মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৪

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৪
রায়েনা হায়াত

সন্ধ্যার পর হৃদান আর অবনী আসে অবনীদের বাড়িতে। এমন সময়ে মেয়ে আর জামাইকে দেখে আনোয়ার সাহেব আর রেহেনা বেগম বেশ অবাক হোন। তবে খুশিও হয়েছেন। অন্তি নিজের ঘরে বসে ছিলো। অবনী আর হৃদানের কন্ঠ শুনে সে ছুটে আসে। অবনীর মন সকাল থেকেই খারাপ ছিলো তবুও সবার সামনে সে হাসিমুখেই থাকে। হৃদান আনোয়ার সাহেবের সাথে বসে কথা বলতে শুরু করে। রেহেনা বেগম হৃদানের জন্য চা করছেন। অন্তি অবনীর হাত টেনে নিজের ঘরে আনে। অবনী হাতে থাকা ব্যাগটা কোনোমতে রেখে বলে,
–‘আস্তে! এতো তাড়া কিসের তোর?’
–‘আরে আপা! তুই বুঝতেছিস না। তাইমুর ভাই একটা রহস্য হয়ে গেছে। আমরা যেমন হাসিখুশি তাইমুর ভাইকে দেখেছিলাম উনার সাথে তো এর কোনো সম্পর্কই নেই।’
অবনী মন দিয়ে শোনার মতো করে বলে,
–‘আচ্ছা, তারপর?’

অন্তি একটা কুশন ছুড়ে মারে অবনীর দিকে৷ অবনী তা কোলে নিয়েই বসে পরে। বোঝানোর মতো করে বলে,
–‘৫ বছরে তাইমুর ভাইয়ের ক্যারেক্টার, পার্সোনালিটি সবই পাল্টে গেছে? এটা কোনো কথা?’
–‘আরে না। সব পাল্টায়নি। আগের মতোই ঘাড়ত্যাড়া আছে।’
অবনী ফিক করে হেঁসে ফেলে৷ অন্তি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অবনী হাসি থামিয়ে বলে,
–‘তুই শুধু উনার ঘাড়ত্যাড়ামি-ই দেখিস। আমি কাল সকালে যাবো নে উনার ফ্ল্যাটে। দেখবো, উনি কেমন বদলেছে!’
–‘হ্যাঁ, দেখিস। এবার বল, তোর শ্বশুরবাড়িতে সব ঠিকঠাক?’
অবনীর হাসি হাসি মুখটুকু কালো হয়ে যায়। আজ সকালের ঘটনাতেই তার মনটা বিষিয়ে আছে। কি জবাব দেওয়া উচিত তার? হৃদান খুব ভালো এবং তার ননদ নীলাও ভীষণ ভালো। শুধু সে তার শাশুড়িকে বুঝতে পারে না। অকারণে সে কেনো এমন করে? অবনীকে চুপ থাকতে দেখে অন্তি চিন্তায় পরে যায়। এগিয়ে গিয়ে অবনীর কাঁধে হাত রেখে শুধায়,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–‘আপা? সব ঠিকঠাক তো? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?’
অবনী নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসার চেষ্টা করে। জবাব দেয়,
–‘আরে হ্যাঁ। সব ঠিকঠাক আছে। তোর দুলাভাই যেভাবে খেয়াল রাখে তাতে কিছু উল্টা পাল্টা হওয়ার চান্স-ই নাই।’
অন্তির তবুও বিশ্বাস হয় না। ছোট থেকে এই বোনের সাথেই তার সব। জমজ না হয়েও তারা জমজ বোনের মতোই ছিলো। একে অন্যের সুখ, দুঃখ তারা সবসময় নিজেদের মুখ দেখেই বুঝে গেছে৷ আজ মনে হলো অবনী হয়তো ভালো নেই তবে এটাও সত্যি হৃদান অবনীকে অনেক ভালোবাসে। এটা অন্তি নিজেও বুঝতে পারে। তাই আর কিছু বলে না। দু-বোন এটা ওটা নিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করে। অন্তি বার বার ভাবছিলো তন্ময়ের ব্যাপারটা বলবে কি না! কিন্তু এই শেষ সময়ে এসে বলেও বা কি হবে! এসব ভাবতে ভাবতেই সময় চলে যায়। সে আর বলে উঠতে পারে না। বাহির থেকে রেহেনা বেগম দুজনকে ডাকছে। দুজন আসতেই হৃদান বলে,

