মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২২

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২২
ইয়াসমিন খন্দকার

সারজিসের সাথে একসাথে রুমে পাশাপাশি বসে আছে অভীক্ষা। সারজিস কোন কথা বলছে না। অভীক্ষাই নীরবতা ভেঙে বলে, “আপনি এত চুপচাপ আছেন কেন? কিছু কি বলতে চান না?”
“না, আজ আমি কিছু বলতে চাই না। আজ আমি তোমার কথা শুনতে চাই।”
“আমার কথা?!”
“হু, তোমার কথা। আচ্ছা, অভীক্ষা তোমার কি মনে হয় আমি এই সম্পর্কটা জোর জবরদস্তি করে টিকিয়ে রেখেছি, সত্যিই কি তোমার আমার সাথে সংসার করার কোন ইচ্ছা নেই? যা বলার মন থেকে বলবে। তোমার মন যা চাইছে তাই বলবে।”

অভীক্ষা থতমত খেয়ে যায়। তার মনকে যে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। সারজিসকে কিভাবে বোঝাবে? সারজিস উত্তেজিত হয়তো বলে,”প্লিজ, তুমি আজ চুপ থেকো না। আমার তোমার উত্তরটা জানার ভীষণ দরকার। মন থেকে বলো তুমি কি চাও।”
অভীক্ষা নিজের দুটি চোখ বন্ধ করে বলে,”আমি এত বেশি কিছু বুঝি না। তবে আমি এখন চাই আমাদের এই বিয়েটা মেনে নিতে..আমাদের যাতে একটা সুস্থ স্বাভাবিক সংসার হয় এটাই আমার চাওয়া…”
সারজিস অভীক্ষাকে নিজের একদম কাছে টেনে নেয়। অভীক্ষা কেপে ওঠে সারজিসের স্পর্শে। সারজিস অভীক্ষাকে বলে,”আমি তোমার মুখ থেকে এটাই শুনতো চেয়েছিলাম।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অভীক্ষা বলে,”তবে আমার কিছু টা সময় প্রয়োজন। আমি চাই না তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে..আর”
সারজিস বলে,”বেশ, আমি তোমায় সময় দেব সবটা মানিয়ে নেবার। কথা দিচ্ছি, তোমার উপর জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাইব না।”
অভীক্ষা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”আপনি যদি এমনটা করেন সেটাই আমার জন্য অনেক।”
“আমাকে যে একটু ধৈর্য দেখাতেই হবে অভীক্ষা। আশা করি, এই ধৈর্যের ফল আমি পাবো। আমাকে যেন আর নিরাশ হতে না হয়।”

“আমিও আশা করব। এবার যেন আপনি নিরাশ না হন।”
সারজিস অভীক্ষার কাছে কাতর আকুতি করে বলে,”আমি কি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি অভীক্ষা?”
সারজিসের কন্ঠের আকুল আবেদন ফেলতে পারে না অভীক্ষা। তাই তো সেই আবেদনে সায় দিয়ে বলে,”ঠিক আছে..”

অভীক্ষার অনুমতি পেয়ে আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করল না সারজিস। অভীক্ষাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। তাকে একদম নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিল। অভীক্ষা যেন স্পষ্ট শুনতে পারছিল সারজিসের প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দনের ধ্বনি। সারজিস অভীক্ষাকে বলে,”আমি বেশি কিছু চাই না অভীক্ষা। শুধু তোমাকে নিজের এই বক্ষের মাঝে আবদ্ধ রাখতে চাই সবসময়। জানি না কখন এবং কিভাবে কিন্তু তোমায় আমি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আমার এই ভালোবাসা মিথ্যা নয়। তা একদিন তুমিও বুঝবে। তোমার নিজের করে পাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। শুধু তোমার কাছে একটাই অনুরোধ আমাকে কখনো ধোকা দিও না। আমি সব সহ্য করতে পারব। কিন্তু ধোকাবাজি সহ্য করতে পারব না। আমাকে শুধু একবার সুযোগ দাও, আমি নিজের ভালোবাসা তোমার মন রাঙাতে চাই।”
“আমিও তাই চাই।”
বলে দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে।

আমায়রা আজ একটু বিষন্ন মনে বাড়িতে ফেরে। আমায়রাকে ফিরতে দেখে অহনা এগিয়ে গিয়ে বলে,”তুই এসেছিস আমায়রা..তা হঠাৎ আমায় না বলে কোথায় চলে গেছিলি? আর তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?”
আমায়রা বলে,”আমি চাচির সাথে দেখা করতে গেছিলাম আম্মু।”
“চাচি মানে? তুই কি ইভা ভাবির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি?”
“হুম।”

অহনার বুক কেপে ওঠে। না জানি ঐ পাজি মহিলা আবার তার সরল মেয়েটাকে কি কুবুদ্ধি দিল। এর আগে তার জন্যই তো অহনা মরতে বসেছিল। তাই তো তিনি রেগে বলেন,”তুই আমাকে না জানিয়ে কেন ঐ মহিলার সাথে দেখা করতে গেলি? জানিসই তো উনি কেমন কুটিল। আবার নিশ্চয়ই তোকে কোন কুবুদ্ধি দিয়েছে?”
আমায়রা বলে,”হুম, দিতে তো চেয়েছিল কিন্তু আমি তার কোন কুবুদ্ধি শুনিনি।”
“তা কি বলেছেন উনি তোকে?”

