মন ফাগুন পর্ব ৩৬
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
নিহান কথাটা বলে নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ দেয় বেশ ফুরফুরে মেজাজে খাবার খাচ্ছে সে। মিহি আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিহানকে কি সুন্দর করে খাবার খাচ্ছে তার বউয়ের বিয়ে নিয়ে তার কোনো টেনশন নাই। মিহির ইচ্ছে করছে এখন খাবার না খেয়ে নিহানকে খেয়ে ফেলতে কিন্তু মিহি সেটা পারবে না। নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে খাবার খেতে থাকে।
নিহান খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে যায় তবে তার ঘুম আসছে না তাই একটু শান্ত হতে ছাদে যায়। মিহি ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো নিহান মিহিকে দেখে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় আর ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর বলে –
“- বউ তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছে না আমার “।
মিহি যখন ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন হঠাৎ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরার কারণ একটু অবাক হয়। তবে নিহানের কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে নিহান এইটা সেটা বুঝে নিহানের শরীরে আরো রাগ হয়। কি সুন্দর এখন বউ বলছে মিহির ইচ্ছে করছে নিহানকে খুন করে ফেলতে মিহি একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে –
“- সমস্যা কি আপনার নিহান এইরকম টার্চ কোনো করছেন আর কোন বউ কার বউ। এখানে বউ কে আমি আপনার কেউ হয় না “।
মিহির রাগ বুঝতে পারে নিহান সে আবার কাছে এসে মিহিকে বলে –
“- কার বউ মানে আমার বউ। আমার বউ এই নিহান নেহাল শিকদারের বউ আর আমি ছাড়া মিহি আপনাকে আর কে টার্চ করবে সেই সাহস আর কার আছে “।
“- একদম এইসব আজাইরা কথা বলবেন না নিহান শুধু মাএ আপনার জন্য এইসব হচ্ছে যদি সবাইকে সত্যি কথা জানানো হতো তাহলে এতো সমস্যা হতো না। আব্বুকে আমাদের বিয়ের কথা জানালে সে না হয় কয়েকদিন রাগ করতো কিন্তু ঠিক মেনে নিতো। কিন্তু এখন যদি একবার ইয়াসিনের সাথে আমার বিয়ের কথা শুরু হয় তাহলে আব্বু কখনো মেনে নিবো না সত্যিটা “।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিহান বুঝতে পারছে মিহির কথা কিন্তু সে জানে পরিস্থিতি এখন কেমন। জামশেদ তালুকদার এখন মিহির বিয়ের বিষয়টা যদি জানতে পারে তাহলে হয়তো ওনি কোনো ভয়ংকর কিছু করবেন যা নিহান চাই না। নিহান বলে –
“- মিহি এতো টেনশন করবেন না আমি সব সামলে নিবো। আর ইয়াসিনের সাথে কখনো বিয়ে হবে না আপনার এই মিহি শুধু আমার। আপনার আব্বু নিজে আমাকে তার জামাই হিসাবে মেনে নিবে ওই ইয়াসিনকে না “।
“- আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন নিহান কিন্তু মনে রাখবেন যদি আপনি ছাড়া অন্য কারো সাথে আমার বিয়ে হয় তাহলে কিন্তু আমি আত্মাহত্যা করব। আমাকে টার্চ করার অধিকার ইয়াসিনকে কখনো দিবো না তাই এমন কিছু করবেন না যাতে আমি সবসময়ের জন্য আপনার জীবন থেকে হারিয়ে যায় “।
