মন ফাগুন পর্ব ৩৩
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
মিহির মুখে শশুড় কথাটা শুনে নিহান সামনের দিকে তাকায় সেখানে একটা লোক রক্ত চোখ নিয়ে হাতে বন্ধুক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটা তার শশুড়। নিহানের এই কথাটা ভেবে গলার পানি শুকিয়ে গেছে মিহি নিহানের অবস্থা দেখ হাসে এরপর বলে –
“- আর আমার বাবার সাথে যে দুইজন লোককে দেখছেন যাদের একদম পালোয়ানের মতো দেখতে তার হলো আপনার শালা। একজনের নাম শিশু আর একজনের নাম পিশু “।
নিহান এইবার তার শশুড়ের থেকে দৃষ্টি সরে তার শালাদের দিকে তাকায় কি বডি কি শরীর কোনো হাতির থেকে কম না। এইরকম পালোয়ান বংশের মেয়েকে সে বিয়ে করেছে এইটা নিহান কখনো ভাবতে পারে নাই। তবে শিশু আর পিশু নামটা শুনে একটু অবাক হয় এইটা কেমন নাম নিহান বলে
-” এই শিশু আর পিশু এইটা কেমন নাম মিহি। মানে মানুষের নাম কি এইসব হয় আমার জানা ছিলো না “।
“- হুম হয় এর পিছনে অনেক বড়ো কাহিনী আছে পড়ে বলবো। কিন্তু এখন এই ছেলেকে আমার আব্বু কোনো গুলি করে মারছে সেটা জানা দরকার “।
মিহি পাশে থাকা একজন দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে এই ছেলেকে কোনো তার ভাই আর আব্বু মিলে মারছে।দারোয়ান বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- আসলে ছোট ম্যাডাম এই ছেলে গ্রামের একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছিলো আর আপনিতো যানেন বড়ো সাহেব প্রেম করা কতো পছন্দ করে। আর পরিবারকে না জানিয়ে যদি বিয়ে করে তাকে বড়ো সাহেব খুন করে ফেলে “।
নিহান কথাটা শুনে দেখে ছেলেটাকে জামশেদ তালুকদার কিভাবে মারছে ওই ছেলে শুধু প্রেম করেছে সেইজন্য গুলি করে মারতে চাইছে। আর নিহান তো ওনার নিজের মেয়েকে বিয়ে করে দুইমাস সংসার করেছে ওনাকে না জানিয়ে তাহলে নিহানের কি করবে। নিহান যখন এইসব কথা ভাবতে থাকে তখন মিহির নাম ধরে কেউ ডাক দেয় নিহান সেইদিকে তাকায়। সুন্দর শাড়ি পড়া একজন মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে এইসব পালোয়ানদের মধ্যে ওনাকে দেখে বেশ ভালো লাগছে।
মিহির নাম শুনে জামশেদ তালুকদার আর ওর ছেলেরা সবাই সামনের দিকে তাকায়। জামশেদ তালুকদার ইশারা দেয় শিশুকে যাতে সামনে থাকা ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যায়। মিহি গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –
“- আম্মু আমি এসে পড়েছি। তোমাদের অনেক মিস করছিলাম তাই চলে এসেছি “।
মিহির মুখ থেকে আম্মু ডাক শুনে নিহান বুঝতে পারে এইটা তার শাশুড়ী যাক এই বাড়িতে একমাত্র তার শাশুড়ী ভালো মানুষ। জামশেদ তালুকদার এগিয়ে যায় আর গম্ভীর কণ্ঠে বলে –
“- মিহি তোমার আসতে এতো দেরি হলো কোনো? কলেজের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে কতদিন আগে কিন্তু তুমি আসতে এতো দেরি কোনো করলে? ইয়াসিনের সাথে তোমার বিয়ের ডেইট ঠিক হয়ে গেছে আর তুমি শহর থেকে বাড়িতে আসলে না কোনো?
