মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩২

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩২
নুজাইফা নূন

-”সিজদাই সেই মেয়ে যাকে তুমি তোমার মন দিয়েছো তাই না দাদুভাই? সিজদাই সেই মেয়ে যাকে তুমি গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলে। সিজদাই সেই মেয়ে যাকে তুমি সৌন্দর্যময়ী বলে ডাকো। সিজদাই সেই মেয়ে যার কথা ভেবে তোমার মুখে হাসি ফুটে উঠতো।তোমার দিন রঙ্গিন হয়ে উঠতো।আমি তো সিজদার সাথেই তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলাম দাদুভাই।তোমাকে বলেছিলাম তুমি সিজদার সাথে দেখা করো। অনন্ত একবার তার ছবিটা দেখো। তুমি ছবি টাও দেখো নি দাদুভাই। যদি তুমি একবার সিজদার ছবি দেখতে ‌।তাহলে আজকের এই দিন দেখতে হতো না।তোমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতো।জীবনটা অন্য রকম সুন্দর হয়ে উঠতো।”

-” হালিমা বেগমের কথায় সারজিস কোনো উত্তর দেয় না।যেন শব্দভাণ্ডার ফুরিয়ে এসেছে।দেবার মতো কোনো উত্তর নেই তার কাছে।ডুকরে কেঁদে ওঠে সারজিস। পুরুষ মানুষের চোখের পানি খুব সহজে বের হয় না।আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে যখন ভেতর টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।তখন চাইলেও চোখের পানি আটকে রাখা যায় না। সমস্ত বেড়াজাল ভেঙ্গে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।সারজিসের চোখের পানি দেখে‌ কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো হালিমা বেগমের।সারজিসের মা যখন সারজিস কে ছেড়ে চলে যায়,তখন সারজিসের চোখে শেষবার পানি দেখে ছিলো হালিমা বেগম।এরপর যতো কষ্ট যন্ত্রণা হোক না কেন সারজিস কাঁদে নি। হালিমা বেগম সারজিসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবারো বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম আমি।
তুমি তো সবটাই আমার সাথে শেয়ার করতে।তাহলে এই ব্যাপার টা লুকিয়ে গেলে কেন দাদুভাই?সিজদার সাথে তোমার বিয়ের পাকা কথা হবার পর ঐ এক্সিডেন্ট টা হয়। সেদিন‌ই রামিম ঐ মেয়ের ব্যাপারে আমাকে বলেছিলো।আমি ভেবেছিলাম সাইফানের বিয়েটা মিটে গেলে তারপর ঐ মেয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তোমাদের চার হাত এক করে দিবো। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো। তুমি যদি একটা বার আমাকে বলতে আজকের দিনে তোমাকে এই অবস্থায় দেখতে হতো না।”

-” থাক না দাদু।সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পায় না দাদু। ভালোবাসা মানেই যে তার সাথে বিয়ে হতে হবে, সংসার করতে হবে ।এমন টা নয়। ভালোবাসার মানুষ কে দূর থেকেও সুখী দেখার মধ্যে সুখ সুখ অনুভব হয়।আমি চাই সৌন্দর্যময়ী ভালো থাকুক।সুখে থাকুক।”
-” আর এই যে তুমি কষ্ট পাচ্ছো,তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছো।হার্টের ডক্টর হয়েও হার্টের ক্ষতির জন্য সিগারেট গিলছো ।এর দায়ভার কে নিবে দাদুভাই?”
-”সৌন্দর্যময়ী আমার জীবনের প্রথম নারী।আমার মায়ের পরে পৃথিবীতে দেখা সবচেয়ে সেরা সুন্দরী নারী।যাকে প্রথম বার দেখেই আমি তার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম।সেই মায়া থেকে ভালোলাগা ।আর সেই ভালোলাগা থেকে কখন যে সেটা ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে আমি আমি নিজেও বুঝতে পারি নি। সৌন্দর্যময়ী কে আমি আমার মনটা দিয়েছিলাম দাদু।তার সাথে সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলাম।তার কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঐ যে একটা কথা আছে না,যদি থাকে নসিবে,

আপনা আপনি আসিবে। আসলে সৌন্দর্যময়ী আমার নসিবে নেই।থাকলে আমি অবশ্যই তাকে নিজের করে পেতাম।”
-” তুমি একদম মন খারাপ করো না দাদুভাই।সিজদা আন এডুকেটেড একটা মেয়ে। বাবা মা পরিবার পরিজন মোদ্দা কথা নিজের বলতে কিছুই নেই।আসলে সিজদা তোমার ব‌উ হবার যোগ্যতাই রাখে না।আমি সিজদার থেকে সুন্দরী, শিক্ষিতা মেয়েকে তোমার জন্য খুঁজে নিয়ে আসবো।”
-” আমি নিজেও জানি তুমি সিজদা কে কতোটা পছন্দ করো। তুমি শুধু মাত্র আমার মন রক্ষার্থে এগুলো বলছো।আমি ছোট বাচ্চা ন‌ই দাদু।

