মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৫৭
মুসতারিন মুসাররাত
ঘড়িতে সকাল আটটা পাঁচ বাজে। নীরব অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে একবার ঘাড় ফিরে তাকাল; প্রত্যাশা বেডে জুবুথুবু হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। রাতভর বমিতে ক্লান্ত হয়ে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ক্লান্ত, দূর্বল শরীর চোখের ঘুমটুকুও কেড়ে নিয়েছিল। শেষ রাতের দিকে তবেই একটু ঘুমিয়েছে। বাচ্চা একটা মেয়ে, তার মধ্যে দু’টো প্রাণ বেড়ে উঠছে। দেখলেই কেমন মায়া কাজ করে। বড্ড টেনশনও হয়।
নীরব রেডি হয়ে চুপচাপ এসে বেডের হেডসাইডে বসল। আলগোছে কাথাটা টেনে প্রত্যাশার গা ভালো করে জড়িয়ে দিল। তারপর ঝুঁকে প্রত্যাশার মুখের উপর এসে পড়া চুল সরিয়ে দিল। ঠোঁটের কোণে একটুখানি মুচকি হাসি নিয়ে নিঃশব্দে কপালে একটা নরম চুমু খেল। প্রত্যাশা আদুরে ভঙিতে একটু নড়ল। তা দেখে নীরবের ঠোঁটের কোণের হাসি চওড়া হলো।
নীরব উঠতে যাচ্ছিল ঠিক তক্ষুনি হাতে টান পড়ল। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে প্রত্যাশা ঘুমের মধ্যেই হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে। হাত বাড়িয়ে প্রত্যাশার গালে আলতোভাবে একটা হাত রাখল নীরব। কিছুপল নিঃশব্দে ঘুমন্ত ইনোসেন্ট মুখটা চেয়ে চেয়ে দেখল। অতঃপর সন্তর্পণে আঙুল ছাড়িয়ে নিল। পরপর ঝুঁকে এবারে প্রত্যাশার গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। চটচট করে দু তিনটে চুমু আঁকে নীরব। ঘুমে বিভোর প্রত্যাশা কিচ্ছুটি টের পেল না।
নীরব চুপচাপ উঠে একটা পেন আর প্যাড হাতে নিল। কয়েকটা কথা লিখে রাখল। বেড টেবিলের ওপর রাখা কাঁচের গ্লাস দিয়ে কাগজের কোণায় চাপিয়ে দেয়। একবার শেষবারের মতো তাকাল প্রত্যাশার দিকে, তারপর নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল নীরব।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরো আধা ঘন্টাখানেক পর প্রত্যাশার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে জেগে সোফায় নীরবের ট্রাউজার টিশার্ট দেখে সেকেন্ডেই বুঝে নেয় জনাব অফিসে চলে গেছে। না বলে চলে যাওয়ায় প্রত্যাশার মুখটা মলিন হয়ে আসে। ফ্রেশ হয়ে এসে হাতমুখ মুছছিল প্রত্যাশা, তক্ষুনি নজর যায় বেডটেবিলে গ্লাস দিয়ে চাপা দেয়া কাগজের দিকে। প্রত্যাশা কৌতুহলী হয়ে ত্রস্ত কাগজটা হাতে নিল। প্রতিটি লাইন পড়ল আর ঠোঁটে হাসি ফুটতে থাকল। মন খারাপ নিমিষেই কর্পূরের মতো উবে গেল। গোটা গোটা অক্ষরে গুছিয়ে লেখা,,
– ‘শুভ সকাল মাই মিসেস। নতুন দিনের আলো যেন তোমার মুখে নরম হাসি ফোটায়। সকল ক্লান্তি, অবসাদ দূর করে দেয়। সুন্দর মিষ্টি ঘুম ভেঙে তোমাকে জাগাতে ইচ্ছে করল না। এমনিতেই আমার বেবিরা তাদের মাম্মামকে অনেক জ্বালাতন করছে, কষ্ট দিচ্ছে। তাই আমার দিক থেকে জ্বা’লানো কমিয়ে দিয়েছি। দিনের শুরুর নিঃশ্বাস বন্ধ করা চুমুটা আজও পাওনা রইল। যখন সুস্থ হবে, তখন সুদে আসলে নিবো। তখন নো ছাড়।
