মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৩
রায়েনা হায়াত
সকালবেলা নাস্তা তৈরী করছিলো অবনী। হৃদান অফিস যাবে বলে বেশ তাড়াহুড়ো করেই নাস্তা বানানো শেষ করেছে। টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দেওয়ার পর পরই হৃদান ডেকে ওঠে,
–‘অবনী, ফোন বাজছে।’
অবনী হাতের কাজটুকু দ্রুত শেষ করতে করতে জবাব দেয়,
–‘রিসিভ করুন। আসছি!’
অবনীর কথা শুনে হৃদান ফোন হাতে তুলে নেয়। অন্তি কল করেছে। হৃদান মুচকি হেঁসে কল তুলে সালাম দেয়। অন্তি সালাম নিয়ে বলে,
–‘আপু কোথায়, ভাইয়া?’
–‘দুলাভাইয়ের খোঁজ খবর না নিয়ে সরাসরি আপুর খোঁজ! দুলাভাই পুরোনো হতেও পারলো না তার আগেই পর করে দিয়েছেন শালী সাহেবা!’
অন্তি দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। হেঁসে হৃদানের খোঁজ খবর নেয়। এর মাঝেই অবনীও চলে আসে। হৃদান তার হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়। অবনী ফোন নিয়ে অন্তির সাথে কথা বলার আগেই বলে,
–‘তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে যাবে। আমি দু’মিনিটে আসছি।’
হৃদান আলমারি থেকে শার্ট-প্যান্ট বের করে তা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
–‘গোসল করে আসছি। ৫ মিনিট!’
–‘হৃদান!’
হৃদান চলে গেছে দেখে অবনী হতাশ হয়ে তাকায়। তারপর ফোন কানে তুলে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–‘বল! সকাল সকাল কি মনে করে?’
–‘কি করছিলি, আপা?’
–নাস্তা বানালাম। তুই কি করছিস? আব্বু-আম্মু?’
–‘নাস্তা করছি। আব্বু-আম্মুও নাস্তা করছে। তোকে একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি সকাল সকাল।’
–‘বল! কিছু হয়েছে?’
অন্তি সামান্য ইতস্তত করে। অবনী তার থেকে কেবল দু-বছরেরই বড়। তাই বরাবরই অবনীর সাথে তার ভালো সম্পর্ক। তন্ময়ের কথা বাদ দিয়ে সব কথা-ই সে বোনের কাছে বলে। কিন্তু তাইমুরের ব্যাপারটা নিয়ে তার বেশ অস্বস্তি হয়। তবুও বলে,
–‘তাইমুর ভাইকে তোর মনে আছে, আপা?’
অবনী সেকেন্ড কয়েক বাদে বলে,
–‘হায়দার আঙ্কেলের ছেলে তাইমুর ভাই?’
–‘হ্যাঁ।’
–‘হ্যাঁ, মনে আছে। কিন্তু কেনো? এতোদিন পর উনার কথা জিজ্ঞাসা করছিস!’
অন্তি ধীরে ধীরে শুরু থেকে সবটুকু বলে। শুধু রাতের কথাটুকু লুকিয়ে যায়। এতোদিন পর হঠাৎ করে তাইমুরের আগমনে অবনীও বেশ অবাক হয়েছে। এতোদিন যার কোনো খবরই ছিলো না সে হঠাৎ কিভাবে এলো? তার ভাবনার মাঝেই অন্তি বলে,
–‘আজ একটু আসবি তুই?’
–‘তোর ভাইয়ার তো অফিস আছে! উনি ফিরলে সন্ধ্যায় বলবো নিয়ে যেতে। এতো ভাবিস না তুই।’
অন্তি জবাব দেওয়ার আগেই অবনীর শাশুড়ি চেঁচিয়ে ওঠে অবনীর নাম নিয়ে। অবনী দ্রুত অন্তিকে বিদায় জানিয়ে কল কেটে দেয়। ফোন ফেলে দ্রুত ছুট লাগায় সে। হানিফা বেগম বেশ রেগে ডাইনিং-এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অবনী মাথায় কাপড় টেনে নিয়ে দাঁড়াতেই তিনি ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে ওঠেন,
–‘সবসময় কাজে তোমার ফাঁকিবাজি তাই না? যেই একটু সরেছি ওমনি খাবার গুলো খোলা ফেলে ঘরে চলে গেছো!’
