মন পাথরে হঠাৎ ঝড় পর্ব ২৮

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় পর্ব ২৮
Tahrim Muntahana

আসসালামু আলাইকুম। শুভেচ্ছা সকল কে। আজকের খবর! অনেক পুরোনো রহস‍্য উন্মোচন হয়েছে।
হৃদান চৌধুরীর বাবা নাবিল চৌধুরীর খুনীদের পাওয়া গিয়েছে। এতদিন যারা দেশের গন‍্যমান‍্য ব‍‍্যক্তিত্বের পরিচয়ে ছিলো তারাই এখন নিজেদের টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনেছে।

পুলিশ কমিশনার আহনাফ চৌধুরীকেও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এমনকি জার্নালিস্ট রাতাফ আহমেদ এক্সিডেন্ট টি নিছক এক্সিডেন্ট ছিলো না; পূর্বকল্পিত একটা প্ল‍্যান ছিলো তাও জানা গিয়েছে। এসবকিছুর পেছনে তিনটে নাম যুক্ত রয়েছে। হিয়ান চৌধুরী, রিনিশা আনসারী ও হাসান শিকদার। এটাই কিন্তু তাদের সঠিক পরিচয় নয়। এরা তিনজন এই পরিচয়ে এতদিন সম্মানের স্থানে বসেছিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হিয়ান চৌধুরী অরফে হিয়ান শিকদার এবং রিনিশা আনসারী অরফে রিনিশা চৌধুরী নিজের হাতে বন্ধু এবং ভাইকে খুন করেছে। যার সহযোগি ছিলেন হাসান শিকদার! যার প্রমাণ স্বরুপ পেশ করা হয়েছে একটি ভিডিও ক্রিপ! হাসান শিকদারের স্বীকারোক্তি থেকে জানা গিয়েছে হিয়ান ও হাসান শিকদার দুই ভাই। তাদের সাথে আরো একজন যুক্ত ছিলো। নাবিল চৌধুরীর মেইন গার্ড! তিনি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে হয়তো এতকিছু হতই না। কিন্তু নিয়তি! নিয়তি তার নিজের গতিতেই তো চলবে!

হিয়ান শিকদারের কালো কারবারির সব প্রমাণ ও সরকারের হাতে। হিয়ান শিকদারে দুই ছেলে-মেয়ে হিমেল ও হিয়া শিকদার এসব কিছুই জানতেন না। তাই তাদের উপর কোনো দোষ আরোপ করা হয়নি। এমন কি সমাজের কাছে তারা দুজন যেন কোনো হেনস্তা না হয় সরকার তারও ব‍্যবস্থা নিবে!

সরকার চারজন কে এরেস্ট করার পারমিশন দিয়েছে পুলিশ কমিশনার আহনাফ চৌধুরীকে। তার হাতেই পুরো কেইসের তদন্ত চলছে। আশা রাখছি খুব তাড়াতাড়ি দোষীরা আটক হবে।
এসবকিছুর সমস্ত প্রমাণ খুঁজে বের করেছে জার্নালিস্ট রাতাফ আহমেদের মেয়ে আদর আহমেদ ও তার দুই সহযোগি ও বন্ধু হৃদযা চৌধুরী এবং সুবাহ শাহরিয়ার! যেমনি বাবা তেমনি তার মেয়ে। বাবার অসম্পূর্ণ কাজ মেয়ে হয়ে সম্পূর্ণ করেছে। এ যেন সকল বাবার জয়!

হৃদযা চৌধুরী হলেন হৃদান চৌধুরীর বোন যাকে শৈশবে হাসান শিকদার কিডন‍্যাপ করেছিলো। নিয়তি তাকে আজ নিজের আপনজনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এর ক্ষেত্রে হৃদান চৌধুরী সমস্ত ক্রেডিট আদর আহমেদ কেই দিয়েছে। তার জন‍্যই সে তার বোন কে ফিরে পেয়েছে এই নিয়ে অনেকবার তার মুখে শোনা গিয়েছে!

এই টুকু বয়সেই ব‍্যপক সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তিনজন। এতদিনের গোপনে থাকা সকল রহস‍্যকে সবার সামনে খোলাশা করেছে। এই সাহসিকতার জন‍্য সরকার তাদের সম্মাননা পুরস্কার দেওয়ার উদ‍্যোগ নিয়েছে। এতে কর্মরত সকল পেশার জনগন তাদের নিজস্ব কাজে দায়িত্বশীল ও সৎ হবে। দেশের সর্বস্তরের জনগনের কাছে এটাই প্রত‍্যাশা!
আজকের খবর এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন। পরবর্তী খবর পেতে চোখ রাখুন বিজয়ীনী টিভির পর্দায় আমি আতশী; বিজয়ীনী টিভি, ঢাকা!

