মহাপ্রয়াণ পর্ব ২১+২২

মহাপ্রয়াণ পর্ব ২১+২২
নাফিসা তাবাসসুম খান

নিশুতিরাতে চারিদিকে ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে মুখ করে হুংকার করছে একটি নেকড়ে। নেকড়েদের অন্যতম প্রিয় কাজ এটি। পূর্ণ চাঁদের রাতে হাক ছেড়ে হুংকার করা। হঠাৎ পিছনে ঝোপের আড়াল হতে শব্দ হয়। নেকড়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। শব্দের উৎপত্তি কোথা হতে তা দেখার জন্য ধীর পায়ে ঝোপের কাছে এগিয়ে যায়। ঝোপের পিছনেই একটি শূকর দেখতে পায়। তৎক্ষণাৎ নেকড়েটি মানব রূপ ধারণ করে। কাধ সমান তার চুল গুলো বাতাসে দুলছে। চোখে মুখে হিংস্রতার ছাপ।

কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝড়ের বেগে সেই শূকরের উপর হামলা করে। দেহ চিরে তার দেহ ভক্ষণ করে। তারপর মাটির উপর দু হাত মেলে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। শরীরে ও মুখে তাজা রক্ত লেপ্টে আছে। দূর থেকে এই সম্পূর্ণ দৃশ্য দেখে ওয়ানা। মুখে তার আবেদনময়ী হাসি। এগিয়ে এসে জ্যাকসনের মেলে রাখা এক হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তারপর একহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দিয়ে তার মুখে লেপ্টে থাকা রক্ত পরিষ্কার করতে করতে বলে,
” ভালোই নাচাচ্ছো ভ্যাম্পায়ার এবং নেকড়েদের। তোমায় খুঁজতে সুদূর গ্রীক পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলো কাউন্ট রিকার্ডো এবং আলফা আরোণ। ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছে যে যার প্রাসাদে। ”
জ্যাকসন কোনো উত্তর দেয় না। কিন্তু তার মুখে ক্রুর হাসি ফুটে উঠে। তা দেখে ওয়ানা আবার বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” খুব শীঘ্রই তোমার সব সপ্ন পূরণ হবে। সর্বশক্তিমান তুমি তা সকলে জানবে। তোমার হাতে থাকবে সকল ক্ষমতা। ”
জ্যাকসন এবার ওয়ানার দিকে ফিরে বলে,
” আজ রাত এখানে কাটালে মন্দ হয় না। ”
ওয়ানা স্মিত হেসে বলে,
” পাশে এই শূকরের রক্তের গন্ধে সারারাত আমি পার করবো কিভাবে? ”
” এটার রক্তের স্বাদ এভাবেও খুব জঘন্য ছিল। আমার মিষ্টি রক্তের প্রয়োজন এখন। কোনো মানব দেহের রক্ত। ”
সাথে সাথে তার চোয়ালের দুটি সূচালো দাঁত বেরিয়ে আসে। ওয়ানার ঘাড়ের কাছে সেই দাঁত চামড়া ছিদ্র করে রক্তনালিতে প্রবেশ করে। ওয়ানা চোখ বুজে আবার সেই আবেদনময়ী হাসি দেয়।

বাসকোভ প্রাসাদের সামনে অযত্নে বেড়ে উঠা বেশ কিছু নাম না জানা জংলী ফুলের গাছ রয়েছে। প্রাসাদের ভিতরটা যতটা গোছানো তার বাহিরের দিকটা ততটাই অযত্নে থাকে তা স্পষ্ট। তবুও যে দেখতে খারাপ লাগে না নয়। উল্টো ক্যাথরিনের মনে হয় প্রকৃতি আপন রূপে সেজে থাকায় প্রাসাদের বাহিরের দিকটা দেখতে আরো রহস্যময় দেখায়। প্রাসাদের আঙ্গিনার এক কোণে দাঁড়িয়ে ভ্যালেন্টাইনকে বেশ যত্ন করে নিজ হাতে খড় তুলে খাওয়াচ্ছে ক্যাথরিন। মাঝে দু একবার বাকা চোখে তাকিয়ে দেখছে প্রাসাদের একদম মাঝ বরাবর অবস্থিত বারান্দার দিকে। আরোণ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। ক্যাথরিনের দিকেই তাকিয়ে আছে সে। ক্যাথরিন ভ্যালেন্টাইন কে খড় খাওয়াতে খাওয়াতে বলে,

