মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ১৭

মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ১৭
মুশফিকা রহমান মৈথি

“বাবু, বরের আদর খাওয়ার জন্য রেডি?”
অভ্রের এমন উৎকট কথাবার্তায় অভ্যস্ত ঐন্দ্রিলা। এইসব কিছুর একটাই উদ্দেশ্য সেটা হলো ঐন্দ্রিলার অস্থিমজ্জায় স্ফুলিঙ্গের সঞ্চালন। ঐন্দ্রিলাকে রাগাতে যেন পৈশাচিক আনন্দ পায় সে। তার মুখের ভঙ্গিমাতে স্পষ্ট সেই আনন্দের ঝলক নজরে পড়লো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঐন্দ্রিলা। মনটা ঝিমিয়ে আসছে। শরীরটাও জানান দিচ্ছে সে ক্লান্ত। ভারি শাড়ি, গয়না আর এই মুখের উপর বস্তাভরা মেকাপ, উপরন্তু সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি ঘটা ঘটনা সব মিলিয়ে শরীরটা ঝিমঝিম করছে। এখন এই বিশ্রী, ভারী শাড়িটা খুলে ফেলতে পারলেই শান্তি। ফলে নির্লিপ্ত স্বরে বললো,

“”ফাজলামি বাদ দে অভ্র, আমি খুব ক্লান্ত। এখন ঘুমাবো”
অত্যধিক শান্ত, বিকারহীন স্বর ঐন্দ্রিলা। অভ্র কিছু সময় চেয়ে রইলো। ঘরময় নিস্তব্ধতা। ঐন্দ্রিলা তাকে দিকে আর তাকালো না, এতো সময় নেই তার নিজের লাগেজটা খুলতেই যাবে ঠিক সেই সময় খপ করে হাতটা ধরলো অভ্র। হ্যাচকা টানে নিজের সন্নিকটে নিয়ে এলো। তাদের মাঝে দুরত্ব নেই বললেই চলে। ঐন্দ্রিলা চমকালো, থমকালো। বিস্মিত নয়তে চাইতেই অভ্রের নেশাতুর নয়ন পরিলক্ষিত হলো। সাংঘাতিক সেই দৃষ্টি। কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা। নিজেকে বাধন থেকে ছাড়াতে চাইলো ঐন্দ্রিলা। কিন্তু এই নব্বই কেজির ষাড়ের জোরের সাথে পারলো না। অভ্রের এমন উদ্ভট আচারণে ধরফর করছে বুক। ঐন্দ্রিলা জড়স্বরে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ছাড় অভ্র, ভালো লাগছে না”
“ছাড়াছাড়ি হবে না ঐন্দ্রি। ভুলে যাস না তুই আমার স্ত্রী। শুধু শরীর নয়, পুরোদস্তর তোর উপর আমার অধিকার। কোনো ছাগলই হবে যে অধিকার থাকতেও সেটা কাজে লাগায় না। আমি সেই ছাগল নই”
অভ্রের কন্ঠ শীতল। তার মুখে সেই ফিঁচেল হাসিটা মিলিয়ে গেছে। চাহনী বদলে গেছে। এ এক অপরিচিত চাহনী। এতকাল অভ্রকে চিনতো পাশের বাড়ির অভদ্র ছেলে হিসেবে, যে তাকে জ্বালাতন করে, ঐন্দ্রিলার পঁচিশ বছরের জীবনের একমাত্র শত্রু এই ছেলেটি। অথচ আজ সব বদলে গেছে। সে এখন তার স্বামী। শত্রু অভ্রকে পড়ার ক্ষমতা থাকলেও এই স্বামী অভ্রকে পড়তে পারলো না। একটা চিন্তার রেশ ধরে উঁকি দিলও হাজারো প্রশ্ন। ঐন্দ্রিলা যখন চিন্তার ভিড়ে অস্থির ঠিক সেই মুহূর্তে অভ্র তাকে কোলে তুলে নিলো। ঐন্দ্রিলার বিস্ফারিত নয়ন তাকে দেখলো। অভ্র তার বিস্মিত, হতবাক নয়নকে দু পয়সার দাম দিল না। হাটা শুরু করলো ফুলসজ্জিত খাটের দিকে। ঐন্দ্রিলা এবার ভড়কালো,

“মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? কি করছিস?”
“যা বাসর রাতে সব স্বামী স্ত্রী করে। নিশ্চয়ই আমি তোকে এখানে পুতুলের মতো বসিয়ে রাখার জন্য বিয়ে করি নি”
অভ্রের কন্ঠও যেন অপরিচিত লাগলো ঐন্দ্রিলার। ফলে বিশ্রী অস্থিরতায় ছটফট করতে লাগলো সে। কিন্তু তার ছটফটানিকে উপেক্ষা করলো অভ্র। ঐন্দ্রিলাকে একরকম ছুড়ে মারলো যেন খাটে। তারপর তার উপর ভর দিয়ে ঝুকলো। ভারী শরীরটা মিশিয়ে ফেললো পাতলা তনু। ফুলের কারুকার্য একেবারে এলোমেলো হয়ে গেলো। বিক্ষিপ্ত হলো ঐন্দ্রিলার চিন্তাগুলোও। বিমূঢ় হয়ে গেলো মস্তিষ্ক। হুট করেই মস্তিষ্ক বললো,
“এটাই তো ছিল ভবিতব্য। সে তোমার স্বামী। ঘনিষ্ট তো সে হবেই”

ঐন্দ্রিলা তার ছটফটানি থামিয়ে দিলও। ক্ষান্ত হয়ে গেলো মনশহরের কালবৈশাখী। শ্রান্ত শরীরটা ছেড়ে দিল। অভ্র তার কাছে এলেও সে নির্বিকার রইলো। অভ্র তার কাছে আসতেই সে নিস্তেজ হয়ে গেলো। মুখখানা ফিরিয়ে নিলো। অভ্র থামলো। দেখলো গাঢ় নয়নে। আপাতদৃষ্টিতে সবার মনে হতে পারে ঐন্দ্রিলা তার প্রতিবাদ, বিদ্রোহ সব থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অভ্র বুঝলো মেয়েটা তার হৃদয়প্রকোষ্ঠে তুলেছে অভেদ্য দেওয়াল। অভ্র হাসলো। পরমুহূর্তেই উঠে গেলো সে। ঐন্দ্রিলার উপর থেকে ভারী শরীরটা সরে যাওয়াতে অবাক হলো সে। চোখ ফিরিয়ে তাকাতেই দেখলো অভ্র তার আলমারীর কাছে চলে গেছে, একটা নীল টিশার্ট আর শর্টস বের করে চলে গেলো সে বাথরুমে। অতঃপর শাওয়ারের তীব্র শব্দ কানে এলো। ঐন্দ্রিলা বিমূঢ় শুয়ে রইল। ছেলেটা কি চায়? এমন বেপরোয়া আচারণ কেনো?

মিনিট বিশেক বাদে বের হলো অভ্র। ভেজা চুল থেকে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ছে শ্যাম মুখে। টাওয়ালটা ছুড়ে মারলো ঐন্দ্রিলার দিকে। ঐন্দ্রিলা হতবাক তাকিয়ে আছে। রাগী স্বরে বললো,
“কি?”
“ছড়িয়ে দে”
বলেই নির্বিকার চিত্তে বিছানার কাছে চলে এলো সে। বিনা ভনীতায় হিংস্র জীবের মতো ছিড়ে ফানাফানা করে ফেললো বিছানার সব সাজসজ্জ। অতঃপর সেই উচ্ছেদ্য ফুলগুলো স্তুপ করে ফেলে দিল ঘরের কোনে। ঐন্দ্রিলা হা করে তাকিয়ে রইলো উন্মাদ ছেলেটির কান্ডকারখানায়। অভ্রের মুখে ছড়িয়ে আছে বিরক্তি। ঐন্দ্রিলার দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমি ওই মুভি সিনেমার মত ঢং পারি না। আমার খাট ছাড়া ঘুম হয় না। আমি বামপাশে ঘুমাই। এখন তুই বুঝে নে কি করবি”
বলেই ধরাম করে শুয়ে পড়লো অভ্র। বিকট শব্দ হলো। ঐন্দ্রিলা অবাক হলো খাটের মজবুতি দেখে। এতো বিশালকায় লোকটা এভাবে ধরাম করে শুলেও কিছুই হলো না খাটের। ঐন্দ্রিলার রাগ হচ্ছে এই উন্মাদসুলভ কাজে। ফলে ক্রোধিত স্বরে শুধালো,
“এমন পাগলামি করছিস কেনো? আমার রাগ নির্জীব বস্তুর উপর ঝাড়ছিস?”
“কে বলেছে আমি রেগে আছি?”

