মন ফাগুন পর্ব ৩০

মন ফাগুন পর্ব ৩০
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া

নিহান মিহির হাত ছেড়ে দেয় মিহিকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ওয়াশরুম থেকে। মিহি কি করবে সেটা বুঝতে পারে না তবে এখানে আর কতোখন দাঁড়িয়ে থাকবে তাই চলে যায় আবার রেস্টুরেন্টে। ইয়াসিন বসে রয়েছে মিহিকে আসতে দেখে বলে –
“- মিহি এখন আপনার শরীর কি সুস্থ লাগছে? কোনো সমস্যা হচ্ছে কি তাহলে বলুন ডক্টরের কাছে যাওয়া যাক?
মিহি টেবিলে বসে যায় এখন তার মাথায় কোনো কিছু আসতে না কি বলবে সে ইয়াসিনকে সত্যিটা কি বলে দিবে। যদি ইয়াসিন গিয়ে তার আব্বুকে বলে দেয় তাহলে কি হবে মিহি একটু হালকা নিশ্বাস নিয়ে বলে –
“- ইয়াসিন আপনার আমাকে কেমন লেগেছে? মানে বিয়ের বিষয়ে আপনার কি মনে হয় আমার মতো মেয়ের সাথে কি আপনি থাকতে পারবেন। আমি হয়তো আপনার জন্য যোগ্য না তাই এই বিয়েটা করা মনে হয় ঠিক হবে না ইয়াসিন “।

মিহি এইরকম কোনো বলছে সেটা ইয়ামিন বুঝতে পারছে না কারণ মিহির সাথে কথা বলে তার ভালো লাগলো। তার এই বিয়েতে কোনো সমস্যা নাই ইয়াসিন বলে –
-” মিহি আপনি এমন করে কোনো বলছেন এই বিয়েতে আমার কোনো অসুবিধা নাই আর আপনি যথেষ্ট ভালো একজন মেয়ে।আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছে এই বিয়েতে আমি রাজি মিহি আই লাইক ইউ মিহি।কিন্তু আপনার কি পছন্দ হয়েছে আমাকে?
ইয়াসিনের কথাটা মিহি ভালো করে শুনতে পায় নাই সে নিহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু নিহান ওর মিটিং নিয়ে বিজি। একটা বার মিহির দিকে দেখো না তাই মিহির মন সেইদিকে ছিলো ইয়াসিনের কথায় মনোযোগ দেয় নাই। মিহি আবার যাতে শুনতে পায় সেইজন্য বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- জি “।
মিহি জি কথাটা বলে আর কোনো কথা বলতে পারে না ইয়াসিন বুঝতে পারে মিহি রাজি তাকে বিয়ে করতে। ইয়ামিন মিহির হাত ধরে বলে –
“- মিহি আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে মিহি। আপনি আর আমি দুইজনে যখন এই বিয়েতে রাজি তাহলে আর সমস্যা কি তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলা যাক। এখুনি আমি দুইজনের পরিবারকে বিয়ের বিষয়ে বলে দিবো “।
মিহি বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে সে রাজি হয় নাই শুধু তখন শুনতে পাই নাই বলে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু এইটা কি হলো। ইয়াসিন নিজের ফোন বের করে কল দেয় তার পরিবারকে মিহি তখন থেকে ইয়াসিনকে বলে যাচ্ছে সে কোনো কথা বলতে চাই কিন্তু ইয়াসিন শুনছে না। ইয়াসিন কল দিয়ে বলে –
-” মা মিহি রাজি হয়ে গেছে এই বিয়েতে তোমরা বিয়ের ডেইট ঠিক করো। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই আমরা “।

মিহি বুঝতে পারে সব শেষ হয়ে গেছে এখন ইচ্ছে করছে নিজেকে কি যে করতে বুঝতে পারছে না। একদিকে নিহান তার উপর রাগ করে বসে রয়েছে অন্যদিকে এই ইয়াসিন তাকে বিয়ে করার জন্য মাথা খারাপ করে দিয়েছে। নিহান খুব মনোযোগ দিয়ে মিটিং করছে কিন্তু আসলে তার মনের মধ্যে কি চলছে সেটা শুধু নিহান যানে। নিহান মিটিং শেষ করে মিহির দিকে তাকায়।
নিহান যখন মিহির দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন মিহির হাতে ইয়াসিন একটা চুমো খায় এবং তখনই নিহানের চোখ যায় মিহির উপর। মিহি নিজে ও ভাবতে পারে নাই ইয়াসিন এমন কিছু করবে তাই সে নিজের হাত সরিয়ে ফেলে আর বলে –
“- কি করছেন ইয়াসিন হাতে এইরকম চুমো কোনো খাচ্ছেন। এইটা রেস্টুরেন্টে আর আমাদের বিয়ে এখনো হয় নাই আমি এইসব একদম পছন্দ করি না। তাই আর কোনোদিন আমাকে টার্চ করবেন না ইয়াসিন আমার কাছে বিরক্ত লাগে বিষয়টা “।

