মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৯ 

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৯ 
ফাবিয়াহ্ মমো

কখনো ভাবেনি এমন দিনটি দেখতে হবে। আশা করেনি হাসপাlতালে আসতে হবে। হৃদয়ের কোণে কেমন অবস্থা চলছে তা কেউ জানে না। সবটুকু শক্তি যেন নিংড়ে নিয়েছে কেউ। মেহনূর শ্রান্ত-পরিশ্রান্ত দৃষ্টিতে এগুলো। টলমল চোখদুটো দিয়ে সিয়ামকে দেখতে লাগলো। নিচের অধরটা কাঁপতে-কাঁপতেই গভীর শ্বাস নিলো মেহনূর। নিশ্বাসের দমকে চোখ নিঃসৃত অশ্রুটা গাল ভিজে পরল। বিকারশূন্য চেতনার মতো ক’মিনিট স্থির থেকে আস্তে করে বলল,

– আমি কি একটু দেখতে পারি?
কি যেন ছিল ওই কণ্ঠটায়। একটু হাহাকার করা সুর, একটু বেদনা মাখা আকুতি। সিয়াম নিজেকে আঁটকাতে পারলো না। বাকিরা সবাই কান্না চাপতে গিয়ে ফিসফিস করে কেঁদে ফেলল। হাসপাlতাlলের নিস্তব্ধ পরিবেশে ক্রন্দনরত সুরটা দেয়ালে-দেয়ালে বেজে চলেছে। একসাথে কতগুলো নাক টাকার শব্দ যে হচ্ছে! সবারই চোখদুটো ভূমির দিকে নিবদ্ধ, কারোরই দৃষ্টিজোড়া উপরের দিকে তোলার অবস্থা নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তৌফ নিজেকে আড়াল করতে যেয়ে কখন যে ফারিনের হাত ছেড়ে দিয়েছে খেয়াল নেই। দেয়ালের দিকে মুখ রেখে পিঠ কাঁপাচ্ছে তৌফ। এমন দৃশ্য দেখে মেহনূর চুপ হয়ে গেল। পৃথিবীর বুকে এ যেন বিরল এক দৃশ্য! আজকালকার মানুষ তো বড্ড নিষ্ঠুlর। কারোর জন্য দু’ফোঁটা অশ্রু ফেলার সময় নেই। সময়ের গণ্ডি মেপে আত্মীয়রা শুধু লাlশ দেখতে আসে, তাও লাlশের কাছে দু’ফোঁটা মেকি অশ্রু ফেলে।

যখন মানুষটা অসুখে ভুগতে থাকে, স্বজনের সাহচর্যের জন্য অপেক্ষা করে, কাতর হয়; তখন কেউ দেখতে আসে না। ঘরের দরজায় কোনো আত্মীয়ের ছায়া পরে না। যখনই ওই মানুষটা বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে পৃথিবীর আলো ছাড়ল, তখনই নিষ্প্রাlণ দেlহটা দেখার জন্য উঠোনে ভীড় করলো। আনাচে-কানাচে থেকে ছুটে এলো কত-কত আত্মীয়। হায় নিlষ্ঠুর মাlনুষ! কথাগুলো ভাবতেই মেহনূর ডানহাতের তেলোয় চোখদুটোয় মুছে নিলো।

জীবন-মৃlত্যুর কামরায় যেই লোকটি শুয়ে আছে, তার উপর ভরসা না-হোক, সৃষ্টিকর্তার উপর আছে। এতগুলো প্রাণের আকুলিবিকুল তিনি কি ফিরিয়ে দিবেন?
অশোক সেনের সহায়তায় এখানে এসেছে মেহনূর। একটানা কয়েক ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজার পর এবং নোংরা পানিতে চলতে-চলতে অনভ্যস্ত নীতি খুব অসুlস্থ হয়ে পরেছে।

পথিমধ্যে জ্ঞাlন হারানোর ফলে তাকে জেনারেল সেকশনে পাঠানো হয়েছে। পুরো চতুর্থ তলার বিশাল এরিয়াটা মাহতিমের জন্য বরাদ্দ। লিফটের কাছে অlস্ত্রধাlরী দশজনের ফোlর্স। এখানে আত্মীয়-স্বজন বাদে বহিরাগতদের আসা পুরোপুরি নিlষিlদ্ধ। লিফটে ঢোকার আগে প্রত্যেকটা মানুষকে চেlকিং করা হচ্ছে। হোক সেটা ডাlক্তার, তাও সাlর্চ চলছে। দ্বিতীয় দফার চেlকিংটা আরো ভlয়াlবহ। এখানে সন্দেlহজনক কিছু ধরা পরলে ক্যাlরিয়ার শুদ্ধো নিলাlমে!