মুখখানা ফিরিয়ে নির্লিপ্ত স্বরে শুধালো অভ্র। ঐন্দ্রিলা থতমত খেলো। অভ্র তার উত্তর অপেক্ষা না করেই বলল,
“আমি আমার ঘরে এভাবেই থাকি। এমন উচ্ছৃঙ্খল, এমনই জানোয়ারসুলভ আমার আচারণ। আমি কারোর জন্য নিজেকে বদলাতে পারবো না। তুই আমার স্ত্রী ঐন্দ্রি। আমাকে এখন একটু চিনতে শেখ। এই জানোয়ারের সাথেই তোকে থাকতে হবে চিরকাল। তোর কি ধারণা, আমি সে*** করতে পারি নি বলে এমন আচারণ করছি? শোন, আমি এতোটা পার্ভার্ট না। আমার কিছু নিজস্ব নৈতিকতা আছে, রুলস আছে। আমার স্পর্শে যদি আমার বউ লজ্জাই না পায় তবে পুরুষ হিসেবে আমি ব্যর্থ। যেদিন আমার স্পর্শে তোর হৃদয় কাঁপবে সেদিন আমি তোর থেকে আমার অধিকার আদায় করে নিবো”
বলেই কোলবালিশটা জড়িয়ে চোখ বুজে ফেললো অভ্র। ঐন্দ্রিলা দাঁড়িয়ে রইল বিমূঢ়। নাহ! সে ভুল। এই পুরুষকে বোঝার ক্ষমতা তার নেই। কোনো কালেই ছিলো না।

নিগুঢ় রাত। গাঢ় ঘুমে তলিয়ে আছে ঐন্দ্রিলা। হুট করেই অনুভব হলো একটা পাথরের বস্তা গলার কাছে ধপ এসে পড়লো। তার পেটের উপরও একটা পাথরের বস্তা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। দম বন্ধ লাগছে। এই বুঝি পড়ে যাবে সে। কিন্তু সে তো ঘুমিয়েছিলো অভ্রের ঘরে। অভ্র কি তাকে মেরে ফেলার জন্য তাকে পাথর চাপা দিয়েছে। চিন্তাটা মস্তিষ্কের কোষে জাগ্রত হতেই তড়িৎ গতিতে চোখ মেললো ঐন্দ্রিলা। ঘর অন্ধকার। আশপাশটা দেখতেই অনুভূত হলো সে অভ্রের ঘরেই কাছে।

মস্তিষ্ক একটু জাগ্রত হতেই অনুভব করলো সে হাত পা নাড়াতে পারছে না। অস্থির হলো চিত্ত। পর মুহূর্তেই নিজেকে শান্ত করলো যখন বোধ হলো তার উপর কোনো পাথরের বস্তা না, এগুলো অভ্রের হাত, পা। একটা মানুষ এতো বাজেভাবে কি করে ঘুমাতে পারে? অভ্রের হাত তার গলার উপর। পা পেটের উপর। ঐন্দ্রিলার দম আটকে আসার যোগাঢ় হলো। হালকা শরীরের সকল শক্তি পুঞ্জিভূত করে ধাক্কা দিলো সে অভ্রকে। কিন্তু সে সরার বদলে নড়ে আরোও সন্নিকটে চলে এলো। মুখ গুজলো ঐন্দ্রিলার ঘাড়ে। শরীরের সমস্ত ভর ঐন্দ্রিলার উপর। ঐন্দ্রিলা ধাক্কাধাক্কি করলো কাজ দিল না। অভ্রের কোলবালিশ অবহেলায় পড়ে আছে মেঝেতে। আর সে ঘুমিয়ে আছে ঐন্দ্রিলার উপর। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে পড়লো সে। শরীর ছেড়ে দিলো। তলিয়ে পড়লো গভীর ঘুমে।

