল,
-” আ-আসলে ওতো সবসময় ফাজলামো করে। আমি ভেবেছিলাম ও ঘুরতে যাবে না জন্যই ঘুমের কথা মিথ্যে বলছে। দেখলি না আসতে পথে গাড়িতে কেমন বমির অ্যাক্টিং করল। তাই ভাবলাম ও বরং ওর আত্মীয়দের সাথেই সেফ-এ থাক। আমরা ঘুরে আসি। এখন যে ব্যাপারটা এমন হবে ভাবতে পারিনি। বিশ্বাস কর ওর খারাপ কিছু হোক সেটা কক্ষনো চাই না।”
রোহান তেতে উঠল। চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” ওকে ছেড়ে আসলি, কোন হোটেলে ওনারা উঠেছে ঠিকঠাক নামটাও বলতে পারছিস না। ওনাদের নামধামও জানিস না। এদিকে আরেকটু পরই সন্ধ্যা নামবে। অথচ এখনো প্রত্যাশার খবর নেই, ফোন ধরছে না। আন্টি আংকেল তো তোদের দু’টোকে পইপই করে বলেছিল ওকে সাথে সাথে রাখতে। তোরা কী করলি? ঘুরতে যাওয়াই তোদের কাছে আগে?”
-” বালের ঘুরতে যাওয়ার গুষ্টি উদ্ধার করি। শালার বন্ধুর থেকে ঘুরতে যাওয়া, সব দেখাই নাকি আগে। লজ্জা করছে না তোদের দুটোর? কেমন বন্ধু? বন্ধুর পায়ে ব্যথা ও হাঁটতে পারবে না, সাথে থাকলে নিজে দেখতে পারব না। এইজন্য অন্যর ঘাড়ে গুঁজে দিয়ে একলা ফেলে আসিস। মিরজাফর সব কোথাকার।
আরে তোরা একবার বলতিস আমি আর রোহান না হয় ওর সাথে থেকে যেতাম। তোরা দু’টো ম’রার ঘোরা ঘুরতি।”
হ্যাপি ঝরঝরিয়ে কেঁদে উঠল। একহাতে মুখ চেপে বলল,
-” আমি কোয়েলকে বলেছিলাম। ও শোনেনি আমার কথা। নিজের মতো বলে আমাকেও এক প্রকার জোর করে এনেছে।”
নাহিদ একহাত কোমড়ে রেখে অন্যহাতে কপাল ঘঁষে বলল,
-” উফ্! ওইটার আবার মাথার তার ছিঁড়া আছে। তারপর ফোন রিসিভ করছে না। তাই বেশি চিন্তা হচ্ছে।”
কোয়েল কণ্ঠে এক সমুদ্দুর আফসোস আর অপরাধ বোধ মিশিয়ে বলল,
-” স্যরি! আমি একদম বুঝতে পারিনি। ওনারা ওর আত্মীয় তাই আমি অতো কিছু ভাবিনি। ভেবেছিলাম হোটেলে থাকা বা বাসে জার্নি করার চেয়ে ওনাদের কাছে নিরাপদে থাকবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন প্রত্যাশা ফোন রিসিভ করছে না কেন?”
হ্যাপি নাক টেনে ভেজা গলায় বলল,
-” ওর কোনো বিপদ হয়নি তো? ও ঠিক আছে? ওনাদের সাথেই আছে তো?”
-” এখানে দাঁড়িয়ে সময় ন’ষ্ট না করে রোহান চল খুঁজে দেখি।”
নাহিদ আর রোহান দু’জনেই বেরিয়ে গেল।
অফিশিয়াল কাজ শেষ করে বিকেলে নীরব ইচ্ছেকে দেখতে আসে। আচমকা আজ মনটা কেমন জানি বিক্ষিপ্ত লাগছে। ভালো লাগছে না। ভাবে ইচ্ছের সাথে দেখা করে তারপর একবার হসটপিটালেও যাবে। খান বাড়িতে এসে দেখে এত বড় বাড়ি ফাঁকা। কেমন ভূতুড়ে ভূতুড়ে। বুয়া দরজা খুলে দিতেই নীরব জিজ্ঞেস করল,
-” ইচ্ছে? ইচ্ছে কোথায়? ওকে ডেকে দিন।”
-” ইচ্ছে উপরে ঘুমায়।”
হাত ঘড়িতে সময় দেখে নীরব বলল,
-” ছ’টা বাজতে চললো এখনো ঘুমিয়ে আছে।”
-” হয় স্যার।”
এই বাড়িতে একমাত্র ইচ্ছের জন্যই আসা হয়। অন্যরা কে কোথায় এসব জানবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। নীরব স্থির করে চলে যাবে। আবার কী মনে করে ভাবল–একপল দেখে যাই। গাম্ভীর্য বজায় রেখে শুধাল,
-” ইচ্ছে কোন রুমে থাকে?”
