মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১১
সৌরভ চৌধুরী
গভীর রাত তার শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছে,
আকাশের কোণে জ্বলে উঠেছে ফিকে আলো,
পূর্ব দিগন্তে লাজুক ভোরের আভাস —
মনে হয়, অন্ধকার হার মানছে আলোর কোমল ছোঁয়ায়।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা যাবত মহাসিন শিকদার এবং রাবেয়া শিকদার রেশমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে।
তবে চৌধুরী বাড়ি এবং মির্জা বাড়ির সবাই তাদেরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত। বিশেষ করে মেহেক সে তো খুশি মনে পপকন খাচ্ছে আর রাবেয়া শিকদার এবং মহাসিন শিকদারের কার্যক্রম দেখতেছে।
রাবেয়া সিকদার আড় চোখে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝে গেলেন এই কান্নার নাটক আর বেশিদূর নিয়ে যাওয়া যাবে না। এখন যা করতে হবে সরাসরি কথা বলে করতে হবে।
অপরদিকে,
রেহেনা চৌধুরী একজন বিচক্ষণ মানুষ। তিনি বাংলাদেশের সুনামধন্য একজন উকিল। উনি এরকম বহু কেস লড়েছেন। উনি এতক্ষণ যাবৎ কোন কথা না বলে তার তিন ছেলে এবং সিকদার পরিবারের সকল সদস্যকে পর্যবেক্ষণ করতে ছিলেন। তবে তিনি এটা বুঝতে পেরেছেন এখানে যাই কিছু হয়ে যাক তার মাস্টারমাইন্ড সিকদার পরিবার হলেও এর লাটাই তার তিন ছেলের হাতে। কারন তার তিন ছেলে এই ঘটনার জন্য মোটেও বিরক্ত বা রাগান্বিত নয়। উল্টো তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা যেন মজা পাচ্ছে।
সবার দিকে একবার তাকিয়ে রাবেয়া শিকদার আয়ান চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেহেকের মামি _____ভাই সাহেব আমরা তো জানি চৌধুরী পরিবার সব সময় নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকে। তারা কোন সময় অসৎ কাজে আপস করে না।
আজ আমি একজন অভাগী মা হয়ে আপনার কাছে সুষ্ঠু বিচার চাচ্ছি।
আশা করি আপনি ন্যায় বিচার করবেন।
আপনার বিচারের ওপরে নির্ভর করবে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ।
আয়ান চৌধুরী একবার ছেলে এবং বউ এর দিকে তাকালো।
আয়ান চৌধুরী কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহেক বলে উঠলো,
মেহেক_____ জানেন তো মিসেস সিকদার চৌধুরী পরিবার যেমন অপরাধীদের সঙ্গ দেয় না, তেমনি যারা চৌধুরী পরিবারের দিকে অসৎ উদ্দেশ্যে আঙ্গুল তুলে তাদেরও ছেড়ে কথা বলে না। তাদের ধ্বংস করে দেয়৷
( মুচকি হেসে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল)
মেহেকের এমন ঠান্ডা হুমকিমূলক কথা শুনে রাবেয়া শিকদার এবং মহাসিন শিকদার একটু ঘাবড়ে গেল।
রাবেয়া শিকদার দমে না গিয়ে গর্জে উঠে বলল,
মেহেকের মামি_____ তুই কি বলতে চাস মেহেক আমরা ইচ্ছা করে এই কাজগুলো করেছি। তোর ভাই নির্দোষ।
মেহেক______ কে দোষী আর কে নির্দোষ তা না হয় একটু পরেই জানা যাবে।
তার আগে বলো এত রাতে রেশমা কেন আবরারের ঘরে?এখন আবার এটা বইলো না যে আবরার রেশমাকে জোর করে তার রুমে তুলে এনেছে।
মেহেকের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে রাবেয়া শিকদার যেন চুপসে গেল। তার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছিল না।
ঠিক তখনই মিন মিন কণ্ঠে রেশমা বলে উঠলো,
রেশমা_____ আসলে আমার ঘুম আসছিলো না। তাই আমি ছাদে যাচ্ছিলাম।
তখনই আবরার আমাকে বলল তারও ঘুম আসতেছে না। আমি যেন তার রুমে যাই এবং দুজন মিলে গল্প করি তাহলে দুজনেরই ভালো লাগবে।
আমিও ভাল মনে করে তার সঙ্গে তার রুমে যাই আর তারপরে…….
