মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৯

মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৯
ইয়াসমিন খন্দকার

সুনীতি ও অহনা আজ শপিং মলে এসে নিজেদের মনমতো শপিং করছে। দুই বান্ধবী মিলে যেন আজ ঠিকই করে নিয়েছে অভিক আর আরাফাতের পকেট একদম ফাকা করে দেবে। অভিকের অবশ্য কোন সমস্যা হচ্ছে না। সে সুনীতিকে পূর্ণ অনুমতি দিয়েছে যা পছন্দ হয় কিনে নিতে কিন্তু আরাফাত অহনাকে এত্ত এত্ত শপিং করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। একটু হিসেবি ছেলে কিনা!
আরাফাত অহনার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমাদের তো বিয়ে একবারই হবে, তুমি তো এত শপিং করছ যেন বিয়েটা ৭ বার হবে।”

অহনা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,”হ্যাঁ, করছি তো? আপনার কি সমস্যা? মুখটা বন্ধ রাখুন আর আমাকে শপিং করতে দিন। এখনো তো গায়ে হলুদের শাড়ি, বিয়ের লেহেঙ্গাই কেনা হলো না। আমি তো ঠিক করেছি সুন্দর গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়েই বিয়ে করব। এছাড়াও কত কসমেটিকস, বিউটি প্রোডাক্ট, চুড়ি আরো কত কি নিতে হবে। এই নিন এই ব্যাগগুলো বহন করুন। এত কিছু বয়ে নিয়ে আমি আর শপিং করতে পারব না।”
আরাফাত বেচারা আর কি করবে। অগত্যা ব্যাগ হাতে নিয়ে অহনার পিছে পিছে ঘুরতে থাকে। নিজের জন্য লাল রঙের একটা ভীষণ সুন্দর লেহেঙ্গা পছন্দ করে অহনা বিয়েতে পড়ার জন্য। আরাফাতেরও লেহেঙ্গাটা বেশ ভালো লেগেছে। সব শপিং শেষে সবাই রওনা দেয়। অভিক এবং সুনীতি তাদের বাসাতে চলে যায়। আর আরাফাত অহনাকে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অহনার গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে। সুনীতি বেশ সকাল সকাল চলে এসেছে। অহনার পাশেই থাকছে সে সবসময়। অভিকও চলে গেছে আরাফাতের বাসায়। অহনা তো এসব অনুষ্ঠান নিয়ে ভীষণ আনন্দিত। সে সকাল থেকে একটার পর সেলফি তুলছে। গায়ে হলুদের সাজ পুরো হতেই হলুদ শাড়ি পড়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে ক্যাপশন দেয়, “In My Holod Ceremony” সাগরের নজরে আসে এই ছবিটি। ছবিটা তার বুকে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। আবির ও সাগর একসাথেই একটা ক্যান্টিনে বসে ছিল। আবির সাগরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”দোস্ত, তুই এখনো ভেবে দেখ৷ এখনো কিন্তু সময় আছে। আমি বলছি, তুই শুধু একবার বল৷ আমি এমন কোন ব্যবস্থা করব যাতে এই বিয়েটা আটকে যায়।”

সাগর মলিন হেসে বলে,”দেখছিস না, অহনাকে কতটা হাসিখুশি লাগছে। আমি চাই না, ওর এই খুশিটা নষ্ট হোক। আমার ভালোবাসাটা নাহয় অপূর্ণই থাকুক। ওর খুশিতেই আমার খুশি।”
“তুই যত যাই বলিস, তোকে আমি এমন দেবদাস বেশে দেখতে পারব না। তুই কিছু করবি না তো? বেশ তোকে কিছু করতেও হবে না। যা করার এবার আমিই করবো তুই শুধু দেখে যা।”
বলেই আবির উঠে দাঁড়িয়ে কাউকে একটা ফোন করতে করতে কোথাও একটা চলে যায়।
সাগর আবিরের এহেন কথায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারে আবিরের মাথায় কিছু একটা চলছে।
অহনার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে৷ তাকে মাঝখানে বসিয়ে তার গায়ে হলুদ মাখানো চলছে। সুনীতিও কম না। সে নিজে উৎসাহী হয়ে অহনার গায়ে হলুদ মাখাচ্ছে। অহনা বলছে,”দোস্ত, একটু কম মাখা। রাতে তো আবার মেকআপ করতে হবে।”

