মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১৭
সৌরভ চৌধুরী
আসাদ মির্জা গভীর চিন্তায় মগ্ন।
ছেলে, মেয়ে,স্ত্রী ছাড়া তার আর কেউ নেই। সে তার ছেলে, মেয়ে আর প্রিয়তমা স্ত্রীর চোখে তার জন্য ঘৃণা দেখতে পারবে না।
যেভাবেই হোক আজ চৌধুরী বাড়ির ৩ ছেলের সাথে কথা বলতে হবে।
কথাগুলো ভেবেই আসাদ মির্জা রুম থেকে বের হলো।
আসাদ মির্জা বের হতেই, আড়াল থেকে বের হয়ে এলো আসিফ মির্জা।
তার চোখে বাবার জন্য ঘৃণা।সে বুঝে গিয়েছে চৌধুরী পরিবার তাদের যতটুকু আপন করেছিলো তার বাবার এই অপকর্মের কথা শুনলে তারা আর তাদের বিশ্বাস করবে না।
মনে পরে গেলো কাল রাতে আরিশার বলা কথা গুলো।
ফ্লাশব্যাক,
কাল রাতে আসিফ আরিশা কে সাদে ঢেকেছিলো তার মনের কথা জানানোর জন্য,
আসিফ ____ আরিশা আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
আরিশা ____ বলুন কি কথা বলতে চান।
আসিফ ____ আমি তোমাকে যখন প্রথম দেখেছি তোমাকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
আমি যেখানে কোনো মেয়ের দিকে তাকায় নি সেই আমি প্রথম দেখায় তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিশা ____দেখুন আসিফ ভাই আপনাকে আমি ভাই বলে মেনে নিলেও কখনো বিয়ে করতে বা ভালোবাসতে পারবো না। কারণ আমি কখনো শেখ পরিবারের কাউকে বিশ্বাস করি না। আশা করি বিষয়টি এখানেই শেষ করবেন। এই কথাটি আর যেন কেউ না জানে।
কথাটি বলেই আরিশা গট গট পায়ে চলে গেলো।
আসিফ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আরিশার চলে যাওয়ার দিকে।
আরিশা দৃষ্টির অগোচরে চলে যেতেই আসিফ তাকিয়ে থাকলো দূর আকাশের ঐ চাঁদের দিকে।
বর্তমান,
আসিফ কাল রাতের ঘটনা গুলো ভেবেই নিজের ওপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
তাচ্ছিল্যের সাথে বললো, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক শেখ পরিবারের সন্তান হওয়া।
সবাই মিলে চলে গেলো দিনাজপুরের জনপ্রিয় লুৎফুন্নেসা শপিং মলে।
শপিং মলে গিয়ে সবাই নিজেদের মতো কেনাকাটা করতে লাগলো।
তবে আবরাজ, আরহাম,আবরারের কপালে চিন্তার ভাজ।
চারিদিকে ছদ্মবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে SK গ্যাং এবং স্যাডো গ্যাং সহ NSI, DGFI এর লোকজন।
কারণ গোপন সূত্রে খবর পেয়েছে RAW চিফ রবি সিনহা এবং সরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ RAW এর সকল এজেন্ট কে বলেছে যেভাবেই হোক RAW এর লিষ্ট সহ সকল বায়ো ডাটার ফাইল উদ্ধার করতে হবে।
আবরাজের ধারণা এই শপিং মলে আজ কিছু একটা হবে। RAW এ শপিং মলেই ছদ্মবেশে আছে। তাই এত সিকিউরিটি।
তবে আবরাজ এই সিকিউরিটি কথা কাউকে বলে নি। তবে রেহেনা চৌধুরী কিছু পরিচিত মুখ দেখতে পেয়েছে যারা সেদিন পাতালপুরীতে ছিলো।
ওদের দেখেই কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে।
উনি ও বুঝে গিয়েছে কিছু একটা হতে চলেছে।
উনি রাফা চৌধুরী কে ও লক্ষ্য করেছেন, একটু পর পর রাফা চৌধুরী কেমন যেন সতর্ক দৃষ্টিতে চারিপাশে দেখতেছে।
রেহেনা চৌধুরী মেয়েদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কাউকে নিজের থেকে দূরে যেতে দিচ্ছে না।
হঠাৎ আবরাজের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে,
হুইটেকার ___ বস RAW এর ইন্টেলিজেন্ট ডিপাটমেন্টের স্ট্যাফ অফিসারকে দেখা গিয়েছে আপনার থেকে ২০০ মিটার দূরে।
ম্যাসেজটি দেখে আবরাজের কপালের চিন্তার ভাজ আরো গাড় হলো।
পরিবারের নিরাপত্তার কথা তার মাথায় বার বার ঘুরতেছে।
এর ভেতরি একটা ফায়ার হলো।
পুরো শপিং মলে আতঙ্ক সৃষ্টি হলো।
আবরাজ ভাবতেও পারে নি এভাবে তারা হামলা করবে।
আবরাজের চিন্তা বেড়ে গেলো। এখন শুধু তার পরিবার না, শতশত নিরপরাধ মানুষ ও এখানে আটকে পরলো।
তারা যে পাশে রয়েছে তার বিপরীত পাশের সকল মানুষদের বন্দি করে ফেলেছে RAW এর সদস্যরা।
ঐদিকে হট্টগোল লেগে গেলো।সবার মনের ভেতর আতঙ্ক সৃষ্টি হলো।
এত অল্প সময়ে কি থেকে কি হয়ে গেলো।
আবরাজ দৌড়ে চলে গেলো ঐদিকে।
আবরাজ কে আটকানোর জন্য মেহেক যেতে নিলেই রাফা চৌধুরী আর রেহেনা চৌধুরী মেহেক কে আটকে দিলো।
রাফা __ মামুনি তুমি যদি এই পরিস্থিতিতে এরকম দূর্বল হও তাহলে শত্রুদের কাছে আবরাজ ও দূর্বল হয়ে যাবে। কারণ শত্রুরা সব সময় দূর্বল জায়গাতেই আঘাত করে।
এখন তুমি যত সাহসী হবে আবরাজ ও ততো সাহসী হবে।
এখন আবরাজ শুধু তোমার স্বামী না, আবরাজ একজন মন্ত্রী। তাই নিজের বা পরিবারের কথা রেখে, তাকে দেশের মানুষের কথা ও ভাবতে হবে।
রাফা চৌধুরীর এমন কথা শুনে মেহেক নিজেকে সামলে নিলো। সে চায় না শত্রুদের কাছে আবরাজের দূর্বলতা হতে। তাই সে নিজেকে শক্ত খোলসে ঢেকে নিলো।
অন্যদিকে,
আবরাজ ___ এই তোমরা কে? এসব কি? ওনাদের ছেড়ে দাও।
রিত্তিক ____ এই মন্ত্রী, এত নেকামি করতে হবে না। আমরা জানি তুই ভালো করেই জানিস আমরা কে এবং কি চাই?
