মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১৫

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১৫
সৌরভ চৌধুরী

চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে।সবার চোখ রাফা চৌধুরীর দিকে নিবদ্ধ।সবার মনে হাজারো প্রশ্ন,
তবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবে কে?
আবরাজ,আরহাম নাকি আবরার।
৩ ভাই তো চুপ করে বসে আছে।
তাদের মুখে কোনো কথা নেই?
জারিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার ছোট চাচির দিকে।
ও ভাবতেছে ওর ছোট চাচি কেন এখানে?
তাও চৌধুরী বাড়ির ৩ ছেলে তাকে শক্ত করে ধরে আছে।
সবার ভাবনার মধ্যেই আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলল,

আবরাজ ___ আমরা মা,বাবা আর ফুপির সাথে একা কথা বলতে চাই।
তোমরা আমার সাথে আমার আর মেহেকের রুমে আসো।
কথাটি বলেই আবরাজ,আরহাম,আবরার রাফা চৌধুরী কে সাথে নিয়ে ঐ রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
তাদের যাওয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে সবাই।
আয়ান চৌধুরী আর কোনো কিছু না ভেবে রেহেনা চৌধুরী এবং আছিয়া চৌধুরী কে ইশারা করলো যাওয়ার জন্য।
চৌধুরী বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা বসে রুমের ভেতরে প্রবেশ করতেই আবরার দরজা আটকে দিলো।
আবরাজ _____ বাবা- মা, ফুপি তোমাদের এখন যে কথা বলবো। তোমরা মন দিয়ে শুনবে।
যদি মানতে না পারো, তাহলে সরাসরি বলবে।
বাবা _____ কি এমন কথা বলবে যে এত ফর্মালিটি পূরণ করতেছো?
আবরাজ একটু চুপ থাকলো,
এরপর বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবরাজ ____ তোমরা এই ভদ্র মহিলা কে চেনো? (রাফাকে দেখিয়ে বলল)
মা ______ হ্যা উনি তো জারিনের চাচি। তবে আমরা ২/১ বার তাকে দেখেছি। উনি আমাদের সামনে বেশী আসতো না।
আবরাজ ____ তোমরা জানো ওনার আরো একটা পরিচয় আছে?
আছিয়া ____ কি পরিচয়!!
আবরাজ ___ আচ্ছা বাবা তোমরা কি ৩ ভাই বোনই। তোমাদের বাবা কি মনে করতো তার ৩ সন্তানই।
আবরাজের কথা বলা শেষ হতেই আয়ান চৌধুরী আর রেহেনা চৌধুরীর চোখ ছলছল করে উঠলো,
তরা কীভাবে ভুলে ঐ মিষ্টি মেয়েটির কথা,

ছোট্ট ছোট্ট হাত।সে হাত ধরেই আয়ান চোধুরী আর রেহেনা চৌধুরী তাকে পুরো চৌধুরী বাড়ি ঘুরাতো,
হয়তো বেশী দিন তাকে কাছে পায় নি তাতে কি ঐ অল্প কয়েকদিনেই তো সে তাদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলো।
সে এখন কোথায়? ঐ যে বাবা ছোট চাচ্চুর সাথে লন্ডন পাঠিয়ে দিলো।
এরপর এত করে বললাম বাবা রাইফা কই, রাইফাকে দেশে আনো।
বাবা বার বার বলতো, ও এই দেশে নিরাপদ না, ও যেখানে আছে ঐখানেই ভালো থাকবে।
তারা দুজনই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আয়ান চৌধুরী ভাঙ্গা গলায় বলল,
বাবা ____ না, আমাদের আরেকটি বোন আছে।
কিন্তু সে এখন কোথায় আমরা জানি না। সে আমাদের রক্তের না হলেও সে আমাদের আত্মার। কিভাবে তাকে ভুলি?
আরহাম রাগী গলায় বলল,