(বাকি কথা শেষ না করে রেশমা কান্না শুরু করে দিল)
রেশমার মুখ থেকে এমন কথা শুনে রুশা যেন আকাশ থেকে পড়ল। এখন তার একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আবরার এ কাজ করেছে। আবরারের ক্যারেক্টার এতটাও খারাপ নয় যে একটা মেয়েকে সে তার রুমে ডাকবে। তাও রাতের বেলা এটা নিশ্চয়ই আবরার কে ফাঁদে ফেলানোর পরিকল্পনা।
মেহেক ঘুমো ঘুমো কণ্ঠ বানিয়ে আবরাজ এবং আরহাম এর উদ্দেশ্যে বলল,
মেহেক_____ আমার এখন বিরক্ত লাগতেছে। এতক্ষণ অনেক মজা পাইছি। কুমিরের কান্না দেখার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলাম আমার,আজ তা পূরণ হয়েছে। যাইহোক গ্রামের সকাল দেখতে বের হব দ্রুত এই নাটক শেষ করো।
আরহাম বোনের মুখে এমন কথা শুনে গম্ভীর হয়ে গেল আর আবরাজ বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সিকদার পরিবারের সামনে এবং বলতে লাগলো,
আবরাজ__ তা মিস্টার এন্ড মিসেস শিকদার আপনারা কি যেন বলছিলেন আমার ছোট ভাই আবরার আপনাদের মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করেছি তাই না।
( বিদ্রুপের সাথে জিজ্ঞাসা করলো)
আবরাজের কথায় মহাসিন শিকদার মাথা থাকিয়ে হ্যাঁ বোঝালো যার অর্থ সে ঠিক বলেছে।
মহাসিন শিকদারের মুখ থেকে যেন কোন কথা বের হচ্ছে না। হাজার হলেও আবরাজ একজন মন্ত্রী। একজন মন্ত্রীর সামনে মিথ্যা কথা উচ্চারণ করার মত সাহস বোধহয় তার নেই।
আবরাজ মহাসিন শিকদারের অবস্থা দেখে মৃদু হাসলো এরপর উচ্চ শব্দে ডেকে উঠল,
” রাফি ভেতরে আয়”
এখন সবার দৃষ্টি দরজায় দাঁড়ানো রাফির দিকে। রেহেনা চৌধুরী এবং আয়ান চৌধুরী তো অবাক হয়ে গেছে এই সময়ে এই বাড়িতে রাফিকে দেখে।
রেহেনা চৌধুরী অবাক হয়ে রাফির উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
মা______ কিরে রাফি তুই এই সময় এখানে? আর তোর তো এখন লন্ডনে থাকার কথা? তুই এখানে কীভাবে?
রাফি মৃদু হেসে বলল,
রাফি _____ আরে আস্তে আস্তে আন্টি এত এত প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দেব।
আর হ্যাঁ তোমার এই ছেলে থাকতে কি আমি এত শান্তিতে হানিমুন করতে পারবো।
ওই যে তোমার ছেলের কল এলো আর আমারও বউকে রেখে বাংলাদেশের চলে আসতে হলো।
রাফির মুখে এমন কথা শুনে আবরাজ ভ্রু কুঁচকে রাফির দিকে তাকালো,
আর ভাবতে লাগলো,
সে তাকে কখন কল দিলো, উল্টো বারে গিয়ে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বিদেশি মেয়ে নিয়ে নাচার জন্য বউয়ের হাতে কেলানি খাওয়ার ভয়ে চলে এসেছে বাংলাদেশ। তা না বলে এখানে দিচ্ছে আমার দোষ।
আবরাজকে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফি হাত দিয়ে ইশারা করে মাফ চাইলো।
আবরাজ ও রাফির দিক থেকে চোখ সরিয়ে মহাসিন শিকদারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো,
আবরাজকে এরকম শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মহাসিন শিকদার একটু ভয় পেয়ে গেল।
আবরাজ _____ তো মিস্টার এবং মিসেস সিকদার আপনারা তো জানেন আমি একজন মন্ত্রী। একজন মন্ত্রীর পরিবার একটা অচেনা অজানা জায়গায় থাকবে আর মন্ত্রী চুপচাপ কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে থাকবে, এটা ভাবা কি বোকামি নয়?
