মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৫
নুজাইফা নূন
” আর ইউ ক্রেজি ? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট ডিড ইউ সে ? আমি একজন এডাল্ট পার্সন।আমার নিজের কি কোনো ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই? বাবা চায় তার ফ্রেন্ডের মেয়েকে বিয়ে করি।আম্মি চায় আর বোনের মেয়েকে বিয়ে করি। তুমি চাও তোমার পছন্দের মেয়ে বিয়ে করি।আমার নিজের চাওয়ার কি কোনো দাম নেই দাদু? তোমরা একবার ও জানতে চেয়েছো আমি কি চাই? আমি আদৌ বিয়েটা করবো কি না? তোমরা কেউ আমার কাছে কিছু না জিজ্ঞেস করে বিয়ে ঠিক করে এসেছো।এসব বিয়ে , সংসার , প্রেম , ভালোবাসা বিশ্বাস করি না আমি।আমাকে ক্ষমা করো দাদু।আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।”
-” দাদুভাই তুমি একবার প্লিজ একবার মেয়েটা কে দেখো।আমার বিশ্বাস সিজদা কে তোমার খুব পছন্দ হবে।সিজদা মেয়েটাই এমন।প্রথম দেখাই যে কারো নজর কাড়তে সক্ষম মেয়েটা।মেয়েটা কে একবার দেখলে তুমি আর বিয়েতে অমত করতে পারবে না।আমি কথা দিচ্ছি সিজদা কে দেখার পর যদি তোমার সিজদা কে তোমার পছন্দ না হয়।তাহলে তোমার বিয়েটা করতে হবে না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই দাদু।”
-” দাদুভাই?”
-” সরি দাদু।আমি কখনোই তোমার কোন কথার অবাধ্য হয় নি। কিন্তু আমি তোমার এই কথাটা রাখতে পারবো না।”
-”আমি কতো বড় মুখ করে সবাইকে বলেছিলাম আমার দাদুভাই কখনোই আমার অবাধ্য হবে না।সে ঠিকই আমার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে। কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে ভুল করেছি দাদুভাই। তুমি আমার বিশ্বাস ভরসা কিছুই রাখলে না দাদুভাই।রামিসা যাওয়ার পর তোমাকে মায়ের আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছি।কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেই নি।তুমি যখন যেটা চেয়েছো ,আমি তখনি সেটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসার প্রতিদান স্বরূপ আমাকে এইভাবে অপমান অপদস্থ করলে দাদুভাই? তোমার থেকে আমি সত্যিই এটা আশা করি নি বলে হালিমা বেগম নিজের রুমে চলে গেলেন।তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সারজিস বললো,
-”সরি দাদু আমি তোমাকে হার্ট করতে চাই নি।বাট আই হ্যাভ নাথিং টু ডু।”
-” রাতে ডিনার শেষ করে সিজদা সালেহা বেগম দুজনে বসে গল্প করছিলো এমন সময় ঐশ্বর্য সিজদার রুমে গিয়ে বললো,
-” সিজদা আমার রুমে একটু আয় তো।তোর সাথে একটু কথা আছে আমার।”
-” আপনে যান আপামণি।আমি আইতাছি।”
-” আমি রুমেই আছি।তুই একটু তাড়াতাড়ি আয়।”
-” ঠিক আছে আইতাছি বলে সিজদা বিছানা থেকে নামতে গেলেই সালেহা বেগম সিজদার হাত ধরে বললো,
-” ছোট ম্যাডাম মনে মনে হয়তো কোনো মতলব আটতেছে।মা মাইয়া দোনোডার একটারেও আমার সুবিধার মনে হয় না। একজনে ও তোর বিয়া নিয়া খুশি হইবার পারে নাই।উকিল আপা যহনি কইলো তার তোরে পছন্দ হইছে ।তহনি দোনোডার মুখ হাঁড়ির তলার মতো কালা হইয়ে গেলো।মা মাইয়া দোনোডার একটার কথাও কানে লইবি না তুই।তারা তোর ভালা চায় না রে মা।”
-” তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো খালা। সেদিনের পর থেকে ম্যাডাম , আপামণি কেউই আমার লগে খারাপ আচরণ করে নাই।আমারে বাড়ির কোনো কাজ করতে ও দেয় নাই। তুমি দেখলা না খাওনের সময় আমারে তাদের লগে বসাইয়া খাওন দিলো।”
-” তুই এহনো অবুঝ রে মা। দুনিয়া চিনোস নাই।যা গিয়ে দেখ ম্যাডামে কি কয়।”
-” আইচ্ছা। তোমার তো শরীর ডা ভালা না। তুমি আর রাত জাইগো না। তুমি ঘুমাও খালা।”
-” তুই বেশি দেরি করিস না । জলদি আইসা পড়িস।”
-” ঠিক আছে খালা বলে সিজদা দরজা চাপিয়ে দিয়ে ঐশ্বর্যের দরজার সামনে গিয়ে নক করে বললো,
-” আইবো আপামণি ?”