আরহাম __ তাকে না ভুললে এতদিন খোঁজ নাও নি কেন?
বাবা _____ তোদের দাদু বলেছিলো ওর খোঁজ যদি কোনো ভাবে শত্রুরা জানতে পারে। ওকে মেরে ফেলবে। তাই বাবা আমাদের কখনো বলেনি রাইফা কোথায়? যেন ওর শত্রুরা আমাদের ধরলেও কোনো খোঁজ না পায়।
আমিও আমার ছোট্ট বোনটির নিরাপত্তার কথা ভেবে বুকে পাথর চাপা দিয়ে থাকতাম।
তাদের কথার মাঝেই বিচক্ষণ রেহেনা চৌধুরী যা বুঝার বুঝে গিয়েছে,
উনি ধীর পায়ে রাফা চৌধুরীর কাছে এসে দাড়ালো,
রাফা চৌধুরীকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে, রাফার কনিষ্ঠ আঙ্গুল ধরলো,
দেখলো রাইফার মতো রাফার ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল ছোট।
রেহেনা চৌধুরী তার ভাবনা সঠিক বুঝতে পেরেই।
জড়িয়ে ধরলো রাফা কে।
কাঁদতে কাঁদতে বলল,

মা ____ রাইফা! রাইফারে তুই এতদিন কোথায় ছিলি? আমি তোকে কত মিস করেছি। দেখ আমার কাছে কেউ ছিলো না, আমাকে ভাবি মা ডাকার কেউ ছিলো না, না ছিলিস তুই, না ছিলো আছিয়া, আয়মান।
এদিকে দেখ আয়মান তো আজ আমাদের মাঝেই নেই।
রাফা চৌধুরী কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আরো ২জন তাকে জড়িয়ে ধরলো, তাকিয়ে দেখলো আয়ান চৌধুরী আর আছিয়া চৌধুরী।
আছিয়াকে দেখে রাফা চৌধুরী একটু হাসলো।
তার ভাই আর ভাবি মা কে সে প্রত্যেকদিনই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো কিন্তু তার এই ছোট্ট বোনটিকে সে দেখতে পারে নি।
সে যে কয়দিন এই বাড়িতে থাকতো।

আছিয়া আদুরে বিড়ালছানার মতো তার সাথে থাকতো, তাকে সঙ্গ দিতো।
সে তো মনস্থির করেছিলো, তার আদুরে বোনটা যদি সুখে না থাকে, তাহলে ঐ আসাদ শেখকে নিজ হাতে জবাই করবে।
অনেক বছর পর কাছের মানুষদের পেয়ে রাফা চৌধুরী ও আবেগপ্রবণ হয়ে গেলো।তারা একসাথে কান্না কাটি করলো। নিজেদের মনে জমানো কথাগুলো বলল।
একসময় রেহেনা চৌধুরী বলল,

মা _____ রাইফা তুই এদেশে কবে এসেছিস? আর তুই কেন আজাদ শেখ কে বিয়ে করেছিস? এদেশে আসার পর ও তুই কেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করিস নি?
আয়ান চৌধুরীর মনেও এই প্রশ্ন জন্ম নিয়েছিলো, সে ও প্রশ্নটি করবে ভেবেছিলো তার আগেই রেহেনা চৌধুরী প্রশ্নটি করলো।
রাইফা একটু চুপ থাকলো এরপর বলল,
রাইফা _____ চাচ্চু আমাকে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে লেখাপড়া করাই। আমি বড় হতে লাগলাম। আমার বয়স যখন ১৬ তখন আমি লন্ডনে সুনামের সাথে আমার ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
এর মধ্যে চাচ্চু দেশে চলে এলো, কিছুদিন পর খবর পেলাম বাবা কে খুন করা হয়েছে?
আমি দেশে আসতে চাইলাম, চাচ্চু নিষেধ করলো বলল, এই সময় দেশে আসা ঠিক হবে না।
আমি নিজেকে সামলে নিলাম, চাচ্চু আমাকে কথা দিয়েছে বাবার খুনিদের শাস্তি দিবে।
আমার সাথে আয়মানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয় চাচ্চু।
ঐদিকে আয়মানকেও প্রস্তুত করতে থাকে।

