মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ৩৪
মুশফিকা রহমান মৈথি
ঐন্দ্রিলার কন্ঠে উৎকুন্ঠা। ওপাশের মানুষের কন্ঠ বিষন্ন। ম্লান স্বরে বললো,
“পিউয়ের বাবা আমার সাথে পিউয়ের বিয়ে দিবে না”
নীলাদ্রির কন্ঠ কাঁপছে। ছেলেটির পক্ষে কথা বলাই কষ্টকর ঠেকছে যেনো। মাঝে মাঝে একটু নাক টানছে। কেঁদেছিলো কি? নীলাদ্রি তথাকথিত পুরুষবর্গের মধ্যে পড়ে না। সে তার অনুভূতিগুলো কখনো “আমি পুরুষ” এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে না। যদি সে কষ্ট পায়, সে কাঁদে। কারণ তার ধারণা অনুভূতিগুলো বুকে চেপে রাখার মানে নেই। কঠিন পুরুষ হয়ে নিজেকে জাহির করে বেড়াতে হবে, এটাই সবচেয়ে বড় কাপুরুষতা। নিজের ভয়, ভীতি, কষ্টকে আলিঙ্গন করতে হয়। যদিও সে পিউয়ের শোকে কাঁদতে পারে এটা অবিশ্বাস্য। কারণ তার ভাষ্যমতে সে পিউকে ভালোবাসে না। ভালোবাসা নামক মরীচিকার পেছনে সে ছুটে না। ঐন্দ্রিলা স্মিত হেসে শুধালো,
“বিয়ে দিবে না কেনো বলেছে?”
ঐন্দ্রিলার প্রশ্নে অভ্র খাওয়া থামালো। তার বড় শ্যালকের মত পদার্থকে কেউ বাতিল ঘোষণা করে শুনে তার কৌতুহল হচ্ছে। হাসিও পাচ্ছে। কিন্তু কারোও দূর্দিনে হাসা উচিত নয়। আল্লাহ পাপ দেয়। তাই সে অতিকষ্টে হাসি চাপা দিলো। ঐন্দ্রিলাকে ইশারায় বোঝালো ফোনটা লাউডস্পিকারে দিতে। ঐন্দ্রিলা সেটাই করলো। ওপাশ থেকে নীলাদ্রির দীর্ঘশ্বাস শোনা গেলো। তারপর ভাঙ্গা স্বরে বলল,
“উনি আজকে বিকালে একটি রেস্টুরেন্টে ডেকেছিলেন। আমি উনার ডাক তো প্রত্যাখ্যান করতে পারি নি। হবু শ্বশুর বলে কথা। প্রথমে আমাকে বললেন কি খাবে! আমার তখন ই সন্দেহ হয়েছিলো। মেয়ের বাবারা যখন মিষ্টিলাপ করে তখন বুঝতে হবে ঘাপলা আছে”
ঐন্দ্রিলা কৌতুহলী স্বরে শুধালো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ঘাপলা কি?”
“তার আমার উদবাস্তু কাজ পছন্দ নয়। নিজের একমাত্র মেয়েকে পাহাড়ে শুটকি মাছ হতে দেখতে পারবেন না। তার চাই এমন জামাই যার ইনকাম হবে ফিক্সড, তার জীবনে চাকরি হবে নিশ্চিত। তবে আমার এন্থুজিয়াজমের প্রশংসা করলেন। এমন একজন যে তার কন্যাকে মাথায় করে নৃত্য করবে, পাওয়া খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই আমাকে একটা সুযোগ দিতে চান। পিউয়ের মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি যদি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যেতে পারি তাহলে তিনি নিজে পিউয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিবেন। কিন্তু আমি যদি না পারি তাহলে পিউকে ভুলে যেতে বলেছেন। পিউয়ের জন্য অনেক ক্যাডার লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তাদের একজনের সাথেই বিয়ে দিবে”
“তুমি কি এখন বিসিএস দেবার কথা চিন্তা করছো?”