–‘আম্মা, আমার বোন কল করেছিলো তাই!’
–‘তো? সারাদিন-ই ফোনে কথা না বললে তোমার চলে না? আমার ছেলেটা হয়েছে আরেক! বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাকে।’
তিনি ভালো মন্দ আরো অনেক কথা শোনালেন। অবনী শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনো কারণ ছাড়া-ই সংসারে এতো অশান্তি আসলে নেওয়া যায় না। তার বকাবকির মাঝেই হৃদান চলে আসে। অফিসের জন্য পুরোপুরি রেডিও হয়নি সে। গোসল সেরেই বেড়িয়ে এসেছে চেঁচামেচি শুনে। তাকে দেখে হানিফা বেগম আরও অভিনয় শুরু করলেন,
–‘আসছিস বাবা! আয় আয়! দেখ, তোর বউয়ের কান্ড! সব খাবার এভাবে ফেলে চলে গেছিলো বলে আমি শুধু বলেছি ‘যদি এভাবে ফেলে রাখায় বিড়াল খেয়ে ফেলতো তখন কি হতো?’ তাই তোর বউ আমাকে যা তা শোনালো। সে নাকি এই বাড়ির কাজের মেয়ে না। এতো সব সে করতে পারবে না। আমি কি ভুল বলেছিলাম, বাবা?’
হৃদান একবার নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আরেকবার তাকায় অবনীর দিকে। অবনী অবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি সরিয়ে হৃদানের দিকে তাকাতেই চোখে পরে তার ভেজা চোখ দুটো। হৃদান তখনো অবনীকে কিছু বলছে না দেখে হানিফা বেগম মুখে আঁচল গুঁজে বলেন,
–‘তুই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আয়, বাবা। অযথা আমার জন্য তোদের সংসারে অশান্তি হোক আমি চাই না। তোদের নতুন বিয়ে, এখনই এমন হলে কিভাবে চলবে?’
হৃদান বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
–‘আহ্ আম্মা! এসব কি বলেন? আপনি অযথা এসব বলবেন না। খারাপ লাগে শুনতে। খেতে বসেন, মাথা ঠান্ডা করেন।’
এরপর গম্ভীরভাবে অবনীকে আদেশ করে খেতে দেওয়ার জন্য। অবনী পাথরের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো। হৃদানের গম্ভীর কন্ঠ শুনে সামান্য হাসে। আড়ালে চোখ মুছে খাবার পরিবেশন করা শুরু করে। এর মাঝে হৃদানের বোন নীলাও চলে আসে। নীলা এসে এসব চেঁচামেচি নিয়ে কতক্ষণ বকাবকি করে। সবার খাওয়া হয়ে গেলে অবনী এক এক করে সব তুলে রাখে। হৃদান তা দেখেও হানিফা বেগমকে তার রুমে দিয়ে আসে। অবনীর কাছে ফিরে এসে বলে,
–‘আপনি খাবেন না? সব তুলে রাখছেন কেনো?’
অবনী তাকায় না হৃদানের দিকে। শান্ত ভঙ্গিতে বলে,
–‘একটু পর খাবো। এখন ক্ষুধা নেই। আমার দেড়িতে খাওয়ার অভ্যাস। আপনি যান! আপনার দেড়ি হচ্ছে।’
হৃদান এক ঝটকায় অবনীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। অবনী হকচকিয়ে যায়। সরাসরি তাকায় হৃদানের চোখে। এবং সেকেন্ড কয়েক বাদে চোখ সরিয়েও নেয়। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে হৃদান তার গাল চেপে ধরে সোজা করে। চোখে চোখ রেখে বলে,
–‘যা হবে তা আমার সাথে, খাবারের সাথে না।’
অবনীকে ছেড়ে দিয়ে প্লেটে পরোটা আর ডিম নিয়ে অবনীর হাত চেপে ধরে নিজেদের রুমে নিয়ে যায়। টেবিলের ওপর প্লেট রেখে অবনীকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। নিজে সরে যেতে যেতে বলে,
–‘আমি রেডি হতে হতে যেনো সবটুকু শেষ হয়। এদিক ওদিক হলে আমি কিন্তু থা’প্পড় বসিয়ে দেবো, অবনী। তাই চুপচাপ, কোনো তর্ক ছাড়া খেয়ে উঠবেন।’
অবনী হৃদানের ঠান্ডা গলার হুমকি শুনে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও খাবারে হাত দেয়। চোখে পানি নিয়ে এক টুকরো খাবার সে মুখে নেয়। গতরাতের হৃদান আর আজকের হৃদানে সে তফাৎ খুঁজে পায়। অভিমান হয় নাকি অসহায়ত্ব বোঝে না শুধু চুপচাপ গিলতে থাকে। কান্নার সাথে খাওয়ার জন্য গলায় খাবার আটকে যায়৷ হৃদান ছুটে এসে পানি খাওয়ায়। অবনী মাথা নত করে আবার খেতে শুরু করে। হৃদান প্লেট সরিয়ে দিয়ে অবনীর গালে হাত রেখে তার দিকে ফেরায়। অবনী তবুও তার দিকে তাকায় না। হৃদান ঠান্ডা গলায় শুধায়,
–‘আম্মা যা বলেছে সেগুলো কি সত্যি, অবনী?’
