মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৬

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৬
ইয়াসমিন খন্দকার

অভীক্ষা তার মা ও দাদিকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে তারা দুজনেই ভীষণ রেগে গেলেন এবং দুঃখবোধ করলেন। সুনীতি বলল,”এসব কিছু নিশ্চয়ই সারজিসের মায়ের চক্রান্ত। উনিই সারজিস আর তোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরির জন্য এসব করেছেন।”
রাহেলা খাতুন বলেন,”আর সারজিসই বা কেমন? আগুপিছু কিছু না ভেবে এভাবে কেন ও অভীক্ষাকে ভুল বুঝল? ওর তো নিজের মায়ের চক্রান্ত সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন ছিল৷ এর আগেও তো ওর মা অভীক্ষার ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল।”

অভীক্ষা বলে,”এসব নিয়ে আর ভাবার দরকার নেই৷ যা হবার হয়ে গেছে। যদি ওনার আমার উপর বিশ্বাস না থাকে তো আমার কিছু করার নেই। এই সম্পর্কর ইতি টানা দরকার।”
রাহেলা খাতুন থমকে উঠে বলেন,”তাই বলে বিয়ের মতো এমন একটা পবিত্র সম্পর্ক এভাবে ইতি টানা কি ঠিক হবে?”
সুনীতি বলে,”তুমি একটু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেও অভীক্ষা। সারজিস হয়তো একটা ভুল করেছে কিন্তু..”
“কোন কিন্তু নয় মা। আমি ডিশিসন নিয়ে ফেলেছি।”
সুনীতি আর রাহেলা খাতুন বুঝতে পারেন এই মুহুর্তে অভীক্ষা রেগে আছে তাই কোন কিছু বুঝিয়েও লাভ নেই৷ তারা তারা আর এই বিষয় নিয়ে কিছু বলেন না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমায়রা একটা কফিশপে বসে কারো আসার জন্য অপেক্ষা করছিল অনেক সময় ধরে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি এলো। সে আর কেউ নয়,”মুকিত”
মুকিতকে দেখে আময়রা বলে,”আপনিই মুকিত?”
“হুম।”
“আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
“হ্যাঁ, বলুন।”
“অভীক্ষার সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”
“এসব ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
“মোটেই ব্যক্তিগত নয়। অভীক্ষার সংসারটা ভাঙার পথে আপনার জন্য।”
“মানে?”

“আপনি নিশ্চয়ই আমার চাচির সাথে হাত মিলিয়ে এসব করেছেন।”
“কিসব বলছেন?! আমি কেন অভীক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবো। ওকে ভালোবাসি আমি।”
“যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমাকে সাহায্য করুন। অভীক্ষা যে নিরপরাধ সে যে কোন অন্যায় করেনি সেটা প্রমাণ করতে সাহায্য করুন।”
“এজন্য আমায় কি করতে হবে?”
আমায়রা একটা স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে,”সেদিন আপনি কেন ওখানে গেছিলেন সেটা আগে বলুন।”
“সেদিন তো একজন আমায় ফোন করে বলেছিল অভীক্ষা আমার সাথে বনানীর গ্যান্ড হোটেলে দেখা করতে চায়।”
“কে ফোন করেছিল?”

“সেটা তো জানি না, তবে যতদূর মনে আছে উনি বলেছিলেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। ওনার ফোন নম্বরটা আছে আমার কাছে।”
“গলার স্বরটা কি কোন মহিলার ছিল?”
“হুম।”
আমায়রা বলে,”আমার যা বোঝার বুঝে নিয়েছি। এখন আপনি আমার সাথে আমার বাসায় চলুন। বাকিটা ওখানে গিয়ে বোঝাপড়া হবে।”

পুরো বাড়ির সবাইকে জড়ো করেছে আমায়রা। সারজিস গম্ভীর মুখে বসে আছে। ইভা গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করছে সবকিছু। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই সারজিস বলে ওঠে,”কেন আমাদের এখানে এভাবে ডেকে পাঠিয়েছ আমায়রা কিছু তো বলো?”
আমায়রা বলে,”হুম। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার। আজ একজনের মুখোশ খুলে দেবার পালা।”
বলেই আমায়রা সোহেলকে বলে,”সোহেল তুই এগিয়ে এসে যা বলার বল।”
সোহেল ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসে। ইভা কাপতে থাকে। আমায়রা বলে,”কাউকে ভয় পাবার দরকার নেই সোহেল। চাচি তোকে কি বলেছিল সেসব খুলে বল।”

সোহেল বলে,”চাচি আমায় বলেছিল অভীক্ষা ও সারজিসকে আলাদা করার জন্য তার আমার সাহায্য প্রয়োজন। এজন্য আমি যেন এই বাড়ির সব তথ্যও সংগ্রহ করি। আর আমি এতদিন ধরে সেসব কাজই করে গেছি। ওনাকে অভীক্ষা ও সারজিস ভাইয়ের ব্যাপারে সব তথ্য দিয়েছি। অভীক্ষা যে সেদিন গ্যান্ড হোটেলে অবস্থান করবে সেই খবরও আমি দিয়েছিলাম আর উনি হেসে বলেছিলেন এবার উনি ওদের আলাদা করবেন।”
ইভা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে,”এ সব কিছু মিথ্যা বলছে। এরা ভাইবোন মিলে আমার পিছনে লেগে গেছে। সারজিস তুমি এদের বিশ্বাস করো না।”
সাজিদ বলে ওঠে,”এত কিছুর পরেও তুমি কোন মুখে এই কথা বলো?”
অহনা বলে,”ওনার লজ্জা বলে কিছু আছে নাকি? থাকলে এভাবে নিজের ছেলের সংসার ভাঙতে উঠে পড়ে লাগত না।”

