মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৬
ইয়াসমিন খন্দকার
সুনীতি এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকার পর তাকে বাসায় আনা হয়েছে। অভিক সুনীতির উপর অনেক রেগে ছিল কারণ সুনীতি বোকামি করে নিজের বিপদ ডেকে এনেছিল। সুনীতিকে এ নিয়ে অনেক বকাবকিও করেছে। তবে এখন সবটা স্বাভাবিক। আগামী দুই দিনের মধ্যেই অভিককে আবার সিলেটে সেনা ক্যাম্পে ফিরতে হবে৷ সুনীতির শারীরিক অবস্থা এখনো কিছুটা খারাপ থাকায় আপাতত ডাক্তার তাকে ট্রাভেল করতে মানা করেছে। তাই এবার সুনীতি ঢাকাতেই নিজের শ্বশুর বাড়িতে থাকবে। এই নিয়ে তার মনটা বেশ খারাপ। যা নজরে এসেছে অভিকেরও।
রাতে অভিক ঘরে ঢুকেই সুনীতিকে মনমরা দেখে বলে,”মুখটা এমন গোমড়া করে রেখেছ কেন নীতি? তোমাকে এমন গোমড়া মুখে দেখতে ভালো লাগছে না।”
সুনীতি অভিমানী সুরে বলে,”তুমি কি সত্যিই পরশু আমায় রেখে সিলেটে চলে যাবে?”
অভিক ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”যেতে তো আমায় হবেই নীতি। এটা তো আমার ডিউটি।”
সুনীতি মন খারাপ করে বলে,”ইশ, যদি আমিও যেতে পারতাম।”
“ডাক্তার বলে দিয়েছেন এখন তোমার এতদূর ট্রাভেল করা যাবে না। তাই তোমাকে আমি কিছুতেই ঝুঁকি নেব না। তুমি আগে অন্তত ৬ মাস এখানেই থেকে বিশ্রাম নাও। তারপর যখন তুমি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে তখন তোমায় আবার আমি সিলেটে নিয়ে যাব আমার সাথে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুনীতি মলিন মুখে মাথা নাড়ায়। অভিক এসে সুনীতির মাথা বসে তার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে কপালে চুমু দিয়ে বলে,”আমিও যে তোমায় ছাড়া ভালো থাকব না নীতি কিন্তু কি আর করার? তোমার ভালোর জন্য যে আমাদের এতটুকু সেক্রিফাইজ করতে হবেই।”
বলেই অভিক সুনীতিকে আরো কাছে টেনে নেয়। ধীরে ধীরে তারা ভালোবাসার আরো গভীরে হারিয়ে যায়। অভিক সুনীতিকে শুইয়ে দিয়ে তার উপরে উঠে যায়। পাগলের মতো সুনীতির পুরো শরীরে আদর করতে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের দুটো শরীরের মিলনের পালা শুরু হয়। একে অপরের মন রাঙিয়ে তারা হারিয়ে যায় ভালোবাসার আরো গভীরে। আর চারপাশের পরিবেশ সাক্ষী হয় তাদের এই পবিত্র ভালোবাসার।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সুনীতি গোসল করে নেয়। অভিক তখনো ঘুমে আছন্ন। সুনীতি অভিকের কাছে গিয়ে নিজের চুলে জমে থাকা পানি তার মুখে ছিটিয়ে দেয়। মুখে পানির ছিটা আসতেই অভিক ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে বসে। সুনীতি এ দৃশ্য দেখে হেসে ফেলে। অভিক বলে,”তবে রে,,আমার সাথে মজা করা হচ্ছে,,”
বলেই সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নেয়। সুনীতির ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। সুনীতি বলে ওঠে,”উম,,ছাড়ো আমায়,,তুমি এখনো ব্রাশ করোনি,,উয়াক থু,,”
“এটাই তোমার শাস্তি,,”
বলে আরো গভীর ভাবে চুম্বন করতে থাকে অভিক। এরমধ্যে হঠাৎ সুনীতির ফোন বেজে ওঠে। অভিক বিরক্ত হয়ে দূরে সরে বলে,”ধুর এত সুন্দর রোম্যান্টিক মুডের ১২ টা বাজিয়ে দিল।”
সুনীতি ঠোঁট টিপে হেসে বলে,”বেশ হয়েছে!”
অতঃপর সুনীতি টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে রিসিভ করে। অহনা ফোন দিয়েছে। সুনীতি ফোনটা রিসিভ করতেই অহনা হাপাতে হাপাতে বলে ওঠে,”অনেক বড় সমস্যায় পড়ে গেছি রে বান্ধবী! তোর সাহায্যের প্রয়োজন।”
সকাল সকাল এমন কথা শুনে সুনীতি অবাক স্বরে বলে,”তুই একটু শান্ত হ। এত হাপাচ্ছিস কেন?”
অহনা ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে বলে,”মামারা যেন আমার জন্য কোন এক পাত্র ঠিক করেছে। আজ তারা আমায় দেখতে আসবে। মা আমায় দুপুরের মধ্যে তৈরি হয়ে থাকতে বলেছে।”
সুনীতি অহনার কথা শুনে বলে,”এটা তো খুব ভালো খবর। খুব শীঘ্রই তাহলে তোর বিয়ের দাওয়াত পেতে চলেছি! কি বলিস?!”
অহনা রাগী সুরে বলে,”দাওয়াত মাই ফুট! আমি এই বিয়েটা করবো না।”
“কেন রে? তুই না বলেছিলি তুই তোর পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবি! তাহলে এখন এমন কথা বলছিস কেন?”