-” ওকে মিহি বুঝতে পেরেছি আর কখনো আপনার অনুমতি ছাড়া টার্চ করব না আপনাকে। সরি মিহি “।
ইয়াসিন কথাটা বলে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে রাখে কিন্তু নিহানের দৃষ্টি একটু ও সরে না মিহি আর ইয়াসিনের উপর থেকে। মিহির হাত ধরে চুমো খাওয়ার বিষয়টা পুরো নিহানের চোখে পড়েছে।নিহান চুপ করে দেখে যাচ্ছে মিহি কোনো কথা বলে না সে বসে থাকে। অনেক সময় পর নিহানের মিটিং শেষ হয় ইয়াসিন কথা বলছে কিন্তু মিহির মাথায় এইসব নাই সে এখন কি করবে সেটা ভাবছে। ইয়াসিন একটু কথা বলা শেষ করে নিহান তার মিটিং শেষ করে মিহির দিকে তাকায় পরে সানভিকে বলে –

-” সানভি চলে যাওয়া যাক পরিষদে আমার কাজ রয়েছে। এখানে থেকে আর কি করব “।
নিহান কথাটা বেশ জোরে বলেছে তাই মিহির কান অবধি পৌঁছে যায় মিহি এতোখন ভাবনার মধ্যে বিভোর ছিলো কিন্তু হঠাৎ নিহানের কথাটা কানে আসে। মিহি ওইদিকে তাকায় তবে নিহান তার দৃষ্টি সানভির দিকে রেখে কথাটা বলে। মিহি দিকে না তাকিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায় ইয়াসিন অনেক সময় ধরে মিহির সাথে কথা বলে তারা রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে পরে।
মিহির জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিলো সেটা করে সে বাড়িতে পৌঁছে যায় সেখানে গিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যায় পরে রাত হয় কিন্তু নিহান কোনো মেসেজ বা কল কিছু দেয় না। মিহি অনেকবার নিহানকে কল করে কিন্তু নিহান সেটা রিসিভ করে না তাই মিহি বসে থাকে রুমে।
রাত এখন প্রায় বারোটা নিহান এখনো বাড়ি ফিরে নাই অন্য সময় হলে মিহিকে ফোন করে বলে দেয় নিহানের আসতে দেরি হবে কিন্তু আজকে তা ও করে না। মিহি অনেক সময় ধরে নিহানের জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু কেউ আসছে না দেখে মিহি বেডে শুয়ে পড়ে। নিহানের গাড়ি এসে পৌঁছোয় শিকদার বাড়িতে নিহান নেমে নিজের বাড়িতে ঢুকে।

নিহান রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হয় মিহি তখন ঘুমিয়ে রয়েছে নিহানের চোখ যায় ঘুমন্ত মিহির দিকে। নিহান এগিয়ে গিয়ে মিহির বেডের কাছে গিয়ে বসে ওর মুখের ওপর চলে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় এরপর বলে –
-” মিহি আপনি শুধু কি আমার রাগ করাটা দেখেন একবার ও বুঝতে পারেন না কতটা কষ্ট হয় আমার। যখন আপনাকে অন্য কারো সাথে দেখি রেস্টুরেন্টে যখন ওই ছেলেটা আপনার হাত ধরেছিলো তখন বুকের মধ্যে কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা শুধু আমি জানি মিহি। আপনাকে ভালোবাসার টার্চ করার অধিকার শুধু এই নিহানের অন্য কারোর নয় “।
নিহান কথাটা বলে মিহির দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নিহানের চোখ যায় মিহির হাতের দিকে। দুপুরে যেখানে অনেক শক্ত করে ধরেছিলো যার জন্য এখনো জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। নিহান একটা মলম নিয়ে এসে লাগিয়ে দেয় মিহির হাতে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ হাতে করো টার্চ পেয়ে মিহির ঘুম ভেঙে যায় সামনে নিহানকে দেখে মিহি বলে –