এভাবে চলতে থাকে দিন।চাচ্চুর প্রমাণ পায় এর পেছনে শেখ পরিবার জড়িত।
এছাড়াও আরো রাঘব বোয়াল আছে।
এর কিছুদিন পর চাচ্চুকে ও মেরে ফেলা হয়। আমিও নিজেকে সামলাতে চেয়ে ও সামলাতে পারতেছিলাম, সে সময় আয়মান আমাকে বুঝাই।
আয়মান বড় হতে থাকে, তখন আমি লন্ডনের টপ বিজনেসওম্যান ” RC কোম্পানির মালিক”।
আয়মানকে লন্ডনে আনতে চাইলাম ও বলল NSI এ যোগ দিবে।আমাদের শত্রুদের শেষ করবে।
আয়মান NSI এ যোগ দিলো, আমি জানতাম চাচ্চু কোনো সাধারণ মানুষ ছিলো না, চাচ্চু ছিলো আন্ডার ওয়াল্ডের মাফিয়া কিং।

আমি চাচ্চুর গ্যাং কে টিকিয়ে রাখলাম,টাকা ডোনেট করতাম। আমি জানতাম কেউ আসবে, এই শত্রুদের শেষ করতে, তার প্রয়োজন হবে ক্ষমতা। তাই আমি তার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার জন্য স্যাডো গ্যাং কে বড় করতে লাগলাম।
চলে গেলো অনেক বছর,
আগমন ঘটলো আবরাজের।আমি আবরাজকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। আবরাজ আমার সোনা টা, আমার মরুভূমিময় জীবনের একটু পানি হয়ে আসলো।
আবরাজকে বুঝে দিলাম স্যাডো গ্যাং এর দায়িত্ব,
আবরাজ তার নেতৃত্ব গুনে হয়ে উঠলো পুরো ওয়ার্ল্ডের মাফিয়া সম্রাট।
এর মধ্যে খবর পেলাম আয়মান কে ও মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।
প্রতিশোধ নিতে চলে এলাম বাংলাদেশে।

আবরাজ আগেই আরহাম আর আবরার কে আমার পরিচয় দিয়েছিলো। আমি দেশের মাটিতে পা রাখতেই আরহাম আর আবরার আমাকে সিক্রেট ভাবে নিয়ে এলো আরহামের সাম্রাজ্য SK গ্যাং এর পাতালপুরীতে।
আমি আমার প্ল্যান ওদের বুঝিয়ে দিলাম।
প্ল্যান অনুযায়ী আজাদ কে বিয়ে করলাম তবে আমি যে আজাদ কে বিয়ে করবো এটা ওদের ৩ ভাইকে জানাই নি।কারণ আমি জানতাম ওরা যদি জানতো আমাকে এই কাজ করতে দিতো না।
তবে ওরা জানার পর আমার সাথে একটু রাগ অভিমান করেছিলো।
তবে আমি ওদের বুঝাতে পেরেছিলাম, আমাদের পরিবারের ক্ষতি হওয়া থেকে আটকানোর জন্য ঐ বাড়িতে একজনের থাকা দরকার।

ঐভাবেই প্ল্যান অনুযায়ী সব হলো। আবরাজ দেশে এলো ওর রাজনীতি করতে চাইলো, তোমরা নিষেধ করলে। আমি নির্বাচন করতে বললাম, টাকা দিয়ে, সুপারিশ করে, ওকে মন্ত্রী বানালাম।
এভাবেই চলতে থাকলো দিন। এর ভেতর ওরা ঘৃণিত প্ল্যান করলো জারিন কে ব্যাবহার করে।
জারিন সত্যি আরহামকে ভালোবাসতো।
এভাবে তো জারিনকে আরহাম বিয়ে করবে না, তাই তোমাদের হুমকি দিয়ে বিয়ে করাতে বলল, ওদের প্ল্যান ছিলো আরহাম তাতেও রাজি হবে না যখন, তখন ওরা খারাপ ভিডিও এডিট করে মিডিয়ায় প্রচার করবে।
যাতে চৌধুরী বাড়ির সন্মান নষ্ট হয় আর জারিন ও চৌধুরী বাড়ির বউ হয়। কারণ ওদের জানার দরকার ছিলো ৩ ভাই এর রহস্য।

