মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৬
নুজাইফা নূন
” সাইফানের হলুদ শেষ হতেই হালিমা মঞ্জিলের সব সদস্যরা চৌধুরী ভিলায় আসার জন্য তৈরি হয়।সামিরা হলুদ একটা গাউন পরেছে।সাথে হালকা সাজ।তাতেই ভারি মিষ্টি লাগছে দেখতে। মহিলারা হলুদ শাড়ি পরেছেন। পুরুষেরা হলুদ পাঞ্জাবি।তাথৈ হলুদে যাওয়ার জন্য পার্লার থেকে সাজগোজ করে এসেছে। হলুদের অনুষ্ঠান বলে কথা।কতো হ্যান্ডসাম ছেলেদের আনাগোনা থাকবে সেখানে। নিজেকে এমন আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করেছে যেন সব ছেলেদের নজর তার দিকে থাকে।তাথৈ কে পার্লার থেকে ফিরতে দেখে সামিরা এগিয়ে এসে বললো,
-”এতো সাজগোজ করেছো দেখে মনে হচ্ছে তুমিই বিয়ের কনে।তোমারই গায়ে হলুদ আপু।”
-” কেমন লাগছে আমাকে?”
-” পেত্মীর মতো লাগছে।হালকা সাজে ভালো লাগে তোমাকে।”
-”সামিরার কমপ্লিমেন্টে সন্তুষ্ট হতে পারলো না তাথৈ।তাথৈ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“তুই সাজগোজের কি বুঝিস ?যাচ্ছিস তো বাড়ির কাজের বেডির মতো। হলুদের অনুষ্ঠানে কেউ গাউন পরে যায়? যত্তোসব ফালতু লোকজন বলে রাগে গজগজ করতে করতে তাথৈ সোজা সারজিসের রুমে নক না করেই ঢুকে যায়।সারজিস তখন সবে মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।পরণে শুধু মাত্র একটা টাওয়াল রয়েছে ।ফর্সা গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি মুক্ত দানার মতো চকচক করছে।চুল থেকে পানি গড়িয়ে মুখের উপর পড়ছে।সারজিসের ঘাড়ের উপর থাকা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে।তাথৈ কে নজরে আসে নি তার।সারজিসের এই রুপ দেখে তাথৈয়ের বুকে কাঁপন ধরে যায়।লজ্জায় কানের লতি পর্যন্ত লাল হয়ে যায়।তাথৈ দু হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়।সারজিসের উদোম বুকে মাথা রাখার তীব্র বাসনা জাগে মনে।তাথৈ এক পা দু পা করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে সারজিসের সামনে দাঁড়ায়।তাথৈ কে দেখা মাত্রই সারজিস গায়ে শার্ট জড়িয়ে নিয়ে বললো,
-” কারো রুমে ঢুকতে গেলে যে নক করে আসতে হয় ,সেই সেন্সটুকুও নেই তোর?গায়ে পায়ে বড়ই হয়েছিস। কিন্তু ভদ্রতা শিখতে পারিস নি।নেক্সট টাইম আমার রুমে ঢুকতে গেলে নক করে আসবি।হুট হাট তোর আমার রুমে আসা টা পছন্দ করি না আমি।”
-”এখন পছন্দ করো না । কিন্তু পছন্দ করতে কতোক্ষণ?এক দিন দুই দিন তিন দিন পর।তোমারই ঘর হবে আমারই ঘর। নিজের ঘরে নিজে আসবো।এতে নক করার কি আছে বলো তো?”
-” আমি কি কখনো বলেছি যে আমি তোকে ভালোবাসি।তোকে বিয়ে করবো? বলি নি তো? তাহলে কিসের ভিত্তিতে তুই এতো কথা দেখছিস বল তো?আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি তোকে ভালোবাসি না তাথৈ।তোর প্রতি বিন্দুমাত্র ফিলিংস আসে না আমার। তুই কেন এই সহজ কথাটা বুঝতে চাস না বল তো?”
-” এই প্রশ্ন টা আমাকে না করে নিজের মন কে করো। পৃথিবীতে এতো এতো ছেলে থাকতে আমি তোমাকেই কেন বেছে নিলাম? তোমাকেই কেন আমার মন দিলাম? কর কর নিজের মন কে প্রশ্ন করো?”
-” আমার সময় বা ইচ্ছা কোনটাই নেই।ভালো হয় তুই যদি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাস।”
-” তাথৈ এক পা ও নড়লো না। বরং সারজিসের দিকে এগিয়ে গিয়ে সারজিসের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে বললো,
-“এই তুমি শার্ট পরলে কেন? শার্ট ছাড়াই ভালো লাগছিলো তোমাকে। অবশ্য তুমি যে রুপেই থাকো না কেন সেই রুপেই বিমোহিত হয়ে যাই আমি।”
-” স্টপ অল দিস ননসেন্স।ইউ আর ক্রসিং ইউর লিমিট।”
-” তোমার মতো চকলেট বয় কে দেখলে যে কোনো মেয়েই লিমিট ক্রস করতে বাধ্য হবে। পুরুষ মানুষ এতো সুন্দর কেন হবে বলো তো?”