-” নিহান আপনি কখন আসলেন? আমাকে ডাক দিলেন না কোনো রাতে কি কিছু খেয়েছেন? আমি কি খাবার গরম করে দিবো?
নিহান মিহির কথায় কোনো জবাব দেয় না শুধু হাতে মলম লাগাতে থাকে। মিহি কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বলে –
-” কি হলো বলেন খাবার কি খেয়েছেন? আর কি করছেন হাতে মলম দিচ্ছেন কোনো?
“- কোনো মলম লাগিয়ে দেওয়ার অধিকার কি এখন আর আমার নাই। ওহ ভুলে গিয়েছিলাম আপনাকে টার্চ করার কোনো রাইট এখন আমার নাই। সব অধিকার আপনার হবু জামাইয়ের আছে আচ্ছা আজকে রেস্টুরেন্টে কি হলো মানে বিয়ের ডেট কবে ঠিক হলো “।
মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে কিন্তু তাতে নিহানের কিছু যায় আসে না। নিহান এইরকম ব্যবহার মিহির সাথে আর কখনো করে নাই হয় রাগ করেছে না হলে অভিমান করেছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নিহানের কোনো যায় আসে না মিহির বিয়ে নিয়ে। মিহি বলে –

-” না মানে আসলে বিয়ের ডেট ঠিক করা হয় নাই কিন্তু ইয়াসিন বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে সেটা ওর পরিবারকে জানানো হয়েছে।ওনারা বলেছে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের দিন ঠিক করবে “।
নিহানের মলম লাগানো শেষ হয়ে যায় মিহির কথাটা ও শুনতে পায় সেটা শুনে একটা হাসি দেয় আর বলে –
“- ওহ আচ্ছা তাহলে বিয়ের দিন যেহেতু তাড়াতাড়ি ঠিক করা হয়েছে তাহলে আমাদের ডিভোর্স তাড়াতাড়ি করতে হবে। আজকে যেহেতু রাত হয়ে গেছে তাহলে কালকে সকালে উঁকিলের সাথে কথা বলে ডিভোর্সের কাগজ রেডি করতে বলবো। কাগজ রেডি হয়ে গেলে আপনি সাইন করে দিয়েন আর কাবিনের টাকা দিয়ে দিবো কোনো সমস্যা নাই ”
নিহানের ডিভোর্সের কথাটা মিহির কানে পৌঁছাতে মিহি বলে
“- ডিভোর্স মানে “।

“- হুম আমাকে ডিভোর্স দেওয়া ছাড়া আপনি অন্য কাউকে বিয়ে কি করে করবেন। আর যেহেতু আমাদের বিয়ের সময় তেমন কোনো আইনের কাজ ছিলো না তাহলে নিশ্চয়ই খুব বেশি সময় লাগবে না ডিভোর্সের জন্য। টেনশন করবেন না মিহি ডিভোর্সের সবকিছু আমি সামলে নিবো আপনার বিয়েতে কোনো সমস্যা হবে না “।
নিহানের এইরকম ব্যবহার মিহির মনে কাঁটার মতো বিঁধছে নিহান ওর উপর রাগ করতো বকা দিতো সব ঠিক ছিলো কিন্তু এইরকম অপরিচিত মানুষের মতো আচরণ করতো না। মিহির কোনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে না পারছে ওর বাবাকে বিয়ের কথা বলতে না পারছে নিহানের এইরকম ব্যবহার সয্য করছে। মিহি বলে –

মন ফাগুন পর্ব ২৯

-” নিহান আমার বিয়ে হয়ে গেলে কি আপনার কোনো সমস্যা হবে না? কষ্ট হবে না আপনার?
“- আমার কষ্ট আপনার কাছে কোনো মূল্য নাই মিহি আর এমনিতে আজকাল অনেক মানুষের ডিভোর্স হচ্ছে বিয়ে হচ্ছে এতে নতুন কি? আর ইয়াসিনের মতো ভালো কাউকে পেতে হলে এই নিহানের মতো কাউকে ছেড়ে দিতেই হবে আপনার মিহি “।

মন ফাগুন পর্ব ৩১