মনের আড়ালে পর্ব ৮ || লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

মনের আড়ালে পর্ব ৮
লেখনীতে Alisha Rahman Fiza

কাকভেজা হয়ে বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে অধরা।বোরকা ভিজে চুপচুপ করছে কিন্তু সেদিকে যুবতীর কোনো ধ্যান নেই।তার ভাবনা হচ্ছে আগামীর জন্য তার পরিবারের জন্য সবাই কী সবটা মেনে নিবে।অধরার মনের গহীনে অনেক প্রশ্ন চলছে কিন্তু সেই প্রশ্নগুলোর উর্ধ্বে হচ্ছে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।সেই সিদ্ধান্ত সে কোনো ক্রমেই বদল করবে না অধরা দরজায় কড়াঘাত করলো ২-৩বার কড়াঘাত করার পরই দরজা খুলে দিলো তার মা।অধরা বিষন্ন চোখে তার মায়ের দিকে তাকালো এতে তার মায়ের বুকটা ধ্বক করে উঠলো মেয়েটা তো এভাবে বের হয়ে যাইনি বাসা থেকে বেশ হাসি-খুশি ছিল মেয়েটা তাহলে এমন কী হলো যে মেয়েটাকে এতোটা বিষন্ন দেখাচ্ছে।অধরা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে মায়ের পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে পরলো তখনই রুপসা এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো।রুপসার ছোয়া পেয়ে অধরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

~রুপসা কী good girl এর মতো ছিল?
রুপসা অধরাকে ছেড়ে দিয়ে অধরার হাতে চুমো খেয়ে বললো,
~একদম good girl এর মতো ছিলাম।
অধরা রুপসার কপালে চুমো খেয়ে বললো,
~তুমি রুমে যাও আমি আসছি।

রুপসা চলে গেলো রুমে অধরা এক মনে তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে রইলো অধরার মা অধরার কাঁধে হাত রাখলো অধরা পিছন ফিরে তাকিয়ে মাকে দেখে আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলো না হুহু করে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।অধরার মা চুপটি করে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন সে তো আগেই বুঝতে পেরেছে তার মেয়েটা যে কষ্টে আছে।মায়ের চেয়ে বেশি কী সন্তানকে কেউ বুঝতে পারে?মা যেভাবে সন্তান কে আগলে রাখে নিজের আচঁলে বেঁধে রাখে সেরকম ভাবে অন্যকেউ রাখতে পারবে না।মায়ের ভালোবাসা থাকলে সন্তানের কেনো কষ্ট থাকে না মা যদি সন্তানের মাথায় পরম মমতায় হাতে বুলিয়ে দেয় সন্তান নিজের সকল ক্লান্তি ভুলে যায়।
অধরা নিজের মাকে ধরে একাধারে কেঁদে যাচ্ছে কিছুক্ষন পর অধরা তার মাকে ছেড়ে দিতেই অধরার মা তাকে সোফায় বসিয়ে দিলেন।অধরার গালে হাত রেখে বললেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~যা ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি খাবার দিচ্ছি।
এতটুকু বলে সে রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অধরা বলে উঠলো,
~মিস্টার রক্তিম আমাকে বিয়ে করতে চান
মেয়ের কথা শুনেপা থমকে যায় পিছন ফিরে অধরার দিকে তাকালো। অধরা মায়ের চাহনি দেখে বললো,
~অবাক হওয়ার বিষয় তাই না?
বলই ফিচেল হাসে অধরা তার মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

~তোর যদি মতামত থাকে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।আর আমার মতে এটাই ভালো হবে
মায়ের কথায় অধরা কিছু না বলে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো আর কোনে কথা না বলে সোজা চলে গেলো নিজ রুমে।
নিজ রুমে পৌছে দেখতে পায় রুপসা বিছানায় বসে খেলছে অধরা ধীরপায়ে কার্বাড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।রুপসা তখনও খেলছে টাওয়াল টা বারান্দায় রেখে ভিতরে এসে রুপসার কাছে বসে পরলো অধরা।রক্তিমের প্রতিটি কথা তার মনে পরছে অধরা ভাবছে হয়তো রক্তিম সঠিক এই সমাজে কোনো ভালোবাসার দাম নেই আছে সম্পর্কের নামের।রুপসা কথায় অধরার ধ্যান ভাঙ্গে রুপসা বলছে,
~ম্যাম তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
রুপসার কথায় অধরা বললো,
~একটু কাজ ছিল।
রুপসা আর কোনো কথা না বলে খেলায় মনোযোগ দেয়।

