মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৪

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৪
নুজাইফা নূন

-“সারজিস ফোন পকেটে রাখতেই কোথা থেকে মর্ডান ড্রেস পরা একটা মেয়ে দৌড়ে এসে সারজিস কে জড়িয়ে ধরলো। বিরক্তিতে সারজিসের কপালে ভাঁজ পড়ে গেল।হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল।সারজিস তড়িৎ গতিতে মেয়েটাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

-” তোকে কতোবার বলেছি তাথৈ হুটহাট আমাকে হাগ করবি না। এসব একদম‌ই ভালো লাগে না আমার।”
-” কাম অন সারজিস।জাস্ট হাগ করেছি।এতে এতো রিয়্যাক্ট করার কি আছে?”
-” তোকে লাস্ট বারের মতো ওয়ার্ণ করছি।নেক্সট টাইম এমন অসভ্যতামি করলে কানের নিচে কষে দুইটা থা’প্পড় মে’রে দিবো।সারজিসের কথায় তাথৈ একটু ভয় পেয়ে গেলো।তার রাগ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা আছে তার।ভয় পেলেও সেটা সারজিসের সামনে প্রকাশ করলো না। বরং সারজিসের কাছে কান এগিয়ে দিয়ে বললো,
-” দাও না থা’প্পড়!তোমার হাতের থাপ্পড় কেন তুমি যদি নিজে হাতে আমার কাছে বিষ তুলে দাও।আমি সেটাও অমৃত মনে করে খেয়ে নিতে রাজি আছি সারজিস।”
-” এক মিনিট এক মিনিট! সারজিস কি হ্যাঁ? সারজিস কি ?আমি তোর সিনিয়র। ভাইয়া বলে সম্বোধন করবি।ওকে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” খালামণি আমাকে কথা দিয়েছে সে আমাকে তার পুত্রবধূ করে নিবে। কয়েকদিন পরেই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে।বিয়ের পর তুমি আমার বর হবে।বর কে কেউ ভাইয়া বলে সম্বোধন করে নাকি?”
-” স্টপ অল দিস ননসেন্স।প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড বিরক্ত লাগছে আমার ।”
-” চলো না কোনো কফি শপে যাই! সেখানে গেলে দেখবে সব বিরক্তি কেটে যাবে। ভালো লাগবে তোমার বলে তাথৈ সারজিসের হাত ধরতেই সারজিস এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,
-” কফি শপে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।তোর যাওয়ার ইচ্ছে হলে তুই যা না।আমাকে কেন বিরক্ত করছিস ?”

-” তোমার ভালোর জন্যই বলছিলাম। “
-”আমার ভালো নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না তাথৈ।দাদু কল করেছিলো আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।বাই।”

-” আমি ও যাবো ।অনেক দিন খালামণির সাথে দেখা হয় না।এই সুযোগে খালামণি কে দেখে আসতে পারবো।”
-” গতকাল ও শপিং মলে আম্মির সাথে দেখা হয়েছে তোর।আর আজকেই বলছি কতোদিন খালামণির সাথে দেখা হয় না? নাটক কম কর বলে সারজিস এক মিনিট ও বিলম্ব না করে গাড়ি তে বসে যায়। চোখের পলকেই গাড়ি ছুটে চলে যায় নিজ গন্তব্যে।তাথৈ সারজিসের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের চুল খামচে ধরে বললো,
-” ড্যাম ইট।এবার কি করবো আমি? হালিমা মঞ্জিলে যাবো? না না।তার থেকে বরং খালামণি কে কল দেই বলে তাথৈ হ্যান্ড পার্স থেকে ফোন বের করে দেখে ফোনের স্ক্রিনে খালামণি নামটা জ্বলজ্বল করছে।তাথৈ তড়িৎ গতিতে ফোন রিসিভ করে বললো,

-” তোমার ছেলে তো আমাকে পাত্তাই দেয় না খালামণি।আমি তোমার কথা মতো কতো সুন্দর করে সাজগোজ করে সারজিসের সামনে এসেছিলাম। কিন্তু সারজিস আমার দিকে তাকিয়ে ও দেখে নি।আবার বলে কিনা ওকে ভাই ডাকতে ।”
-” তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না তাথৈ।তোমাকে বলেছিলাম একটু একটু করে সারজিসের মনে নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে। কিন্তু একটা কাজ ও তুমি ঠিক করে করতে পারো না।এবার আর আমার করার কিছুই নেই। সবটা আমার হাতের বাইরে চলে গিয়েছে।”

-” কেন কি হয়েছে?”
-”সারজিসের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।”
-” হোয়াট ? সারজিসের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।আর তুমি সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে? কিছু বললে না?”
-”তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো আমি সারজিসের আপন মা না।সারজিসের দ্বিতীয় মা। দ্বিতীয় মায়ের জায়গা থেকে আমার যতোটা চেষ্টা করার আমি করেছিলাম। তাছাড়া সারজিস আমাকে খুব একটা পছন্দ করে না। এজন্যই তোমাকে বলেছিলাম তুমি সারজিসের মনে জায়গা করে নাও। কিন্তু তুমি পারলে না।”