নীলাদ্রি একটু চুপ করে থেকে বললো,
“উপায় নেই। আমি পিউকে অন্যের বউ হতে দেখতে পারবো না। যদি পিউয়ের সাথে আমার বিয়ে না হয় আমি কখনো বিয়ে করবো না। তাই যদি বিসিএস ক্যাডার হওয়াটাই আমার যোগ্যতার মাপকাঠি হয়, তবে সেটাই সই। তুই শুধু আমাকে সাহায্য কর গাইডলাইন আর বই ম্যানেজ করে দে”
ঐন্দ্রিলা নীলাদ্রির কথায় হতবাক হয়ে গেলো। শব্দরা নীরব হয়ে গেলো। এই ছেলে বলে কি! বিসিএস কি মুখের কথা? সারাদেশের মানুষ বছরের পর বছর লেগে থাকে এই একটা চাকরির জন্য। নীলাদ্রি পরীক্ষাহলে যাবে আর তাকে ধুপধুনো দিয়ে আমন্ত্রণ করার জন্য কেউ বসে নেই। উপরন্তু নীলাদ্রির বিসিএসের বয়সও আছে আর দুবছর। তাও এই বছর আর সামনের বছর। যে কখনো শৈবাল, পাথর, আবর্জনা ছাড়া কিছু চিন্তাও করে নি, সেই ছেলে সব ছেড়ে বিসিএস দিবে? মাথা কি পুরোপুরি গেছে? ঐন্দ্রিলার হাত থেকে মোবাইলখানা নিয়ে অভ্র হিনহিনে স্বরে বললো,
“শুনেন ভাইজান, এসব সরকারি চাকরির মুলো ছেলেদের গলায় ঝুলানোই হয় যেনো মেয়ের বিয়ের দিতে না হয়। আপনি এখন বিসিএস পরীক্ষায় বসবেন ওদিকে আপনার হবু শ্বশুর পিউয়ের বিয়ে নিজের পছন্দ মতো এক ভেড়ার সাথে দিয়ে দিবে। এখন আপনিই ভাবেন আপনি কি বসে বসে সাধারণ জ্ঞান মুখস্ত করবেন নাকি বীরের মতো নিজের প্রেমিকা না সরি হবু বউকে নিয়ে পালাবেন”
অভ্রর কথা মোটেই নীলাদ্রির পছন্দ হয় নি। তাই রুক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“আমার হবু শ্বশুর তোমার শ্বশুরের মতো বুদ্ধিহীন নয় যে যার তার সাথেই মেয়ের বিয়ে দিবে”
ফোন লাউডস্পিকারে থাকায় ঐন্দ্রিলাও কথাটা শুনলো। ঠোঁট চেপে মিটিমিটি হাসলো। অভ্র ক্ষুদ্ধ স্বরে অভিযোগ জানালো,
“তোর ভাই কিন্তু আমাকে অপমান করছে ঐন্দ্রি। আমি কিন্তু সাহায্য করবো না”
ঐন্দ্রিলা সাথে সাথে তার বাহুতে হাত বুলিয়ে বললো,
“হবু শ্বশুরের কাছে ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে গেছে। ইগ্নোর কর”
অভ্র বউয়ের মুখ দেখে অপমান গিলে ফিসফিসিয়ে বললো,
“শুধু তোর কথা ভেবে তোর ভেড়া ভাইকে বরদাস্ত করছি। নয়তো স্যার বলে পায়ে ধরলেও এই গাধা পাবলিককে আমি অভ্র সাহায্য করতাম না”
সাথে সাথেই নীলাদ্রি উত্তর দিলো,
“আমি কি তোমার সাহায্য চেয়েছি?”
অভ্র আবার ঐন্দ্রিলার দিকে তাকালে ঐন্দ্রিলা তার চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে বললো,
“বাদ দে”
অভ্র গাল ফুলিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো বার দুয়েকবার। তারপর রাগী স্বরে বললো,
“নীলাদ্রি ভাই, আপনি বিসিএস পরীক্ষা দিবেন খুব ভালো কথা কিন্তু কথা হচ্ছে আপনার হবু শ্বশুর কি নিশ্চিত করেছেন যে এই সময়টাতে তিনি পিউয়ের বিয়ে দিবেন না?”
নীলাদ্রি চুপ হয়ে গেলো। কারণ পিউয়ের বাবা আকরাম সাহেব এমন কিছুই বলেন নি। তিনি শুধু শর্ত দিয়েছে যা মাথা নাড়িয়ে শুনে চলে এসেছে পিউ। ঐন্দ্রিলা সাথে সাথে চেচিয়ে উঠলো,
“তুমি তার কাছ থেকে কোনো কথা নাও নি?”