এভাবেই হাসি মজা খুনশুটি চলতে থাকে।
হলুদ পর্ব শেষ হতেই অহনা নিজের রুমে এসে সেলফি তুলতে থাকে। এমন সময় সুনীতি তার রুমে এসে বলে,”ঐ, আরাফাত ভাইয়া কখন থেকে তোকে কল করছে তুই রিসিভ করছিস না কেন?”
অহনা বলে,”দেখতে পাচ্ছিস না, আমি তো সেলফি তোলায় ব্যস্ত আছি। এখন আমি কথা বলতে পারব না। আগে সেলফি তোলা শেষ হোক তারপর।”

অহনার এহেন কথা শুনে সুনীতি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”এই সেলফি পাগল মেয়েকে নিয়ে আর পারি না! দেখা যাবে বিয়ের আসরের কবুল বলার আগে কাজির সাথে সেলফি তুলতে চাইবে!”
সুনীতির কথা শুনে অহনা বলে ওঠে,”সে আর বলতে, সেলফি তুলব আর ক্যাপশনে দিব, সেলফি উইথ কাজি দাদু।”
অহনার কথা শুনে সুনীতি হেসে ফেলে। এরইমধ্যে অহনার ফোন আবারো বেজে ওঠে। সে আরাফাতের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সুনীতি তাদের কথা বলার স্পেস দেয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে আসে। একটু সামনের দিকে আগাতেই কেউ একজন সুনীতির হাত ধরে টান দেয়। তারপর তাকে একটা ফাঁকা যায়গায় নিয়ে যায়। সুনীতি তো ভয়ই পেয়ে গেছিল কিন্তু যখন দেখে এটা আর কেউ নয় অভিক তখন স্বস্তি পায়। অভিকের দুহাতে ছিল হলুদ। অভিক এই হলুদ সুনীতির গালে মাখিয়ে দিয়ে বলে,”আমাদের তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়নি,,অনেক ইচ্ছা ছিল তোমাকে হলুদে কেমন লাগে সেটা দেখার। সেই ইচ্ছাটা পূরণ করে নিলাম।”

সুনীতিও নিজের হলুদে রাঙা গাল অভিকের গালের সাথে ঘষে বলে,”এখন পরিপূর্ণ লাগছে। কি বলেন?”
অভিক খুব সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে,”ইচ্ছা তো করছে আরাফাতের সাথে সাথে আমিও বিয়েটা করে নেই।”
সুনীতি বলে,”তো বারণ করেছে কে?! এখানে আশেপাশে কত সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে ঘুরছে তাদের কাউকেই পছন্দ করে বিয়েটা করে নিন।”
অভিক মশকরা করে বলে,”তুমি কি আমাকে নিজের সতীন আনার পরামর্শ দিচ্ছ নাকি? পরে কিন্তু কিছু বলতে পারবে না। আমি কিন্তু সত্যিই..”
সুনীতি অভিকের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,”এমন কিছু করার চিন্তাও করবেন না। নাহলে আমি আপনার এমন হাল করব যে..”