আবরাজ ___ ও আচ্ছা তা না হয় বুঝলাম। তো এসবের মানে কি?
রিত্তিক ____ আমাদের ফাইল দিয়ে দে, আমরা এদের সবাইকে ছেড়ে দিবো।
আর তা না হলে……
রিত্তিকের কথায় আবরাজ বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলল,
আবরাজ ____ না হলে কি করবি
আবরাজের উল্টো প্রশ্নে রিত্তিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো, সে জানতো এই মন্ত্রী অন্যদের মতো না তাই বলে এতটা ঘাড়তেড়া।
রিত্তিক ____ না হলে সবগুলো কে শেষ করে দিবো।
রিত্তিকের কথায় চৌধুরী বাড়ির ৩ ছেলে হেসে উঠলো।
আবরাজ ___ তো শেষ কর দেখি।
তোরা কি ভেবেছিস আমি তোদের হুমকিতে ভয় পেয়ে যাবো।
রিত্তিক ____ আমরা তোকে এখানে হুমকি দিতে আসি নি।
আমাদের ফাইল দে না হলে সত্যিই সবাইকে শেষ করে ফেলবো।
আবরাজ ___ বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র বলিদান দেওয়াই যায় কি বলিস আবরার।
ভাইয়ের কথা শুনে আবরার হাসি দিয়ে বলল,
আবরার ___ অবশ্যই ভাইয়া। দেশের বুক থেকে RAW কে চিরতর বিদায় করতে যদি এই কয়টা জীবন যায় তাতেও শান্তি।
আবরাজ ___ তবে আমরা না হয় বলিদান দিলাম। তবে এরা কি বলিদান দিতে রাজি হবে ( RAW এর লোকদের উদ্দেশ্যে বলল)
আবরাজের মুখে এমন কথা শুনে RAW এর সকল লোকদের ঘাম ছুটে গেলো।আবরাজ এই কথা দ্বারা কি বুঝাতে চাইলো, তারা বুঝতে পারলো না,
আবরাজ __ তোরা কি ভাবলি তোরা এই প্লান করেছিস জেনেও আমি চুপচাপ বসে থাকবো।
তোদের সকল RAW এর এজেন্টসহ তোদের পরিবারের সকল লোক এখন আমাদের হাতে বন্দি।
রিত্তিক ___ আমরা বিশ্বাস করি না।
আবরাজ ___ প্রমাণ লাগবে নাকি তো কল লাগা তোর বউ আর ছেলেকে।
আবরাজ কথাটি বলতেছি রিত্তিক কল দিলো তার ছেলে আর বউকে কিন্তু তাদের ফোনে কল ঢুকতেছে না। দ্রুত লোকেশন ট্রাকারে গেলো,এ কি সেখানেও লোকেশন দেখাচ্ছে না।
এটা কীভাবে সম্ভব, এই ট্রাকার তাদের শরীরে কোথায় আছে এটা তো ওরাও জানে না। তাহলে ট্রাকার কেন কাজ করতেছে না।
রিত্তিক কে ঘামতে দেখে আবরাজ যেন মজা পেলো। আবরাজ উচ্চ শব্দে হেঁসে বলল,
আবরাজ ___ উফফফফ এত ঘামলে চলবে। তোর বউ আর বাচ্চাকে দেখতে চাস এই দেখ,
কথাটি বলেই আবরাজ তার ফোন বের করে একটা ভিডিও ক্লিপ চালু করলো,
সেখানে দেখা যাচ্ছে তার ছেলে আর বউ এর দিকে AK-47 পয়েন্ট করে রাখা হয়েছে, আর তারা চিৎকার করে কান্না করতেছে আর ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় করতেছে।
রিত্তিক ____ প্লিজ তুই ওদের ছেড়ে দে।তুই যা চাস তাই হবে।
আবরাজ __ কেন তা হবে কেন? তুই এখানের সবাই কে মারবি। আর আমার লোকরাও ঐখানে তোদের প্রত্যেকের পরিবারকে শেষ করবে।
হয়ে যাক দেশের জন্য সেক্রিফাইস।
RAW এর উপস্থিত সকল সদস্য নিজ নিজ পরিবারকে কল দিয়ে যখন পেলো না তখন তারা বুঝে গিয়েছে, আবরাজ যা বলছে সবই সত্যি। সবাই আবরাজের কাছে বন্দি।
আবরাজ RAW এর উদ্দেশ্যে বলল,
আবরাজ ____ তোরা সবাই NSI এবং DGFI এর লোকদের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ কর।
আবরাজ কথা বলার পর একপাশে দাড়িয়ে থাকলো। তার একপাশে দাড়িয়ে আছে আবরার, আরেকপাশে আরহাম।
RAW এর সকল লোক DGFI এবং NSI এর লোকদের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করলো।
তারা যখন সবাইকে নিয়ে যাবে।
ঠিক তখনি রুশা খেয়াল করলো,