আমি আরহামকে বলি, জারিনকে বিয়ে করতে। আরহাম ও রাজি হয়।আরহামের রাজি হওয়াই ওদের প্ল্যান নষ্ট হয়।
তারপর সব প্ল্যান অনুযায়ী চলে আর আজ সবগুলো আমাদের খাঁচায় বন্দি তবে মাথাটাকে এখনো বন্দি করতে পারি নি।
রাফা চৌধুরীর কথা শেষ হতেই রেহেনা চৌধুরী অবাক হয়ে বলল,
মা ___ তুই কেন এসব করতে গেলি? তুই বিয়েটা করেই মোটেও ঠিক করিস নি? ঐ জানোয়ারের সাথে তোর জীবন জুড়ে তের জীবন তো নষ্ট হয়ে গেলো।
রাফা ____ ভাবি মা আমার জীবন কেন নষ্ট হবে। বরং আমি খুশী। আমি তোমাদের সাথে থাকবো। আমার চৌধুরী বাড়িতে আমি আবারো মন খুলে বিচরণ করতে পারবো।
রাফার কথা শুনে সবাই মুচকি হাসি দিলো।
আবরার গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আবরার দরজা খুলে দিতেই বাকি সদস্যরা হুমরি খেয়ে পরলো।
ওদের দিকে আবরাজ তির্জক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।
আবরাজ বুঝে গিয়েছে এরা সবাই এতক্ষণ দরজায় কান পেতে ছিলো।
আবরাজ কে এমন ভাবে তাকাতে দেখে মেহেক শুকনো ঢোক গিলে বলল,

মেহেক ____ না মানে আসলে……
মেহেকের কথা শেষ হতেই রাফা বলল,
রাফা _____ মামুনি ওকে দেখে ভয় পেতে হবে না। তোমাদের ফুপি তোমাদের পাশে আছে।
ফুপি, খালা মনি কে জড়িয়ে ধরবে না মেহেক, আরিশা,রুশা।
রাফা চৌধুরীর মুখে ফুপি,খালামনি শুনে জারিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। নিশব্দে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আরহাম জারিনকে বের হতে দেখে বাঁকা হাসি দিলো।
অন্যদিকে,
রেহেনা চৌধুরীর ইশারা পেতেই ওরা ৩ বোন গিয়ে জড়িয়ে ধরলো রাফা চৌধুরী কে।
রাফা চৌধুরী ও ভাতিজি,ভাগনিকে কাছে পেয়ে কান্না করে দিলো। এই কান্না দুঃখের না সুখের।
অপরদিকে,

জারিন চলে গেলো সাদে। সাদে গিয়ে এরিন কে কল দিলো।
এরিন কে বারবার কল দিলেও এরিন কল ধরলো না। শেষমেষ মনস্থির করলো তার মা কে কল দিবে।
তার মায়ের সাথে সম্পর্ক তেমন একটা ভালো না। তাকে কোনো দিন ও মায়ের প্রাপ্য সন্মান দেয় নি জারিন, এরিন। বাবা চাচাদের আশকারায় উশৃংখল জীবন যাপন করেছে। আজ সেসব মনে পরতেই অপরাধবোধ ঘিরে ধরলো তাকে।
নিজেকে স্বাভাবিক করে কল দিলো মায়ের নাম্বারে,

জারিন _____ হ্যালো মা।
জারিনের মা __ এতগুলো বছর পর মনে হলো তোমার ও মা আছে।
জারিন _____ (নিশ্চুপ থাকলো)
জারিনের মা _____ বলো কি বলতে চাও
জারিন ____ ছোট চাচির সাথে চৌধুরী বাড়ির সম্পর্ক কি?
জারিনের মা ____ তোমার ছোট চাচি হলো আয়ান চোধুরী আর আয়মান চৌধুরীর বোন। এডাপ্টের বোন। তবে রক্তের থেকে কোনো অংশে কম না।
আয়ান চৌধুরী আত্মা ছিলো রাইফা আর আছিয়া।
জারিন ______ তাহলে চাচ্চু কেন তাকে বিয়ে করলো?
জারিনের মামা ____ ভুল বললে তোমার চাচ্চু না রাইফাই তোমার চাচ্চুকে বিয়ে করেছে। প্রতিশোধ নিতে।
জারিন ______ মানে!!