অবনী কোনো শব্দ করে না। হৃদান আবার অবনীকে একই প্রশ্ন করে। অবনী কোনো মতে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
–‘উনি আমারও মা হোন। আমি নিজের মা’কে কি কখনো এধরণের কথা বলতাম?’
–‘তাহলে কাঁদছেন কেনো?’
অবনী তাকায় চোখ তুলে। অবাক হয়ে তাকিয়েই থাকে। হৃদান আবার বলে,
–‘আমি বলেছি কিছু?’
অবনী আবার দু’দিকে মাথা নাড়ায়। হৃদান চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে,
–‘চোখে যেনো আর একফোঁটাও জল না দেখি। আর যদি দেখি! তবে তা একদম ভালো হবে না, অবনী।’
অবনীকে কাঁদতে মানা করলেও অবনী শোনেনা। বরং আচমকা হৃদানের কোমড় জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। হিচকি তুলে কাঁদতে থাকে। হৃদান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এ সংসারের ভবিষ্যৎ কি হবে সে বুঝতে পারছে না। একদিকে মা, তো একদিকে তার অর্ধাঙ্গিনী। দুজনকেই ভালো রাখা তার দায়িত্ব।
সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি ফেরার রাস্তায় অন্তির সামনে পরে তাইমুর। হয়তো হসপিটাল থেকে ফিরছিলো সে। দুজনেই মুখোমুখি হয়ে গেছে। তাইমুর তাকে দেখে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে অন্তি ডাকে। তাইমুর দাঁড়ায় তবে মুখভঙ্গি কঠিন করে রাখে। অন্তি সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
–‘গতরাতে আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দেননি, তাইমুর ভাই।’
তাইমুর হাত বগলদাবা করে কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে বলে,
–‘আপনি কি জবাব চান, মিস অন্তিকা মাহজাবিন? আর আমি আপনাকে জবাব দিতে বাধ্য এটা কোথায় লেখা?’
অন্তি বিরক্ত হয়। আশে পাশে একবার তাকিয়ে দু পা সামনে এগিয়ে তাইমুরের দিকে আঙুল তুলে বলে,
–‘আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন আর আমি প্রশ্ন করলেই আপনি জবাব দিতে বাধ্য নন!’
–‘না, বাধ্য নই।’
তাইমুর তাকে আবারও এড়িয়ে যেতে গেলে অন্তি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রেগে বলে,
–”এই দাঁড়ান! সমস্যা কি আপনার? আমাকে ইগনোর কেনো করছেন?’
তাইমুর জবাব না দিয়ে অন্তির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। ভ্রু কুঁচকে দেখতে থাকে তাকে। অন্তি বুঝতে পেরে গলা পরিষ্কার করে বলে,
–‘ওভাবে তাকানোর কি আছে? আমি জানি, আপনি হাইটে আমার বড়।’
–‘আর বয়সে?’
–‘হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে আছে আমার। এখন বলেন আপনার সমস্যা কী? এসে থেকে এমন এক ভাব নিচ্ছেন যেনো আমাকে চেনেন-ই না! এই ৫ বছরে কি এমন পরিবর্তন হয়েছে যে আপনি আমাকে ‘তুমি’ থেকে ‘আপনি’ ডাকা শুরু করেছেন? অন্তিকা থেকে বার বার ‘অন্তিকা মাহজাবিন’ বলা শুরু করেছেন! দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছেন কেনো? সমস্যা কী, তাইমুর ভাই?’
