মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১০

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১০
সৌরভ চৌধুরী

থাপ্পড় খেয়ে উঠোনে পড়ে থাকা রেশমার দিকে সবাই এক পলক তাকালো। পরক্ষণেই রেশমাকে থাপ্পড় মারা ব্যক্তিটির দিকে সবাই তাকালো,দেখতে পেল রেশমাকে থাপ্পড় আর কেউ না বাংলাদেশের সুনামধন্য উকিল রেহেনা চৌধুরী মেরেছে।
রেহেনা চৌধুরীর হাতে থাপ্পড় খেয়ে রেশমা অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে হয়তো বুঝতেছে না রেহেনা চৌধুরী তাকে কেন থাপ্পড়টা মারলো।
তখনই রেহেনা চৌধুরী গর্জে উঠে বলল,

মা ____ এই মেয়ে তুই যেন কি বললি? মেহেকের বংশ পরিচয় নেই তাই না।
তুই মেহেকের বংশ পরিচয় সম্পর্কে কি জানিস আর তুই বা কোন নামিদামি বংশের মেয়ে শুনি। তোর বাবা কোন বংশের সন্তান আমিও তা জানতে চাই।
রেহেনা চৌধুরীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে রাবেয়া শিকদার তাকে তোষামদ করার জন্য বলল,
মেহেকের মামি _____ ম্যাডাম আপনি হয়তো জানেন না এই মেয়ে গ্রামে থাকা অবস্থায় কত পর পুরুষের সাথে রং ঢং করে বেরিয়েছে। ওর বাপ তো মরে বেঁচে গেছে। মা টাও মরে বেঁচে গেল আর দিনশেষে এই আপদ পড়লো আমাদের ঘাড়ে।
মেহেক তার মামী রাবেয়া শিকদারের কথা শুনে মেহেক অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তারপর তার মামীর উদ্দেশ্যে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেহেক ______ উফফফফসসস মামি একটু ভুল বললে।
মেহেকের মামী ______আমি আবার কি ভুল বললাম। তুই কি বলতে চাস আর আমার কথায় এমন পাগলের মত হাসতেছিস কেন?
মেহেক _______ মামি তুমি হয়তো ভুলে গেছো এটা তোমার বাড়ি নয় এটা আমার বাড়ি। এই বাড়ি তোমার স্বামীর টাকায় তৈরি না। এই বাড়ি আমার বাবার টাকায় তৈরি তাই আমি তোমাদের ঘাড়ে নয় তোমরা আমার ঘাড়ে এসে পড়েছ।
মেহেকের মুখ থেকে এমন উত্তর তার মামি আশা করেনি উনি তো অবাক হয়ে মেহেকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে এটা কোন মেহেক কে দেখছে। উনিতো এই মেহেককে আগের মেহেকের সাথে খুঁজে পাচ্ছে না। মেহেক এতটা কিভাবে বদলে গেল তাও এত কম সময়ে।
নিশ্চয়ই এসবের পেছনে এই মন্ত্রীর পরিবার আছে এই মন্ত্রীর পরিবার মেহেকের মধ্যে কি এমন পেল যে সবাই তার হয়ে কথা বলছে।
ঠিক তখনই রেহেনা চৌধুরী ঠান্ডা অথচ শক্ত কন্ঠে বলল,

মা _____ তোমরা সবাই জানতে চাও মেহেকের বংশ পরিচয়। নিশ্চই তোমাদের সবার সন্দেহ আছে মেহেকের বংশ পরিচয় নিয়ে তাই না। মেহেকের কেউ নেই বিধায় সবাই তার সাথে যত অত্যাচার করা যায় সব রকম অত্যাচারই করেছ তবে মনে রেখো এখন সব অত্যাচারের হিসাব পই পই করে দিতে হবে।
রেহেনা চৌধুরী এমন কথা বলে শক্ত মনোভাব নিয়ে সবার দিকে তাকালো। দেখতে পেল পুরো শ্যামপুর গ্রামের মানুষ সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে কারণ তারা সবাই জানতে চায় মেহেকের আসল পরিচয় মেহেকের বংশ পরিচয়।
সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে রেহেনা চৌধুরী বলল,

মা ______ আপনারা সকলেই জানেন মেহেক এর বাবা আয়মান চৌধুরী একজন সাংবাদিক এবং তিনি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান তাই না। আপনারা তো সবাই এটাই জানতেন তবে আপনারা কোনদিনও আয়মান চৌধুরীর অন্য কোন আত্মীয়কে দেখেননি তাই তো তাকে নিয়ে এত কানাঘোষা।
সবাই মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল অর্থাৎ উত্তর হলো হ্যাঁ,
রেহেনা চৌধুরী মৃদু হেসে উত্তর দিল,