সারজিস চুপই ছিল। আমায়রা বলে,”এবার আপনি ভেতরে আসুন।”
আমায়রার ডাক শুনে মুকিত ভেতরে আসে। মুকিতকে দেখে সারজিস রেগে গিয়ে বলে,”এই ছেলেটা কেন এসেছে এখানে?”
আমায়রা বলে,”সব সত্যটা প্রকাশ করার জন্যই ওনার এখানে আসা। মিস্টার মুকিত এবার আপনি বলুন তো আপনার সাথে কি হয়েছিল?”
“আমাকে একজন মহিলা ফোন করে বলেছিল অভীক্ষা গ্যান্ড হোটেলে আমার সাথে দেখা করতে চায়। আর সেজন্যই আমি ওখানে যাই। সেই কল রেকর্ডও আছে আমার কাছে।”
বলেই সে কল রেকর্ডটা চালু করে। যেখানে গলার স্বর শুনেই বোঝা যায় এটা ইভার গলা৷ ইভা তবুও অস্বীকার করে বলে,”এসব মিথ্যা। সব আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র!”

এবার আমায়রা বলে,”মুকিত! যেই নাম্বার থেকে আপনাকে কল করা হয়েছিল সেখানে ডায়াল করুন তো।”
মুকিত আমায়রার কথামতো ডায়াল করতেই ইভার ফোন বেজে ওঠে। সারজিসের কাছে এবার সবটা পরিস্কার হয়। ইভা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাজিদ এগিয়ে এসে তাকে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বলে,”বাত্তামিজ মহিলা! আমার সংসারটা ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছিস তুই?! এতগুলো বছর তোকে সহ্য করেছি কিন্তু এবার তুই সব সীমা অতিক্রম করেছিস। আজ আমি তোকে এক্ষুনি তালাক দিচ্ছি..এক তালাক..দুই তালাক..তিন তালাক।”
ইভা কাঁদতে শুরু করে। সারজিসের কাছে গিয়ে বলে,”আমাকে ভুল বুঝো না সান। আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই..”

সারজিস বলে,”আজ থেকে তুমি আমার কাছে মৃত মম। আমি জাস্ট ঘৃণা করি তোমায়। আর কখনো তোমার এই চেহারা আমায় দেখাবে না। তোমার জন্য আমার আর অভীক্ষার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।”
অহনা বলে,”দেখেছ ভাবি। এটাই হলো কর্মফল। আজ তোমার অপরাধের জন্য কেউ তোমার পাশে নেই।”
ইভা বলে,”এটা হতে পারে না। সবাই এভাবে আমার থেকে মুখ ফেরাতে পারে না।”
সাজিদ অহনাকে বলে,”এই মহিলাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও অহনা। একে স্পর্শ করতেও আমার ঘৃণা লাগবে।”

সাজিদের কথা শুনে অহনার চোখে জল চলে আসে। আমায়রা বলে ওঠে,”এই শুভ কাজটা নাহয় আমিই করি।”
বলেই ইভাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। অতঃপর তার মুখের সামনে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে,”বাড়ি থেকে কালো ছায়া দূর হলো।”
অহনা বলে,”ঠিক বলেছিস তুই! এই মহিলা যতদিন বাড়িতে থাকবে ততদিন শুধু আমাদের সংসারে অশান্তিই থাকবে।”

মুকিত এগিয়ে এসে বলে,”আমি অভীক্ষাকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পেরে অনেকটা হালকা অনুভব করছি। ও তো আমাকে ভুল বুঝেছে বোধহয়। আমি যদি জানতাম এই মহিলা ওর বিরুদ্ধে এত নোংরা চক্রান্ত করছে তাহলে কখনো সেইদিন ঐ হোটেলে যেতাম না। আমি ভালোবাসি অভীক্ষাকে, তার মানে এই নয় এত নিচ উপায়ে ওকে পাওয়ার চেষ্টা করব। এখন শুধু অভীক্ষার কাছে ক্ষমা চাইলেই আমি স্বস্তি বোধ করতে পারব। অভীক্ষাকে ছাড়া তো আমি আজীবন কাটিয়ে দিতে পারব কিন্তু ওর ঘৃণা নিয়ে নয়।”

সারজিস বলে ওঠে,”ক্ষমা তো আমাকেও চাইতে হবে অভীক্ষার কাছে। আমি ওকে ভুল বুঝে কতটা জঘন্য কথা বলেছি। আমি এই সব ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে নেব। আবার ওকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনব।”
আমায়রা বলে,”আমি অভীক্ষাকে যতটা চিনি ও অনেক আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটা মেয়ে। তুমি ওকে যতটা অপমান করেছ মনে হয়না ও এত সহজে রাজি হবে। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো।”
সারজিস বলে,”আমি যে করেই হোক ওকে মানাবো।”

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৫

সাজিদ বলে,”হুম যা আর দেরি করিস না। এমনিই অনেক দেরি করে ফেলেছিস। আমি তোকে আগেই বলেছিলাম নিজের মায়ের কথায় নাচিস না। এবার বুঝলি তো।”
সারজিস আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়ে অভীক্ষার বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।

মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ২৭