মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২০

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২০
ইয়াসমিন খন্দকার

সারজিস অভীক্ষাকে তার রুমে নিয়ে আসে। অভীক্ষা বলে ওঠে, “আপনি এভাবে জোরজবরদস্তি করে আর কতদিন আমাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন? আমি মোটেই এসব কিছু মেনে নিব না। আপনি আমার উপর মোটেই এমন জোরজবরি করতে পারেন না।”
“১০০ বার পারি। কারণ আমি স্বামী হই তোমার।”
“ওহ আচ্ছা, তো এখন আপনি স্বামীর অধিকার দেখিয়ে সবটা করার চেষ্টা করবেন? ভাবলেন কি করে যে আমি তা হতে দেব।”

এমন সময় ইভা সেখানে এসে বলে, “তোমাদের এসব নাটক বন্ধ করো। সারজিস, মাই সন। তুমি এই মেয়েটাকে আটকে অনেক বড় ভুল করলে৷ এটা তুমি আজ বুঝতে না পারলেও একদিন ঠিকই বুঝবে। যাইহোক, বাদ দাও সেসব। তুমি যখন এই মেয়ের সাথেই সংসার করতে চাইছ তখন আমি তোমার সিদ্ধান্ত মেনে নেব। এখন, এই মেয়েকেও বলো যেন ও বাড়ির বউয়ের সকল দায়িত্ব পালন করে। জোর করে শুধু অধিকার দখল করলে হয় না। সব দায়িত্ব পালনও করতে হয়। ”
সারজিস বলে,”সেটা তো অবশ্যই। যেহেতু, ও আমার স্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি এই বাড়ির বউ তাই ওকে সব দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইভা বলে,”তাহলে ওকে বলো আমার সাথে আসতে। আমি ওকে এই বাড়ির বউয়ের সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দেব।”
সারজিস ইভার হঠাৎ এমন ভোল বদল দেখে চমকে যায়। তবে মনে মনে খুশিও হয় যে, তার মা এই বিয়েটাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করছে, অভীক্ষাকেও মেনে নিতে চাইছে৷ তাই সে মৃদু হেসে বলে,”অভীক্ষা তো তোমারই বৌমা। তাই তুমি ওকে সেভাবেই গড়ে পিঠে নাও মম, যেভাবে তুমি চেয়েছিলে।”
অভীক্ষার দিকে তাকিয়ে ইভা বলে,”তুমি আমার সাথে এসো। হিসাব মতে, আজ তোমার আর সারজিসের বৌভাত৷ তাই তোমাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

অভীক্ষা চায়নি নতুন করে আর কোন অশান্তি হোক। তাই সে বলে,”বেশ, চলুন আমি যাচ্ছি আপনার সাথে।”
বলেই সে রওনা দেয়। ইভা তাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে আসে। সেখানে সেই সময় কেউ ছিল না। শুধু ছিল বিভিন্নরকম সবজি, মাছ, মাংস সহ নানান রান্নার সামগ্রী। ইভা অভীক্ষাকে এসব দেখিয়ে বলে,”আজ তো তোমার বৌভাত৷ তাই তোমাকে আজ বাড়ির সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে হবে৷ এটাই আমাদের বাড়ির রীতি।”
“আমি রান্না করবো?”
“না তো কি আমি করব?”
“কিন্তু আমার তো আগুনে…”

“কি?? আগুনের তাপে রান্না করতে পারো না, তাইতো? নিজেকে কি মহারাণী ভেবেছ তুমি? আমি নিজেও বিয়ের আগে কখনো সেভাবে রান্না করিনি। তুমি হয়তো জানো না, আমি একজন আমেরিকান নাগরিক ছিলাম। ছোটবেলা থেকে কত আভিজাত্যে বেড়ে উঠেছি। তবুও এখানে এসে সব শিখে নিয়েছি। আর তুমি কোথাকার কোন নবাবকন্যা যে তোমার রান্না করতে অসুবিধা? যা বলছি চুপচাপ তাই করো।”
অভীক্ষা আর বলে উঠতে পারে না যে আগুনে তার ফোবিয়া আছে। ইভা তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে,”তোমাকে আগামী ৫ ঘন্টা সময় দিলাম, তার মধ্যেই যেন সব রান্না কমপ্লিট হয়ে যায়। আর যদি সেটা না হয় তো আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
বলেই সে চলে যায়। অভীক্ষা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে মোটেই চায়না আর কোন ঝামেলা হোক এই বাড়িতে। তাই সে বলে,”প্রয়োজনে, আমি নিজের ফোবিয়া দূর করার চেষ্টা করবো তবুও আমি আর কোন নতুন অশান্তি চাই না।”

বলেই অভীক্ষা সব শাক সবজি একসাথে নেয়। ইউটিউবে একটা রান্নার ভিডিও চালু করে। সব্জিগুলো ঠিকঠাক কাঁটতে পারলেও বিপত্তি বাঁধে গ্যাস অন করার সময়। ফোবিয়া থাকার কারণে গ্যাসের কাছে যেতে না যেতেই অভীক্ষার কাপ কাপতে থাকে। তবুও সে আল্লাহর নাম নিতে নিতে গ্যাস চালু করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই পারে না। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর আগুন জ্বলে উঠলেও অভীক্ষার ভয় যেন আরো বেড়ে যায়। অভীক্ষা ভয়ে কাপতে কাপতে দূরে সরে আসে। তবুও তার আরো বেশি ভয় বাড়তে থাকে। অভীক্ষা ভয়কে জয় করে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখা তার ভয়কে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। অভীক্ষা সাহস করে সামনে এগিয়ে গিয়ে আগুনের উপর কড়াই বসানোর চেষ্টা করে আর সফলও হয়৷ এরপর সে কোনরকমে রান্না শুরুর চেষ্টা করে কিন্তু এরমধ্যে তার ভয় তাকে দিয়ে একটি ভুল করিয়ে দেয়। যার ফলে মুহুর্তের মধ্যেই গোটা ঘরজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অভীক্ষা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে।

