মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ১৫

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ১৫
নওরিন কবির তিশা

-না, না ,না একদমই না।
-বাচ্চাদের মতন জেদ করিস না নুয়া।
-আমি একদমই বাচ্চাদের মতন জেদ করছি না।আমি ওই লোকের সাথে যেতে পারবো না।
-কেন??যেতে পারবি না কেন?? নাহিয়ান কি বাঘ নাকি ভাল্লুক??যে তোকে খেয়ে ফেলবে!! আর তাছাড়াও দুইটা গাড়িই আমাদের লাগবে। তাই তোর ভালোর জন্যই বলছি, তুই নাহিয়ানের সাথে বাইকেই চলে যা।

-উনি তার থেকেও বড় কিছু। আমি দরকার হয় শপিংয়েই যাব না তবুও উনার বাইকে করে যেতে পারবো না।
-আর একটাও কথা না নুয়া আমি বলছি যাবি মানে যাবি। এমনিতেই বাড়িতে অনেক লোকজন। তার উপর তোর এই অযথা জেদ। আমি আর কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।রেডি হ। তুই নাহিয়ান এর সাথেই যাচ্ছিস।
এ কথা বলেই শিশিরের রুম থেকে বের হয়ে গেল রোদেলা জামান। মায়ের বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শিশির ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল।
নাহিয়ান!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই একটা নাম শুনলেই যেন মনের ভিতর কোন অচেনা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সে কখনও হুট করে রেগে যায়, কখনও আবার মনে হয় চোখে চোখ রেখে কিছু একটা বলতে চাইছে। শিশির জানে না, এই ছেলেটাকে কী নামে ডাকে—বিপদ, না কি মুগ্ধতা?শিশির নিজের মনেই বলল,
“এই লোকটার সঙ্গে কোথাও গেলে, মনে হয় একবারে যেন যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছি!”
কিন্তু
এমনিতেই এত ঝামেলার মধ্যে বিয়েটা হচ্ছে তার উপর বাড়ি ভর্তি এত লোকজনের ভেতরে সেও চাচ্ছে না কোনরকম সিনক্রিয়েট করতে। তাই অগত্যা সে রেডি হতে চলে গেল।

সেদিন নওরীফা খানমদের বাসায় যাওয়ার পর শিশির আবে মাত্র ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যাবে এমন সময় শিশির বাবা কল দিয়ে বলে সে যেন দ্রুত নওরিফাদের সাথে নিয়ে তার মামা বাড়িতে চলে আসে। বিয়ে এই সপ্তাহর শেষে না হয়ে বরং আর মাত্র চার দিন পর। ইলমার বড়ভাই এই সপ্তাহেই ইতালি চলে যাবে তাই তার যাওয়ার আগেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে চায় ইলমার পরিবার। শিশির আর বেশি ভাবেনি। নওরিফা খানমকে নিয়ে সোজা রওনা দেয় মামাবাড়ি। ব্যস্ততা, তাড়াহুড়ো, সব মিলিয়ে সে আর মাথা ঘামায়নি নাহিয়ান নিয়ে। কিন্তু আজকের দিনটা আবার তার সামনে দাঁড় করিয়ে দিল সেই একই সমস্যাকে—নাহিয়ান।

শিশির রেডি হয়ে গেছে এসে দেখতে পায় সবাই শপিং এ চলে গেছে। শিশির কিছু না ভেবে উপরে যার জন্য সিঁড়িতে সবে পা দিতে যাবে তখনই পিছন থেকে নাহিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,,
-একটা দৃঢ়, অথচ ঠাণ্ডা কণ্ঠ—
“এতক্ষণ আমায় দাঁড় করিয়ে রেখে এখন আবার উপরে চলে যাচ্ছিস? আমায় দেখে কি তোর গাড়ির ড্রাইভার মনে হচ্ছে?”
শিশির ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল।
দেখে চোখ আটকে গেল।

নাহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে, কালো শার্ট পড়ে। প্রথম দুটো বোতাম খোলা, হাতা ফোল্ড করা। গায়ে একটা সহজ অথচ মারাত্মক আবেদন। গাঢ় রঙের শার্টের সঙ্গে তার ফর্সা ত্বক যেন আরও আলাদা করে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। চওড়া কাঁধ, নিখুঁত গঠন—আর সেই অনড়, নির্লিপ্ত চোখ।
যে চোখে কোনও প্রেম নেই, কিন্তু চাহনি একবার পড়লে অন্য কিছু ভাবার সময় দেয় না।
তার মুখের রেখাগুলো এতটাই শার্প, যেন কেউ শিল্পীর হাতে কেটে কেটে বানিয়েছে—হালকা দাঁড়ির রেখা গালের পাশ দিয়ে নেমে গেছে গম্ভীর সৌন্দর্যে। ঠোঁটে সেই চিরচেনা সংযত অভিব্যক্তি। না রাগ, না হাসি—শুধু একটি নিশ্চুপ দাবি।
শিশির ঠোঁট কামড়ে বলে,,