ঐন্দ্রিলার সারা শরীরে ব্যাথা। ঘুম ভাঙলো খুব দেরিতে। পাথরটা এখনো ঘুমে। সারাটা রাত ঐন্দ্রিলার উপর এভাবে বেঘোরে ঘুমিয়েছে এই মানব। আর সহ্য হচ্ছে না। ফলে নিজের গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো সে অভ্রকে। ধাক্কাটা এবার কাজে দিল। গড়িয়ে পড়ে গেলো অভ্র। ফলে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বিমূঢ় দৃষ্টিতে বোঝার চেষ্টা করলো পৃথিবীকে। ঐন্দ্রিলা কোপিত স্বরে বলল,
“আরেকবার এমন করলে দেখিস কি করি”
বলেই উঠে গেলো সে। অভ্র হতবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে পারলো না হলো টা কি

নতুন বউ এতো দেরি করে উঠেছে ব্যাপারটি বেশ আলোড়ণ তৈরি করলো। উপর থেকে ঐন্দ্রিলার পা ফেলতেও যেনো কষ্ট হচ্ছিলো। নব্বই কেজি ওজনের একটা পাথর যদি নিজের সব ভার ছেড়ে তার উপর ঘুমায় এই ছোট দেহ কি সইতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা অন্যভাবেই নিলো অভ্রের তিন খালা। একজন তো খাওয়ার টেবিলেই বলে উঠলো,
“কাইলরাত কি খুব ধকল গেছে বউ”

খেতে খেতে বিষম খেলো ঐন্দ্রিলা। নাকে মুখে উঠলো খাবার। তাড়াতাড়ি পানি খেলো সে। ততসময়ে নিচে এলো অভ্র। চেয়ার টেনে বসলো। ঐন্দ্রিলা তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। এর মাঝে আরেক খালা বলে উঠলেন,
“তা বউ, বাচ্চার মুখ দেখাবা কবে?”
ভদ্রমহিলার কথা শুনে জমে গেলো ঐন্দ্রিলা। কি উত্তর নেওয়া উচিত তার জানা নেই। নতুন বউদের মতো লজ্জা পেয়ে মাথা নত করার কথা অভ্যাস না নেই। তাই সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো খালার দিকে৷ ঠিক তখন পাশ থেকে অভ্র মুখে খাবার পুরে বললো,

“এটা কি ফুডপান্ডা খালা? অর্ডার দিলাম আর আধা ঘন্টায় ডেলিভারি! সময় লাগে এসবে। চিন্তা করো না, অর্ডার দিয়েছি, এগারো মাসে কোনো না কোন নিউজ পেয়ে যাবা।
অকপটে খাবার ঘর ভর্তি লোকের সামনে উত্তর দিল অভ্র। ঐন্দ্রিলা মনে মনে বলল,
“আল্লাহ, মাটিটা ফাঁক হয়ে যাক। আমি ঢুকে পড়ি। আর সহ্য হচ্ছে না”

খাওয়া দাওয়া শেষে ঐন্দ্রিলা গেলো রান্নাঘরের দিকে। কানন তখন খুন্তি নাড়তে ব্যাস্ত। ছবিরণ পটল কাটছে। সকাল থেকেই মেঘলা করে আছে আকাশ। তাপ নেই সূর্যের। তাই দুপুরের রান্না খিঁচুড়ি, বেগুন ভাঁজা, পটল ভাঁজা আর গরু মাংস ভুনা। ঐন্দ্রিলা শ্বাশুড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কানন খুন্তি নাড়তে নাড়তে বললো,
“কিছু লাগবে তোমার?”
“আপনি আমার উপর রেগে নেই মা?”
খুন্তি থেমে গেলো কাননের। পাশ ফিরে দেখলো ঐন্দ্রিলা নতমস্তকে দাঁড়িয়ে আছে। কানন মৃদু হাসলো। স্মিত স্বরে বললো,