রাতে অধরা সবার সাথে বসে খাবার খাচ্ছে অরুনা খাবার খাচ্ছে আর বকবক করছে।রুপসাকে আগেই খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে অধরা।অধরাকে অন্যমনস্ক দেখে তার বাবা বললেন,
~কী হয়েছে অধরা?
অধরা বাবার কথায় হকচকিয়ে যায় তবুও নিজেকে সামলে বলে উঠলো,
~বাবা একটা কথা বলার ছিল।
অধরার বাবা একবার তার স্ত্রী এর দিকে তাকালো কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে অধরার দিকে তাকালো অধরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~বাবা আমি মিস্টার রক্তিমকে বিয়ে করতে চাই।

অধরার বাবা কিছুক্ষনের জন্য অন্য দুনিয়ায় চলে গেলো তার মেয়ে বিয়ে করতে চায় তাও নিজ ইচ্ছায় সে কী স্বপ্ন দেখছে।অরুনা অবাক নয়নে তার বোনের পাণে তাকিয়প আছে শুধু অবাক হয়নি অধরার মা সে জানতো অধরা এই সিদ্ধান্ত নিবে কারণ অধরার মনে মাতৃত্বের স্বাদ লেগেছে আর রুপসার জন্য অধরা সব করতে পারবে।অধরার মা মুচকি হেসে বললো,
~অধরা,নিজের সিদ্ধান্ত রক্তিমকে জানিয়ে দিও।
অধরা তার মায়ের কথায় মাথা দুলালো তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমে চলে গেলো।অধরার বাবা এখনও হতবাক হয়ে আছে অরুনা মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
~আমি কী ঠিক শুনতে পাচ্ছি?
তার মা মুচকি হেসে বললো,
~বিয়ের জন্য অনেক কাজ করতে হবে তাই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পর।

বলেই শাড়ির আঁচল মুখে গুজে হাসতে হাসতে রান্নাঘরে চলে গেলো আর অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গেছে বাবা-মেয়ে।
অধরা রুমে এসে মোবাইলে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিলো রক্তিমকে সে এই বিয়েতে রাজি তার সাথে কথা বলতে এখন মন চাইছেনা তাই ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিলো ফোনটাও বন্ধ করে দিলো এরপর রুপসাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
রক্তিম বারান্দায় দাড়িয়ে অধরার ম্যাসেজ দেখে মোবাইলটা তার পকেটে রেখে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।নতুন পথের দিকে সে একধাপ এগিয়ে গেছে রাহি হয়তো তার এ সিদ্ধান্তে খুশি হবে।রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বারান্দা থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেলো মামার রুমে অধরা আর তার সিদ্ধান্ত সে জানাতে চায়।

সূর্যের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে পাখিরা তার নীড় ছেড়ে আকাশে উড়ছে আশেপাশের মানুষ নিজ নিজ কাজের জন্য বের হচ্ছে সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে।অধরার বাসায়ও সবাই ব্যস্ত শুধু অধরা ছাড়া আজ বিকেলে রক্তিমরা আসবে অধরাকে আংটি পরাতে।তা শোনার পর থেকে অধরার বাসায় সবাই কাজে লেগে গেছে অধরা রুপসাকে নিয়ে রুমে বসে আছে।রুপসা খেলছে অধরায় তার ভাবনার জগতে খেলছে।অধরা ভাবছে এই বিয়েটা কি তার জীবনে সুখ নিয়ে আসবে বাসার সবাই অনেক খুশি তাদের মুখে হাসি দেখে অধরার মনটাও অনেক ভালো লাগছে।অধরা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো রুপসা সারাঘরে খেলনা ছড়িয়ে রেখেছে অধরা মুচকি হেসে রুপসার পাশে বসলো রুপসা অধরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