–‘মা, কিছুদিন অবনী এবাড়িতে থাকুক। ও বাড়ির সব নতুন তো ওর একটু কষ্ট-ই হয়। এখানে থেকে গেলে মন ভালো হবে।’
অবনী অবাক হয়ে তাকায়। সে জানতো না হৃদান তাকে এখানে থাকার জন্য নিয়ে এসেছে। সকালের ব্যাপারটা নিয়ে কি তাহলে হৃদান তাকে একেবারে এ বাসায় রেখে যেতে এসেছে? তার ভাবনার মাঝেই আনোয়ার সাহেব বলেন,
–‘সে তো ও থাকবে। তুমি থাকবে তো, বাবা?’
হৃদান সামান্য হেঁসে বলে,
–‘না, বাবা। আসলে আমার তো অফিস আছে। ছুটিও নেওয়া হয়নি। আমি পরে এসে দু’দিন থেকে যাবো। আপাতত অবনী থাকুক।’
–‘এ কেমন কথা?’

হৃদান দুজনকে মানিয়ে নেয়। তবে আজ রাতটা সে এখানেই থাকবে। কাল সকালে চলে যাবে। রেহেনা বেগম অবনীকে বলেন হৃদানকে নিয়ে রুমে যেতে। অন্তিকে ডাকেন হাতে হাতে কাজটা শেষ করার জন্য। অবনী হৃদানকে নিয়ে পাশের রুমে যায়। আগে সে আর অন্তি একই রুমে থাকতো। ছোট থেকেই অভ্যাস ছিলো। পাশের এই রুমটা সবসময় বন্ধ-ই থাকতো। তবে অবনীর বিয়ের পর থেকে এ রুম সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়। অবনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাইট অন করে। দরজা লাগিয়ে দিয়ে থম মেরে বিছানায় বসে। হৃদান পড়নে থাকা শার্টটা খুলে শুয়ে পরে। অবনীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–‘মাথা ভীষণ ব্যাথা করছে। একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবেন?’
অবনী শোনে। কোনো কথা ছাড়া-ই এগিয়ে গিয়ে হৃদানের মাথায় হাত বুলায়। চুল টেনে, মাথা টিপে দিতে থাকে। হৃদান চোখ বন্ধ করেই এক হাতে অবনীর আরেক হাত টেনে আনে। নিজের বুকের ওপর রেখে বলে,

–‘কি হয়েছে? রাগ করেছেন?’
অবনী জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে,
–‘আপনি কি একেবারের জন্য রেখে যাচ্ছেন আমাকে?’
হৃদান এক লাফে উঠে বসে। অবনী চমকে ওঠে। হৃদান অবাক হয়ে বলে,
–‘পাগল নাকি! আপনাকে একেবারের জন্য রেখে গেলে বিরহে আমিই ম’রে যাবো। আর বিয়ে করেছি কি বউকে ফেলে যাওয়ার জন্য নাকি? আমার অনেক শখের বউ, বুঝছেন?’
–‘তাহলে রেখে যাচ্ছেন কেনো?’
হৃদান অবনীর গাল দুটো হাতের আজলে নেয়। নরম সুরে বলে,
–‘বেশিদিনের জন্য নয় তো। ব্যাস, কয়েকটা দিন! এরপর আবার নিয়ে যাবো। এখানে থাকলে মানসিক দিক থেকে আপনিও ভালো থাকবেন। ওখানে আম্মাও ভালো থাকবে।’