আমায়রা অহনাকে ইভার বলা সমস্ত কথা খুলে। সব শুনে অহনা ভীষণ রেগে যায়। সাথে তার এটা ভেবে স্বস্তিও হয় যে তার মেয়ের এখন সুবুদ্ধি হয়েছে। সে আর ইভার পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। অহনা বলে,”এই মহিলা কখনো শোধরাবে না। সবসময় এনার মনে কূটিলতা চলতেই থাকে! হায় আল্লাহ! আমি খুব খুশি হয়েছি যে তুই ওনার কথায় গলে যাসনি।”

আমায়রা হেসে বলে,”তুমি তো চেনো তোমার মেয়েকে আম্মু। আমি এতটাও বোকা নই যে কারো কথায় গলে যাব। আর আমার সাথে যত যাই হোক না কেন আমি কখনো সারজিস ভাইয়া বা অভীক্ষার কোন ক্ষতি চাইবো না। ওরা যদি একে অপরের সাথে সুখী হতে পারে তো সুখী হোক। আমার তাতে কোন অসুবিধা নেই। আমি তাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চাই না। ওরা নিজেদের মতো জীবন কাটাক। আমিও আমার মতো মুভ অন করার চেষ্টা করি। এতে আমাদের প্রত্যেকেরই ভালো হবে। কারণ আমি জানি, সারজিস ভাই সবসময় আমাকে নিজের বোনের নজরেই দেখেছেন তাই আমাকে কখনো উনি ভালোবাসবেন না। তাই আমিও মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের সময় নষ্ট করতে চাই না।”

অহনার পরাণ একদম জুড়িয়ে যায়। সে বলে,”আমি খুব খুশি হলাম তোর এই আত্মোপলব্ধি দেখে। কিন্তু এই ইভা ভাবি যা প্ল্যান করছে তাতে তো মনে হয় সারজিস আর অভীক্ষার মধ্যে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করে শান্ত হবে না।”
“আমারও তাই মনে হচ্ছে।”
এমন সময় সাগর সেখানে এসে বলে,”তোমরা দুজন মা-মেয়ে কি নিয়ে কথা বলছ?”
আমায়রা বলে ওঠে,”জানো আব্বু আজ কি হয়েছে চাচি আমায় একটা ক্যাফেতে ডেকে পাঠিয়েছিল আর তারপর..”
আমায়রা সব ঘটনা খুলে বলে। এসব শুনে সাগর বলে,”খুব ভালো হয়েছে তুমি ওনার কথায় গলে যাওনি৷ আমি তোমাকে এমনই শক্ত দেখতে চাই।”

অহনা বলে,”কিন্তু আমার খুব ভয় হচ্ছে অভীক্ষা আর সারজিস এর জন্য। ইভা ভাবি আবার তার স্বার্থের জন্য না আবার ওদের কোন ক্ষতি করেন।”
সাগর রাগী কন্ঠে বলে,”তোমাকে আর ওদের কথা এত ভাবতে হবে না। ওদের সমস্যা ওরাই বুঝে নিবে।”
“এটা তুমি কি বলছ সাগর? ওরা আমাদের পরিবারের সদস্য..আমরা ওদের কথা ভাবব না তো কে ভাববে?”
“পরিবার? হাসালে আমায়। ঐ সারজিস আর অভীক্ষার জন্য আমাদের মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ভুলে গেলে তুমি? এরপরও কিভাবে এই কথা বলছ?”

“পুরাতন কথা এত ধরে বসে থাকলে চলবে নাকি?!”
“তোমার যদি এত মহানুভবতা দেখানোর শখ হয় তো দেখাও কিন্তু আমাকে এসব কিছু বলতে আসবে না। আমি কখনো ভুলব না ওদের জন্য আমার মেয়েটা মরে যেতে বসেছিল।”
বলেই সাগর চলে যায়। অহনা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আমায়রা বলে,”আব্বু হয়তো একটু বেশিই রেগে আছে। তুমি চিন্তা করো না, আম্মু।”
“চিন্তা তো করতে চাই না কিন্তু তবুও মাথার মধ্যে অটোমেটিক চিন্তা চলে আসে।”

ইভা বসে বসে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পরই তার সামনে এসে উপস্থিত হয় একজন বিশালদেহী পুরুষ। সে আসতেই ইভা বলে,”তোমাকে যে ফেমাস “ফ্যাশন ডিজাইনার” অভীক্ষার ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তুমি কি সেটা করেছ? তার অতীতের ব্যাপারে এমন কোন খবর এনেছ যা আমার কাজে লাগতে পারে?”
“জ্বি, ম্যাম।”
“তা কি সেই খবর?”

“এটা বেশ ইন্টারেস্টিং। আর আপনার কাজেও লাগতে পারে। মিসেস অভীক্ষার প্রাক্তন হলো চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ড্রাজির বর্তমান ওনার মুকিত চৌধুরী। ওনাদের মধ্যে দুই বছরের গভীর প্রেম ছিল। যদিও এরপর কোন কারণবশত তারা দুজনে আলাদা হয়ে যান।”

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২১

ইভা বাকা হেসে বলে,”বাহ কি খবর দিলে। এই নাও এত ভালো নিউজ দেয়ার জন্য তোমার উপহার। এই খামটায় ৫ লাখ টাকা আছে।”
ইভা এবার হেসে বলে,”এবার দেখো অভীক্ষা তোমার এই প্রাক্তনকে ব্যবহার করে তোমার কি হাল করি। হা হা হা।”

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৩