মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ২
সৌরভ চৌধুরী
আরহাম __ কি হলো চুপ করে আছিস কেন? বল চাচ্চু কে কে খুন করেছে আর কেন করেছে?
আবরাজ __ আমি এখনো তাদের খুঁজে পাইনি আমি দেশে ফেরার পরপরই যখন চাচ্চুর পরিবারে খোঁজ করি তখন কিছু বিষয়ে আমার খটকা লাগে। আমি আরো ঘাটাঘাটি করে জানতে পারি চাচ্চুর মৃত্যুটা স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না কিন্তু গ্রামের সকল মানুষকে দেখানো হয়েছে সাধারণ মৃত্যু।
আবরার __ কিন্তু ভাইয়া চাচ্চুকে খুন করে কার কি লাভ হবে।
আর চাচ্চুকে কেনই বাবা খুন করবে
আবরাজ__ চাচ্চুকে খুন করেও অনেকেই লাভ কারণ চাচ্চু কোন সাধারণ মানুষ ছিল না চাচ্চু ছিল এনএসআই এর সিক্রেট এজেন্ট।
আমরা যে এই কথাটি শোনার পরে অপারেশন থিয়েটারের সামনে চৌধুরী পরিবারের যত মানুষ ছিল সবাই চমকে উঠলো । এমনকি মেহেক নিজেও চমকে উঠলো। সে তো জানতো না তার বাবা একজন এনএসআই কর্মকর্তা।
মেহেক আবরাজের উদ্দেশ্যে বলল,
মেহেক __ মন্ত্রী সাহেব আপনি এসব কি বলছেন আমার বাবা কিভাবে এনএসআইয়ের সদস্য হবে আমার বাবা ছিল সাধারণ একজন সাংবাদিক। আপনার কথাও ভুল হচ্ছে সে কিভাবে এনএসআই সদস্য হয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবরাজ ___ না আমি ঠিকই বলছি চাচ্চু একজন এন এস আই সদস্য ছিল।
আরহাম __ কিন্তু তুই কিভাবে জানলি?
আবরাজ __ আমি যখন চাচ্চুর মৃত্যু নিয়ে ঘাটাঘাটি করি তখন কিছু বিষয় আমার সন্দেহ জাগে কেননা চাচ্চু যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে ছিল সেগুলো কোন সাংবাদিকের কাজ ছিল না।
আরহাম ___ চাচ্চু কি নিয়ে কাজ করতেছিল যে তার মনে হচ্ছে সেই কাজ সাংবাদিকের না।
আবরাজ ___ তোর মনে আছে আজ থেকে কয়েক বছর আগে ৫০০ জন মেয়েকে পাচার করা হচ্ছিল সে সময় গোয়েন্দা সংস্থার গোপন এজেন্ট AK তাদের বাঁচিয়ে নেয়।
তখনই পাশ থেকে আবরার বলে উঠলো,
আবরার __ হ্যাঁ আমার মনে আছে।
উনি তো খুব সাহসী একজন এজেন্ট ছিল। উনি তো অনেক বড় বড় অপারেশন করত কিন্তু উনি প্রকাশ্যে আসতেন না।
আবরাজ ___ হ্যাঁ উনি আর কেউ না উনি আমাদের চাচ্চু আয়মান চৌধুরী।
আবরাজের কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল কিন্তু আবরাজ আর আরহাম স্বাভাবিক রয়েছে।
আরহাম ___ তারমানে চাচ্চু সেদিন আমাদের সত্যি বলেছিল কিন্তু তুই আর আমি বিশ্বাস করিনি।
আবরাজ ___ হ্যাঁ সেদিন আমি বিশ্বাস না করলেও যখন দেশে এসে খোঁজ নিয়ে তখন এই AK নামটি বারবার আমার মাথায় ঘুরতে ছিল।
আবরার বলে উঠলো,
আবরার __ ভাইয়া চাচ্চু তোমাদের কি এমন বলেছিল যে তোমরা সেদিন বিশ্বাস করো নি।
আবরাজ ___ তা না হয় তোদের অজানাই থাক।
আরহাম ___ আমার মনে হচ্ছে এটা এমন এক ষড়যন্ত্র যা আজ থেকে না, বহু বছর ধরে আমাদের পরিবারের সাথে হচ্ছে, চাচ্চুর ঐ দিনের কথাগুলো মিলিয়ে নিলে বোঝা যাচ্ছে আমরা এক ধাঁধা র ভিতর রয়েছি।
আবরাজ ___ হ্যাঁ ভাইয়া। এই ধাঁধা এর উত্তর পেতে হলে আমাকে আবারো চাচ্চুর ঐ গ্রামে যেতে হবে।
আরহাম ____ এবার তুই একা না ,আমিও যাব তুই কেন এতদিন আমাকে এই কথা বলিস নি।
আবরাজ ____ ভাইয়া আমি চাইনা তোমরা এসবে জড়াও। আমি এমনিতেও রাজনীতি করি। আমার জীবন সব সময় ঝুঁকিতে থাকে। আমি চাইনা তোমাদের এসব কাজে জড়িয়ে তোমাদের জীবনও ঝুঁকিতে রাখি।
আরহাম ____ আবরাজ তুই ভুলে যাস না চাচ্চু শুধু তোর কাছের মানুষ ছিল না। আমারও সবচেয়ে কাছের মানুষ তিনি ছিলেন।
আমি আমার চাচ্চু হত্যার প্রতিশোধ নেব।
আবরার __ দেখো ভাইয়া…….
