মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৩
ইয়াসমিন খন্দকার
অভিক সুনীতিকে নিয়ে বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে তাকে শহর থেকে দূরে একটা মনোরম পরিবেশে ঘুরতে নিয়ে আসে অভিক। সুনীতি অবশ্য এতে নাখোশ হয়। অভিককে রাগ দেখিয়ে বলে,”তুমি আমায় বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে এখানে কেন নিয়ে এলে? তোমার কি মনে হয় আমার এখন ঘোরাঘুরি করার মতো মুড আছে?”
“রাগ করে না, মহারাণী। তোমার এই রাগ ভাঙানোর জন্যই তো তোমায় এখানে নিয়ে এলাম।”
সুনীতি তবুও গাল ফুলিয়ে থাকে। অভিক হালকা হেসে বলে,”আজকের সারা দিনটা আমার সাথে এখানে কাটাও। দেখবা, তোমার সব রাগ একদম ফুরুত হয়ে যাবে।”
সুনীতি বলে,”আমি তোমার সাথে সময় কাঁটাতে চাই না। আমায় প্লিজ এখান থেকে নিয়ে চলো।”
“এসব বললে তো শুনছি না। চলো আমরা লুকোচুরি খেলি।”
“তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি? আমরা কি ছোট বাচ্চা যে এসব খেলব,,,”
অভিক সুনীতির দিকে সামান্য এগিয়ে এসে বলে,”ঠিকই বলেছ। আমরা তো ছোট বাচ্চা না যে এসব খেলব,,আমাদের তো অন্য খেলা খেলতে হবে।”
বলেই সে সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে তার ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেতে থাকে। সুনীতির হৃদস্পন্দন থেমে যায়, নিঃশ্বাসের গতি বাড়ে। অভিক অনেকক্ষণ এভাবে সুনীতিকে ভালোবাসার পরশ দিয়ে অতঃপর দূরে সরে যায়৷ সুনীতি রেগে বলে,”কি হলো এটা?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অভিক দৌড়াতে শুরু করে আর বলে,”এটা তোমার জন্য একটা স্পেশাল সারপ্রাইজ ছিল।”
সুনীতির ভীষণ রাগ হয় অভিকের কথা শুনে তাই সে অভিকের পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে। অভিককে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু ব্যর্থ হয়। অভিক দৌড়াতে দৌড়াতে একটা ধানখেতের কাছাকাছি চলে যায়। সুনীতিও সেখানে যায়। ধানখেতে সেচের মেশিনের মাধ্যমে পানি দেয়া হচ্ছিল। অভিক সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। সুনীতি কাছে যেতেই অভিক সুনীতিকে লক্ষ্য করে মেশিনের পানি ছুড়ে মা’রে। অভিকের এহেন কাণ্ডে সুনীতি তো রেগে বোম হয়ে যায়। সেও অভিকের দিকে পানি ছুড়তে থাকে। এভাবে কিছুক্ষণ তাদের খুনশুটি চলে।
এরপর অভিক আবারো দৌঁড়ানো শুরু করে। সুনীতি কিছুক্ষণ তার পেছনে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়ে। অভিক দূর থেকে এটা দেখে সুনীতির কাছে এগিয়ে এসে বলে,”আমায় ধরতে পারে না।”
সুনীতির এবার ভীষণ রাগ হয়। সে একমুঠ ধুলোবালি হাতে নিয়ে অভিকের দিকে ছু’ড়ে দেয়। অভিকের চোখে ধুলা ঢুকে যায়। তাই সে চোখে হাত দিয়ে কাশতে থাকে। কারণ ধুলাবালি মুখেও ঢুকে গেছে। সুনীতি ব্যতিব্যস্ত হয়ে অভিকের কাছে এসে বলে,”কি হলো তোমার? খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে না তো? এজন্যই বলেছিলাম এমন বাচ্চামো না করতে। দিলে তো আমায় রাগিয়ে।”
বলেই অভিকের কাছে গিয়ে সযত্নে তার চোখ মুছিয়ে দিতে লাগল নিজের ওড়না দিয়ে। অভিকের চোখে আলতো করে ফু দিতে লাগল। অভিক আবেগপ্রবণ হয়ে সুনীতিকে আবারো কাছে টেনে নিয়ে বলল,”আমরা কি সবকিছু ভুলে আবার সবটা নতুন করে শুরু করতে পারি না?”