কোথাও ফাঁক রাখছেন না অশোক সেন। নিরাlপত্তা নিlশ্চিlতের জন্য নিচেও টহল বাlহিlনি প্রস্তুত করেছেন। হাসlপাlতালের চাlরিদিকে সিসিটিভি কাlনেকশন সlচlল করা হয়েছে। পুরো সিকিউরিটি সিlস্টেlম হাতের মুঠোয় নিয়ে অশোক সেন নিজে তত্ত্বাবধান করছেন। একবার মাহতিমকে একা ছেড়ে ফলটা ভালো পাননি তিনি। ওরা রুখে দাঁড়াবার পাত্র নয়, কুlচlক্রী নেlতাlরা ঠিকই ফlর্দ কষতে নামবে।

এই মূহুর্তে মাহতিমের নিlরাlপত্তা নিশ্চিত করা একমাত্র কর্ম। এখনো জোlচ্চোlর শয়lতাlনটাকে কবজা করা যায়নি। ফেlরাlরি আlসাlমির মতো রোকনুজ্জামান ঘুরছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসার জন্য মেlডিlক্যাল টিম রাখা হয়েছে। দেশের গনমান্য ও শীর্ষস্থানীয় ডাক্তারদের তুlলে আlনা হয়েছে। এই ইমাlর্জেlন্সী কেlসেlর জন্য কেউ এক মিনিটের রেস্ট পাননি। গতরাত থেকে ভlয়াlর্ত টেনশনে তারাও সময় গুণছেন। হাই প্রোফাইল কেlস নিয়ে সদাসর্বদা ভlয় কাজ করে, কিন্তু তাই বলে এবারের কেlস নিয়ে সোজা নৌবাlহিlনী এসে গেছে।

কোলে খিচুড়ির বাটি নিয়ে মারজা বসে আছেন। ধোঁয়া উঠা নরম খিচুড়ির উপর চামচ নাড়ছেন। পশ্চিমের খোলা জানালার দিকে মলিন চোখে তাকিয়ে আছেন। সূর্য ডুবার দৃশ্যটা কি অপরূপ! পশ্চিমের কোলে তেজস্বী সূর্যটা ধীরে-ধীরে ডুবে যাচ্ছে। আকাশে বেগুনি রঙের খেলা চলছে। দিনের সবটুকু আলো নিভে সন্ধ্যের মায়ায় অবগাহন করছে।

মাথার ব্যথাটা কমে গেছে, কিন্তু পায়ের গিঁটে এখনো ব্যথা। ছেলেটা একবারও মা-কে দেখতে আসলো না। কি এমন কাজ ওর? কি নিয়ে এত বিভোর? স্বামীটাও শুধু কাজ-কাজ করেই চলে গেল। এখন ছেলেটাও দেখি বাবার মত আচরণ করছে। একা-একা থাকলেই শুধু মাহদির কথা মনে পড়ে। মনটা যখনই খুব বিষিয়ে উঠে, মারজা অশ্রুসিক্ত নয়নে মনে-মনে শুধু আর্জি জানান, ‘ মাহদি, ও বাবা আমার, আগে জানলে তোর সব বায়না শুনতাম। তোকে কোনোদিন শাষন করতাম না।

তুইও গেলি আমার কলিজার অlর্ধেlক চলে গেল। আল্লাহ্ তোকে জান্নাত নসীব করুক বাবা। তুই ওই দুনিয়ায় ভালো থাক। ‘ সূর্যটা অস্ত গেল। আকাশটাও সূর্যহীন হয়ে অন্ধকারে তলাচ্ছে। শান্ত কেবিনের ভেতরটা আলোকশূন্যতায় ডুবে গেলে হঠাৎ সুইচ টেপার শব্দ হলো। পুরো রুমটা এ্যানার্জী বাল্বের টিমটিমে আলোয় উজ্জ্বল হয়ে গেছে। মারজা সম্বিত ফিরে পেয়ে তাড়াতাড়ি একটু খিচুড়ি মুখে দিলেন। দিয়েই বুঝলেন ঠান্ডা হয়ে গেছে। পেছন থেকে একটা উচ্ছল সুর সহজাত হাসিতে বললো,