মিহি তার বাবার ধমক শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তার বাবাকে দেখে এই বাড়ির প্রতেকে ভয় পায়। মিহি মাথা নিচুঁ করে বলে –
“- আসলে আব্বু কলেজ শেষ হলে ও প্রাইভেট ছিলো। আর তোমাদের কথা অনুসারে ইয়াসিনের সাথে দেখা করেছি আমি তাহলে সমস্যা কোথায়?
জামশেদ তালুকদার আর কোনো কথা বলে না পিশু এসে মিহির সাথে কথা বলে। নিহান এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে সত্যিটা জানলে তার শশুড় তার সাথে কি করবে সেটা ভেবে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে জামশেদ তালুকদারের চোখ যায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোকের দিকে। জামশেদ তালুকদার জিজ্ঞেস করে
“- মিহি এই ছেলেটা কে? তোমার সাথে কি এসেছে?
মিহি এখন কথাটা শুনে পাথর হয়ে গেছে এখন সত্যিটা তার বাপকে জানাতে হবে কি করে বলবে যে নিহান তার স্বামী। যদি এইটা তার আব্বু জানে তাহলে তাকে খুন করে ফেলবে কিন্তু আসল ঘটনা এইবার সামনে আসা দরকার। নিহান এইবার দরজার সামনে থেকে এসে জামশেদ সাহেবের সামনে এসে হাঁটু গেঁড়ে সালাম করে। নিহান বলে –
“- আমার নাম নিহান নেহাল শিকদার “।
“- হুম আচ্ছা তোমার নাম নিহান কিন্তু তুমি কে? আমার মেয়ের সাথে কি করে আসলে এই বাড়িতে? তোমার পরিচয় কি?
মিহি নিজের মনের মধ্যে সাহস রাখে মিহি বলে –
“- আসলে আব্বু তোমাকে একটা কথা জানতে চাই মানে নিহানের সাথে আমার দুই “।
মিহি কথাটা শেষ করার আগে সেখানে শিশু আসে আর বলে –
“- আব্বা ওই ছেলেটাকে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছি। কতো বড়ো সাহস আমাদের গ্রামের মেয়ের সাথে প্রেম করে নিজের বউ আছে তারপর অন্য মেয়ের সাথে প্রেম। আমাদের গ্রামে যে প্রেম করে বিয়ে করবে তাকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হবে “।
জামশেদ সাহেব শিশুর কথা শুনে তারপর আবার মিহিকে জিজ্ঞেস করে –
“- মিহি কি যেনো বলছিলে বলো “।
মিহি আবার কিছু বলতে যাবে তখন নিহান মিহিকে থামিয়ে দিয়ে বলে –
“- আসলে জামশেদ স্যার আমি একজন মন্ত্রী। এই গ্রামটা আমার ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে তাই সামনে নিবার্চন আসছে তাই ভোট চাইতে আর গ্রামের কিছু উন্নয়ন করতে এখানে এসেছি আমি। রাস্তায় আসার সময় আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে তখন মিহি মানে আপনার মেয়ের সাথে দেখা হয়। ওনি যখন যানতে পারে আমি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি তখন আমাকে এখানে নিয়ে আসে “।
নিহানের কথা শুনে মিহি ওর দিকে তাকায় কি সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলছে লোকটা। আসলে নেতাদের কোনো পরিস্থিতিতে মিথ্যা কথা বলার মধ্যে এরা পারদর্শী হয়। জামশেদ সাহেব বলে –
“- মিহি ওনি কি সত্যি কথা বলছে?