-” দুই তলায় উইঠা ডানে গিয়া মাঝখানে যে রুম আছে ওইডা।”
নীরব ত্রস্ত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠল। দরজার ফাঁক গলে দেখা গেল; ইচ্ছে জানালার গ্রিল দুহাতে ধরে কপাল ছুঁইছুঁই করে দাঁড়িয়ে। অদূর আকাশপানে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলছে,
-” পাপা, তুমি জানো? কাল আমি ছাদ থেকে রংধনু দেখেছি। খুব মজা হয়েছে। তুমি থাকলে দেখতে। খুব মজা হতো….হি হি।”
তারপর হালকা মাথা দুলিয়ে অস্পষ্টে ফিসফিস করলো,
-” পাপা তুমি তো আছই। তাই না?”
পরমূহুর্তেই মুখ ভার হয়ে এলো,
-” তুমি নেই? মাম্মাটাও নেই। জানো পাপা মাম্মা আমায় উল্প আদর করে। এইটুকুন।”
শব্দগুলো বি’ষে’র মতো কানে বিঁধল নীরবের। ছোট্ট মেয়েটা একা একা কল্পনা করে আপনমনে কথা বলছে। এভাবে চললে মানসিক ট্রমা, বিচ্ছিন্নতার ভয় ইচ্ছের মনে জেঁকে ধরবে। নীরবের বুকটা ভারী হয়ে আসল। গলাটা নরম করে সস্নেহ ভরা কণ্ঠে ডাকল,
-” ইচ্ছে মামণি?”
ইচ্ছে আঁচড়ানো পাখির মতো ঘুরে তাকাল। চোখ দুটো চকচক করছে। মুখে অনাবিল হাসি ফুটে উঠল,
-” পাপা!”
দৌড়ে এসে নীরবের কোমর জড়িয়ে ধরল। নীরব এক ঝটকায় কোলে তুলে আদুরে গলায় বলল,
-” মামণি, একা একা কার সঙ্গে কথা বলছিলে?”
ইচ্ছে নিষ্পাপ স্বরে বলল,
-” আমি তো তোমার সাথেই কথা বলি পাপা। উমম! মাম্মা নেই। তাই কাল মাম্মার সাথেও বলিছি।”
ইচ্ছের গালে চুমু খেয়ে নীরব বলল,
-” তুমি একা মনা আন্টি কোথায়? বিকেলে ঘুরতে যাওনি?”
ইচ্ছে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
-” উহু! মনা নেয় না। জানো পাপা, আমি খেলতে বললেও মনা আমার সাথে খেলে না। বলে পরে। মাম্মা থাকলে খেলে। মাম্মা নেই, মনা ফোন টেপে।”
আকস্মিক নীরবের ক’দিন আগে নিউজফিডের একটা নিউজের কথা মনে পড়ল। বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করে, ছোট্ট মেয়েটাকে বুয়ার কাছে রেখে যায়। মেয়ে বারবার বলত–‘আম্মু তুমি থাকো না, আমার ভ’য় করে।’ মা হেসে বলত–‘বুয়া তো আছে! ওর সাথে খেলবে, সময় কাটাবে।’ কিন্তু সেই বুয়া সারাদিন সিরিয়ালে ডুবে থাকত। মেয়েটা একাএকা খেলা করত, নিজেনিজে কথা বলত, হাসত। ধীরে ধীরে বাস্তব-অবাস্তব গুলিয়ে ফেলত। শেষমেশ বাচ্চাটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।
ড্রয়িংরুমের সোফায় নীরবের গা ঘেঁষে ইচ্ছে বসে টেডি নিয়ে খেলছে। মনা মাথা নুইয়ে ওড়নার আঁচল দুই হাতে মুঠো করে ধরে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে। নীরব ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।
-” তোমাকে ইচ্ছের দেখভালের জন্যই রাখা হয়েছে। বাচ্চাটাকে সময় না দিয়ে তুমি সিরিয়াল দেখলে, ঘুমালে, তাহলে মাস শেষে যে বেতন পাও সেটা কি হালাল হয়? ইচ্ছেকে দেখাশোনা করা তোমার দায়িত্ব। ওকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়াও দায়িত্বের মধ্যে পরে। দায়িত্বটাকে দায়িত্বের মতো নাও।”
মনা নিজের সাফাই দিতে মিহি স্বরে বলল,
-” স্যার, ম্যাডাম দুইদিন নেই চব্বিশ ঘন্টা আমিই দেইখা রাখতাছি। এমনিতেও আমিই সবসময় খাওয়াই, গোসল করাই, সবটাই আমিই করি..”