আবরার কে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে আরহাম বলল ,
আরহাম ____ চুপ থাক আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।
আরহাম কথা শেষ করে মেহেকের পাশে চেয়ারে বসে পড়লো। মেহেকের মাথায় হাত রেখে বলল,
আরহাম ___ বনু তুই চিন্তা করবি না চাচ্চু মেয়ে তো কি হয়েছে আমরা আছি ।
মেহেক কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
মেহেক ___ আমার বাবাকে কে খুন করল, আমার বাবা তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে ওরা কেন আমার বাবাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলো। মামি ঠিকই বলে আমি একটা অপয়া। আমি যে পরিবারে যাই সে পরিবারই শেষ করি।
মেহেকের মুখ থেকে এই কথা শুনে আরহাম অবাক হলো,
আরহাম ____ তোকে এসব বাজে কথা কে বলেছে? (রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে বলল)
আমাকে তার নাম বল আমি তাকে শেষ করে দেবো আমার বোনকে অপয়া বলা। আমিও তার জিহ্বা টেনে ছিড়ে ফেলবো।
আরহামের কথা শুনে মেহের তড়িঘড়ি করে তার চোখের পানি মুছে ফেললে এবং আরহামের উদ্দেশ্যে বলল,
মেহেক ___ ভাইয়া তুমি শান্ত হও ।আমাকে কেউ কিছু বলেনি ।তুমি প্লিজ শান্ত হও। আমি চাইনা এসব নিয়ে কোন ঝামেলা হোক
আরহাম ___ আপাতত আমি চুপ থাকছি কিন্তু তাকে আমি ছাড়বো না।
কথাটি বলে মেহেকের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবরাজের দিকে তাকালো দেখতে পেল আবরাজ গভীর চিন্তায় মগ্ন ওর এসবের কোন ধ্যান নেই
আরহাম উঠে গিয়ে আবরাজের সামনে দাঁড়ালো। ওকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
আরহাম _____ কি এত ভাবছিস?