সন্ধ‍্যা সাতটা! চারদিকে অন্ধকার। চাঁদকে আগমনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সূর্য অনেকটা সময় হলো বিদায় নিয়েছে। সূর্যের বিদায়ে নিরস চাঁদ মলিনতা ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে পৃথিবীতে আলো দিচ্ছে। সূর্যের কষ্টে যেন নিজেও ব‍্যথিত। তেমনি দেশের সর্বস্তরের জনগন যারা যারা উপরিউক্ত খবর টি শুনেছে, দেখেছে সবাই আফসোস করছে।

ড্রয়িং রুমে বসে হৃদান রা খবরটি দেখছিলো। সবার ঠোঁটের কোণেই সুক্ষ্ম হাসি। আজ তাদের জয় হয়েছে। অপেক্ষা শুধু একটু পরের খবরের জন‍্য।
পিয়াস পান্চু হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেই সোফায় গা এলিয়ে দিলো। আজকের দিনে দু দন্ড বসারও সুযোগ পায়নি দুজন। কোনো কথা না বলেই বুড়ো আঙুল দেখাতেই সবার মুখের হাসি চওড়া হলো। প্ল‍্যান সাকসেস!

পিয়াসের দিকে তাকিয়ে রোহানির খারাপ লাগলো। বেচারার খুব কষ্ট হচ্ছে! টেবিল থেকে দু গ্লাস পানি এনে এগিয়ে দিলো দুজনের দিকে। ঢকঢক করে খেয়ে নিলো দুজন। রোহানির মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে পিয়াস হাসলো। ভালোবাসার মানুষটার চোখে মুখে নিজের জন‍্য চিন্তা দেখে কার না ভালো লাগে! প্রাপ্তি টা শান্তির!

কাউকে কিছু না বলেই হৃদান নিজের ঘরের দিকে হাটা ধরলো। আদর ভ্রু কিঞ্চিত কুচকে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো। মানুষটা আবার মন খারাপ করলো না তো? বাবা-মা’র কথা মনে পড়ছে? আদর দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আজকের দিনেই তো তার বাবা নামক মানুষটি পৃথিবীর মায়া ত‍্যাগ করে চলে গেছে। ভালো লাগছে না বলে উঠে চলে যেতে নিবে তার আগেই হৃদান একটি গিফট বক্স নিয়ে তার সামনে দাড়ালো।

আদরের হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো। সবাই এবার প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে আছে। আদরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করলো খোলার জন‍্য। আদর সব খারাপ লাগাকে দূরে ঠেলে মুখে হাসি ফুটিয়ে গিফট বক্স টা খুললো। একটা পেপার! অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। হৃদান মুচকি হেসে বলল,

বিজয়ীনী! আজ তোমরা তিনজন বিজয়ীনীর খেতাব অর্জন করেছো। তাই তো আমার তরফ থেকে তোমাদের গিফট বিজয়ীনী সংবাদ চ‍্যানেল! নিজের পেশা কে ধরে রেখে বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে চলবে! তোমার সংবাদ চ‍্যানেলেই আজ তোমার বাবার হত‍্যার তথ‍্য প্রকাশ পেয়েছে। তোমার সংবাদ চ‍্যানেলের ছাপানো খবরই আজ সারাদেশের মানুষ পড়ছে! আদরপরী তুমি খুশিতো?

বিজয়ীনী টিভি নামটা শুনে একটু খটকা লাগলেও আমলে নেয়নি কেউ। এখন হৃদানের কথায় কারো বুঝতে বাকি নেই। আদর যেন এখনো বুঝেই উঠতে পারেনি। সে এমন একটা দিনের জন‍্য কতটা স্বপ্ন দেখতো। তারিম এসে আদরের পাশে বসে জড়িয়ে ধরলো। মুচকি হেসে বলে উঠলো,

আমরা কিছুই না ভাইয়া। সবটাই আদরের ক্রেডিট। এসবের পেছনের সবকিছুই আদরের জন‍্য সম্ভব হয়েছে। বিজয়ীনী খেতাব টা শুধুমাত্র ওর জন‍্য। আমরা তো জাস্ট ওর সাথী!
সবার মনেই খুশীর রেশ। সব ভুলে সবাই আড্ডায় মনোযোগী হলো। বিয়ের ব‍্যাপারেই কথা চলছে। একটু পর পর হৃদান ঘড়ি দেখছে। পরবর্তী খবর কখন শোনাবে! দশটা বাজতেই তাড়াতাড়ি করে হৃদান টিভিটা অন করে দিলো। তখনি মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসলো,