সাধারণ মানুষদের মধ্যে বন্দি হয়ে থাকা একজন মানুষ কোমড় থেকে রিবালবার বের করে তাক করেছে চোধুরী বাড়ির ৩ ছেলের দিকে।
রুশা দৌড়ে গিয়ে ৩ ভাইকে সড়িয়ে দিতেই পর পর ৩টা গুলি এসে লাগে রুশার পেটে এবং হাতে।
গুলির শব্দ পেতেই সবাই চমকে উঠে।
স্যাডো গ্যাং আর SK গ্যাং এর সকল সদস্য যারা ছদ্মবেশে ছিলো তারা যেই দেখলো গুলি তাদের বসকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে, তারা সাথে সাথে রেগে একের পর এক গুলি ছুড়তে লাগলে।
কয়েক সেকেন্ডের ভেতর কয়েকশত গুলি এসে ঝাঝড়া করে দিলো ঐ লোকটির বুক।
ঐ লোকটি ছিলো RAW এর ফিল্ড অফিসার। যে ছদ্মবেশে ছিলো বাকি সদস্যদের কার্যক্রম নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য।
যখন দেখলো তাদের প্লান ফ্লপ হয়েছে আর সব হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে তখনি আবরাজ কে শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে লাগলো।তবে মাঝখান থেকে রুশা এসে গুলি খেলো আর আবরাজকে বাঁচিয়ে দিলো।
আবরার দ্রুত রুশা কে কোলে তুলে নিলো। ডেভিড দৌড়ে গিয়ে গাড়ি নিয়ে আসলো। আবরার রুশাকে নিয়ে পেছনে বসলো।আবরাজ সামনে বসলো ডেভিডের পাশে।
ডেভিড দ্রুত গাড়ি চালাতে লাগলো দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
আবরাজ পকেট থেকে ফোন বের করেই কল দিলো এলেক্সকে,
আবরাজ __ এলেক্স দ্রুত স্যাডো গ্যাং এর এয়ার এম্বুলেন্স হেলিকপ্টার রেডি করো।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েই আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।
আবরাজের কথা শেষ হতেই এলেক্স দৌড়ে চলে গেলো স্যাডো গ্যাং এর পাইলট কে সব রেডি করতে বলার জন্য।
সে দূরেই ছিলো।
এদিকে,
আরহাম সবাইকে সামলাতে লাগলো।
আছিয়া চৌধুরী তো পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছে। তার মেয়েকে সে অনেক ভালোবাসে। আসাদ মির্জা জড়বস্তুর মতো হয়ে গেছে।
আসিফ ধীর পায়ে এসে দাড়ালো আসাদ মির্জার সামনে,
আসিফ ____ কি আসাদ শেখ, শেখ বললাম কারণ কি জানেন ঐ যে শেখ রা কাউকে ভালোবাসতে পারে না, যেমন আপনিও পারেন নি, নিজের মেয়েকে ভালোবাসতে।দেখুন আপনার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করলো আমার ছোট্ট বোনটি।
আপনি খুশি হয়েছেন?
আসিফ মির্জা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলো।
আসিফের এমন কথা শুনে রেহেনা চৌধুরী এবং আছিয়া চৌধুরী অবাক হয়ে গেলো। আছিয়া চৌধুরীর কান্না ও থেমে গিয়েছে।
রেহেনা চৌধুরী একবার আরহাম এবং রাফার দিকে তাকালো দেখতে পেলো ওরা নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে আছে,
উনি বুঝে গিয়েছেন, আজ যা হয়েছে তার সাথে আসাদের সম্পর্ক আছে। আর তা রাফা এবং আরহাম ভালো করেই জানে।
আছিয়া ____ আসিফ তোর কথার অর্থ কি? আমাকে বুঝিয়ে বল? কোনো ভাবে কি আজকের ঘটনার পেছনে তোর বাবার হাত আছে?
আসিফ মায়ের কথার উত্তরে কিছু বলল না, সে চুপচাপ স্থান ত্যাগ করলো।
আছিয়া চৌধুরী ছেলের কাছে উত্তর না পেয়ে যেন রেগে গেলো, যেই আসাদ মির্জার কলার ধরতে যাবে তখনি রাফা এগিয়ে এসে আছিয়া কে শান্ত করলো বলল,
রাফা _____ দেখ আপাই তুই যদি এখন এসব নিয়ে সিনক্রিয়েট করিস তাহলে তোর মেয়ের সেবা করবে কে?