মা ____ মেহেকের বাবা আয়মান চৌধুরী। তিনি কোন সাধারণ মানুষ না। তিনি কোন সাধারণ ঘরে জন্ম নেওয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ও না।
রেহেনা চৌধুরীর মুখ দেখে এমন কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল সবচেয়ে বেশি অবাক হলো মেহেকের মামা মহাসিন শিকদার এবং তার মামী রাবেয়া শিকদার।
রাবেয়া শিকদার তার স্বামি মহসিন সিকদারের কানে কানে ধীর কন্ঠে বলল,
মেহেক মামি _____ তোমার বোনের জামাই এর পরিবার সম্পর্কে এই মহিলা এসব কি বলছে? তুমি তো আগে কোনো দিন ও এসব নিয়ে কিছু বলো নি ।
মেহেকের মামা _____ আরে তোমাকে কীভাবে বলবো। আমি তো নিজেই জানতাম না। তবে আয়মানকে দেখে মনে হতো ও অনেক রহস্যময়।

রেহেনা চৌধুরী মেহেকের মামা মামির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ছিলো তাদের ভাব ভঙ্গি বোঝার জন্য।
তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে রেহেনা চৌধুরী বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলতে লাগলো,
আয়মান চৌধুরী বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যান চৌধুরী এম্পায়ারের চেয়ারম্যান আয়ান চৌধুরীর ছোট ভাই। আয়মান নিজেও চৌধুরী এম্পায়ারের ৫০% শেয়ার হোল্ডারের মালিক।
রেহেনা চৌধুরীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে সবাই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অপলক ভাবে, যেন তারা চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে।
সবার এমন রিয়াকশন দেখো রেহেনা চৌধুরী মৃদু হেসে বলল,

শুধু তাই নয়। মন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীর ছোট চাচা, টপ বিজনেসম্যান আরহাম চৌধুরীর চাচাও আয়মান চৌধুরী।
মেহেক কোনো থার্টক্লাস পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে নি। মেহেক চৌধুরী বাড়ির মেয়ে আর এখন তো চৌধুরী বাড়ির বউ ও।
রেহেনা চৌধুরীর কথা শেষ হতেই আবরাজ ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালো মহাসিন শিকদারের সামনে আর শক্ত গলায় বিদ্রুপের সাথে বলল,

আবরাজ ______ তা মাআআআআআমা ( একটু টেনে বলল) আমরা কি এখন বাড়ির ভেতরে যেতে পারি নাকি এখনো নাটক কন্টিনিউ চলবে।
একজন মন্ত্রীর মুখে এমন টিটকারি মূলক কথা শুনে মহাসিন শিকদার ভড়কে গেল,
সাথে সাথে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে নিরব সম্মতি দিল অর্থাৎ তারা সবাই বাড়ির ভিতরে যেতে পারে।
মহাসিন শিকদারের সম্মতি পেতেই চৌধুরী বাড়ির সবাই বাড়ির ভিতরে যেতে লাগলো। মেহেক একটু এগিয়ে গিয়ে রেশমাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।

আবরাজ এবং আরহাম মেহেকের এমন কর্মকাণ্ড আড় চোখে দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিল।
তবে মেহেকের এমন কর্মকান্ডে আবরাজ কম অবাক হয়নি সে ভেবেই অবাক হচ্ছে তার বউ এমন কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে। তবে সে এটা বুঝতে পারলো সিকদার পরিবারের কপালে দুঃখ আছে। তার মা আর বউ যে এখন সিকদার পরিবারকে নাকানি চুবানি খাওয়াবে তা সে বেশ বুঝতে পারছে।
মেহেক সবাইকে তাদের নিজ নিজ রুম দেখিয়ে দিল। এখন শুধু বাকি আছে আবরাজ এবং মেহেক।
রেহেনা চৌধুরীর সম্মতিতে মেহেক আবরাজ কে সাথে নিয়ে তার নিজ রুমে চলে গেল।
বিয়ের পর এই প্রথম তারা এক সাথে থাকবে। আয়ান চৌধুরী চাচ্ছিলেন, মেহেক এবং আবরাজের বিয়ে আবারো ধুমধাম করে দিতে। এজন্য তিনি তাদের ২জনকে আলাদা রুমে রাখতো।
তবে সিকদার বাড়ির পরিস্থিতি ভিন্ন।তারা যদি দেখে মেহেক আর আবরাজ ২ জন ২ রুমে থাকে। এটাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে পুরো এলাকা ছড়িয়ে দিবে।

