মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩১
নুজাইফা নূন
”বড়লোক বাড়ির বউ হয়ে অহংকারে মাটিতে পা পড়ছে না তোর।আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ও প্রয়োজন মনে করছিস না। আমি সারজিসের বউ হয়ে এই বাড়িতে আসা মাত্রই তোর সব অহংকার ফানুস হয়ে যাবে। তুই আবার আমার চাকরানী হয়ে যাবি।যার স্থান যেখানে তাকে সেখানেই মানায়।”
-” ঠিক বলেছেন ম্যাডাম।যেমন আপনার স্থান জেলখানায়।আপনাকে জেলখানা তেই মানাবে।”
-” পুরুষালী কণ্ঠস্বর শুনে সবাই পেছনে তাকিয়ে দেখে দরজায় পুলিশ দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায় ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য বিথী চৌধুরী কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।বিথী চৌধুরীর চোখে মুখে ও ভয়ের স্পষ্ট ছাপ ফুটে উঠেছে।তিনি ঐশ্বর্য কে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললেন,
-” প্যানিক করো না বেবি।আমি আছি তো।আমি তোমার কিছুই হতে দিবো না। তুমি একদম চিন্তা করো না।বিথী চৌধুরীর মুখের কথায় শান্ত হতে পারে না ঐশ্বর্য।আজকে নিজের ভুলের জন্য নিজেকেই পস্তাতে হচ্ছে।বিথী চোধুরী ঐশ্বর্য কে বারবার বলেছিলো সে যেন রংপুর তার খালামণির বাসার গা ঢাকা দিয়ে থাকে। কিন্তু ঐশ্বর্য বিথী চোধুরীর কথা না শুনে রংপুর থেকে চলে এসেছে। শুধু তাই নয়। বিথী চোধুরী ঐশ্বর্য কে হালিমা মঞ্জিলে নিয়ে আসতে চায় নি। ঐশ্বর্য বাড়িতে ঝামেলা করে জোর করেই চলে এসেছে।
ঐশ্বর্য ভাবতেই পারে নি পুলিশ ব্যাপার টা নিতো জল ঘোলা করবে।হালিমা মঞ্জিলে পুলিশ দেখে অবাক হয়ে যান হালিমা বেগম।তিনি এগিয়ে এসে বললেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” এসব কি হচ্ছে অফিসার? আজকে আমাদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান রয়েছে।এতো এতো গেস্ট।এরই মধ্যে বিনা নোটিশে , বিনা পারমিশনে পুলিশ কেন?আপনাকে কে আসতে বলেছে? “
-” সরি টু সে ম্যাডাম।বাট অপরাধী যেখানে থাকবে পুলিশ ও সেখানেই থাকবে।এটাই তো স্বাভাবিক তাই না?আর এই কেস টা তে আপনারা না চাইতেও জড়িয়ে পড়েছেন।তাই বাধ্য হয়ে এমন একটা দিনে আমাদের আসতে হয়েছে ম্যাডাম। এজন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।বাট ইটস্ মাই ডিউটি। আসতেই হতো আমাদের।”
-” কি কারণে এসেছেন সেটা বলুন।আর যত দ্রুত সম্ভব কেস সলভ করুন।এখানে কোনো সিনক্রিয়েট হোক ।সেটা আমি চাচ্ছি না।”
-”ঐশ্বর্য চৌধুরী কে আমরা বেশ কিছুদিন থেকে খুঁজছি। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এমনকি তার নাম্বার ট্র্যাক করে ও কোনো লাভ হয় নি। লোকেশন চৌধুরী ভিলাতে ছিলো। কিন্তু সে চৌধুরী ভিলায় ছিলো না।তবে চৌধুরী ভিলার উপর আমাদের নজর ছিলো।ঐ বাড়িতে কে কখন আসছে কে কখন যাচ্ছে সবটাই আমাদের নজরে ছিলো।আমরা জানতে পেরেছি ঐশ্বর্য চৌধুরী এই বাড়িতে আছেন।আমরা ঐশ্বর্য চৌধুরী কে অ্যারেস্ট করতে এসেছি। আমাদের কাছে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে।”
-” পুলিশ অফিসারের কথা শুনে রাশেদ চৌধুরী হতবাক হয়ে যান।তিনি এগিয়ে এসে বললেন,
-” এসব কি ধরনের কথা বলছেন অফিসার? আমার মেয়েকে অ্যারেস্ট করবেন মানে ? কি করেছে আমার মেয়ে? কিসের ভিত্তিতে আপনি আমার মেয়েকে অ্যারেস্ট করতে এসেছেন?”
-”কিছুদিন আগে থানায় আপনারা যে মিসিং ডায়েরী করেছিলেন সেখানে আপনার মেয়ে বলেছিলো আপনার ভাগ্নি কিডন্যাপ হয়েছে। আসলে সেটা কোনো কিডন্যাপ ছিলো না।ছিলো একটা পরিকল্পিত প্ল্যান।এই প্ল্যান টা কে সাজিয়েছিলো? কে আসল মাস্টারমাইন্ড জানেন?”
-” কে ?”