এরপর জারিনের মা তাকে সব বলল।সব শুনে জারিন চুপ থাকলো।সে জানতো তার বাবা চাচা ধ্বংস হবে, এত তারাতারি হবে এটা ভাবতেও পারে নি। তবে ছোট চাচি যেমন সাদাসিধে দেখাতো সে আসলে তা না,সে ছিলো মাস্টার মাইন্ড গেমার।
জারিন ____ বাবা, চাচ্চুদের কি নিয়ে গেছে ওরা।
জারিনের মা ____ হুম। তারা আর ফিরবে না।
তাদের ওরা শেষ করে দিবে।
জারিন _____ ঠিক আছে।
কথাটি বলেই কল কেটে দিলো।
সে চুপচাপ দূরে দাড়িয়ে থাকা বটগাছের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

তার বাবা চাচাদের জন্য সে কষ্ট পাচ্ছে না, সে কষ্ট পাচ্ছে মেহেক, আরিশা,রুশার হাসিমাখা মুখ দেখে।
ওরা কত হাসিখুশী সুখী জীবন যাপন করতেছে, অথচ মেহেক এক সময় কতো অত্যাচার সহ্য করেছে।
এসব সুখের মূল রেহেনা চৌধুরী। সে শক্ত হাতে সব সামলিয়েছে। সে যেমন ছেলে মেয়েদের কাছে নরম মনে মানুষ, তেমনি শত্রুর সামনে শক্ত খোলসে ঘেরা গোলকধাঁধা।
তার ও তো এরকম একজন মা থাকা উচিত ছিলে। হয়তো তার মা তেমনি হতে চেয়েছিলো। তারা হতে দেয় নি। তার মা তো তাদের সৎ পথে চলতে বলতো? অন্যায়, ভুলগুলো দেখিয়ে দিতো। কই তখন তো তারা শুনতো না।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের পরিবারের ওপর ঘৃণা বাড়লো।

অন্যদিকে,
রাফা সম্পর্কে সব কথা রেহেনা চৌধুরী সবাইকে বলল।
অনেক বেলা হয়ে যাওয়াই চৌধুরী বাড়ির মেয়েরা সবাই চলে গেলো রান্নাঘরে আর ছেলেরা গেলো ফ্রেস হতে।
রেহেনা চোধুরী,আছিয়া,রাফা রান্না করতেছে আর রাবেয়া সিকদার তাদের সাহায্য করতেছে।
তাদের ননদ – ভাবির সম্পর্কে দেখে রাবেয়া সিকদার মুগ্ধ।কই সে তো মেহেরুনের সাথে এমন ব্যাবহার করতে পারে নি, তার ভাবিরাও তার সাথে এমন ব্যাবহার করে নি।

অথচ, সবার থেকে আলাদা এই রেহেনা চৌধুরী। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে, নিজে লেখাপড়া করেছে ননদ,দেবরকে মানুষ করেছে, নিজের ছেলে মেয়েদের বড় করেছে। এই মানুষটা কি দিয়ে তেরি? এত ভালোও মানুষ হয়। তবে এটা সত্যি উনি সবার জন্য নরম মনের মানুষ না, উনি যেমন নরম, প্রয়োজনে তার অধিক কঠোর।
অন্যদিকে,

অন্ধকার রুমের সকল জিনিসপত্র ওলট পালট করতেছে একজন অজানা ব্যক্তি।
চিন্তাই তার মাথা কাজ যেন কাজ করতেছে না। চৌধুরী বাড়ির তিন ছেলে তার সকল পরিকল্পনা নষ্ট করে দিয়েছে।
সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
তার পালানোর সকল রাস্তায় প্রায় বন্ধ।
একে একে তার সকল লোক গুম হয়ে গেছে। তারা কোথায় তার খোঁজ তার কাছে নেই ?সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
ঠিক তখনই তার একজন চেলা রুমে প্রবেশ করল,

লোকটি_____বস আমরা যদি এই দেশে থাকি তাহলে খুব শীঘ্রই আপনি ধরা পড়বেন যেভাবেই হোক আমাদের দ্রুত এদেশ ত্যাগ করতে হবে।
অজানা ব্যক্তি_____ আমি কিভাবে যাব বল আমার সারা জীবনের গড়ে তোলায় সাম্রাজ্য ওই দুই টাকার ফকিন্নিরা ধ্বংস করে দিল।
লোকটি____ বস আপনি একটা প্রবাদ শুনেননি “লাখ টাকার বাগান খায় এক টাকার ছাগলে”
লোকটির মুখে এমন কথা শুনে বস লোকটি রেগে গেল ,রেগে লোকটির কলার টিপে ধরল।
অজানা ব্যক্তি_____ আমার সামনে ওই জানোয়ারদের সুনাম করবি না। তাহলে আমি তোকে শেষ করে দেব।
আর হ্যাঁ আমার সকল কিছু গুছিয়ে নেই আজ রাতেই আমি হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করব।
লোকটি______ ঠিক আছে বস।
কথাটি বলেই লোককে অন্ধকার রুম থেকে বের হতে নিয়েও পিছন ফিরে তাকালে একবার ,একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে রুম টি ত্যাগ করল।
অপরদিকে,

