মন ফাগুন পর্ব ৩৮

মন ফাগুন পর্ব ৩৮
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া

নিহানের মনে ভয় ঢুকে গেছে সত্যি মিহি কোনো কিছু করে ফেলে নাই তো। কিন্তু নিহানের ভয়কে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে মিহি দরজা খুলে দেয় মিহিকে সুস্থ থাকতে দেখে নিহান শান্ত হয়। নিহান গিয়ে মিহিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একদম নিজের বুকের মধ্যে মিশিয়ে নেয় আর বলে –
“- মিহি ঠিক আছেন আপনি? কখন থেকে ডাকছি আমি দরজা কোনো খুলছিলেন না ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি “।
নিহানের এইরকম কথা শুনে মিহি হাসে আর বলে –
“- আমি ওয়াশরুমে ছিলাম সেখানে পানির শব্দে হয়তো আপনার গলার আওয়াজ শুনতে পারি নাই।কিন্তু আপনি আমাকে এইরকম করে ডাক দিলেন কোনো কিছু কি হয়েছে?

“- আসলে ইয়াসিন বললো আপনি না কি অসুস্থ তাই ঘরে চলে এসেছেন সেইজন্য চেক করতে এসেছি। আর যখন দেখি আপনার ঘরের দরজা লাগানো আর আপনার কোনো আওয়াজ নাই তখন অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হলাে যেনো আপনি আমার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছেন মিহি “।
“- নিহান আমি একটু আপনার থেকে দূরে ছিলাম সেইজন্য এইরকম করছেন আপনি। কিন্তু একটু আগে আপনি আমাকে কি করে ইয়াসিনের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন। আমি আপনার ওয়াইফ হয়ে কি করে অন্য একটা পর পুরুষকে বিয়ে করব নিহান এইটা সম্ভব না নিহান “।
নিহান মিহির মুখটা তার বুকের থেকে উঠিয়ে তার দিয়ে গাল দুটো ধরে আর মুখের সামনে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। নিহান বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- মিহি এই নিহান নেহাল শিকদার বেঁচে থাকতে আপনি কখনো অন্য কারো হবেন না। আর ইয়াসিনের সাথে যদি দুইবছর পর আপনার বিয়ে হয় তাহলে সমস্যা আরো বেশি হতে পারে। পরিস্থিতি যেমন চলছে সেইরকম করে চলতে থাকুক শুধু আমার উপর বিশ্বাস রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে.
মিহি আর নিহান তারা কিছুটা সময় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এরপর নিহান নিজের রুমে চলে আসে। ইয়াসিন আর তার পরিবার হয়তো চলে গেছে নিহান যখন নিজের রুমে বসে ছিলো তখন জিসু ওর রুমে আসে আর নিহানক৷ দেখে হাসতে থাকে। নিহান নিজের ফোন রেখে জিসুর দিকে দেখে আর বলে –
“- কি হলো জিসু তুমি আমাকে দেখে এইরকম করে হাসছো কোনো। কি করেছি আমি?
“- আচ্ছা তোমার সাথে ফুপির কি সম্পর্ক? তুমি কি ফুপিকে ভালোবাসো তাহলে কি ইয়াসিনের সাথে ফূপির বিয়ে হবে না?
নিহান জিসুর কথা শুনে অবাক হয়ে যায় সে কি বলবে সেটা বুঝতে পারে না মানে জিসু কি জেনে গেছে নিহান আর মিহি স্বামী স্ত্রী। নিহান বলে –

“- জিসু এইসব কি বলছো তোমার ফুপির সাথে আমার কি সম্পর্ক থাকবে? আর ইয়াসিনের সাথে তোমার ফুপির বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে মিহির বিয়ে হবে “।
“- তাহলে তুমি ফুপিকে জড়িয়ে কোনো ধরলে তখন আর কোনো বললে মিহি তুমি শুধু আমার। এই কথা তখন বলে মানুষ যখন তারা একে অপরকে ভালোবাসে তাহলে কি তুমি ফুপিকে ভালোবাসো সত্যি করে বলো?
নিহান বুঝতে পারে জিসু হয়তো দেখে ফেলেছে তখন তার মিহিকে জড়িয়ে ধরার বিষয়টা। কিন্তু এই কথাটা যদি জিসু সবাইকে বলে দেয় তাহলে নিহানের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাবে। নিহান এইবার এগিয়ে যায় জিসুর কাছে আর ওকে বলে –
“- জিসু তুমি এই কথাটা অন্য কাউকে কি বলেছো?
“- না এখনো বলি নাই “।
-” দেখো জিসু বাবু তুমি যদি এই কথাটা অন্য কাউকে না বলো তাহলে তোমাকে অনেক বড়ো একটা গিফট দিবো,অনেক চকলেট দিবো, খেলনা দিবো। দয়া করে জিসু এই ঘটনা কাউকে বলো না?

