মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৪

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৪
নুজাইফা নূন

” ম্যাডাম কে কবে বিয়ে করছেন স্যার?”
-” সারজিস মনোযোগ সহকারে রিপোর্ট চেইক
করছিলো। রামিমের প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে বললো,
-”কথায় বলে , যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শীর ঘুম নাই।তোমার ব্যাপার টা হচ্ছে কাইন্ড অফ পাড়াপড়শীর মতো।পড়াপড়শীর না হয় কাজ থাকে না। এজন্য তারা অন্যের ব্যাপারে বেশি আগ্ৰহ প্রকাশ করে। কিন্তু তোমার তো কাজ রয়েছে রামিম। তুমি নিজের কাজ ছেড়ে আমার বিয়ে নিয়ে পড়েছো কেন?”

-” আমার মন বলছে আপনি ম্যাডাম কে অনেক বেশি পছন্দ করেন। পছন্দের মানুষ কে যত দ্রুত সম্ভব নিজের করে নেওয়াই ভালো।না হলে যদি একবার হারিয়ে যায়।তখন আর আফসোস করে কোনো লাভ হবে না। এজন্যই বলছিলাম ম্যাডাম কে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিন।আমি তো ভেবেছি আপনার বিয়েতে অনেক অনেক মজা , হৈ হুল্লোড় করবো।বিয়েতে শুধু খাওন আর খাওন।একবারে কব্জি ডুবিয়ে খাবো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” যখন বিয়ে করি।তখন খেয়ো।এখন যাও নিজের কাজে মনোযোগ দাও।”
-” ওকে স্যার বলে রামিম চেম্বার থেকে বেরিয়ে যায়।রামিম যেতেই সারজিস ফোন বের করে গ্যালারি থেকে সিজদার ছবি বের করে জুম করে দেখে বললো,
-” তোমাকে ঠিক কোন নামে ডাকবো আমি বুঝতে পারি না।তুমি একাধারে মায়াবতী, মায়াবিনী, চন্দ্রমুখী, সুস্মিতা, সুচয়না‌, সৌন্দর্যময়ী।ঠিক যেন অল ইন ওয়ান।।”

-” লাঞ্চ টাইম ব্রেকের সময় সারজিস লাঞ্চের জন্য বের হবে এমন সময় রামিম দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সারজিসের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।রামিম কে হাঁপাতে দেখে সারজিস বললো,
-”কি হয়েছে রামিম ? এভাবে ছুটে এলে যে? কুকুরে তাড়া করেছিলো নাকি? তুমি তো আবার নিজের গার্লফ্রেন্ডের থেকেও কুকুর কে বেশি ভয় পাও।”
-” আজকে কুকুর তাড়া করে নি। গার্লফ্রেন্ডে তাড়া করেছে স্যার।স্যার আমার একটা হেল্প করবেন? প্লিজ স্যার।আমি আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।”

-” চেষ্টা করবো।”
-” স্যার আমার সাথে একটু শপিং মলে চলুন না।প্লিজ স্যার।”
-” সরি রামিম।আই ডোন্ট হ্যাভ টাইম।”
-” স্যার প্লিজ চলুন না! আজকে আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন। কিন্তু কাজের চাপে আমি সেটাও ভুলে গিয়েছিলাম।এখন গার্লফ্রেন্ড কে খুশি করাতে না পারলে আমাদের ব্রেকাপ হয়ে যাবে স্যার।প্লিজ স্যার ‌চলুন না।”
-”হলে হোক।আই ডোন্ট কেয়ার।সারজিসের কাটকাট উত্তরে মুখ চুপসে যায় রামিমের। রামিমের চুপসে যাওয়া মুখখানি দেখে সারজিসের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।সারজিস কে হাসতে দেখে রামিম বললো,
-” নিজে তো কখনো প্রেম করতে পারেন নি। এজন্যই আপনি চাইছেন না‌‌ আমার প্রেম টিকে থাকুক।আমার ব্রেকাপ প্রার্থনা করছেন আপনি।”

-” তুমি এতো করে যখন বলছো তখন আর না গেলে হয় না।আফটার অল গিফট টা তো আমার বোনের কাছেই যাবে।তাই না রামিম ?”
-”সারজিসের প্রশ্নে হতবাক হয়ে গেলো রামিম।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হলো।রামিম তোতলাতে তোতলাতে বললো,
-” এসব কি বলছেন স্যার?আপনার বোনের কাছে যাবে মানে ?কে আপনার বোন ?আমি তো আপনার বোন কে চিনিই না।”

-” মিথ্যা কথা বলে কোন লাভ নেই রামিম।আমি জানি সামিরা আর তুমি একে অপর কে ভালোবাসো। প্রায় দুই বছরের রিলেশনশিপ তোমাদের। কিন্তু তোমরা দুজনেই ভুল পথে পা বাড়িয়েছো রামিম।আমি জানি না তোমাদের ভালোবাসার শেষ পরিনতি কি হবে?সামিরা না নয় বাচ্চা মেয়ে।বুঝতে পারে নি।ভুল পথে পা বাড়িয়েছে। কিন্তু তুমি তো এডাল্ট পার্সোন। তুমি জেনেশুনে এমন ভুল কিভাবে করতে পারলে রামিম?”
-” মন দেওয়া নেওয়া কি আর ধনী গরীব, টাকা পয়সা দেখে হয় স্যার ?হ্যাঁ মানছি যে আমি আপনার একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট।অনেক টাকা পয়সা নেই আমার। কিন্তু স্যার বিশ্বাস করুন আমি সামিরা কে অনেক বেশি ভালোবাসি।দুটো মনের মিল, দুজনের মধ্যে ভালো বন্ডিং, বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক।সংসার করতে গেলে এর বেশি আর কি লাগে স্যার? আমি সামিরা কে অনেক ভালো রাখবো,সুখে রাখবো।সামিরা আমার টিনের ঘরে যে সুখ পাবে‌ সেই সুখ বড় বড় অট্টালিকাতে ও পাবে না।”