আমাদের এখন দ্রুত হসপিটালে যেতে হবে।
আছিয়া চৌধুরী শান্ত হলেও তার মনটা অশান্ত কারণ তার আদরের মেয়ে হসপিটালের বেডে মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়তেছে আর তার প্রশ্নে ছেলের চুপ থাকা।
সবাই যখন গিয়ে পৌছালো হসপিটালে তখন আবরাজ আবরাররা এয়ার এম্বুলেন্সে উঠতেছে।
তারা কোনো ভাবেই রুশা কে দেখতে পেলো না, এয়ার এম্বুলেন্স উড়াল দিলো আকাশে।
রাফা চৌধুরী পকেট থেকে ফোন বের করে রাফি কে কল দিলো,
রাফা চৌধুরী ____ রাফি দ্রুত গাড়ি নিয়ে আয়। আমাদের ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।
রাফি _____ ঠিক আছে।
অন্যদিকে,
ব্রেকিং নিউজ – তথ্য মন্ত্রী এবং সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত সরাষ্ট্রমন্ত্রী আবরাজ আয়ান চৌধুরীর ফুফাতো বোন রুশা মির্জা তার ভাইদের জীবন বাঁচাতে RAW এর গুলিতে জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
খবরটি ইন্টারন্যাশনাল সকল নিউজ পোর্টাল সহ সকল চ্যানেল নিউজ করতে লাগলো।
একটা দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কীভাবে অন্য একটি দেশে এরকম হামলা করে।
তাও একটি স্বাধীন দেশে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকল জায়গায় চলছে আলোচনা সমালোচনা।
ভারতের ওপর আসছে বৈদেশিক চাপ।
এদিকে,
আবরাজরা যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে পৌঁছালো তখন দেখতে পেলো প্রেস আর সংবাদিকে ভড়া।
তাই সিদ্ধান্ত হলো হেলিকপ্টার ছাদে ল্যান্ড করানো হবে।
হেলিকপ্টার ছাদে ল্যান্ড করানো হলেই সকল ডাক্তার ছুটে এলো, আর আসবেই না কে? তাদের সাথে যে দৌড়ে এসেছে সয়ং প্রধানমন্ত্রী খালেদা খানম।
প্রধানমন্ত্রীর কপালেও চিন্তার ভাজ।
ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে ডাক্তাররা এসে রুশা কে নিয়ে গেলো OT তে।
রুশার জন্য দেশের সবচেয়ে বড় ডক্টরদের আনা হয়েছে।
টানা ২ ঘন্টা অপারেশন করে।অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো ডক্টররা।
আবরার ____ ডক্টর রুশার এখন কি অবস্থা? ( উত্তেজিত কন্ঠে বলল)
ডক্টর ____ সে এখন ঠিক আছে।
তবে তাকে ২৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রাখা হবে।এর ভেতর কেউ তার সাথে দেখা করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী _____ ধন্যবাদ ডক্টর সানজিদ।
ডক্টর _____ ম্যাম ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন না প্লিজ
দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো কয়েক ঘন্টা। প্রধানমন্ত্রী চলে গিয়েছেন।এছাড়াও অনেক মন্ত্রী এসে কথা বলে গিয়েছেন।
অবশেষে হন্তদন্ত হয়ে কেবিনের সামনে এলো চৌধুরী পরিবার,মির্জা পরিবার,সিকদার পরিবার।
আছিয়া চৌধুরী দৌড়ে চলে এলো আবরাজের কাছে।
আবরাজ ____ ফুপি তুমি চিন্তা করো না। রুশা এখন ঠিক আছে।
আর কোনো বিপদ নেই।
আছিয়া _____ আমি জানি আমার আবরাজ, আবরার, আরহাম থাকতে আমার মেয়ের কোনো কিছু হবে না। আমি জানতে চাই এই ঘটনার সাথে কি তোর ফুপা জড়িত?
আমি শুধু এই প্রশ্নের উত্তর চায়।
আছিয়া চৌধুরীর কথা শুনে আবরাজ চুপ হয়ে গেলো। তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
আবরাজ চায় না তার ফুপিকে কষ্ট দিতে তাই সে এই চরম সত্যটা লুকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে এই সত্য লুকিয়ে রাখতে পারবে না।
আছিয়া ______ কি হলো আবরাজ তুই চুপ কেনো?
কথা বলছিস না কেন?
আছিয়া চৌধুরী কে হাইপার হতে দেখে রেহেনা চৌধুরী এগিয়ে এলো,
মা ______ আছিয়া তোকে ভাবি মা কী বলেছে, তুই কি ভাবি মা র কথা শুনবি না। এখানে এসব নিয়ে কোনো কথা হবে না। সব কথা বাসায় ফিরে হবে তাও রুশা সুস্থ হওয়ার পর।
রেহেনা চৌধুরীর এমন কথায় আছিয়া চৌধুরী চুপ হয়ে গেলো। তবে ধীর পায়ে গিয়ে দাড়ালো আসাদ মির্জার সামনে।বলল,
আছিয়া _______ শোনো আসাদ, যদি আমার ভাবনা সঠিক হয়, যে তুমি ও আমার পরিবারের ক্ষতি করতে চাইছো তাহলে মনে রেখো সেদিনই আমি ভুলে যাবো তোমার আমার ভালোবাসার কথা। আমি সেদিনই তোমাকে ডিভোর্স দিবো। আর হ্যা চিন্তা নেই, তুমি চাইলে তোমার ছেলে মেয়েদের তোমার সাথে নিয়ে যেতে পারবে আমি বাঁধা দিবো না।
কথাটি বলেই আছিয়া চৌধুরী চলে গেলো রেহেনা চৌধুরীর কাছে।
আছিয়া _____ ভাবি মা ছোট বেলার মতো আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে।আমার না অনেক কষ্ট হচ্ছে।