এতে চৌধুরী পরিবারেরই সন্মান নষ্ট হবে।
তাই এই কয়দিন আবরাজ আর মেহেক এক রুমে থাকবে।
মেহেক আর আবরাজ মেহেকের রুমে প্রবেশ করেই দেখতে পেলো, মেহেকের রুম রেশমা দখল করেছে।
এটা দেখে তো মেহেক রেগে গেলো,
কারণ এই রুমে তার শৈশব কেটেছে।
এই রুমটা তার বাবার অনেক প্রিয় ছিলো। তাই বাবার মৃত্যুর পর সে আর তার মা এই রুমেই থেকেছে। মায়ের মৃত্যু পর সে একা হয়ে গেলেও অনেক অত্যাচার সহ্য করেও সে এই রুম ত্যাগ করে নি। রেশমা এটা সহ্য করতে পারে নি তাই এই রুমে তালা দিয়েছিলো আর মেহেক কে রান্না ঘরে থাকতে হতো।
তবে মেহেক থাকা অবস্থায় এই রুমে রেশমা থাকে নি।
অথচ এই মেয়ে তার রুম দখল করে নিয়েছে। মেহেক রেশমার সকল জিনিসপত্র বাইরে ছুঁড়ে ফেলতে লাগলো।
এরপর চিল্লিয়ে বলল,

মেহেক ______ ১০ মিনিট সময় দিলাম। এই ১০ মিনিটের মধ্যে যদি আমার এই রুম পরিষ্কার না হয় আর তোদের সকল জিনিসপত্র যদি বাহির না হয়,তাহলে সিকদার বাড়ি সকলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেবো। মাইন্ড ইট।
কথাটি বলেই মেহেক আবরাজের হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেল।
মেহেক চলে যেতেই উপস্থিত হয় রেহেনা চৌধুরী।
রাগী স্বরে রেশমা আর রাবেয়া সিকদারের উদ্দেশ্যে বলল,
মা ______ আমার মেয়ে কি বলল কানে যায় নি। দ্রুত কাজ শেষ করো। আর হ্যা আমার মেয়ে কিন্তু অনেক ক্লান্ত। ওরা রেস্ট নিবে তাই দ্রুত কাজ শেষ করো।
রেহেনা চৌধুরীর এমন কথা আর মেহেকের হুমকি মূলক কথা শুনে সিকদার পরিবারের সকলের শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়তে লাগলো,
তারা দ্রুত পায়ে মেহেকের রুমে চলে গেলো এবং রুম পরিষ্কারসহ রেশমার সকল জিনিস পত্র বাহির করতে লাগলো।

অপরদিকে,
মেহেক আবরাজের কাধে মাথা রেখে দোলনায় বসে আছে। আর আবরাজ এক দৃষ্টিতে মেহেকের দিকে তাকিয়ে আছে।
তা দেখে মেহেক মুচকি হাসি দিলো।
মেহেক _____ জানেন মন্ত্রী মশাই এই বাড়িটা আমার বাবার শেষ চিহ্ন। আমি জানতাম ওরা আমাকে কেন নিজেদের কাছে রেখে বড় করেছে?
আবরাজ ______ তুমি কীভাবে জানলে?
মেহেক ______ আমি একদিন মামা আর মামিকে বলতে শুনেছিলাম যে আমার বয়স ১৮ হলেই তারা আমার থেকে এই বাড়ি লিখে নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।
মেহেক এতটুকু বলেই আড় চোখে আবরাজের দিকে তাকালো, দেখতো পেলো আবরাজ নির্বিকার ভঙ্গিতে আছে তা দেখে মেহেক অবাক হলো,

মেহেক _______ আপনি কি এসব জানতেন?
আবরাজ ______ হ্যা শুধু তাই না। তোমার বিয়ে কেন তাড়াহুরা করে দিতে চাইলো তাও আমি জানি।
মেহেক ______ কেন?
আবরাজ ______ তোমার মামা মামি জেনে গেছিলো, কোনো এক শহরের ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক হয়েছে।
তারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কারণ তারা এই সম্পত্তি হারিয়ে ফেলবে। তাই তারা এক বুড়ো লোকের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলো, আর শর্ত দিয়েছিলো বিয়ের পর যেন, তোমার এই সম্পত্তি তোমার মামা মামির নামে লিখে দেয়।
মেহেক অবাক হয়ে বলল,

মেহেক _____ আপনি এতকিছু জানলেন কীভাবে?
আবরাজ ____ তুমি কি ভুলে গেছো আমি একজন মন্ত্রী।
মেহেক ____ জানেন মন্ত্রী মশাই আমি কঠিন হতে চেয়েও পারতেছি না।
কেন আমি কঠিন হতে পারতেছি না বলতে পারবেন? আমি তো চাই কঠিন হতে।
আবরাজ _____ কারণ তুমি তোমার মায়ের মতো কোমল, সহজ-সরল।
অন্যদিকে,
অন্ধকার রুমে বসে আছে একজন অজানা ব্যাক্তি। তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। একে একে তার সকল ব্যাবসা বন্ধের পথে। তবে তিনি ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তার এই ব্যাবসা বন্ধের পেছনে চৌধুরী বাড়ির ৩ ছেলের হাত আছে।
তখনি তার একজন চ্যালা দৌড়ে আসলো ভেতরে,

