মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৫
ইয়াসমিন খন্দকার
সুনীতির জ্ঞান ফিরলে সে দেখতে পায় তাকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মুখও বাঁধা। তাই চিৎকারও করতে পারছে না। এমতাবস্থায় সুনীতির চোখে জল চলে আসে। অনেক কষ্টে সে নিজের চোখের জল আটকে রাখে। তবে বেশি সময় পর্যন্ত আটকে রাখা দুষ্কর। সুনীতি কিছু সময় অব্দি চুপ থাকে। নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারে না।
এরইমধ্যে দেখতে পায় মন্টু তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে একটা ছু’রি। সুনীতি ভীষণ ভয় পেয়ে যায় মন্টুকে এভাবে দেখে। মন্টু সুনীতির গলার কাছে ছু’রিটা ধরে বলে,”শুধুমাত্র তোর জন্য আমার সাজানো গোছানো জীবনটা আজ এভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে। তোর জন্য আমাকে আজ এভাবে ফেরারির আসামি হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। সব হয়েছে শুধুমাত্র তোর জন্য! এবার তোকে এসবের জন্য শাস্তি পেতে হবেই! আমাকে তো আজ বা কাল পুলিশ ধরেই ফেলবে,,তাই আমি নিজেকে নিয়ে ভয় করি না আর। তবে জেলে যাওয়ার আগে তোকে না মেরে গেলে খুব আফসোস হবে। আমি এই আফসোসটা করতে চাইছি না। তাই আজ তোকে একেবারে মে*রে ফেলে তারপর নিজে থেকে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দেব। এরপর যদি আমার ফাঁসিও হয়ে যায় তাও কোন আফসোস থাকবে না।”
সুনীতি উম..উম করতে থাকে। কাতর স্বরে কিছু বলতে চায় কিন্তু তার মুখ বাঁধা। মন্টু সুনীতির মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে বলে,”কি বলবি তাড়াতাড়ি বল,,তোর হাতে আর বেশি সময় নেই।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুনীতি ক্রন্দনরত সুরে বলে,”আমার মা-বাবাকে তো তুই আমার থেকে কেড়েই নিয়েছিস,,অন্তত আমাকে আমার স্বামীর সাথে বাকি জীবনটা সুখে থাকতে দে। এতটা নির্দয় হোস না। আল্লাহ তোকে কোনদিনও ক্ষমা করবে না।”
মন্টুর উপর যেন এসব কথার কোন প্রভাবই পড়ে না। সে অট্টহাসি দিয়ে বলে,”এসব বলে কোন লাভ হবে না সুনীতি। আমি আজ প্রতিজ্ঞা করেই এসেছি যে তোকে শেষ করে দেব। আমার প্রতিজ্ঞা আমি পূরণ করবোই।”
বলেই ছুরিটা হাতে নিয়ে ঘোরাতে থাকে। সুনীতির ভীষণ ভয় হতে থাকে। সে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। মন্টু পাগলের মতো হাসতে হাসতে বলে,”তোর মা-বাবার কথা তোর খুব মনে পড়ে তাই না? চিন্তা করিস না,,এবার তোকেও তোর মা-বাবার কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করব। তোর শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে।”
কথাটা বলেই ছু’রিটা ঢুকিয়ে দেয় সুনীতির পেটে। ঘটনার আকস্মিকতায় সুনীতি ঘাবড়ে যায়। তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কিছু সময়ের মধ্যে অনুভব করে তার পেটে ভীষণ ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। নিজের পেটের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় গলগল করে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। এই দৃশ্য সুনীতিকে আরো অসহায় করে তোলে৷ সে ব্যথায় আর্তনাদ শুরু করে দেয়।
সুনীতির আর্তনাদে যেন পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিল মন্টু। পেট থেকে ছু’রিটা বের করে দ্বিতীয় বার ঢোকাতে যাবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় অভিক। অভিকের হাতে ছিল বন্দুক। অভিক সেই বন্দুক দিয়ে মন্টুর হাতে গু*লি করে যার ফলে মন্টু দূরে ছিটকে যায়। এই সুযোগে অভিক দ্রুত গিয়ে সুনীতিকে সামলায়।
আরাফাতও এসেছিল অভিকের সাথে। আরাফাত গিয়ে মন্টুর কাছে গিয়ে তাকে মা*রতে থাকে। তারা দুজনে সুনীতির মোবাইলের লাস্ট লোকেশন ট্রেস করেছিল এই এলাকার আশেপাশে। অতঃপর চলে আসে। গোটা এলাকাটা তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর এই পুরাতন পরিত্যক্ত বাড়িটা দেখতে পেয়ে দ্রুত এখানে চলে আসে। আর এসেই এই বিভৎস দৃশ্যের সম্মুখীন হয়।
সুনীতি ব্যথায় আর্তনাদ করে চলেছিল। সে নিজের দুই চোখ খোলা রাখতে পারছিল না। অভিক সুনীতির মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো স্বরে বলে,”চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো নীতি,,আমি তোমার কিছু হতে দেব না।”
