মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৮
নুজাইফা নূন
-” পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারিপাশ।সিজদার মনে হচ্ছে যেন তার কানের কাছে পাখি কিচিরমিচির শব্দ করছে। কাঁচের জানালা ভেদ করে সকালের সোনালী আলোক রশ্মি সিজদার চোখে মুখে
পড়ছে।সিজদা তড়িৎ গতিতে উঠে বসে। জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখে বুঝতে পারে তার ঘুম থেকে উঠেতে অনেক টা দেরি হয়ে গিয়েছে।যার দরুন ফজরের নামাজ টা মিস হয়ে গিয়েছে তার। অকষ্মাৎ রাতে কথা মনে পড়তেই এক রাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরে সিজদা কে।সিজদা দু হাতে মুখ ঢেকে নেয়।সাইফান কে একটা নজর দেখার জন্য মনটা ছটফট করতে থাকে। কিন্তু সে এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমের কোথাও সাইফান কে পায় না ।
আশাহত হয়ে সিজদা ওয়াশরুম চলে যায়। কিন্তু রোজকার মতন আজো সেই সমস্যা।শাড়ি পরতে না পারা।এতো সকালে সামিরা ও ঘুম থেকে উঠে নি যে সামিরা কে ডাকবে।এদিকে সালেহা বেগম ও রান্নার কাজে ব্যস্ত। উপায়ান্তর না পেয়ে সিজদা নিজেই কোনো মতো পেঁচিয়ে নেয় শাড়ি। কিন্তু দু কদম আগাতেই ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।তখনি সাইফান রুমে প্রবেশ করে।সিজদা কে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে সাইফান দৌড়ে এসে সিজদা কে ফ্লোর থেকে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সিজদার দিকে ভালো করে তাকাতেই হো হো করে হেসে উঠে সাইফান।সাইফান কে হাসতে দেখে সেদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সিজদা।সাইফান হাসলে মেয়েদের মতো গালে টোল পড়ে।বড্ড আর্কষনীয় লাগছে দেখতে।সিজদা আরো লক্ষ করলো সাইফানের উপরের ঠোঁটের ডান সাইডে কালো কুচকুচে একটা তিল রয়েছে।সাইফান কে হাসতে দেখে সব ব্যাথা ভুলে গেলো সিজদা।সিজদা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আপনি হাসছেন কেন?”
-” সাইফান সিজদা কে বিছানা থেকে তুলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
-” দেখো কিভাবে শাড়ি পরেছো তুমি?এভাবে কেউ শাড়ি পরে?তোমার শাড়ি পরার স্টাইল দেখে শুধু আমি না।সবাই হাসবে। তোমাকে দেখতে একদম পেত্মীর মতো লাগছে ।”
-” তো কি করবো ? আমি শাড়ি পরতে পারি না।এতো সকাল বেলা কাউকে ডাকার ও উপায় নেই।তাই তো বাধ্য হয়ে যে রকম পারছি সে রকম পারছি।”
-” সমস্যা নেই।তোমার বর আছে তো।
আমি পরিয়ে দিচ্ছি ।সাইফানের কথা শুনে সিজদার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।সিজদা দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো,
-” না না।তার কোনো দরকার নেই। প্রয়োজনে আমি থ্রি পিস পরে নিবো।”
-”শাড়িতেই নারী। শাড়িতে মেয়েদের অন্যরকম সুন্দর লাগে।আমি জানি তুমি লজ্জা পাচ্ছো বলে না করছো।তোমাকে লজ্জা পেতে হবে না
বলে সাইফান একটা কাপড় নিজের চোখে বেঁধে নিয়ে শাড়ির এক কোণা সিজদার কোমরে গুজে দিয়ে শাড়ির কুচি দিতে শুরু করে।সিজদা শুধু অবাক নয়নে তাকিয়ে রয়েছে।কুচি দেওয়া শেষ হলে সাইফান কুঁচি গুলো গুঁজে দিতে গেলে সাইফানের হাত সিজদার পেট স্পর্শ করে।সাইফানের হাতের স্পর্শে সিজদার সারা শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। ক্রমাগত হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে। বুকের মধ্যে উথাল পাতাল শুরু হয়ে যায়। বারবার কেঁপে কেঁপে উঠে সিজদা। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।সিজদা দুহাতে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে।এরই মধ্যে সাইফানের শাড়ি পরানো কমপ্লিট হয়ে যায়।সাইফান চোখের কাপড় সরিয়ে সিজদা কে ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলের উপর বসিয়ে দিয়ে হেয়ার ড্রেয়ার দিয়ে সিজদার চুল শুকিয়ে দেয়।সাইফানের এমন কেয়ার গুলো সিজদার মনে দাগ কেটে যায়।সিজদার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি ভর করে। ইদানিং সাইফান কে জ্বালাতে বড্ড ভালো লাগে তার।সাইফানের ভীত হয়ে চুপসে যাওয়া চেহারা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পায় সিজদা।সিজদা মুখে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বললো,
-” আপনি এতো ভালো শাড়ি পরাতে পারেন? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।এই আপনি সত্যি করে বলুন তো আপনার বউ টউ আছে নাকি?বউ না থাকলে এতো ভালো শাড়ি পরানো শিখলেন কিভাবে? কোন মেয়েকে পরিয়ে শিখলেন?’