আবরাজ বসে আছে তার ফুপি রাফা চৌধুরীর কোলে মাথা দিয়ে।
সেদিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেক, আরিশ, রুশা, আবরার, আরহাম।
ঠিক তখনই আবরাজের ফোনে একটা মেসেজ আসলো,
আবরাজ ফোনটি হাতে নিয়ে দেখতে পেল তার গুপ্তচরের মেসেজ,
গুপ্তচর_____ বস মেজর জেনারেল , আইজিপি সহ বাকিদের টর্চার করে যার নাম পাওয়া গেছে,
সে আজ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতের প্রবেশ করবে।
আবরাজ ছোট্ট করে মেসেজ দিল,
আবরাজ___ পাখি যখন নিজ ইচ্ছায় খাঁচায় বন্দী হতে চাচ্ছে তাহলে আর কি করার ।
ধরে রাখো আজ দিনটাই তার জন্য মুক্ত আকাশে বিচরণ করার শেষ দিন।
আবরাজ রাফা চৌধুরীর কোল থেকে উঠে আরহাম এবং আবরার কে ইশারা করল ছাদে যাওয়ার জন্য।
আবরাজ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে তার প
ফুপিকে কিছু একটা ইশারা করল,

আবরাজের ইশারা পেতেই রাফা চৌধুরী রহস্যময় হাসি দিল।
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আবরাজ,আরহাম, আবরার।
তাদের তিন ভাইয়ের মুখে রহস্যময় হাসি।
তবে আজকের হাসিটা অন্যদিনের হাসির থেকেও ভয়ঙ্কর।
আজ হয়তো অনেক ভয়ঙ্কর কিছু হতে চলেছে।
হয়তো আজ সকল প্রতিশোধ পূর্ণ হতে চলেছে।
কি হতে চলেছে তা শুধু তারা তিন ভাই জানে।
আবরাজ_____ রাত ৯ টায় মেসেজ দিলে তোরা সবাই রেডি হয়ে থাকবি।
আর হ্যাঁ স্যাডো গ্যাং এর লোকজন, এসকে গ্যাং এর লোকজন যেন পুরো হিলি বান্দর ঘিরে রাখে।
আরহাম____ ঠিক আছে।
চৌধুরী বাড়ির সবাই বসে আছে ড্রয়িং রুমে নাস্তার টেবিলে।
সবার এখনো সকালের নাস্তা করা হয়নি।
তাই সবাই সকালে নাস্তা করতে বসেছে।
নাস্তা করতে করতে রাফা চৌধুরী বলল,

রাফা____ আবরাজ আমি তো এখন লন্ডন ফিরতে চাচ্ছি না। আমি বাকিটা জীবন এখানেই থাকতে চাই চৌধুরী বাড়ির সবার সাথে থাকতে চাই।
তুই আমার কোম্পানিটার দায়িত্ব নিয়ে নে।
আবরাজ ______ দেখো ফুপি তুমি এতদিন ওই বাড়িতে ছিলে তাই আমি দেখেছি আমাকে এখন একটু শান্তি দাও আমি আর এসব ব্যবসার ভিতরে নেই এগুলো আমার জাস্ট প্যারা লাগে।
রাফা_____ প্যারা লাগে বললে হবে না, তোকে দায়িত্ব নিতে হবে। আর হ্যাঁ রাফি তুই বিয়ে শেষ হলেই লন্ডন চলে যাবি।
রাফি আমতা আমতা করে বলল,
রাফি______ কিন্তু আন্টি তোমাদের বউমা তো……….
রাফা_____ আমি সব জানি তুই কি ঘটিয়ে এসেছিস। আর হ্যাঁ এটাই কিন্তু লাস্ট বার আমি কিন্তু আর এসব শুনবো না। তুই যদি আবারও এ কাজ করিস তাহলে জাস্ট রামিসাকে বলবো তোরে ছেড়ে দিতে ,আমি ওকে তোর চেয়ে ও ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিব।
রাফা চৌধুরীর মুখে এমন কথা শুনে রাফির মুখটা চুপসে গেল,