তাছাড়া প্রকৃত ভালোবাসা কখনোই সৌন্দর্য খোঁজে না দাদু।আমি সৌন্দর্যময়ী কে সত্যিই মন থেকে ভালোবেসেছি ‌।আমার ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র লোভ , লালসা ছিলো না।আমার মনে হয় না দ্বিতীয় কোনো নারীকে আমি নতুন করে আমার মন দিতে পারবো।তাকে ভালোবাসতে পারবো।তার সাথে সংসার করতে পারবো।”
-” জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না দাদুভাই। তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাও নি বলে এটা নয় যে তোমার জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে।নিজের জীবন কে আরো একটা সুযোগ দেওয়া উচিত দাদুভাই।”
-” জীবন থেমে না থাকলেও ভালোবাসা থেকে যায় আজীবন। ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যায় না দাদু।”

-” অনেক কথা হয়েছে দাদুভাই।এবার উঠো তো।ফ্রেশ হয়ে নাও।এভাবে চললে তো তুমি অসুস্থ্য হয়ে পড়বে।সিজদা যদি একবার জানতে পারে তুমি তাকে ভালোবাসো।তার জন্য প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছো।তাহলে মেয়েটা গিল্টি ফিল করবে।এক বাড়িতে এক‌ই ছাদের নিচে বসবাস করাটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠবে সিজদার কাছে। আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। তবুও বলবো তুমি একটু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করো দাদুভাই।”
-” আমি চাই না আমার জন্য সৌন্দর্যময়ী কোনো প্রকার অসুবিধা হোক।আমিও তার মুখোমুখি হতে চাই না।তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দাদু।”
-” কি সিদ্ধান্ত?”

-”আমি দেশে থাকবো না। আমি কানাডা খালামণির কাছে চলে যাচ্ছি।”
-” হোয়াট? আর ইউ ক্রেজি?এমন একটা সিদ্ধান্ত একা একা নিয়ে নিলে? কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না দাদুভাই?”
-” আ’ম নট ক্রেজি দাদু।আই জাস্ট ওয়ান্ট টু বি ওয়েল।এই বাড়িতে আমার চোখের সামনে সৌন্দর্যময়ী কে অন্য কোনো পুরুষের সাথে আমি সহ্য করতে পারবো না দাদু।রোজ রোজ তার ভেজা চুল দেখতে পারবো না।আমি মারা যাবো দাদু। বিলিভ মি আ’ম গোয়িং টু ডাই।আমি আমার নিজের ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
-” তাই বলে তুমি এ দেশের মাটি ছেড়ে আমাদের সবাইকে ছেড়ে তুমি কানাডা চলে যাবে? আমাদের কে ছেড়ে থাকতে পারবে তুমি? একটু ও কষ্ট হবে না?”

-” কষ্ট তো এখনো কম পাচ্ছি না দাদু।”
-” যেতেই হবে তোমার?”
-” হ্যাঁ দাদু।ফেরার যে আর কোন উপায় নেই আমার।ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”
-” তুমি একজন এডাল্ট পার্সন। নিজের ভালো নিজে বুঝতে শিখে গিয়েছো।এখন তোমাকে আর কিছু বলে লাভ নেই।তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো বলে হালিমা বেগম চোখের পানি মুছতে মুছতে সারজিসের রুম থেকে বের হয়ে যান।”

-” অনুষ্ঠান শেষ হতেই আত্মীয় স্বজন সবাই চলে যেতে শুরু করে। ঐশ্বর্য কে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর রাশেদ চৌধুরী, বিথী চোধুরী দুজনেই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে।রাদেশ চৌধুরী নিজে ঐশ্বর্য কে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েও কষ্টে বুক ভারী হয়ে আসে তার।সন্তান যেমন‌ই হোক সন্তান তো।তার পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সম্ভবপর ছিলো না।সালেহা বেগম কে রেখে তারা দুজন‌ই চৌধুরী ভিলায় ফিরে যান। অনুষ্ঠান শেষ হতেই সালেহা বেগম বাড়ি ফেরার কথা বললেই চোখ ভিজে যায় সিজদার।সিজদা সালেহা বেগম কে কিছুতেই যেতে দিবে না। অগত্যা সালেহা বেগম হালিমা মঞ্জিলে থেকে যায় ‌।

সিজদা রিসিপশন থেকে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে একে একে সব গয়না খোলার চেষ্টা করে। তখনি সাইফান রুমে আসে।সিজদা কে গয়না খোলার চেষ্টা করতে দেখে সাইফান এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে নিজেই সিজদার গা থেকে সমস্ত গয়না খুলে দেয়। গয়না খুলতে গিয়ে মাঝে মাঝে সাইফানের হাতের স্পর্শ লাগছে সিজদার শরীরে।যার দরুন কেঁপে কেঁপে উঠছে সে।সারা শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।বক্ষস্থল ক্রমাগত উঠানামা করছে।ক্রমশ নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে।

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩১

সিজদা আবেশে চোখ বন্ধ করে দু হাত দিয়ে নিজের শাড়ির আঁচল খামচে ধরে। গয়না খোলা হলে সাইফান খুব যত্ম সহকারে সিজদার চুল থেকে ক্লিপ খুলে সিজদার লম্বা চুলগুলো উন্মুক্ত করে দেয়।সাইফানের বড্ড ইচ্ছে হয় সিজদার খোলা চুলে নাক ডুবিয়ে চুলের ঘ্নাণ নিতে। কিন্তু তার সাহস হয় না।সে নিজের ইচ্ছা কে দমিয়ে রেখে ওয়াশ রুমে চলে যায়।সাইফান ফ্রেশ হয়ে আসলে সিজদার হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার।সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করছে।ক্লান্ত থাকার দরুন সিজদার বিছানায় যাওয়ার মিনিট কয়েক অতিবাহিত হবার পর পরই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৩