–‘আর তারপর?’
–‘তারপর! আপনাকে নিয়ে ভিনদেশে চলে যাবো। যাবেন আমার সাথে?’
অবনী মিছে মিছে ধাক্কা দেয় হৃদানের বুকে। নাক ফুলিয়ে বলে,
–‘সবসময় মজা!’
হৃদান বুকে হাত দিয়ে হাসে। অবনী নিজেও হেঁসে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। হৃদান লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজে নিজেই বলে,
–‘সত্যি সত্যি ভিনদেশে যাবো, অবনী। এতে আপনি এবং আম্মা দুজনেই সুখী থাকবেন। আমি আপনাদের কাউকেই হারাতে চাই না।’
.
গভীর রাত। আজও অন্তি জেগে। সারাদিন সবকিছুর মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারলেও রাতটা তার কাটে না। তন্ময়কে কল করতেও তার অস্বস্তি হয়। সে নিজেই তো তাকে যেতে দিয়েছে তবে কোন মুখে কল দেবে? তবুও অনেক ভেবে সে কাঁপা কাঁপা হাতে কল দেয় তন্ময়ের নাম্বারে। তন্ময়ের নাম্বার ব্যস্ত দেখায়। অন্তি একটু অবাক হয়। ব্লক করেছে নাকি কারোর সাথে কথা বলছে এটা ভেবে সে হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে আবার তন্ময়কে কল দেয়। এবং এখানে সে তন্ময়কে অ্যানাদার কলে পায়। অন্তি বুঝে যায় তন্ময় তাকে নাম্বার থেকে ব্লক করেছে আর হোয়াটসঅ্যাপে সে অন্য কারো সাথে কথা বলছে। অন্তি ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসে। যাক! তন্ময় তবে সত্যিই অন্য কারোর হয়ে গেছে। চোখ দুটো জ্বলতে শুরু করে তার। তবে তা জল হয়ে গড়ানোর আগেই গিটারের টুংটাং শব্দ কানে আসে৷ এতো রাতে গিটার কোথায় বাজছে ভেবে অন্তি ব্যালকনিতে যায়। পাশের বিল্ডিং এর ব্যালকনিতে তাইমুর বসা। হাতে গিটার তবে চোখ বন্ধ। অন্তি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দেড়টা বাজে। অবাক হলেও কিছু বলে না। সেখানেই নিজেও গ্রিল ঘেঁষে বসে। বিড়বিড় করে বলে,
–‘সত্যি সত্যি ছ্যাঁকা খেয়েছে নাকি! এতো রাতে বসে কে গিটার বাজায়? কিছুই বুঝি না।’
তাইমুর ততক্ষণে সুর তুলেছে। অন্তি নিশ্চুপে তাকায় তার দিকে। তাইমুর মোহাম্মদ ইরফানের গাওয়া ‘বারিশ-ইয়ারিয়া’ গানটা গাওয়া শুরু করে,

–‘Dil mera hain na samajh kitna
Besabar ye bewakuf bada
Chahta hain kitna tujhe
Khud magar nahi jaan saaka
Iss dard-e-dil ki sifaarish
Ab kar de koyi yahaan
Ke mil jaaye ise wo baarish
Jo bhiga de puri tarah’

তাইমুর গানের সাথেই ফিরে যায় অতীতে। অন্তির সাথে দেখা হওয়ার পরেরদিন ছিলো। তাইমুর আর সায়মন পরেরদিনও সেখানে যায়। সায়মন শুরু থেকেই আল্লাহকে ডাকছে। না জানি আজ এ ছেলে মা’ইর খাইয়ে ছাড়ে! তাইমুর ভাবছে আজ সে অন্তির দেখা আদৌও পাবে কি না! টং দোকানে অপেক্ষা করতে করতেই দুরে তাকিয়ে দেখে অন্তি আসছে। আজ অন্তির ব্যাচ ছিলো তাই বিকালে সেখান থেকেই ফিরছে সে। পাশে আনোয়ার সাহেবও আছেন। উনি অফিস থেকে ফিরছিলেন ওই পথেই। তাই মেয়েকে সাথে করেই এসেছেন। তাইমুর আনোয়ার সাহেবকে দেখে চিনতে পারে। তবুও শিউর হওয়ার জন্য ফোন বের করে হায়দার সাহেব আর আনোয়ার সাহেবের একসাথের ছবি দেখে নেয়। ঠোঁটের কোণের হাসিটুকু বাড়ে। সে এগিয়ে যায় অন্তিদের দিকে। পেছন থেকে সায়মন বুকের বা’পাশে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। একবার মানাও করে কিন্তু কে শোনে কার কথা! তাইমুর নিজের মতো এগিয়ে গেছে। সায়মন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,

–‘আজ আর কেউ পারবে না গণপি’টুনি থেকে বাঁচাতে।’
অন্তি নিজেও খেয়াল করে তাইমুরকে। একবার আনোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে তাইমুরকে দেখে। ভাবে,
–‘আব্বুকে পাশে দেখেও এগিয়ে আসছে! কি পাগল লোক এইটা আবার!’
সায়মন আর অন্তি দুজনেই ভয়ে ভয়ে তাকায়। তবে তাদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে তাইমুর গিয়ে সরাসরি জড়িয়ে ধরে আনোয়ার সাহেবকে। সায়মন আর অন্তির মুখ ঝুলে যায়। কি হলো তা বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে৷ আনোয়ার সাহেবও বেশ অবাক হয়ে শুধান,
–‘আরে, বাবা! কে তুমি?’
তাইমুর ছেড়ে দিয়ে বলে,