আবরাজের মুখ থেকে এমন কথা শুনে রাবেয়া শিকদার একটু ভয় পেয়ে গেল। এবং ভাবতে লাগলো তারা কি ধরা পড়ে গেল।
পরক্ষণেই আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে ভাবতে লাগলো,
ধুর সে কি না কি ভাবতেছে তারা কিভাবে ধরা পড়বে। তারা তো নিখুঁতভাবে প্লান তৈরি করেছে। তাও দরজা বন্ধ করে। তাহলে কে শুনবে তাদের প্লান।
এই মন্ত্রী হয়তো তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এসব কথা বলতেছে।
রাবেয়া শিকদারের ভাবনা শেষ হতে শক্ত কন্ঠে বলতে লাগলো,
আবরাজ ____ আমার পরিবার এখানে থাকবে তাও আবার আমার চিহ্নিত শত্রুর সাথে।
আর আমি কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব না।
এটা ভাবলেন কি করে। তো চলুন আপনাদের একটু টাস্কি খাওয়াই।
আপনারা জানেন কি এই বাড়ির প্রত্যেকটা রুমে প্রত্যেকটা কোনায় হিডেন ক্যামেরার লাগানো আছে। যা আমি আপনাদের চোখের আড়ালে লাগিয়েছি আর এই ক্যামেরা সর্বক্ষণ চেক করতো আমার লোকজন।
আবরাজ এতোটুকু বলেই চোখ রাখলো সিকদার পরিবারের দিকে দেখতে পেল সিকদার পরিবারের তিনজনের শরীর দিয়ে অঝরে ঘাম ঝরতেছে।
আবরাজ একটু মৃদু হেসে রাফির উদ্দেশ্যে বলল,
আবরাজ ______ রাফি ভিডিও ক্লিপটা চালা।
আর হ্যাঁ এতক্ষণ এই নাটক সহ্য করার কারণ হলো আমার বউ দেখতে চেয়েছিল আপনারা কতটা নিচে নামতে পারেন,
আর কতটা ধৈর্য ধরে রাখতে পারেন।
আবরাজের কথা শেষ হতেই রাফি ভিডিও ক্লিপটা সবার উদ্দেশ্যে ধরল।
সবাই দেখতে পেল রাবেয়া শিকদার এবং মহাসিন শিকদারের পরিকল্পনা।
কিভাবে রেশমা তা বাস্তবায়ন করলো?