চ্যালা _____ বস খবর আছে?
বস ____ বল কি খবর?
চ্যালা _____ চৌধুরী বাড়ির সবাই দিনাজপুরের শ্যামপুরে গেছে।
বস _______ হোয়াট!!! কখন গিয়েছে।
চ্যালা ____ আজ দুপুরে পৌঁছে গেছে।
বস লোকটি হাতের ইশারায় চ্যালাকে চলে যেতে বলল।
চ্যালা চলে যেতেই অন্ধকার রুমের গোমট ভাবটা যেন আড়ো বেড়ে গেলো।
বস লোকটি হাতে ফোন নিয়ে কল দিলো আমজাদ শেখকে,

বস ________ আমজাদ ( গম্ভীর স্বরে)
আমজাদ ______ জ্বী বস।
বস _________ চৌধুরী পরিবার শ্যামপুরে গেছে।
ঐখানে কি হয় না হয় সকল খবর আমার চাই।
আমজাদ _______ পেয়ে যাবেন বস।
কথাটি শুনেই কল কেটে দিলো বস লোকটি।
কল কেটে নিচিন্তায় আড়ামে বসে পরলো, ঠিক তখনি কর্কশ শব্দে বস লোকটির ফোন আবারো বেজে উঠলো,
দেখতে পেলো তার গুপ্তচর রবিন ফোন করেছে,
বস ________ হ্যা রবিন বল কি খবর পেয়েছিস?
রবিন _________ বস আপনার বিশ্বস্ত সহযোগী NSI এর ADG সাকিল কে কিডনাপ করা হয়েছে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রবিনের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বস লোকটি ভয় পেয়ে গেলো কারণ তার কাছে অনেক তথ্য রয়েছে।
যদি চৌধুরী পরিবারের ৩ ছেলে সাকিল পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে তাকে ও ওরা খুব শিঘ্রই খুঁজে বের করবে।
বস লোকটি তুতলাতে তুতলাতে বলল,

বস ________ কককককককে করেরেরেছে জানতে পেরেছিস কি?
রবিন ________ আন্ডার ওয়াল্ডের মাফিয়া সম্রাট স্যাডো কিং এর লোকজন।
আমার মনে হচ্ছে ওর হয়তো স্যাডো কিং এর কোনো ব্যাক্তির সাথে ঝামেলা ছিলো তাই তুলে নিয়ে গেছে।
রবিনের মুখে এমন কথা শুনে বস লোকটি একটু স্বাভাবিক হলো। তবুও তার মনে সকল প্রশ্ন থেকেই গেলো?
সে কল কেটে ভাবতে লাগলো,
স্যাডো গ্যাং তো সবচেয়ে বড় গ্যাং, ওরা কেন বাংলাদেশের মতো একটা সাধারণ দেশের একজন NSI ADG কে ধরবে? ওর সাথে তাদের কি শত্রুতা?
না সে আর কোনো কথা ভাবতে পারতেছে না।
তরতর করে তার শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়তেছে।
অন্যদিকে,

মেহেককে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আবরাজ। আর মেহেক তার প্রিয় পুরুষের শরীরের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে।
আবরাজ তার পিপাসু দৃষ্টিতে প্রিয়সীর দিকে তাকিয়ে আছে।
তখনি তার ফোনটি বেজে উঠলো।
ফোনের শব্দ কানে আসতেই আবরাজ যেন বিরক্ত হলো।
তবুও প্রিয়সীকে জড়িয়ে ধরেই রাখলো।

মেহেক ________ কি হলো আপনি ফোন ধরছেন না কেন?
আবরাজ _______ তোমাকে ছাড়তে মন চাচ্ছে না মায়াবতী।
মেহেক ________ আপনি একজন মন্ত্রী। শুধু বউকে জড়িয়ে ধরে থাকলেই চলবে, দেশের জন্য ও তো কাজ করতে হবে।
আবরাজ ________ দেশের জন্য তো অনেক কাজ করলাম। আজ দিন টা না হয় বউ এর জন্য রাখি।
মেহেক ________এত রোমান্টিক হতে হবে না। গিয়ে ফোন ধরুন।হয়তো ইম্পটেন্ট কল।দেখেন কেটে গেলে ও বারবার কল দিচ্ছে।
আবরাজ এবার বিরক্ত হলো। পরপর ৩ বার কেটে গিয়ে আবারো কল বেজে উঠলো।
এবার সে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিলো।
ফোন স্কিনে নামটা দেখেই সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো দেখতে পেলো “রাফি” লেখা,