আরহামের ধাক্কায় আবরাজের স্বাভাবিক হলো,
আবরাজ ____ ভাবছি চাচ্চু আর ভালো মার বিয়ে নিয়ে আবার আবার হঠাৎ করেই বাবা চাচ্চুকে বের করে দিল তারপর থেকে চাচ্চু উধাও।
আমরা চাচ্চু কে তো কম খুজিনি কিন্তু তাকে আমরা পাইনি।
আবার চাচ্চু বলেছিল ভালো মার পরিবারে কেউ নেই তিনি এতিম , তাহলে হঠাৎ করে মেহেকের এই মামা আমি কোথা থেকে এলো। চাচ্চুর মৃত্যুর পর এই মামা মামীর আগমন। কয়েক বছর পর হঠাৎ করে ভালো মার মৃত্যু।
আমি কিছু বুঝতেছিনা । আমি যতবার এই ধাঁধার উত্তর হতে যাচ্ছি ততবারই মনে হচ্ছে আমি কোন গোলক ধাঁধায় আটকে যাচ্ছি। (মাথা চেপে ধরে চেয়ারে বসে পড়লো।)
আবরার আর আরিশা অবাক হয়ে তার ভাইদের পাগলামি দেখতে লাগলো।
তারা বুঝতে পারল তাদের চাচ্চু তার ভাইদের কাছে কতটা প্রিয় ছিল। কতটা প্রিয় হলে মানুষ এতটা পাগলামো করে।
আবরাজের অবস্থা দেখে মেহেক দৌড়ে গিয়ে আবরাজের পাশে চেয়ারে বসলো এবং উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
মেহেক ____ আপনার কি বেশি শরীর খারাপ করতেছে ।আপনার কি মাথা ব্যথা করতেছে। আমি মাথাটা টিপে দি।
আবরাজ __ আরে আরে আমি ঠিক আছি এত ব্যস্ত হতে হবে না। তুমি অসুস্থ তুমি চুপচাপ এখানে বসে থাকো।
তখনই একজন নার্স এসে খবর দিল রেহেনা চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে । জ্ঞান ফেরা মাত্রই তিনি কান্নাকাটি শুরু করেছেন। তাকে সামলানো যাচ্ছে না।
মেহেক দৌড়ে চলে গেল তার বড় মায়ের কাছে। মেঘের পিছন পিছন চৌধুরী বাড়ির সবাই গেল,
চৌধুরী বাড়ির সবাই কেবিনে ঢুকে দেখতে পেল রেহেনা চৌধুরী মেহেককে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতেছে।
আর মেহেক তার বড় মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এই দৃশ্যটি চৌধুরী বাড়ির সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো।
আরিশা ____ ভাইয়া তাহলে চৌধুরী বাড়ির জন্য যোগ্য বউ বাছাই করেছে।
আমি জানতাম আমার ভাই কোনো জেনোতেনো মেয়ে কে বিয়ে করবে না।
আমার ভাই যেমন, তার বউ ও তেমনি লক্ষী।
আরিশা কথাটি শুনে আরহাম বলল,
আরহাম ___ মেহেকের সাথে আবরার বিয়ে মেহেকের জন্মের আগেই ভালো মা ঠিক করে রেখেছিলো।
ভালো মায়ের আদরের ছিলো আবরার। তাই আবরার কে তিনি সব সময় জামাই বাবা বলে ডাকতো।
আবরার ___ কিহহহহহহহহহহ (চিৎকার করে বলল)
আরহামের কথা শুনে আরিশা আর আবরার চিল্লিয়ে উঠলো,
আরিশা ____ এজন্য তুমি এরিন আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে কোনো মন্তব্য করো নি।
হ্যা ও বলো নি না ও বলো নি।
আরহাম ___ হুম। আমার বিশ্বাস ছিলো আবরাজ তার ভালো মা কে দেওয়া কথা কখনো ভুলে যাবে না।
আবরার ___ ওয়েট ওয়েট তার মানে তুমি চাচ্চুর বিয়ের আগে থেকে চাচি আম্মুকে চিনতা।
আরহাম মৃদ্যু হেসে উত্তর দিলো,
আরহাম ___ শুধু আমি না আবরাজ ও চিনতো। ইনফ্যাক্ট ভালো মা কে তো পছন্দ আবরাজই করেছিলো চাচ্চুর জন্য।
আরহামের কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো,
রেহেনা চৌধুরী আরহাম, আবরার এবং আরিশার কথাগুলো শুনছিলো।