এই যে না বলে যাচ্ছি, এজন্য তুমি আবার রাগ করো না কিন্তু। সাবধানে চলাচল করবে, ঠিকমতো বিশ্রাম করো, সময়মতো মেডিসিন নিও। তোমার ভেতর আমার পৃথিবী বেড়ে উঠছে। তুমি আর ওদের নিয়েই আমার সব স্বপ্ন, আমার সবকিছু। ভালোবাসি। অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি আমার পা’গলী বউটাকে। এই পৃথিবীর সবকিছু মিলিয়ে যতটা ভালোবাসা যায়, তারচেয়েও বেশি ভালোবাসি আমার বাচ্চাদের মাম্মামকে।’
— নীরব মাহবুব
জনমানবশূন্য সার্থকের ফ্লাটটা আজ যেন একটু প্রাণ পেয়েছে। বদ্ধঘরে আলো বাতাস ঢুকছে। থাই গ্লাস টেনে একহাতে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেয় অদ্রিকা। সরিয়ে দিতেই ফরফর করে হাওয়া ঢুকতে থাকে। সাথে এক টুকরো ঝলমলে রোদ রুমময় লুটোপুটি খেতে থাকল।
অদ্রিকা আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। মাথায় সাদা টাওয়েলটা শক্ত করে পেঁচিয়ে নিল। গোলাপি রঙের শাড়িটার কোণা গুজে পেঁচিয়ে নেয়। পরপর আঙুলের ফাঁকে কুঁচি উঠাতে থাকে। এমন সময় দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল সার্থক। এক ঝলক চোখে পড়তেই থমকে গেল সে। মুহূর্তেই উল্টে ঘুরতে চাইল। অদ্রিকা খেয়াল করতেই হেসে বলল,
-” ডাক্তার বাবুর হঠাৎ কী হলো? রুমে পা ফেলতে না ফেলতেই আবার পালাচ্ছে যে?”
সার্থক মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
-” নাহ। কিছু না, এমনি।”
অদ্রিকা ভ্রু কুঁচকে তাকাল,
-” এমনি মানে?”
-” মানে তুই তো রেডি হচ্ছিস, ভেবেছিলাম পরে আসি।”
অদ্রিকা শাড়ির কুঁচি কোমরে গুঁজে নিল। আঁচলটা কাঁধে গুছাতে গুছাতে ঠোঁটে একরাশ দুষ্টু হাসি টেনে বলল,
-” ধুর! রাতে বাসর হয়েছে। তারপরও এত লজ্জা কিসের? আমি তো পায়ের শব্দ শুনেই ভেবেছিলাম; এসে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবি, তারপর কোমর জড়িয়ে মিষ্টি কথার বন্যা বইয়ে দিবি। তা না, বর বাবু দেখি উল্টো পালাচ্ছে। এমনি এমনিই কী আর ইন্টার্নশিপের স্টুডেন্টের সাথে টিট করেছি?”
সার্থক কেশে উঠল। এই মেয়েটা দিনদিন খুব ঠোঁট কাঁ*টা হচ্ছে। আগে তো এমন ছিলো না। কালকের পর থেকে একশো আশি ডিগ্রী এঙ্গেলে চেঞ্জ হয়েছে। প্রসঙ্গ পাল্টাতে ঝটপট বলল সার্থক,
-” অনলাইনে খাবার অর্ডার করেছিলাম। দিয়ে গেছে। জলদি ব্রেকফাস্ট করতে আয়। আমার সাথেই বেরোবি নাকি পরে? আমার নয়টায় রাউন্ড আছে।”
আঁচলটা গুছিয়ে অদ্রিকা এক আঙুল নেড়ে বলল,
-” এই ওয়েট ওয়েট। এদিকে আসুন।”
অদ্রিকার মুখভঙ্গি, ডাকার ধরণ সব অদ্ভুত লাগল। সার্থক একটু হকচকিয়ে গেল। অদ্রিকা কাছে এগিয়ে আচমকা সার্থকের গলা দু’হাতে জড়িয়ে ধরল। ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
-” বিয়ে হয়েছে। এখন বউ আমি আপনার। ফ্রেন্ড নই, ক্লিয়ার?”
সার্থক বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে রইল। অদ্রিকা স্রেফ জানিয়ে দিল,
-” এরপর থেকে তুই-তোকারি ওয়ার্ডটা আমাদের দু’জনের মধ্য থেকে ডিলেট করে দিতে হবে। কেমন অড লাগছে। এরপর থেকে এই অদ্রি শোন, অদ্রি আয় এভাবে ডাকবে না।”
সার্থক একটু ত্যাড়া সুরে বলল,
-” তাহলে কী ম্যাডাম বলে ডাকবো?”
