মন ফাগুন পর্ব ২৪
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
গুলি লাগার কারণে লিয়া মাটিতে পড়ে যায় মিহি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে তার এখন কি করা উচিত সেটা সে বুঝতে পারছে না। এইসব এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে মিহি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে জুনাইদ পুলিশ দিয়ে লিয়াকে চেক করতে পাঠায়। মিহি নিজের ঘোর থেকে বাহির হয়ে দেখে লিয়ার মাথা থেকে রক্ত পড়ছে মিহি বলে —
“- লিয়া কি হয়েছে তোমার লিয়া কথা বলো লিয়া। তুমি ঠিক আছো লিয়া “।
লিয়া কোনো কথায় শুনতে পাই নাই তবে লিয়া এখনো মারা যায় নাই মিহি ওকে উঠানোর চেষ্টা করে। তখন জুনাইদের ইশারায় অনেক পুলিশ ওকে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে থাকে নিহানের মাথায় ও ঢুকে না এইসব কি করে হয়ে গেছে। তবে মিহির যা অবস্থা এখন ওকে সামলানো দরকার নিহান মিহির কাছে যায় আর বলে
“- মিহি চলুন এখান থেকে রুমে যাওয়া দরকার। পুলিশ লিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে ও সুস্থ হয়ে যাবে। এইসব দেখে আপনার শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে মিহি চলুন “।
মিহি কোনো কথা বলতে পারছে না সে শুধু নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে মিহি বলে –
“- নিহান লিয়াকে কে গুলি করেছে এইসব কি করে হলো। আমি শুধু সত্যিটা জানতে চেষ্টা করেছি কিন্তু লিয়াকে মারতে চাই নাই নিহান এখন কি হবে লিয়া কি বাচঁবে না। আমার জন্য ওর উপর হামলন হলো বলুন নিহান ও কি বাচঁবে না “।
“- মিহি এমন কিছু হবে না জুনাইদ ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে ও বেঁচে যাবে। আপনি রুমে চলুন আসুন মিহি “।
নিহান অনেক কষ্ট করে মিহিকে নিজেদের রুমে নিয়ে আসে মিহি এখনো লিয়ার জন্য নিজেকে দোষ দিতে থাকে। নিহান খুব কষ্ট করে মিহিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় মিহি যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন নিহান ফোন হাতে নিয়ে পুলিশকে ফোন করে আর বলে –
“- কি ব্যাপার পুলিশ লিয়ার অবস্থা কেমন? ওর শরীর কি সুস্থ রয়েছে?
“- স্যার লিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু ওর শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না। ডক্টর বলছে লিয়াকে বাচাঁনো সম্ভব হবে না “।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিহান কি করবে বুঝতে পারে না একদিকে তার মায়ের শরীরের এই অবস্থা অন্যদিকে কে লিয়াকে গুলি করেছে সেটা বুঝতে পারছে না। আর মিহিকে সামলে রাখতে হবে হঠাৎ করে তাদের পরিবারের সাথে কার এতো বড়ো শএুতা তৈরি হয়ে গেলো কে করছে এইসব। বেশ কয়েকদিন কেটে যায় হানিয়া শিকদার এখন সুস্থ প্রায় আর লিয়ার মাথা থেকে গুলি বের করা গেছে তবে ও এখন কোমায় রয়েছে। মিহি প্রায় লিয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে নিহান ওকে বলেছে লিয়া এখন সুস্থ আর ওর বাড়িতে ফিরে গেছে।
আজকে হানিয়া বেগমকে বাড়িতে নিয়ে আসা হবে তাই মিহি আর সারা মিলে ভালো ভালো খাবার রান্না করছে। হানিয়া শিকদারকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসতে জায়ান আর নূহা গেছে নিহানের জরুরি একটা মিটিং ছিলো বলে যেতে পারে নাই। মিহি রান্না করে বলে –
“- রান্না করা শেষ এখন শুধু মায়ের বাড়িতে আসার অপেক্ষা নিহানকে আগে বলেছি হাসপাতাল থেকে মাকে নিয়ে আসতে কিন্তু ওনি আসেন নাই। মাকে না কি হাসপাতালে রাখা সেইফ সত্যি মাকে ছাড়া বাড়ি একদম ভালো লাগে না”
মিহি কথা বলতে থাকে তখন জায়ান আর নূহা হানিয়া শিকদারকে নিয়ে বাড়িতে আসে। মিহি আর সারা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তবে কেউ একজন হানিয়া শিকদারের হাত ধরে রেখেছে। এই লোকটাকে মিহি আগে কখনো দেখে নাই কে ওনি। মিহি বলে –
“- মা আপনি এসে পড়েছেন আসেন বসেন আমি পানি নিয়ে আসি “।