-” তোমাকে ইচ্ছে্র দেখভালসহ ওকে সময় দেওয়ার জন্যই রাখা হয়েছে। এমনি এমনি তোমাকে রাখা হয়নি। তোমার কাজই এটা। এখানে আমিই করি এরকম বলার তো কিছু নেই।”
মনার মুখটা ভোঁতা হলো। আর একটাও দ্বিরুক্তি করল না। কৌতুহলবশত নীরব জিজ্ঞেস করল,
-” প্রীতি কোথায় গিয়েছে?”
-” ম্যাডাম, সার্থক স্যার আর ওনাদের বন্ধুরা কুয়াকাটা ঘুরতে গিয়াছে।”
নীরবের মাথায় কুয়াকাটা শব্দটা ঝিঁঝিঁ পোকার মতো ঝিনঝিন শব্দ তুলে বাজতে লাগলো। কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন করল,
-” কবে গিয়েছে ওরা?”
-“____”
নীরব জোরালো নিঃশ্বাস ফেলল। প্রত্যাশার সাথে তো দুপুরের আগেই কথা হয়েছে। এক জায়গা হলেই যে দেখা হবেই এমন নয়। আর প্রত্যাশারা একটা দিনের জন্যই গিয়েছে। এইতো সন্ধ্যায় ওরা ব্যাক করবে।
লাঞ্চ আওয়ারের পরে প্রত্যাশার দু’টো মিসড কল উঠেছিল। একটা মিটিংয়ে এটেন্ড করায় ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো বিধায় দেখেনি নীরব। কাজ শেষে কল ব্যাক করে প্রত্যাশার সাড়া না পেয়ে নীরব ভাবে; ঘুরাঘুরি করছে হয়তো তাই খেয়াল করেনি। নীরবের এখন হঠাৎ টেনশন শুরু হলো। ফোন বের করে প্রত্যাশার নম্বরে লাগাতার কল করে চলল।
গোধূলির আকাশ মেঘে ঢাকা। দুশ্চিন্তার মেঘ নীরবের মনাকাশেও জমা হচ্ছে। প্রত্যাশাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। নীরব দুই আঙুলে কপাল চেপে আরেক হাতে ফোনটা কানে ধরে বিড়বিড় করল,
-” প্রত্যাশা পিক-আপ দ্যা ফোন। প্লিজ প্রত্যাশা….”
সার্থক লেবুর শরবত জোগাড় করে অদ্রিকার হাতে দিয়ে বলল,
-” অদ্রি এটা প্রত্যাশাকে খাইয়ে দে। জোর করে হলেও খাইয়ে দিবি।”
অদ্রিকা দরজার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ঢোক গিলে বলল,
-” আমি খাইয়ে দিবো?”
-” হুম। তোকেই তো বললাম। কেনো, কোনো সমস্যা?”