–‘আঙ্কেল, আমাকে চেনেননি! আমি তাইমুর৷ আপনার বন্ধু হায়দারের ছেলে।’
আনোয়ার সাহেব অবাক হলেন এবং খুশিও হলেন। এতোদিন পর তাইমুরকে দেখে তিনি সত্যিই চিনতে পারেননি। তবে তাইমুর ফোন বের করে তাদের ছবি দেখায়। আনোয়ার সাহেব খুশি হয়ে তাইমুরকে নিজে থেকেই জড়িয়ে ধরে। বলে,
–‘কতোদিন পর তোমাকে দেখলাম, তাইমুর। আমাদের বাড়িতে চলো জলদি। তোমার আন্টি দেখলে ভীষণ খুশি হবে।’
–‘যাবো আঙ্কেল। শুনেছিলাম আপনারা রাজশাহীতে থাকছেন কিন্তু এই এলাকাতেই এটা জানতাম না। জানলে তো আরো আগেই চলে যেতাম।’
আনোয়ার সাহেব হাসেন। কেনো এসেছে, কোথায় থাকছে সব জিজ্ঞাসা করলে তাইমুর সায়মনকেও ডাকে। সায়মন তখনো শকে আছে। আনোয়ার সাহেব পাশে দাঁড়ানো অন্তিকে দেখিয়ে বলে,
–‘ও অন্তি। মনে আছে তোমার?’

–‘অন্তিকা?’
আনোয়ার সাহেব হেঁসে মাথা নাড়ান। অন্তি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। তাইমুরকে তার মোটেও পছন্দ না। কিন্তু এ ছেলে তো রীতিমতো তার বাবার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর ছেলে বের হলো। এখন কি হবে? গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে সে। তাইমুর আর সায়মনকে নিয়েই তারা বাড়ি ফেরে। বাড়ি এসে রেহেনা বেগমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে তিনিও ভীষণ খুশি হোন। তাদেরকে বসতে দিয়ে তিনি যান রান্নাঘরে। অন্তি তখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো। আনোয়ার সাহেব একটু সরতেই সে নিচু স্বরে বলে,
–‘আপনি সত্যিই হায়দার আঙ্কেলের ছেলে?’
–‘সন্দেহ আছে, ম্যাডাম?’

–‘তা তো আছে। আঙ্কেল এতো ভালো আর আপনি তার ছেলে হয়ে এতো বাঁদর কিভাবে হোন? ঘাপলা আছে।’
তাইমুর সটান করে উঠে দাঁড়ায়। ভ্রু নাচিয়ে বলে,
–‘এই মেয়ে! আমাকে দেখলে বাঁদরের মতো লাগে?’
অন্তি জিভ দেখিয়ে বলে,
–‘১০০% লাগে।’
তাইমুর ফুসে ওঠে। তবে কিছু বলার আগেই অন্তি চলে যায়। সায়মন মুখে হাত চেপে হাসতে থাকে। তাইমুরও বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। সেদিনের পর থেকেই তাইমুর প্রায়-ই যেতো অন্তিদের বাড়িতে। তবে বাহিরে অন্তিকে জ্বালানোর কথা কখনোই ভুলতো না। কখনো ফ্লার্টিং করে তো কখনো এটা ওটা বলে জ্বালিয়েই সময় কাটছিলো। অবনীর সাথেও বেশ অনেকটা মিশে গেছিলো সে।
ফোনের টুং করে ওঠা ম্যাসেজের শব্দে অতীত থেকে বেড়িয়ে আসে তাইমুর। খেয়াল করে তার চোখের কোণ দুটো সামান্য ভেজা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বা হাতের হাতায় চোখ মুছে ফোন হাতে তুলে নেয়। ম্যাসেজ ওপেন করতেই ভেসে ওঠে,