তাদের কথা শুনে তার কান্না থেমে গেছে। উনিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরহাম আর আবরাজের দিকে,
উনি অবাকের স্বরে বললেন,
মা ____ তার মানে তোরা দুজনই আগে থেকে জানতিস।
আবরাজ _____ হ্যা জানতাম।
মা ______ তাহলে আমাদের কেন বলিস নি।
আবরাজ ______ চাচ্চু আমাদের থেকে ওয়াদা নিয়েছিলো বলেছিলো, যেই পরিস্থিতিই আসুক তোরা দুজন এসব বিষয়ে বাড়ির কাউকে কিছু বলবি না।
আবরাজের কথা শুনে রেহেনা চৌধুরী চুপ করে আছেন। রেহেনা চৌধুরীর কেবিন জুড়ে পিনপতন নিরবতা চলতেছে।
তখনি একজন নার্স এসে বলল আয়ান চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে,
আয়ান চৌধুরীর জ্ঞান ফেরার কথা শুনে সবাই আয়ান চৌধুরীর কেবিনের দিকে গেলো সাথে রেহেনা চৌধুরীও গেলেন, রেহেনা চৌধুরীকে ধরে ধরে মেহেক নিয়ে যাচ্ছে।
আর রেহেনা চৌধুরী মেহেকের হাত শক্ত করে ধরে আছে যেন মেহেকের হাত ছেড়ে দিলেই উনি মেহেক কে হারিয়ে ফেলবে।
সবাই চলে গেলো ও স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকলো আরহাম।
আরহাম এক পলক জারিন এবং এরিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো
তাদের দেখে মনে হচ্ছে চৌধুরী বাড়ির যাই কিছু হয়ে যাক তাদের কিছু যায় আসে না।
তাদের দিক থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলতে থাকলো,
আরহাম _____ যদি তোদের কারণে আমার বনু কষ্ট পায়, বা ওর কোনো ক্ষতি হয় আই সোয়ার তোদের আমি ছাড়বো না। এতদিন চুপ ছিলাম তার মানে এই না যে আমি এখনো চুপ থাকবো।
এতদিন চুপ ছিলাম কারণ বাবা চাচ্চুকে বের করে দিয়েছিলো এটার পর থেকে চৌধুরী বাড়ির সবার থেকে আমার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এখন যেহেতু আমার চাচ্চুর শেষ চিহ্ন আমার বাড়ির বউ হয়ে এসেছে, সেহেতু তার যদি কোনো ক্ষতি হয় আর তার ক্ষতির জন্য যদি আমার বউ বা শালিকা দায়ি হয় তাহলে আমি কি করতে পারি তা দেখিয়ে দিবো।
আরহাম কথাটি বলে গটগট পায়ে চলে গেলো। তার আরহামের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জারিন শুকনো ঢোক গিলল।
কারণ জারিন জানে আরহাম রেগে গেলে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠে। সে তো নিজ চোখে দেখেছে, আরহামের ভয়ংকর সত্ত্বা।
জারিন আরহামের ভয়ংকর কথা শুনে চুপসে গেলেও এরিন ভয় পেলো না। ও যেন আরো রেগে গেলো।
এরিন ____ আপু আমি এই মেহেক কে ছাড়বো না। ও আমার থেকে আনার আবরাজ কে কেড়ে নিয়েছে। আমি ঐ ফকিন্নির বাচ্চাকে শেষ করে দিবো। ও আমাকে চেনে না, আমি এরিন শেখ। আমি কতটা ভয়ংকর হতে পারি।
জারিন _____ দেখ বোন, তুই এসব বন্ধ কর। আমি আবরাজের থেকেও বড়লোক স্মার্ট ছেলে দেখে তোর বিয়ে দিবো। তুই প্লিজ থাম।
এরিন ______ তুমি চুপ করো আপু। টাকা কি আমার বাবার কম আছে। আমি এরিন শেখ আনার জিনিস আমি কাউকে দিই না, আর ঐ মেয়ে তো আমার থেকে আমার ভালোবাসা কে কেড়ে নিয়েছে। আমি তো ওকে শেষ করে দিবো। (রেগে বলে উঠলো)
এরিন বোনের মুখে এসব কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো ও বুঝতে পারলো ওর এই জেদি বোন ওর এবং ওর পরিবারের (শেখ পরিবার) ধ্বংস ডেকে আনবে।