অদ্রিকা বিরক্তির সুরে বলল,
-” ধ্যাত, আনরোমান্টিক একটা। কিচ্ছু জানে না। কথা না শুনেই একটা বলে দেয়। আমি বলছি, তুমি করে বলবে। আর মাঝেমধ্যে বউ বলে কোকিল সুরে ডাকতে পারো।”
শেষের কথাটা ফাজলামির সুরে বলে চোখ টিপে অদ্রিকা। সার্থক গলা থেকে অদ্রিকার হাত দু’টো নামিয়ে বলল,
-” যথা আজ্ঞা মহারানী, এবারে অন্তত ব্রেকফাস্ট করতে এসে আমাকে ধন্য করুন। আমাকে বেরোতে হবে।”
অদ্রিকা হইহই করে উঠল,
-” আমাকে না বলে খাবার অর্ডার কেনো করেছো? আজকের পর থেকে আমি নিজে রান্না করব, সব করব। চুটিয়ে প্রেম করে মানুষ। সেটা তো কপালে ছিলো না। আমি না হয় চুটিয়ে সংসারটাই করব।”
-” ঘড়িতে নয়টা পঞ্চান্ন বাজে। তোমার অপেক্ষায় থাকলে, তাহলে আজকের ব্রেকফাস্ট বাদ দিয়ে সরাসরি লাঞ্চ করতে হতো।”
অদ্রিকা মিষ্টি হেসে বলল,
-” আজকের দিনে এরকম দেরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এরমধ্যেও একটা রোমাঞ্চ ব্যাপার থাকে। আপনাকে এসব বলেই বা কী লাভ? আপনি তো আর ভালোবেসে কাছে আসেননি। জাস্ট আসা লাগে তাই হয়তো।”
সার্থক ভ্রু নাড়িয়ে বলল,
-” ভালোই তো বাসলাম।”
-” উঁহু।”
অদ্রিকা থেমে কিছুক্ষণ সার্থকের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকল। তারপর এক অদ্ভুত মিষ্টি ধ্যানভঙ্গিতে একটা আঙুল সার্থকের বুকের উপর রাখল। কোমল স্বরে বলল,
-” যেদিন এখানে শুধু আমারই নাম থাকবে, তোমার চোখে আমি শুধু আমাকেই দেখতে পাব। সেদিনের প্রতিটি স্পর্শই হবে ভালোবাসা। আলতো চোখে আমাকে দেখাটাও হবে ভালোবাসা। আমাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণ হালাল, প্রতিটি ছোঁয়াও হালাল। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের পবিত্র সম্পর্কটাই তোমার মাঝে ভালোবাসা তৈরি করবে। আমার প্রতি সবটা জাস্ট রেসপন্সবিলিটি থেকে নয়, ভালোবেসে করবে।”
মাথাটা সার্থকের বুকের উপর রাখল অদ্রিকা। বলল,
-” জানি না কতটা বাধ্য করেছি তোমাকে, আমাকে জীবনসঙ্গী বানাতে। তবে আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তোমাকে বাধ্য করবে আমাকে ভালোবাসতে।”
সার্থকের একটা হাত আপনাআপনি অদ্রিকার পিঠ পেঁচিয়ে ধরল। শ্যাম্পুর মিষ্টি গন্ধে কেমন একটা ঘোরের সৃষ্টি হলো। মিষ্টি মেয়েটির মিষ্টি ব্যবহারে সার্থক ধীরেধীরে দূর্বল হয়ে পড়ছে। আর সার্থক নিজেও চায় গ্রো-আপ করতে। সব দূর্বলতা ছেড়ে বিয়েটা করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুধুই অদ্রিকার চাওয়াকে প্রায়োরিটি দিতে নয়, নিজের বিষণ্ণ লাইফটা গুছিয়ে নিতেই বিয়েতে মত দেয় সে। সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে তার দিক হতে সর্বোচ্চ এফোর্ট দিবে।
-” নীরব, আপনি বন্ধন সিনেমা দেখেছেন?”