–‘মি. ত্যাড়া! ছ্যাঁকা খেয়ে কি প্রেমিকার বিরহে এমন গান গায়ছেন রাত বিরেতে? অবশ্য এমন ত্যাড়া প্রেমিক রাখার চেয়ে যে কোনো মেয়ে ব্রেকআপ-ই পছন্দ করবে।’
তাইমুরের ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে যায়। স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে পাশের ব্যালকনিতে তাকাতেই দেখে সেখানে অন্তি বসা। গিটারটা ভালো মতো এক পাশে রেখে তাইমুর এগিয়ে যায় একদম কোণায়। গলার স্বর স্বাভাবিক রেখেই বলে,
–‘যদি ত্যাড়া প্রেমিককে সামলাতে না পারে তবে ত্যাড়া প্রেমিকও বোকার মতো রাত বিরেতে বিরহ পোষণ করে না। সবাই আপনার মতো বিরহপ্রেমী নয় অন্তিকা মাহজাবিন। তা শুনলাম সামনে সপ্তাহে আপনার প্রেমিকের বিয়ে। কী গিফ্ট দিচ্ছেন তাকে?’
অন্তি অবাক হয়। গ্রিলের আরও কিছুটা কাছ ঘেঁষে গিয়ে বলে,
–‘কী বললেন? তন্ময়ের বিয়ে? সামনে সপ্তাহে? সত্যি বলছেন?’
–‘আপনাকে মিথ্যা বলার মতো কিছু নেই। আপনার প্রেমিক আপনাকে এখনো জানায়নি? ষেহ্! স্যাড, মিস অন্তিকা, ভেরি স্যাড!’

কাটা গায়ে নুন ছিটানোর মতো অবস্থা করছে তাইমুর। অন্তি বিমূঢ় হয়ে বসে থাকে। মিনিট খানেকের মাঝেই তার ফোন বেজে ওঠে। তাইমুর তাচ্ছিল্য করে হাসে। গিটার হাতে নিয়ে একটা তাঁর টেনে বলে,
–‘আপনার প্রেমিকের কল। ধরুন! দেখুন, বিয়ের দাওয়াত পান কি না!’
অন্তি রাগ করবে নাকি দুঃখ পাবে! তবুও সবটা ভেবে নিজেকে শক্ত করে। চোখ দুটো বার কয়েক ঝাপটে স্বাভাবিক ভাবে কল রিসিভ করে। তাইমুরের চোখ গিটারের দিকে থাকলেও তার কান খাঁড়া। সে শোনে অন্তির কথা। কল তোলার পর তন্ময় প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে,
–‘কল করেছিলে?’
তবে অন্তি স্বীকার না করেই কাঠকাঠ গলায় বলে,
–‘না। চাপ লেগে চলে গেছে। ঘুমান আপনি।’
তন্ময় ‘ঠিক আছে’ বলে কল কাটতে গেলে অন্তি বলে,
–‘কংগ্রাচুলেশনস।’

তন্ময় থতমত খায়। তবে তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অন্তি কল কেটে দেয়। বুকের বা’পাশে বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে তবে এ যন্ত্রণার কোনো ঔষধ নেই। তাইমুর ঘাড় বাঁকিয়ে তার দিকে তাকায়। বলে ওঠে,
–‘যন্ত্রণা হচ্ছে, অন্তিকা?’
অন্তি তাকায় তার দিকে। অন্তির চোখ দুটো ভেজা। তাইমুরের হাত থেমে যায়। হয়তো কিছু মুহুর্তের জন্য তার শ্বাসও থেমে যায়। হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করে। সে চোখ সরিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। শক্ত করে চেপে ধরে গিটারের তাঁর। সে অবস্থাতেই বলে,
–‘তন্ময়কে চান?’

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৩

অন্তি অবাক হয় কি না বোঝা যায় না। তবে বেশ সাবলীলভাবে জবাব দেয়,
–‘যে আমার না, তাকে কিভাবে চাইবো?’
বসা থেকে উঠে এলোমেলো পায়ে ভেতরে চলে যায়। তাইমুর সেদিকে তাকিয়ে মাথাটা হেলিয়ে দেয় দেয়ালে। ফিসফিস করে বলে,
–‘অথচ যে চেয়েছে তাকে আপনি মনে রাখেননি, অন্তিকা। তাকে আপনি চাননি। যদি চাইতেন তবে বুঝতেন এর থেকেও অসহ্য যন্ত্রণা কেউ রোজ সহ্য করছে। কেউ রোজ ম’রে ম’রে বাঁচছে। ভালোবাসা পাওয়ার মতো ভাগ্য না থাকলে ভালোবাসা কেনো আসে জীবনে?’

মনে রেখ এ আমারে পর্ব ৫