মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৩
ইয়াসমিন খন্দকার
অভীক্ষা এখন সারজিসের সাথে মানিয়ে নিয়ে সংসার করার কথা ভাবছে। সে চায় এই বিয়েটাকে মান্যতা দিতে। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে সে সারজিসের জন্য তার ঘরেই ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসে। অতঃপর সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলে, “নিন,এক ব্রেকফাস্ট করে নিন।”
“তুমি খেয়েছ?”
“হুম, খেয়েছি।”
সারজিসও খাওয়া শুরু করে। অভীক্ষা বলে, “গত কয়েক দিন থেকে তো নানান ঘটনায় আমি সেরকম ভাবে নিজের কাজে যেতে পারিনি৷ তবে আজকে খুব বড় একটা ডিল ফাইনাল করতে হবে একটা বিদেশী কোম্পানির সাথে। সেজন্য আমায় একটু বনানীর দিকে যেতে হবে।”
সারজিস হেসে বলে, “তো, যাও। এখানে এত অনুমতি নেয়ার কি আছে?”
“না, মানে এখন তো আপনি আমার স্বামী তাই..”
“দেখো, অভীক্ষা। আমি সেসব স্বামীদের মতো একদমই নই যারা তাদের স্ত্রীকে অবনমিত করে রাখতে চায়। আমাকে বিয়ে করেছ মানে এই নয় তোমাকে নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হবে। আমি তোমাকে নিজের জীবনে পূর্ণ স্বাধীনতাই দেব।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারজিসের থেকে এমন কথা শুনে অভীক্ষার অনেক ভালো লাগে। সারজিস খেতে খেতেই বলে,”শুধু আমার একটাই কথা,আমার তোমার প্রতি রয়েছে অগাধ বিশ্বাস,অন্তত সেই বিশ্বাসটা ভেঙো না।”
অভীক্ষা মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমি মোটেই আপনার বিশ্বাস ভাঙবো না।”
দরজার আড়াল থেকে তাদের এসব কথা শুনে নেয় সোহেল। অতঃপর সে বাঁকা হেসে বলে,”আমার আপুকে কষ্ট দিয়ে তোমরা এত শান্তিতে সংসার করবে সেটা তো হতে পারে না। সারজিস ভাই, এই মেয়ের জন্য তুমি আমার আপুকে কষ্ট দিয়েছিলে তো। এবার দেখো, এই মেয়ে কিভাবে তোমার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
বলেই সে একটু দূরে গিয়ে ইভাকে ফোন করে। ইভা সোহেলের কল দেখেই হেসে ওঠে। তার আন্দাজ একদম ঠিকঠাক কাজ করেছে। ইভা জানত, আর কেউ তাকে সাহায্য না করলেও সোহেল করবে। কারণ একেই তার বয়স কম হওয়ার দরুণ ম্যাচুরিটি কম তার উপর নিজের বোনকে অসম্ভব ভালোবাসে। তাই সোহেলকেই টোপ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বেছে নিয়েছে ইভা৷ ইভা ফোনটা রিসিভ করতেই সোহেল বলে,”চাচি, তুমি ঐ অভীক্ষার উপর নজর রাখতে বলেছিলে না, আমি নজর রেখেছি।”
“তো কি খবর পেলে?”
“আজকে অভীক্ষা বনানীতে একটা বিদেশী কোম্পানির সাথে ডিল ফাইনাল করতে যাচ্ছে। এটাই সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তুমি কিছু একটা করো। আমার আপুর কষ্ট যে আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
ইভা বলে,”তুমি একদম চিন্তা করো না। আমার উপর ভরসা করে তুমি ঠকবে না। এবার শুধু দেখে যাও, আমি কি করি।”
বলেই ইভা ফোনটা রেখে দেয়। তার মাথায় খেলতে থাকে শয়তানী বুদ্ধি।
অভীক্ষা বেরোনোর আগে বেশ লম্বা একটা লাল গাউন পড়ে নেয়। এই পোশাকে তাকে বেশ শালীন লাগছিল। সারজিস এটা দেখে খুশি হয় যে অভীক্ষা শালীনতা বজায় রাখছে। সারজিস অভীক্ষার পাশেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এতে করে অভীক্ষা লজ্জা পেয়ে বলে,”এভাবে কি দেখছেন?”
“তোমাকে দেখছি..তুমি এত সুন্দর কেন বলতে পারো?”
অভীক্ষা বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না। সারজিস অভীক্ষার কাছে এসে তার গালে হাত বুলিয়ে বলে,”তুমি এখন আমার স্ত্রী..তাই আমি আর আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব রাখতে চাই না। আজ তোমার কাজ শেষ করে জলদি ফিরে এসো। আজকের দিনটা আমাদের জন্য স্পেশাল হবে আর রাতটাও।”
সারজিসের এহেন কথায় অভীক্ষার পুরো শরীরে শীতল স্রোত বয়ে যায়। অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে যায় পুরো দেহ। সারজিস অভীক্ষার এই অনুভূতি বুঝতে পেরে হালকা হেসে বলে,”জলদি ফিরো, কেমন?”
অভীক্ষা দুপাশে মাথা নাড়ায়। অতঃপর বেরিয়ে যায়। পর্দার আড়াল থেকে সবটাই পর্যবেক্ষণ করে সোহেল৷ বাঁকা হেসে বলে,”আজকের দিনটা সত্যিই তোমাদের জন্য অনেক স্পেশাল হবে। সেটা আর একটু পরেই টের পাবে।”
অভীক্ষা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে বনানীতে পৌঁছে যায়। সে বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে কয়েক ঘন্টা ধরে মিটিং করতে থাকে। এদিকে ইভা নিজের চাল চালে। প্রথমে তো সে মুকিতকে ফোন করে। মুকিত ফোন রিসিভ করে বলে,”কে আপনি?”