” দেখেলি তুই? আস্ত বেহায়া একটা। চক্ষুলজ্জা ও নেই এই নেকড়ের মাঝে। তুই কিভাবে এই নেকড়েদের মাঝে থাকিস? প্রাণ ভয় নেই তোর? এরা যে তোকে আর আমাকে এখনো জ্যান্ত এই প্রাসাদে রেখেছে সেটাই সবথেকে অবাক করার বিষয়। ”
আপনমনে আরো অনেক কথাই বলতে থাকে ক্যাথরিন। গত সাত দিন আগে আবার তারা বাসকোভ প্রাসাদে ফিরে এসেছে। লোল্যান্ডা, কোদ্রিন এবং লোনাটের সাথে আসার আগে মন খুলে কথাও বলতে পারে নি সে। এখানে আসার পর থেকেও ভ্যালেন্টাইন ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলে নি সে। এতদিন সে শুধু আরোণ আর এই নেকড়েদের ঘৃণা করতো। কিন্তু এখন তার সকল রোমানিয়ানদেরই নিজের শত্রু মনে হচ্ছে। তার দেশ আর রাজ্য হচ্ছে গ্রীক। আর গ্রীকের শত্রু মানে তারও শত্রু।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই আরোণ বারান্দা থেকে বলে,

” এসো। ”
ক্রিয়াস কক্ষে প্রবেশ করে দেখে আরোণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তাই সোজা বারান্দায় গিয়ে আরোণের পাশে দাঁড়ায়। নিচে থাকা ক্যাথরিনকে একবার দেখে নেয়। ক্যাথরিন তখন আড়চোখে বারান্দার দিকে তাকিয়েছিল। আরোণ আর ক্রিয়াসকে দেখে নেয় অগ্নি চোখে। তারপর আবার সামনে তাকিয়ে ভ্যালেন্টাইনের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ক্রিয়াস অবাকের সুরে বলে,
” ক্যাথরিন এরকম অগ্নিদৃষ্টি কি আপনাকে নিক্ষেপ করলো না আমাকে? ”
” আপাতত আমাদের দু’জনকেই। ”
ক্রিয়াস আরো অবাক হয়ে বলে,
” কেন? আমরা আবার ওকে কি করলাম? উল্টো আপনি ওকে প্রাসাদে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। যখন ইচ্ছা প্রাসাদে ঘুরতে পারবে। ”

” ওর অগ্নিদৃষ্টির কারণ হচ্ছে আমাদের রোমানিয়ান হওয়া। গ্রীকদের সাথে বহু আগে থেকেই রোমানিয়ান সাম্রাজ্যের বনিবনা হচ্ছিলো না। এখন প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। এজন্যই আমাদের ও শত্রুর তালিকায় ফেলে দিয়েছে। ”
ক্রিয়াস বলে উঠে,
” ও তো প্রথম দিন থেকেই আমাদের শত্রুর তালিকায় ফেলে রেখেছে। ”
আরোণ ক্রিয়াসের দিকে চোখ কুচকে তাকিয়ে বলে,
” আর কিছু বলার আছে তোমার? ”
ক্রিয়াস আমতা আমতা করে বলে,
” না আলফা। আমি আসি তাহলে। ”
আরোণ বলে উঠে,

” ক্রিয়াস। লোল্যান্ডাকে প্রাসাদে নিয়ে এসো। ক্যাথকে সঙ্গ দিতে বলবে। এবং জ্যাকসনকে আর খুঁজতে হবে না কারো। সে নিজে এসে আমাদের হাতে ধরা দিবে। ”
” আপনার মাথায় কোনো পরিকল্পনা চলছে আলফা? ”
” আপাতত যতটুকু বলেছি ততটুকুই করো৷ ”
ক্রিয়াস বেরিয়ে পড়ে। নিচে নেমে প্রাসাদের বাহিরে আঙ্গিনা হয়ে বের হতে নেয়৷ আবার হেঁটে ক্যাথরিনের কাছে আসে। ক্যাথরিন পাশ ফিরে একবার ক্রিয়াসকে দেখে চোখ কুচকে ফেলে। ক্রিয়াস জানে বারান্দা হতে আরোণ তাদের দেখছে। তবুও ধীর স্বরে বলে,

” আলফা তোমার শত্রু নয় ক্যাথরিন। আমি বলছি না তোমাকে এই জীবন মেনে নিতে। কিন্তু উনার সাথে এরকম শত্রুসলুভ আচরণও করো না। কারণ দিন শেষে আলফাই তোমার রক্ষাকবচ। ”
এতটুকু বলেই ক্রিয়াস চলে যায়। আরোণ দূর থেকে পুরোটাই দেখে। কিন্তু কোনো কথা শুনতে পায় না। ক্যাথরিন ভ্যালেন্টাইনের মুখের উপর হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
” জীবনের অভিশাপ কখনো রক্ষাকবচও হয়? আদৌ সম্ভব এটা? ”