রেহেনা চৌধুরীরও কষ্ট হচ্ছে। তবে তিনি নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছেন। উনি যদি ভেঙ্গে পরে তাহলে কীভাবে হবে? সবাইকে তো তারই সামলাতে হবে। এখানে সবাই যে তার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
রেহেনা চৌধুরী আছিয়া চৌধুরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
আসিফ ধীর পায়ে গিয়ে দাড়ালো তার বাবার পাশে,
আসিফ __ কি আসাদ শেখ ঐদিকে তাকিয়ে দেখেন একজন মমতাময়ী মা কে, একজন আদর্শ মা,একজন আদর্শ স্ত্রী কে যে একাই এক হাতে পুরো চৌধুরী পরিবারকে সামলিয়েছে, তুমি সেই মানুষটিকে টার্গেট করার পরমর্শ দিয়েছিলো, ভাবতেও হাসি পাচ্ছে।
জানো কি আমার মা তোমার আমার চেয়ে ও ঐ মানুষটাকে বেশী ভালোবাসে। মা যখন জানতে পারবে তার ভাবি মা র ওপর হামলা এবং শপিং মলে যাওয়ার খবর RAW কে তুমি দিয়েছো তখন আমার মা তোমাকে কি করবে ভেবে দেখেছো।
আসাদ মির্জার বুকটা জ্বলতেছে, সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
ঠিক তখনি আসিফ আবারো বলল,
আসিফ ___ মা যে বলল না তুমি চাইলে আমরা তোমার সাথে যাবো।
তুমি কি জানো আমরা তোমাকে ঘৃণা করি। তোমার মুখটা দেখলেই আমার নিজের ওপর ঘৃণা হয়।আমি দোয়া করি তোমার মতো বাবা যেন আর কারো না হয়।
কথাটি বলেই আসিফ চলে গেলো।
আসিফের কথা শুনে আসাদ মির্জার বুকে ব্যাথা করতে লাগলো।
আসাদ মির্জার দিকে কারো ধ্যান নেই,
জারিন তার চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো তার চাচ্চু বুকে হাত দিয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে।
সে দৌড়ে চলে গেলো তার চাচ্চুর কাছে।
জারিন ___ চাচ্চু তোমার কি হয়েছে? কোথায় ব্যাথা করতেছে আমাকে বলো? অনেক কষ্ট হচ্ছে কি।
আসাদ মির্জা কিছু বলতে পারলো না, ব্যাথায় কাতরাতে লাগলো।
অসহ্য ব্যাথা হতে লাগলো।
অথচ তার ছেলে এবং প্রিয়তমা স্ত্রী এগিয়ে এলো না।
রাফা চৌধুরী এগিয়ে এলো।
অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো হ্যার্ট এটার্ক করেছে।
রাফা ____ আবরাজ দ্রুত ডাক্তারকে খবর দে।
আবরাজ ____ ডাক্তার এখনি চলে আসবে।
ঠিক তখনি ডাক্তার চলে এলো এবং তাকে ও নিয়ে চলে গেলো অন্য একটি অপারেশন থিয়েটারে।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাড়িয়ে আছে রাফা চৌধুরী এবং আবরাজ।
২ জনের মুখই গম্ভীর।
রাফা ____ আমি চাই না আমার আপাই কষ্ট পাক। ও আসাদকে অনেক ভালোবাসে।আমি ওর কষ্ট দেখতে পারবো না।
ওর এরকম পাথর হয়ে যাওয়া আমি মানতে পারতেছি না। ওর সাথে কোমল, নরম মনের মানুষই যায়,এরকম শক্ত পাথর আমার আপাইকে মানাই না আবরাজ।
আবরাজ ____ আমিও চাই না আমার ফুপি কষ্ট পাক। এখানে আমাদের কি করা আছে বলো ফুপি। আমরা আর কি করতে পারবো।
রাফা ___ কিন্তু একটা বিষয় আমি বুঝতেছি না।
আবরাজ _____ কোন বিষয়!
রাফা ______ আসিফ কীভাবে জানলো ওর বাবার বিষয়ে?
আবরাজ ____ সকালে ওর বাবা যখন আমার সাথে কথা বলতে এসেছিলো তখন আমি দেখেছি আসিফ লুকিয়ে আমাদের কথা শুনেছে।
রাফা ___ তারপরও একটা কিন্তু থেকে যায়!
আবরাজ ___ বিষয়টা আমিও ভাবতেছি। দেখা যাক কি হয়, তুমি এত চিন্তা করো না,আমরা আছি তো।
রাফা ___ ঠিক আছে।
ঠিক তখনি আসাদ মির্জা ওটি থেকে ডাক্তার বাহিরে বের হলো,
রাফা ____ ডাক্তার রোগির কি অবস্থা?
ডাক্তার ___ এটা মেজর এটার্ক। হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলো এবং তার মনে দাগ কেটেছে তা থেকেই এই মেজর এটার্ক হয়েছে।
রাফা ___ এখন সব ঠিক আছে তো!
ডাক্তার ___ এখন আউট অফ ডেন্জার।
দেখতে দেখতে চলে যায়, ২৪ ঘন্টা।
এখন আবরার বসে আছে রুশার বেডের সামনে।
রুশা তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে।
আবরারের মুখ গম্ভীর।রুশা বুঝতে পারলো না আবরার কি তার ওপর রেগে আছে?
আবরার __ তুমি কেন সামনে এলে?
রুশা ___ নিজ চোখে ভালোবাসার মানুষকে গুলি লাগবে এটা দেখার মতো শক্তি আমার ছিলো না।
আবরার ____ তাই সুপারহিরোইন হয়ে আমাদের বাঁচাতে এসেছিলে (বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলল)
রুশা ____ হয়তো আমার ভালোবাসা আপনার কাছে কোনো দাম নেই, তবে আমার কাছে তা অমূল্য।
আবরার ___ দেখো আমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী না।আমার ইচ্ছে ছিলো আমি মায়ের পছন্দে ঠিক আমার মায়ের মতো একজন মেয়েকে বিয়ে করবো যেন সব পরিস্থিতিতে সে আমাদের পরিবারকে আমার মায়ের মতো আগলে রাখতে পারে।
রুশা ____ আপনার কি আমাকে খারাপ মনে হয়?