-” না মানে। ওর কথাবার্তা আর আচরণ দেখে কেনো জানি আমার খুব ভ’য় লাগছিল। আমার দিদুনের বলা ভূতুড়ে গল্প আমি আজ অবধি বিশ্বাস করিনি। তবে সেই মূহূর্তে একটা সুস্থ মেয়ের হঠাৎ চেঞ্জ দেখে আমার ছোটবেলায় শোনা ভূতুড়ে গল্পই মনে উঠেছিলো। দিদুন বলতো, মেয়েছেলেদের খোলা চুলে এখানে সেখানে নদীর ঘাটে ঘুরতে নেই। তালগাছ,নারিকেল গাছ, বড়বড় গাছে তেনারা থাকেন। তেনারা ঘাড়ে চাপেন। আর তেনারা ঘাড়ে চাপলে সেই মেয়েরা কেমন কেমন পা’গলের মতো আচরণ ক___”
অদ্রিকার কথা থামিয়ে সার্থক বিরক্ত গলায় বলল,
-” স্টপ অদ্রি। স্টুপিডের মতো কথাবার্তা বন্ধ কর। কী তেনারা তেনারা শুরু করেছিস? তুই একটা হাইলি এডুকেটেড মেয়ে হয়ে এসব কী বলছিস অদ্রি? গ্রামের বুড়ি মেয়েদের মতো কোনো মাথামুন্ডু নেই এমন লজিকলেস কথা! তেনারা ঘাড়ে চাপলেই মানুষ পা’গল হয়ে যায়। আর সেই তেনারা কারা? গোঁড়া চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। টাইম ওয়েস্ট না করে জলদি প্রত্যাশাকে শরবত খাইয়ে দে।”
অদ্রিকা মাথা কাত করে বলল,
-” ওকে।”
পরপর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-” প্রীতি চলো আমার সাথে।”
প্রীতি সাথে সাথেই বলল,
-” হ্যাঁ চলো।”
প্রীতিকে থামিয়ে দিতে সার্থক বলল,
-” প্রীতিকে একটু দরকার আছে আমার। অদ্রি তুই প্রত্যাশার কাছে ফাস্ট যা। ও রুমে একা আছে। আমি বাইরে থেকে লক করে এসেছি। না জানি রুমে একা কী করছে?”
অদ্রিকা বিস্মিত হয়ে বলল,
-” হোয়াট? প্রীতিকে দরকার? আমি একলা প্রত্যাশাকে সামলাব?”
সার্থক ভেবে বলল,
-” ইচ্ছে কান্নাকাটি করছে। প্রীতির সাথে কথা বলবে।”
-” ওহ্।”
সার্থক লক খুলে অদ্রিকাকে ইশারা করে রুমে ঢুকতে। সার্থক বলল,
-” সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিস।”
-” তুইও সাথে আয়।”
-” আমার একটু কাজ আছে।”
প্রীতি রুমে ঢোকার সাথে সাথে সার্থক দরজার নব ঘুরিয়ে লক করে দিল। প্রীতি রুমের মাঝে দুই হাত বুকে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে। প্রীতি কিছুটা আঁচ করেছে। এখন ওর ভাই একের পর এক জেরা করবে নিশ্চয়। সার্থক চোখমুখ কঠোর করে এগোল। প্রীতি ঠোঁটে হাসি টেনে ঠোঁট মেলবে, কিছু বলবে, ঠিক সেই মুহূর্তে ঠাস করে শব্দ হলো। প্রীতির একহাত গালে চলে গেল। বিস্ময়ে প্রীতির চক্ষু কোটর ছাড়ার জোগাড়। প্রীতি হকচকিত হয়ে বলল,
-” ভাই..য়…”
কথাটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। মাথাটা সোজা করার আগেই আরেকটা থা’প্প’ড় পড়ল। সার্থক চোয়াল শক্ত করে বলল,
-” প্রীতি আমি জানি তুই ইচ্ছে করে এমন কিছু করেছিস। কারন প্রত্যাশার পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবধি ও ঠিকই ছিলো। অদ্রির ভাস্যমতে প্রত্যাশা বাকিটা সময় তোদের সাথেই ছিলো। অদ্রিকে আমি ভালো করে চিনি। আর তোকেও চিনি। তাই আমার বুঝতে এতটুকু বাকি নেই। বল কেনো প্রত্যাশার সাথে তুই এমন করছিস? কিসের শত্রুতা তোর ওর সাথে?”