ঘুমে বিভোর নীরবের ঘুম ভাঙে ফোনের রিংটোনের শব্দে। প্রত্যাশা প্রায় মাসখানেকের মতো হবে বাবার বাড়ি গিয়েছে। এত রাতে প্রত্যাশার কল দেখে প্রচন্ড টেনশন হয় নীরবের। এমনিতেই আর সপ্তাহ খানেক আছে ডেটের। আগে পরেও হতে পারে। ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে দুশ্চিন্তায় হার্টবিট বেড়ে যায়। রিসিভ করে অস্থির গলায়,
-” হ্যালো, প্র…”
এতটুকু বলতে না বলতেই ওপাশ থেকে প্রত্যাশার অমন প্রশ্নে হকচকাল নীরব। কথাটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। কপালে জ্যামিতিক সুক্ষ্ম রেখার ন্যায় ভাঁজের উদয় হলো। কিছু বলার আগেই অধৈর্য গলায় প্রশ্ন করে উঠল প্রত্যাশা,
-” কী হলো চুপ করে আছেন যে? আমার কথা বোঝেননি? আমি বলতে চাইছি, ওপার বাংলার জিৎ আর কোয়েলের বন্ধন সিনেমা দেখেছেন কী না?”
কান থেকে ফোনটা নামিয়ে সামনে ধরে সময় দেখল নীরব। রাত একটা তেরো বাজে। মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে এরকম উদ্ভট প্রশ্নের মানে আছে? বিরক্তিতে নীরবের কপালে প্রগাঢ় খাঁজ পড়ল। দাঁত চেপে বলল,
-” মাথা ঠিক আছে?”
-” আমার উত্তর এটা নয়, হ্যাঁ বা না। এক শব্দে দিলেই হলো।”
কিছু বললে তো আবার ম্যাডাম রাগ করে ফোন কে”টে দিবে। শুধু কি তাই? উঁহু, এখানেই শেষ নয়। দিনে ফোন করলেও কথা বলবে না। শেষে ও বাড়ি গিয়ে তার অভিমান ভাঙিয়ে আসতে হবে। অগত্যা বিরক্তি, রাগ একপাশে চেপে উত্তরে বলল নীরব,
-” না।”
-” ওহ্। বিকেলে জলসা মুভিজে ছবিটি হচ্ছিল। দেখার পর থেকেই মনটা কেমন খচখচ করছিল। আর একটু আগেই অমন একটা স্বপ্ন দেখলাম। এই সিনেমায় বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে কোয়েল মা*রা যায়। জিৎ বউকে এত ভালোবাসে অথচ ক বছর পর আবার বিয়ে করল। আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমি নেই। আমাদের বাচ্চার দেখভালের অজুহাত দিয়ে আপনি বিয়ে করেছেন। আচ্ছা নীরব এমনি ধরুন, কখনো অমন পরিস্থিতি হলে আপনি কী আবার বিয়ে থা করবেন? জাস্ট ধরুন। সিরিয়াসলি নেয়ার দরকার নেই।”
নীরবের চোখে ঘুমের রেশ। কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে এমন সব কথা বলায় নীরবের মেজাজ চটল। তবে বলল ঠাণ্ডা গলায়,
-” এই মুহূর্তে তোমার এসব সিনেমা দেখতে কে বলেছে? আর মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে কীসব পা’গ’লের প্রলাপ শুরু করেছো বলো তো?”
-” এই তো বুঝেছি বুঝেছি।”
-” স্ট্রেইঞ্জ! কী বুঝলে?”
-” এইযে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে রাগ দেখাচ্ছেন। তারমানে বুঝলাম, আপনিও অমন পুরুষ।”
-” কেমন পুরুষ?”
-” আমার এক আত্মীয় ছেলেমেয়ে বড়বড়। বউয়ের মৃ*ত্যুর বছর না হতেই আবার ঘরে নতুন বউ এনেছে। আসলে পৃথিবীর সব পুরুষই সমান। যতই জান, ফুসফুস, কিডনি, লিভার বলুক না কেনো। আসলে তো তারা মূলত একটা বিষয়েই…”
বলতে গিয়ে থেমে যায় প্রত্যাশা। নীরব শুধাল,
-” কী?”