আসসালামু আলাইকুম। ফিরে এলাম পরবর্তী সংবাদ নিয়ে। তার আগে পূর্ববর্তী খবর এক নজরে…
দুঃখের সাথে জানাচ্ছি নাবিল চৌধুরী ও রাতাফ আহমেদের খুনী হিয়ান শিকদার, রিনিশা চৌধুরী ও হাসান শিকদার গাড়ি দুর্ঘটনায় স্পট ডেথ! পুলিশ কমিশনার আহনাফ চৌধুরী যখন তার টিম নিয়ে খুনীদের আটক করতে যায় তখন তারা বাঁচার জন‍্য ছুটতে থাকে গাড়ি করে। হঠাৎ মালবাহী ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ লেগে গাড়িতে আগুন লেগে যায়। চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় উদ্ধার করা যায় নি কাউকে। তদন্তরত কর্মকর্তা মৃত ঘোষণা করেছে। প্রকৃতিই তাদের নিষ্ঠুর ভাবে মৃত‍্য দিলো। কথায় আছে সত‍্য কখনো চেপে থাকে না; দোষী একদিন না একদিন শাস্তি পাবেই; সে হোক মানব কর্তৃক নিয়মে অথবা প্রকৃতির নিয়মে!

আজকের খবর এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন। পরবর্তী খবর পেতে চোখ রাখুন বিজয়ীনী টিভির পর্দায়। আমি আতশী; বিজয়ীনী টিভি, ঢাকা!
খট করে টিভি টা বন্ধ করে দিলো। হৃদানের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে আছে। প্রকৃতি শাস্তি দিয়েছে!

রাত বারোটা! কিছুক্ষণ পর পর একটা দুটো গাড়ি সাই সাই করে ছুটে যাচ্ছে। দোকানপাটও সব বন্ধ হয়ে গেছে এতক্ষণে। হৃদান রা যাচ্ছে শপিং করতে! এতরাতে শপিং? শুনতে অবাক লাগলেও এটাই হচ্ছে। হৃদান চৌধুরীর বিয়ে অথচ ইউনিক স্টাইলে হবে না? এটা কিভাবে হয়? তাই তো এত রাতে যাচ্ছে বিয়ের শপিং করতে।

জনমানব হীন শপিংমলে শুধু তারাই কেনাকাটা করবে। আগে থেকেই কনফার্ম করে রেখেছে শপিংমল যেন বন্ধ না হয়। দোকানদার রাও মহা খুশি।
বিয়ের আনন্দে যেন ঘুম ছুটে পালিয়েছে। যাদের বিয়ে হবে তাদের আত্মীয় বলতে গোটা কয়েক মানুষই। তাইতো বিয়ে গ্রামেই হবে। তারিম নতুন করে আবার বিয়ে করবে না। রিসিপশন হবে শুধু তাদের। আতইয়াব ও সায় দিয়েছে। একবার কবুল বলে একে অপরের হয়ে গেছে আর না! তাযিমের বক্তব‍্য ভাইয়ার আর বেস্টুর বিয়ে ধুমচে মজা করবে আর আতইয়াবের নিজেরও একটা দায়িত্ব আছে ভাই হিসেবে! হৃদান মেনে নিয়েছে! এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি!

হৃদান তার বড়বাবা কে হুমকিও দিয়েছে ফোনে। গ্রামে গিয়ে যদি দেখে বাড়ি ব্রাইডাল ভাবে সাজানো নেই; তাহলে বড় মা কে তিনদিন পাবে না। সেই ভয়ে নাসির চৌধুরী জানপ্রাণ লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা!
আদর শপিং মলে ঢুকেই আগে চুড়ির দোকানে ঢুকে পড়লো। চুড়িতে তার ব‍্যপক দুর্বলতা যদিও সে বাইরে কখনো চুড়ি পড়ে যায় না। নিজের ঘরেই তার ভালোলাগা গুলোকে চাপা দিয়ে রাখে।

বিয়ের পর স্বামী কে ভালোলাগা টা ভাগ করবে বলে। আদরের পছন্দ মতো অনেকগুলো চুড়ি কিনে নিয়েছে। আদরকে একটু সাইডে এনে হৃদান শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
আমাদের বিয়ে রিসপশনের শপিংয়ের সব আমার দায়িত্ব। কিন্তু পুরো গ্রামের দায়িত্ব তোমার হাতে। লিস্ট দিচ্ছি তুমি সেভাবেই সবার জন‍্য কেনাকাটা করবে। অর্ডার দিবে আমি কনফার্ম করে দিবো! পারবে না?

