মন ফাগুন পর্ব ২২

মন ফাগুন পর্ব ২২
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া

নিহান কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না কিন্তু তাকে নিজেকে শক্ত রাখতে হবে মাকে বাঁচাতে হবে। তবে ডক্টর যা বললো তাতে কি তার মা বেঁচে থাকবে এইরকম হাজার রকমের অজান ভয় তার মনের মধ্যে রয়েছে। নিহান পকেট থেকে তার ফোন বের করে সকালে কাজের জন্য রেডি হয়ে ছিলো সেই জন্য ফোন পকেটে আছে। নিহান সানভিকে ফোন করে আর বলে –
“- সানভি মমের খাবারে কেউ বিষ দিয়েছে এখন মমের অবস্থা খুব খারাপ। তুমি একটা কাজ করো আজকে আমার সকল মিটিং বন্ধ করে দাও আর থানা থেকে পুলিশ নিয়ে বাড়িতে যাও। বাড়িতে মিহি রয়েছে আর আমি মমের অবস্থা একটু ভালো হলে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যাবো “।
সানভি নিহানের কথা মতো কাজ করে আর নিহান আগে থেকে পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলে রেখেছে। পুলিশ কমিশনার বলেছে তার একটা বাহিনী যাবে নিহানের বাড়িতে। অন্যদিকে মিহি বাড়ির দারোয়ানের কাছে যায় আর বলে –

“- আচ্ছা এই বাড়িতে কি হচ্ছে কে কে কোথায় কি করছে এইসব কি দেখা যাবে না? এই বাড়িতে কি একটা ও সিসিটিভি নাই “।
দারোয়ান আসলে মিহিকে দেখে একটু ভয় পায় তবে এই বাড়িতে তেমন একটা সিসিটিভি লাগানো নাই। কখনো কোনো সমস্যা হয় নাই তাই দরকার পড়ে নাই তবে বাড়ির বসার রুমে একটা ক্যামেরা রয়েছে। আসলে ওখানে অনেক ধরণের মানুষ আসে তাই নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছে। দারোয়ান বলে –
“- আসলে ছোট মেডাম বাড়িতে তেমন একটা ক্যামেরা নাই তবে নিবার্চনের সময় বাড়িতে অনেক লোক আসতো পরিচিত অপরিচিত। তাই নিহান স্যার বাড়ির বসার রুমে একটা সিসিটিভি দেয় যেটার সংযোগ এখনো রয়েছে এই কম্পিউটারে। তবে নিবার্চন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন সেটা চলে কি না বলতে পারব না। অনেকদিন চেক করা হয় না “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিহি একটু রাগী চোখে দেখে দারোয়ানের দিকে মানে বাড়িতে এতো বড়ো ঝামেলা হয়ে গেছে আর ওনি সংযোগ আছে না কি যানেন না। মিহি গিয়ে কম্পিউটার চেক করে আজকে সকালের খাবারের ভিডিও দেখে যদিও সেখানে সব ঠিক ছিলো। বসার ঘরের তেমন কিছু হয় নাই তবুও মিহি তাদের বিয়ের পর থেকে এক এক করে ভিডিও দেখছে। তবে হঠাৎ করে কিছু একটা তার নজরে পড়লো মিহি সাথে সাথে ঝুম করে দেখে। মিহি বলে –
“- এইটা তো সেইদিনের ভিডিও যেইদিন আমাদের বউভাতের অনুষ্ঠান শুরু হয় আর ওইদিন মায়ের উপর প্রথম আক্রমণ হয়। মায়ের রুমে কয়েলের সাহায্য আগুন লাগে কিন্তু এইটা কি “।
মিহি ভিডিও জুম করে দেখে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হানিয়া শিকদার বসে রয়েছে টেবিলে। তিনি যখন ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলেন তখন তার শাড়িতে একটা জগ থেকে জুস পড়ে যায়। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো এখানে কোনো জুসের জিনিস ছিলো না বিষয়টা মিহির নজরে আসে। মিহি খুব ভালো করে খেয়াল করে দেখে কেউ একজন তার হাত দিয়ে জুস ফেলে দিয়েছে হানিয়া শিকদারের শাড়িতে।