আবরাজ ______ কি রে ব্যাটা তুই আমার লাইফে অসময়ে এন্টি নেওয়া কবে বন্ধ করবি তাই বল?
রাফি ________ আমি আবার কি করলাম।
আবরাজ ______সারা দিন কাজ কাজ করতে করতে দিন যায়। এখন একটু বউকে আদর করতেছি। তোর তো তা সহ্য হলো না। একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছিস।
আবরাজের মুখে এমন কথা শুনে রাফি অবাক হয়ে গেলো,
রাফি ________ এই তুই দিনের বেলা বউকে আদর করতেছিস? রাতে কি করিস হ্যা।
আবরাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
আবরাজ ________ আমার বউ, আমি কখন আদর করবো তা আমার ব্যাপার তোর কি শালা।
আবরাজের মুখে এমন কথা শুনে মেহেক লজ্জায় শেষ, মেহেক পাশ থেকে বালিশ হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারলো আবরাজের দিকে।
মেহেকের এমন কাজে যেন আবরাজ মজা পেলো।
তবে এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,

আবরাজ _______ রাফি বল কি বলতে কল দিয়েছিস।
রাফি মজা করার জন্য কিছু বলতে গিয়েও, আবরাজ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলা কথা শুনে আর কিছু বলল না। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
রাফি _________আমি আজ ভোরে বাংলাদেশে এসেছি।
ডেভিডের থেকে শুনলাম সাকিল নামে কাউকে ধরতে বলেছিস।
একটু আগে ওকে তুলে এনেছি পাতাল নগরীতে।
রাফির কথা শুনে আবরাজ খুশী হয়ে গেলো। খুশী ভাব লুকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
আবরাজ _________ওকে নিয়ে দিনাজপুর চলে আয়।
রাফি _________দিনাজপুর কোথায় রাখবি একে।
আবরাজ ________ আমি একটা বাগানবাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম ঐখানে তো উঠি নি। তাই ঐখানে ওকে নিয়ে তোরা উঠবি।

রাফি _______ ঐখানে উঠলে অনেকে সন্দেহ করবে।
তার থেকে বরং আমাদের সিহাব আছে না যাকে তুই লন্ডনে থাকতে লেখাপড়ার খরচ দিতিস।
আবরাজ ______ হুম মনে আছে সিহাবের কথা। তো সিহাব কে দিয়ে কি করবি?
রাফি ________ সিহাব এখন দিনাজপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরি করে,
ও জামতলীতে একটা বাড়ি বানিয়েছে।
আমরা ঐখানে উঠি।
আবরাজ _______ ঠিক আছে। কখন রওনা দিবি?
রাফি ________ ১০ মিনিট পর রওনা দিব।
আবরাজ ______ ঠিক আছে সাবধানে আসবি আর চোখ কান খোলা রাখবি।
রাফি ________ ঠিক আছে।
অন্যদিকে,

আশরাফ শেখ অনবরত তার মেয়ে জারিন কে কল দিচ্ছে কিন্তু জারিন কল রিসিভ করতেছে না।
আশরাফ শেখ মেয়ের এমন কাণ্ডে রীতিমতো রেগে বম হয়েছে।
অপরদিকে,
জারিন কাল রাতে তার চাচ্চু আসাদ মির্জার বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো।
ফ্লাসব্যাক,
কাল রাতে সবাই যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
তখন আসাদ মির্জা তার ভাতিজি জারিন কে নিয়ে ছাদে চলে যায়।

আসাদ ____ মামনি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে? (করুন স্বরে বলল আসাদ মির্জা)
জারিন ____ বলো চাচ্চু কি বলবে?
আসাদ ____ আমি যে প্রশ্নগুলো করবো আশা করি সবগুলো সঠিক উত্তর দেবে?
জারিন _____ ঠিক আছে।
আসাদ মির্জা রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিল এবং বলল,
আসাদ _____ মামনি আমি জানি তুমি আরহাম কে ভালোবাসো কিন্তু তুমি চৌধুরী বাড়ির কারো মনের মত হতে পারবে না কারণ কি জানো?

জারিন ______ আমাদের পরিবারের সাথে চৌধুরী বাড়ির শত্রুতা ( ভাবলেশীন ভাবে উত্তর দিলো)
আসাদ ______ এই শত্রুতা কোথা থেকে উৎপত্তি তুমি কি জানো?
জারিন _____ হুম বাবা বলেছে। আয়ান চৌধুরীর বাবা আমাদের দাদাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে মেরে ফেলেছে। এবং আয়ান চৌধুরীর চাচাও আমার ফুপির সাথে প্রতারণা করে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।
জারিন এর মুখ থেকে এরকম উত্তর শুনে আসাদ মির্জা আকাশের দিকে তাকালো হয়তো নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কারণ আজ তাকে তার পরিবারের অন্ধকার দিকটা তারই ভাতিজির সামনে আনতে হবে আজ থেকে হয়তো তার ভাতিজিও তার পরিবারের সবাইকে ঘৃণা করবে।
আসাদ মির্জা জারিন এর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে উত্তর দিল,