মিহি যখন পানি আনতে যায় তখন হানিয়া শিকদার পাশে থাকা লোকটাকে ইশারা দিয়ে মিহিকে দেখায়। আসলে হাত ধরে রাখা লোকটা আর কেউ না মিহির শশুড় মানে নিহানের বাবা মুরাদ শিকদার।আসলে মিহি সাথে নিহানেন বিয়ে হওয়ার পর থেকে ওনি এই বাড়িতে আর আসেন নাই ব্যবসার কাজে বাহিরে ছিলেন। নূহার মুখে হানিয়া বেগমের অসুস্থতার কথা শুনে কাজ অর্ধেক রেখে চলে এসেছে। মুরাদ শিকদার হাসি মুখে বলে –
“- হুম সেটা বুঝতে পারছি তবে একটা কথা মানতে হবে তোমার ছেলের পছন্দ খারাপ না। বেশ ভালো মেয়কে পছন্দ করেছে আর নূহার মুখে যা শুনেছি মেয়েটা বেশ সাহসী। তোমার ওই রাগী মন্ত্রী ছেলের জন্য এই মেয়েই যথেষ্ট “।
মিহি পানি নিয়ে আসে হানিয়া শিকদারকে দেয় তবে পাশে থাকা লোকে কিছু বলে না একটু তাকিয়ে দেখে। হানিয়া বেগমকে বুঝতে পারে মিহি তার শশুড়কে চিনতে পারে নাই হানিয়া বেগম বলে –
“- মিহি ওনাকে সালাম করো ওনি তোমার শশুড় হন “।
মিহি শশুড় কথাটা শুনে অবাক হয়ে যায় মানে ওনি নিহানের বাবা। বিয়ের পর থেকে কখনো নিহানের বাবাকে দেখে নাই না কখনো কারো মুখে তার বিষয়ে কথা বলতে শুনেছে তাই মিহি মনে করেছে হয়তো নিহানের বাবা বেঁচে নাই। মিহি তাড়াতাড়ি নিচুঁ হয়ে মুরাদ শিকদারকে সালাম করে মুরাদ শিকদার বলে –
“- থাক থাক আর সালাম করতে হবে না। বিয়েতে যখন শুনেছি নিয়া চলে যাওয়ার পর নিহান একটা চোর মেয়েকে বিয়ে করেছে তখন ওর উপর বেশ রাগ হয়। তবে হানিয়ার কাছে পরে তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি আর এখন তোমাকে দেখে মনে হলো আমার ছেলে মন্ত্রী হয়ে এতোদিনে মানুষ চিনতে শিখে গেছে। খুব মিষ্টি একটা মেয়েকে এই বাড়ির বউ করেছে “।
মুরাদ শিকদারেরে মুখে প্রশংসা শুনে মিহি বেশ খুশি হয় সে একটু লজ্জা পেয়ে হাসে। হানিয়া শিকদারকে নিয়ে সবাই উপরে চলে যায় এখন মিহিদের বাড়ির সিকিউরিটি আরো টাইট করা হয়েছে তাই কোনো সমস্যা হয় নাই। আর কেস পুরোটা জুনাইদ আর অন্য পুলিশরা দেখছে নিহান মিহকে কেসের বিষয়ে কোনো কিছু করতে বাধা দেয় কারণ লিয়ার সাথে যা হয়েছে এইসব দেখে মিহি অসুস্থ হয়ে যায়। আর এই কেসের মধ্যে অনেক জটিল বিষয় রয়েছে যদি মিহির ও কিছু হয়ে যায় তখন তাই মিহিকে এইসব থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
মিহি খাবার টেবিলে রাখে সবাই তাদের খাওয়া দাওয়া শেষ করে তবে নিহান এখনো বাড়ি ফিরে আসে নাই। প্রায় দুপুর গড়িয়ে যখন বিকাল হবে তখন নিহান বাড়িতে আসে। নিহানকে এতো দেরিতে বাড়িতে আসতে দেখে মিহি বলে –
“- নিহান আপনি এতো দেরিতে বাড়িতে আসলেন কোনো হুম। কি মিটিং ছিলো বলে সকালে বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছেন ভালো করে খাবার খান নাই আর এখন দুপুর পেরিয়ে গেছে এখন বাড়িতে আসলেন। দুপুরের খাবার কে খাবে শুনি?
মিহি এই কেয়ার করা বিষয় গুলো নিহানের বেশ ভালো লাগে মেয়েটা কি সুন্দর সবকিছু সামলে রাখছে। একদম বাড়ির বউয়ের মতো নিহান বলে –
মন ফাগুন পর্ব ২৩
“- সরি মিহি আসলে সামনে নিবার্চন তাই অনেক কাজ রয়েছে সেইসব বিষয়ে মিটিং ছিলো আর যেহেতু শহরের মন্ত্রী তাই বিভিন্ন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। তবে বেশ ভালো লাগছে মিহি আপনাকে এইরকম বউ বউ হিসাবে কতো সুন্দর করে জিজ্ঞেস করছেন তা দেখে। এখন মনে মার হচ্ছে সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিহান নেহাল শিকদারের বউ “।
নিহানের কথা শুনে মিহি একটা মুখের ভেংচি কাটে কতো শখ নিজের বউ হিসাবে মিহিকে ভাবা। তার আব্বু যদি জানতে পারে এইসবের বিষয় তাহলে কি যে করবে তার সেটা ভেবে মিহির ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। মিহি বলে –
“- এই মিহি কারো বউ না বুঝতে পারলেন এখন পরিবারের অবস্থা ভালো না তাই সব দায়িত্ব আমি পালন করছি। আর আগে নিজের শরীর সুস্থ রাখেন পরে পুরো শহরের খেয়াল রাখবেন। আমি খাবার নিয়ে আসছি ফ্রেশ হয়ে আসুন “।