– মিlছে-মিlছি নাlটক করেছেন? খেতে হবে না, রেখে দিন। এখন কেমন অনুভব করছেন? মাথায় ব্যiথা হচ্ছে?
মারজা খিচুড়ির চামচটা বাটিতে রেখে শূন্য গলায় বললেন,
– ব্যথা নেই। তবুও পা-টা একটু কেমন জানি করে। আমি কি হাঁটতে পারব? বসে থেকে অলস লাগছে। আমি একটু বৌমার কাছে যেতে চাই। একটু নাতিটাকে দেখে আসতাম।
নার্স মহিলাটা জানালার কাছে চলে গেল। ভারী পর্দাটা টেনে দিয়ে কৌতুহল গলায় বলল,

– উনি কি আপনার ছেলেবউ?
মারজা একগাল হাসল। পাদুটো ফ্লোরে ছেড়ে বললো,
– হ্যাঁ, ছেলেবউ।
বাকিটা ভাঙিয়ে বললেন না। সৌভিককে যেহেতু ছেলের মতো স্নেহ করে, সেহেতু শানাজ তো ছেলেবউই বটে। নার্সের হাত ধরে-ধরে শানাজের কাছে গেলেন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখলেন, সৌভিকের কাকি বসে আছেন। ভদ্রমহিলার সাথে টুকটাক আলাপ সেরে শানাজের পাশে বসলেন। সি-সেকiশiনের জন্য শানাজের অবস্থা এখনো বেশ দূর্বল। মুখটা এখনো বেশ শুকনো। মারজা প্রফুল্ল মুখে ছোট্ট শোয়েবকে কোলে নিলেন। নিষ্পাপ মুখটায় চুমু খেয়ে বললেন,

– মাশাআল্লাহ্, শোয়েব তো দেখি বাবার মতো নাক পেয়েছে। ওমা! আবার দেখি হাসে। তুমি কি আমার কথা বুঝো দাদু? হাসো কেন?
মারজার হাসিমাখা মুখটার দিকে শানাজ চেয়ে আছে। কি অমায়িক হাসি হাসছেন, কি সুন্দর প্রাণখোলা আচরণ। শানাজ চুপটি করে সবই দেখে যাচ্ছে। শোয়েব হওয়ার পর থেকে শানাজের মন শুধু ছেলের দিকেই থাকে। যতই পেটের নিচে পীড়া হোক, চিড়চিড় করে ব্যথা হোক, ছেলের কান্না এক সেকেন্ড সহ্য করতে পারে না।

কোনো হুঁশ-জ্ঞান থাকে না। সেখানে ছোট ছেলেকে হারিয়ে এই মহিলা কতো নরম, কত প্রাণবন্ত আচরণ করছে। এখন যদি তিনি বড় ছেলের দূর্ঘlটlনাটা শোনেন, তাহলে ওই মাতৃস্নেহের বুকটা কিভাবে আতঁকে উঠবে? কিভাবে সহ্য করবে ওই ব্যথা? শানাজ যখন এসব নিয়ে ভাবছিল, তখন পাশ থেকে সৌভিকের কাকি ঠিক একই চিন্তায় বিভোর। ভদ্রমহিলা অজান্তেই আফসোসের গীতি গাইতে-গাইতে বললো,

– খবরটা শোনার পর ভালো লাগছে না ভাবী। দুনিয়ায় চলা এখন মুশকিল। পথে-ঘাঁটে বেরুলেই জান হাতে নিয়ে বেরুতে হয়। ইশ! নাজানি ছেলেটা কেমন হালে আছে! আপনি মন শক্ত করুন ভাবী। মনে আশ্বাস রাখুন, মাহতিমের কিচ্ছু হবে না।
শানাজ চকিতে কাকি-শ্বাশুড়ির দিকে চাইলো। এটা কি করলেন? কি বলে ফেললেন? হায় সর্বনাশ!

