মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৩

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৩
নুজাইফা নূন

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৩ তড়িৎ গতিতে ফোন সাইলেন্ট মোডে রেখে দেয়।কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার ।ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তানশি কল করেই যাচ্ছে‌। কিন্তু সাইফানের সে দিকে কোনো খেয়াল নেই।সাইফান মুগ্ধ দৃষ্টিতে সিজদার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তানশি ও কম যায় না।সে পণ করেছে যখন না সাইফান তার কল রিসিভ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সে অনবরত কল করতেই থাকবে।এ পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সাইফান কল রিসিভ করে।কল রিসিভ হতেই অপর প্রান্ত থেকে তানশি কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,

-” তুমি আমার কল রিসিভ করছো না কেন সাইফান?হোয়াট ইজ ইউর প্রবলেম?”
-” সরি বেবি। বিশ্বাস করো আমি ফোনের কাছে ছিলাম না।না হলে আমি তোমার কল রিসিভ না করে থাকতে পারি বলো?”
-” ডোন্ট লাই অ্যাট অল।আমি খুব ভালো করে জানি তুমি ইচ্ছে করেই আমার কল রিসিভ করছিলে না।আমার কল রিসিভ না করে কি করছিলে তুমি? চুপ করে থেকো না সাইফান।প্লিজ অ্যান্সার মি।ব‌উয়ের সাথে রোমান্স করছিলে তাই না?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ত‌ওবা ! ত‌ওবা! “
-” হুঁ।এমন ভাব করছো যেন ভাজা মাছ টাও উল্টে খেতে জানো না তুমি।”
-” কাম অন বেবি।তুমি ভুল বুঝছো আমাকে।”
-” সম্পূর্ণ প্ল্যান টা কিন্তু তোমার ছিলো সাইফান।আমার নয়।তাই বেশি চালাকি করার চেষ্টা করবে না। তুমি খুব ভালো করে জানো বেশি চালকির ফল খুব বেশি ভালো হয় না।আমি চাইলেই যেকোনো মুহূর্তে তোমার চাকরির ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে পারি। ইনফ্যাক্ট
তোমার মতো ছেলেকে ঠিক সেনাবাহিনীতে মানায় না।যার মন টা এতো অপরিষ্কার।সে দেশ সেবা কিভাবে করবে?”
-” জাস্ট শাট আপ। ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট ।”
-” লিমিট ক্রস তুমি করছো সাইফান।আমি হাজার বার কল করেছি তোমাকে‌। তুমি একটা বারও আমার কল রিসিভ করার প্রয়োজন বোধ করো নি।”

-” আমি সরি বলছি তো বেবি।এমন ভুল আর কখনো হবে না।”
-” প্রমিস ?”
-” পাক্কা প্রমিস।”
-” আচ্ছা ফিরবে কবে?”
-” আর মাত্র কয়েকদিন।প্ল্যান সাকসেসফুল হলেই তোমার সাইফান তোমার কাছে ফিরে আসবে।”
-” সত্যি তো।”
-” ইয়েস মাই লেডি।”
-” আই মিস ইউ।”
-” আই মিস ইউ টু।বাই দ্যা ওয়ে এতোবার কল করেছো । কোনো ইমার্জেন্সি কেস নাকি?”
-” না গো।তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো।তোমার মিষ্টি কণ্ঠ শোনার তৃষ্ণা জেগেছিলো মনে। তৃষ্ণা মিটে গিয়েছে।এখন রাখছি ।বাই।লাভ ইউ।”