“- হুম ঠিক আছে বলবো না কিন্তু সত্যি তুমি আমাকে খেলনা দিবে চকলেট দিবো?
“- হুম দিবো অনেক কিছু দিবো জিসু বাবু “।
জিসু নিহানের কথায় রাগ করে তাকে নিহান বাবু কোনো ডাকছে। জিসু বলে –
“- তুমি আমাকে বাবু বলে কোনো ডাকছো? বাবুতো আমার প্রেমিকা আমাকে ডাকে তুমি কোনো ডাকছো? তুমি কি আমার প্রেমিকা?

“- জিসু তোমার প্রেমিকা আছে? কোন ক্লাসে পড়ে তোমার প্রেমিকা “।
“- আমি ওয়ানে পড়ি। ও আমার সাথে পড়ে “।
“- ওহ আচ্ছা তাহলে জিসু তুমি কবে বিয়ে করবে তোমার প্রেমিকাকে?
“- মুসলমি হলে বিয়ে করব। আমি একটু বড়ো হলে আমার মুসলমানি হবে তখন বিয়ে করব।
“- বিয়ের সাথে মুসলমানির কি সম্পর্ক?
“- বাসর করতে হলে যেমন বিয়ে করতে হয় ঠিক তেমন বিয়ে করতে হলে মুসলমানি করতে হয়। তুমি কি জানো না “।
নিহান জিসুর কথা শুনে মনে মনে ভাবে এইটা এই পরিবারের সন্তান যেমন অদ্ভুত নাম তেমন অদ্ভুত পরিবার। নিহান আর জিসু আরো কিছু সময় কথা বলে এরপর জিসৃ নিজের রুমে চলে যায় আর নিহার তার রাজনীতির বিষয় নিয়ে সানভির সাথে কথা বলতে থাকে।

সময়টা খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় মিহির বিয়ের ডেইটা কাছে চলে আসছে কিন্তু নিহানের এইসব নিয়ে কোনো চিন্তা নাই সে সুন্দর করে সবকিছু ইনজয় করছে। মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয় এই লোকটা এতো চিল করে কি করে থাকছে। আজকে মিহির পরিবার আর ইয়াসিনের পরিবার বিয়ের শাড়ি আর গয়না কিনতে যাবে নিহান ও তাদের সাথে যায়। মিহি জিসু আর নিহান এক গাড়িতে রয়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরা অন্য গাড়িতে।
নিহান সুন্দর করে গাড়ি ড্রাইভ করছে মিহি আড়চোখে নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে নিহানের মনে কি চলছে সেটা মিহি বুঝতে পারে না। পিছনে জিসু মোবাইলে গেইম খেলছে মিহি বলে –
“- আচ্ছা আপনার মাথায় সত্যি করে বলুন কি চলছে নিহান। আমার বিয়ের আর প্রায় তিনদিন বাকি আছে কিন্তু সেই বিষয় নিয়ে আপনার কোনো মাথা ব্যাথা নাই। কি করতে চান আপনি নিহান “।
মিহির কথা শুনে নিহান তার দিকে দেখে সত্যি বউটা তার বড্ড বোকা সে জানে ও না নিহান কি পরিকল্পনা করে রেখেছে। নিহান একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে –

“- মিহি আমার মাথায় কি চলবে আবার কালকে থেকে আপনার বিয়ে সব অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে কত কাজ আমার। স্যার বিয়ের সব দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে সেটা সুন্দর করে পালন করতে হবে আফটার অল বউয়ের বিয়ে বলে কথা “।
“- আমার কি মনে হচ্ছে নিহান আপনি সত্যি চান ইয়াসিনের সাথে আমার বিয়ে হোক। আর এরপর আপনি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে সুখে থাকবেন। যদি এই কথাটা আপনার কথাটা মনে থেকে থাকে তাহলে বলে দেয় নিহান অন্য কাউকে বিয়ে করা দূরের কথা যদি অন্য মেয়ের দিকে কখনো চোখ তুলে ও দেখেন আপনাকে খুন করে ফেলবো আমি “।
মিহি কথাটা বলে বাহিরে দিকে তাকিয়ে থাকে নিহান হাসে সত্যি তার বউটা এখনো বড়ো হলো না। নিহান মিহিকে অনেক ভালোবাসে মিহির জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবে না সে। নিহান বলে –

