মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৫
নুজাইফা নূন
-“ঘরোয়া ভাবে সাইফানের গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।ছাদে ছোট খাটো একটা স্টেজ সাজানো হয়েছে।হালিমা বেগম চেয়েছিলেন আনুষ্ঠানিক ভাবে নাচ গান হৈ হুল্লোড়ের মাধ্যমে সাইফানের হলুদ করতে । কিন্তু সাইফান আনুষ্ঠানিকতা চায় নি।সে যে হালিমা মঞ্জিলে ঠাঁই পেয়ে একটা পরিবার পেয়েছে।এটাই তার কাছে অনেক বড় পাওয়া।সাইফানের বিয়ে উপলক্ষে তার নানী বাড়ি থেকে নানা নানী সহ আরো অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে। শান্তা মির্জা তাদের হাতে হাত হলুদের সব আয়োজন করছেন।এ বাড়িতে সাইফানের গায়ে হলুদ শেষ হলে তারা সিজদার গায়ে হলুদ দিতে যাবেন।শান্তা মির্জা কে খুশি মনে বিয়ের সব কাজ করতে দেখে অবাক হয়ে যায় তাথৈ।তাথৈ শান্তা মির্জা কে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললো,
-” একটা বিষয় আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না খালামণি।সারজিসের সাথে তুমি যে মেয়েটার বিয়ে দিতে চাও নি।এখন আবার সেই মেয়েটার সাথেই নিজের ছেলের বিয়ে দিচ্ছো?হোয়াই খালামণি হোয়াই?”
-” সিজদার সাথে যে সারজিসের বিয়ে হচ্ছে না এতে তোমারই ভালো হয়েছে।তোমার রাস্তা এখন ক্লিয়ার।সারজিসের বউ হয়ে আসার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে তোমার।”
-” শুধু কি আমার ভালোর জন্য? এখানে তোমার কোনো স্বার্থ নেই খালামণি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আমি যে মা তাথৈ।সামিরা কে যেমন আমি পেটে ধরেছি।তেমন সাইফান কে ও আমার পেটে ধরেছি।সাইফানের জন্যেও প্রসব বেদনা সহ্য করেছি।সন্তানের ভালোর জন্য একটু স্বার্থপর হতে হয়েছে আমাকে।সারজিস যখন বলে সে বিয়েটা করবে না ।তখন আমিই আম্মার কাছে গিয়ে আম্মাকে বলি,
-” আম্মা আপনি এতো বড় মুখ করে সারজিসের বিয়ে ঠিক করে আসলেন। কিন্তু সারজিস তো আপনার মুখ রাখলো না।”
-” সত্যিই বউমা আমি দাদুভাই কে চিনতে ভুল করেছি।এখন রাশেদ কে কি জবাব দিবো আমি?”
-” একটা উপায় আছে আম্মা।আমার সাইফানের সাথে সিজদার বিয়ে দিলে কেমন হয় আম্মা।এতে করে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে।সিজদা ও এই বাড়ির বউ হয়ে আসবে।আবার আপনার জবান ও ঠিক থাকবে।তবে আমার একটা কন্ডিশন আছে আম্মা। সিজদার সাথে বাবুনের বিয়ে দিতে হলে বাবুনকে হালিমা মঞ্জিলে ঠাঁই দিতে হবে।বাবুন কেও এই পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে মেনে নিতে হবে। আমাদের তো টাকা পয়সা, ধনদৌলত কোন কিছুর কম নেই আম্মা।আপনি তো যথেষ্ট দানশীল আম্মা। কিন্তু আমার ছেলেটার ক্ষেত্রে কেন এতো নিষ্ঠুর আপনি?আমার ছেলেটা আর্মি অফিসার।খুব বেশি ছুটি পায় না।আমার ছেলেটার ও তো ইচ্ছে হয় ছুটি পেলে তার পরিবারের সঙ্গে কাটাতে।তার মায়ের হাতের রান্না খেতে ।আপনি একজন মায়ের থেকে তার সন্তান কে আরো কতোদিন আলাদা করে রাখবেন আম্মা?”