-” কী বলতে চাইছি বুঝতে পেরেছেন। ফিডার খাওয়া বাচ্চা নন আপনি। বাচ্চার বাবা হচ্ছেন। সো না বোঝার অ্যাক্টিং করবেন না।”
নীরব নিজেকে সামলে নরম স্বরে বলল,
-” প্রত্যাশা উল্টাপাল্টা উদ্ভট কথাবার্তা বাদ দিয়ে ঘুমাও। আর তোমার এইসব অদ্ভুত উদ্ভট কথাবার্তায় রেফারেন্স টানার জন্য তোমার সব আত্মীয়-স্বজনও আছে। দুনিয়ার সবকিছু তাদের মধ্যে ঘটে থাকে, আর তুমিও কথায় কথায় অমুক-তমুক টেনে রেফারেন্স দাও।”
-” কী আশ্চর্য! আত্মীয়-স্বজন একজন নাকি? হাজার জনের হাজারো কাহিনী। আপনাকে তো তেমন কিছু বলাই হয়নি।”
-” ও গড! তেমন কিছু বলা হয়নি, তাই এই অবস্থা।”
বিড়বিড় করে বলে নীরব। গলা ঝেড়ে বলল,
-” প্রত্যাশা, উল্টাপাল্টা ভাবনা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আর এই মুহূর্তে অমন সিনেমা দেখবে না।”
-” নীরব?”
-” হুঁ।”
-” আপনাকে একটা কথা দিতে হবে?”
নীরবের কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়ল। পাগলীটা আবার কী বলে ফেলে আল্লাহ মালুম! নীরব ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,
-” কী?”
-” আগে বলুন কথাটা রাখবেন?”
-” আগে বলো তো।”
-” নাহ, আপনি বলুন।”
-” আচ্ছা, যথাসাধ্য চেষ্টা করব। তুমি নির্দ্বিধায় বলো।”
-” আমাদের বাচ্চাকে অনেক আদর করবেন, আর কখনো অমন কিছু হলে আমার জায়গাটা কাউকেই দিবেন না।”
বেডের হেডে গা এলিয়ে শুয়ে একটা কুশন বুকের উপর টেনে নেয় নীরব। বলল,
-” তুমি কী এরকম পাগলীই থাকবে? আমার বাচ্চাকে আদর করার কথা তোমাকে বলতে হবে। আমার অংশ, আমার রক্ত, তাদেরকে আমার থেকেও বেশী ভালোবাসব, আগলে রাখব। আর শোন শেষে যেটা বলেছো, অমনটা ভুলেও আর বলবে না। সবটা ভালো হবে, ইনশাআল্লাহ।”
-” আপনি এসে সামনাসামনি বলুন। আমার চোখেচোখ রেখে বলবেন। আপনার চোখ দেখে বুঝব সত্যি নাকি মিথ্যে বলছেন।”
-” প্রত্যাশা অবুঝপনা বাদ দাও, এখন কী করে সামনাসামনি যাবো।”
-” আপনি এক্ষুনি আসুন।”
-” মাঝ রাতে শ্বশুর বাড়ি গেলে তোমার আব্বু-আম্মু কী ভাববে?”
-” কিছু একটা বলে দিবেন।”
-” প্রত্যাশা পাগলামি বন্ধ করো। যাও সকালে অফিস যাওয়ার আগে তোমার সাথে দেখা করে যাব। এবারে, হ্যাপি?”
প্রত্যাশা কয়েক সেকেন্ড থম মে”রে থাকল। পরক্ষণেই কাটকাট গলায় বলল,
-” আচ্ছা, আসতে হবে না। আপনি ভিডিও কল দিন। আমার চোখে চোখ রেখে উত্তর দিবেন। স্বপ্নটা দেখার পর থেকে আমার মনটা কেমন কেমন করছে।”
নীরব সাথে সাথে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করল। সাথে সাথেই স্ক্রিনে একটা শুকনো মুখ ভেসে উঠল। নীরব সেদিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল। প্রত্যাশা গম্ভীর মুখে তাকাল। শুকনো ঠোঁটজোড়া নেড়েনেড়ে বলে প্রত্যাশা,
-” কুড ইউ এভার ফিল দ্য এম্পটি স্পেস আই লিভ বিহাইন্ড?”