অহনা রান্নাঘরের দিকেই আসছিল। অভীক্ষার চিৎকার শুনে সে ছুটে আসে। অহনা জানে অভীক্ষার আগুনে ফোবিয়া। তাই তো সে অভীক্ষাকে এই অবস্থায় দেখে ভয়ে শিউরে ওঠে। আগুন এমন ভাবে মুহুর্তের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে যায় যে অহনাও অভীক্ষাকে বাঁচাতে এগোতে পারছিল না।তাই অহনা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে। যার ফলে সারজিস, সাজিদ, সাগর, আকাশ, আমায়রা, সোহেল, ইভা সবাই ছুটে আসে। সারজিস তো এসেই অভীক্ষাকে এই অবস্থায় দেখে কোন কিছু না ভেবে ঝাপিয়ে পড়ে আগুনের মধ্যে। ইভা তাকে বাঁধা দিতে চায় কিন্তু সে কিছু করার আগেই সারজিস অভীক্ষার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। অতঃপর আগুন থেকে অভীক্ষাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এহেন পরিস্থিতি দেখে সবার গা শিউরে যায়৷ সবাই পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে শেষ অব্দি ফায়ার সার্ভিসের লোক দের ডাকতে হয়। তবে সৌভাগ্যবশত আগুন সাড়া বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়।

অভীক্ষার জ্ঞান এখনো ফেরেনি৷ সারজিস ডাক্তারকে দেখেছে। ডাক্তার এসে তাকে দেখছে। এদিকে ইভা বলে চলেছে,”সব দোষ এই মেয়ের। আমি তো আগেই বলেছিলাম, এই মেয়ে এই বাড়ির জন্য অমঙ্গলের। কেউ আমার কথা শোনেনি, আজ ভাগ্যিস অহনা ঠিক সময় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল নাহলে তো এই মেয়ে নিজেও আগুনে পুড়ে মরত আর আমাদের কেও মারত।”
অহনা বলে ওঠে,”কিন্তু আমি তো বুঝতে পারছি না অভীক্ষা রান্নাঘরে কেন গেল? ওর তো আগুনে ফোবিয়া এজন্য তো সুনীতি ওকে আগুনের পাশেও ঘেষতে দেয় না।”

ইভা এবার ভয় পেয়ে যায়। সেই যে অভীক্ষাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেছিল এটা জানাজানি হলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। সাজিদ ইভাদ এই ভীত মুখ দেখে বলল,”আমি বোধহয় বুঝতে পারি এসব কিভাবে হয়েছে।”
একটু পর সারজিস অভীক্ষার পাশ থেকে উঠে এসে বলে,”মম, তুমিই তো অভীক্ষাকে নিজের সাথে নিয়ে গেলে…তারপর কিভাবে কি হয়ে গেল?”
অহনা ইভার দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাবি, তুমি এমনটা কিভাবে করলে? অভীক্ষাকে মেনে নিতে পারো নি, সেটা ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে ওকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে?”
সারজিস হতবাক স্বরে বলে,”মানে?!”
“অভীক্ষার তো আগুনে ফোবিয়া।”

সারজিস এবার রাগী স্বরে ইভাকে বলে ওঠে,”মম, তুমি অভীক্ষাকে জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলে?”
“তোমরা বিশ্বাস করো, আমি জানতাম না ঐ মেয়ের আগুনে ফোবিয়া। আর ও তো আমায় কিছু বলেও নি।”
অহনা বলে ওঠে,”তুমি তো কিছুই জানো না ভাবি। না জেনেই তো এত অশান্তির সৃষ্টি করো।”
সারজিস বলে,”ব্যস, অনেক হয়েছে। এখানে থেকে আমি আর নিজের স্ত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারব না। আমি এক্ষুনি অভীক্ষাকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়।”
বলে সারজিস বেরোতে নিতেই সাজিদ বলে ওঠে,”দাঁড়াও, তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। যদি কারো যাবার হয় তো তোমার মা যাবে!”
ইভা হতবাক স্বরে বলে,”সাজিদ!”

“চুপ, আর একটা কথাও না। তোমার জন্য আজ আমার বাড়িতে এত অশান্তি। তোমাকে নিজের জীবনে জড়ানোই বুঝি আমার জীবনে সব বড় ভুল ছিল৷ কিন্তু আজ তুমি যা করলে সব সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। নিজের স্বার্থের জন্য একটা মেয়েকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলে! এটা আমি বরদাস্ত করব না। আজ আমি এই মুহুর্তে তোমায় আমি এই বাড়ি থেকে বের করে দেব। আমাদের সাথে তোমার আর কোন সম্পর্ক থাকবে না।”

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ১৯

সবাই সাজিদের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। সাজিদ এতেই ক্ষান্ত হয়না। ইভাকে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বলে,”এবার তুমি নিজের রাস্তা নিজে বেছে নাও। আমাদের কারো জীবনে তোমার কোন স্থান নেই।”

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২১