–‘আপনি।’
অন্তি কপাল কুঁচকে বলে,
–‘আমি মানে?’
–‘মানে কিছুই না।’
এরপর নিজেই বিড়বিড় করে বলে,
–‘পরিবর্তন হয়েছেন আপনি। সমস্যাও আপনি-ই। আর..সমাধানও আপনি-ই।’
অন্তি শুনতে না পেয়ে জোড়ালো কন্ঠে শুধায়,
–‘বিড়বিড় করে আবার কি বলেন?’
–‘কিছু না। রাস্তা ছাড়েন!’
–‘আমার কিছু প্রশ্ন আছে। উত্তর দিলে যেতে দেবো।’
তাইমুর উল্টো ঘুরে ত্যাড়া স্বরে বলে,
–‘ঠিক আছে, গেলাম না।’
তাইমুরকে হাঁটা লাগাতে দেখে অন্তি কপাল চাপড়ায়। মানুষ কোন পরিমাণে ত্যাড়া হতে পারে সে আরও একবার তাইমুরকে দেখে জেনে গেলো। সহজ কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেয়ে সে উল্টো রাস্তা বেশি পছন্দ করলো! অন্তি পেছন পেছন ছুট লাগায়। ডাকে,
–‘ডক্টর তাইমুর আহসান! আরে দাঁড়ান না!’
তাইমুর দাঁড়ায় না। অন্তি ছুটে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তাইমুর গম্ভীর চোখে তাকিয়ে থাকে। কেবলই ধমক দিতে যাবে তখনই অন্তি বলে,
–‘ধমক পরে দিয়েন। আগে আমার প্রশ্নের জবাব দেন।’
তাইমুর কতক্ষণ অন্তির দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই তার দিকে দু কদম আগায়। অন্তি চমকে পিছে সরে যায়। তাইমুর তাচ্ছিল্য করে হেঁসে বলে,
–‘যেদিন আমি এগোলে আপনি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন! সেদিন দেবো সব জবাব। তার আগে একটা ওয়ার্ডও বলবো না। আর আপনি যদি কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকেন তাহলে হাত মুখ বেঁধে দুরে ফেলে আসবো।’
তাইমুরের জবাবে অন্তি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। তাইমুর না দাঁড়িয়ে সোজা নিজের বিল্ডিং এর দিকে চলে যায়। অন্তি বিরক্তিসূচক শব্দ করে তাইমুরের যাওয়ার দিকে তাকায়। এই লোক তো এতো আখরু ছিলো না! বাহিরে দেশে গিয়ে কি খেয়ে এমন হয়েছে? ছ্যাঁকা? আল্লাহ ভালো জানেন।
গোধূলির পরের সময়। মাগরিবের আজান পরেছে চারদিকে। তাইমুর নিজের ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে এসে মেঝেতে বসে। হাতে কফির মগ। একবার অন্তির ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে থাকে অতীতের সেইদিনের কথা। যেদিন প্রথম তার দেখা হয়েছিলো এই অন্তির সাথে। উহু! তার অন্তিকার সাথে। তখন তাইমুর মেডিকেলের ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলো। ফাইনাল এক্সামের পর কোথায় যাবে ভাবতে ভাবতে বন্ধুর সাথে চলে আসে তার বাড়িতে। ছুটিতে অনেক প্ল্যান করে দু বন্ধু একদিন বিকালে বের হয় হাঁটতে। অন্তিদের বিল্ডিং এর থেকে সামান্য দুরেই একটা বিশাল মাঠ। সেখানে বিকাল হলেই সবাই খেলতে যায়। কেউ ক্রিকেট খেলে তো কেউ ফুটবল! সেখানেই টং দোকানে দাঁড়িয়ে দু বন্ধু চা খাচ্ছিলো।