~আজকে পাপা আসবে আমাকে নিয়ে যাবে।তোমাকে অনেক মিস করবো।
অধরা রুপসার কপালে চুমো খেয়ে বললো,
~আমি তোমার কাছে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।তুমি পাপার সাথে ভালো মতো থাকবে আর একটু মজা করবে, একটু শয়তানি করবে বুঝেছো আমার সোনা বাচ্চা।
রুপসা অধরার গালে চুমো খেয়ে বললো,
~ওকে,আমি পাপাকে একটু জ্বালাবো ঠিক আছে?
অধরা বললো,
~তোমার পাপাকে বেশি জ্বালাবে আর সবার সাথে good girl হয়ে থাকবে।
রুপসা বললো,
~পাপা বকা দিবে তো
আমি বললাম,

~বকা দিলে আমাকে বলবে আমি তোমার পাপাকে বকে দিবো।
রুপসা মুখ চেপে হেসে দিলো অধরাও হেসে উঠলো পুরো রুম জুড়ে তাদের হাসির আওয়াজ অনেক ভালে লাগছে।রাজকন্যা তার মায়ের সাথে হাসির ঝুলি খুলে বসেছে
সবাই নিজ নিজ কাজ শেষ করে খাওয়ার টেবিলে বসে আছে আর খাওয়াদাওয়া করছে।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো অধরার মা দরজা খুলে দেখলো রক্তিমের
মামা দাড়িয়ে আছে অধরার মা তাকে দেখে অনেক অবাক হলো সে তাড়াহুরা করে বললেন,
~ভিতরে আসুন এতো তাড়াতাড়ি আপনারা এসে পরবেন তা জানতাম না।
রক্তিমের মামা হেসে বললেন,

~এই ব্যাগ গুলো অধরা মাকে দিয়ে দিবেন আর আমি এখন যাচ্ছি বিকেলে আসবো।
বলেই সে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায় ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে যে অধরার মা ব্যাগ নিয়ে সেখানেই দাড়িয়ে থাকে।অধরা তার মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
~কী হয়েছে?
অধরার মা হাতের ব্যাগ গুলো অধরার হাতে দিয়ে বললো,
~তোর শশুর বাড়ি থেকে এসেছে এগুলো পরে রেডি হয়ে নিস।
অধরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে রুমে এসো পরলো।

মনের আড়ালে পর্ব ৭

বিকেলবেলা রেডি হয়ে অধরা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখছে।এতো ভারী শাড়ি সে অনেকদিন পর পরেছে মেকআপ সে তেমন একটা করেনি।অরুনা অনেক জোরজবরদস্তি করেছে কিন্তু অধরার জেদের বশে সে হেরে গিয়েছে।
রুপসা ড্যাবড্যাব করে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে অধরা মুচকি হেসে পিছনে ফিরে রুপসাকে দেখে বলে,
~আমার সোনা বাচ্চা টাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
অধরাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে রুপসা বললো,
~তুমি বউ কেন সেজেছো?

অধরা হাসে রুপসা যখন জানবে তখন তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?
অধরা রুপসাকে বললো,
~তোমার পাপা চলে আসবে অরুনা আন্টির কাছে যাও।
রুপসা আর অপেক্ষা না করে বাহিরে চলে গেলো
রক্তিম পাঞ্জাবির হাতা ঠিক করতে করতে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো রক্তিমের মামা তাকে দেখে বললেন,
~আংটিটা তোর পকেটে রাখ আমি আবার ভুলে যাবো।
রক্তিম আংটির বক্স পকেটে রেখে বললো,
~চলেন সময় হয়ে গেছে।
রক্তিমের মামা বললেন,
~রুপসা অনেক খুশি হবে মেয়েটা অধরাকে পেয়ে অনেক খুশি হবে যখন অধরাকে মা বলে ডাকবে ওর মুখের হাসি দেখার জন্য আমি ওয়েট করতে পারছিনা।

রক্তিম তার মামার এমন বাচ্চাসুলভ আচরণ দেখে বিরল হাসলো সবাই খুশি তাই সেও খুশি আর সবচেয়ে বড় কথা রুপসা খুশি হবে।রুপসার জন্যই তো এসব হচ্ছে এই দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে হয়তো সময়ের সাথে সাথে অধরা ও তার ভিতর সব ঠিকঠাকও হতে পারে।
সময়ের উপরই সব নির্ভর করছে সে আর আল্লাহ তা আলার যা মরজি তাই মেনে নিয়েছে রক্তিম।

মনের আড়ালে শেষ পর্ব