মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৭
নুজাইফা নূন
-“ঐ তো বউমণি চলে এসেছে।”
-” সামিরার কথা শুনে সারজিস সামনে তাকাতেই সারজিসের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে। বুকের বাঁ পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয়। বুক ফুঁড়ে হৃদয় বেরিয়ে আসতে চায়।কণ্ঠনালী শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে আসে। তার হাত থেকে গ্লাস নিচে পড়ে যায়।তার সামনে লাল টুকটুকে জামদানি শাড়ি পরা, ভেজা চুল,নাকে নাকফুল, কানে দুল ,হাতে চুড়ি পরে সিজদা দাঁড়িয়ে রয়েছে।সিজদা কে এই রুপে দেখে সারজিস দু কদম পিছিয়ে যায়।তার মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসে,
-”সৌন্দর্যময়ী!”
-” সারজিসের হাত থেকে গ্লাস পড়ে যেতে দেখে সাইফানের কপালে ভাঁজ পড়ে।সাইফান বিচলিত কণ্ঠে বললো,
-” হোয়াটস হ্যাপেন্ড ব্রো? এনিথিং রং?”
-” নো ।আ’ম অল রাইট।”
-” কিন্তু তোর চোখ মুখ যে অন্য কথা বলছে ভাই। কিছু তো একটা হয়েছে।”
-” কিছুই হয় নি ব্রো।”
-” সিজদা কে দেখে তোর হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেলো কেন? তুই কি সিজদার মাঝে পেত্মী দেখতে পেলি নাকি?”
-” না না। সেরকম কিছু নয়।ঐ ঐ এমনিতেই হাত ফসকে পড়ে গিয়েছে।”
-” তুই তো হলুদ বিয়ে কোনো কিছুতেই ঐ বাড়িতে যাস নি। এমনকি আমার বউয়ের ছবি টাও দেখিস নি।
তাই তো আমার বউ কে চিনতেও পারছিস না।ও সিজদা।আমার তিন কবুল বলে বিয়ে করা বউ।আর তোর ভাবী।”
-” ভাবী কথাটা যেন সারজিসের বুকে সুঁচের মতো বিঁধে গেলো।চোখ ছলছল করে উঠলো তার।সারজিস তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সাইফান সারজিসের হাত ধরে সিজদার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” তোর ভাবীর সাথে পরিচিত না হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিস কেনো?অতঃপর সাইফান সিজদার পাশে দাঁড়িয়ে সিজদার কাঁধে হাত রেখে বললো,
-” আমার একমাত্র ভাই সারজিস মির্জা। একজন নামকরা কার্ডিওলজিস্ট।হাজার হাজার মেয়েরা আমার ভাই বলতে পাগল।ভাইয়ের সাথে পরিচিত হও।”
-” সিজদা এতোক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো।সারজিস মির্জা নামটা শুনেই বুক ধুক করে উঠে তার।যে মানুষ টা তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছে সেই মানুষ টার সাথে একই বাড়িতে,একই ছাঁদের নিচে থাকতে হবে ভাবতেই সিজদার মুখটা চুপসে গেল। এদিকে সাইফান বারবার সারজিসের সাথে কথা বলার জন্য তাড়া দিচ্ছে।সাইফানের কথা শুনে সিজদা ফ্লোর থেকে নজর সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় সিজদার।সিজদা সারজিসের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে দেখে বললো,
-” ডাক্তারবাবু আপনি এই বাড়িতে ?আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?”
-”কোনো স্বপ্ন দেখছো না।আমি সত্যিই তোমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।”
-”আমি তো ভাবতেও পারিনি এখানে আপনাকে দেখতে পাবো। আপনার সাথে আবারো আমার দেখা হয়ে যাবে।”
-”সারজিস কিছু বলার আগেই সাইফান বললো,
-”তোমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমরা একে অপরকে চিনো।ভাই তুই যে তোর ভাবী কে আগে থেকেই চিনিস এটা আমাকে বলিস নি কেন?সারজিস কি বলবে বুঝতে পারে না। অবশ্য তার বলার মতো কিছুই নেই।সারজিস কে চুপ থাকতে দেখে সাইফান আবারো বললো,
-” সিজদা তুমি ভাইকে চিনো?”
-” হ্যাঁ চিনি তো। ডাক্তারবাবু নামে চিনি।
ডাক্তারবাবু খুব ভালো মনের মানুষ।কোমল হৃদয় তার ।কিছু দিন আগে আমি একটা বিপদে পড়েছিলাম।তখন ডাক্তারবাবু নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একাই চার পাঁচ টা গুন্ডার সাথে মারামারি করেছিলো।আমার জীবন বাঁচিয়েছিলো।আমাকে বাঁচাতে গিয়ে তার হাতে আঘাত ও লেগেছিলো।যে আমার জীবন বাঁচিয়েছে তাকে এতো সহজে ভুলে যাই কি করে?”
-” সারজিস যেন পাথর হয়ে গিয়েছে।কণ্ঠনালী শুকিয়ে এসেছে তার।তার যেন নিজের চোখ ,কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না।যেই মেয়েকে সে তার মন দিয়েছে ,যেই মেয়েটার কথা ভেবে সে নির্ঘুমে রাতের পর রাত কাটিয়েছে।সেই মেয়েটা অন্য কারো বউ হয়ে তাদের বাড়িতে এসেছে ।এটা মানতে পারছে না সারজিস।বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।সারজিস আর এক মিনিট ও বিলম্ব না করে তড়িৎ গতিতে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে মাথার চুল খামচে ধরে ফ্লোরে বসে পড়ে।গা থেকে পাঞ্জাবি টা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। নিজেকে বড্ড অসহায়, পাগল পাগল লাগছে তার।সে কি করবে কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছে না।সারজিস ফ্লোর ছেড়ে উঠে দেয়ালে পরপর কয়েকটা ঘুষি মেরে বললো,
-” এতো বড় ভুল আমি কিভাবে করতে পারলাম? নিজের হাতে নিজের ভালোবাসার কোরবানি করে দিলাম? দাদু সৌন্দর্যময়ীর সাথেই আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো। বারবার বলেছিলো মেয়ের ছবি দেখতে, মেয়ের সাথে মিট করতে।
অথচ আমি তাকে না দেখেই রিজেক্ট করে দিলাম।আবার তারই পরিচয় না জেনে তাকেই আমার বেহেয়া মন টা দিয়ে দিলাম।তার হাতে হাত রেখে পায়ে পা মিলিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখলাম।
কি করে এমন ভুল করতে পারলাম? কি করে?
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৬
চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো বউ হয়ে গেলো।আমি কিছুই করতে পারলাম না।
আমার নিজের ভালোবাসা কে অন্য কারো সাথে কিভাবে সহ্য করবো আমি? কিভাবে রোজ রোজ তার ভেজা চুল দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করবো? কিভাবে? কিভাবে বলতে বলতে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে সারজিস।”1