এরিন কে থামানোর জন্য জারিন বলল,
জারিন _____ দেখ বোন এসব পাগলামো করিস না৷ এই চৌধুরী বাড়ির ছেলেরা খুবই রহস্যময়।
এরা অনেক ভয়ংকর। এরা সবাই একেকটা রহস্যের কারখানা।
এরা কেউ সাধারণ না, এরা সাাদারণ সেজে থাকে।
এরিন ______ আবরাজ সবার থেকে আলাদা তাই তো আমি ওকে ভালোবাসি।
জারিন ___ দেখ বোন এটা তোর ভালোবাসা না এটা তোর জেদ
এরিন ____ আমার জেদ হলে তাহলে তাই কিন্তু আমার আবরাজ কে চাই। তা যে কোনো মূল্যে
এরিনের মুখে এমন কথা শুনে জারিন নিজেকে দমিয়ে নিলো, সে বুঝে গেছে তার এই জেদি বোন কে এসব বলে কোনো লাভ হবে না, তার চেয়ে বরং তার বাবা আমজাদ শেখ কে জানাতে হবে।
এই কথা মনে মনে ভেবেই জারিন হাঁটা শুরু করলো,
অপরদিকে,
আয়ান সাহেবের কেবিনে সবাই চুপচাপ বসে আছে।
আর আয়ান চৌধুরী মেহেকের হাত ধরে আছে।
মেহেকের এক হাত রেহেনা চৌধুরী ধরে আছে, আর আরেক হাত আয়ান চৌধুরী ধরে আছে,
তাদের দুজনেরই চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরতেছে,
তা দেখে মেহেক বলল,
মেহেক __ বড় বাবা, বড় মা তোমরা কেন নিজেকে দায়ি করতেছো। দেখো আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।
মা ____ মেহেক জানো আমি অনেক কম বয়সে এই চৌধুরী বাড়ির বউ হয়ে আসি,
তখন থেকেই এই হাতে আয়মানকে লালন পালন করে বড় করেছি। আর আজ আমার সেই আয়মান আর নেই আমি মানতে পারতেছি না। আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।
মেহেক নির্বিকার থাকলো সে তো তার বাবা মায়ের মুখে শুনেছে তার বাবার ভাবি মা তাকে কতটা ভালোবাসতো।
বাবা ____ আমি এতটা হতভাগা ভাই। যে তার ছোট ভাইটা কে শেষ বিদায় পর্যন্ত দিতে পারলো না। তার ভাই এর জানাযা ও উপস্থিত থাকতে পারলো না (কথাটা বলেই ডুকরে কেদে উঠলো)
পুরুষ মানুষ নাকি কান্না করে না। তবে আজ কি হলো এই গম্ভীরমুখো শক্ত মানুষটি আজ এত কান্না করছে কেন? নিজের প্রিয় ভাইকে হারিয়ে সে যে ভালো নেই, তার মন শরীর কোনোটাই তার বশে নেই।
সে যে ভেতর থেকে ভেঙ্গে গেছে।
কিছুক্ষণ পর আয়ান চৌধুরী নিজেকে স্বাভাবিক করে নেন।
আবরাজের উদ্দেশ্যে বলল,
বাবা ___ আমি জানতে চাই আমার ভাই এর মৃত্যু কীভাবে হলো
আবরাজ _____ বাবা তুমি এখন অসুস্থ, তুমি সুসৃথ হও তারপর তোমাকে সব বলবো।
বাবা ____ নিজের ভাই এর মৃত্যুর শোক যখন সহ্য করতে পেরেছি তাহলে তোমার কথাগুলো ও সহ্য করতে পারবো। আমি তোমাকে বলতে বলছি বলো।
আবরাজ এজটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল তারপর বলল,
আবরাজ ____ চাচ্চুর মৃত্যু স্বাভাবিক ভাবে হয় নি, চাচ্চুকে খুন করা হয়েছে।
আবরাজের কথা শুনে আয়ান চৌধুরী ও রেহেনা চৌধুরী চমকে উঠলো।
রেহেনা চৌধুরীর বুকে কেমন ব্যাথা শুরু হলো,
কই তিনি তো একজন উকিল, তিনি তো কত গুম, খুনের কেচ লড়েছেন।কোনো দিন তো তার এমন হয় নি তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে, তার সন্তানতুল্য আদরের ছোট ভাইকে খুন করা হয়েছে বলে তার বুকটা এমন জ্বলতেছে।
তখনি আয়ান চৌধুরী বলল,
বাবা ____ আয়মান কে খুন কেন করবে ও কার কি ক্ষতি করেছিলো?