-আপনাকে কে দাঁড়াতে বলেছে??
নাহিয়ান চোখ সরাল না একটুও—
“আমি তোকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই। এখনই বল—নিজে ভালোয় ভালোয় যাবি, নাকি কোলে করে নিয়ে যাব?”
-মানে??
এরপর যা হলো, সেটা শিশির কল্পনাতেও আনেনি।
নাহিয়ান একটুও সময় নষ্ট না করে শিশিরকে কোলে তুলে নেয়। যেন ওজন নয়, আবেগ তুলে নিচ্ছে।
শিশিরের শরীর থরথর করে কাঁপে, মুখটা কঠিন হয়ে যায়, অথচ চোখে বিস্ময়ের ছাপ।সে তেজী গলায় চেচিয়ে বলে,,

-“কি করছেনটা কি?? ছাড়ুনা আমায়!!”
নাহিয়ান শিশিরের দিকে তাকিয়ে শান্ত তবে গম্ভীর স্বরে বলে,,
-“যদি আর একটা কথাও বলিস তাহলে এখানেই তোকে ফেলে দেব। মাইন্ড ইট ফেলে দিবো।”
শিশির আর কোন কথা বলে না। কারন সে ভালো করেই জানে এই ছেলেকে কোন বিশ্বাস নেই। তাকে ফেলে দিতে নাহিয়ানের একবার‌ও বাঁধবে না। তাই সে আর কোন কথা না বলে চোখমুখ খিজে পড়ে থাকলো নাহিয়ানের বুকে।
নাহিয়ান শিশিরের এমন বিরক্তি দেখে মনে মনে বলল,,
-“মাই ডিয়ার প্যারট। এ বুক সর্বদাই তোর জন্য। এখন যেমন আছে আগামীতেও সেরকমই থাকবে। পার্থক্য শুধু এটুকুই এখন তুই বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে আঁকড়ে ধরে আছিস আর কিছুদিন পর থাকবি ভালোবাসায়
এই নীরব বুক একদিন তোর পৃথিবীর একমাত্র শব্দ হয়ে দাঁড়াবে।”

-“তুমি আমার হৃদয়ের সুরভীত গন্ধরাজ,
বিকেলের ঝরে পড়া ফুলের মাঝেও সুসজ্জিত থাকা একগুচ্ছ বাগান বিলাস”
ছেলেটি কাঁপা গলায় পড়ে শোনায়। ফুয়াদ সামান্য গম্ভীর চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তার চিবুকের নিচে চিন্তার ছায়া। তারপর কপাল সামান্য কুঁচকে বলল—
-“হ্যাঁ, এইটা… এইটা একটু ঠিক লাগছে।”
ছেলেটা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তপ্ত রোদে ভিজে যাওয়া শরীরের ভেতরেও হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইয়ে দিল এই অনুমোদনের শব্দটা। ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে ভীত স্বরে ছেলেটি বলল,,
-“আচ্ছা ভাই তাহলে আমি যাই।”
ফুয়াদ একটু অন্যমনস্ক থেকে বলল,,
-“হুম যা।”
কিছুক্ষণ আগে

প্রায় তিন সপ্তাহ পর আজ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পা রাখল ফুয়াদ আহমেদ।
তিন সপ্তাহ—যেখানে অনেক কিছুই বদলে গেছে, অথচ ফুয়াদের ভেতরটা যেন ঠিক আগের মতনই রয়ে গেছে। কিংবা বদলেছে আরও বেশি—সে শুধু তা প্রকাশ করেনি।
প্রবেশ করেই এক ছেলেকে চোখে পড়তেই ডেকে বলল—
“এই যে তুই, এখানে আয় তো। একটা কাজ আছে।”
ছেলেটা অবাক চোখে এগিয়ে এলো।
“বলুন ভাই।”
“একটা কবিতা লিখে দিবি।
রোমান্টিক… কিন্তু টিপিক্যাল না।
গল্প থাকবে, সুর থাকবে, একটা গন্ধ থাকবে… বুঝলি?”
ছেলেটা মাথা দুলিয়ে বলল—

“জি ভাই। চেষ্টা করি।”
কয়েকটা লাইন, কয়েকটা ছন্দ, কিছু অক্ষরের বাঁধুনি…
একটার পর একটা কবিতা বলে গেল ছেলেটি। কিন্তু ফুয়াদের চোখে একটুও তৃপ্তির ছাপ নেই।
শেষমেষ এই কবিতাটি তার পছন্দ হলো।
বর্তমান 🌸🌸
ছেলেটি চলে যেতেই ফুয়াদের দলের একটা ছেলে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বাসিতগলায় জিজ্ঞাসা করল,,
একজন বলল—