-” ঐশ্বর্য! ঐশ্বর্য চৌধুরী।ডটার অফ রাশেদ চৌধুরী।”
-” হোয়াট? কি সব রাবিস কথা বলছেন অফিসার?আপনি পুলিশ অফিসার বলে আমার মেয়ের নামে মিথ্যা ইলিগেশন আনতে পারেন না।যা নয় তাই বলতে পারেন না।”
-” রাবিস কথা আমি বলছি না।যে গুন্ডাগুলো আপনার ভাগ্নি কে কিডন্যাপ করেছিলো। তাদের কে এই বাড়ির ছেলে সারজিস মির্জা পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো।গুন্ডাগুলো সহজে মুখ খোলে নি। বিভিন্ন ধরনের থেরাপি দেওয়ার পর তারা আসল মাস্টারমাইন্ডের নাম বলেছে। আপনার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়। আপনি আপনার মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন।”
-” রাশেদ চৌধুরী ঐশ্বর্যের সামনে গিয়ে বললো,
-” এসব কি শুনছি ঐশ্বর্য? পুলিশ অফিসার যা বলছেন সেগুলো কি সত্যি? সত্যিই কি তুমিই আসল মাস্টারমাইন্ড?রাদেশ চৌধুরীর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না ঐশ্বর্য।সে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে।যা দেখে রাশেদ চৌধুরী বললো,
-”আমার যা বোঝার আমি বুঝে গিয়েছি অফিসার।আমি চেয়েছিলাম সিজদার সাথে যে বা যারা অন্যায় করেছে।তারা শাস্তি পাক।সে আমার মেয়ে বা স্ত্রী হলেও ক্ষমার অযোগ্য।আপনারা ঐশ্বর্য চৌধুরী কে নিয়ে যান অফিসার।”
-” রাশেদ চৌধুরীর কথায় বিথী চোধুরী তেতে উঠে বললো,
-” কেমন বাবা তুমি?কোথায় মেয়েকে রক্ষা করবে ।তা নয় তো নিজের মেয়েকে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছো তুমি?বাবা হয়ে মেয়েকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে একটু ও বুক কাঁপছে তো তোমার?একটু ও কষ্ট লাগছে না রাদেশ?”
-”তুমি যেমন ঐশ্বর্যের মা।তেমনি আমিও ঐশ্বর্যের বাবা। তোমার মতো আমারো কষ্ট হচ্ছে।কোনো বাবাই চায় না তার মেয়ে তাকে ছেড়ে অন্ধকার কুঠুরিতে থাকুক।আমি বাবা হয়েও মেয়েকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছি।কারণ ঐশ্বর্য একজন অপরাধী।আমি ভাবতেও পারিনি ও এতো নিচে নেমে যাবে। ক্রাইমের সাথে ইনভলব হয়ে যাবে।মেয়েকে নিয়ে কতো বড় মুখ করে কথা বলতাম আমি। কিন্তু ও কি করলো? আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলো।ও যে আমার মেয়ে ভাবতেও লজ্জা লাগছে আমার।আমি তো রাস্তা ঘাটে বের হতে পারবো না। লোকজন আমার মুখে থুথু ছুঁড়ে দিবে। রাশেদ চৌধুরীর কথা শেষ না হতেই ঐশ্বর্য এসে রাশেদ চৌধুরীর পা জড়িয়ে ধরে বললো,
-” সরি পাপা।আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।আমি রাগের মাথায় ভুল করে ফেলেছি পাপা।এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও পাপা।আমি আর কোনদিন ও কোন ক্রাইম করবো না।বিলিভ মি পাপা আমি ভালো হয়ে যাবো।প্লিজ পাপা। নিজেকে শুধরে নেওয়ার আমাকে একটা সুযোগ দাও।”
-” সিজদা তো কখনোই তোমার কোন খারাপ চায় নি।তাহলে তুমি সিজদার সাথে কেন এমনটা করলে? সেদিন যদি সারজিস ঠিক টাইমে না আসতো তাহলে সিজদার কতো বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো তোমার কোন আইডিয়া আছে? তুমি তো একটা মেয়ে ঐশ্বর্য।একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়েকে নরপশুদের হাতে তুলে দিতে একটু ও বুক কাঁপলো না তোমার?তুমি আমার মেয়ে এটা ভাবতেই ঘৃণা লাগছে আমার। অফিসার আপনারা নিজে যান ঐশ্বর্য চৌধুরী কে।তার অনুমতি পেয়ে মহিলা কনস্টেবল এসে ঐশ্বর্য কে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩০
পুরো ঘটনা শুনে স্তদ্ধ হয়ে যায় হালিমা বেগম।সবটা তার কাছে স্বচ্চ কাঁচের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।তিনি আর এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে সারজিসের রুমে ছুটে আসেন।সারজিস তখন রুমে বসে সিগারেট ফুঁকছিলো।যে ছেলেটা সবসময় তার পেশেন্টদের সিগারেট না খাওয়ার পরামর্শ দেয়।সেই ছেলেটা কে সিগারেট খেতে দেখে অবাক হয় হালিমা বেগম।হালিমা বেগম ধীর পায়ে রুমে ঢুকে সারজিসে কাঁধে হাত রাখতেই সারজিস ঠোঁট থেকে সিগারেট ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়।সারজিস কে দেখে বড্ড খারাপ লাগে হালিমা বেগমের।মাত্র কয়েক ঘন্টায় ছেলেটার চোখ মুখের করুন অবস্থা হয়ে গিয়েছে।হালিমা বেগম বিছানার উপর বসে সারজিসের মাথাটা নিচের কোলের উপর রেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
-”সিজদাই সেই মেয়ে যাকে তুমি তোমার মন দিয়েছো তাই না দাদুভাই?”