সুনীতি আধো আধো স্বরে কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। আরাফাত অভিককে বলে,”এখান থেকে সিটি হাসপাতাল খুব কাছেই। দ্রুত ভাবিকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে। তুই ভাবিকে নিয়ে ওখানে যা। আমি ততক্ষণ এটাকে সামলাচ্ছি।”
অভিক দ্রুত সুনীতিকে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি এখনই সুনীতিকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। তুই ততক্ষণ এটাকে উচিৎ শিক্ষা দে। কি করে ওর সাহস হলো আমার কলিজায় হাত দেয়ার। আজ আমি ওর এমন ব্যবস্থা করবো যা ও চিরকাল মনে রাখবে।”
বলেই অভিক দ্রুত সুনীতিকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। আর আরাফাত মন্টুকে বেঁধে রেখে রড দিয়ে তার শরীরে মা*রতে থাকে। এতেই ক্ষান্ত হয় না। মন্টুর শরীরে ক্ষত তৈরি হলে তার উপর লবণ ছিটিয়ে দেয়।
অভিক সুনীতিকে নিয়ে সিটি হাসপাতালে পৌঁছে যায়। ডাক্তার সুনীতির অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত তাকে অটিতে যেতে বলে। সেখানেই সুনীতির চিকিৎসা চলছে। অভিক ক্রমান্বয়ে কেঁদে চলেছে অটির বাইরে বসে। তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আশেপাশের অনেকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে। একজন ছেলেকে খুব কমই এভাবে কাঁদতে দেখা যায়। অভিকের এই চোখের জল সুনীতির প্রতি তার খাঁটি ভালোবাসাকেই ঈঙ্গিত করে।
কয়েক ঘন্টা পর ডাক্তার অটি থেকে বেরিয়ে আসেন। ডাক্তার বের হতেই অভিক তার সামনে গিয়ে বলে,”ডাক্তার আমার স্ত্রীর অবস্থা এখন কেমন?”
“আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন, উনি এখন আউট অফ ডেঞ্জার। প্রচুর ব্লিডিং হয়ে গেছিল আমরা তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভাগ্যিস, ওনার রক্তের গ্রুপ O+, ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করে আমরা খুব সহজেই রক্ত পেয়ে যাই। আর দ্রুত রক্ত দেয়ায় ওনাকে ঝুঁকিমুক্ত করা গেছে। তবে ওনার আরো কিছুদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য।”
অভিক খুশিতে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার। আপনি জানেন না,আমাকে কতটা চিন্তামুক্ত করলেন।”
ডাক্তারও অভিককে এভাবে খুশি দেখে আনন্দিত হন। একজন রোগীর জীবন বাঁচানো যে একজন ডাক্তারের কাছে অনেক বড় পাওয়া। সারাদিনের এত ক্লান্তির পর যখন তারা রোগীর স্বজনের এমন আনন্দ দেখেন তখন এক নিমেষেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
সুনীতির সুস্থতা নিশ্চিত হবার পরেই অভিক তার মা-বাবাকে হাসপাতালে বসিয়ে রেখে আবার চলে এসেছে সেই স্থানে যেখানে মন্টুকে আরাফাত টর্চার করছে। অভিক সেখানে এসেই আরাফাতকে বলে,”শু*রের বাচ্চাটা কি এখনো বেঁচে আছে?”
“তোর জন্য এখনো ওর জানটা বেঁচে রেখেছি।”
অভিক মন্টুর সামনে এসে দেখতে পায় তার পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত। রক্তের স্রোত বইছে তার শরীর থেকে। কোনরকমে জানটা আছে। এমতাবস্থাতেই সে অভিককে দেখে অনুনয় করে বলতে থাকে,”আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি অনেক ভুল করেছি। আমি মরতে চাই না। আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন,,দয়া করে আমায় মারবেন না।”
অভিক হিংস্রতার সাথে বলে,”তুই যা করেছিস তারপর আর তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তাছাড়া এই দেশের আইনের প্রতি আমার কোন বিশ্বাস নেই,,তুই যা করেছিস তার উপযুক্ত শাস্তি তো মরার পর জাহান্নামে এমনিই পাবি তবে তোর আরো কিছু শাস্তি প্রাপ্য!”
এই বলেই অভিক একটা চাকু হাতে তুলে দেয়৷ সেই চাকু দিয়ে একে একে মন্টুর হাত ও পায়ের সব কয়টা আঙুল কেটে দেয়। মন্টু যন্ত্রণায় ছটফট করে কাঁদতে থাকে। অভিক শুধু এতেই ক্ষান্ত হয় না। সবশেষে মন্টুর হাত, পা মাথা সব একটা বড় অস্ত্র দিয়ে কে”টে আলাদা করে দেয়। তার শরীরের ৫০-৬০ টা টুকরো করে। অতঃপর আরাফাতকে বলে,”এর লাশটা পাশের খাদে ফেলে আয়। ওখানকার কুমিরদের পেটে চালান হোক শয়তানটা। এভাবেই এর অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে যাবে। আর এই কাজেরও কোন প্রমাণ থাকবে না।”
মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৪
আরাফাত অভিকের কথামতো তাই করে। আর অভিক বলে,”তোমাকে দেয়া কথা আমি রেখেছি নীতি। তোমার মা-বাবার খু*নিদের সবথেকে জঘন্য শাস্তি দিয়েছি।”