-” লাভ ইউ টু বলে ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে সাইফান আবারো সিজদার পাশে এসে বসলো।সিজদার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে
গুনগুন করে গাইতে শুরু করলো,
-’বড় মায়া মায়া লাগে গো তোমায় দেখিতে
বড় মায়া মায়া লাগে গো তোমায় দেখিতে
যতই দেখি লাগে ভালো
যতই দেখি লাগে ভালো
পারিনা চোখ ফেরাতে তোমায় দেখিতে
বড় মায়া মায়া লাগে গো তোমায় দেখিতে
বড় মায়া মায়া লাগে গো তোমায় দেখিতে।
চন্দ্র সূর্য হার মানায় তোমার রুপেতে
চন্দ্র সূর্য হার মানায় তোমার রুপেতে
বাগানের ফুল ঝরে পরে,
বাগানের ফুল ঝরে পরে
তোমার হাসিতে গো তোমায় দেখিতে
বড় মায়া মায়া লাগে গো তোমায় দেখিতে
বড় মায়া মায়া লাগে গো তোমায় দেখিতে।

-”বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করতেই ঘুম হালকা হয়ে যায় সাইফানের।সাইফান চোখ খুলতেই সিজদা কে নিজের বুকের উপর সিজদা কে দেখে হতবাক হয়ে যায়।সাইফানের স্পষ্ট মনে আছে সে রাতে শোবার সময় তাদের মাঝখানে দেয়াল হিসেবে কোলবালিশ রেখেছিলো।সাইফান তড়িৎ গতিতে পাশে তাকিয়ে দেখে মাঝখানে কোনো বালিশ নেই।বালিশ ফ্লোরে পড়ে রয়েছে।সিজদা বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে তার বুকের সাথে লেপ্টে পড়ে রয়েছে।ফ্যানের বাতাসে সিজদার বেবি হেয়ারগুলো সিজদার চোখ মুখে বারি খাচ্ছে।সাইফান সন্তর্পণে সিজদার মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে কানের পাশে গুঁজে দেয়।সাইফানের হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যায় সিজদার।সিজদা চোখ খুলে নিজেকে সাইফানের এতো কাছাকাছি দেখে শুকনো ঢোক গিলে ।সাইফানের গরম নিঃশ্বাস সিজদার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। মাদকতা কাজ করছে সিজদার চোখে।সিজদা তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ও উঠতে পারে না।সিজদার গলায় থাকা চেইন সাইফানের শার্টের বোতামে আঁটকে যাওয়ার দরুন সিজদা আবারো সাইফানের বুকের উপর পড়ে যায়। তাদের মধ্যে দূরত্ব নেই বললেই চলে। একজনের গরম নিঃশ্বাস অন্যজনের উপর আঁচড়ে পড়ছে।সিজদার বুকের ভেতর যেন উথাল পাতাল শুরু হয়ে গিয়েছে। শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। বুকের মধ্যে ঘড়ির কাঁটার শব্দের মতো টিকটিক করে আওয়াজ হচ্ছে । বক্ষস্থল ক্রমাগত উঠানামা করছে। অস্থিরতা বাড়ছে সিজদার। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে সর্বাঙ্গে।

সাইফানের চোখে চোখ পড়তেই‌ লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায় তার।সাইফান সিজদার অস্বস্তি বুঝতে পেরে নিজের শার্টের বাটন থেকে সিজদার চেইন ছাড়িয়ে নেয়।সিজদা তড়িৎ গতিতে সাইফানের থেকে সরে অপর পাশে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে থাকে।সাইফান ওঠে ওযু করে সাদা পাঞ্জাবি টুপি পরে মসজিদে চলে যায়।।”

-” সাইফান যেতেই সিজদা উঠে বিছানা গুছিয়ে রুম টা পরিপাটি করে ওয়াশরুমে চলে যায়।প্রায় ত্রিশ মিনিট পর সিজদা শাওয়ার নিয়ে ব্লাউজ , পেটিকোট পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।সিজদা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে সাইফান বিছানার উপর বসে ফোন স্ক্রল করছে।সিজদা ভেবেছিলো সাইফান আরো পরে আসবে।তাই সে শুধু মাত্র ব্লাউজ পেটিকোট পরে বের হয়ে পড়ে।ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সাইফান সেদিকে তাকাতেই সিজদা দু হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।সাইফান সেই দৃশ্য দেখে মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।।সিজদা সামিরার সাহায্য নিয়ে শাড়ি পরে নিচে এসে সোজা কিচেনে চলে যায়।সিজদা সামিরার থেকে জেনেছে এ বাড়িতে শেইফ রান্না করেন।বাড়ির সকলে শেইফের হাতের তৈরি রান্না খায় শুনে সিজদা হালিমা বেগমের কাছে রান্না করার জন্য অনুমতি চায়।হালিমা বেগম সিজদা কে কোনমতেই অনুমতি দিতে চান‌ না। অনেক আকুতি মিনতি করার পর হালিমা বেগম সিজদা কে রান্নার জন্য অনুমতি দেন।সিজদার রান্নার হাত অনেক ভালো।সিজদার মামা সিজদার হাতের রান্না খুব পছন্দ করতেন।