অভিক সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে গভীর চুম্বরে মত্ত হয়। একে অপরের মাঝেই যেন হারিয়ে যায় দুজনে। একটা ফাঁকা ঘর দেখে সেখানে ঢুকে পড়ে। অভিক দরজাটা লাগিয়ে দেয়। অতঃপর রুমের বাতিটা অফ করে দেয়। তারপর নিজের শার্টের বোতাম খোলা শুরু করে দেয়। সুনীতিকে ধাক্কা মে*রে বিছানায় ফেলে দেয়। অতঃপর তার উপরে উঠে পড়ে। সুনীতির বুক থেকে ওড়না সরিয়ে সেখানে ডুব দেয়। ধীরে ধীরে তাকে অনাবৃত করে। সুনীতির উপর ধীরে ধীরে চড়াও হতে থাকে। সুনীতি শীৎকার করতে করতে ক্রমশ সুখের সাগরে হারিয়ে যেতে থাকে।
এক ঘন্টা পর, দুজনেই গোসল করে রুম থেকে বের হয়।

বিয়ের প্রহর যত ঘনিয়ে আসছে ততই যেন সবার আনন্দের মাত্রা বাড়ছে। আরাফাত বরবেশে তৈরি হয়ে নিচ্ছে। তাকে সাহায্য করছে অভিকসহ তার আরো কিছু বন্ধু। আরাফাতকে তৈরি করতে করতে অভিক বলে,”বিয়ের পর তোর নেক্সট প্ল্যান কি? কালই তো আমাদের আবার ক্যাম্পে ফিরতে হবে!”
আরাফাত হেসে বলে,”আমার তো এবারের প্ল্যান অহনাকে কালকেই নিজের সাথে নিয়ে যাব। আজ আগে বিয়ে, বাসর করে নেই।”

সবাই হেসে ফেলে আরাফাতের কথা শুনে।
অন্যদিকে অহনারও বিয়ের সাজ চলছে৷ তাকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসেছে। সুনীতিও আশে তার পাশে। লালরঙা শাড়িটা পড়তেই অহনার সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন বেডে যায়, সাথে আবার বাহারি মেকাপ। সুনীতি অহনাকে দেখে বলে ওঠে,”আজ তো আরাফাত ভাই তোকে দেখে পাগল হয়ে যাবে রে! এই সাজেই তো তুই তার মন রাঙিয়ে ফেলবি।”

অহনা হঠাৎ যেন কি মনে করে সুনীতির হাত শক্ত করে ধরে বলে,”সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হয়ে যাবে তো? আমার মন কেন জানি ভীষণ কু ডাকছে!”
সুনীতি অহনাকে অভয় দিয়ে বলে,”তুই এত চিন্তা করছিস কেন? দেখবি সবকিছু ঠিকঠাকই হবে৷ আজ কত খুশির দিন আর তুই ফালতু চিন্তা করছিস।”
“কেন জানি না আমার মনে অজানা ভয় কাজ করছে ”
“কিছু হবে না। এসব ফালতু টেনশন বাদ দে। এত চিন্তা করিস জন্য মনে খারাপ চিন্তা ঘোরে!”

বিয়ের সময় হয়ে এসেছে৷ আরাফাত বিয়ের আসরে উপস্থিতও হয়ে গেছে। কাজিও এসে গেছে। কিন্তু পাত্রী মানে অহনার আসার কোন খোঁজ নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর আরাফাতসহ পাত্রপক্ষ বিরক্ত হয়ে যায়। অহনার মা সুনীতির উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তুমি গিয়ে দেখো তো অহনার এত দেরি হচ্ছে কেন। ওনারা আর কত অপেক্ষা করবেন।”
“আচ্ছা, আন্টি।”

মন রাঙানোর পালা পর্ব ৩৮

বলেই সুনীতি চলে যায়। ১০ মিনিট পর হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসে বলে,”আমি ওর রুম তছনছ করে খুঁজেছি, আশেপাশেও দেখেছি কিন্তু ও কোথাও নেই আন্টি!”
আরাফাত বসা থেকে উঠে বসে বলে,”সেকি! তাহলে ও কোথায় গেল? আবার কোন বিপদ হলো নাতো?!”
বিয়েবাড়িতে এটা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়। আরাফাত ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। অহনার মাও কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

মন রাঙানোর পালা পর্ব ৪০