-” হ্যাঁ আয় ।”
-” অনুমতি পেয়ে সিজদা রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকলো।সিজদা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঐশ্বর্য বললো,
-” দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন? এদিকে আয়।আমার পাশে বোস।”
-” ঐশ্বর্যের এতো ভালো ব্যবহার সিজদার ঠিক হজম হলো না।সিজদা গুটি গুটি পায়ে ঐশ্বর্যের বিছানার এক কোণে গিয়ে বসলো।সিজদা বসতেই ঐশ্বর্য বললো,
-” দেখ সিজদা আমি এতো দিন তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি।তোকে অপমান অপদস্থ করেছি।আমি সত্যিই জানতাম না তুই আমার ফুপির মেয়ে।জানলে কখনোই তোর সাথে এমন আচরণ করতাম না। তুই পুরোনো কথা কিছু মনে রাখিস না সিজদা। সবকিছুর জন্য আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তুই প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।”
-” আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ , অভিমান নেই আপমণি।আপনারা আমারে আশ্রয় দিছিলেন বলেই আমি বাইচ্চা আছি।নাইলে এতো দিনে কবেই মা’রা পড়তাম।”
-” তুই অনেক বড় মনের মানুষ রে সিজদা।শোন না তোকে যে কথা বলার জন্য ডেকেছি। আগামীকাল আমার বান্ধবী রশ্মির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই যাচ্ছে।।তোর তো কয়েক দিন পর বিয়ে। তুই চিরদিনের জন্য এই বাড়ি ছেড়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাবি। তাই আমি ভেবেছি তোকে ও সাথে করে নিয়ে যাবো। হলুদ আর বিয়ের দুটো দিন তুই আর আমি একসাথে কাটাবো।অনেক আনন্দ করবো।সেই মুহূর্তগুলো সারাজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে আমার কাছে।”
-” কিন্তু আপামণি ।”
-” কোনো কিন্তু না সিজদা। তুই তো শুনেছিস তোর হবু বর একজন নামকরা কার্ডিওলজিস্ট। তোর বরের কি এতো সময় হবে তোকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর? বিয়ের পর কোথা ও যেতে পারবি কিনা সন্দেহ।তাই যে কটা দিন আমাদের বাড়িতে আছিস , একটু এনজয় করে নে ।বিয়ে মানেই পরাধীনতা। বন্দী পাখি হয়ে খাঁচায় বসে থাকা।”
-” আমারো তো যাওয়ার ইচ্ছা করছে। কিন্তু মামু কি রাজি হইবো ?”
-” তোর মামু কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। তুই এসব নিয়ে একদম টেনশন করিস না।পাপা সবসময় চায় আমি যেখানে যাই তোকে যেন আমার সাথে নিয়ে যাই।পাপা যদি জানতে পারে আমি তোকে আমার বান্ধবীর হলুদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাবো।পাপা অনেক খুশি হবে। একদম ই না করবে না।”
-” মামু সত্যিই রাজি হইবো তো?”
-” আরে পাগলী হবে রে হবে। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। এখন যা। গিয়ে শুয়ে পড়। আমাদের সকাল সকাল বের হতে হবে।”
-” ঠিক আছে আপামণি বলে সিজদা চুপচাপ নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়ে।সিজদা রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই ঐশ্বর্য কাউকে কল করে বললো,
-” মনে আছে তো কি কি করতে হবে?”
-” জ্বি ম্যাডাম।”
-” এমন ভাবে কাজটা করবে যেন কেউ আমার দিকে সন্দেহের আঙ্গুল না তুলতে পারে।সবাই জানবে সিজদা কিডন্যাপ হয়ে গিয়েছে।”
-” ওকে ম্যাডাম। আপনার ব্যাপারে কোনো কাক পক্ষি ও জানতে পারবে না।আপনার সেফটির দায়িত্ব আমার।আমি অনেক দিন থেকে রুপক হালদারের মেয়েকে খুঁজে চলেছি।আমার পায়ের জুতো ক্ষয় হয় গিয়েছে মেয়েটাকে খুঁজতে খুঁজতে।ঐ অফিসার রুপকের জন্য আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে গিয়েছে।আমার শরীরে এখনো প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।রুপক যেমন আমার পরিবার কে শেষ করে দিয়েছে । ঠিক তেমনি আমি ও ওর পরিবার শেষ করে দিবো। র’ক্তের বদলা র’ক্ত দিয়ে নিবো আমি।”
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৪
-” তাকে বাঁচিয়ে রাখবে নাকি মে’রে ফেলবে সেটা তোমাদের ব্যাপার। আমার কাজ শুধু মেয়েটাকে তোমাদের হাতে তুলে দেওয়া।ব্যাস এরপরের টা তোমারা নিজেরা নিজেরাই বুঝে নিবে।তবে একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও। বাই এনি চান্স যদি আমি ফেঁসে যাই।তাহলে তোমাদের একটা ও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।মাইন্ড ইট
বলে ঐশ্বর্য ফোন রেখে দিয়ে অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে বললো,
-” শুধু মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা।এরপর সিজদার চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে যাবে।আর আমি সারজিসের হয়ে যাবো। শুধুই সারজিসের।।”