আসাদ _____ তোমাকে যা বলা হয়েছে সবই ভুল এবং মিথ্যে।
আসাদ মির্জার মুখ থেকে এমন কথা শুনে জারিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
জারিন অবাক হয়ে তার চাচ্চুর দিকে তাকালো,
এরপর উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
জারিন _______ কি বলছো এসব চাচ্চু। এসব যদি মিথ্যে হয় তাহলে সত্য কি? আমি সত্য জানতে চাই।প্লিজ চাচ্চু আমাকে সত্য বলো আমি সকল সত্য জানতে চাই।
আসাদ মির্জা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলতে লাগলো অতীতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা (আপনারা তো সব জানেনই যা বিগত পর্বে বলা হয়েছে)
আসাদ মির্জার মুখ থেকে শেখ পরিবারের অন্ধকার ইতিহাস শোনার পরে জারিন যেন কান্নায় ভেঙে পড়ল। সে ভাবতেও পারেনি তার পরিবার এতটা খারাপ।
ভাতিজিকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে আসাদ মির্জা তাকে আটকালো না, গম্ভীর স্বরে বলতে লাগলো,

আসাদ ______ মামনি তুমি যদি এরকম অহংকারী ভাব নিয়ে চৌধুরী পরিবারে থাকতে চাও। তাহলে তুমি তোমার প্রাপ্য সম্মান পাবে না।
তুমি জানো কি আমরা যখন এই বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম তুমি আমাদের সাথে যে ব্যবহার করেছিলে আমি অনেক রেগে ছিলাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম তুমি আমার ভাতিজি তখন আর আমি রেগে থাকতে পারেনি।হয়তো এটা রক্তের টান। তবে তুমি ভেবে দেখো তোমার চাচী আম্মা কিন্তু তোমার প্রতি সেই নেগেটিভ ধারণাটাই রেখেছে। সে কিন্তু তা পাল্টাতে পারেনি।
আসাদ মির্জার কথা শুনে জারিন মাথা নিচু করে নিল যার অর্থ সে ক্ষমাপ্রার্থী।
জারিনের মাথা নিচু করা দেখে আসাদ মির্জা জারিনের মাথায় হাত দিল এবং বলল,

আসাদ ______ মামনি তুমি জানো কি চৌধুরী বাড়ির কোন মেয়ে এবং বউ কখনো মাথা নিচু করে না।চৌধুরীরা সব সময় মাথায় উঁচু করেই থাকে।
চৌধুরীরা যদি মাথা নিচু করত তাহলে আজ শেখ পরিবারের সাথে এরকম দ্বন্দ্ব থাকত না আয়ান চৌধুরীর বাবা চাচাও খুন হত না।
কথাটি বলে আসাদ মির্জা স্থান ত্যাগ করল।
আসাদ মির্জা চলে যেতে জারিন ভাবতে লাগলো,
এজন্যই কি আরহাম তার সাথে সব সময় খারাপ আচরণ করে। এজন্যই কি আরহাম তাকে ভালোবাসে না।
এজন্যই আরহাম তাকে স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয় না।
বর্তমান,

জারিন সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিল আজ থেকে সে শেখ পরিবারকে ঘৃণা করবে। আজ থেকে সে মনে প্রাণে চৌধুরী পরিবারের বউ হওয়ার চেষ্টা করবে। হ্যাঁ সে জানে এই কাজ করতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে, অনেক কাঠখোট্টা পোড়াতে হবে। অনেক টিটকারী মূলক কথা শুনতে হবে, এই কথাটা অবশ্য তার স্বামীই শোনাবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই তার ফোনটি আবারও বেজে উঠলো। সে ফোন স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো তার বাবা আবারও তাকে ফোন দিয়েছে। এবার সে ইগনোর করল না কলটা রিসিভ করল,

জারিন _____ হ্যালো বাবা
আমজাদ ____ এই তুমি কোথায় থাকো? তোমাকে কতবার ফোন দিই ফোন ধরার কোন নাম গন্ধ নেই। ( রেগে কথাটি বলল)
জারিন______ আসলে বাবা আমি একটু বাহিরে ছিলাম আর ফোনটা রুমে ছিল, এজন্য কল ধরতে পারিনি। বলো কি বলবে? ( শান্ত কন্ঠে বলল )
আমজাদ _______ শুনলাম তোমরা দিনাজপুরে গেছো। তা ঐখানে কেন গেলে?
জারিন একটু মুচকি হাসলো সে বুঝতে পেরেছে তার বাবা তাকে কেন কল দিয়েছে। সে ঘুরিয়ে পেচিয়ে জানতে চাচ্ছে চৌধুরী পরিবারের ইনফরমেশন তাই সে বলল,