প্রীতি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। রাগে হিসহিসিয়ে বলল,
-” ভাইয়া তুমি ভালো করেই জানো আমাদের শত্রুতা কার সাথে। আর এই মেয়েটা ওই পরিবারেরই একজন। সিদ্দিকী পরিবার তাদের বাড়ির বউকে খুব সম্মান দেয়, না? সবার সামনে তাদের বাড়ির বউকে ছোট করা মানে গোটা সিদ্দিকী পরিবারকে অপদস্থ করা।”
আসল আর প্রধান রাগ-ক্ষোভটা কৌশলে প্রীতি গোপন রাখল। সমস্ত রাগ-ক্ষোভ, রিভেঞ্জ পুরোনো শত্রুতার থেকে বলে চাপিয়ে দিল। সার্থক তপ্ত শ্বাস ফেলে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
-” প্রীতি পুরোনো শত্রুতার জের ধরে একটা নিরপরাধ, নিষ্পাপ, সহজ-সরল ভালো মনের মেয়ের ক্ষ’তি করা অন্যায়, পাপ। আর তুই দিন দিন চরম অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছিস। যা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। প্রীতি এখনো সময় আছে, আমি বলছি থেমে যা।”
-“নো নেভার। ওরা আমার খালামণিকে আ’গু’নে পুড়িয়ে মে’রে’ছে। আমার মা নিভৃতে আজও কাঁদে। খালামণি যা পারেনি, আমাকে তা পারতেই হবে।”
-” উফ্! সেই সময় একচুয়েলি কী হয়েছিলো আমরা কিন্তু জানি না। আসলে কীভাবে কী ঘটেছিল তা আমাদের অজানা। এক পক্ষের মন্তব্য শুনে জাজ করা যায় না প্রীতি।”
-” খুব যে ন্যায়বান সাজচ্ছো। কিছুদিন আগেই তো ফোনে ওই মেয়েটাকে পেতে আমার হেল্প চাইলে। তারপর কী এমন হলো পাল্টি খেলে?”
-” প্রীতি সেটা আমার চরম বো’কামি ছিলো। একসময় নীরবের সাথে জিদ করে প্রত্যাশাকে নিজের করার কথা ভাবলেও, পরবর্তীতে বুঝতে পারি এটা অসম্ভব, আর নিম্নমানের চিন্তা। তাই আমি তোকে নিষেধও করেছি। আর তুই কী করছিস? বিবেক, মনুষ্যত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে একটা পরিবারকে হেনস্তা, অপদস্থ করবি বলেই নীরিহ মেয়েটার ক্ষ’তি করতে চাইছিস।”
সার্থকের কণ্ঠে ঘৃণা ঝরল,
-” প্রীতি তুই নিকৃষ্ট মনের পরিচয় দিয়ে চলছিস। একবার নয় দুদুবার যা করলি, এতে তোকে আমার নিজের বোন বলতেও লজ্জা লাগছে।”
প্রীতি চেঁচিয়ে উঠল,
-” একটা সাধারণ মেয়ের জন্য তুমি আমার সাথে সম্পর্ক খারাপ করেছো। আজকে তো লিমিট ক্রস করে ফেললে। এই প্রথম, তাও একটা অতি সাধারণ মেয়ে, আমাদের শত্রুর বাড়ির বউয়ের জন্য আমার গায়ে হাত অবধি তুললে।”
প্রীতি বিড়বিড়িয়ে বলল— ওই মেয়ে আমার ব্রোকে চেঞ্জ করে ফেলছে। সিদ্দিকী পরিবারের উপর থাকা ঘৃ’ণাও আজ ভাইয়ার চোখে নেই। সেখানে আমার ভাইয়া আমাকেই ঘৃ’ণা করছে। এর প্রতিটি উত্তম জবাব কীভাবে ফেরত দিবো তা আমার জানা। প্রিয় মানুষের চোখে ঘৃ’ণা কীভাবে তৈরি করতে হয়, সেটাও আমার ভালোই জানা আছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ফিঙ্গার লক এর মাধ্যমে ফোন আনলক করে অদ্রিকাকে দিয়ে ওদের ফ্রেন্ডসহ স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দেয় সার্থক। বলে বাস রওনা হওয়ার সময় ঠিক পৌঁছে দিবে প্রত্যাশাকে, ওর পায়ে ব্যথা তাই রেস্ট করছে। নীরবের নম্বর থেকে একাধিকবার কল দেখে সেখানেও হটস অ্যাপে অদ্রিকা মেসেজ টাইপ করে। ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই কল খেয়াল করেনি বলে। এ-ও বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা সব রওনা দিবে।
ওদিকে ছোট্ট মেসেজ দেখে চিন্তার পাহাড় মাথা থেকে সরতে থাকে নীরবের। প্রত্যাশা যে বাচাল মেয়ে দেখা হলে নিজ থেকেই ঢাকঢোল পিটিয়ে বলতো। তাই নীরব আর ওদের কথা তুললো না। শুধু ছোট্ট করে একটা শান্ত কোমল মেসেজ পাঠাল।
-” Okay, understood. Wishing you a safe return. Fi Amanillah.”