রাফি____ ঠিক আছে।
রাফা_____ আর হ্যাঁ কাল ভোরে এয়ারপোর্টে চলে যাবি রামিসা বাংলাদেশে আসতেছে।
রাফি____ ঠিক আছে।
এবার রাফা চৌধুরি রেহেনা চৌধুরী এবং আয়ান চৌধুরী উদ্দেশ্যে বলল,
রাফা____ ভাইয়া আর ভাবি মা আমি একটা কথা ভাবতেছি।
রেহেনা চৌধুরী এবং আয়ান চৌধুরী রাফার দিকে তাকালো,
মা_____ বল রাইফা কি বলতে চাস?
রাফা________ আমি চাই আবরাজ আর মেহেকের বিয়ে আবারও দিতে। এক কাজ করলে হয় না, রেশমা ঈশানের সাথে আবরাজ আর মেহেকের বিয়ে হোক।
পরে না হয় ঢাকায় ফিরে বড় করে রিসেপশন করা যাবে যেখানে এমপি মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজনেসম্যানরা থাকলো।

রাফার কথায় চৌধুরী বাড়ির সবাই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
আর মেহেক লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো।
আবরাজ সে তো পারে না লুঙ্গি ডান্স দিতে।
তবে এখানে ছেলেপক্ষ এবং মেয়ে পক্ষ আলাদা থাকবে,
ভাইজান আর ভাবি মা তোমরা দুজন কে কোন পক্ষ হবে বলো,
এর মধ্যে আরিশা বলে উঠলো,

আরিশা__ না না না এরকম করে আমরা ভাগ করে নিব না। এখানে যা হবে টস করে হবে।
আরিশা র কথাই সবাই সম্মতি দিল।
ঠিক হলো আগামীকাল সন্ধ্যাবেলায় কে কোন পক্ষ হবে তা ঠিক করা হবে।
দেখতে দেখতে রাত নয়টা বেজে গেল।
চৌধুরী বাড়ি তিন ছেলে মিশনের জন্য রেডি হয়ে গেল।
এর মধ্যে তাদের লোকজন খবর দিয়েছে দেশদ্রোহী টি তাদের নজরে এসেছে।
সে তাদের নক দর্পণে আছে।

আবরাজ হুকুম দিয়েছে যেন তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাতালপুরীতে।
এর মধ্যে সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাতালপুরীতে।
আবরাজরা ড্রয়িং রুমে আসতে ই রাফা চৌধুরী এবং রাফিকে দেখা গেল।
আবরাজ মুচকি হেসে যেই বের হতে যাবে বাড়ি থেকে তখনই রেহেনা চৌধুরী পেছন থেকে ডেকে উঠলো,
মা___ তোদের আমি কি বলেছিলাম? যারা আমার পরিবারের এই অবস্থা করেছে আমি তাদের নিজ হাতে শাস্তি দেব?
আর তোরা আমাকে না নিয়ে চলে যাচ্ছিস?
আবরাজ মায়ের মুখে এমন কথা শুনে মায়ের দিকে তাকালো এরপর বলল,
আবরাজ______ মা তুমি পবিত্র আমরা চাইনা তোমার হাত ওই পাপিষ্ট দের রক্তে অপবিত্র হোক।
রেহেনা চৌধুরী ছেলের কথায় যেন বিরক্ত হলো,
আরহাম কে উদ্দেশ্য করে বলল,