সবাইতো অবাক হয়ে গেল তবে কেউ খেয়াল করলো না মেহেকের চোখ রাগে লাল হয়ে গেছে মেয়েকে কানে বারবার বাজতেছে,
“আমার তো আবরার কে পছন্দ না আমার পছন্দ আবরাজ কে”
মেহেক আস্তে আস্তে রেশমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো অতঃপর রেশমার চুলের মুঠি ধরে একের পর এক থাপ্পড় মারতে লাগলো, শেষে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে রেশমার মাথা দেয়ালের সাথে বারি মারলো।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো মেহেকের কার্যক্রম কিন্তু কেউই তাকে আটকালো না। মেহেকের হিংস্রতা যেন আরো বাড়তে লাগলো।
রাবেয়া শিকদার এবং মহাসিন শিকদার আর কোনো কুল কিনারা না পেয়ে আদরের মেয়েকে বাঁচানোর জন্য মেহেকের পা ধরে বলল,
মেহেকের মামি ____ মা মেহেক আমাদের মাফ করে দে।
আমরা জানি আমরা অনেক ভুল করেছি।
দয়া করে আমাদের মাফ করে দে আমার মেয়েকে বাঁচতে দে।
ওকে ছেড়ে দে মা আমি ওকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দেবো ও আর তোর সামনে আসবে না। দয়া কর মা।
মেহেকের মামা _____ মা যা শাস্তি দেওয়ার আমাদের দে মা।
আমার মেয়েকে ছেড়ে দে মা।
আমার একটা মাত্র মেয়ে। দয়া কর মা।
মেহেক _____ ওকে আজ আমি মেরে ফেলবো ও আমার স্বামীর দিকে চোখ দেয়।
ওর চোখ তো আমি আজ তুলে ফেলবো ওর সাহস কত বড় মেহেক আয়মান চৌধুরীর স্বামীর দিকে চোখ দেয়। ওর চোখ দিয়ে আমি মার্বেল খেলবো।
মেহেক কে আরো রেগে যেতে দেখে আয়ান চৌধুরী এগিয়ে এসে মেহেককে শান্ত করলো।
ঠিক তখনই রুশা দৌড়ে গিয়ে রেশমার মুখ বরাবর ফুলদানি দিয়ে বারি মারলো।
আর বলতে লাগলো,
তুই আমার থেকে আবরারকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিস আজ তোকে আমি শেষ করে দিবো।
যাকে আমি ৩টা বছর ধরে ভালোবেসে গিয়েছি, কত অপমান সহ্য করেছি, তার ঘৃণা পেয়েছি তাও তার সন্মানে আঘাত করি নি।
আর তুই আমার আবরারকে চরিত্রহীন বানাতে চেয়েছিস।
তোকে আমি শেষ করে দিবো,
কথাটি বলেই রেশমাকে চড় থাপ্পর মারতে লাগলো।
এদিকে রেশমা বেচারি মেহেকের মাইর আর রেশমার ফুলদানির বারি খেয়েই জ্ঞান হারিয়েছে।
চৌধুরী বাড়ির সবার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।
কাকে রেখে কাকে সামলাবে।
সবাই মেহেক আর রুশা কে শান্ত করতে চাইলেও।
আবরাজ আর আরহাম ওদের উস্কে দিচ্ছে,
আবরাজের তার বউ এর এই রণমূর্তি ভাবটা দেখতে ভালোই লাগতেছে।
সে দেখতে চায়, তার বউ এর এই রূপ।
তাই উস্কে দিতে বলল,
আবরাজ ______ জানো মেহেক আমি যখন গাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম তখন এই মেয়ে চোখ টিপ মেরেছিলো।
আমি নেহাৎ ভালো মানুষ তাই ইগনর করেছি ( ইনোসেন্ট মুখ করে বলল)
আরহাম _______ হ্যাঁরে ভাই তোর সাথে না পেরে শেষমেষ আবরার কে হাতিয়ার বানাতে চাইলো।
বেচারা আবরার সিংগেল মানুষ ওর হয়ে প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই।
আজ যদি মেহেকের মতো আবরারের ও একটা বউ থাকতো সে ও এমন প্রতিবাদ করতো।
আরহাম আর আবরাজের কথাটা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।
মেহেক আর রুশা দৌড়ে গিয়ে একসাথে লাথি মারলো রেশমার বুকে।
তখনি পাশ থেকে আসিফের উদ্দেশ্য আরহাম বলল,