তাদের থেকে সামান্য দুরেই একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে ছিলো। পড়নে ছিলো ময়লা একটা ফ্রগ। বয়স হয়তো ৭ বা ৮ হবে। তাইমুরের দেখে মায়া লাগে। এগিয়ে যেতে গেলেই হুট করে তখন কোথা থেকে অন্তি ছুটে আসে দু হাতে দুটো হাওয়ায় মিঠাই নিয়ে। মুখে তার প্রাণবন্ত হাসি। নিজের হাতের একটা হাওয়ায় মিঠাই বাচ্চা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দেয়। সেই দৃশ্যে বোধহয় মেয়েটাকে আরও বেশি ভালো লাগছিলো তাই হয়তো প্রথমবারেই তার দিকে চোখ আঁটকে গেছিলো তাইমুরের। তাইমুর কাছে যায় না। দুর থেকেই দাঁড়িয়ে দেখে। দুজন হাসাহাসি করছে আর হাওয়ায় মিঠাই খাচ্ছে। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে বাচ্চা মেয়েটার হাতের শুকনো ফুলগুলো অন্তি সব নিয়ে নেয়। নিজের কাছে থাকা ৫০০ টাকার একটা নোট দিয়ে মেয়েটাকে বিদায় দেয়। তাইমুর দুর থেকে হাসে। এরপর দুষ্টু বুদ্ধির জেরে ছুট লাগায় অন্তির দিকে। পেছন থেকে তাইমুরের বন্ধু সায়মন ডাকে। সে তবুও শোনে না। শেষে সায়মনও তাইমুরের পিছু পিছু যায়। তাইমুর অন্তির সামনে দাঁড়িয়েই বলে,
–‘ফুলের দাম কত?’
অন্তি কপাল কুঁচকে নেয়। একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আরেকবার ফুলের দিকে তাকায়। তাইমুর তা দেখে বলে,
–‘তোমাকে ফুল বলিনি, তোমার হাতেরগুলোকেই বলেছি।’
–‘আমি কখন বললাম আমাকে ফুল বলেছেন? মাথার তাঁর কাটা?’
–‘একদমই না। তুমি নিজের দিকে তাকাচ্ছিলে বলেই তোমাকে বললাম। এবার বলো! ফুলের দাম কত?’
অন্তি বিরক্তি নিয়ে বলে,
–‘আমাকে কি ফুলওয়ালী মনে হয়? আমার বাবা-মা আছে এবং তারা আমাকে যথেষ্ট সুন্দর করে বড় করছে। ফুল বিক্রির প্রয়োজন নেই আমার।’
–‘ওহ তাই? তাহলে তোমার বাবা-মা’র নাম্বার দাও।’
অন্তি হতভম্বের মতো তাকায়। পেছন থেকে সায়মনও তাইমুরকে কিছু বলার চেষ্টা করলে তাইমুর হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়। অন্তি একবার সায়মনের দিকে তাকায় তো একবার তাইমুরের দিকে তাকায়। তাইমুর ফের বলে,
–‘কি হলো? দাও!’
–‘আজব তো! আমি আপনাকে কেনো আমার বাবা-মা’র নাম্বার দিবো?’
তাইমুর সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,
–‘বাহ রে! এমন সুন্দরী, ফুলের মতো দেখতে মেয়েকে তারা যদি এভাবে রাস্তায় বের হতে দেয় তাহলে তোমার বিপদ! আমি আবার মানবসেবক। মানুষের বিপদ একদম দেখতে পারি না।’
সায়মন টেনে ধরে তাইমুরকে। অন্তি অবাক হবে নাকি বকবে বুঝতে পারে না। দিনে দুপুরে পাবলিক প্লেসে ফ্লার্টিং করতেছে! সাহসের অভাব নেই। অন্তি কপালে ভাজ ফেলে তাকায়। কেবলই কিছু বলতে যাবে তখনই দুর থেকে অন্তির ফ্রেন্ড ডাকে,
মনে রেখ এ আমারে পর্ব ২
–‘অন্তি, জলদি আয়।’
অন্তি সেদিকে তাকিয়ে ছুট লাগায়। পেছন থেকে তাইমুর চেঁচিয়ে বলে,
–‘অন্তি!’
অন্তি তাকায় ঠিকই তবে বিরক্তি নিয়ে। তাইমুর হেঁসে ফেলে। সায়মন সেদিন তাইমুরকে অনেক বকেছিলো। যদি মেয়েটা ঝামেলা করতো তাহলে দুজনের গণপিটুনি খাওয়া কেউ আটকাতে পারতো না।