এসব বলা যে বারণ ছিলো। ভদ্রমহিলা আবার কি যেন বলতে নিলে হঠাৎ শানাজের দিকে চোখ পরলো। শানাজের দৃষ্টি যেন বলে দিচ্ছে, ‘ আপনি এটা কি করলেন! কি করলেন কাকিমা?আপনাকে এসব কথা কে বলতে বলেছে? ‘ ভদ্রমহিলা বেকুবের মতো মারজার দিকে তাকালে ভুলটা বুঝতে পারলেন তিনি। মারজার নিশ্চল-নীরব-পাণ্ডুবর্ণের মুখটা দেখে লজ্জায়-অনুশোচনায় মাথা নিচু করে ফেললেন। মারজা বজ্রাহতের মতো অতি ধীর সুরে বললো,

– মাহতিমের কি হয়েছে?
ভদ্রমহিলা মুখ তুলে মারজার দিকে তাকালেন। অনুতপ্তের দৃষ্টি দিয়ে একবার শানাজের দিকে তাকালে শানাজ ফিরে নেয়। চোখের সজল অবস্থা ঢাকার জন্য স্যালাইন লাগান হাতটা দিয়ে চোখ ঢাকে। শানাজের ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। অন্যদিকে মারজা স্থিরমূর্তির মত চুপচাপ।

ভেজা কাপড়গুলো শরীরে শুকালো। খোপা বাঁধা চুলগুলো ওভাবেই রইলো। মেহনূর কক্ষটার সামনে থেকে একটা সেকেন্ডের জন্য সরলো না। অনেক চেষ্টা করলো একটা বার দেখার জন্য, কিন্তু ডাক্তাররা সায় দিলো না। সকালের নাস্তা শেষে কেউই কিছু খায়নি। অথচ ঘড়িতে রাত দশটা বেজে বিশ। দু’ধারের চেয়ারগুলোতে বসে আছে সবাই। ফোলা-ফোলা চক্ষুতে স্থির হয়ে গেছে। সৌভিক চেয়ারে বসে মুখটা ফ্লোরের দিকে নত করে আছে। তার পাশে নীতি-সাবির-ফারিন বসা।

তৌফ রক্তশূন্য মুখের মতো থম মেরে আছে। বাকিরা উলটোপাশের চেয়ারে বসে যে যার মতো নির্বিকার। মেহনূর চেয়ারে পিঠ লাগিয়ে মাথাটা পেছনের দেয়ালে ঠেকিয়েছে। ওই ভঙ্গিতে চোখদুটো বুজে বাঁ বাহুতে ডানহাত ও ডান বাহুতে বাঁ হাত রেখে কুঁকড়ে আছে। শরীরটা শীতের জন্য কাঁপুনি দিলেও মেহনূর তা পাত্তাই দিচ্ছে না। সামনের দ্বার বন্ধ কক্ষের ভেতর দানবের মতো মানুষটা শুয়ে আছে। যাকে আঁকড়ৃে, যাকে ধরে, যাকে মনের কুঠিতে স্থাপন করে মেহনূর বুঝতে শিখেছে।

কত রাত ওই দেহের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সমস্ত ভয়কে নিঃশেষ করেছে মেহনূর। সপ্তাদর্শী বয়সটা টেনে হিঁচড়ে কুড়িতে এসে পৌঁছেছে, গোটা তিনটা বছরের পরিবর্তন বাকি ষোলটা বছরকে পিছিয়ে দিয়েছে। এই আমূল পরিবর্তনের সবটুকু কৃতিত্ব ওই অসভ্য লোকটার! এই অসভ্য লোকটার সুস্থ হওয়া চাই-ই-চাই। কোনো হেলা নিবে না মেহনূর।

তাকে চোখের আড়াল হতে দেবেই না। হঠাৎ ভেতর থেকে নীরবতা বজায় রেখে দুটো ডাক্তার বের হলেন। তাদের পুরো শরীরটা বিশেষ পোশাকে ঢাকা; মাথায় সার্জিক্যাল টুপি, মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক। তাদের দেখে আশান্বিত মুখে উঠে গেল সবাই। শুধুমাত্র একটি কথা শোনার জন্য সবার মনটা আনচান করছে। ডাক্তারের মুখ থেকে কেবল — কেবল একবার ‘ শঙ্কামুক্ত ‘ খবরটা আসুক। সৌভিক ত্রস্তভঙ্গিতে ডাক্তারের দিকে জেরামুখী হলো, উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বেচইন ভঙ্গিতে বলল,

– কোন খবর আছে? আপডেটটা বলুন ডাক্তার। উন্নতি হয়েছে কিছু? ওর অবস্থা কেমন? প্লিজ সাসপেন্স বাড়াবেন না। আমরা টেনশনে মlরে যাচ্ছি। প্লিজ প্লিজ কিছু বলুন,
ডাক্তারদুটো নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করলো। ইশারায় যেন বলাবলি করল, ‘ সত্যটি বলে দেই, কি বলুন? ‘। সবার বুকটা একইগতিতে ধুকপুক-ধুকপুক করছে। কি বলতে চাইছে আল্লাহই জানে। এরপরই সময়ক্ষেপণ না করে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং বিশেষ সমাদৃত ডাক্তারটি ওদের দিকে ফিরলো। মুখের মাস্ক খুলে নম্রসূচকে বললো,