আরহাম _____ তা আসিফ শেখ কোনো ভাবে কি তুমি এদের ২জনকে WW খেলায় নিয়ে যেতে পারবে।
শুনেছি সামনের ম্যাচটি জাপানে হবে।
আমি চাই ওরা অংশগ্রহণ করুক।
আরহামের মুখে এমন কথা শুনে আসিফ বলল,
আসিফ ______ আসিফ শেখ না আসিফ মির্জা হবে।
আর আমার জানা মতে চৌধুরী বাড়ির মেয়েরা বাহিরে মারামারি করে না।
আসিফের মুখে এমন কথা শুনে আরহাম ওহহ বলে মুখটা ছোট করলো (বুঝালো সে কষ্ট পেয়েছে) ঠিক তখনি উৎফুল্ল হয়ে বলল,
আরহাম ______ তুমি ঠিক বলেছ চৌধুরী বাড়ির মেয়েরা মারামারি না করলেও শেখ বাড়ির মেয়েরা তো ঠিকই করতে পারবে। মেহেক করতে না পারলেও তো রুশা পারবে আমরা না হয় রুশার ফাইটিং ই দেখবো।
আসিফ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে, আরহাম তাকে খোঁচা দিয়ে কথা বলতেছে।
তাই সে আর কোনো প্রতি উত্তর করলো না।
ঠিক তখনি রেহেনা চৌধুরী আরহাম আর আবরাজের কান টেনে ধরে বলল,
মা _____ তোরা যদি আর একবার ওদের উস্কে দিস তাহলে তোদের একদিন কি আমার একদিন।
যা মেহেক কে শান্ত কর।
মায়ের কথা শুনে আবরাজ চলে গেলো মেহেকের কাছে গিয়ে মেহেক কে জড়িয়ে ধরলো।
এটা যেন যাদুর মতো কাজ করলো।
আবরাজ জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে মেহেক যেন শান্ত হয়ে গেলো।
আবরাজ মেহেকের উদ্দেশ্যে বলল,
আবরাজ _____ বউ শান্ত হও। আর মারতে হবে না। আমাকে তোমার কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
আমি শুধু তোমারই।
মেহেক ও আদুরে বাচ্চার মতো আবরাজ কে জড়িয়ে ধরে রাখলো।
রেহেনা চৌধুরী মহাসিন সিকদারের উদ্দেশ্যে বলল,
মা ______ আপতত রেশমাকে নিয়ে রুমে যান। রাফি যা তো গিয়ে ডাক্তার ডেকে আন। আর হ্যা এই বিষয়ে এখন আর কোনো কথা হবে না। এই বিষয়ে যা কথা হওয়ার সব দুপুরে হবে।
রাফি চলে গেলো ডাক্তার ডাকতে।
বাকিরাও নিজ নিজ রুমে চলে গেলো।
অপরদিকে,
বস লোকটি আমজাদ শেখকে কল দিয়েছে,
বস _____আমজাদ ঐদিকের কি অবস্থা তুমি কি কিছু জানতে পেরেছো?
আমজাদ ____ বস ঐ দিকে সব স্বাভাবিক রয়েছে। চৌধুরী বাড়ির সবাই আয়মান চৌধুরীর কবর জিয়ারত করতে গিয়েছে। তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
বস _______ ঠিক আছে।
কথাটি বলে বস লোকটি কল কেটে দিল কিন্তু বস লোকটি স্বাভাবিক হতে পারল না।
তার কেন যেন মনে হচ্ছে তার এতদিনে গড়া সাম্রাজ্য ধ্বংস হতে চলেছে।
সে কোন কিছু ভাবতে পারতেছে না।
সে কিভাবে কি করবে? সে কিভাবে তার সাম্রাজ্য রক্ষা করবে? এভাবেই কি তার সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে?
তার এতদিনের পরিশ্রম কি এভাবে জলে মিশে যাবে?
এসব ভাবতে ভাবতে এসে তার মাথা চেপে ধরলো।
অন্যদিকে,
চৌধুরী বাড়ী এবং মির্জা বাড়ির সবাই আয়মান চৌধুরীর কবর জিয়ারত করে গ্রাম ঘুরতে বের হলো।
সীমান্ত এলাকার গ্রাম হওয়ায় গ্রামটি অনেক সুন্দর।
সবুজে ঘেরা একটি গ্রাম গ্রামের পরিবেশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
চৌধুরী বাড়ি এবং মির্জা বাড়ির সকলে মুগ্ধ হয়ে গ্রামটি ঘুরে দেখতেছে।
ঠিক তখনই আবরাজের ফোনটি বেজে উঠলো,
আবরাজ পকেট থেকে ফোনটি বের করে দেখলো ডেবিড কল করেছে,
সবার থেকে একটু দূরে গিয়ে কলটি রিসিভ করলো,
আবরাজ _____ হ্যাঁ ডেবিড বল কোন কিছু জানতে পেরেছো?
