মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৫

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৫
ইয়াসমিন খন্দকার

অভীক্ষা নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ফিরে কলিং বেল বাজানোর কিছু সময় পরই তার দাদি রাহেলা খাতুন এসে দরজা খুলে দেন৷ রাহেলা খাতুন অভীক্ষাকে দেখে অবাক হয়ে বলে, “সখী, তুই?!”
অভীক্ষা বলে, “হুম, আমি।”
সুনীতি এগিয়ে আসতে আসতে বলে, “কে এসেছে মা?”

অতঃপর এগিয়ে এসে অভীক্ষাকে দেখে একইসাথে অবাক এবং খুশি হয়ে বলেন, “মামনী! তুমি এসেছ। হঠাৎ এভাবে না বলে চলে এলে। তুমি আসবে আমাকে আগে বলবে না। সারজিসও কি এসেছে?”
অভীক্ষা কঠিন গলায় বলে, “আর কেউ আসে নি। আমি একাই এসেছি। এখন আমাকে ভেতরে যেতে দাও প্লিজ। আমার মন মেজাজ বেশি ভালো নেই।”
সুনীতির মনে হঠাৎ চিন্তা জাগে৷ তাই সে বলে ওঠে, “কেন মামনী? কি হয়েছে তোমার?”
“ভিতরে গিয়ে বসে সব বলছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলেই অভীক্ষা বাড়ির ভিতরে ঢুকে আর বলে, “তোমরা সোফায় বসে আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাদের সব বিস্তারিত বলছি।”
অভীক্ষার কথা শুনে সুনীতি ও রাহেলা খাতুন একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে তারা এটা বুঝতে পারেন যে নিশ্চয়ই বড় কিছু হয়েছে। অভীক্ষার মুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। তবে কি হয়েছে এবার সেটাই হলো মেইন ব্যাপার। রাহেলা খাতুন বলেন,”আচ্ছা, তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি আর তোর মা এখানেই আছি।”
“আচ্ছা।”

এদিকে ইভাকে নিয়ে পুনরায় বাড়িতে ফিরে আসে সারজিস। সাজিদ বাইরে যাওয়ার করার জন্য বের হচ্ছিল এমন সময় নিজের ছেলেকে এভাবে ইভাকে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখে বলে ওঠেন,”তুমি কোন সাহসে এই বাড়িতে ফিরে এলে ইভা?”
ইভা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারজিস বলে,”আমি মমকে ফিরিয়ে এনেছি, ড্যাড। আর এই বিষয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাই না।”

সাজিদ হুংকার দিয়ে বলেন,”কার অনুমতি নিয়ে তুমি এই মহিলাকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনলে? এতদিন এ ছিল না এই বাড়িতে শান্তি ছিল এখন আবার নিয়ে এসেছ একে অশান্তি করার জন্য!”
ইভা বলে,”তুমি শুধু আমাকেই সবসময় ভুল বোঝো সাজিদ। দেখলে সারজিস, এই জন্যই আমি এই বাড়িতে ফিরতে চাইনি। তোমার বাবা সবসময় আমার সাথে এমন করে।”
সাজিদ দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”বিয়ের পর থেকে তোমার এসব নাটক দেখে চলেছি আর না। ভালো চাইলে এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও নাহলে আমি তোমায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে…”
ইভা সাজিদের মুখে এই কথা শুনে ভীষণ রেগে যায়। তবে সে কিছু বলার আগেই সারজিস বলে,”মম এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না, ড্যাড। আমরা সবাই মমকে ভুল বুঝেছিলাম৷ সত্যটা জানলে তোমরাও সবটা বুঝতে পারবে।”

এত চেচামেচির আওয়াজ শুনে অহনা এবং আমায়রাও ছুটে আসে৷ অহনা এসে ইভাকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,”আবার এই মহিলা এসে গেছে নতুন কোন ঝামেলা তৈরির জন্য!”
আমায়রাও ইভাকে দেখে অবাক হয়৷ এদিকে সারজিস বলে,”আজ মম ছিল জন্যই আমি অভীক্ষার আসল চেহারাটা দেখতে পেয়েছি। অভীক্ষা আমায় এভাবে ঠকিয়েছে..ছি! ওর যদি অন্য প্রেমিক থাকত তাহলে সেসব আমায় আগেই বলতে পারত। আমি তো ওকে জোর করে বিয়ে করতাম না। কিন্তু ও আমার থেকে সত্যটা লুকিয়ে এভাবে পরকীয়া করছিল। ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।”
সারজিসের কথা শুনে অহনা অবাক স্বরে বলে,”এসব তুমি কি বলছ সারজিস? আমি অভীক্ষাকে যতদূর চিনি ও এমন করার মেয়ে নয়।”

ইভা বলে ওঠে,”এত কিছুর পরেও তুমি ঐ মেয়েটাকে সাপোর্ট করছ? ভুলে গেছ ঐ মেয়ের জন্য তোমার মেয়ের কি অবস্থা হয়েছিল?”
আমায়রা বিচক্ষণ চোখে সবটা পর্যবেক্ষণ করে। সাজিদ বলে,”আমারও অভীক্ষার উপর ভরসা আছে৷ নিশ্চয়ই ইভাই কিছু করেছে।”
সারজিস বলে ওঠে,”হ্যাঁ, আজ মম ছিল জন্য আমার চোখ খুলে গেছে। নাহলে তোমাদের মতো আমিও অভীক্ষাকে অন্ধের মতো ভরসা করতাম। দাঁড়াও, আমিই তোমাদের সব খুলে বলছি।”