আদরের চোখ বড় বড় হয়ে এলো। কত বড় লিস্ট! সে পারবে? হৃদানের চোখে ভরসা খুঁজে পায় সে তাই আর না করার সাধ‍্য হয়ে উঠে না। মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে এক নজর লিস্ট টা চেক করে চুড়ির দোকানে ঢুকে পড়ে। লিস্ট অনুসারে মেয়েদের জন‍্য চুড়ি অর্ডার করে বিয়েতে পড়ার জন‍্য লেহেঙ্গা ও শাড়ির দোকানে ঢুকে।

এই মুহূর্তে পুরো গ্রাম সাজানোর দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে অনেকটা বড় মনে হচ্ছে। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলের বউ হতে চলছে সে; এইটুকু দায়িত্ব সামলাতে পারবে না? হৃদান তো দুজনের শপিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে এটাই অনেক। তারিম ওদের আর জ্বালাতন করে না আদর! মজা করে নিজেদের জন‍্য শপিং করছে করুক না। একা একাই দেখতে থাকে লেহেঙ্গা, শাড়ি। হঠাৎ করেই পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে মুচকি হাসে।

পান্চু এসে দাড়িয়েছে। এই জন‍্যই পান্চুকে আদরের এত ভালো লাগে। যতক্ষণ সাথে থাকে ততক্ষণ ভাইয়ের মতো আগলে রাখে। দুজন মিলে বিয়ের জন‍্য লেহেঙ্গা আর রিসেপশনের জন‍্য শাড়ি অর্ডার করলো। বৃদ্ধাদের জন‍্য শুধুই শাড়ি। পান্চুর আসাতে আদরের অনেক সাহায‍্য হয়েছে। জুয়েলারির দোকানে ঢুকে পড়লো ফ‍্যাসাদে। কাকে কোনটা পড়লে ভালো লাগবে সে জানবে কি করে! পুরো গ্রাম ঘুরে দেখেছিলো মেয়ে বউ গুলো খুব সুন্দর। ন‍্যাচারাল বিউটি!

একে একে লিস্ট অনুসারে জুয়েলারিও কিনে নিলো। অনেকগুলো মেহেদীও কিনে নিয়েছে। মেয়েদের সব কেনা শেষ। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আড়াইটা বেজে গেছে। অনেকটা হাপিয়ে গেছে আদর। পান্চু পাশের ক‍্যাফ থেকে দুটো কোল্ড ড্রিংকস এনে আদরের দিকে একটা এগিয়ে দিলো। আদর মুচকি হেসে খেতে শুরু করলো। এমন সময় হৃদান এসে বলল,
ওদের সব শেষ। তোমাদের বাকি আছে?

আদর অবাক হলো না। আড়াই ঘন্টা হয়ে গেছে। আদর চোখ ছোট ছোট করে কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,
ইউ ক‍্যাবলাব্রিটিশ আপনার আক্কেল পছন্দ বলতে কিছু আছে? আমাকে একা ফেলে কোথায় চলে গিয়েছিলেন? আধা টাকু পান্চু কাকু না থাকলে বোর হয়ে যেতাম। ছেলেদের জন‍্য এখনো কেনাকাটা বাকি আছে। চলুন!

হৃদানের মুখে চওড়া হাসি। এই আদর টাকেই কিছুদিন ধরে মিস করছিলো সে। রহস‍্যের জালে আটকা পড়ে আদরের বাচ্চামো ও যেন হারিয়ে গিয়েছিলো। অনেকদিন পর ফিরে পেলো হৃদান; তার প্রথম প্রেমে পড়ার ব‍্যক্তিত্ব কে। খুশি মনে পিছু নিলো। সবার জ‍ন‍্যই পাঞ্জাবী পাজামা নিলো আদর।

বৃদ্ধদের জন‍্য কোয়ালিটি আলাদা নিয়েছে। ডিজাইনের নামাজ টুপি নিয়ে সবার জন‍্য। পারফিউম নিয়েছে উভয়ের জন‍্য। সব কিছু দেখে দেখে কেনা কাটা করে নিচের ফ্লোরে এসে উপস্থিত হয় ওরা। এসে দেখে অর্ডার কৃত সব মালামাল এখানেই এনে রেখেছে সবাই। সবাই কষ্ট করে রাত জেগে ছিলো বলে আদর পান্চু কে বলে দোকানদার দের মধ‍্যে ডিল করে নিয়েছে। যে দোকান থেকেই কিনুক না কেন প্রোফিট সবাই পাবে। সব দোকান থেকেই কেনা তো সম্ভব না!