মিহি কথাটা বলে চলে আসে নিহান এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে মিহির মনের অবস্থা বুঝতে পারছে সে নিজে ও মিহিকে ছাড়া বাচঁতে পারবে না।সকাল হয়ে যায় নিহান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে যায় কিন্তু আজকে আয়নার সামনে মিহিকে দেখতে পায়। বাসায় থাকতে মিহি প্রতিদিন তার সামনে মাথার চুল আঁচড় করতো কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না। নিহান বলে –
“- মিহি আপনি আমার কাছে আছেন কিন্তু আপনাকে ছুয়েঁ দেখার মতো পরিস্থিতি এখন নাই। তাড়াতাড়ি করে সবকিছু ঠিক করতে হবে ওই কেরাসিনের সাথে মিহির ভাঙতে হবে। আর শশুড় মশাই যাতে নিজেই আমার আর মিহির বিয়ে দেয় সেটা দেখতে হবে “।
মিহি ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখে কিছু লোক ছোফায় বসে আছে। মিহি প্রথম মনে করেছিলো হয়তো তার আব্বুর কোনো পরিচিত হবে কিন্তু ইয়াসিনকে দেখে সে অবাক হয়। মিহিকে দেখে তার বাবা জামশেদ তালুকদার বলে –
“- মিহি আসো দেখো কে এসেছে? ইয়াসিন আর তার পরিবার তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে আসো মিহি “।
মিহির মুখটা মলিন হয়ে যায় কিন্তু আব্বুর ডাকে সে মাথায় কাপড় দিয়ে সেখানে যায়। ইয়াসিনের সাথে একই ছোফায় মবে রয়েছে আর সিঁড়ির দিকে দেখছে কখন নিহান আসবে। ইয়াসিন হাসি মুখে বলে –
“- আসলে স্যার বিয়েটা আমি একটু দেরিতে করতে চেয়েছিলাম মিহিকে। কিন্তু সামনে আমাকে কিছু কাজের জন্য আমেরিকায় যেতে হবে ফিরতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। তাই যদি মিহির সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে ওকে নিয়ে বিদেশে যেতে পারব আমি “।
মিহি কথাটা শুনে কি বলবে সেটা ভুলে গেছে এখন কি করবে সে ইয়াসিনকে বিয়ে কি করে করবে মিহি। মিহি কোনো কথা বলতে যাবে তার আগে তার বাবা বলে –
“- দেখো ইয়াসিন তোমার সমস্যা বুঝতে পারছি আমি। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে কি করে সম্ভব মিহি আমার একমাত্র মেয়ে। ওর বিয়েটা একটু বড় আয়োজন করে দিতে চাই আমি তাই কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে।তুমি বিদেশ থেকে আসলে না হয় বিয়ে হবে “।
জামশেদ তালুকদারের কথা শুনে মিহির আত্মায় প্রাণ ফিরে আসে মিহি বলে –
“- হুম ঠিক বলেছে আব্বু। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না কিছু সময়ের দরকার আমার “।
মিহি কথা শুনে ইয়াসিন রাজি হয়ে যায় দেরি করে বিয়ে করতে কিন্তু তখন নিহান আসে। নিহান বলে –
“- আরে জামশেদ স্যার বিয়ের বিষয়ে এতো দেরি করলে কি করে হয়। বিয়ের আয়োজন সবাই মিলে করলে হয়ে যাবে এতো প্রবেলেমের কি আছে। ইয়াসিন যখন চাইছে মিহিকে এখন বিয়ে করতে তাহলে এখনই বিয়ে করিয়ে দেন “।
মন ফাগুন পর্ব ৩৫
নিহানের কথাটা শুনে মিহি অবাক এইটা কি সত্যি নিহান বলছে কি বলছে কি সে। ইয়াসিনের সাথে এখন বিয়ে করলে কতো বড়ো সমস্যা হতে পারে সেটা কি নিহান যানে না। মিহি নিহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে দেখে কিন্তু নিহানের তাতে কিছু যায় আসে না সে বলে –
“- স্যার ইয়াসিনের মতো কাউকে মেয়ের জামাই হিসাবে পাওয়া সবার জন্য ভাগ্যর বিষয়। তাই তাড়াতাড়ি স্যার বিয়েটা দিয়ে দেন আর সবকিছু আমি করব। বিয়ের রান্না থেকে বাসর সাজানো অবধি “.