-” আমি আমার দিকে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তোমাদের চার হাত এক করে দেওয়ার।।বাট আই ডোন্ট নো হাউ সাকসেসফুল আই ক্যান বি?”
-” থ্যাংক ইউ সো মাচ ব্রাদার ইন ল।”
-” রামিমের কথা শুনে সারজিস ব্যাঙ্গাত্বক স্বরে বললো, উঁহু গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ।বাই দ্যা ওয়ে চলো যাওয়া যাক।”
-” ওকে। চলুন স্যার। কিন্তু আমরা কোন দোকানে যাবো?”
-” মেট্রো শপিং মল।আমার পরিচিত।”
-” একটু দাম কম নিতে বলবেন স্যার। পকেটের অবস্থা তেমন ভালো না।”
-” আমি আমার বোন কে চিনি রামিম।সামিরা অল্প তেই অনেক খুশি হয়ে যায়।সামিরা কে যদি তুমি ভালোবেসে এক ডজন কাঁচের চুড়ি ও কিনে দাও। তাতেই সামিরা অনেক খুশি হবে।”

-” সারজিস রামিম কে নিয়ে শপিং মলে আসে। শপিং মলে এসে এতো লোকের ভিড়ে সারজিসের চোখ দুটো তার সৌন্দর্যময়ীর চোখ দুটো খুঁজে চলেছে। বারবার মনে হচ্ছে ইশ্ ঐ মায়াবী চোখ দুটো যদি আবারো দেখতে পেতাম।সারজিসের আকাশ কুসুম চিন্তার মাঝে তার ফোন বেজে উঠে। থানা থেকে কল এসেছে।তাকে একবার থানায় যেতে হবে।সারজিস রামিম কে রেখে শপিং মল থেকে বের হতেই তার চোখ যায় কালো বোরকা পরা রমনীর দিকে।রমনীর চোখে চোখ পড়তেই‌ সারজিসের মেয়েটাকে চিনতে অসুবিধা হয় না।সারজিসের মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে যায়, সৌন্দর্যময়ী এখানে? এটা কি সত্যি নাকি আমার ভ্রম?সারজিস কে দেখে সিজদার ও চিনতে অসুবিধা হয় না।সিজদা সারজিসের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

-” ডাক্তারবাবু আপনে এখানে ? কেনাকাটা করতে আইছেন বুঝি?”
-” তুমি কি সত্যিই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো?নাকি সবটা আমার মনের ভুল?”
-” সত্যি ছাড়া মিথ্যে মিথ্যে দাঁড়িয়ে আছি নাকি?”
-” সিজদা কে দেখে সারজিসের মন আপনা আপনি ভালো হয়ে গেলো।সারজিস মুচকি হেসে মনে মনে বললো,
-” এ দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।আমি যাকে মনে মনে খুঁজে চলেছি।সে এখন আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।আই কান্ট বিলিভ দিস ।সারজিসের থেকে রেসপন্স না পেয়ে সিজদা আবারো বললো,

-” আপনার হাতের ব্যাথা কমেছে ডাক্তারবাবু? দৈনিক ঔষধপত্র ঠিক মতো খাচ্ছেন তো? ডাক্তারবাবুরা তো আবার শুধু রোগীদের‌ই খেয়াল রাখে। তাদের কে বড় বড় ঔষধ খাইতে দেয়। ইয়া বড় সুঁই দিয়ে ইনজেকশন দেয়।কিন্তু নিজেরা নিজেদের শরীরের যত্ম নেয় না। ঔষধ ও খায় না সময়মতো।ভাবে যে আমরা ডাক্তার। আমাদের আবার কি হবে?”

-”সিজদার কথা শুনে সারজিসের মনে এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে।সিজদার কথার মাঝে অধিকারবোধ ফুটে উঠেছে।যেটা দেখে খুব ভালো লাগে সারজিসের ।সারজিস তো এটাই চেয়েছিল ।পারছিস কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারজিসের ফোন বেজে উঠে।আবারো থানা থেকে কল করা হয়েছে।সারজিস একটু দূরে সরে এসে কল রিসিভ করে কথা বলা শেষ করে পেছনে ফিরে দেখে সিজদা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো সে জায়গায় টা খালি।সেখানে কেউ নেই।সারজিস আশেপাশে খুঁজে ও সিজদা কে না পেয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৩

-” ড্যাম ইট। সৌন্দর্যময়ী কে দ্বিতীয় বার কাছে পেয়ে ও তার সম্বন্ধে কিছু জানা হলো না।এদিকে বাড়িতে বিয়ের তোরজোর , সামিরার জন্মদিন।সবমিলিয়ে দাদু কেও সৌন্দর্যময়ীর ব্যাপারে বলতে পারছি না।সাইফানের বিয়েটা ভালোই ভালোই মিটে যাক।এরপর আমার চুন্নি রানী কে আমার মন চুরি করার শাস্তি স্বরূপ আমার মনের জেলখানায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করবো।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৫