ডেভিড ____ জি বস আপনার কথা মতো আমরা ওকে নির্যাতন করি তখন জানতে পারি আজ নাকি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দিয়ে মাছের ট্রলারে করে রাশিয়ান অস্ত্র ঢুকবে বাংলাদেশে।
আবরাজ _____ গুড জব ডেভিড।
আমাদের লোক পাঠিয়ে দাও। যে করেই হোক ঐসব অস্ত্র আমার চাই। সাথে ট্রলারে থাকা সকল লোককে। বুঝতে পেরেছো।
ডেভিড _____ জি স্যার। কাজ হয়ে যাবে।
আবরাজ কল কেটে দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো মেহেক তার দিকেই এগিয়ে আসছে।
মেহেক দৌড়ে এসে আবরাজের হাত মুঠোবন্দি করে আবরাজের উদ্দেশ্যে বলল,
মেহেক ______প্লিজ আজকে আমরা সবাই মিলে পিকনিক করতে চাই।
আপনি প্লিজ নিষেধ করবেন না ( আদুরে স্বরে বলল)
আবরাজ কি তার বউ এর এত আদুরে স্বরে বলা আবদার ফেলতে পারে,
আবরাজ ____ ঠিক আছে।
মেহেক _____ অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আর হ্যা আরহাম ভাই আর আপনি ভুলেও আজকে মির্জা বাড়ির কাউকে খোঁচা দিয়ে কিছু বলবেন না।
আবরাজ মাথা ঝাকিয়ে সন্মতি দিলো।
আবরাজে সন্মতি পেতেই মেহেক চারিপাশে তাকিয়ে আবরাজের গালে একটা চুমু খেয়ে দিলো দৌড়।
মেহেকের দেওয়া চুমু খেয়ে আবরাজ যেন ফ্রিজ হয়ে গেলো।
নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে মেহেকের চুমু দেওয়া জায়গাই হাত রেখে মুচকি হাসি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।
সকাল ৯টা।
বাড়ির সকলে প্লান করতেছে কীভাবে তারা আজকে পিকনিক করবে। মেনুতে কি কি থাকবে? কে কোন কাজ করবে? কে বাজার করবে?
এসব নিয়ে যখন কথা বলতেছিলো তখন সিডি দিয়ে নামলো আবরাজ আর আরহাম।
তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা কোথাও যাবে।
ওদের দিকে তাকিয়ে মেহেক ভ্রু কুঁচকে বলল,
মেহেক _____ তোমাদের না বললাম আজ আমরা পিকনিক করবো। তারপরও তোমরা ২জন কোথায় যাচ্ছো?
আবরাজ ______ আমাদের একটা ইম্পটেন্ট কাজ আছে। আমাদের যেতে হবে।
তবে চিন্তা নেই আমরা দ্রুতই ফিরবো।
রাফি চল ( শেষের কথাটি রাফি কে উদ্দেশ্য করে বলল)
আবরাজের কথা শুনে রাফি যেই উঠতে যাবে তখনই মেহেক তাকে আটকে দিলো আর আবরাজের উদ্দেশ্যে বলল,
মেহেক ____ আপনারা যাচ্ছেন যান তবে রাফি ভাইয়া কে কেন টানতেছেন? রাফি ভাইয়া কোথাও যাবে না রাফি ভাইয়া আমাদের সাথেই থাকবে তার অনেক কাজ আছে।
অতঃপর আবরাজের আর কি করার আছে আবরাজ আর আরহাম যেই বেরিয়ে যাবে তাদের সঙ্গে আবরার ও চলে গেল।
আবরার কে চলে যেতে দেখে রুশা তপ্ত শ্বাস ফেললো, আর আবরারের যাওয়ার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকলো।
চৌধুরী বাড়ির তিন ছেলে বসে আছে একটা অন্ধকার রুমে আবরাজের হাতে সিজার ব্লেড সিজার ব্লেড দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তেছে আর সামনে চেয়ারে হাত-পা বেঁধে পড়ে আছে এনএসআইয়ের এডিজি শাকিল।
আবরাজ _____ বল তুই আয়মান চৌধুরী সাথে কেন বেইমানি করলি?