-” সারজিস কোনো কথা না বাড়িয়ে তাথৈয়ের হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বের করে দিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেওয়াই বেশ অপমানিত বোধ করে তাথৈ।অপমানে চোখে পানি আসে তার।সে সন্তপর্ণে চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো,
-” তুমি তাথৈ কে চেনো না জানেমান।তাথৈ যে বড্ড একরোখা,জেদি।আজ হোক বা কাল হোক তোমার তাথৈয়ের কাছে ধরা দিতেই হবে।”
-” সিজদা যোহরের নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতেই সালেহা বেগম প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে সিজদার রুমে এসে সিজদার হাত ধরে সিজদা কে বিছানায় বসিয়ে দেয়। সিজদা তড়িৎ গতিতে সালেহা বেগমের কোলে মাথা রেখে নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।সালমা বেগম সিজদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-” আমি তোর কষ্ট টা বুঝতে পারছি রে মা। কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে একদিন না একদিন পরিবার পরিজন ছেড়ে চইলা যাইতে হয়। স্বামীর ঘরই যে মেয়েদের আসল ঘর।তো কপাল ভালা যে এমন ভালো একটা পরিবারের বউ হইয়া যাচ্ছিস।গ্ৰারামের বেডিরা একখান কথা কয়। মাইয়াগো বিয়ার ক্ষেত্রে হয় বর না হয় ঘর দেখতে হয়। কিন্তু তুই তো ঘর , বর দুইডাই ভালা পাচ্ছিস মা।এমন সোনার কপাল কয়জনের হয় ক দিনি ?তোর তো খুশি হওনের কথা।”
-” আমার বুকে খুব ব্যাথা করছে খালা। তোমাদের সবাইকে ছেড়ে আমি কিভাবে থাকবো খালা? তুমি যে আমার মাথায় বিলি কেটে না দিলে আমি ঘুমাতে পারি না।”
-” প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হইবো।পরে দেখবি যতো দিন যাবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হইয়া যাইবো।তহন ঐ বাড়ির মানুষগুলান তোর আপন হইয়া উঠবো।ঐ বাড়ি ছাইড়া আইতে মন চাইবে না।সকাল থেইকা কিছু খাস নি।এখন কিছু খায়ে নে।না খায়ে থাকলি তো তুই অসুস্থ্য হইয়া যাইবি।তহন তোরে লইয়া আরেক ভুগান্তি হইবো।”
-” আমার ক্ষিদে নেই খালা।আমি খাবো না।”
-” সালেহা বেগম সিজদার কথায় কান না দিয়ে প্লেট থেকে এক লোকমা খাবার তুলে জোর করে সিজদার মুখে পুরে দিলো।সিজদা বাধ্য হয়ে খাবার চিবোতে লাগলো।সিজদা খাবে না খাবে না করেও প্লেটের খাবার শেষ করে ফেললো।এরই মধ্যে বিথী চোধুরী সিজদার রুমে প্রবেশ করে।তার চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে।সিজদা খাচ্ছে দেখেও তিনি জোর পূর্বক মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললেন,
-” সিজদা খাচ্ছিস?”
-” হ্যাঁ মামিমা ! কিছু লাগবে? লাগলে আমারে ডাক দিতেন।যা লাগবে আমি দিয়ে আসতাম। আপনি শুধু শুধু কষ্ট করে কেন আইতে গেলেন কেন মামিমা?”
-” আমার প্রয়োজনে এখানে আসি নি।এসেছি তোর প্রয়োজনে।হালিমা বেগম পার্লার থেকে লোক পাঠিয়েছে। মেয়েরা ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে তোর জন্য। তুই খাওয়া দাওয়া শেষ করে অতি দ্রুত চলে আয়।”
-” ওমা! পার্লার থেকে লোক পাঠানোর কি আছে?”
-” কেন তুই খুশি হোস নি? তোর তো অনেক খুশি হবার কথা।তুই তো এটাই চেয়েছিলি।কতো বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হচ্ছে। তাদের কি টাকা পয়সা কম আছে নাকি ? তাদের বাড়ির বউ বলে কথা। পার্লার থেকে লোক না পাঠালে হয় নাকি? তারা এসেছে তোর হাতে মেহেদী দিবে বলে। মেহেদী শুকিয়ে গেলে আবার হলুদ সন্ধ্যার জন্য তোকে তৈরি করে দিবে। তুই বেশি দেরি করিস না। তাড়াতাড়ি আয় বলে বিথী চৌধুরী চলে আসতে গেলেই সিজদা বললো,
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৫
-” মামিমা।”
-” সিজদার কথায় বিথী চৌধুরী পেছন ফিরে বললো,
-” আবার কি হলো?কিছু বলবি ?”
-” আপামণি কোথায়? সেদিনের পর থেকে আপামণি রে যে দেখছি না।আপামণি কি বাড়িতে নেই? ”
-” ঐশ্বর্যের কথা শুনে বুক ধুক করে উঠলো বিথী চৌধুরীর।সিজদা কে কি জবাব দিবে জানা নেই তার।”