-” নো, নেভার। দ্যাট এম্পটি স্পেস ইজ রিজার্ভড ওনলি ফর ইয়্যু।”
প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বলল নীরব। প্রত্যাশা ঠোঁটে হাসি ফুটাল। বলল,
-” স্যরি ঘুম ভাঙিয়ে বিরক্ত করার জন্য। আচ্ছা এবারে শুয়ে পড়ুন। রাখছি।”
নীরব তৎক্ষণাৎ আদেশের সুরে বলল,
-” কল কাটবে না। ফোনটা এমন জায়গায় রাখো যাতে তোমার ফেসটা দেখা যায়। তুমি যতক্ষণ না ঘুমাচ্ছ, আমি ততক্ষণ লাইনটা কাটব না। তুমি ঘুমাচ্ছ নিশ্চিত হলেই কল কাটব।”
-” দরকার ছিলো না। প্রব্লেম নেই।”
-” আমার প্রব্লেম হবে। সো, যা বলছি তাই করো।”
প্রত্যাশা ফোনটা একটা বালিশ আর দু’টো কুশনের উপর একটু উঁচুতে রেখে দেয়। তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করে। প্রায় মিনিট পনেরো পরে লাইনটা কা”টে নীরব।
দু-তিন পর।
সন্ধ্যার পরপর নীরবের সামনে ল্যাপটপ। স্ক্রিনে প্রত্যাশার মুখ। কিছু কথাবার্তা শেষে ভিডিও কলের ওপাশ থেকে বলল প্রত্যাশা,
-” আগামীকাল তো শুক্রবার। কালকে দুপুরে ইচ্ছেকে সাথে নিয়ে আসবেন।”
-” আচ্ছা।”
হঠাৎ প্রত্যাশা কপাল কুঁচকে নেয়। সেটা নীরবের নজরে পড়তেই উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” প্রত্যাশা ঠিক আছো? এনি প্রব্লেম?”
কপালের ভাঁজ মিলিয়ে একটা হাত পেটের উপর রাখল প্রত্যাশা। মুখে হাসি টেনে বলল,
-” নাহ, তেমন কিছু নয়। আপনার বাচ্চারা পেটের মধ্যে ফুটবল খেলছে। একটু লেগেছিল।”
নীরবের অধর কোণে চাপা হাসি ফুটল। বলল,
-” হুম, সেদিন তো দেখলামই। তোমার পেটের উপর মাথাটা রাখতেই মনেহলো; বেবিরা পিকেটিং শুরু করেছে। দু’জনে একসাথে তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে ,না?”
-” মা হতে গেলে এটুকু কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হয়।”
রাত সাড়ে বারোটা পার। মাত্র চোখটা লেগেছিল নীরবের। আর তক্ষুনি ফোনের কর্কশ শব্দে ঘুম ভাঙে। ফোনটা হাতে নিয়ে শফিক সাহেবের কল দেখে যা বোঝার বুঝে নেয় নীরব। শফিক সাহেব অস্থির গলায় বললেন,
-” নীরব বাবা প্রত্যাশাকে হাসপাতালে নিচ্ছি। আমরা এখন গাড়িতে আছি। ডক্টরস হাসপাতালের কাছাকাছি প্রায়।”
-” আমি এক্ষুনি আসছি।”
গলাটা একটু কাঁপল বোধহয়। প্রত্যাশার কান্নার শব্দ হালকা কানে আসে নীরবের। টেনশনে হাত-পা হিম হয়ে আসতে লাগলো। ত্রস্ত প্যান্টটা পড়ে নিল, পরনে যে টিশার্ট ছিল ওটাই পড়ে বেরোনোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওয়ালেট, আর ক্রেডিট কার্ডটা পকেটে গুঁজে মোবাইলটা হাতে নিয়ে জোড়াল শ্বাস টেনে রুম থেকে বেরোয়।
নীহারিকাকে ডেকে একবাক্যে বলেই হন্তদন্ত হয়ে বেরোতে থাকে নীরব। নীহারিকা পিছুন থেকে ডেকে বললেন,
-” নীরব দাঁড়া বাবা আমিও যাবো।”
নীরব ঘুরে না তাকিয়ে যেতে যেতেই উত্তর দিল,
-” পরে এসো।”
এক সেকেন্ড যেন বিলম্ব করার সময় নেই নীরবের। নীহারিকার গলা পেয়ে বড়রা রুম থেকে আসে। নিভান মায়ের অস্থিরতা দেখে বলল,
-” রেডি হও, আমি নিয়ে যাচ্ছি।”
সন্ধ্যার পর থেকেই হালকা পেইন শুরু হয়েছিল। প্রত্যাশা বুঝতে না পেরে ভেবেছিল অ্যাসিডিটির জন্য বোধহয় এমন হচ্ছে। আম্মুকেও কিছু জানায়নি। রাত নয়টার পর ব্যথাটা ক্রমশ একটু একটু করে বাড়তে থাকে। তখন আম্মুকে জানায়। ওদিকে দু একজন প্রতিবেশী এসে হুলুস্থুল লাগায়। বলে, প্রথম বাচ্চা দু-একদিন আগে থেকেই একটু আধটু এমন হয়ই। রাতটা দেখে সকালে যেয়ো। ফলস ব্যথাও হতে পারে।
বারোটার পর থেকে আচমকা অসহনীয় ব্যথায় প্রত্যাশার মুখ নীল এসে আসে। তখন শফিক সাহেবকে বলে সাথে সাথে গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে ভর্তি করে মেয়েকে।
রাত পৌনে একটা কেবিনে প্রত্যাশার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। অসহ্য ব্যথায় মেয়েটা ঝটফট করছে। দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চার নড়াচড়া টের পাচ্ছে না। এটা শোনার সাথে সাথে ডিউটি ডাক্তার অক্সিজেন দিতে বলে। অক্সিজেনের ঘাটতি হলে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায়।
নীরবের আসতে আসতে বারোটা পঞ্চান্ন বেজে যায়। দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলায় ওঠে নীরব। করিডোরে নীরব ঢুকতেই শফিক সাহেবকে পেল। তাঁর মুখ গম্ভীর, চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। নীরব উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” প্রত্যাশার কী অবস্থা? ডক্টর দেখেছে?”