-” সাইফান ঘামতে শুরু করলো।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
-” ইউটিউব। হ্যাঁ ইউটিউব দেখে শিখেছি। ভেবেছিলাম বিয়ের পর রোজ বউকে নিজে হাতে শাড়ি পরিয়ে দিবো।তাই তো বিয়ের আগেই ইউটিউব দেখে শাড়ি পরানো শিখে নিয়েছি।ভালো করেছি না?”
-” হ্যাঁ।খুব ভালো করেছেন ।”
-” যে কটা দিন এখানে আছি রোজ তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো। কেমন?”
-” তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি শাড়ি পরা শিখে নিবো।”
-” আমি থাকতে শুধু শুধু তুমি কেন কষ্ট করবে বলো তো?”
-”সিজদা মুচকি হেসে মনে মনে বললো,
আপনি বুঝবেন না আপনার সংস্পর্শে আসলে আমার কেমন অনুভূতি হয়? আমি সহ্য করতে পারি না।।এ যন্ত্রণা সহ্য করার চেয়ে আপনার থেকে দূরে থাকা ঢের ভালো।।
-”সিজদা রেডি হয়ে বিথী চৌধুরীর রুমের কাছে আসতেই তার রুম থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।পা থেমে যায় সিজদার।সিজদা গুটি গুটি পায়ে বিথী চৌধুরীর রুমে প্রবেশ করে।তিনি ঐশ্বর্যের ছবি বুকে নিয়ে কান্না করছেন। এহেন দৃশ্যে সিজদার চোখের কোণে পানি জমে।বিথী চৌধুরীর এই অবস্থার জন্য সিজদার নিজেকে দায়ি মনে হয়।সিজদা এগিয়ে গিয়ে বিথী চৌধুরীর হাতের উপর হাত রেখে বললো,
-” মামিমা কান্না করবেন না।আপনাকে কান্না করতে দেখলে মামুর ও খারাপ লাগবে।”
-” বিথী চৌধুরী এক ঝটকায় সিজদার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
-”আমার কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছিস?সব হয়েছে তোর জন্য।আমার মেয়েটার গায়ে শুধু মাত্র তোর জন্য কলঙ্গ লেগেছে।তোর জন্য জেলের ভাত খেতে হচ্ছে আমার মেয়েটার।আমার বেবি কে কষ্টে রেখে তুই কখনো সুখে সংসার করতে পারবি না সিজদা। একজন মা হয়ে বলছি তুই কখনো সুখ পাবি না।আমার চোখ থেকে যতটা পানি ঝরছে ।এর থেকেও বেশি পানি তোর চোখ থেকে ঝরবে। তুই সেদিন বুঝতে পারবি কাছের মানুষ ছেড়ে থাকা কতোটা যন্ত্রণার ? কতোটা কষ্টের?”
-” সিজদা নির্বাক হয়ে গিয়েছে।চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছে তার।সে তো ঐশ্বর্যের ক্ষতি চায় নি।আর না সে ঐশ্বর্যের এগেইনস্টে কিছু বলেছে। এরপর ও মামিমা তাকেই দায়ি করছে।তাকে অভিশাপ দিচ্ছে।সিজদা চোখের পানি মুছে কিচেনে এসে সালেহা বেগম কে জড়িয়ে ধরে। সালেহা বেগমের মাঝে সে তার মাকে খুঁজে পায়।তার বুকে মাথা রাখলে এক ধরণের শান্তি অনুভব করে।সমস্ত কষ্ট যেন মূর্ছা যায়।সিজদার চোখে পানি দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন সালেহা বেগম।সিজদা কে বুক থেকে তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
-” কি হইছে সিজদা।সকাল সকাল তোর চোখে পানি ক্যারে? জামাই বাবাজি তোরে কিছু কইছে?”
-” না খালা।”
-”নিশ্চয়ই বড় ম্যাডাম কিছু কইছে? “
-” হ খালা।আমার জন্য নাকি আপামণি রে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।আমি নাকি তার সুখ
শান্তি কেড়ে নিয়েছি।”
-” তার মাইয়া তো ধোঁয়া তুলসী পাতা।পুলিশে ধইয়া লইয়া গেছে বেশ হইয়ে।জেলের ভাত পেটে পড়লে যদি একটু শিক্ষা হয়। পুলিশের উচিত ছিলো মা মাইয়া দনোডারে কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে লইয়া যাওয়ার। তুই মন খারাপ করিস না মা। শকুনের দোয়ায় কখনো গরু মরে না। চোখ মুছে ফেল সিজদা। আল্লাহ যদি তোর কপালে সুখ লিখা থাকে।কারো ক্ষমতা সেই সুখ কাইড়া নেওয়ার ।”
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৭
-” সিজদা চোখের পানি মুছে সাইফানের জন্য পরোটা ডিম ভাজি, ফলের জুস করে রুমে নিয়ে আসে। কিন্তু সাইফান কে রুমে পায় না।সিজদা সাইফানের খোঁজে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কর্কশ শব্দে সাইফানের ফোন বেজে উঠে।সিজদা ব্যাপার টা আমলে নেয় না। কিন্তু বারবার কল আসছে দেখে সিজদা ভাবে হয়তো হালিমা মঞ্জিল থেকে কল করা হয়েছে।সিজদা এগিয়ে এসে কল রিসিভ করতেই বুক ধুক করে উঠে তার।।।”