আর সবাই এত শপিং দেখে জাস্ট হতবাক। হৃদান এসে বলতেই সবাই খুশি হলো। আনন্দ টা যেন দ্বিগুন হয়ে গেলো। এখন সবাই রওনা হবে গ্রামের উদ্দেশ‍্যে। ভোর পাঁচটা বেজে গেছে। গার্ড গ্রামের মানুষদের জন‍্য শপিং গুলো আলাদা গাড়িতে তুললো, আরেক গাড়িতে নিজেদের জন‍্য কেনাকাটা গুলো। হৃদান নিজেই এক গাড়ি শপিং আলাদা করেছে। কেউ দেখতেও পায়নি সেটা। যে যার মতো গাড়িতে উঠতেই চলতে শুরু করলো সাই সাই করে। একে একে দোকানদার গুলোও নিজেদের দোকান বন্ধ করে নিজ বাসায় রওনা হলো।

এ যেন এলাহি কান্ড! গ্রামের মানুষজন কোমড় বেঁধে কাজে নেমেছে। বাড়ির ছেলে-মেয়ের বিয়ের মতো কাজ করছে সবাই। সকালে এসে কথা বাড়ায়নি কেউ। ঘুমানো দরকার ছিলো। সারাদিন পরিশ্রমের পর সারারাত শপিং করে শরীর যেন চলছিলো না। এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। দুপুর বারোটার পর ঘুম থেকে উঠে আগে খাবার খাইয়ে ছাড় দিয়েছে মিসেস রেহানা। তারপরেই হৃদান রা বাগানের সাইড গিয়েছে সকল কে উপহার দেওয়ার জন‍্য।

সবাই কে একসাথে ডাকতেই সবাই চলে এসেছে। এক ফালি হাসি লেগে আছে সবার ঠোঁটে। আদর তারিম ওরা একে একে নিজের হাতে সকলের জন‍্য আনা জিনিস গুলো দিলো। সকলের চোখেই কতটা সম্মান ফুটে উঠেছিলো তখন। এ সম্মান যে সারাজীবন থাকবে আদর ঢের বুঝতে পেরেছে। সবার মাঝে গিফট গুলো বিলি করতে নিজেদের তৈরী হওয়ার সময় হয়ে এলো। পার্লারের মেয়েরাও চলে এসেছে। হৃদান আবার শহরে নিজের বাড়ি ব‍্যাক করেছে। এখান থেকেই সে যাবে। সাথে পিয়াস পান্চু হিমেল আর নিজের ব‍্যবসায়িক কলিগ রা! আদর এ নিয়ে নামত করলেও হৃদানের যুক্তির সাথে পেরে উঠে নি। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছে!

পার্লারের মেয়েদের কাছেই আদরের সাজগোজের সব পাঠিয়েছে হৃদান। সাদার মধ‍্যে গোল্ডেন পুতির কারুকাজের লেহেঙ্গা। সাদা উড়না! ম‍্যাচিং ডায়মন্ড জুয়েলারি। চোখ ধাঁধানো সাজ! সাজানো শেষ করতেই সবার মুখ থেকে ওয়াওওও শব্দটা বের হয়ে আসলো আপনাআপনিই। ব্রাইডাল সাজে লেহেঙ্গার সাথে আদরের রূপ যেন দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে।

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় পর্ব ২৭

আদরের কথা হলো বিয়ে সে একবার ই করবে ; সাজবেনা কেন? যা সাজ আছে সে সাজবে! দুহাতে মেহেদী! কি অপরূপা লাগছে। আতইয়াব তো আদরের দিকে তাকাচ্ছে আর হাত দিয়ে চোখ মুছছে। কষ্টে তার মুখ টা ফেটে যাচ্ছে। কলিজার টুকরো বোনটা দূরে চলে যাবে; সহ‍্য হয়! আতইয়াবের অবস্থা দেখে তারিমের নিজেরও কলিজা পুড়ছে। এখনি মানুষটা চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে বিদায়ের সময় কি করবে! বেঁচে থাকলে সব মেয়েকেই পরের ঘরে যেতে হয়। এটাই নিয়তি! অনিচ্ছা সত‍্যেও মানতে হবে!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় পর্ব ২৯