“সত্যি শুনতে চাও তুমি?”
কাননের কথায় বুকখানা ধক করে উঠলো ঐন্দ্রিলার। মুখখানা মিয়ে গেলো। ভয় ঘিরে ধরলো তাকে। বিয়েটা যেভাবেই হোক, এখন এই বাড়িটাই তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। আর এই বাড়ির মানুষগুলো তার আপনজন। কানন ধীর গলায় বললো,

“যখন প্রথম জানলাম তুমি পালিয়ে গেছো, আমার খুব রাগ হয়েছিলো। তোমার উপর ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। কষ্ট পেয়েছিলাম। ছেলের মা আমি, নিশ্চয়ই আমি চাইবো না কেউ আমার ছেলেকে প্রত্যাখ্যান করুক। কিন্তু পরমুহূর্তেই যখন জানলাম তুমি ঐ ছেলেটাকে ভালোবাসতে। অভ্রের জন্য তুমি কেঁদেছো, আমার মনে হলো তুমি ভুল করো নি। আমিও এমন ছেলের সাথে সংসার করতে চাইবো না যে আমাকে কাঁদায়। আবার রাতে যখন তুমি অভ্রের সাথে ফিরে এলে আমি আমার অভ্রের দিকে চাইলাম। জানো ঐন্দ্রিলা ওকে এতোটা খুশি আমি কখনো দেখি নি। আমার ছেলে জেদি, আমার ছেলে একগুয়ে কিন্তু বড্ড বেপরোয়া। ও কোনো কিছুতেই খুব এট্যাচড হয় না। যখন হয় সেটাকে ছাড়ে না। আমার বদ্ধধারণা আমার ছেলেটা এবার একটু শুধরাবে। তোমার জন্য হলেও সে তার উদাসীনতা ছাড়বে। তাই তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই”

মহিলা কতটা সহজে কথাগুলো বললো। ঐন্দ্রিলা অবাক হলো। এমন স্বচ্ছভাবেও মনের কথা বলা যায়?
বিকেল হতেই তিনখালা নতুন তাল তুললো। ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে তারা ঘুরতে যাবে। বৌভাতের পর ঐন্দ্রিলা নাইওরে চলে যাবে আর খালারা তলপি তলপা গুটিয়ে চলে যাবে। তাই আজকে তারা ঘুরতে যাবে। একটা কাতান ধরিয়ে দিলও তারা ঐন্দ্রিলার হাতে। বললো,
“যাও বউ, বউ সাইজ্জা আও। আমরা আজকে ঘুরুম”

কিন্তু বিপাক হলো অন্যখানে। ঐন্দ্রিলা শাড়ি পড়তে পারে না। এতদিন পিউ ছিলো তার ভরসা। তাই তো সকাল থেকেও সে সালওয়ার কামিজে ঘুরছিলো। এখন শাড়ি পড়ার কথা শুনতেই জ্বর এলো ঐন্দ্রিলার। তালবাহানা করলো। কিন্তু জেদি মধ্যবয়স্কদের সামনে কাজ হলো না। ফলে জোরপূর্বক শাড়ি পড়তে যেতেই হলো। এখন দুনিয়ায় পারি না বলে কথা নেই। ইউটিউবে সার্চ দিলেই সবাই সব পারে। ঐন্দ্রিলাও তাই করলো।

মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ১৬

ইউটিউব সার্চ করে টিউটোরিয়াল বের করলো। শাড়ি পড়ার বেশ ভালো ভিডিও বের করলো। কাঁধে ভারী আচলটা রেখে কুচিগুলো সুন্দর করে সাজাচ্ছিলোই অমনি ধরাম করে দরজা খুলে ফেললো কেউ। আৎকে উঠতে কুঁচিগুলো সব হাত থেকে ছুটে গেলো। কুঁচি সামলাতে যেয়ে আঁচলটাও বেসামাল হলো। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র…………

মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ১৮