মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৩৬
মুসতারিন মুসাররাত
পাখির কিচিরমিচির, সকালবেলার বাতাস সব যেন স্তব্ধ। রুমে শুধু তপ্ত নিঃশ্বাসের শব্দ। নীরব আলতোভাবে প্রত্যাশার গালের পাশ থেকে ঠোঁট নামিয়ে আনল মেয়েটার ঠোঁটের উপর। নরম, কোমল ছোঁয়ায় প্রত্যাশার চোখ দুটো বুজে এলো। ভেতরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। হৃদস্পন্দন ছন্দহীন গতিতে ছুটছে। নীরবের ওষ্ঠ আরেকটু গভীর হলো, শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। দু’জনের আবেশ গাঢ় হলো। সময় গড়াতে থাকল নীরবের স্পর্শ বেহায়া হলো। প্রত্যাশার দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। নীরবের ঠোঁট সরল ধীরেধীরে। আর সরতেই প্রত্যাশা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। গলায় আটকে থাকা নিঃশ্বাসটুকু হুড়মুড় করে বেরিয়ে এল। লজ্জায় মুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। কানে লজ্জার র*ক্তা*ভ আভা ছড়িয়ে পড়েছে। হাতের উল্টোপাশ দিয়ে ঠোঁট মুছে নিলো প্রত্যাশা। নীরব সেদিকে তাকিয়ে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে নিজের ওষ্ঠ মুছতে মুছতে মিটমিট হাসল।
ঠোঁটজোড়া জ্বলছে। প্রত্যাশা অল্প-স্বল্প রাগি দৃষ্টিতে নীরবের দিকে তাকাল। নীরব সে রাগের পরোয়া না করে প্রত্যাশার ঠোঁটের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে আঙুল দিয়ে আলতোভাবে প্রত্যাশার ঠোঁটে ছুঁয়ে দিল। হিম শীতল স্বরে বলল,
-” স্যরি! তবে এই ভুল বারবার করতে রাজি আছি।”
ঠিক এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। প্রত্যাশা দ্রুত দুইহাত নীরবের বুকে রাখল। নীরবের গা ঠেলে বলল তড়িঘড়ি করে,
-” সরুন! কেউ এসেছে।”
নীরব বিরক্ত গলায় কপাল কুঁচকে বলল
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” ধুর! সকাল সকাল ডিস্টার্ব করতে কে এলো? আমার রোমান্সটা কারো বুঝি সহ্য হচ্ছে না।”
দরজার ও পাশ থেকে পরী গলা ছাড়িয়ে ডাকল,
-” ছোডো ভাইজান, আপনের কালা কফি দেই?”
নীরবের কথা শুনে প্রত্যাশা ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে। নীরব বিরক্ত মুখে উঠে বসে স্যান্ডেল পায়ে চাপল। পরপর নিচের ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রত্যাশার দিকে তাকাল। আচমকা প্রত্যাশার দিকে ঝুঁকে দুষ্টুমির স্বরে বলল,
-” এই প্রথম সকাল মিষ্টি চুমুতে শুরু হলো। এরপর থেকে ব্লাক কফিতে পোষাবে না আমার। এখন থেকে তোমার মতো হট মর্নিং ব্রিউ আমার রোজ চাই।”
প্রত্যাশা তৎক্ষণাৎ মুখে বালিশ চেপে মুখ লুকিয়ে ফেলে। বালিশে মুখ গুঁজে বলল হাপুস নয়নে,
-” নীরব আপনি অসহ্য!”
-” সহ্য হয়ে যাবে।”
বলে টিশার্টের কলার ঠিক করতে করতে শিষ বাজিয়ে দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলেই এক ধ’ম’ক লাগিয়ে দেয় নীরব,
-” এত সকাল সকাল এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেনো? এভাবে ননস্টপ কড়া নাড়তে হয়?”
পরী বে’কুবের মতন চেয়ে ভাবল— ছোডো ভাইজানের আবার হইলো ডা কী? বেহুদা রাগ ঝাড়তাছে ক্যান? আগে না দেরি হইলে রাগ করতো। আজ ঠিক টাইম মতো আইসাও ধ’ম’কানি শুনতাছি। ইয়া আল্লাহ! কী করমু, ডানে গেইলেও দেহি দুষ, বামে গেইলেও দুষ।
নীরব কফির মগ হাতে নিয়ে কড়া গলায় ধ’ম’কের সুরে বলল,
-” এভাবে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিস?”