প্রত্যাশা দু’বার বমি করে। লেবুপানি খেয়ে, চোখমুখে বারবার পানির ছিটা দিয়ে কিছুটা হুঁশে আসতেই ফিরবে বলে গোঁ ধরে। এখানে আসার পরের কথাগুলো ওর কিছুই মনে পড়ছে না। অদ্রিকা কিছু বলতে গেলেও সার্থক আঁটকে দিয়ে পায়ে ব্যথা হচ্ছিল তাই ওদের সাথে এনেছিল বলে পাশ কাটিয়ে দেয়।
সন্ধ্যার পর সার্থক নিজে ড্রাইভ করে প্রত্যাশাকে ওদের বাসে তুলে দিয়ে আসে।
দু-তিন দিন পর। পড়ন্ত বিকেল। নীরবের এক বন্ধুর বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে দাওয়াত পড়েছে। বিবাহিত বন্ধুরা সবাই সঙ্গিনীসহ নিমন্ত্রিত। সকালেই নীরব ফোন করে প্রত্যাশাকে বলেছিলো যেন রেডি থাকে।
বাড়িতে ঢুকে অধরার সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করে সে সোজা প্রত্যাশার রুমের দিকে এগোয়। অধরা নাস্তার আয়োজন করতে ব্যস্ত।
ভেজানো দরজাটা একহাতে সরিয়ে দিতে না দিতেই নীরবের চোখ বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে যায়। প্রত্যাশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। আঙুলের খাঁজে শাড়ির কুচি গুছিয়ে কোমরে গুঁজে নিচ্ছে। পরপর আঁচল বুকের ওপর টেনে আনতে গিয়েই মাথা হালকা ঘুরাতেই চোখে চোখ পড়ে নীরবের সঙ্গে। প্রত্যাশা চমকে একটু চেঁচিয়ে উঠল,
-” ইয়া আল্লাহ! আপনি কখন এলেন? আর ওখানে দাঁড়িয়ে ওভাবে তাকিয়ে আছেন যে! কী দেখছিলেন বলুন তো?”
নীরব ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি টেনে এগোল। দুই আঙুলে কপাল চুলকিয়ে দুষ্টুমির স্বরে বলল,
-” এই জন্যই তো সকালেই বলে রেখেছিলাম—রেডি হয়ে থাকতে। কিন্তু তুমি যে এমন দৃশ্য বানাবে, সেটা তো বলোনি। এখন বলো, এই অবস্থায় কোথায় যাই? বরং এখানেই খু*ন হয়ে যাই তোমার সৌন্দর্যে!”
প্রত্যাশা লজ্জায় চোখ বড়বড় করে বলে,
-” উফ্! কী সব আজেবাজে বলেন আপনি?”
নীরব দু’পা এগিয়ে খুব কাছাকাছি দাঁড়াল। ফিসফিসিয়ে বলল,
-” আজেবাজে না, একদম সত্যি।”
প্রত্যাশা ভ্রু কুঁচকে রাগ দেখানোর ভান করে বলল,
-” একদম নাটক করবেন না। এখন বলুন, ঠিক কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন?”
নীরব ঠোঁটে জোরালো হাসি টেনে মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,
-” তোমার চোখ আমার চোখে পড়ার আগ পর্যন্ত আমি সময়ের হিসেব ভুলে গিয়েছিলাম। এমনকি নিজেকে চিনতেও ভুলে যাচ্ছিলাম। তোমার রূপে, তোমার উপস্থিতিতে যেন এক মুহূর্তে সব কিছু থেমে গিয়েছিল।”
প্রত্যাশা চোখ নিচু করে লাজুক হাসি চাপতে চেষ্টা করল। কিন্তু দু’গালের লালচে আভা ওর সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিল। নীরব দু’হাতে পেছন থেকে প্রত্যাশার কোমর জড়িয়ে ঘাড়ে থুতনি রেখে দুষ্টু স্বরে ফের বলল,
-” জানো, যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে স্বর্গসুখানুভূতি কেমন? আমি বলবো; এই তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুচি গুঁজে নেওয়া একটা মেয়ের মতো।”
প্রত্যাশা কাঁধের আঁচল ঠিক করতে করতে বলল,
-” আপনাকে যতটা শান্ত, ভদ্র দেখায় আর আমিও আগে আপনাকে যেরকম ভেবেছিলাম, মোটেই আপনি তেমন নয়।”
প্রত্যাশার উন্মুক্ত গলায় নাক ঘষে নরম গলায় জিজ্ঞেস করল নীরব,
-” তাহলে কেমন আমি? বলো, শুনি?”