হানিয়া শিকদার ফোনে কথা বলছিলেন তাই হয়তো বিষয়টা খেয়াল করে নাই। মিহি কারো মুখ দেখতে পাই নাই তবে তার হাতটা খেয়াল করে এইরকম ড্রেস বাড়ির কাজের লোকরা পড়ে বিষয় করে মহিলারা। তার মানে বাড়ির কাজের লোকের মধ্যে কেউ একজন এই কাজটা করেছে। মিহি বলে –
“- এই ধরণের কাপড় বাড়ির সব কাজের লোক পড়ে কি করে বুঝতে পারব এইটা কে? ওহ গড মিহি তোকে এই কেস সমাধান করতে হবেই?
মিহি আরেকটা জিনিস খেয়াল করে সেই খুনির জামার হাতায় বেশ একটু ডিজাইন করো। সাধারণ যারা এই বাড়িতে কাজ করে সবাই নরমাল কাপড় পড়ে তার মানে যে খুনি সে হয়তো একটু আধুনিক ভাবে চলতে পছন্দ করে। আর ওর হাতের মধ্যে দাগ কম মানে সে নিশ্চয়ই পার্লারে যায়। মিহি বলে –

“- সকল প্রমাণ দেখে যা মনে হলো খুনি একজন মহিলা আর সে বেশ আধুনিক ভাবে চলাচল করে। দামি কাপড় আর পার্লার ডিজাইন এইসব পছন্দ করে।সো মিস খুনি অনেক চালাকি করে ফেলেছেন এখন ধরা খাওয়ার পালা। বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এইবার ঘুঘু তোমার বহিব পরাণ “।
হাসপাতালে সবাই অপেক্ষা করছে হানিয়া বেগম কেবিনে ডক্টর ও বের হচ্ছে না। নিহান বসে রয়েছে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম রয়েছে এখানে মিহি ও নাই যে তাকে শান্তনা দিবে। তবে একটু সময় পর একজন ডক্টর বের হয়ে আসে নিহান সেটা দেখে ছুটে যায়। নিহান বলে –
“- ডক্টর মায়ের অবস্থা কেমন? কি হয়েছে মমের? শরীর থেকে কি বিষ বের করতে পারছেন বলুন ডক্টর কি অবস্থা এখন? আমার মম কি বাঁচবে?

“- কাম ডাউন মন্ত্রী নিহান শিকদার আপনার মম এখন ঠিক আছে আসলে বিষটা অনেক বিষাক্ত ছিলো। কিন্তু ভাগ্য ভালো ওনাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। আমরা শরীর থেকে বিষ বের করতে পেরেছি যদি বিষ রক্তে মিশে যেতো তাহলে হয়তো ওনাকে বাঁচানো যেতো না। উপর ওয়ালার মেহেরবানীতে ওনি সুস্থ আছেন তবে ওনাকে অবযারবেশনে রাখা হয়েছে “।
হানিয়া শিকদারের সুস্থতার কথা শুনে নিহানের অনেক খুশি হয়। মনে হচ্ছে মাথা আর মন দুইটার উপর থেকে একটা বোঝা সরে গেছে। নূহা যেই কলেজে পড়ে ডক্টরি নিয়ে সেই কলেজের হাসপাতালে হানিয়া শিকদারকে এডমিট করা হয়েছে। নূহা বলে –

“- নিহান ভাইয়া বড় বাবাকে কি খবর দিবো “।
“- হুম দাও ফোন করে বলে দিও মায়ের হাসপাতালে এডমিট থাকার কথাটা। আর যদি ওনার কাজ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বাড়িতে ফিরে আসতে বলবে। কারণ মায়ের পাশে থাকার জন্য ওনাকে দরকার “।
নিহান এই কথাটা বলে আর কোনো কথা বলে নাই তবে বিকাল হয়ে যায় হানিয়া শিকদার ঠিক আছে সারা,নূহা,জাকিয়া আর জায়ান রয়েছে সারা গিয়ে নিহানকে বলে –
“- নিহান বড় মামিতো এখন মোটামোটি সুস্থ আছে তুমি একটা কাজ করো বাড়িতে যাও। আর তুমি না বললে পুলিশ আসবে বাড়িতে তাদের সাথে তো তোমাকে কথা বলতে হবে।হাসপাতালে আমরা তো আছি যদি কোনো দরকার হয় তাহলে আমি ফোন করব তোমাকে “।
নিহান কথাটা বুঝতে পারে সত্যি এখন তার বাড়ি যাওয়া উচিত মিহি একা বাড়িতে রয়েছে। আর হাসপাতালে সবার খাওয়া দাওয়া করতে হবে সেইজন্য বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে হবে। নিহান বলে –