আবরার ___ দেখো তুমি যথেষ্ট ভালো হলেও আমি শেখ পরিবারের কাউকে বিশ্বাস করি না।
আমার দেখা অনুযায়ী আজ পর্যন্ত শেখ বাড়ির কোনো ছেলে বা মেয়েকে আমি মানুষ হতে দেখি নি। সবগুলো একেকটা জানোয়ার হয়েছে।
রুশা ___ হয়তো। আমি যদি শেখ পরিবারের মেয়ে না হতাম তাহলে কত ভালে হতো। আমি আমার ভালোবাসাকে হারাতাম না।
ঠিক তখনি একজন বলে উঠলো,
তাতে কি তুই চৌধুরী বাড়িই বউ হবি, এটা আমি তোকে কথা দিলাম মা।
এমন কথা শুনে আবরার আর রুশা ২জনই অবাক হলো, অবাক হয়ে দরজায় তাকিয়ে দেখতে পেলো রেহেনা চৌধুরী দাড়িয়ে আছে।
রেহেনা চৌধুরী মৃদু হেসে বলল,
মা ___ স্যরি না চাইতেও ছেলে মেয়ের কিছু কথা শুনে ফেলেছি। তবে চিন্তা নেই আমি তোদের বেস্টফ্রেন্ডও।
তবে আবরার
আবরার ____ বলো মা।
মা ___ দেখ আবরার বংশ দিয়ে কখনো ভালো খারাপ হয় না। হয়তো শেখ পরিবারের সাথে আমাদের একটা খারাপ সম্পর্ক ছিলো। তবে তার মানে এই না যে শেখ পরিবারের সবাই খারাপ।
আমি চাই তুই রুশা কে মেনে নে।
রুশা সুস্থ হলে ২টা না একসাথে ৩টা বিয়ে হবে।
আবরার ____ কিন্তু মা।
মা ____ কোনো কিন্তু না। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।
আবরার ____ ঠিক আছে মা।
রুশা ছলছল চোখে তাকালো রেহেনা চৌধুরীর দিকে।
রেহেনা চৌধুরী তা দেখে বলল,
মা ____ আরে পাগলি মেয়ে কান্না করিস কেন? চৌধুরী বাড়ির বউ হতে গেলে কিন্তু অনেক শক্ত হৃদয়ের মেয়ে হতে হবে।এরকম কথায় কথায় কান্না করলে চলবে না।
রুশা মাথা নাড়িয়ে সন্মতি দিলো।
অপরদিকে,
আসাদ মির্জা জ্ঞান ফেরার পর থেকে কাউকে তার পাশে পায় নি। তার প্রিয়তমা স্ত্রী, সন্তান কেউ তার কাছে আসে নি। খোঁজ পর্যন্ত নেয় নি।
অথচ যাদের ক্ষতি করতে চাইলে তারা ঠিকি খোঁজ নিয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে অপরাধবোধে ভুগতে লাগলো আসাদ মির্জা।
আসাদ মির্জা কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। স্ত্রী সন্তান দের এই অবহেলা সে সহ্য করতে পারতেছে না।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১০ দিন।এই ১০ দিনে রুশা অনেকটা সুস্থ হয়ে গিয়েছে। আর আসাদ মির্জা সুস্থ হয়েই কোথায় যেন চলে গিয়েছে, তবে যাওয়ার আগে আবরাজ,আবরার, আরহামের সাথে একান্তে কথা বলেছে।
আসাদ মির্জার খোঁজ ও কেউ করে নি।
আসিফ,আছিয়া,রুশার এমন উদাসীন ভাব ভঙ্গি দেখে রেহেনা চৌধুরী রেগে আছে।
আসাদ মির্জা এতোদিন হলো নিরুদ্দেশ অথচ এদের কোনো ভাবান্তর নেই।
সবাই বসে আছে ড্রয়িংরুমে।
মা ____ তোদের ৩ ভাই এর সাথে আমার কথা আছে।
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আবরাজ, আবরার,আরহাম কপাল কুঁচকে তাকালো তার মায়ের দিকে।
ছেলেদের কপাল কুঁচকে থাকতে দেখে যেন তিনি বিরক্ত হন,
বিরক্ত হয়ে বলল,
মা ____ এতদিন হলো আসাদ নিরুদ্দেশ। অথচ কারো চিন্তা নেই বিষয়ে।
আমি জানি তোরা জানিস আসাদ কোথায় আছে।
আবরাজ ___ মা তুমি চিন্তা কইরো না, যা হচ্ছে ভালোর জন্যই হচ্ছে।
সব আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে।আমাদের ওপর ভরসা রাখো।
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে রেহেনা চৌধুরী ও চুপ হয়ে গেলো।
ঠিক তখনি আবরাজের ফোনে ম্যাসেজ এলো,
” কাজ হয়ে গেছে, ওরা আসছে, প্রস্তুত থাকো”
ম্যাসেজটি দেখে আবরাজ মুচকি হাসি দিলো
সাথে সাথে টেক্সট ফরওয়ার্ড করলো আবরার,আরহাম এবং রাফা চৌধুরী ফোনে।
একসাথে ৩জনের ফোনে ম্যাসেজ আসাই। সবাই তাদের দিকে তাকালো।
আবরার মুচকি হেসে বলল,
আবরার __ হয়তো সিম কোম্পানি থেকে ম্যাসেজ।
এই কথা বলেই আবরার ফোন বের করে ম্যাসেজ দেখে মুচকি হাসি দিলো।
দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল,
আবরাজ, আরহাম,আবরার দাড়িয়ে আছে জামতলীর সেই বাড়িতে।
তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে ছদ্মবেশে থাকা NSI এবং DGFI এর লোকেরা।
সবাইকে সাথে নিয়ে আজকের মিশন হবে।
কি মিশন হবে চলুন জেনে আসা যাক,
ফ্লাসব্যাক,
আসাদ মির্জা সুস্থ হতেই তার কেবিনে আবরাজ,আবরার,আরহাম কে ডেকে পাঠালো।
তারা তিন ভাই কেবিনে ঢুকতেই আসাদ মির্জা দরজা আটকে দিলো।
আসাদ ___ আমি তোমাদের কিছু বলতে চাই আশা করি মন দিয়ে শুনবে।
আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলল,
আবরাজ ___ জি বলুন কি বলতে চান। তবে দ্রুত বলুন আমাদের হাতে সময় নেই।
আসাদ মির্জা একটু চুপ থেকে বলল,
আসাদ __ RAW এর ডেপুটি ডিরেক্টর হরভাজান হঠাৎ করে কল দিয়ে তার পরিচয় দিলো।
RAW থেকে কল পেয়ে আমি তো অবাক হয়ে গেলাম।জাপানে আমার ব্যাবসার টাকার ঠিক মতো ট্যাক্স দেয় নি, এছাড়াও কিছু আইন ভঙ্গ করেছি যা ওরা কীভাবে যেন জেনে গিয়েছিলো।
ওরা আমাকে হুমকি দিতে লাগলো যদি আমি ওদের সহযোগীতা না করি তাহলে জাপান সরকারকে সব জানিয়ে দিবে, আর এটা যদি জাপান সরকার জানতে পারে তাহলে জেল জরিমানা সাথে আমার ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
এছাড়াও ওরা আমার ছেলে, মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
তার পরপরই ওরা আমাকে জানাই তোমরা আমার দুই ভাইকে খুন করেছো।
এটা শুনে আমি রেগে যায়। আর এই রাগটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।ওরা আমাকে আরো বিষিয়ে দেয়।আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠি।ওরা সেই সুযোগটাই নেয়।
ওরা আমার কাছে জানতে চায় তোমাদের দূর্বলতা কী?