মা____ ঠিক আছে তোমাদের কথা যদি এটাই হয়। তাহলে আমি নিজ হাতে ওদের কিছু করবোনা তবে আমি নিজ চোখে ওদের ধ্বংস দেখতে চাই। তবুও তোমরা আমাকে নিয়ে চলো।
বাধ্য হয়ে আবরাজ আরহাম রা রেহেনা চৌধুরীকে সাথে নিলো।
রেহেনা চৌধুরি অবাক হয়ে সবকিছু দেখতেছে।
এক গভীর জঙ্গলে মাটির নিচে ট্রানেল বানিয়ে তার ছেলেরা পাতালপুরি তৈরি করেছে।
চারিদিকে কি অন্ধকার, বিদঘুটে গন্ধ, ভয়ংকর পরিবেশ।
চারিদিকে ভয়ংকর অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো লোক।
রেহেনা চৌধুরী সহ বাকিরা প্রবেশ করল একটা গোপন রুমে।
রেহেনা চৌধুরী দেখতে পেল রুমটা অন্ধকার।
আবরাজ লাইট জ্বালালো।
রেহেনা চৌধুরী দেখতে পেল সামনে চেয়ারে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের।
এরা এক সময় ছিল দাপুটে নেতা কেউ দাপটে অফিসার।
আবরাজ বলে উঠলো,

আবরাজ____ কিরে শিশির কাদের । তুই কি ভেবেছিলি আমরা তোকে চিনতে পারিনি? তুই ভুল ভেবেছিস।
আমরা প্লান করেছিলাম তোকে তোর করা ভুলেই শেষ করব।
শিশির কাদের_____ ভুল করেছিস ভুল তোরা কি ভেবেছিস আমাকে শেষ করলে সব খেলা শেষ তুই ভুলে যাস না আমার পরিচয়।
আবরাজ ____ ও আচ্ছা তোর পরিচয় যেন কি! ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, জনতা দলের যুগ্ম মহাসচিব শিশির কাদের খান ওরফে অরূপ দাস।
তুই কি জানিস এখন ব্রেকিং নিউজ কি হচ্ছে?
শিশির কাদের অবাক হয়ে আবরাজ দিকে তাকানো।
আর ভাবতে লাগলো, আবরাজ কিভাবে তার আসল নাম জানতে পারল।
কে এই আবরাজ? সে কি শুধু মন্ত্রী নাকি অন্য কিছু ? একজন মন্ত্রী হয়ে তো তার এত কিছু জানার কথা না এটা তো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানে না।
ও কিভাবে জানলো?
অবরাজ উচ্চশব্দে হেসে উঠলো,
আর বলতে লাগলো,

আবরাজ_____ কিরে ভাবছিস তো আমি কি করে জানলাম তোর আসল নাম অরূপ দাস।
শুধু এটা না তোর সকল তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। তোর ছেলে আর তোর আসল বউ যেন কোথায়? ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, দিল্লির DLF One Midtown তাই না তুই কি বলিস ওদেরও কি শেষ করে দেবো।
শিশির কাদের ওরফে অরূপ দাস হুংকার ছেড়ে বলল,
শিশির কাদের _____ দেখ ওদের কোন ক্ষতি করিস না। তোর যা করার আমার সাথে কর। আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করিস না ।
আবরাজ ভয়ংকর হাসি দিয়ে বলল,
আবরাজ _____ তুই আমার পরিবার কে তছনছ করে দিয়েছিস আমিও তোর পরিবারকে তছনছ করে দেব।
আর হ্যাঁ তাদের ছাড়ার তো কোন প্রশ্নই আসে না,
তোর ছেলে আর তোর বউ বাংলাদেশে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সাথে যোগাযোগ করে চট্টগ্রামকে আলাদা করতে চায় এজন্যই তো বাংলাদেশে rdx আর রাশিয়ান অস্ত্র এর চালান ঢুকিয়েছিস তাই না।
মেজর আশফিন ______ ভাই ওর পরিচয় কি? ওর বাড়ি দিল্লি মানে বুঝলাম না। আর ওর বউ তো আগেই মারা গেছে তাহলে দিল্লিতে বউ ছেলে আসলো কই থেকে?

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১৪

আবরাজ _____ ঠিক আছে বলতেছি শোন,
কে এই শিশির কাদের খান? কেন আবরাজ তাকে অরূপ নামে ডাকতেছে? তার বউ যদি আগেই মরে যায় তাহলে দিল্লিতে তারা কারা? এই শিশির কাদরের মধ্যে কি কোন রহস্য আছে?
কি হতে চলেছে পরবর্তীতে? ও কি ওর এজেন্ট?

মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here