মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৯

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৯
নুজাইফা নূন

-” ডাক্তারবাবু আপনি এখানে? আপনি আবারো আমাকে বাঁচাতে এসেছেন? দেখুন কারা যেন আবারো আমাকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছে।আমি দাদি জানের সাথে পার্লারে এসেছিলাম।সেখান থেকেই আমাকে জোরপূর্বক এখানে নিয়ে এসেছে।আজকে আমার বিয়ে। অথচ দেখুন আমাকে কাজি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে।সিজদা একনাগাড়ে কথাগুলো বলার পর মূহুর্তে সিজদা সারজিস কে বিয়ের শেরোয়ানি পরে বরের সাজে দেখে দেখে হতবাক হয়ে যায়।সিজদার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসে,

-” ডাক্তারবাবু আপনি বরের সাজে?আজকে কি আপনার বিয়ে? আজকে আমার ও বিয়ে। কাকতালীয় ভাবে আমাদের দুজনের এক‌ই দিনেই বিয়ে? দারুন তো ব্যাপার টা।আপনাকে বরের সাজে দারুন লাগছে ডাক্তারবাবু। কিন্তু আপনি বিয়ে বাড়িতে না গিয়ে কাজি অফিসে এসেছেন কেন?”
-” কাজি অফিসে বিয়ে করবো তাই।”
-” ওমা কাজি অফিসে কেন?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আমার মনের রানী আমার বুকে প্রেমের আগুন জ্বালিয়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দিতে পারি না।তাই তো তাকে নিয়ে সোজা কাজি অফিসে আসতে হলো।এখন তাকে বিয়ে করে চিরদিনের জন্য আমার সম্পত্তি করে নিবো। যেখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ থাকবে না।সে শুধু আমার। একান্তই আমার স্থায়ী সম্পত্তি।।”
-” কার সাথে বিয়ে আপনার? পাত্রী কোথায়?এখানে তো কেউ নেই।”
-”তুমি কি চোখে কম দেখছো?”
-” মানে?”
-” চোখের সামনে বধূ বেশে পাত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছে তুমি দেখতে পারছো না সৌন্দর্যময়ী?”
-”কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই পিলে চমকে উঠে সিজদার।সারজিস সরাসরি তাকেই যে ইঙ্গিত করছে এটা বেশ বুঝতে পারে সিজদা।।সিজদা ভয়ে ঘামতে শুরু করে।যা দেখে সারজিস তার দিকে রুমাল এগিয়ে দেয়।সিজদা সারজিসের হাত থেকে রুমাল না নিয়ে বললো,

-” এসব আপনি কি বলছেন ডাক্তারবাবু?”
-” তুমি যেটা শুনেছো সেটাই।”
-”তার মানে আপনি আমাকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছেন।তাই না ডাক্তারবাবু?”
-”ইয়েস।আ’ম।”
-”ছিঃ ছিঃ ছিঃ । আপনি এতোটা নিচু মনের মানুষ আমি কখনোই ভাবতে পারি নি ডাক্তারবাবু।আমি আপনাকে কতো ভালো মনের মানুষ ভেবেছিলাম
।কতো সম্মান শ্রদ্ধা ছিলো আপনার প্রতি। কিন্তু সেই সম্মান শ্রদ্ধা এক নিমিষেই ঘৃণায় পরিনত করে দিলেন আপনি।আপনি এতোটা নিচে নামতে পারেন আমি ভাবতেও পারছি না।”
-”‘এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার
। ভালোবাসার জন্য সব করা যায়।

তোমার ভালোবাসা আমাকে নিচু মনের মানুষ হতে বাধ্য করেছে সৌন্দর্যময়ী।তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন ই আমার এই মন টা তোমাকে দিয়ে দিয়েছিলাম।আমার শয়নে স্বপনে তুমি ছিলে সৌন্দর্যময়ী। বিশ্বাস করো তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না। চেম্বারে বসতে পারি না।সব পেশেন্টেদের মধ্যে তোমাকে দেখতে পাই।যখন জানতে পারলাম আজ তোমার বিয়ে ।তখন মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার কলিজায় টান দিয়েছে। তুমি অন্য কারো ব‌উ হবে,অন্য কারো জন্য সাজবে,অন্য পুরুষ তোমাকে স্পর্শ করবে, তোমাকে ভালোবাসবে, অন্য পুরুষ তোমার ভেজা চুলের কারণ হবে।এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।তাই তো তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি। আর মাত্র কয়েক মিনিটের অপেক্ষা।এরপর চিরদিনের জন্য তোমাকে আমার করে নিবো সৌন্দর্যময়ী‌। তুমি শুধু এবং শুধুমাত্র আমার হবে।আর কারো নয়।তোমার আমার বিয়ে হবে,সংসার হবে। আমাদের ছোট্ট সংসারে আরো একটা সৌন্দর্যময়ী আসবে। অনেক সুখের সংসার হবে আমাদের।।”