“- জি আব্বু সত্যি কথা বলছেন।আচ্ছা আব্বু তুমি ওনার সাথে কথা বলো আমি রুমে যায় ফ্রেশ হবো “।
মিহি কথাটা বলে সেখান থেকে চলে যায় নিহান এখন ভয় করছে মিথ্যা কথা বলেতো দিলো কিন্তু তার শশুড় যদি সত্যিটা জানতে পারে তাহলে কি হবে। জামশেদ তালুকদার বলে –
“- ওহ আসুন মন্ত্রী সাহেব ভিতরে আসুন। আপনার মতো যদি রাজনীতির লোকেরা গ্রামে গ্রামে এসে মানুষের খোঁজ নিতো তাহলে এই দেশ কতো উন্নত হতো “।
নিহান শুধু হুম বলে জামশেদ তালুকদারের সাথে রুমে যায়। নিহান বলে তাকে কিছুদিন এখানে থেকে গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলতে হবে এরপর গ্রামে কি কি উন্নয়ন করা যায় সেইসব দেখবে। জামশেদ তালুকদার তাই নিহানকে তার বাড়িতে থাকতে দেয় মিহি রুমে গিয়ে ব্যাগটা বিছানায় রেখে ফোন বের করে মেসেজ দেয় –
“- কি সমস্যা আপনার কোনো সত্যি কথা বলতে দিলেন না হুম? বাসায় খুব বলছিলেন যে আমাকে আব্বুর সামনে হাত ধরে বলতে হবে আপনি আমার স্বামী। সেটা বলতে চেয়েছি তখন কিন্তু আপনি বলতে দিলেন না কোনো?
মিহির মেসেজ আসে নিহানের ফোনে নিহান এখন জামশেদ তালুকদারের সামনে বসে আছে। এমনি তার গলা শুকিয়ে গেছে তারপর আবার মিহির মেসেজ এই বাপ মেয়ে মিলে নিহানকে মেরে ফেলবে। নিহান মেসেজ লিখে –
“- সত্যি কথাটা কি করে বলতাম আপনার আব্বুকে ওনি কি মানুষ একটা লোককে খুন করে ফেলেছে। আর শুধু প্রেম করেছে বলে একজনকে খুন করেছে আর আমি ওনার নিজের মেয়েকে বিয়ে করে দুইমাস সংসার করে ওনার সামনে এসেছি তাহলে আমার কি করবে। এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই না আমি এখনো বাচ্চার মুখ দেখা বাকি আছে?
“- আচ্ছা তাই যদি আপনার বউকে অন্য কেউ বিয়ে করে নিয়ে চলে যায় তাহলে কি বাচ্চা আকাশ থেকে আনবেন? বাসায় না জিজ্ঞেস করছিলেন কোনো ভয় পায় আমার বাবাকে এতো এখন বুঝতে পারছেন?
“- আরে সব বুঝতে পেরেছি কে যানতো এই আমার শশুড় এইরকম অশুড় হবে। আর এই আমার দুই শালা মনে হচ্ছে মাথার উপর ফাড়ারঁ মতো ঘুরছে। নরমাল শশুড় বাড়ি কি হতে পারতো না আমার?
“- হতো যদি নরমাল মেয়েকে বিয়ে করতেন আপনি।বিয়ের দিন আপনাকে বলেছিলাম নিহান বিয়ে করতে পারব না আমি। আমার বাবা অনেক রাগী কিন্তু আপনি শুনলেন না এখন বুঝেন মজা “।
নিহা যখন ফোনে মেসেজ করছিলো তখন জামশেদ তালুকদার জিজ্ঞেস করে –
“- কি হয়েছে মন্ত্রী সাহেব কোনো সমস্যা? আপনার মুখা এইরকম চিন্তিত লাগছে?
“- না স্যার কোনো সমস্যা না আসলে আমার আম্মু ফোন করেছে এখনো এসে পৌঁছাতে পেরেছি না কি জিজ্ঞেস করছে। কোনো সমস্যা না “।
মন ফাগুন পর্ব ৩২
জামশেদ তালুকদার আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করে না তবে নিহান মনে মনে বলে –
‘- কি কপাল আমার কেমন শশুড় জুটলো কপালে এখন শশুড়ের ভয়ে বউকে মা বলে পরিচয় দিতে হচ্ছে। জানি না আর কি কি করতে হবে আমার ওহ গর্ড বাঁচা ও আমাকে “।