“না, আমি উনার শর্ত শুনেই এতো ভেঙ্গে পড়েছিলাম যে কিছু বলার কথা মনেই ছিলো না”
“উদ্ধার করেছো তুমি!”
অভ্র ভাই বোনকে থামিয়ে বললো,
“ওকে রিলাক্স, এককাজ করেন আগামীকাল পিউকে নিয়ে আমার দোকানে আসেন। একসাথে বসে একটা ব্যাবস্থা করতে হবে”
“পিউ আমার ফোন ধরছে না। আসলে ওকে না জানিয়ে ওর বাসায় চলে যাওয়ায় ও রাগ করেছে। ম্যাসেজে ব্লক করে দিয়েছে। ফোন ধরছে না”
“বাপ-মেয়ে মিলে তো আপনাকে চিপায় ফেলে দিয়েছে”
অভ্রের কথায় ক্ষিপ্র স্বরে নীলাদ্রি বললো,
“অসভ্য ভাষা প্রয়োগ করবে না। চিপায় ফেলা কেমন শব্দ?”
“আপনার অবস্থা যা তাতে এই শব্দটাই পার্ফেক্ট”
নীলাদ্রি খট করে ফোন কেটে দিলো। ঐন্দ্রিলা রাগী স্বরে বললো,
“দিলি তো ভাইয়াকে চটিয়ে?”
“তো কি চুমু খাবো? আমার চুমু শুধু আমার বউয়ের জন্য বরাদ্দ। এই যে তোর ভাইয়ের জন্য আমার মস্তিষ্ক খাটাতে হবে, সেটা কিন্তু ফ্রি নয়। প্রতি মিনিটে একটা করে চুমু। এই যে আমি দশমিনিট কথা বললাম। এতে দশটা চুমু। আমি বাকিতে কাজ করি না। সব নগদ। তাই এখনই দশটা চুমু দিবি। তাহলেই আমি বুদ্ধি দিবো”
ঐন্দ্রিলার মুখখানা হা হয়ে গেলো। এই ছেলে কি বলে? এক মিনিটে একটা চুমু? এটা কেমন অসভ্য কথা!। অভ্র সাথে সাথে গুনতে থাকলো,
“দশ, নয়, আট…”
“গুনছিস কেন?”
“তুই দশ সেকেন্ডে চুমু না দিলে ডিল ক্যান্সেল। তোর ভেড়া ভাই তুই বুঝে বেরা। পাঁচ, চার”
“সাত, ছয় কই গেল?”
ঐন্দ্রিলাকে পাত্তা না দিয়েই অভ্র গুনলো,
“তিন, পৌনে তিন, আড়াই”
“আচ্ছা, আচ্ছা। চোখ বন্ধ কর”
ঐন্দ্রিলার কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো অভ্র। ঐন্দ্রিলা বিব্রত স্বরে বললো,
“আমার লজ্জা লাগে”
“নেকুপিসি, এই আমার কাছে কিসের লজ্জা? একদম আমার সাথে টাল্টুফাল্টু করবি না”
“তুই চোখ বন্ধ করবি নাকি আমি গেলাম”
বলেই উঠতে নিলে অভ্র হাত টেনে তাকে বসালো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ বন্ধ করতে হলো। অপেক্ষা করতে লাগলো কাঙ্খিত কিছু পাবার। সময় কাটতে লাগলো। এক এক সেকেন্ড শত ক্রোশের মত ঠেকছে। মস্তিষ্ক বলছে ব্যাপারটা অসম্ভব। সবার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়।
কিছু কাঙ্খিত ব্যাপার না চাইতেও অনাকাঙ্খিত খাতায় নাম লেখায়। উপরন্তু এটা ঐন্দ্রিলা। তার চোখে লজ্জা আনতেই কাঠখড় পুড়িয়ে পৃথিবীকে অর্ধেক কাঠশূন্য করে দিয়েছে অভ্র। অপেক্ষা অধৈর্য্যে পরিনত হলো। চোখখানা মেলতেই যাবে ঠিক তখনই নরম ঠোঁটের স্পর্শ লাগলো খরাময় কপালে, তারপর চোখের পাতায়, রুক্ষ্ণ গালে অতঃপর হালকা ছোঁয়া পাওয়া গেলো পুরু ঠোঁটে। তারপর হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো সেই স্পর্শ। অনেকটা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো ক্ষণিকের মিষ্টি অনুভূতি। অভ্র চোখ মেলে চাইলো। নিরবিচ্ছিন্ন আঁধারে তখন ছায়াও নেই। ঐন্দ্রিলা পালিয়েছে। সিগারেটে পোঁড়া ঠোঁটে নিজ থেকে চুমু একেছে ঐন্দ্রিলা। অভ্রর ঠোঁটে সপ্রতিভ হাসি। দৃষ্টিতে আত্মতৃপ্তি।
ঐন্দ্রিলাদের কলেজ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটি নতুন খাবারের দোকান খুলেছে। দোকানের সাজসজ্জা একেবারের বাঙ্গালিয়ানা। নামখানাও খাসা, “বনলতাসেনের পঞ্চভোগ”। নীলাদ্রির নাম পছন্দ হয় নি। বনলতাসেন তো আর রাধুনি ছিলেন না। এই নাম অর্থহীন। সে একটা খাতায় অনেকক্ষণ যাবত নতুন বাঙ্গালিয়ানা নাম লিখার চেষ্টা করলো, কাটাকাটি করলো। আবার লিখলো। অভ্র বিরক্তি নিয়ে বড় শ্যালকের এমন অহেতুক কাজ দেখছে। তার পাশে মুখ ভার করে বসে রয়েছে বিল্লাল। তাকে দেখে যে কেউ বলবে সে অসুস্থ। তার অসুখ হয়েছে, মনের অসুখ। মনে ভীম জ্বর, খাস বাংলায় যাকে বলা হয় ছ্যাকা। সে সদ্য প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছে। কিন্তু অবাককর ব্যাপার সে ছ্যাকা খায় নি। কারণ সে প্রেম করে না। অভ্র তাকে দেখেও বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সেদিনের পর থেকে বড্ড বেখায়াল হয়েছে এই ছেলেটা। তৃষার নাম নিলে আগে জ্বলতো। এখন মুখ লটকিয়ে থাকে। পালিয়ে বেড়ায় যেন। কাহিনীটা কি বুঝতে পারছে না অভ্র। আপাতত নীলাদ্রি নামক মানুষের সমস্যাটা নিবারণ করা জরুরি। বিল্লাল কেসটা এরপর হাতে নিবে।
ঐন্দ্রিলা একরকম জোর করে নিয়ে এসেছে পিউকে। রেস্টুরেন্টে এসেই সে হতবাক হয়ে গেলো। নীলাদ্রি, অভ্র এবং বিল্লাল বসে রয়েছে। নীলাদ্রিকে দেখে পিউ তার অভিমানটা সতেজ করতে চাইলো। কিন্তু জলদগম্ভীর স্বর,
“পিউ তুমি এসেছো?”
এই লোকটা এমন কেনো? তার গভীর চোখের মায়ায় বারবার হৃদয় হারানো যেন ফরজ হয়ে গিয়েছে। অস্বীকার তো করতে পারবে না, লোকটির কাটকাট, সরল কথাগুলোই তার হৃদয় কাঁপানোর জন্য যথেষ্ট। তবুও নিজের মনকে লাগামছাড়া হতে দিল না পিউ। কঠিন স্বরে বললো,
“এখানে এমন দরবারের কি হেতু?”
“তোর বাপ যে আমার ভেড়া শ্যালককে বিসিএসের মুলো ধরিয়েছে জানিস?”
অভ্রর ভনীতাহীন প্রশ্নে বেবাক হলো পিউ। কৌতুহলী স্বরে শুধালো,
“বাবা আপনার সাথে দেখা করেছে?”
নীলাদ্রি মাথা নাড়লো। পিউ পরমুহূর্তে শুধালো,
“কি বললেন আপনি?”
“আমি তার শর্ত মেনে নিলাম”
“পাগল? বিসিএস কি আপেল যে গাছে উঠলেন আর পেড়ে ফেললেন?”
“তোমার জন্য এটুকু তো করতে পারবো তাই না?”