আবরাজ ______ চাচ্চু কোনো সাধারণ মানুষ ছিলো না চাচ্চু ছিলো একজন NSI সদস্য।
আবারো আয়ান চৌধুরী ও রেহেনা চৌধুরী চমকে উঠলেন,
অতঃপর আবরাজ তাদের সব বলল যতটুকু বাকিদের জানিয়েছে ততটুকুই।
সব বলা শেষে আবরাজ দেখতে পেলো তার বাবা গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
একটু পর বলল,
বাবা ____ রেহেনা আজ যদি আমি আমার ছেলেদের একটা অপরাধ করতে বলি তাহলে কি তুমি আমাকে ঘৃণা করবে। (কম্পিত স্বরে বলল)
রেহেনা চৌধুরী স্বামীর কথা শুনলেন, কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলেন অতঃপর রক্ত লাল চক্ষু নিয়ে আরহামের দিকে তাকালো,
মা _____ আরহাম (গম্ভীর স্বরে বলল)
রেহেনা চৌধুরীর এই গম্ভীর কন্ঠ শুনে সবাই যেন চমকে উঠলো, এ তারা কোন রেহেনা চৌধুরী কে দেখতেছে। এটা তাদের মা না, এ কোন রেহেনা চৌধুরী।
কখনো রেগে যান না, নিরব এবং ধৈর্য্য রাখা সেই রেহেনা চৌধুরী কই? এটা তো অশান্ত প্রতিশোধের নেশায় মাতোয়ারা রেহেনা চৌধুরী।
আরহাম ____ হ্যা মা বলো।
মা _____ তোমার ওপর দেওয়া কসম আমি তুলে নিলাম। তোমার কাজ কে আমি বৈধতা দিলাম। কিন্তু আমার আয়মানের খুনিকে আমি আমার পায়ের নিচে দেখতে চাই।
আরহাম _____ মা আমি তোমার এই কথার অপেক্ষায় ছিলাম। (খুশীতে চক চক করে উঠলো আরহামের চোখ) আবার নিমিশেষ রক্ত লাল চক্ষুতে পরিণত হলো আরহামের চোখ গমগমের স্বরে মা কে বলল, মা সে যদি পাতালেও লুকিয়ে থাকে আমি ওকে খুজে বের করবো।
ওর বুক থেকে কলিজা বের করে দেখবো ওর কলিজা কত বড় ও আমার চাচ্চুকে শেষ করেছে।
মা _____ আরহাম, আবরাজ আমি ওদের শাস্তি নিজের চোখে দেখতে চাই।
আবরাজ _____ হ্যা মা তুমি নিজের চোখেই দেখতে পাবে।
চিন্তা কইরো না।
তবে তোমাকে কথা দিতে হবে চৌধুরী বাড়ি আবারো স্বাভাবিক হবে।
দেখো মেহেক কে ও কখনো সুখ পায় নি।
চাচ্চুর মৃত্যুর পর চলতো অত্যাচার, ভালো মায়ের মৃত্যুর পর তো ওরা ওকে কাজের লোক বানিয়ে রেখেছিলো।
আবরাজের মুখ থেকে কথাটা শোনা মাত্র রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে আয়ান চৌধুরী বলল,
বাবা ____ কার এত বড় সাহস চৌধুরী বাড়ির মেয়েকে কাজের মেয়ে বানিয়েছে। ওকে আমি ধ্বংস করে দেবো।
মেহেক বড় বাবার মুখে এসব কথা শুনে বড় বাবা কে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে বলল,
মেহেক _____ বড় বাবা আমি হাঙ্গামা মারামারি চাই না, আমি আর কাউকে হারাতে চাই না। বাবা মা কে হারিয়ে, তেমাদের পেয়েছি, আমি আর তোমাদের হারাতে চাই না।
আয়ান চৌধুরী যেন নিমিশেই শান্ত হয়ে গেলো।
চোখের ইশারায় আবরাজকে যেন কি বলল,
আবরাজ ও রহস্যময় হাসি দিয়ে সন্মতি জানালো।
এদিকে সবাই এক জায়গায় থাকলে ও একজন মানুষ অনুপস্থিত। সে হলো আবরার,
আবরার সবার থেকে আড়ালে গিয়ে কাউকে কল দিলো,
আবরার _____ আমি NSI এর ফিল্ড অফিসার আয়মান চৌধুরী অর্থাৎ AK এর ফাইল চাই। সে তার জীবদশায় যত কেস নিয়ে কাজ করেছে সব কেসের ফাইল আমি আজকের মধ্যে চাই। বুঝতে পেরেছো।
ওপাশ থেকে বলল ____ জি স্যার।
মন্ত্রী বর যখন চাচাতো ভাই পর্ব ১
কে এই আবরার? কি তার পরিচয়? সাধারণ সেজে থাকা ভদ্র এই ছেলেটি কে? তাহলে কি জারিনের কথাই সত্যি এই চৌধুরী বাড়ির সব ছেলেরাই রহস্যময়।
আর রেহেনা চৌধুরী কোন কসমই বা তুলে নিলো।
তাহলে কি আরমান ও সাধারণ কেউ না? এই গোলক ধাঁধার শেষ কোথায়?
এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের গল্পের সাথেই থাকুন।