অহনা এখন সুনীতিকে কিভাবে সবটা বোঝাবে। তার মনে যে,,
অহনা বলে,”ফোনে এত কথা বলা সম্ভব না। তুই প্লিজ আজ আমার বাসায় আয়। তোকে অনেক কথা বলার আছে।”
“ঠিক আছে,যাবো এখন। তুই চাপ নিস না।”
বলেই সুনীতি ফোনটা কে’টে দেয়। অভিক সুনীতিকে জিজ্ঞেস করে,”কে ফোন করেছিল?”
“অহনা।”
“কি বলল?”
“বলল, ওকে নাকি আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আমাকে ওর বাসায় যেতে বলল। তুমি একটু দুপুরের মধ্যে আমায় অহনাদের বাসায় পৌঁছে দিও তো।”
অভিকের কথা শুনে অভিক গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়৷ সে তো ক্যাম্পে থাকাকালীন আরাফাত ও অহনার ঘনিষ্ঠতা খেয়াল করেছে। যতদূর মনে হয়েছে তারা একে অপরকে পছন্দ করে। তাই হঠাৎ অহনাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে শুনে তার কেমন জানি লাগল। সুনীতি অভিককে চুপ দেখে বললো,”কি হলো? চুপ করে আছ যে!”
“কিছু না। তুমি তৈরি হয়ে থেকো আমি এখন তোমায় অহনার বাসার সামনে রেখে আসব।”
একথা বলেই অভিক একটু দূরে সরে এসে আরাফাতকে ফোন দিতে থাকে। কিন্তু আরাফাতের ফোন বন্ধ দেখায়। অভিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে রুমের বাইরে বের হয়।
দুপুরে অভিক সুনীতিকে একদম অহনাদের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। অহনার মা-বাবার ডিভোর্সের পর থেকে মূলত অহনা তার মামার বাসাতেই থাকে। অভিকদের বাড়ি থেকে অহনাদের বাসার দূরত্ব বেশি নয়৷ ৩০ মিনিটের মতো রাস্তা। তাও অভিক অনেক সাবধানে ড্রাইভ করে যাতে সুনীতির কোন প্রব্লেম না হয়।
সুনীতি অহনাদের বাসায় ঢুকতেই অহনার মা তাকে দেখে খুশি মনে বলে,”সুনীতি তুমি এসেছ! বেশ ভালোই হলো। আজ তো অহনাকে দেখতে আসবে। তুমি একটু ওর পাশে থাকো ওর তাহলে ভালো লাগবে।”
“আচ্ছা, আন্টি। আমি তাহলে অহনার কাছে যাই।”
“হুম, যাও।”
সুনীতি অহনার রুমে গিয়ে দেখতে পায় সে বিষন্ন মনে বিছানায় বসে আসে। সুনীতিকে আসতে দেখেই অহনা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”তুই এসেছিস!”
“হুম। না এসে আর পারলাম না৷ তুই নিজের একি হাল করে রেখেছিস! আজ তোকে দেখতে আসবে আর তুই এমন পেত্নীর মতো আছিস! তোকে তো মুখের উপর রিজেক্ট করে দিয়ে চলে যাবে।”
“সেটাই তো চাই!”
“মানে?”
“এই বিয়েটা আমি করতে চাই না।”
“কিন্তু কেন? আমি যতদূর জানি তোর তো পছন্দেরও কোন মানুষ নেই,,তাহলে?”
“কে বললো আমার পছন্দের কেউ নেই? আমার পছন্দের একজন আছে।”
“কে সে? যেই জুনিয়র ছেলেটা তোকে ম্যাসেজ করে?”
“না,সে নয়।”
“তাহলে?”
“মেজর আরাফাত। দুলাভাইয়ের বন্ধু।”
“কি? তুই আরাফাত ভাইয়াকে…”
“হুম। সিলেটে গিয়ে কিছুদিন ওনার সাথে মিশে আমি ওনার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে ওনার প্রেমে পড়ে গেছি। আমি ডিপলি ওনার প্রেমে পড়ে গেছি রে! ওনাকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবতে পারি না।”
“কিন্তু…”
“তুই কিছু একটা কর সুনীতি। কোনভাবে এই বিয়েটা আটকাতে হবে।”
“তুই রিল্যাক্স হ! ওরা তো কেবল দেখতেই আসছে। বিয়েটা তো আর আজ হচ্ছে না।”
“আমি মামিকে বলতে শুনেছি আজ যদি ওদের আমাকে পছন্দ হয়ে যায় তো একেবারে কাবিন করিয়ে নেবে!”
সুনীতির ভীষণ অস্থির লাগে। সে কি করবে এই মুহুর্তে সেটা বুঝতে পারে না। এরইমধ্যে অহনার মা এসে তাড়া দিয়ে বলে,”তুই এখনো তৈরি হস নি কেন অহনা? দ্রুত তৈরি হ। সুনীতি মা তুমি ওকে একটু হেল্প করো তো। পার্লার থেকে লোক আসতে চেয়েছিল কিন্তু পাত্রপক্ষের বারণের জন্য আনা হয়নি। ওরা সাধারণ সাজেই দেখতে চেয়েছে।”
অহনা বলে ওঠে,”মা প্লিজ! তুমি আমায় জোর করো না। আমি পাত্রপক্ষের সামনে যাব না।”
মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৫
“দেখো, তোমার বাবার মৃত্যুর পর তোমার মামারাই কিন্তু আমাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই তারা নিশ্চয়ই আমাদের খারাপ চাইবে না! ছেলে যথেষ্ট ভালো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে তৈরি হয়ে নাও।”
বলেই তিনি চলে যান। অহনা অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।