“- হুম ঠিক আছে ভাবী তাহলে তোমরা থাকো আমি আসছি
নিহান বাড়ি ফিরে যায় মিহি এখন রান্নাঘরে রয়েছে আসলে আজকে বাড়িতে সারা নাই তাই রান্না তাকে ই করতে হবে। মিহি রান্না করতে পারে তার মধ্যে বাচ্চামি রয়েছে তার মানে এইটা নয় সে কিছুই পারে না। ছোটবেলা থেকে রান্না করা তার বেশ পছন্দ ছিলো তাই শিখে রেখেছে। নিহান বাড়িতে এসে মিহিকে রান্না ঘরে দেখে বলে –
“- মিহি আপনি রান্না ঘরে কি করছেন? বাড়ির কাজের লোক রয়েছে তারা রান্না করুক। এমনি আপনি অসুস্থ তার মধ্যে রান্না করলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবেন “।
নিহান আগে ফোন করে বলে দিয়েছে হানিয়া শিকদার ঠিক আছে তাই মিহি তার কথা আর জিজ্ঞেস করে নাই। মিহি বলে –

“- আমার কিছু হবে না আর আপনি কি মনে করেন মিহি কি রান্না করতে পারে না। শুনুন মিহি পড়াশোনা ছাড়া অন্য সব কাজ ভালো করে করতে পারে। আপনি যান এখন গোসল করে আসেন পরে খাবার দেয় “।
“- ওহ সরি ভুল হয়ে গেছে আমিতো জানতাম না এই দুষ্ট মিহি রান্না ও করতে পারে। আচ্ছা পুলিশ আসে নাই এখনো সানভি কে বলেছি পুলিশ নিয়ে বাড়িতে আসতে তাহলে “।
“- পুলিশকে আমি আসতে বরণ করে দিয়েছি ওরা রাতে আসবে। পুলিশ কমিশনার এই কেস সমাধান করার জন্য একজন গোয়েন্দাকে পাঠাবে সে রাতে আসবে। আর রাতে একটা মেজিক রয়েছে সেটা দেখবেন “।
নিহান বুঝতে পারে মিহি কিছু জানতে পেরেছে সেটা রাতে বলবে তাই আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করে নাই। নিহান নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় পরে ওয়াশরুম থেকে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মিহি রুমে এসে দেখে নিহান বিছানায় শুয়ে রয়েছে। মিহি বলে –

“- নিহান আপনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন কোনো খাবার খাবেন না। বিকাল হয়ে গেছে খাবার খেয়ে পরে ঘুমিয়ে পড়বেন “।
নিহান মিহির হাত ধরে নিয়ে তার কাছে নিয়ে বসায় এরপর মিহির কোলের উপর নিজের মাথা রাখে। আর হাত দিয়ে ইশারা দেয় যাতে মেসেজ করে দেয় মিহি তাই করে। নিহানের চুলগুলো খুব সুন্দর তাই মেসেজ করতে ভালো লাগছে। নিহান বলে –
“- মিহি একটু আমার কাছে থাকেন বিশ্বাস করেন এখন আমার জীবনে আপনাকে অনেক দরকার। একটু শান্তি চাই আমার মিহি “।
“- হুম আছি তো আমি আপনার কাছে নিহান সবসময় থাকবে সব বিপদে। খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন”।
“- এখন খিদে নাই পড়ে খাবো “।

মন ফাগুন পর্ব ২১

মিহি আর নিহানকে বেশি কথা জিজ্ঞেস করে নাই নিহান আজকে অনেক টার্য়াড আসলে একটা পুরুষ মানুষ যতোই শক্ত হোক না কোনো। আপনজন হারানো ভয় তাকে কাভু করে ফেলে। মিহি অনুভব করে নিহানের নিশ্বাস গাঢ হয়ে গেছে বুঝতে পারে নিহান ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে আজকে রাতে একটা দারুণ সারপ্রাইজ আছে অপেক্ষা করুন “।

মন ফাগুন পর্ব ২৩