সুনীতি কোন উত্তর দেয় না৷ অভিক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এরই মধ্যে আকাশে ঘনঘন মেঘ জমতে থাকে। বাতাসও জোরে বইতে শুরু করে৷ সুনীতি টের পায় তার শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি এসে পড়ছে। অভিকও টের পায় ব্যাপারটা। বলে ওঠে,”বৃষ্টি হতে পারে,,আমাদের কোন নিরাপদ যায়গায় যাওয়া উচিত।”
সুনীতি মাথা নাড়ায়। দুজনে একসাথে ঐ গ্রামের একটি পুরাতন রাজবাড়ীতে আশ্রয় নেয় যা তুলনামূলক কাছেই ছিল। কিন্তু সমস্যাটা হলো রাজবাড়ীর ছাদ ফুটো ছিল। যার ফলে বৃষ্টির বেগ বাড়ার সাথে সাথে তারা দুজনেই ভিজে যেতে লাগল। সুনীতির শরীর খুব একটা ভালো না। এজন্য অভিক সুনীতিকে বৃষ্টি রেখে রক্ষার জন্য নিজের শার্ট খুলে তার মাথায় ধরলো। অভিকের পরনে তখন শুধুই একটা স্যান্ডো গ্যাঞ্জি। তার শরীরের সকল পেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। বলিষ্ঠ হাতে নিজের প্রেয়সীনীকে আগলে রেখেছে। সুনীতি একদৃষ্টিতে অভিকের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা এসে অল্প অল্প করে ভিজিয়ে দিচ্ছে অভিককে। এই বৃষ্টি যেন তাদের দুজনের নিয়ন্ত্রণের বাঁধ ভেঙে দিলো। অভিক আর নিজেকে সামলাতে না পেরে সুনীতিকে কাছে টেনে নিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সুনীতিও সাড়া দিলো। অভিকের উষ্ণা স্পর্শ তাকে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে।
অভিক সুনীতির ঘাড়ে পাগলের মতো চুম্বন করতে লাগল। ধীরে ধীরে উন্মুক্ত পিঠেও ঠোঁট ছোয়ালো। সুনীতি অস্থির হয়ে উঠলো। অভিক তার পরনের গেঞ্জিটাও খুলে ফেলল। অতঃপর সুনীতির সালোয়ারও আলগা করতে লাগল,,,
Pehle bhi main tumse mila hoon
Pehli dafa hi milke laga
Tune chhua zakhamo ko mere
Marham marham dil pe laga
Paagal pagal hain thode
Baadal pagal hain dono
Khulke barse bheegein aa zara
Pehle bhi main tumse mila hoon
Pehli dafa hi milke laga
Tune chhua zakhamo ko mere
Marham marham dil pe laga
চলতে থাকে তাদের রোম্যান্স।
বৃষ্টি থেমে গেছে, প্রকৃতিতে বর্তমানে বিরাজ করছে শান্ত পরিবেশ। বৃষ্টির সাথে সাথে যেন দুটো অশান্ত মনও আজ পরিতৃপ্ত হয়েছে একে অপরের সঙ্গ পেয়ে।
সুনীতি কোনরকমে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে এক পাশে বসে আছে। অভিকও নিজের পোশাক পরিধান করে নিয়ে সুনীতিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,”এখন আমাদের ফেরা উচিৎ।”
সুনীতি মাথা নাড়ালো। অভিক সুনীতির হাত স্পর্শ করে সামনের দিকে আগাতে লাগল। অভিকের স্পর্শ সুনীতির পুরো শরীরে শীতল স্রোত বইয়ে দিয়ে গেল। সে কাপা কাপা স্বরে বলল,”চলো তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরি। মা-বাবা হয়তো আমাদের জন্য চিন্তা করছে।”
অভিক হেসে বলে,”তারা চিন্তা করবে না। আমি তাদের বলেই এসেছি।”
সুনীতি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অভিক সুনীতির কপালে চুমু খেয়ে বলে,”এখন আর আমার প্রতি কোন রাগ নেই তো?”
সুনীতি নিশ্চুপ থাকে। অভিক একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়। অতঃপর বলে,”রাগ থাকলে বলতে পারো, রাগ কমানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আর যদি ব্যর্থ হই তো,,আমার কারণে যাতে তোমায় আর রাগতে না হয় তাই তোমায় ছেড়ে দেব একা পথে।”
বলেই অভিক সামনের দিকে পা বাড়ায়। সুনীতি পেছন থেকে অভিকের হাত টেনে ধরে বলে,”একদম আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না,, নাহলে,,”
বলেই অভিকের শার্ট চিমটে ধরে। অভিক সুনীতির কাছে এসে হেসে বলে,”তার মানে তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছ? আমার উপর আর অভিমান করে নেই তো?”
“আরে না রে পাগল!”
অভিক খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। সুনীতির কপালে একটু চুমু খেয়ে বলে,”I Love you..Niti…”
“I love you the most Avik…”
অভিক আবারো সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নেয়৷ বেশ অনেক সময় ধরে তার ঠোঁটের সহিত চুম্বনের খেলা খেলে। অতঃপর তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”আজ আমি অনেক খুশি।”
“আমিও। তবে আরো খুশি হবো যখন নিজের মা-বাবার খু*নিকে শাস্তি পেতে দেখব।”
মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩২
অভিক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ স্বরে বলে,”তুমি একদম চিন্তা করো না নীতি। ঐ মন্টুকে আমি এমন শিক্ষা দেব যা ও আজীবন মনে রাখব৷ ওর সন্ধানের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আর বেশিদিন ও আর পালিয়ে বেড়াতে পারবে না। আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও ও আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। ওকে আমি উচিৎ শিক্ষা দেবোই!”
অভিকের কথা শুনে সুনীতি ভরসা পেয়ে বলে,”তাই যেন হয়। ঐ মন্টুকে শাস্তি না দিলে যে, আমার মা-বাবার আত্মা শান্তি পাবে না। ঐ শয়তানটাকে নিজের অপকর্মের শাস্তি পেতেই হবে।”
সুনীতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এটা বলে।