পরীর ধ্যান ভাঙল। তটস্থ হয়ে বলল,
-” ক-কই কিছু না কো। নতুন ভাবির চা।”
নীরব আরেক হাতে প্রত্যাশার জন্য আনা গ্রীন টির কাপটা নিল।
নীরব কোমরে বেল্ট গুঁজছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাজ গুলো পরছে আর মাঝেমাঝে কোণা চোখে তাকাচ্ছে বিছানায় বসে থাকা প্রত্যাশার দিকে। প্রত্যাশা দুই হাত পেছনে ঠেস দিয়ে বসে আছে। পা দুটো দোলাচ্ছে টুকটুক করে। মুখটা গোমড়া। ঠোঁট উল্টে বলল,
-” আমি বাসায় যাব।”
-” এটা বাসা না?”
-” আমার বাসায়।”
-” এটাই তো তোমার বাসা। বিয়ের পর মেয়েদের স্বামীর ঠিকানাই হয় আসল ঠিকানা।”
প্রত্যাশা মুখ ভার করে ফেলল। মাথাভর্তি ভেজা চুলে ব্রাশ চালাতে চালাতে বলল নীরব,
-” অল্প বয়সী বউ হলে এই এক সমস্যা। শুধু বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য প্যানপ্যান করতে থাকে।”
-” এই প্রথম আমি আম্মুকে ছাড়া এতদিন কোথাও থাকছি। তারপর আজ আমার জন্মদিন। আম্মুর হাতের পায়েস ছাড়া আমার চলবে না। আম্মু-আব্বু ফোন করেছিল একটু আগে, উইশ করেছে, তবে যাওয়ার কথা কিছু বলেনি। আপনার কথা ভেবে হয়তো আম্মু বলছে না। আপনি তো এখন সুস্থ। এইযে অফিস যাচ্ছেন, সব করছেন। সারাদিন ডিউটিতে থাকবেন। এখানে আমার থেকে আর কাজ কী? দরকারটাই বা কী? তাছাড়া আমার পরীক্ষা।”
গায়ে পারফিউম স্প্রে করে পরপর সার্ভিস রিভলবারটা কোমরে গুঁজে নিল। অকস্মাৎ দু’কদম এগিয়ে ভ্রু উঁচু করে বলল একটু দুষ্টু গলায়,
-” সারাদিন দরকার না পড়লেও, রাতে বউ লাগবে।”
প্রত্যাশা মুখ ঝামটা দিয়ে অন্যদিকে চাইল। নীরব হাতে কালো ঘড়িটা পড়ে বাইরে যেতে যেতে বলল,
-” যাওয়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে এখন নাস্তা করতে আসো।”
প্রত্যাশা অনলাইনে ঢুকতেই বন্ধুদের একগাদা মেসেজ আর টাইমলাইনে উইশ করা পোস্ট পেল।
-” আবির খেয়ে যা বাবা।”
-” বাইরে থেকে খেয়ে নেবো আম্মু।”
বা হাতের ফাঁক দিয়ে পিঠের সাথে গিটার, পিঠে ব্যাগ, কেডসের ফিতে বাঁধতে বাঁধতে উত্তর দেয় আবির। শর্মিলা পেছন থেকে একরাশ হতাশা প্রকাশ করে বললেন,
-” একে তো ঠিকমতো খাস না, আবার যা খাস ফাস্টফুড। এভাবে চললে শরীর খারাপ হবে।”
আবির কথা কানে না তুলে ব্যস্ত ভঙিতে দরজার দিকে এগোয়। ঠিক তখনই গম্ভীর, ঠান্ডা, অথচ রাশভারি কণ্ঠে পা দুটো থেমে যায়।
-” আবির, ছোটো মা খেতে বলছে না? ব্যস্ততা দেখিয়ে যাচ্ছিস কই তুই?”
আবির ভ’য়ে ভ’য়ে আস্তে করে ঘুরে তাকায়। ছোটো দাদানের চিরচেনা কঠোর মুখভঙ্গি দেখে দৃষ্টি আপনাআপনি নুইয়ে এল। নীরব জিজ্ঞেস করল,
-” পিঠে গিটার কলেজ নেই আজ?”