জারিন ______ এখানে মেহেকের বাবা আয়মান চৌধুরীর কবর রয়েছে তাই সবাই মিলে এসেছে আয়মান চৌধুরীর কবর জিয়ারত করতে।
আর রাখছি বাবা আমাকে আরহাম ডাকতেছে।
কথাটি বলে আমজাদ শেখ কে কোন কথা বলতে না দিয়েই জারিন কলটা কেটে দিল,
কারন সে জানে যতক্ষণ কলে কথা বলবে ততক্ষণ আমজাদ শেখ ঘুরিয়ে পেচিয়ে তথ্যগুলো জানতে চাইবে। সে তো মনস্থির করেছে আর কোন তথ্য শেখ পরিবারকে দেবেনা। আর সেও শেখ পরিবারের উপর প্রতিশোধ নেবে। তাকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করে আরহাম এর কাছে খারাপ বানানো, চৌধুরী পরিবারের কাছে খারাপ বানানোর জন্য। কারণ শেখ পরিবারের সবাই তো জানতো আরহামকে সে কতটা ভালোবাসে। তার এই ভালোবাসা কে গুটি বানিয়েছে তার বাবা চাচারা অথচ সে বোকার মত তার বাবা চাচাদের কত বিশ্বাস করতো।
সন্ধ্যেবেলা সবাই মিলে বসে আছে মেহেকের বাসার ড্রয়িং রুমে। ঠিক তখনই মেহেক আবরারের উদ্দেশ্যে বলল,

মেহেক ______ আবরার তোকে যে একটা কাজ দিয়েছিলাম কাজটা করেছিস?
আবরাজ ____ হ্যাঁ ভাবি মা তুমি চিন্তা করো না কাজটা হয়ে গেছে। জিনিসটা আমার রুমে রয়েছে। আমি কি এখন নিয়ে আসবো।
মেহেক _____ নিয়ে আয়।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেকের দিকে। কেউ ভেবে পাচ্ছে না সে আবরারকে কি এমন কাজ দিলো তাও দিনাজপুরে এসে।
রেহেনা চৌধুরি অবাক হয়ে মেহেকের উদ্দেশ্যে বলল,

মা _____ কিরে তুই আবরার কে কি এমন কাজ দিলি তাও দিনাজপুরে এসে?
মেহেক ____ বড়মা, বাবা এই বাড়ি করার পরে এ বাড়ির কোন নাম রাখেনি। তবে বাবা মায়ের মৃত্যুর পরে মামা আমি এই বাড়ির নাম সিকদার বাড়ি রেখেছিল। তখন আমার অনুমতি নেয়নি, নিবে কিভাবে, তারা তো প্রয়োজনই মনে করেনি।
এখন আমি চাচ্ছি আমাদের এই বাড়ির নাম চৌধুরী বাড়ি রাখবো। তাই আবরার কে চৌধুরী বাড়ি নামে নাম ফটক বানিয়ে আনতে বলেছিলাম।
এর মধ্যে আবরার নাম ফটক নিয়ে হাজির।
আবরার কে নাম ফটো হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেহেক বলল,

মেহেক _____ আবরার তোকে তো মিস্ত্রি র ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম করেছিস।
আবরার _____ হ্যাঁ সে অলরেডি বাসার উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে ভিতরে আসতে বলেছি আর আমি যাচ্ছি নাম ফটক লাগাতে।
মেহেক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। মেহেকের সম্মতি পেয়ে আবরার চলে গেল।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এবং তারা সবাই খুশি। তারা বুঝতে পেরেছে মেহেক সাহসী হয়ে উঠতেছে। তার নিজের অধিকার বুঝে নিতে শিখতেছে।
রাতের বেলা,

মহাসিন শিকদার,রাবেয়া শিকদার এবং রেশমা এক রুমে বসে আছে।
মহাসি শিকদার এবং রাবেয়া শিকদারকে একটা রুম দেওয়া হয়েছে। তাদের রুমে আয়ান চৌধুরী এবং রেহেনা চৌধুরীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।
আর রেশমা কে রান্না ঘরে থাকতে বলেছে মেহেক।
মেহেকের মামি ______ মহাসিন তুমি কি কিছু ভেবেছো? এখন কি করবে? এই মেহেক আর আগের মেহেক নেই।
ও এখন অনেক সাহসী হয়েছে।
রাবেয়া সিকদারের কথায় মহাসিন সিকদার বলল,

মেহেকের মামা ______ হবেই তো আয়মানের রক্ত বলে কথা। আয়মান যেমন সাহসী ছিলো, ও চেয়েছিলো ওর মেয়ে ও তেমনি সাহসী হোক। তবে তার আগেই তো সে মারা গেলো। আমরা মেহেক কে ভিতু বানিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু পারি নি।
রেশমা ______ মা আমি এভাবে থাকতে পারবো না। মেহেকের হুকুম পালন করতে পারবো না। আমাকে নানু বাড়ি পাঠিয়ে দাও। আমি নানু বাড়ি চলে যাবো।
রেশমার মুখ থেকে এমন কথা শুনে রাবেয়া সিকদার রেশমাকে ধমক দিল এবং বলল,
মেহেকের মামি ____ চুপ থাক বলদ। তোর মাথায় তো কোনো বুদ্ধি নেই। মেহেককে দেখে কিছু শিখেক।
রেশমা _____ আমার সামনে ঐ মেহেকের নাম নিবা না তো। ওর নাম শুনলেই আমার রাগ উঠে।
মেহেকের মামি ____ আমার মাথায় একটা প্লান এসেছে। কাজে লাগাতে পারলে আমরা সবাই রাজার হালে চলতে পারবো, আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না, আমাদের মেয়ে ও রাণী হয়ে থাকবে।
রাবেয়া শিকদারের কথা শুনে মহসিন শিকদার এবং রেশমা অবাক হয়ে গেল।