শফিক সাহেব হতাশ গলায় উত্তর দিলেন,
-” বাবা, ডাক্তার একজনই ডিউটিতে আছে। উনি বলছে, গাইনি ডাক্তার সকালে আসবে। এত রাতে নাকি কেউ আসবে না।”
কথাটা শুনে নীরবের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। মুখ শক্ত করে বলল,
-” একজন মুমূর্ষু রোগী রাতভর ব্যথায় কষ্ট পাবে, আর ডাক্তার তাঁর সুবিধামতো সকালে আসবেন? যদি এরমধ্যে কোনো বিপদ হয়, তখন দায় নেবে কে? চিকিৎসা মানে শুধু প্রেসক্রিপশন না। এটা তো মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, মানবিকতার জায়গা থেকেও দাঁড়ানো উচিত।”
কেবিন থেকে প্রত্যাশার ছটফটানির শব্দ ভেসে এল।
নিজেকে সামলে তাড়াহুড়ো করে কেবিনে ঢোকে নীরব। প্রত্যাশা বেডে শুয়ে, মুখে অক্সিজেন মাস্ক, হাতে স্যালাইন চলছে। ব্যথায় ছটফট করতে করতে মাস্কটা বারবার সরিয়ে দিচ্ছে। নীরব সামনে যেতেই প্রত্যাশা উঠতে চাইল। নীরব এগিয়ে গিয়ে ওকে আগলে ধরল। মাথায় হাতটা রেখে বলে,
-” প্রত্যাশা, চিন্তা করো না। সব ভালো হবে ইনশাআল্লাহ। আমি এক্ষুনি ডাক্তার ম্যানেজ করছি। একটু সহ্য করে নাও।”
প্রত্যাশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-” নীরব আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি আর পারছি না। প্লীজ, তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকুন। আমি বোধহয় মরেই যাব।”
নীরবের বুকটা হাহাকার করে উঠল। অধরার গাল বেয়ে টপটপ পানি ঝরছে। নীরব আশ্বাস দিতে বলল,
-” প্রত্যাশা এসব আর মুখেও আনবে না। সবটা ভালো হবে, তোমার কিচ্ছু হবে না।”
পাশ থেকে অধরাও বোঝানোর চেষ্টা করল। নীরব ব্যাকুল গলায় জিজ্ঞেস করল,
-” বাচ্চাদের নড়াচড়া টের পাচ্ছো?”