পিউ কাঁপলো ঈষৎ। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো বোকা ছেলেটার বোকা কথায়। অভ্র বিরক্তি টেনে বলল,
“আমার প্লান অনুযায়ী কাজ করলে সাপও মরবে না লাঠিও ভাঙ্গবে না। বিসিএস লাগবে না বাপ বাপ করে তোর বাপ বিয়ে দিবে”
“বাপ বাপ কি? বাবা বলতে পারছো না?”
নীলাদ্রির কথায় মুখ খিঁচিয়ে অভ্র বললো,
“নামে কি যায় আসে ভাইজান। ইমোশন দেখেন”
“প্লান কি তোর, সেটা বল”
মাঝখান থেকে ঐন্দ্রিলা বলে উঠলো। অভ্র হাসলো। হাসিটা দূর্বোধ্য।
সকালে সোনা রোদের মৃদু তাপে প্রতিদিনের মত জগিং এ বেরিয়েছে পিউয়ের বাবা আকরাম সাহেব। ডায়াবেটিসের জন্য প্রতিদিন একঘন্টা ব্যায়াম করা অবাঞ্চনীয়। আজকাল মনটা ভালো নেই। প্রতিদিন একটা আননোন নাম্বার থেকে তাকে ফোন দেওয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজি কল। যদিও মানুষটি তিনি ভীত নয়। কিন্তু তার একটা মেয়ে আছে। মেয়েটার জন্যই ভয় হয়। পার্কের এক চক্কর কেটে বেঞ্চে বসতে না বসতেই কোথা থেকে দশ বারোটা জোয়ান ছেলে তাকে ঘিরে ধরলো। তাদের ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট। ভোস ভোস করে টানছে তা। ভেজা প্রকৃতির নির্মল বাতাস মুহূর্ত তীক্ষ্ণ গন্ধে ভরে গেলো। আকরাম সাহেব কিঞ্চিত অপ্রস্তুত হলেন। পাশের ছেলেটা হেসে বলল,
“কি কাকা, কেমন আছেন?”
“কে তোমরা?”
আতংকের ছাপ তার স্বরে। ছেলেটা হাসলো ঠোঁট বাকিয়ে। সিগারেটটা বেঞ্চের গায়ে নিভিয়ে বললো,
“চিনতে পারলেন না কাকা, আমি মাহাব। আমাদের তো প্রতিদিন কথা হয়। ভুলে গেলেন”
এই ছেলেটাই প্রতিদিন চাঁদাবাজির জন্য ফোন দেয়। আকরাম সাহেব আশেপাশে তাকালেন। মোট দশ বারোটা ছেলে। কিঞ্চিত সাহস নিয়ে বললেন,
“কি চাই তোমার?”
“আমি তো ফোনে বলে দিয়েছি কি চাই”
“এতো টাকা আমি কোথায় পাব”
“ঠিক আছে আপনার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিন”
ছেলেটার এমন অসভ্য প্রস্তাবে উত্তেজিত হয়ে গেলেন আকরাম সাহেব। রাগে গা কাঁপছে। দাঁড়িয়ে পড়লেন। ঝাঝালো স্বরে বললেন,
“বেয়াদব ছেলে তোমার সাহস কি করে হলো?”
ঠিক তখন ই ছেলেটা দাঁড়িয়ে তার ঘাড়ে হাত রেখে বললো,
“চিল্লাবেন না কাকা। হার্টবিট বেড়ে যাবে”
মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ৩৩
ছেলেটার স্বাস্থ্য ভালো। সুউচ্চ, সুবিশাল দেহের ভার হাতেই বুঝতে পারলেন যেন আকরাম সাহেব। ঠিক তখনই কোথা থেকে নায়কের মতো আবির্ভাব ঘটলো নীলাদ্রির। শক্ত হাতের ঘুষি বসিয়ে দিল ছেলেটির মুখে। ফলে ছিটকে ঘাসের উপর পড়লো সে। আকস্মিক আক্রমণে ঠোঁট চিরে রক্ত বের হলো। ছেলেটা হতভম্ব তাকিয়ে রইলো। নীলাদ্রি তখন জাহির করে বললো,
“আর একবার আমার হবু শ্বশুরের সাথে বেয়াদবি করলে একেবারে পুলিশে দিব”………