মেহেকের মামা ______ কি প্লান বলো?
মেহেকের মামি _____ আমি শুনেছি চৌধুরী বাড়ির বড় দুই ছেলে বিবাহিত কিন্তু ছোট ছেলে আবরার এখনো বিয়ে করেনি।
রেশমা ______ তো তাতে আমাদের কি?
রাবেয়া শিকদার মেয়ের কথায় অত্যন্ত বিরক্ত হলো বিরক্তার রেশ নিয়ে বলতে লাগলো,
মেহেকের মামি ______ আজ রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন রেশমা আবরারের রুমে ঢুকে পড়বে।
আবরার তখন ঘুমিয়ে থাকবে।
রেশমা ও আবরার কে জড়িয়ে ধরে থাকবে।
তার কিছুক্ষণ পর রেশমা তার চুল এলোমেলো করবে এবং কাপড়ের কিছু অংশ ছিড়বে।
এরপর চিল্লাচিল্লি করে লোকজন জড়ো করবে এরপর আমরা সবাই ঝামেলাটা মিটমাট করার জন্য চৌধুরী পরিবারের সাথে কথা বলে আবরার আর রেশমার বিয়ে দেব।
কেমন লাগলো আমার বুদ্ধিটা?

মেহেকের মামা ______ দারুণ।
রেশমা ______ কিন্তু আমার তো আবরার না আবরাজ কে পছন্দ।
মেহেকের মামি _____ তুই চুপপ থাক।ঐ মন্ত্রী সুবিধার না। এর থেকে নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
রেশমা ______ ঠিক আছে।
গভীর রাতে,
সবাই যখন ঘুমিয়ে আছে তখন রেশমা ধীর পায়ে আবরারের রুমে প্রবেশ করে এবং প্লান অনুযায়ী কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে এরপর চুল এলোমেলো এবং কাপড় ছিড়ে এরপর চিল্লানো শুরু করে,
গভীর রাতে একটা মেয়ের চিল্লানোর শব্দ শুনে চৌধুরী পরিবারের সবাই হাজির হয়।
চৌধুরী পরিবারের সবাই হাজির হয়ে যখন রেশমা আর আবরার কে এই অবস্থায় দেখতে পাই সবাই তো অবাক হয়ে যায়।

রেশমার এই অবস্থা এবং আবরারের শার্টে রেশমার লিপস্টিক এর সাথে ঠোঠের চিহ্ন দেখে রুশার বুকের ভেতর অনেক কষ্ট হতে লাগলো। তার অনুভূতি শূন্য হয়ে গেলো।
তার মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেলো। সে ভাবতেও পারতেছে না আবরার আর রেশমা।
চৌধুরী বাড়ির সবাই স্থির।
আসাদ মির্জা দৌড়ে চলে গেলো রুশার কাছে। তিনি জানেন তার মেয়ে ভেঙ্গে পরেছে। আর কেউ না জানলেও সে তো জানে তার মেয়ের অনুভূতির কথা।
আসাদ মির্জা রুশার সামনে দাড়ালেই রুশা হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় এবং ধীর কন্ঠে বলে,
রুশা _____ আসাদ শেখ আপনার কোনো সহানুভূতির দরকার নেই আমার। আমি নিজেকে সামলাতে পারবো।
জীবনটা যেখানে নাট্যমঞ্চ সেখানে আমিও একজন অভিনেত্রী।
অপরদিকে,

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ৯

রাবেয়া শিকদার বিলাপ করে কান্না শুরু করলো এবং বলতে লাগলো আমার মেয়ের এখন কি হবে? আমার মেয়েকে এখন কে বিয়ে করবে?
মেহেক তুই প্রতিশোধ নিতে তোর ভাইকে দিয়ে এই জঘন্য কাজটা করে নিয়েছিস তাই না।
এখন কি হবে রাবেয়া শিকদার এবং মহাসিন শিকদারের জঘন্য প্লানে আবরার কি ফেঁসে যাবে নাকি বেঁচে যাবে? এখন কি আবরার রেশমা কে বিয়ে করবে? আবরার যদি রেশমাকে বিয়ে করে তাহলে রুশার কি হবে?

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here