আবির জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
-” ই-ইয়ে মানে ছোটো দাদান, আজ একটু দেরিতে ক্লাস।”
-” মিথ্যে বলছিস তা তোর চো’রচো’র মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কলেজ বাদ দিয়ে গিটার নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? সত্যি করে বল, নইলে__”
অদূরে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা ভেংচি কে’টে আওড়ালো —- এ তো আচ্ছা লোক। বাচ্চা ছেলে এক আধ দিন কলেজ বাদ দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে ফিরতে যেতেই পারে। এভাবে জেরা করার কী আছে? পু’লিশের ডিউটি বাড়িতে পালন করছে। উফ্! যত্তসব!
শর্মিলা পাশ থেকে বলে উঠলেন,
-” আবির পড়াশোনায় খুব ফাঁকিবাজ হয়েছে। পড়াশোনা শৃঙ্গে উঠিয়ে সারাদিন শুধু বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা, খেলাধুলা, গান শেখা, আর আড্ডা দেয়া। এই ওর কাজ। তোর চাচ্চুকে বলে ওর একটা বিহিত করতে হবে। দিনদিন কথা তো শুনছেই না। আরো বেশি খা’রাপ হচ্ছে।”
নীরব কড়া গলায় শাসনের সুরে বলল,
-” কয়েকদিন আমি লক্ষ্য করেছি, সন্ধ্যায় মোড়ের উপর বা’জে ছেলেদের সাথে তোকে আড্ডা দিতে। নেক্সট ওদের সাথে মিশতে না দেখি। সন্ধ্যার পর বাইরে তোর ছায়াও যেনো না পড়ে। কথাগুলো যেনো মনে থাকে।”
নীরবকে প্রশ্রয় দিতে বলল শর্মিলা,
-” এভাবে বললে ও শুনবে না। এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিবে। তুই পিটিয়ে ওর ছাল তুলে ফেলিস। আমি কিচ্ছুটি বলব না। শাসন না করলে ও মানুষ হবে না।”
নীরব আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
-” গিটার নামা। নাস্তা করে কলেজে যা। আমি কিন্তু ফোন দিয়ে কলেজে শুনব, সব কটা ক্লাস করেছিস কী না।”
আবির মাথা নিচু করে দ্রুত কেডস খুলে গিটার রেখে সোজা ডায়নিংয়ে যায়। মনেমনে আওড়ায়— বড় দাদান কত সুন্দর সবসময় হাসি মুখে কথা বলে। আর ছোট দাদান ধ’ম’ক ছাড়া, শাসন ছাড়া ভালো কথা জানেই না।
প্রত্যাশা বেচারি একটু ভয় পেলো। আঁতকে উঠে ভাবে— উরি বাবা! আমার রেজাল্ট খা’রাপ হলে এএসপি সাহেব এরকম করে বকাঝকা করবে না তো?
চেয়ার টেনে বসে জগ থেকে পানি ঢেলে নিচ্ছিল নীরব। নীহারিকা বললেন,
-” একটু দাঁড়া বাবা, পরী ডিম ভাজছে। ভেজে রাখলে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কখন তোরা খেতে আসিস ঠিক নেই। তাই বলেছিলাম পরেই ভাঁজতে।”
পানির গ্লাস হাতে তুলতে তুলতে নীরব বলল,
-” সমস্যা নেই।”
নীহারিকা প্রত্যাশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-” প্রত্যাশা তুমিও বসো, দাঁড়িয়ে আছো কেনো!”
প্রত্যাশা এগিয়ে নীরবের পাশের চেয়ারটায় বসল। নীরব মা’কে জিজ্ঞাসা করল,
-” বাবা, ভাইয়া সবাই খেয়েছে?”
-” হ্যাঁ ওরা সবাই নাস্তা করেছে। নিভান অফিসে চলে গিয়েছে। নীলাশা বোধহয় রুমে।”
নীরব মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” মা, প্রত্যাশাকে আজ বাড়ি দিয়ে আসবো। অফিস থেকে বিকেলে ফিরব। বিকেলের দিকেই ওকে রাখতে যাব।”
-” আজই?”
-” আসলে আর তো দুইদিন বাকী আছে ওর পরীক্ষার। ওখান থেকেই পরীক্ষা দিবে। আর আজ ওর জন্মদিন। আন্টি কাল ফোন দিয়েছিল, আমি বলেছি আজ দিয়ে আসবো।”
শর্মিলা নিঃশব্দে হাসতে হাসতে বলল,
-” সে কি নীরব তুই শাশুড়িকে এখনো আন্টি ডাকিস!”