আমি তখন বলি তোমাদের মা,
ওরা আমার কথা শুনে খুশি হয়। এবং আমাকে বলে পরবর্তী ওরা আবারো যোগাযোগ করবে।
তবে আমি জানতাম না এই কথাগুলো দরজার দাড়িয়ে আমার ছেলে আসিফ শুনতেছিলো।
যায় হোক, আমার কথা শুনে সেদিন রাতেই RAW এর সবচেয়ে ভয়ংকর ৩ জন অফিসার আসে তোমার মা কে কিডনাপ করে নিয়ে যেতে।
কি থেকে কি হয় শ্যামপুরে ঢোকার পরপরই হঠাৎ করে ওরা সবাই উধাও হয়ে যায়। আমি শুনেছি ওদের জিপিএস ট্রেকার ও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।
আবরাজ, আবরার,আরহাম আমাকে মাফ করে দাও। আমি সত্যি অনুতপ্ত। তবে আমি আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।
সবাই চুপ, আবরাজ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
আবরাজ ___ সত্যি বলছেন প্রায়শ্চিত্ত করতে চান
আসাদ ____ হ্যা সত্যি বলছি
আবরাজ ____ ঠিক আছে। তাহলে আপনাকে একটা সুযোগ দিবো।
আসাদ _____ সত্যি বলছো ( খুশি হয়ে বলল)
আবরাজ ____ এত খুশি হইয়েন না। তবে আমাদের জন্য একটা কাজ করতে হবে। তবে এই কাজে অনেক রিক্স থাকবে। হয়তো একটু ভুল করলে সয়ং মৃত্যু কে আলিঙ্গন করতে হবে।
আসাদ মির্জা চুপ হয়ে গেলো।
তবুও ধীর কন্ঠে বলল,
আসাদ _____ আমি রাজি। বলো কি করতে হবে?
আবরাজ _____ বাংলাদেশের ওদের যতলোক আছে। সবাইকে এক জায়গায় করতে বলবেন। এক জায়গায় করে ওদের জামতলীতে আমাদের গোপন আস্তানায় হামলা করতে বলবেন।
বলবেন যে আমি ওদের কলে কথা বলতে শুনেছি, ফাইলটা এখন জামতলীর আস্তানায় আছে।
অর্থাৎ আপনি যেভাবেই পারেন ওদের জামতলীতে আনবেন।
আসাদ মির্জা ভিতু কন্ঠে বলল,
আসাদ _____ কিন্তু ওরা তো অনেক ভয়ংকর। তোমরা পারবে তো।
আরহাম এতক্ষণ চুপ থাকলে ও এবার মুখ খুললো,
আরহাম ____ তা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। আপনাকে যা করতে বলা হলো তাই করেন।
আসাদ _____ ঠিক আছে। কাজ হয়ে যাবে। আর হ্যা আমি এই কাজটা করবো শেখ বাড়িতে গিয়ে। কারণ আমি জানতে পেরেছি আমার নাম্বার ওদের এরিন দিয়েছে।
আবরার _____ এবার ঐ এরিন কে আমি নিজ হাতে ইনকাউন্টার করবো।
আবরাজ ______ আহহ আবরার মাথা ঠান্ডা কর।
আসাদ ___ তাহলে তোমরা থাকো। আমি যাচ্ছি।
আবরাজ ____ ঠিক আছে।
বর্তমান,
আসাদ মির্জা তার দেওয়া কথা রেখেছে। আজ RAW এর সকল এজেন্ট একজায়গায় হবে এবং এক দল ফোর্স ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে।
তাদের ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য।
চৌধুরী বাড়ির ৩ ছেলে সেই অনুযায়ী প্লান তৈরি করে রাখলো
পুরো শ্যামপুরো আর জামতলী ঘিরে ফেলা হলো স্যাডো গ্যাং আর SK গ্যাং এর সদস্য দিয়ে।
বড় বড় গাছের মাথায় স্নাইপার নিয়ে বসে আছে স্যাডো গ্যাং এর সব ভয়ংকর স্নাইপার সুটে স্পেশালিষ্টরা।
NSI আর DGFI ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছে গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরে।
গ্রামে বসবাস করা সকল লোকদের আগেই গোপনে সড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আজ এই গ্রামে RAW এর মাটি দিবে।
RAW এর বাংলাদেশের মিশন কে মাটিতে পুতে ফেলবে।
হিলি স্থল বন্দর দিয়ে RAW এর ভারতীয় টিমটি বাংলাদেশে প্রবেশ করতেই খবর চলে আসে আবরাজের কাছে।
সেই অনুযায়ী সবাই সতর্ক হয়ে যায় এবং নিজ নিজ পজিশন নেয়।
বাংলাদেশ স্টেশন এবং ভারত থেকে আসা এজেন্টরা এক সঙ্গে মিলিত হয় কিন্তু একসঙ্গে প্রবেশ না করে ২ ভাগ হয়ে প্রবেশ করে ২দিক থেকে।
আবরাজের কাছে খবর চলে যায়। আবরাজ মুচকি হাসি দেয়।আবরাজ তো তাই চেয়েছিলো।
২ রাস্তা মিলিত হয়েছে একটি মাঠের মধ্যে।
চৌধুরী বাড়ির তিন ছেলে ঐখানে চেয়ার পেতে বসে আপন মনে গান গাইতে লাগলো।
RAW এর সকল এজেন্ট এসে চারিদিক দিয়ে তাদের ঘিরে নিলো।
তবে এই ৩ জনকে এভাবে বসে থাকতে দেখে তাদের কপালে চিন্তার ভাজ পরলো।
তাহলে কি তারা কোনো বিপদে পরলো? তাদের ইনফরমেশন কি তাহলে লিক হয়ে গিয়েছে?