শাকিল _____ আমি বলবো না। তোরা যা পারিস কর আমি কোন কিছু বলবো না। আমি জানি তোরা আমাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারবে না আমাদের বস আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।
শাকিল এর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবরাজ যেন মজা পেল,
আবরাজ _______ তো আর দেরি কিসের তোর বসকে এখনই ফোন দে।
এখনই তাকে আসতে বল।
আমরাও দেখতে চাই তোর বসকে।
তোর বসকে জানার জন্যই তো এত আয়োজন।
আবরাজের মুখ থেকে এমন কথা শুনে শাকিল যেন একটু ভড়কে গেল পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলতে লাগলো,
শাকিল _____ তুই আমাদের বসের কিছুই করতে পারবি না তার পরিচয় জানতে পারবি না কিন্তু আমাদের বস ঠিকই তোদেরকে চিনে নেবে। তোদেরকে শেষ করে দেবে আমার বস
শাকিল এর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আবরাজ হিংস্র হয়ে উঠল,
হাতে থাকা সিজার ব্লেড দিয়ে একের পর এক পোছ মারতে থাকল আর বলতে থাকলো তুই কেন আয়মান চৌধুরীর সাথে বেইমানি করেছিস?
শাকিল আর নিজেকে আটকাতে পারল না। সে বুঝে গেছে আবরাজ কে উত্তর না দিলে সে তাকে শেষ করে ফেলবে। তাই আর ভনিতা না করে উত্তর দিল,
শাকিল ______ আমি জেনে গিয়েছিলাম ও আমাদের বসকে নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করতেছে। তাই আমি ওর সাথে মিল দি ই ওর বিশ্বাস অর্জন করি ওরে ভরসা যোগায় যে আমরা একসাথে এই অপরাধীদের শাস্তি দেবো।
এরপর ওর থেকে সকল প্রমাণ নিয়ে আমি আমার বসকে দিয়ে দিই। কিন্তু আয়মান চৌধুরী ছিল অনেক চালাক।
ও আরেক কপি প্রমাণ রেখে দিয়েছিলো।
আবরাজ হুংকার ছেড়ে বলল,
আবরাজ ______ আয়মান চৌধুরীকে কে খুন করেছে আমি জানতে চাই?
শাকিল ______ আমি বেশি কিছু জানি না তবে এতটুকু জানি তাকে শুধু একজন না অনেকগুলো রাঘব বোয়াল মিলে একত্রিত হয়ে খুন করেছে।
কারণ সে তাদের অনেক ক্ষতি করেছে।
আবরাজ _____ বল তারা কে কে ছিলো?
আবরাজের এই প্রশ্নের শাকিল চুপ মেরে গেল।
তার মুখ দিয়ে আর কোনো উত্তর আসত ছিল না শাকিলকে চুপ থাকতে দেখে আবরাজ যেই আবারও সিজার ব্লেড চালাতে যাবে তখনই শাকিল বলে উঠলো,
শাকিল ______ বলতেছি বলতেছি প্লিজ মারিস না।
আবরাজ _____ বল কে কে মেরেছে?
শাকিল ______………
মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১০
তাহলে কি আয়মান চৌধুরীর মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন হবে? রাঘব বোয়ালগুলো কে কে? তারা কি অনেক ক্ষমতাশালী? তাদের কি শেষ করতে পারবে আবরাজরা নাকি তারাই শেষ হয়ে যাবে?