-” আপনার সেই আশা কখনোই পূরণ হবে না ডাক্তারবাবু।আমি কখনোই আপনার মতো একজন নিচু মন মানসিকতার লোককে বিয়ে করবো না।কতো ভালো মনের মানুষ ভেবেছিলাম আপনাকে।আসলে আপনার চেহারা টা সুন্দর। কিন্তু মন সুন্দর নয়।আপনি মনুষ্যত্বহীন।আপনার ভেতর যদি কোনো মনুষ্যত্ববোধ থাকতো তাহলে আপনি একটা মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করতে চাইতেন না।”
-” কি করতাম বলো? ভালোবাসি তোমাকে।”
-” আপনার ভালোবাসার খ্যাতায় আগুন।আমি না আপনাকে ভালোবাসি।আর না আপনাকে বিয়ে করবো।আমার যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।আমি সেই ছেলেকেই বিয়ে করবো।”
-” বিয়ে তো তোমার আমাকেই করতে হবে সৌন্দর্যময়ী।”
-” দয়া করেন ডাক্তারবাবু।আমাকে প্লিজ যেতে দ্যান। এতোক্ষণে হয়তো আমাকে না পেয়ে সবাই অনেক চিন্তা করছে। খোঁজাখুঁজি করছে।”
-” যাবে তো সৌন্দর্যময়ী। অবশ্যই যাবে। কিন্তু সেটা আমার ব‌উ হবার পর যাবে।বিয়ে না হ‌ওয়া পর্যন্ত তুমি কোথাও যেতে পারবে না সৌন্দর্যময়ী।”

-” আমি মরে গেলেও আপনার মতো নোংরা মনের মানুষ কে বিয়ে করবো না ডাক্তারবাবু বলে সিজদা বেরিয়ে আসতে গেলেই সারজিস সিজদার সামনে একটা ভিডিও প্লে করে দেয়। ভিডিও তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সালেহা বেগম কে একটা বদ্ধ ঘরে চেয়ারের উপর রশি দিয়ে বেঁধে রেখে মুখের মধ্যে কাপড় গুঁজে রাখা হয়েছে।গুন্ডারা সালেহা বেগমের দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।এটা দেখা মাত্রই পা থেমে গেল সিজদার।বুকে চিনচিনে ব্যথার সৃষ্টি হতে লাগলো।সিজদা সবচেয়ে কাছের মানুষ সালেহা বেগম।তার এই অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়লো সিজদা।চোখ থেকে আপনার আপনি পানি গড়িয়ে পড়লো।সিজদা ছলছল চোখে সারজিসের দিকে তাকাতেই সারজিস বললো,

-” নাউ ইয়োর চয়েস।আমাকে ভালোই ভালোই বিয়ে করবে নাকি তোমার প্রাণ প্রিয় সালেহা খালার মরা লাশ দেখবে?আমার লোকের হাতে যে বন্দুক দেখতে পাচ্ছো এটা কিন্তু খেলনা বন্দুক নয়। একদম লোডেড গান।ছয় ছয় টা গুলি আছে ওর মধ্যে। ট্রিগারে চাপ দেওয়া মাত্রই বন্দুক থেকে গুলি বের হয়ে তোমার সালেহা খালার মাথা ছিন্নভিন্ন করে দিবে। তুমি কি চাও তোমার জন্য একটা নিরীহ মানুষের প্রাণ যাক?আমাকে বিয়ে করতে এতো সমস্যা কোথায় বলো তো সৌন্দর্যময়ী? আমার কি নেই? টাকা পয়সা ধন দৌলত বাড়ি গাড়ি সব আছে।হাজার হাজার মেয়ে পাগল আমার জন্য। কিন্তু আমি পাগল তোমার জন্য।সিজদা কিছু বলছে না দেখে‌ সারজিস আবারো বললো,
-” বলো না সৌন্দর্যময়ী বিয়ে করবে আমাকে? হবে কি আমার মনের রাজ্যের রানী?”

-” সিজদা কোন কথা না বলে চুপচাপ চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হবার পর কাজিসহ আরো অনেকে কাজি অফিসে প্রবেশ করে।সারজিস সিজদার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। মোনাজাত শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।সকলে মিষ্টি খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এদিকে সারজিস এসে সিজদার কোমর ধরে সিজদা কে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে।সিজদা ছটফট করতে করতে বললো,

-” কি করছেন টা ডাক্তারবাবু ? ছাড়ুন বলছি।না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি আপনার কথা মেনে নিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি তার মানে এই নয় যে আপনি যা নয় তাই করবেন আমার সাথে।”
-” সবাই মিষ্টি খাচ্ছে।আমাকে মিষ্টি খাওয়াবে না সৌন্দর্যময়ী।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ১৮

-” আপনি লুলা নাকি যে আপনাকে আমার মিষ্টি খাইয়ে দিতে হবে? আপনার ইচ্ছে হলে নিজে খান।না হলে না খান।কথাটা বলার সাথে সাথেই সারজিস সিজদার ওষ্টে নিজের ওষ্ট মিলিয়ে দেয়।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২০