তাহলে কি হবে এখন?
রিশাব ___ এই হাত উপরে তোলো।কোনো চালাকি চলবে না। তোমাদের চারিদিক থেকে RAW ঘিরে নিয়েছে।
আরহাম বলল,
আরহাম ___ ওহহহ তাই। তা এখন আমাদের কি করা উচিত।
আবরার বলল,
আবরার ____ ভাইয়া আমার না মরার আগে তোমার কোমড় দোলানো খাইরোন সুন্দরী গানের নাচ দেখতে চাই।
আবরাজ মজা করে বলল,
আবরাজ ____তাহলে কি আর করার ভাইয়া আবরার কে নাচ টা দেখাও
৩ ভাই এর এরকম রসিকতা করতে দেখে তাদের কপালের ভাজ আরো দৃঢ় হলো।
রিসাব ______এই মন্ত্রী নিজেকে অনেক চালাক ভাবিস তাই না। ভাবছিস তোর এই রসিকতা শুনে আমরা ভয় পাবো।
ভুলে যাস না আমরা RAW আমাদের মনে ভয় বলতে কিছুই নেই, পুরোটাই কলিজা।
রিসাবের মুখ থেকে এমন কথা শুনে তারা ৩ ভাই হেঁসে উঠলো।
আবরাজ ____ ওহহ তাই। তা তোরা কি চাস শুনি?
রিসাব _____ আমরা ঐ ফাইলটা চাই। যে ফাইলটা আয়মান চৌধুরী তৈরি করেছিলো।
আবরাজ ___ আচ্ছা ঠিক আছে যা ফাইলটা তোদের দিবো। তবে একটা শর্তে।
রিসাব ____ শর্ত!!
আবরাজ ___ হ্যা শর্ত
রিসাব ____ কি সেই শর্ত
আবরাজ ____ তোদের সাথে আমরা একটা খেলা খেলবো। যে শেষ পর্যন্ত টিকবে। তাকেই আমরা ঐ ফাইলটা দিবো। তবে যার নাম আগে উঠবে সে আউট। রাজি থাকলে বল
রিসাব _____ রাজি।
রিসাবের উত্তর শুনে,
আবরাজ,আবরার,আরহাম রহস্যময় হাসি দিলো।
এরপর সামনে রাখা বোইয়াম থেকে ১টা কাগজের ভাজওয়ালা কাগজের টুকরা তুলল,
নাম বলল,
আবরাজ ___ হতিস কে?
তখনি একপাশ থেকে একজন বলল, আমি হতিস।
আমি হতিস বলতে দেড়ি স্নাইপারের শর্ট লাগতে দেড়ি হয় নি।
আকষ্মিক এরকম ঘটনায় সবাই হতভম্ব হয়ে হতিসের প্রাণহীন বডির দিকে তাকিয়ে আছে।
তখনি রিসাব বলল,
রিসাব ___ এই এটা কি করলি তুই, ওকে কে মেরে ফেললি?
আবরাজ ধীর, শান্ত কন্ঠে বলল,
আবরাজ ____ গেমের রুলস যা তাই তো করলাম। তোরে তো বলছিই যার নাম উঠবে সেই আউট।
রিসাব বলল,
রিসাব ____ তাই বলে একদম মেরে ফেলবি নাকি
আবরাজ ____ হ্যা মেরে ফেলবো।
কথাটি বলতে বলতেই আরেকটি কাগজের ভাজ খুলে আরেকটি নাম বলল,
সাথে সাথে সেও মাটিতে লুটিয়ে পরলো।
এভাবেই সবাইকে শেষ করলো। শেষে থাকলো রিসাব।
থাকলো বললে ভুল হবে ইচ্ছা করেই তাকে বাচিয়ে রেখেছে।
আবরাজ ____ আমার কথা অনুযায়ী যে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বেঁচে থাকবে তাকে ফাইলটি দিয়ে দিবো।
এই নে ফাইল ( কথাটি বলেই ফাইলটি ছুড়ে মারলো রিসাবের দিকে)
রিসাব ফাইল পেয়ে খুশী হয়ে গেলো।
ততক্ষণে আবরাজ, আবরার,আরহাম ঘুরে দাড়িয়েছে।
ওদের অন্যদিকে ফিরতে দেখেই
একটা গোপন রিভালবার বের করেই যেই গুলি করতে যাবে।।তখনি চারিপাশ থেকে সহস্র গুলি এসে ঝাঝড়া করে দিলো রিসাবের বুক।
রিসাবের সাথে সাথে বাংলাদেশের সকল RAW এর এজেন্টদের ও কবর হয়ে গেলো এই জামতলীর মাটিতে।
সকালবেলা,
মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১৬
ব্রেকিং নিউজ : আজ সকালে আমাদের হাতে পৌছে গেছে বাংলাদেশে ছদ্মবেশে থাকা সকল RAW এর এজেন্টদের বায়োডাটা। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এই তথ্যটি সংগ্রহ করেছিলো NSI এর চৌকস অফিসার আয়মান চৌধুরীর । যে ডকুমেন্টস সহ ফাইল বানানোর জন্য তাকে জীবন ও দিতে হয়।
তাহলে কি এবার চৌধুরী পরিবারে বিয়ে আমেজ লাগবে নাকি আবারো কালো ছায়া ঘনিয়ে আসবে? সত্যিই কি RAW এর সকল এজেন্ট শেষ?