ইভা হেসে বলে,”আমাকে চিনে তোমার কাজ নেই। আমি অভীক্ষা আর তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। অভীক্ষার একটা ম্যাসেজ তোমার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যই ফোন করেছি।”
“আমি ঠিক বুঝলাম না!”
“অভীক্ষা সারজিসকে বিয়ে করে মোটেই সুখী নয় মুকিত। কারণ ওর মনে তো আজও তোমার জন্য অনুভূতি রয়েছে। এজন্য ও এই বিয়েটা করলেও মন থেকে এটা মানতে পারছে না। ওর মন জুড়ে যে শুধু তুমিই রয়েছ।”
“আপনি কি বলছেন এসব?”
“আমি ঠিকই বলছি….অভীক্ষা তো কোন সুযোগই পাচ্ছে না তোমার সাথে যোগাযোগ করার। ওর স্বামী সারজিস তো সবসময় ওকে নজরবন্দী করে রাখে৷ এজন্য তো আমায় দিয়ে তোমার কাছে খবর পাঠালো। অভীক্ষার তোমার সাথে অনেক কথা বলার আছে। তাই তো আজ ও বনানীতে গ্রান্ড হোটেলের এড্রেসে তোমায় ডেকে পাঠিয়েছে।”
মুকিত আবেগপ্রবণ হয়ে বলে,”ঠিক আছে, আপনি অভীক্ষার কাছে খবর পাঠিয়ে দিন যে আমি আজ ওখানেই ওর সাথে দেখা করব।”
“ঠিক আছে।”
বলেই ফোন কেটে দেয় ইভা। কুটিল হেসে বলে,”অর্ধেক কাজ তো হয়ে গেল এবার বাকি অর্ধেক কাজ বাকি।”
বলেই সে সারজিসের কাছে ফোন দিল। সারজিস ফোনটা রিসিভ করেই বলে,”হ্যালো, কে বলছেন?”
“আমি তোমার মা বলছি মাই সন।”
সারজিস রেগে বলে,”তুমি কেন ফোন করেছ আমায়? এত কিছু করেও কি তোমার শখ মেটেনি?”
“তুমি আমাকে সব সময় ভুলই বুঝে গেছ মাই সান। আমি তোমার মম হই। আমি কি কখনো তোমার খারাপ চাইতে পারি? আমি সবসময় তোমার ভালোর জন্যই চিন্তা করি মাই সন। কিন্তু আফসোস তুমি সেটা বুঝলে না।”
সারজিস বিরক্ত গলায় বলে,”এত আবোল তাবোল কথা না বলে যা বলতে চাও স্পষ্ট করে বলো তো।”
ইভা বলেন,”অভীক্ষা একদম ভালো মেয়ে নয় সারজিস। ও তোমায় ঠকাচ্ছে। ও একটা চরিত্রহীন মেয়ে।”
“মম! তোমার মুখে আমি অভীক্ষার সম্পর্কে আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা। তুমি অভীক্ষাকে পছন্দ করো না, ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সম্পর্কে এত বাজে কথা বলতে কি তোমার একবারও বাঁধল না? গলা কাপল না একটুও।”
“জানি আমার মুখের কথায় তোমার বিশ্বাস হবে না। এজন্য আমি তোমার ফোনে কিছু ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। এসব দেখে তারপর নাহয় যাচাই করো।”
এই বলে ইভা সারজিসের ফোনে মুকিত ও অভীক্ষা রিলেশনে থাকার সময় তাদের ঘনিষ্ঠ অবস্থার কিছু পিক পাঠিয়ে দেয়। ইভা কিছু সাইবারের লোকদের দিয়ে এসব ছবি কালেক্ট করেছে। এসব ছবি দেখে তো সারজিসের হুশ উড়ে যায়। তার নিজের চোখকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। তার মনে পড়ে যায় সে যতবার মুকিত ও অভীক্ষাকে একসাথে দেখেছিল সেসব ঘটনা। তবুও সারজিস শান্ত মাথায় চিন্তা করে বলে,”এসব ছবি তো ফেকও হতে পারে। আর তাছাড়া যদি অরিজিনালও হয় তাও তো দেখে মনে হচ্ছে কয়েক বছর আগের ছবি। হয়তো আগে ওদের মধ্যে কিছু ছিল কিন্তু সেসব তো অতীত। এই নিয়ে আমি বর্তমানের অভীক্ষাকে কেন ভুল বুঝছ? বর্তমানে অভীক্ষা শুধু আমার স্ত্রী। আমি ছাড়া অন্য পুরুষের জন্য ও নিষিদ্ধ।”
“তুমি সত্যিই অনেক সরল। অথবা এই অভীক্ষার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছ। কিন্তু আমি মম হয়ে তো তোমার ভালোটাই চাইব। তুমি একটা কাজ করো, এখনই বনানীর গ্রান্ড হোটেলে চলে যাও। এরপর যা কিছু হবে নিজের চোখের সামনেই দেখতে পারবে। তারপর বিচার করো, আমি ঠিক না ভুল
আর অভীক্ষার আসল চেহারাও দেখতে পারবে।”
“বেশ, তুমি যখন বলছ আমি যাব। কিন্তু একটা কথা শুনে রেখো, যদি তুমি ভুল প্রমাণিত হও তাহলে আমি তোমার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করব।”
মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২২
“আর যদি অভীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয় তাহলেও কিন্তু তোমায় একই কাজ করতে হবে।”
“অবশ্যই। আমি সব সহ্য করলেও বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করবো না।”‘