নীরব বোধহয় একটু লজ্জা পেল। উত্তর দিতে পারল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অপ্রতিভ্য হেসে বলল,
-” আগে থেকে ওভাবে বলে এসেছি, এখনো অভ্যস্ত হইনি তাই।”
নীহারিকা বললেন,
-” আচ্ছা, আজ প্রত্যাশার জন্মদিন আগে কেনো জানাসনি?”
প্রত্যাশা মনে মনে বলল— কই নিজের ছেলেকে আজ কিছুই তো বলল না। অথচ আমাকে সেদিন কথা শোনাতে বাদ রাখেনি। মা শেখায়নি কাকে কী সম্বোধন করতে হয়? নীলার থেকেও তো শিখতে পারো। আদরের ছোট ছেলেকে তো একবারও বলল না; নিভানকে দেখেও তো শিখতে পারিস। নিজের ছেলের বেলায় সাত খু°ন মাফ। হাহ!
শর্মিলা মিষ্টি হেসে প্রত্যাশাকে বলল,
-” শুভ জন্মদিন মিষ্টি মেয়ে। আগে থেকো বলোনি কেনো রে? গিফট তো কিছু আনা হয়নি। থাক এক্ষুনি তোমার চাচ্চুকে ফোন করে বলছি।”
প্রত্যাশা অপ্রতিভ্য ভঙিতে মাথা নেড়ে বলল,
-” আরে ছোটমা, লাগবে না এত কিছু।”
প্রত্যাশার গায়ে অফ হোয়াইট রঙের গর্জিয়াস গাউন। সূক্ষ্ম সাটিনের ছোঁয়া আর কোমল ফ্লেয়ারে তৈরি গাউনটা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ে রঙটা ঠিক যেন ঝিকিমিকি মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করছে। কোমরের কাছে হালকা জড়ানো কাট, পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে শ্যাম্পু করা রেশমী চুল। ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপবাম, চোখে লেগে আছে অনুচ্চারিত আভা। নীরব ইউনিফর্মের বাটন খুলতে খুলতে বলল,
-” তোমার থেকে চোখ তো সরাতেই পারছি না। তোমাকে একদম হোয়াইট লিলির মত লাগছে।”
প্রত্যাশা লজ্জা পেয়ে বলল,
-” আপনি একটু বেশিই বলেন।”
-” মোটেই না।”
-” আচ্ছা কথা বাদ দিয়ে জলদি ফ্রেশ হয়ে একেবারে রেডি হয়ে আসুন। আম্মু বারবার ফোন দিচ্ছে। অনেককিছু রান্না করেছে, কেক বানিয়েছে। সব রেডি করে বসে আছে।”
প্রত্যাশা দরজা অবধি গিয়েও কিছু মনে করে ফিরে তাকিয়ে বলল,
-” নীরব?”
-” হুঁ।”
-” আপনি কিন্তু এখনো আমার কাছে ছবিগুলোর ব্যাপারে সবটা খোলাসা করেননি। আমিও জানতে চাই, ওই ছবিগুলো কে পাঠিয়েছে? কীভাবে তুলেছিল?”
-” আজকের মধ্যেই সব উত্তর পাবে। সবটা তোমার সামনেই প্রকাশ করা হবে। আর একটু ওয়েট।”
.
.
নীহারিকা নিজেও কেক বানিয়েছে। যতই হোক ছোট ছেলের বউ। আবার মেয়েটা অনেক ছোট। আজকের দিনে এমনিতেই কী করে ছাড়ে? তাই বলেছেন কেক কে’টে যাবে। বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথেও কেক কা’টবে সমস্যা নেই। ওদিকে অধরা ফোন করে এ বাড়ির সবাইকে জানিয়ে আসতে বলেছিল। সবারই কিছু না কিছু ব্যস্ততা থাকায় না করে। এমনিতে জন্মদিন সেভাবে বড় করে করা হয় না। জাস্ট পরিবারের সদস্যরাই থাকে।
প্রত্যাশা গুটিগুটি পায়ে ড্রয়িংরুমে যায়। নীহারিকা ব্যস্ত ছিলো। হঠাৎ প্রত্যাশার দিকে চোখ পড়ল। গাউনটাতে ওকে বেশ সুন্দরই লাগছে। তবে ভেবেছিলেন আজ হয়তো শাড়ি পড়বে। নীহারিকা আকস্মিক বলে উঠলেন,
-” এখনকার মেয়েরা তো শাড়ি-টাড়ি তেমন পড়ে না। তাই বলছি, পাকিস্তানি থ্রি পিস পড়তে পারো। এসব পড়লে তোমাকে বেশি বাচ্চা বাচ্চা লাগে।”
প্রত্যাশা মুখে হাসি টেনে বলল,
-” জন্মদিন উপলক্ষে এটা আপনার ছেলে গিফট করেছে।”
-” ওহ্।”
বলে নীহারিকা আর বাড়তি কথা বলল না।
নীলাশা এসে সোফায় বসল। প্রত্যাশা পাশে বসতে বসতে বলল,
-” আপু বাসায় যাবে? আমাদের সাথে চল।”
নীলা রষকষহীন স্বরে বলল,
-” নাহ। ক’দিন পর যাব।”
নীলার নজর প্রত্যাশার পায়ের দিকে পড়ল, পায়ে রুপোর পায়েলটা চকচক করছে। ডিজাইনটাও নজরকাড়া। নীলা বলে উঠল,
-” পায়েলটা তো সুন্দর! কবে বানিয়েছিস?”