বলেই সারজিস বাড়ির সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব কিছু শোনার পরও সাজিদ বলে,”আমার মনে হয় কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অভীক্ষা এমন কিছু করবে বলে মনে হচ্ছে না।”
ইভা বলে,”হ্যাঁ, এখন তো আমার থেকেও তোমার ঐ বাইরের মেয়েটার প্রতি বেশি বিশ্বাস৷ ২৮ বছর সংসার করেও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না আর ২ দিনের পরিচিত ঐ মেয়েটাকে এত বিশ্বাস করছ!”
সাজিদ বলে,”তোমার সাথে ২৮ বছর সংসার করেছি জন্যই তোমাকে হারে হারে চিনি৷ তোমার গাটে গাটে যে কতটা শয়তানী সেটাও জানি। আমার শুধু সন্দেহ নয় এখন তো শতভাগ বিশ্বাস যে, তুমি কিছু করেছ। সত্যি করে বল, এসব তোমার ষড়যন্ত্র তাই তো?”

ইভা ন্যাকাকান্না করে বলে,”দেখেছ সারজিস! তোমার বাবা এখনো আমাকেই দোষারোপ করছে।”
সারজিস বলে,আমি আর কিছু শুনতে চাই না এসব ব্যাপার নিয়ে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, অভীক্ষা যখন আমাকে চায় না তখন আমিও ওকে এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দেব। তারপর ও তার প্রেমিকের সাথে বিয়ে করুক। তাও এসব নষ্টামি আমি সহ্য করবো না।”
ইভা বলে,”হুম। অভীক্ষা ওর প্রেমিকের সাথে বিয়ে করুক আর তুইও আমায়রার সাথে…”

ইভা নিজের কথা শেষ করার আগেই আমায়রা বলে ওঠে,”খবরদার না! আমাকে আর এসবের মধ্যে টানার দুঃসাহস দেখাবেন না চাচি। এমনিতেও তো আমি এসবের মধ্যে নেই আর তাছাড়া সারজিস ভাইয়ের মতো মেরুদণ্ডহীন পুরুষকে একসময় ভালোবেসেছিলাম ভাবতেও আমার নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। এই মানুষটার জন্য কিনা আমি সুই-সা*ইডও করতে গেছিলাম। যে এত তাড়াতাড়ি নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভুল বুঝছে পারে সে তো আমায় প্রতি পদে পদে ভুল বুঝত। আল্লাহ অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে আমায়। এজন্য আজ আমি তাহাজ্জুদ পড়ে শুকরিয়া আদায় করবো।”

বলেই আমায়রা চলে যায়। অহনাও বল,”তোমার যা যা ষড়যন্ত্র করার তুমি করে যাও ভাবি। কিন্তু আমার মেয়েকে এসবের মধ্যে টেনো না৷ আমি এটা জানি যে, আগেও তুমি আমার মেয়েকে ব্যবহার করে কি ষড়যন্ত্র করতে চাইছিলে। ভাগ্যিস, আমার মেয়ে তোমার পাতা ফাদে পা দেয়নি। আর সারজিস তোমাকে একটা কথা বলব, নিজের মাকে এভাবে অন্ধবিশ্বাস করো না নাহলে দেখবে একসময় কেঁদেও কুল পাবে না। এই মহিলা মোটেই সুবিধার না। এর আগে ইনি আমায়রাকে কফিশপে ডেকে নিয়ে গিয়ে তোমার আর অভীক্ষার সংসার ভাঙার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিল। এবারও নিশ্চয়ই তেমনি কিছু করেছেন।”

ইভা বলে,”তুমি এদের কথা শুনো না সারজিস। এরা কেউ তোমার ভালো চায় না। লাগবে না আমায়রাকে। আমি আরো ভালো মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেব। দুনিয়ায় মেয়ের অভাব নেই।”
অহনার আর ইভার এসব বাজে কথা শুনতে ইচ্ছা করছিল না তাই সে বিদায় নেয়। সাজিদও বলে,”তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো। আমি চললাম। তবে সারজিস, চোখকান একটু খোলা রাখো৷ কাউকে অন্ধবিশ্বাস করো না।”

আমায়রা নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল এমন সময় সোহেলকে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেয়ে বল,”কিরে ভাই! তোকে এমন লাগছে কেন?”
সোহেল বলে,”তুই খুশি হস নি আপু? সারজিস ভাই আর অভীক্ষার যে ডিভোর্স হতে চলেছে।”
“এতে আমি কেন খুশি হবো?”
“তুই তো সারজিস ভাইকে..”
“এখন আমি মুভ অন করে নিয়েছি। তাছাড়া ওনার মতো মেরুদণ্ডহীন মানুষকে আমি ঘৃণা করি। অভীক্ষার সাথে কত বড় অন্যায় করেছে ও।”

“এতকিছুর পরও তুমি অভীক্ষার হয়ে কথা বলছ?”
“হ্যাঁ, কারণ ও যথেষ্ট ভালো মেয়ে।”
সোহেলের এবার একটু খারাপ লাগে। নিজের কাজের জন্য অনুশোচনা হয়। আমায়রা বলে,”আচ্ছা ভাই, সত্যি করে বল তো এসব কিছুর ব্যাপারে কি তুই কিছু জানিস?”
“না..আমি কি জানবো..”
“আমার কসম ভাই মিথ্যা বলিস না।”

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৪

নিজের আপুকে বড্ড ভালোবাসে সোহেল। আর আপুর কসম শুনে আর চুপ থাকতে পারল না। ইভার সব ষড়যন্ত্রের কথা বলে দিল। সব শুনে আমায়রা বলল,”চাচি এত নিচে নামল ছি! এবার আমি সব সত্য সামনে আনবোই। অভীক্ষার নিরাপরাধ হবার প্রমাণ দিবোই।””

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৬