– আপনারা আলহামদুলিল্লাহ্ বলুন। আপনাদের কেসটা এমন সিচুয়েশনে ছিল, যেখানে রোlগীর অবস্থা প্রায় ক্রিlটিক্যাlল। হয়তো দ:মটা চলে গেলে সেটাই স্বাভাবিক হতো। তার হাlর্ট এখনো স্লো রেট দিচ্ছে। তবুও মেডিক্যাlল অবজাlরভেlশনের মধ্যে যেটুকু রিসপন্স করেছে, সেটাই অনেক। আপাতত কিছু সিম্পটম দেখে তাকে লাlইlফ সাlপোlর্টে নেওয়া হচ্ছে না। অনেক সময় দেখা যায় ব্লাlড দিতে-দিতেই রোlগী মাlরা যায়।

একসাথে এতখানি ব্লাlড পেয়ে হাlর্ট পাlম্প করতে পারে না। তার উপর গুরুতর এlক্সিlডেন্ট কেসে কাlর্ডিয়াlক সিস্টেlম নাlজুক হয়ে থাকে। উনার বডিতে ইমিউlনিlটি সিlস্টেlম এবং অন্যাlন্য অর্গাlনের সাlরকুলেlশনটা ভালো পর্যায়ের। যেখানে উনার হাlর্ট যেকোনো সময় পাlম্প করা থাlমাlতে পারতো, সেখানে স্লো রেটেই দুই ব্যাlগ রlক্ত নিয়ে ফেলেছে। বাকি দুই ব্যাlগ আমরা সিচুয়েশন বুঝে দিয়েছি। মাlথাlয় চারটা সেlলাlই পরেছে।

এজন্য ইনlফেlকশন ইস্যু থেকে দূরে রাখার জন্য আরো তিনদিন ইনlটেনlসিভ কেlয়াlরে রাখছি। তবে এটা সুলক্ষণ যে, উনার আটচল্লিশ ঘন্টা এখনো কমপ্লিট হয়নি। সেই পরিসংখ্যান মতে আমরা উনার ফিজিlক্যাlল সিচুয়েশন নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।
সবাই একসঙ্গে স্বস্তির শ্বাস ফেললো। মনে হলো, বুকের উপর থেকে প্রচণ্ড ভারী কিছু সরে গেল। মনে-মনে শোকর গুজার করে সবাই শান্ত হলো। প্রীতি একটু পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য ছোট্ট প্রশ্ন করলো,

– ভাইয়ার কি শুধু মাlথাlয় ইন্ঞ্জুlরি হয়েছে? অন্য কোনো ইন্ঞ্জুlরি হয়নি তো?
মাস্ক খোলা ডাক্তারটি প্রীতির উদ্বিগ্নতা দেখে মুচকি হাসি দিলেন। তিনি টেনশনের কারণটা যথাযথ বুঝতে পেরেছেন। এবারের উত্তরটা তিনি না দিয়ে তার পাশের ডাক্তারটি দিলেন,

– প:ঙ্গুlত্বের ভ:য় নেই। ডানপায়ে খানিকটা ইন্ঞ্জু:র্ড হয়েছে। তবে প্রপার রেlস্ট আর প্রেসক্রিlপশন মেনে চললে আগামী ছয় মাসের ভেতর সুlস্থ হয়ে যাবেন। উনার বlডি এখনো খুব উlইক। আমরা একটা বিষয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। উনার হেলথের কথা চিন্তা করে আমরা তাকে কড়া রেস্টের ভেতর রাখব।

সেখানে আপনাদের দেখলেই তিনি কথা বলার চেষ্টা করবেন, যেটা উনার মাlথাlয় প্রেlশাlর ক্রিয়েট করতে পারে। এই মূহুর্তে মাlথাlয় প্রেশার মানে তো বুঝতেই পারছেন। প্লিজ কো-অপারেট করবেন। চিন্তার কিছু নেই।
হঠাৎ দপ করে চোখ খুললো মেহনূর। ডাক্তাররা ওর সামনে দিয়ে যেতে নিলে মেহনূর পেছন থেকে ডাকলো,
– শুনুন,
ডাক্তারদুটো পা থামিয়ে মেহনূরের দিকে তাকালো। মেহনূর হাতদুটো আলগা করে বসা থেকে উঠলো, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