-” আমার কথা শুনে আম্মা সেদিন নির্বাক হয়ে গেছিলেন।পরে আম্মা নিজের দেওয়া কথা , নিজের জবান, নিজের মানসম্মান রাখতে আমার সমস্ত শর্ত মেনে নেন। একটু স্বার্থপর হয়ে যদি নিজের সন্তানের ভালো হয়।আমি এমন স্বার্থপর হাজারবার হতে রাজি আছি।তবে এমনটা নয় যে আমি সিজদা কে পছন্দ করি না।সিজদা খুবই মিষ্টি সহজ সরল একটা মেয়ে।আমার মুখের উপর কখনোই কিছু বলার সাহস পাবে না।আমি তো আমার ছেলের জন্য এমন একটা মেয়েই খুঁজছিলাম। তাছাড়া আম্মা সিজদা কে অনেক পছন্দ করে।সিজদা কে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে আমার ছেলেটা পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারবে।তার সুন্দর একটা ভবিষ্যত গড়ে দিতে পারবো।”
-” তোমার পেটে পেটে এতো বুদ্ধি আছে জানা ছিলো না খালমণি।তোমাকে দেখে মনে হয় তুমি ভাজা মাছ টা উল্টিয়ে খেতে জানো না।অথচ তুমি যে কাঁচা মাছ চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছো।সেটা কেউই বুঝতে পারছে না।”
-” আমি যা করছি আমার ছেলের সুখের কথা ভেবে করছি।”
-”বুঝতে পেরেছি খালামণি। তুমি গাছের ও খাবে।তলার ও কুড়োবে ।”
-” অনেক কথা হয়েছে তাথৈ।বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে।তুমি জলদি গিয়ে সাইফান কে নিয়ে এসো।সাইফানের গায়ে হলুদ শেষ হলে সবাই চৌধুরী ভিলায় যাবে সিজদার গায়ে হলুদ দিতে।”
-” সারজিস ও যাবে কি ঐ বাড়িতে যাবে খালামণি ? “
-” জানি না তাথৈ।সারজিস তো আমার সাথে ভালো করে দুটো কথায় বলে না। ইদানিং দেখছি আম্মার সাথে ও আগের মতো ভালো সম্পর্ক নেই।হয়তো সাইফান এ বাড়িতে আসাতে সারজিস খুশি হতে পারে নি।আর আম্মার কথায় যেহেতু সাইফান এই বাড়িতে এসেছে।তাই আম্মার প্রতি রাগ , অভিমান হয়েছে তার।”
-” একবার আমি সারজিসের বউ হয়ে এই বাড়িতে আসি। তারপর দেখো আমি ম্যাজিক করে সারজিসের সমস্ত রাগ , অভিমান,কষ্ট সব কিছু ধুয়ে মুছে সাফ করে দিবো।”
-” আগে সারজিসের মনে জায়গা তো করে নাও।তারপর নাহয় এসব স্বপ্ন দেখো।”
-” স্বপ্ন আছে বলেই আমাদের জীবন এতো সুন্দর খালামণি।আমরা জানি যে এই জিনিস টা আমাদের হবে না। তবুও আমরা সেটা নিয়ে স্বপ্ন দেখি।ভাবতে পছন্দ করি।আমি শয়নে স্বপনে সবসময় শুধু সারজিস কে দেখতে পাই।সারজিস কে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে আমার প্রেম ভালোবাসা ,বিয়ে , বাসর , সংসার ছেলেমেয়ে সব হয়ে গিয়েছে খালামণি কথাটা বলে পরক্ষণেই তাথৈ নিজের দন্ত দ্বারা জিভে কামড় দিয়ে বললো,
-”আমি এক্ষুনি সাইফান ভাইয়া কে নিয়ে আসছি খালামণি বলে তাথৈ সাইফান কে নিয়ে আসে।সাইফানের পরণে হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা রয়েছে।সাইফান আসতেই তাকে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হয়।সাইফানের নানা সর্বপ্রথম সাইফানের গালে হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে সাইফান কে মিষ্টি মুখ করান।এরপর একে একে সবাই সাইফানের গালে হলুদ ছুঁয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সাইফানের গায়ে হলুদের কার্যক্রম শেষ হয়।সাইফানের হলুদে সবাই উপস্থিত থাকলেও সারজিসের দেখা মেলে না।সারজিস কে না পেয়ে মনক্ষুণ্ণ হয় সাইফানের।।”
-” চৌধুরী ভিলায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। চৌধুরী ভিলা এক নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। চারিদিকে হরেক রকমের ফুল, লতাপাতা রঙ্গিন কাপড়, লাইট স্ট্রিং , ল্যানটার্ন দিয়ে ডেকরেশন করা হয়েছে।নিমন্ত্রিত অতিথির প্রবেশ দ্বার ও নজকরা হয়ে উঠেছে। প্রবেশ দ্বারে গোলাপ , চন্দ্রমল্লিকা,অর্কিড দিয়ে সাজানো হয়েছে।ছাদে খুব সুন্দর করে ফুল রঙ্গিন কাপড়, বেলুন ,লাইট দিয়ে স্টেজ সাজানো হয়েছে। স্টেজের মাঝখানে বড় বড় করে জরি দিয়ে লেখা হয়েছে সিজদার হলুদ সন্ধ্যা। হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সন্ধ্যায়। গতকাল বিয়ে এটা যেন সিজদা কিছুতেই মানতে পারছে না।সকাল থেকে কিছু খায় নি মেয়েটা।খেতে ইচ্ছে করছে না।পেট ভার হয়ে রয়েছে।সবাইকে ছেড়ে থাকার যন্ত্রণা এখন থেকেই যেন উপলব্ধি করতে পারছে সিজদা। সালেহা বেগমের জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই সিজদা সালেহা বেগমের সাথে থেকেছে।সাহেলা বেগম সিজদা গোসল করানো থেকে শুরু করে সবটা নিজে হাতে করেছেন। একজন মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৪
আর সবথেকে বড় কথা সিজদার বিয়ে হবে ভাবতেই তার চোখের সামনে বারবার সারজিসের চেহারা টা ভেসে উঠছে।তার জন্য চিন্তা হচ্ছে। তার হাতের কি অবস্থা জানতে ইচ্ছে করছে।গতকাল শপিং মলে যখন সারজিসের সাথে তার দেখা হয় ,সিজদার অজান্তেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু সিজদা ভালো মন্দ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সিজদার মামা এসে যায়।সারজিস তখন ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো।যার দরুন সিজদা তাকে বলে আসতে পারে না।তবে বাড়িতে এসে বারবার সারজিসের কথা মনে পড়ছিলো।যার নাম টা পর্যন্ত জানে না তার জন্য এতো চিন্তার কারণ অজানা সিজদার কাছে।।এটা কি শুধু মাত্রই কৃতজ্ঞতা নাকি অন্য কিছু বুঝে উঠতে পারে না সিজদা।।”