সিজদা প্রতি শুক্রবারে তার মামার জন্য স্পেশাল রান্না বান্না করতো।মামার কথা মনে পড়তেই মুখে আঁধার নেমে আসে সিজদার। চৌধুরী ভিলায় কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ে যায়। চোখের চোখের কোণের জল মুছে প্রথমে সবার জন্য চা করে দিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়ে।যদিও এ বাড়ির সকলে ব্রেকফাস্টে ডিম , পরোটা, ফলের জুস, ব্রেড , জেল , ফলমূল এগুলো খায়।কিন্তু সিজদা যেহেতু আজ তার মামা বাড়িতে বেড়াতে যাবে ।তাই সকালের মেন্যুতে সবার জন্য বাসমতি চালের সাদা‌ ভাত, ইলিশ ভাপা,পাঁচ রকমের ভর্তা, চিংড়ি মাছের মালাই কারি, মুগ ডাল ,শিং মাছের পাতলা ঝোল, তেলাপিয়া মাছ ভাজি, বেগুন ভাজি,ট্যাংরা মাছ আলু দিয়ে চচ্চরি,গরুর গোশত ,রোস্ট, ঝরঝরে পোলাও করেছে।সাথে আরো রয়েছে পায়েস, সেমাই, মিষ্টি , দ‌ই।

সিজদার রান্না শেষ হলে বাড়ির হেল্পিং হ্যান্ড বিউটি সব খাবারগুলো ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখে।এর‌ই মধ্যে সবাই ডাইনিং টেবিলে এসে উপস্থিত হয়। এতো এতো খাবার দেখে অবাক হয়ে যায় বাড়ির সকলে।সাইফান আর সিজদা পাশাপাশি চেয়ারে বসেছে।সারজিস এসে দেখে সিজদার মুখোমুখি একটাই চেয়ার খালি রয়েছে। অগত্যা সারজিস না চাইতেও আবারো সিজদার মুখোমুখি হয়ে যায়।শান্তা মির্জা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছেন।সারজিস প্লেট থেকে এক লোকমা খাবার মুখে দিতেই তৃপ্তিতে মন ভরে উঠে তার। শেষ কবে এতো ভালো রান্না খেয়েছে মনে নেই তার।তাকে তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় হালিমা বেগমের।হালিমা বেগম উৎফুল্ল হয়ে বললেন,

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩২

-” কি দাদুভাই? খাবার কেমন লাগছে?”
-” খুব ভালো হয়েছে দাদু।সারজিসের কমপ্লিমেন্ট পেয়ে সামিরা বলে উঠলো,
-” ভালো তো হবেই।দেখতে হবে না রান্নাটা কে করেছে?ব‌উমণি আজকে নিজে হাতে আমাদের সকলের জন্য এতো এতো মজাদার খাবার রান্না করেছে।প্রতিটা আইটেম যা হয়েছে না! একদম চেপে পুটে খাওয়ার মতো।”
-”সারজিস এতোক্ষণ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিলো।কিন্তু যখনি শুনলো সব রান্না সিজদা করেছে।তখন আর সেই খাবার সারজিসের গলা দিয়ে নামতে চাইলো না।সারজিস খাবার ছেড়ে উঠে সোজা হালিমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে যায়।সারজিসের এহেন কার্যে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৪