প্রত্যাশা একগাল হেসে বলল,
-” তোমার দেবর আমার বর মশাই গিফট করেছেন। তার বউয়ের জন্মদিনে।”
-” ওহ্।”
দু সেকেন্ড পরেই নীলাশা ঠোঁট বাঁকিয়ে ঠেস দিয়ে বলল,
-” আমার জন্য তোর কপাল খুলে গেছে রে প্রত্যাশা। আমার এ বাড়িতে বিয়ে হয়েছে বলেই, আমার অছিলায় এত ভালো বর, এত ভালো ঘর পেয়েছিস। এটা তো তোর সাত কপাল।”
প্রত্যাশা মুচকি হেসে চুলের গোছা কানের পিঠে গুঁজে বলল,
-” তোমার দেবরের কপাল ভালো ভালো, আমার মতো কিউট পিচ্চি বউ পেয়ে গেছে। আর এই বাড়ির লোকজন? উমম! আল্লাহ চাইলে তারাও একদিন বলবে; ‘ভাগ্য করে এমন বউমা পেয়েছি।’ আর তুমিও একদিন বলবে, কপাল করে তোর মতো একটা ছোট বোন পেয়েছিলাম। প্রত্যাশা রে চির কৃতজ্ঞ তোর কাছে।”
প্রত্যাশা মজা করে বলে দাঁত কেলিয়ে হাসল। নীলাশা সাথে সাথেই উপহাসের সুরে বলল,
-” হাহ, হাসালি! আমি বলব এমন কথা? জীবনেও না।”
-” কখন, কে, কীভাবে, কার কাছে ঠেকে বলা তো যায় না। তাই বেশি অহংকার ভালো নয়। হুহ।”
নীলা মশা তাড়ানোর ভঙি করল। উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। কয়েক মূহুর্ত পর। নীলা দুই আঙুলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
-” ধ্যাত, আজ দু’দিন মাথা চুলকাচ্ছে কেনো? উকুন-টুকুন হলো না তো। ইশশ্! এমন হলে বি’শ্রী হবে। সেই ক্লাস সেভেনে থাকতে একবার হয়েছিল। কী যে রাগ লাগতো।”
প্রত্যাশা উৎসুক হয়ে বলে উঠল,
-” উকুন তাড়ানোর গ্রেট আইডিয়া আমার কাছে আছে।”
-” কীহ?”
-” শোনো আপু, তোমার মাথার উকুন দূর করতে একটা ঝাক্কাস আইডিয়া দিই। দু থেকে তিনটে জন্মনিরোধক পিল গুঁড়ো করে তেলের সাথে মিক্সড করবে। দেন সেই তেলটা রাতে চুলে লাগিয়ে রেখে, সকালে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে নিবে।”
প্রত্যাশার আইডিয়া প্রথমে মনোযোগ দিয়ে শুনতে গেলেও পরের কথাশুনে নীলা থ হয়ে যায়। প্রত্যাশা একগাল হেসে দুই আঙুলে চুটকি বাজিয়ে বলল,
মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৩৫
-” এরপর দেখবে উকুন বংশবিস্তার কীভাবে করে!”
নীলা রাগত চাউনিতে তাকাতেই প্রত্যাশা দুই হাতে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার অ্যাক্টিং করে বলল,
-” স্যরি, স্যরি। এমনিই মজা করেছি।”