“- খুন করে কোনো ফেলবেন? আপনি কেরাসিনকে বিয়ে করে বিদেশে চলে যাবেন আর অন্যদিকে কি আমি দেবদাস হয়ে বসে থাকবো।আপনি যদি একটা বিয়ে করেন তাহলে আমি আরো দুইটা বিয়ে করতে পারি আর আমার মতো এইরকম সুদর্শন মন্ত্রীর বউয়ের অভাব হবে না নিশ্চয়ই “।
মিহি কোনো কথা বলে না সে শুধু নিহানের দিকে দাঁত কড়মড় করে দেখতে থাকে। নিহান মিহির রিয়েকশন দেখে হাসতে থাকে।অল্প সময়ের মধ্যে তারা শপিং মলে পৌঁছে যায় সেখানে ইয়াসিনের পরিবার তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। মিহি গাড়ি থেকে নামে ইয়াসিনের মা বাবাকে দেখে সালাম দেয় ওনারা বলে –
“- থাক মিহি আর সালাম করতে হবে না৷ চলো শপিংমলে যায় সেখানে তোমার যা পছন্দ হয়েছে সব কিনবে চলো “।

মিহি আর ওর পরিবার সবাই মিলে শপিংমলের ভিতরে যায় সেখানে তারা জিনিস কেনাকাটা করছিলো মিহি বাধ্য হয়ে সেখানে বসে ছিলো। নিহান শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিহিকে দেখছে আর হাসছে মিহির বিয়ের জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করে ইয়াসিন। ইয়াসিন বলে –
“- মিহি এই শাড়িটা বিয়ের মধ্যে আপনি পড়বেন। শাড়িটা খুব সুন্দর দারুণ মানাবে আপনাকে “।
মিহি একটু হেঁসে শাড়িটা হাতে নেয় তবে তার বেশ একটা পছন্দ হয় না শাড়িটা। শাড়িটা সাদা রঙের ছিলো কিন্তু মিহি চাই সে বিয়েতে লাল রঙের শাড়ি পড়বে। মিহি পাশে থাকা একটা লাল বেনারসি দেখে বলে –
“- এই সাদা শাড়ি আমার পছন্দ হয় নাই কেমন যানি। কিন্তু এই শাড়িটা অনেক সুন্দর লাল রঙের বেনারসি বিয়েতে পড়তে চাই আমি “।

“- মিহি কাম অন ইয়ার আজকাল বেনারসি কি কেউ বিয়েতে পড়ে শুধু শুধু এই শাড়ি পছন্দ করে লাভ নাই। আপনি সাদা শাড়িটা পড়েন ভালো লাগবে আপনাকে যান পড়ে আসুন “।
মিহি আর কোনো কথা বলে না ইয়াসিন তার হাতে সাদা শাড়ি দেয় মিহি সেটা পড়তে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিহান এতোখন সব বিষয় খেয়াল করছিলো কিন্তু সে কিছু বলে না। মিহি যখন সাদা শাড়িটা পড়তে যাবে তখন ওয়াশরুমের দরজায় কেউ নক করে। মিহি দরজা খুলে আর বলে –
“- নিহান আপনি এখানে? আমি শাড়ি পড়বো এখানে কি করেন আপনি “।
নিহান মিহির কথার উত্তর না দিয়ে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় আর মিহির হাতে থাকা সাদা শাড়িটা পাশে রাখে। নিহান বলে –

“- এই নেন লাল বেনারসি আপনি না তখন পছন্দ করলেন সেটা রেখে চলে আসলেন কোনো।তাড়াতাড়ি এই শাড়িটা পড়ে আসুন আমার লাল টুকটুকে বউকে দেখতে চাই আমি “।
“- নিহান এই শাড়িটা আমি পড়তে পারব না। ইয়াসিন আমাকে না করছে পড়তে?
“- মিহি একটা কথা মনে রাখবেন কারো সাথে জীবন কাটাতে করতে হলে একে অপরের পছন্দ অপছন্দের গুরুত্বপূর্ণ দেওয়া উচিত।কিন্তু তার মানে এইটা না যে নিজের পছন্দ ভুলে গিয়ে অন্যর পছন্দকে সবসময় প্রাধন্য দিতে হবে। আর আপনি আমার বউ মিহি তাই আমি চাই বিয়েতে আমার বউ লাল শাড়ি পড়ুক।
নিহান কথাটা বলে বাহিরে চলে যায় মিহি দুইটা শাড়ি দেখতে থাকে এরপর সে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। বাহিরে সবাই অপেক্ষা করছিলো মিহির জন্য মিহি যখন দরজা খুলে বাহির হয় তখন সবাই ওকে দেখে অবাক হয়ে যায়। লাল শাড়িতে মিহিকে অনেক সুন্দর লাগছে। নিহান মিহিকে দেখে নতুন করে মিহির প্রেমে পড়ে যায় আর মনে মনে বলে –

মন ফাগুন পর্ব ৩৭

“- ওহ আমার বউটা এতো সুন্দর কোনো। মনে হয় পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য আমার বউয়ের কাছে তুচ্ছ। আই লাভ ইউ বউ ইয়। নিহানের কাছে তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারী “।

মন ফাগুন পর্ব ৩৯