প্রত্যাশা দুপাশে মাথা নেড়ে না বোঝাল। তারপরই হাহাকার ভরা কান্নায় ভেঙে পড়ল মেয়েটা। নীরবের বুকে মাথা গুঁজে দু’হাতে পিঠের টিশার্ট আঁকড়ে ধরল। শব্দ করে কাঁদতে থাকল। নীরবের চোখ জলে ভরে উঠল। খুব হেল্পলেস লাগছে নিজেকে। কী করবে ঠাওর করে উঠতে পারছে না। নীরব ইশারায় অধরাকে প্রত্যাশাকে সামলাতে বলল। আর দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল ডিউটি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।
ডিউটির ডাক্তারের সাথে কথা বলে প্রত্যাশার কন্ডিশন সম্পর্কে শোনে নীরব। তারপর সোজা কাউন্টারের দিকে এগোয়। কর্তব্যরত একজন ম্যানেজমেন্ট স্টাফ কাগজপত্র গুছাচ্ছিল। নীরব তাড়াহুড়ো করে বলল,
-” এখনই গাইনি ডাক্তারকে আনতে হবে। রোগী খুবই ক্রিটিক্যাল।”
লোকটা মাথা নেড়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
-” স্যার, এতরাতে কোনো ম্যাডামই আসতে রাজি হচ্ছেন না। অনেক জনের সাথেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কেউ আসতে রাজি হচ্ছে না। অবশেষে আমরা একজনকে ম্যানেজ করেছি, কিন্তু উনিও ভোর ছটার আগে আসবেন না। বাকিরা তো আটটা-নটার পর আসবে।”
নীরব চোয়াল শক্ত করে দাঁত চেপে বলল,
-” মানে কী? একজন মা রাতভর যন্ত্রণায় ছটফট করবে। বাচ্চাদের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে, তবুও আপনারা শুধু বলে যাবেন সকাল হলে আসবে? মানুষের জীবন যদি আপনাদের কাছে এত সস্তা হয়, তাহলে হাসপাতাল চালান কেন?”
লোকটা একটু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,
-” স্যার, আমরা চেষ্টা করছি। ডাক্তারদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে__”
নীরব এবার আর ধৈর্য ধরতে পারল না। কণ্ঠ উঁচু করে বলল,
-” এক সেকেন্ডও যদি দেরি হয়, মা-বাচ্চা দুজনেরই জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। আমি চুপচাপ বসে থাকব না। এখনই ব্যবস্থা নিন। আপনি চাইলে উনাদের ফোন ধরিয়ে দিন, আমি নিজেই কথা বলব।”
লোকটা কিছু বলার আগেই নীরব আঙুল মুষ্টিবদ্ধ করে পরপর ছেড়ে টেবিলে চাপড়ে বলল,
-” ডিউটির নাম করে শুধু সাইন দেয়া হবে না। এখানে মানুষ মরছে, মানুষ বাঁচানোই আপনাদের কাজ। যা বলছি ফাস্ট করুন।”
কয়েকজন ডাক্তারের কাছে কল দিলেও তোলে না। সিনিয়র নার্স এসে বলল,
-” আমাদের এখানে একজন কাইন্ড হার্টেড ম্যাম আছেন। ওনাকে একবার কল দিয়ে দেখতে পারেন। কিছুদিন আগে এরকম রাতে একটা ইমার্জেন্সি কেসে এসেছিলেন।”
নীরব বলল,
-” কাইন্ডলি নম্বরটা দিন। আমি কল করছি।”
.
অদ্রিকার ফোনটা ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে কাঁপতে লাগলো। সার্থক বলল,
-” অদ্রি ফোন এসেছে।”
অদ্রিকা ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে বলল,
-” কে দিয়েছে?”
সার্থক ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,
-” আন্নাউন নম্বর।”
অদ্রিকা চোখ বুজেই বিরক্তিকর কণ্ঠে বলল,
-” ধূর, বাদ দাও তো। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। পাওয়ার অফ করে রাখো।”
এই বলে সার্থকের গায়ের উপর হাত রেখে জড়িয়ে ধরে আয়েশিভঙ্গিতে শোয় সে।
রিং হয়ে কে’টে গেল। নীরবের কপালের রগ টনটন করছে। এরমধ্যে ডিউটি ডাক্তার প্রত্যাশাকে আবার দেখে আসে। প্রত্যাশার ওয়াটার ব্রেক হয়েছে। ব্যথাও তীব্র। ডিউটি ডক্টরের হাতের ভাঁজে স্টেথোস্কোপ মোড়ানো। নীরবের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে বলল,
মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৫৬
-” মিস্টার নীরব, আপনার ওয়াইফের কন্ডিশন ক্রিটিক্যাল। পেশেন্টের শারীরিক কন্ডিশন দেখে মনেহয় না নরমাল ডেলিভারির স্ট্রেস নিতে পারবে। টুইন বেবির নরমাল ডেলিভারি পসিবল হবে না। আর অ্যাট দিস মিডনাইট কোনো সার্জন অ্যাভেইলেবল নেই। সো প্লিজ, প্রিপেয়ার ফর এনি ওরস্ট-কেস সিচুয়েশন।”