বিয়ের ঝামেলা মিটেছে আজ এক সপ্তাহ হয়েছে। আনাস্তাসিয়া শান্তিতে দু দন্ড দম নিবে তার আগেই নতুন বিপদ এসে জুটলো। সম্পূর্ণ গ্রীকে খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে যেকোনো সময়ই রোমানিয়া আক্রমণ করবে গ্রীকের উপর। এতো কম সময়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া খানিকটা কঠিন কাজই বটে। তার উপর রোমানিয়ান সেনাদের সংখ্যাও তাদের তুলনায় বেশি। তাই গ্রীক সম্রাট হার্মস ঘোষণা করেছেন যেন রাজ্যের সকল যুবকেরা যারা তলোয়ার চালানো জানে তারা যেন সেনাদের যোগদান করে। আনাস্তাসিয়া খবর পেয়েছে ওরিয়নও নাম দিয়েছে সেনা তালিকায়। অবশ্য দেলিলাহ থিয়া গর্বের সঙ্গে বলছিলো তার ছেলে রাজ্যের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে এটা তার জন্য খুব গর্বের বিষয়। কিন্তু আনাস্তাসিয়ার মন কু ডাকছে। সে তার পরিবার নিয়ে খুব চিন্তায় আছে। মনে মনে ঠিক করে রেখেছে নিজের পরিবারকে সে রক্ষা করবে। গত দু তিন দিন ধরে একা একা তলোয়ার চালানোর প্রশিক্ষণ করছে। আজকেও বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে একইভাবে প্রশিক্ষণ করছিলো। তখনই সেখানে লিয়াম আসে। আনাস্তাসিয়ার চারিদিকে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে তারপর বলে,

” আমিও তলোয়ার চালানো শিখতে চাই অ্যানা। ”
” তলোয়ারের ভার বহন করার মতো বড় হ আগে। তারপর আমি শিখাবো তোকে। ”
” উফফ! আর কতো? ওরিয়ন ভাইও নিকোডিমাসকে শিখাচ্ছে। আমাকে শিখাতে কেন দেরি করছো তুমি? ”
” নিকোডিমাস তোর মতো নিজের ভাইয়ের মাথা খায় না সারাদিন। তুইও এখন আমার মাথা না খেয়ে ভিতরে গ্র্যানির কাছে যা। ”

লিয়াম মুখ ফুলিয়ে ঘরের ভিতরে হাঁটা ধরে। তার উদ্দেশ্য এখন গ্র্যানির কাছে অ্যানার নামে নালিশ করবে। আনাস্তাসিয়া ক্লান্ত হয়ে যখন কামরায় ফিরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় তখন হঠাৎ তার মাথায় আসে এই যুদ্ধের ঘোষণার পর থেকে সকলে তার আর ওরিয়নের নামে ছড়ানো গুজব সম্পর্কে ভুলে বসেছে। এটা অবশ্য ভালো হয়েছে। এসব ভাবনার মাঝেই তার চোখ পড়ে রিকার্ডোর সেই কালো কাপড়টার দিকে। মনে মনে ভাবে রিকার্ডোও কি যুদ্ধে নাম দিয়েছে? সে ও কি যুদ্ধে যাবে? আনাস্তাসিয়া গলার ক্রুশের হারটি ধরে চোখ বন্ধ করে বলে,

” ঈশ্বর সে যেখানেই থাকুক তাকে সুরক্ষিত রেখো। কোনো অস্ত্র যেন তাকে ছুঁয়ে না যায়৷ যুদ্ধের ময়দানে যেন তার এক বিন্দু রক্ত না পড়ে। ”
আকস্মিক চোখ মেলে তাকায় আনাস্তাসিয়া। কি বলছে এসব সে? মস্তিষ্কের সকল নিউরন ঘুরেফিরে রিকার্ডোর নাম কেন জপছে? ভালোবেসে ফেলেছে সে? ওরিয়নও তো এমনটাই বলেছিল। মাত্র তিনবারের সাক্ষাতেও ভালোবাসা সম্ভব? সে তো রিকার্ডোর নাম ব্যতীত তার সম্পর্কে আর কিছু জানেও না। উহু! রিকার্ডো বলেছিলো তার পরিবারে কেউ নেই। কিন্তু এতটুকু জেনেই কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায়? আর যদি এসব সত্যিও হয় তবে কি এই অনুভূতি তার একপাক্ষিক? রিকার্ডো কি একবারো তার কথা ভাবে নি এখান থেকে যাওয়ার পর? আনাস্তাসিয়ার মতো তার মস্তিষ্কেও কি একই ভাবনা আর মনে একই অনুভূতি আছে? তাদের কি আদৌ আর কখনো দেখা হবে না?
আনাস্তাসিয়া মনে মনে নিজেকে বলে,
” পৃথিবী গোলাকার আনাস্তাসিয়া। এমনও হতে পারে সে ঘুরতে ঘুরতে আবার তোর কাছেই এসে থামলো। ঈশ্বর ভাগ্যে লিখে রাখলে আমাদের আবার সাক্ষাৎ হবে। আমার অনুভূতি সত্যি হলে আমরা আবার মুখোমুখি হবো। ”

প্রকৃতিতে বারুদের গন্ধ মিশে আছে। পোড়া গন্ধে মাথা ধরে যাচ্ছে। বত্রিশ ঘন্টা হলো রোমানিয়ান সৈন্যরা গ্রীকে আক্রমণ করেছে। প্রথম কয়েক ঘন্টা গ্রীক সৈন্যরা যথাসম্ভব প্রতিরোধ করলেও কয়েক ঘন্টা পরই রোমানিয়ান শক্তপোক্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ সৈন্যের সামনে দূর্বল হয়ে পড়ে তারা। যার ফলে রোমানিয়ান সৈন্যরা গ্রীক সৈন্যদের প্রতিরোধ ভেঙে গ্রীকে প্রবেশ করে সীমান্ত অঞ্চলের সকল শহরগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ড, লুটপাট সহ নারীদের দাস হিসেবে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ইতিমধ্যে। গ্রীকের পরাজয়ের আভাস স্পষ্ট।

কাস্টোরিয়ার এক লঙ্গরখানার অন্দরমহলে অবস্থান করছে ১৭ জন নারী এবং বাচ্চারা। সকলের চেহারায়ই ভয়ের ছাপ ফুটে আছে। যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও বিচলিত মন কু ডাকছে । লিয়াম ঘুমিয়ে আছে অফিলিয়ার কোলে মাথা রেখে। তার পাশেই আনাস্তাসিয়া বসে আছে। হাতে তার তলোয়ার। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সকলকে দেখছে। সকলেই সারাদিন বসে থেকে ক্লান্ত। কেউ স্বামীর চিন্তায় তো কেউ ছেলের চিন্তায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে। তারা সকলে মিলে একসাথে এখানে অবস্থান করছে যেন তাদের গ্রামে আক্রমণ হলেও সকলে একসাথে মোকাবেলা করতে পারে। রাত হয়েছে অনেক। আনাস্তাসিয়ার তৃষ্ণা পায় প্রচুর। তাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। একপাশে থাকা কলসি থেকে গ্লাসে করে পানি তুলে নেয় খাওয়ার জন্য। তখনই দরজা খুলে একজন মহিলা দৌড়ে ভিতরে প্রবেশ করে বলে,

” প্রস্তুত হও সকলে। রোমানিয়ান সৈন্যরা আক্রমণ করতে এসেছে। ”
তখনই পিছনে একজন রোমানিয়ান সৈন্য প্রবেশ করে সেই মহিলার পিঠে তলোয়ার চালায়। মহিলার দেহ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ লঙ্গরখানার অন্দরমহলে চেচামেচি লেগে যায়। ঘুমন্ত বা আধ ঘুমন্ত বাচ্চারা জেগে উঠে। পরপর যুদ্ধের পোশাক পরিহিত কতগুলো সৈন্য ভিতরে প্রবেশ করে আক্রমণ শুরু করে। আনাস্তাসিয়ার হাত থেকে গ্লাস পড়ে যায়। তাড়াতাড়ি তলোয়ার হাতে এগিয়ে যায়। একটি সৈন্য অফিলিয়া এবং লিয়ামের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই আনাস্তাসিয়া পিছন থেকে এসে তার উপর তলোয়ার চালায়। আরো দুজন সৈন্য সেদিকে এগিয়ে আসতে নিলেই আবারও সে তলোয়ার নিয়ে প্রতিরোধ করতে যায়। কিন্তু হঠাৎ পিছন হতে অন্য সৈন্য তলোয়ারের হাতল দিয়ে তার ঘাড়ে শক্ত করে আঘাত করলে লুটিয়ে পড়ে সে।

চোখেমুখে চারিদিক ঝাপসা হয়ে উঠে। হাতের তলোয়ার পড়ে যায়। ধপ করে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে আনাস্তাসিয়া। অফিলিয়া আর লিয়ামের তার নাম ধরে চিৎকার করার আওয়াজ ভেসে আসে কানে। মুহূর্তেই নিজেকে শূণ্যে অনুভব করে। এক সৈন্য তাকে কাধে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আধখোলা চোখে দেখতে পায় সম্পূর্ণ অন্দরমহলে আট দশটা লাশ নিচে পড়ে আছে। রক্তের সাগর বেয়ে যাচ্ছে সম্পূর্ণ মেঝেতে। দু একজন নারী এখনও সৈন্যদের প্রতিরোধের বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হাহাকার আর আর্তনাদের ধ্বনিতে কাস্টোরিয়া বিষাক্ত হয়ে উঠে। তার পাশেই অফিলিয়া আর লিয়াম দৌড়ে আনাস্তাসিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই একজন সৈন্য অফিলিয়াকে টেনে নিচে ফেলে দেয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার পেটে তলোয়ার চালায়।

পাশে থাকা লিয়াম জোরে শব্দ করে কেদে উঠে। সেই সৈন্যকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে নিজের গ্র্যানির কাছ থেকে। কিন্তু এতে সেই সৈন্য আরো ক্ষেপে যায়। উঠে তেড়ে আসে লিয়ামের দিকে। আনাস্তাসিয়া চোখের সামনে দেখে তার গ্র্যানির দেহের পাশেই সেই সৈন্য হায়নার মতো তেতে উঠে তার ছোট ভাইয়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। লিয়ামের মুখ চেপে ধরে তার গলায় ছুড়ি চালায়। হাত পা ছটফট করতে করতে ধীরে ধীরে ছোট্ট দেহটি নিথর হয়ে পড়ে রয়।

সম্পূর্ণ দৃশ্যটির সাক্ষী হয় আনাস্তাসিয়া। অস্ফুটে কিছু একটা বলতে নিলে অনুভব করে মাথার পিছনে নিচের দিকে চিন করে উঠেছে। অব্যক্ত মুখের আহাজারি চোখ দিয়ে নোনাজল আকারে বেরিয়ে আসে। চারিদিকটা মুহূর্তেই ভারী হয়ে উঠে। আনাস্তাসিয়ার সমগ্র দেহ অচেতন হয়ে পড়ে। চোখের সামনে পরিবার হত্যার দৃশ্য দেখে হৃদয় পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ধীরে ধীরে আধখোলা চোখ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আসে। চেতনা হারিয়ে ফেলে সে।

কক্ষে থাকা ক্রুশটির সামনে একটি মোম জ্বালিয়ে তার সামনে হাত জোর করে বসে আছে ক্যাথরিন। প্রার্থনা করছে ঈশ্বরের কাছে নিজের পরিবারের জন্য। কাল থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার খবর পেতেই সারাদিন কক্ষে বসে প্রার্থনা করছে। শুধু একটি খবরের অপেক্ষায় আছে সে। যেন গ্রীক সৈন্যরা রোমানিয়ান সৈন্যদের হারাতে পারে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে পাশ ফিরতে নিলে মোমটি ক্যাথরিনের হাতের সাথে লেগে মেঝেতে পড়ে নিভে যায়। সে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যায় লোল্যান্ডার কাছে। উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করে,

” কোনো খবর পেয়েছ? ”
লোল্যান্ডা আশাহত গলায় জবাব দেয়,
” গ্রীক সম্রাট হার্মস আত্মসমর্পণ করে দিয়েছে ক্যাথরিন। গ্রীক এখন রোমানিয়ার দখলে। ”
ক্যাথরিন নিশ্চুপ হয়ে যায়। মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে ফিরে বলে,
” তুমি এখন আসতে পারো। আমি একা থাকতে চাই। ”
লোল্যান্ডা বুঝতে পারে ক্যাথরিনকে এখন একা থাকতে দেওয়াই উত্তম। বেরিয়ে যেতে নেয় সে। দরজার কাছে আরোণকে দেখে তাড়াতাড়ি মাথা নত করে বেরিয়ে যায় কক্ষ থেকে। আরোণ নিশব্দে কক্ষে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ক্যাথরিন পিছনে ফিরে তাকায়। শান্ত কণ্ঠে বলে,

” একা থাকতে চাই আমি। ”
এটুকু বলেই পা বাড়িয়ে বারান্দায় চলে যায় সে। আরোণও পিছন পিছন আসে ক্যাথরিনের। আবারো পিছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করতেই ক্যাথরিন রেগে পিছনে ফিরে বলে,
” যাচ্ছো না কেন তুমি? ”
আরোণ ধীর স্বরে বলে,
” তোমার সামনেই আছি আমি। ক্ষোভ মনে চাপিয়ে না রেখে প্রকাশ করে ফেলো। ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির মতো ক্যাথ। একসাথে মনে জমতে জমতে এক সময় লাভার ন্যায় বেরিয়ে আসে। তখন তা সব ভস্ম করে দেয়। ”
” আমি চাই সব ভস্ম হোক। আমি চাই তুমি ধ্বংস হও। এই রোমানিয়ান সাম্রাজ্য ধ্বসে যাক। ”
আরোণ আরো ধীর স্বরে বলে,

” পূরণ হোক তোমার চাওয়া। তবুও নিজের প্রতি এতো কঠিন হয়ো না। রাগ,জিদ,কষ্ট কিছুই চাপিয়ে রেখো না। ”
ক্যাথরিন কিছুক্ষণ নিশ্চুপ চেয়ে থাকে আরোণের পানে। তারপর এক দু কদম বাড়াতে বাড়াতে প্রশ্ন করে,
” কি চাও তুমি? নিজের জানোয়ার সত্ত্বাকে খোলসের আড়ালে ঢেকে মনুষ্যত্বের চাদর কেন গায়ে জড়ানোর ভান করছো? কি প্রমাণ করতে চাইছো তুমি? আমাকে বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো না তুমি? তাহলে কেন এই সূক্ষ্ম ভালো মানুষের অভিনয় করছো? ”
” আমি কিছুই আড়াল করছি না। আমি স্পষ্ট স্বীকার করছি আমি জানোয়ার। ”
রাগ হয় ক্যাথরিনের। সকল রাগ, জেদ, কষ্ট অশ্রু হয়ে বেড়িয়ে আসে। দু হাতের সাহায্যে আরোণের বুকে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে,

” অসহ্য লাগছে সবকিছু আমার। আমার বোন, ভাই, গ্র্যানি সকলে সেখানে যেখানে তোমার রাজ্যের সৈন্যরা হামলা করেছে। তারা বেঁচে আছে নাকি এই সম্পর্কেও নিশ্চিত নই আমি। তোমার রাজ্যের মাটিতে আমি এই মুহুর্তে আছি এটা ভাবতেও ঘেন্না লাগছে আমার। ”
এটুকু বলে কাদতে কাদতে মেঝেতে বসে পড়ে ক্যাথরিন। আরোণ হাঁটু ভেঙে ক্যাথরিনের সামনে বসে তাকে আলগোছে বুকে নিয়ে নেয়। ক্যাথরিন সড়িয়ে দেয় না আরোণকে। উল্টো তার একহাত জড়িয়ে তার বুকে মাথা রেখেই কাদতে থাকে। আপাতত তার হুশ নেই। কাদতে কাদতে বলতে থাকে,

” বিষাক্ত তুমি। বিষাক্ত তোমার ভালোবাসা। ”
আরোণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
” আমি জানি ক্যাথ। ”
নিচে প্রাসাদের সামনের আঙ্গিনা হতে ক্রিয়াস এবং লোল্যান্ডা সেই দৃশ্য দেখছিলো। লোল্যান্ডা হালকা হেসে বলে,
” আলফার পক্ষেই একমাত্র সম্ভব এই মুহুর্তে ক্যাথরিনের রাগ সহ্য করা। ”
ক্রিয়াস কিছু না বলে নিশ্চুপ ক্যাথরিনের বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকে। লোল্যান্ডা ক্রিয়াসকে নিশ্চুপ দেখে আবার বলে,

” ভালোবাসেন আলফা ক্যাথরিনকে। ”
ক্রিয়াস লোল্যান্ডার দিকে তাকিয়ে বলে,
” ভালোবাসা নয় নির্বোধ মেয়ে। মরণ ফাঁদ এটা কেবল। মানুষ আর নেকড়ের মাঝে কখনোই ভালোবাসার সম্পর্ক স্থায়ী হতে পারে না। প্রকৃতির নিয়মের বিপক্ষে এটা। আর প্রকৃতির বিপক্ষে যেয়ে করা যেকোনো কাজের ফলাফলই ভয়াবহ হয়। ”
লোল্যান্ডা বলে,
” যে ভালোবাসার পরিণতি ভয়াবহই হবে সেই ভালোবাসা তাহলে কেন হয়? ”
ক্রিয়াস তাকিয়ে থাকে লোল্যান্ডার দিকে। এর উত্তর কি দিবে সে? এর উত্তর তো তারও জানা নেই। ভালো তো সে ও বেসেছিল। আজও বাসে। তার পরিণতি যাই হোক না কেন সেই ভালোটা সে কেন বেসেছিল তার উত্তর তার নিজের কাছেও নেই। হয়তো ভালোবাসা এতো বলে কয়ে হয় না। শুধু হয়ে যায়।

ধীরে ধীরে হুশ ফিরে আসতেই আনাস্তাসিয়া নিজেকে অন্ধকারের গহীনে আবিষ্কার করলো। সর্বপ্রথম সে উপলব্ধি করলো তার অনেক তেষ্টা পেয়েছে। কিন্তু চারিদিকে এতো ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সে। কোথায় আছে সে? সে ও কি মারা গিয়েছে? এটা কোন দুনিয়া? এসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা করতে করতে ধীরে ধীরে উঠে বসে সে। সাথে সাথেই মাথার পিছনে ঘাড়ে হাত দেয় সে। চিনচিন করে ব্যথা করছে ঘাড়ের পিছনে। আনাস্তাসিয়া কিছুক্ষণ ঘাড়ের পিছনে হাত দিয়ে চোখ বুজে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে থাকে।

ধীরে ধীরে তার মনে পড়ে সব। গ্র্যানি আর লিয়ামের মৃত্যুর দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। চোখ খুলে ফেলে সে। অন্ধকারে হাতড়ে কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করে উঠে। লিয়াম আর গ্র্যানির নাম ধরে ডেকে কাদতে থাকে। তার মনে হয় এই বুঝি তারা তার ডাকের সাড়া দিবে। কিন্তু তাকে আশাহত করে তারা ডাকের সাড়া দেয় না। উল্টো হঠাৎ হালকা আলো জ্বেলে উঠে। একজন লম্বা কালো আলখেল্লা পরিহিত লোক লণ্ঠন হাতে এগিয়ে আসে। লণ্ঠনের আলোয় আনাস্তাসিয়া বুঝতে পারে সে এক কারাগারে আছে এই মুহুর্তে। আলখেল্লা পরিহিত সেই লোক চেচিয়ে বলে উঠে,

” এই মেয়ে। চেচিয়ে দূর্গ মাথায় তুলছো কেন? কাউন্টের কানে শব্দ গেলে এসে জীবন নিয়ে নিবে। ”
আনাস্তাসিয়ার কান দিয়ে কোনো কথা যায় না। লণ্ঠনের আলোয় একবার নিজেকে দেখে নেয়। গায়ে এখনো সেই একই আকাশি রঙের গাউন। কিন্তু ময়লা হয়ে এটার রঙ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। সেই লোকটা আবারও চেচিয়ে উঠে,
” এই মেয়ে। কথা কানে যায় না? ”
আনাস্তাসিয়া কিছু বলার পূর্বেই সেই বদ্ধ কারাগারের সামনে আরেকটি লোক আসে। এই লোকও কালো ম্যাডিভাল শার্ট পড়া। লোকটি এসে এক দন্ড আনাস্তাসিয়াকে দেখে নিয়ে কালো আলখেল্লা পরিহিত লোকটিকে বলে,
” এই মেয়ে গ্রীক হতে এসেছে। রোমানিয়ান ভাষায় এর সাথে কথা বলে লাভ নেই। আমাদের ভাষা বুঝবে না। ম্যাথিউ যেকোনো সময় দূর্গে ফিরে আসবে। তার আগে এই মেয়েকে খাওয়ার জন্য কিছু দাও। নাহলে এই অবস্থায় একে ম্যাথিউর কাছে নিয়ে গেলে এর দিকে ফিরেও তাকাবে না সে। ”
কালো আলখেল্লা পরিহিত লোকটা বলে,

” কোভেন ম্যাথিউ এই মেয়েকে পেয়ে খুব খুশি হবেন। ”
অপর লোকটা একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
” দাস বাজারে এই মেয়ের দামই সবথেকে বেশি ছিলো। আশেপাশে কয়েক বুড়ো লোকও এই মেয়েকে দেখে উপচে পড়েছিল কিনে নেওয়ার জন্য। অবশ্য দেখতে বেশ লোভনীয় লাগছিল। গ্রীক সৌন্দর্য বলে কথা। কৃষ্ণসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছে এখানে। ”

আরো কিছু কথা বলতে বলতে লোক দুটো সেখান থেকে প্রস্থান করে। আনাস্তাসিয়া এতক্ষণ ধরে চুপচাপ সব শুনছিলো। কিন্তু দাস বাজারের সেই ঘটনা শুনতেই তার কান্না বন্ধ হয়ে যায়। গ্রীক থেকে ওই বর্বররা তাকে তুলে এনে দাস বাজারে বিক্রি করে দিয়েছিলো? সে এখন একজন দাসী হিসেবে এখানে আছে। আর কার কাছে তাকে পাঠাবে এরা এই রাতে করে? ঘুটঘুটে অন্ধকারে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে মেঝেতে আনাস্তাসিয়া। এ সে কোথায় এসে পড়লো! এর থেকে ভালো ছিলো সেই বর্বররা তাকেও তার পরিবারের সাথে মেরে ফেলতো। আসন্ন বিপদ নিয়ে চিন্তা করবে নাকি পরিবার হারানোর শোক কাটাবে কিছুই বুঝতে পারছে না আনাস্তাসিয়া। কিন্তু মনে মনে ঠিক করে দরকারে নিজেকে শেষ করে দিবে সে তবুও কারো দাসী হিসেবে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন দূর্গে কখনোই জীবন পার করবে না সে।

হাতে ও পায়ে শিকল বেধে আনাস্তাসিয়াকে সেই কারাগার থেকে টেনে বের করে আনে সেই কালো আলখেল্লা পরিহিত লোকটা। সেই বদ্ধ অন্ধাকারাচ্ছন্ন কারাগার হতে বেরিয়ে সিড়ি ঘড় হয়ে উপরে উঠে আসতেই দেখে এই দূর্গ সম্পূর্ণ কালো রঙের। কালো পাথরের তৈরি এই দূর্গকে দেখে যে কেউ মনে করবে এতে নিশ্চিত প্রেতাত্মারা বসবাস করে। কিছুটা পথ পেরিয়ে আরেকটা সিড়ি ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় তারা। তখনই সেখানে আরেকটি কালো আলখেল্লা পরিহিত লোক এসে আনাস্তাসিয়ার পাশের লোকটাকে ডেকে নিয়ে যায়। লোকটি যাওয়ার আগে ইশারায় আনাস্তাসিয়াকে বুঝিয়ে যায় যেন এখান থেকে এক কদমও না নড়ে।

লোকটা চোখের আড়াল হতেই আনাস্তাসিয়া নিজের হাতের ও পায়ের শিকলের দিকে তাকায় একবার। হয় এই মুহুর্তে সে উপরে গিয়ে আজীবনের জন্যে দাসীর মতো জীবন পার করবে আর নাহয় সে নিজেকে মুক্তি দিবে এসব থেকে। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় আনাস্তাসিয়া। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে। পাশে একটা লম্বা হলওয়ে দেখে সেদিকে হাঁটা শুরু করে। হাতে পায়ে শিকল নিয়ে হাঁটতে এভাবেই বেশ কষ্ট হচ্ছিলো তার। তবুও কোনমতে হেঁটে সামনে যেতে থাকে। হঠাৎ একটা দরজার ভিতরে একটি কণ্ঠস্বর শুনে থমকে দাঁড়ায় সে। এই কণ্ঠস্বর তার পরিচিত। আগেও শুনেছে সে। সে ধীরে ধীরে দরজার কাছে এগিয়ে এসে কানপাতে আরেকবার সেই কণ্ঠ শুনার জন্য। কিন্তু দরজা ভিতর থেকে লাগানো ছিলো না। ফলে অসাবধানবসত দরজায় ঠেক দিতেই সাথে সাথে দরজা খুলে ভিতরের দিকে পড়ে যায় আনাস্তাসিয়া।

মহাপ্রয়াণ পর্ব ১৯+২০

ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকায় সে। বিশাল হলরুমের দু পাশে অনেকজন পুরুষ ও মহিলা বসে আছে। তাদের সকলের পরনেই কালো পোশাক। কিছুটা অদ্ভুত ও হিংস্র দৃষ্টিতে তারা আনাস্তাসিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আনাস্তাসিয়া ভয়ে জমে যায়। শেষমেশ কি তবে তার এই বর্বর রোমানিয়ানদের হাতে মরতে হবে? নাকি আজীবন এদের দাসত্ব করতে হবে? অবশ্য দাসত্বও তার কাছে মৃত্যু সমতুল্য। হঠাৎ আনাস্তাসিয়ার চোখ আটকায় হলরুমের মাঝে বসে থাকা সবুজ নেত্রপল্লবের এক জোড়া চোখের মাঝে। এক পায়ের উপর পা তুলে একটি লাল পানীয় বিশিষ্ট গ্লাস হাতে বসে আছে সে। চোখেমুখে কিঞ্চিৎ বিস্মিত ভাব। রিকার্ডো? আনাস্তাসিয়া একবার ভাবে সে সপ্ন দেখছে না তো? শিকলে বাধা দু’হাতে চোখ হালকা কচলে আবার সামনে তাকায়। না। এটা সপ্ন না। তার সামনে সত্যি সত্যি রিকার্ডো বসে আছে। আনাস্তাসিয়া এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। দূর্বল শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক কদম সামনে এগিয়ে যেতে যেতে অস্ফুটস্বরে বলে উঠে,
” রিক। ”

মহাপ্রয়াণ পর্ব ২৩+২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here