-” একটা কাজ করলে হয় না খালামণি ?”
-” কি কাজ ?”
-” সারজিসের যে মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাকেই রাস্তা থেকে সরিয়ে দেই? তাহলে তো আমাদের পথ একদম ক্লিয়ার।”
-” তাথৈর কথা শুনে শান্তা মির্জার চোখের সামনে সিজদার মায়াবী মুখখানি ভেসে উঠলো।
এমন মায়াবী, শান্ত মেয়েটার ক্ষতির কথা ভাবতেই বুক কেঁপে উঠলো তার।শান্তা মির্জা কর্কশ কন্ঠে বললো,
-”পাগল হয়ে গিয়েছো তুমি?”
-” সরি খালা মণি। আসলে আমার মাথার ঠিক নেই।কিনা না কি বলে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে করো না।রাখছি আমি।বাই ।”
-”ওকে বাই বলে শান্তা মির্জা ফোন রেখে দিয়ে মনে মনে বললো, সিজদা মেয়েটা দেখতে যেমন মিষ্টি তেমনি ব্যবহার ও মিষ্টি।সারজিসের ব‌উ হয়ে এলে মন্দ হবে না।দুজনকে খুব ভালো মানাবে। কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটা গাইয়া, অশিক্ষিত।সারজিস কি আদৌ এই বিয়েটা করতে রাজি হবে??”

-” আল্লাহ তায়ালা আমার দোয়া কবুল করছে সিজদা।আমি রোজ নামাজ পড়ে দোয়া করতাম আল্লাহ তায়ালা যেন তোরে একটু সুখের মুখ দেহায়।এতো বড় একজন অফিসাররে মাইয়া হ‌ইয়াও জীবনে তুই অপমান অবহেলা ছাড়া কিছুই পাস নি।বড় ম্যাডাম নিজের মাইয়া রে বড় বড় ইস্কুলে পড়াইছে।অথচ তোরে কাজের মাইয়ার হালে এই বাড়ির এক কোণে ফালাই রাখছে।তারা বড় বড় দোকানে গিয়ে খাবার গিলছে।আর তোরে বাসি খাবার খাইতে দিছে।তারা দামি দামি পোশাক পরছে ।আর তোরে তাদের পরা কাপড় পরতি দেছে। ভাইজানের কথা আর কি কমু।তার তো নিজের ব্যবসার কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাওন লাগে।তার তো করার কিছুই ছিলো না।তবে এহনতোর কষ্টের দিন শ্যাষ রে মা।কতো বড় বাড়িতে তোর বিয়া হ‌ইবো। তুই সুখে শান্তিতে সংসার করবি।এবারে আমি মরেও শান্তি পাবো রে মা।সালেমা বেগমের কথা শুনে সিজদা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-” এভাবে ক‌ইছো ক্যা খালা? আমার মাথার চুল সমান আয়ু হোক তোমার। তুমি আমার দ্বিতীয় মা।আমি মায়ের ভালোবাসা পাই নি। কিন্তু তোমার ভালোবাসা পাইছি।তোমার থেকে তোমার মুখের ভাষা শিখছি। আমার তোমার ভাষায় কথা ক‌ইতে বেশি ভালা লাগে খালা।”
-” কিন্তু এহন তো আর এমন করে কথা ক‌ওন যইবো না।এহন তোরে স্মার্ট হতে হ‌ইবো।”
-” আমার কি মনে হচ্ছে জানো খালা?”
-” কি ?”
-” এই বিয়াডা হ‌ইবো না। একজন শিক্ষিত, বড়লোক পোলা ক্যান আমার মতো অশিক্ষিত , কাজের মাইয়া রে বিয়া করবো ?”

-” এতোক্ষণে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিলো ঐশ্বর্য। সিজদার কথা শুনে ঐশ্বর্য মুচকি হাসি হেসে বললো,
-” তুই ঠিক ভাবছিস সিজদা।তোর যে এই বিয়েটা করা হবে না। আ’ম শিওর সারজিস কিছুতেই তোর মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।বাই এনি চান্স সারজিস যদি এই বিয়েতে
রাজি হয়ে ও যায়।তাহলে বিয়ের আসরে তোর জায়গায় পাত্রী হয়ে বসে থাকবো আমি। কিন্তু এসব করতে গেলে আগে তোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।রুপক হালদার মানে তোর বাবা যাদের কে জেলে দিয়েছে। যাদের ফাঁ’সি হয়েছে ।

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩

তাদের ফ্যামিলির লোকদের মনে নিশ্চয় এখনো প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।বাবা তো বলেছিলো গুন্ডা মাস্তানদের হাত থেকে বাঁচতে সিজদা কে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে।আমি একবার যদি তাদের ব্যাপারে জানতে পারতাম।তাহলে আমার পথের কাঁটা দূর হয়ে যেতো‌।এতে সাপ ও মরতো আর লাঠি ও ভাংতো না। চোখের সামনে আমার রাজকুমার, রাজত্ব অন্য কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাবে এটা কিছুতেই হতে দিবো না।যত দ্রুত সম্ভব আমার পথের কাঁটা আমাকেই সরিয়ে ফেলতে হবে।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৫