– আমি কি একবার দেখতে পারি? বাইরে থেকেই দেখব, শুধু একপলক দেখেই চলে যাব। আমি তার কাছে যাব না। কোনোভাবে কি —
দুজন ডাক্তারই বিনয়ী হাসিতে অনিচ্ছুক ভাবটা বুঝিয়ে দিলেন। তারা কেউই চাচ্ছেন না এখন ভিজিট হোক। মেহনূর তাদের অভিব্যক্তি বোঝার পর নির‍্যুত্তর মুখে শুধু অপেক্ষাই করল। অপেক্ষার গণ্ডি আরো চার দিন বাড়ল। আরো চারটি দিনের জন্য মনের উচাটন অবস্থা থেকে নিজেকে সামলালো সে। অশোক সেন সবটা শোনার পর চিন্তামুক্ত হলেন। রকিং চেয়ারে বসা অবস্থায় চোখ বন্ধ করে বললেন,
– হে ঈশ্বর! ছেলেটাকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে তোলার জন্য আজই মন্দিরে যেয়ে প্রণাম করে আসব।

এবার আরেক দফা শুরু হয়। এটাকে বলা উচিত নিজস্ব খেলা। এই খেলার রচয়িতা শুধু মাহতিম আনসারী। পুরো কেসকে নতুন মাত্রায় যোগ করেছে সে। হাসপাতালের বেডে শুয়েও বাইরে লেলিহান শিlখা জ্বাlলিয়ে এসেছে। সে চার দেয়ালে আবদ্ধ, শরীরটা অতিমাত্রায় দুর্বল। তবুও, বাইরের হাওয়া উত্তপ্ত করে ছেড়েছে। মাহদি আনসারীর হlত্যা মাlমলায় একমাত্র আlসাlমি হিসেবে রজনী ইবনাতকে চিহ্নিত করেছে।

রজনীর সমস্ত ক্রিয়াকলাপ তারই আন্ডারে কাজ করা কিছু গুlপ্তচlর বলেছে। সমুদ্রের তীlড়ে ভুলিlয়ে-ভাlলিয়ে মাহদিকে পানির কাlছে নিয়েছে। সেখানে মিlথ্যা প্রlলোভlন দেখিয়ে মাহদিকে স্রোতের কাছে ছাড়ে। সlমুদ্র এক ঝাlপটাlয় নিজের অতলস্পর্শী বুকে টেনে নেয়। বাকিটা সবার জানার কথা। সlমুদ্র কাউকে একবার টেlনে নিলে সুlস্থ সমেত ছাড়ে না। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, রজনী ইবনাত তার নিজ বাড়িতে নেই।

রোকনুজ্জামানের পাশাপাশি সেও নিরুlদ্দেlশ, পlলাতlক। রাতারাতি দুটো মানুষ যেন গাlয়েlবই হয়ে গেল। নিরাlপlত্তা বাlহিlনিও তাদের সন্ধান খুঁজে পাচ্ছে না। এভাবে দুটো জীlবন্তl মানুlষ কি সত্যিই অlদৃশ্য হতে পারে? কোনো জাlদুবিlদ্যায় ‘ ছু মন্তর ছু ‘ বলে হাlরাতে পারে? নাকি এখানে কিছু সাংঘাতিক সত্য লুকিয়ে আছে? যেটা এমন কিছু, যা শুনলে মানুষ ভয়ে আঁতকে উঠবে? বিষয়টা কেমন যেন অদ্ভুত! কেমন যেন অস্বাভাবিক! টানা তিনদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে-স্থানে খুঁজল তারা। অথচ, চিহ্ন পযর্ন্ত নেই।

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২৮ শেষ অংশ

খবরের কাগজটা পড়ে ভ:য় পেল সিয়াম। দুই-দুটো মানুষের গুlম শুনে বুlকটা মোlচড় দিয়ে উঠলো। মন যা বলছে, তা কি ঠিক? সত্যিই কি ঠিক? সিয়াম ভয়াকাতুরে দৃষ্টি তুলে আই.ইউ.ইউর পানে তাকালো। বদ্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে ওর কপালে বিন্দু-বিন্দু ঘাম জমছে। ওর অবচেতন মনটা বারবার বলছিলো, কাজটা একজন ব্যক্তিই করেছে। অস্ফুট সুরে আমতা-আমতা করে বলল,
– মা-মা-মাহতিম …

মন বাড়িয়ে ছুঁই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩০