মন ফাগুন পর্ব ৩৭
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
মিহি শুধু নিহানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে বুঝতে পারছে না নিহানের মনের মধ্যে আসলে কি চলছে। নিহান কি সত্যি জানে যদি এখন ইয়াসিনের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তাহলে সেটা কখনো ভাঙা যাবে না। জামশেদ তালুকদার নিহানের কথা শুনে আর বলে –
“- হুম নিহান তুমি অবশ্য কথাটা ভুল বলো নাই। মিহি আর ইয়াসিনের এখন বিয়েটা হলে খারাপ হবে না আমার শরীর ও কিছুদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না। কখন কি হয়ে যায় তাই মিহির বিয়েটা দিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এই কয়েকদিনের মধ্যে সবকিছু কি করে হবে?
জামশেদ তালুকদারের কথা শুনে ইয়াসিন বেশ খুশি হয় তবে তাকে বলে –
“- বাবা মিহি আর আমার বিয়েটা এখন হয়ে গেলে বেশ ভালো হতো আসলে বিদেশে আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য যেতে তাই কতদিন থাকতে হতে পারে তার কোনো ঠিক নাই। আর আমার বিদেশে যাওয়ার এখনো প্রায় বেশ কয়েকদিন দেরি আছে এর মধ্যে প্রায় সব রেডি হয়ে যাবে “।
জামশেদ তালুকদার ইয়াসিনের কথাটা বুঝতে পারে সে ও চাই মিহির বিয়েটা হয়ে যাক। জামশেদ তালুকদার মিহির দিকে দেখে আর বলে –
“- মিহি তুমি চাও এখন ইয়াসিনকে বিয়ে করতে? যদি তুমি বিয়ে করতে চাও তাহলে আমার সমস্যা নাই। বিয়ের আয়োজন কালকে থেকে শুরু করব “।
জামশেদ তালুকদারের কথা শুনে মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে মিহির চোখ পানির বিন্দু দিয়ে ভরে উঠেছে। নিহান এখনো হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যোনো ইয়াসিনের সাথে মিহির বিয়ে হয়ে গেলে সে খুশি হয়। মিহি বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- আব্বু তুমি যদি এখন ইয়াসিনের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাও তাহলে আমার কোনো সমস্যা নাই। ইয়াসিন বেশ ভালো ছেলে ওকে বিয়ে করতে চাই আমি। আর এই দেশে থাকতে আমার আর ভালো লাগছে না তাই বিদেশে চলে যেতে চাই.
মিহি কথাটা শুনে নিহান ওর দিকে দেখে মিহির চোখের কোণে জমে থাকা পানির কণা নিহান দেখতে পায়। সে তবুও কিছু বলে না কারণ সে যেটা করছে সেটা ভালোর জন্য করছে। নিহান সামনে থাকা একটা মিষ্টি নিয়ে ইয়াসিনের মুখে ভরে দেয় আর বলে –
“- তাহলে মিয়া বিবি রাজি কিয়া কারেগা কাজি।জামশেদ স্যার তাহলে আপনি বিয়ের আয়োজন করেন আর বিয়ের সব কাজ আমি করব কোনো টেনশন করতে হবে না আপনার। বিয়ের ডেইট ঠিক করেন আপনারা “।
মিহি পুরো সময় নিহানের মুখের দিকে দেখতে থাকে ইয়াসিনের মা বাবা সবাই মিলে মিহির বিয়ের ডেইট ঠিক করে সামনের সপ্তাহে মিহির বিয়ে। জামশেদ তালুকদার বলে –
“- মিহি তুমি ইয়াসিনকে নিয়ে ছাদে গিয়ে ঘুরতে যাও। যদি তোমার কিছু বিয়ের মধ্যে পরিকল্পনা থাকে তাহলে ইয়াসিনকে জানা ও “।
“- হুম আব্বু ইয়াসিন আসুন “।
মিহি আর ইয়াসিন ছাদে চলে যায়।নিহান ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু বলে নাই আর মনে মনে বলে –
“- মিহি আমি জানি বউ খুব কষ্ট হচ্ছে আপনার। বিশ্বাস করুন মিহি আপনার চোখের পানি আমার বুকে কাঁটার মতো কিন্তু এখন ইয়াসিনের সাথে আপনার বিয়ে ঠিক করা খুব জরুরি। ভালোবাসি মিহি আপনাকে খুব ভালোবাসি “।
মিহি আর ইয়াসিন ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছে মিহি বেশ শান্ত সে কোনো কথা বলছে না তার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে। ছাদের পরিবেশ খুব সুন্দর বাহির থেকে হালকা হাওয়া ভেসে আসছে ইয়াসিনের কাছে বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু মিহিকে চুপচাপ থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে –
“- মিহি কেমন আছেন আপনি? সেইদিন রেস্টুরেন্টে পর আপনার সাথে আর দেখা হয় নাই ফোন করেছিলাম কিন্তু আপনি রিসিভ করেন নাই। কোনো সমস্যা আমার কোনো কথায় কি কষ্ট পেয়েছেন আপনি মিহি?
মিহি নিজের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো তবে ইয়াসিনের কথা শুনে নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে। মিহি খুব শান্ত গলায় বলে –
“- জি আমি ভালো আছি। আসলে আমি এখন ফোন খুব বেশি ব্যবহার করি না আর আপনার নাম্বার আমার ফোনে সেভ করা ছিলো না তাই অপরিচিত কেউ কল করেছে বলে রিসিভ করি নাই “।
“- ওহ আচ্ছা। তবে মিহি আপনার বিষয়ে আমি যা শুনেছি তাতে মনে হয়েছে আপনি খুব দুষ্ট প্রকৃতির মেয়ে কিন্তু এখন এতো শান্ত হয়ে কোনো কথা বলছেন। আর সামনের সপ্তাহে আমাদের বিয়ে তাই যদি আপনার কোনো জিনিসের প্রয়োজন থাকে তাহলে আমাকে বলতে পারেন “।
“- না কোনো জিনিসের দরকার নাই আমার “।
মিহি কথাটা বলে আবার চুপ হয়ে যায় ইয়াসিন বেশ অনেক সময় ধরে কথা বলতে থাকে কিন্তু মিহি হুম ছাড়া আর কোনো জবার দেয় না।মিহির চোখের সামনে শুধু নিহানের মুখটা ভেসে উঠছে নিহান কোনো করছে এইসব সেটা সে বুঝতে পারছে না। ইয়াসিন মিহিকে শান্ত থাকতে দেখে ওর হাতটা ধরে আর বলে –
“- মিহি কি হয়েছে আপনি এইরকম চুপচাপ কোনো?
মিহি কোনো উত্তর দেয় না ইয়াসিন এইবার মিহির হাত ধরে ওকে কাছে নিয়ে আসে আর ওর গালে হাত দেয়। মিহি ইয়াসিনের হাত সরিয়ে দেয় আর রাগী স্বরে বলে –
“- ইয়াসিন আপনাকে আগে বলেছি আমাকে একদম টার্চ করবেন না আপনি বিষয়টা পছন্দ করি না আমি।যতখন আমাদের বিয়ে না হবে ততক্ষণ দূরে থাকবেন আমার কাছ থেকে। কথাটা যেনো মাথায় থাকে আমি এইসব একদম পছন্দ করি না “।
“- মিহি আপনি রেগে যাচ্ছেন কোনো সাতদিন পরে আমাদের বিয়ে এখন যদি আপনার হাত ধরি তাহলে এখানে সমস্যা কি। আর আপনাকে আমি টার্চ না করলে আর কে করবে আপনি আমার এই ইয়াসিনের “।
মিহি যতই নিহানের উপর রাগ করে থাকুক না কোনো নিহান তার স্বামী হয় সে একজন বিবাহিত নারী তাই তাকে টার্চ করার অধিকার সে কাউকে দিবে না। মিহি বলে –
“- সাতদিন পরে বিয়ে এখনো বিয়েটা হয়ে যায় নাই। আর আগে বিয়ে হোক তারপর আমি আপনার হবো। কিন্তু বিয়ের আগে কখনো আপনি আমাকে টার্চ করবেন না তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে “।
“- ওকে আর কখনো এমন করবো না আমি “।
“- হুম আচ্ছা আমার বেশ মাথা ব্যথা করছে রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে চাই আমি। বাই “।
মিহি কথাটা বলে ছাদ থেকে চলে যায় ইয়াসিনের কাছে মিহির ব্যবহার অদ্ভুত লাগে কোনো জানি মনে হচ্ছে মিহি এই বিয়েতে খুশি না। যদি মিহি এই বিয়েটা করতে না চাই তাহলে তখন হ্যাঁ কোনো বললো। ইয়াসিন নিচে চলে যায় নিহান এতোখন ওদের অপেক্ষা করছিলো তবে ইয়াসিনে৷ সাথে মিহিকে না দেখে নিহান জিজ্ঞেস করে –
“- ইয়াসিন মিহি কোথায়?
“- মিহির মাথাট ব্যাথা করছে তাই সে রুমে রয়েছে “।
ইয়াসিন কথাটা বলে ছোফায় বসে জামশেদ তালুকদার আর পরিবারের অন্য সদস্যর সাথে কথা বলতে থাকে। কিন্তু নিহানের সেই সব বিষয়ে মনোযোগ নাই সে শুধু ভাবতে থাকে মিহি রুমে গিয়ে কোনো কিছু করে ফেলবে না তো। মিহি যদি নিহানের প্রতি অভিমান থেকে নিজেকে শাস্তি দেয় তাহলে কি হবে। নিহান বলে –
“- আচ্ছা তাহলে স্যার আপনারা কথা বলুন আমি একটু রুমে যায়।
নিহান কথাটা বলে সেখান থেকে চলে আসে মিহির রুমের সামনে যায় নিহান। মিহির রুমের দরজা লাগানো দেখে মিহিকে ডাকতে থাকে নিহান আর বলে –
মন ফাগুন পর্ব ৩৬
“- মিহি দরজা খুলুন মিহি।আমি নিহান মিহি দরজা খুলেন “।
মিহি দরজা খুলে না নিহানের এইবার টেনশন হয় নিহান জোরে জোরে দরজায় ডাকতে থাকে। কিন্তু মিহির কোনো সাড়া শব্দ আসে না যেটা দেখে নিহান আরো বেশি ভয় পেয়ে যায় আর বলে –
“- মিহি দরজা খুলুন মিহি।এই নিহান থাকতে ইয়াসিনের সাথে বিয়ে হবে না আপনার তখন কোনো এমন করেছি সেটা বলবো আপনাকে৷ মিহি “।