প্রত্যাশার সারা শরীরে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার মতো অনুভূতি হলো। পায়ের তালু অবধি শিরশিরানি দিয়ে উঠল। শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে সামলান। প্রসঙ্গ পাল্টাতে কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,
-” চুপ! বেশি কথা বলবেন না। দূরে সরুন। আমি পুরো রেডি হইনি এখনো।”
প্রত্যাশা একহাতে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চুড়ি হাতে তুলে নিতেই আচমকা নীরব ওর হাত থেকে চুড়ি নিল। একটা একটা করে পড়িয়ে দিতে লাগল। আলতো ছোঁয়ায়, যত্ন সহকারে। সময়টা থমকে গেল।আয়নায় দু’জনের চোখাচোখি হতেই প্রত্যাশা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দৃষ্টি নুইয়ে ফেলে।
নীরব সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ফোন স্ক্রল করছে। সোফার এককোণে থাকা প্রত্যাশার ফোনটা ভোঁভোঁ শব্দ করে কাঁপছে। নীরব বলল,
-” তোমার ফোন এসেছে।”
প্রত্যাশা চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে বলল,
-” সিম কোম্পানি হবে হয়তো। তাছাড়া এইসময়ে কল দেওয়ার কেউ নেই। আমার ফ্রেন্ডরা মেসেঞ্জারে মেসেজ আর হটস অ্যাপে কল দিয়ে থাকে। আপনি তো এখানেই। দেখুন আর আমার কথা মিলিয়ে নিন।”
শেষোক্ত কথাটা বলে চিরুনি হাতে দাঁত কেলিয়ে হাসে প্রত্যাশা। নীরব ফোনটা হাতে তুলতেই স্ক্রিনে ইংরেজি ফন্টে ডক্টর প্রিতম হাসান নামটা জ্বলজ্বল করতে থাকে। নীরবের শিথিল ভ্রু জোড়ায় কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে। ফোনের স্ক্রিনে নীরবের ওভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে প্রত্যাশা এগিয়ে এসে বলল,
-” কী হলো, কে ফোন দিয়েছে?”
নীরব নিরুত্তর, মুখাবয়ব স্বাভাবিক থেকে কিছুটা কঠিন হলো। মুখে কিছুই না বলে ফোনটা প্রত্যাশার দিকে বাড়িয়ে দিল। ফোনের দিকে তাকিয়ে প্রত্যাশা কিছু মনে পড়ার মতো করে বলে উঠল,
-” ওহহো, উনি ব্যাক করেছে। এ হে আপনাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি। আপনি যে ব্যস্ত মানুষ, সারাদিন চোর-ডাকাতের ফাইল ঘেঁটে সময়পার করেন। রাতে আমার ভীষণ ঘুম পায় তখন আপনি কল করেন। বলার কথা খেয়ালই হয়নি। ওখানে আমার প্রীতি আপুদের সাথে দেখা হয়েছিল।”
একটু থেমে ফোনটা হাতে নিয়ে প্রত্যাশা সরল হেসে বলল,
মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ২৫
-” যাই বলুন না কেনো আপনার বেয়াই কিন্তু কাইন্ড হার্টেট মানুষ। আমাকে অনেক হেল্প করেছিলেন। ওনাকে থ্যাংকস জানানো হয়নি। ছোট্ট একটা থ্যাংকস দিতে দুপুরে কল দিয়েছিলাম। তখন মেবি ব্যস্ত-ট্যস্ত ছিলো রিসিভ করেনি। এখন ব্যাক করেছে দেখছি। এক মিনিট আমি কথা বলে নিই।”
সামনের ব্যক্তির মুখাবয়ব লক্ষ্য না করেই এক নাগাড়ে ঘনঘন কথা বলে থামল প্রত্যাশা।