-“ভাই, এই এত রোমান্টিক রোমান্টিক কবিতা—এতদিন তো আপনাকে দেখি। আপনি তো কোন কালেই কাব্যিক না!আমাদের জন্য ভাবি পছন্দ হয়েছে নাকি??”
ফুয়াদ ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,,
-“কি জানি??হয়েছে হয়তো!”
বাকি ছেলেরাও ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো।আরেকজন চোখ ছোট করে বলল—
-“কে সেই মহৎ নারী?? যাকে দেখে আমাদের ফুয়াদ ভাই কবিতারও প্রেমে পড়ে গেছে??”
ফুয়াদ জানালার বাইরের দিকে তাকালো। দুপুরের রোদের ঝিলিক যেন তার চোখে এসে পড়ে। কিন্তু সে চোখ সরাল না।
একটা হালকা হেসে, ধীরে ধীরে বলল—

-“মহৎ নারী বলিস?”
“উমম… মহৎ কিনা জানি না, তবে সে নিশ্চিত… আগুনের গোলা।
একদম নিখুঁত ভাবে অগোছালো।
ছুঁলেই পোড়াবে… তবু ছুঁতে ইচ্ছে করে বারবার…”
ছেলেগুলো একে অপরের দিকে তাকায়, তারপর আবার ফুয়াদের দিকে।
“ওহ হো… ভাই তো একেবারে প্রেমেই পড়ে গেছেন!
ফুয়াদ এবার একটুখানি হাসল, ঠিক সেইরকম একটা হাসি—
যেটার মানে কেউ বোঝে না…

“আয়নিন?”
পেছন থেকে ভেসে আসা গলার স্বরটায় কেঁপে উঠল আনায়ার মন। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতেই চেনা এক মুখ—রিদিত।
হালকা নীল শার্ট, হাতে কালো ঘড়ি, চুলগুলো এলোমেলো ভাবে স্টাইল করে রাখা। চোখে ছিল একরাশ বিস্ময়, আর ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি।
আনায়া হেসে জবাব দিল,

“জ্বী।”
রিদিত এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল,
“আপনি এখানে?!”
আনায়া হালকা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আসলে আপু আর ভাইয়ার সাথে এসেছিলাম।”
“ওহ, বুঝেছি…”
রিদিত সামান্য মাথা নাড়ল। যেন আরও কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু নিজের ভেতরেই শব্দগুলো হারিয়ে ফেলছে।
তখনই পিছন থেকে এক মেয়েলি কণ্ঠ,
“আয়ু!”
আনায়া পেছনে তাকিয়ে দেখে তার আপু তাকে ডাকছে।
সে রিদিতের দিকে ফিরে হালকা হাসল,

“আচ্ছা, তাহলে আমি যাই। আপু ডাকছে।”
রিদিত নরম কণ্ঠে বলল,,
“হুম, দেখা হবে…”
আনায়া চলে গেলে রিদিত কিছুক্ষণ তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকল।এরপর পাশের একজন ওয়াটারকে ডেকে কিছু একটা বলে। তারপর আবার তাকে সাবধান করে দিয়ে বলল,,
-“যা বললাম মনে থাকে যেন কোনো ত্রুটি যেন না হয়।”
ওয়েটার সম্মান দেখিয়ে মাথা নাড়ল,
“জ্বী স্যার, একদম ঠিক থাকবে।”
রিদিত হালকা মাথা নাড়ল, সানগ্লাসটা চোখে টেনে নিল আবার। তারপর হেঁটে চলে গেল তার স্টাইলে,
কিন্তু মনে মনে গুনগুন করছিল শুধু একটাই নাম—
“আয়নিন।”

—“এত কিছু কিনেছিস তুই??”
শিশিরের সামনে রাখা শপিং ব্যাগগুলোর দিকে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। বাকরুদ্ধ, বিস্ময়ে ভরা একেকটা মুখ যেন বলছে—‘এত কিছু! কে কিনেছে এগুলো?’
শিশিরের হাতে ঠাসা ঠাসি করা শপিং ব্যাগ, তার শরীরজুড়ে অনিচ্ছা আর মুখ জুড়ে একরাশ অস্বস্তি। মাথা নিচু করে সে দাঁড়িয়ে রইল কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে।
কিন্তু শিশির জানে, এই ব্যাগগুলোর একটাও সে নিজের ইচ্ছায় কেনেনি। যা কিছু তার হাতে আছে, সবই নাহিয়ানের সিদ্ধান্তে কেনা। সে শুধু তাকিয়েছিল—অবাক হয়ে, মুগ্ধ হয়ে। কখনো ছুঁয়ে দেখেছিল এক আধটা, আর সেসবই নাহিয়ান অর্ডার করেছিল মুহূর্তের মধ্যে।তবে
কি সে কিছু বলেওনি?
বলে তো ছিল… বারবার।

“আপনি এগুলো কেন নিচ্ছেন?” — বলেছিল সে।
“আমি তো দেখছিলাম শুধু। কিনতে তো বলিনি…” — বলেছিল।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? নাহিয়ান চৌধুরী শোনে না। সে শুধু নিজের মতো চলে, নিজের মত সিদ্ধান্ত নেয়। আর বাকিরা চেয়ে চেয়ে দেখে। যেমন এখন দেখছে—
নাহিয়ান, কালো শার্টে আবৃত, যার সামনের বোতাম দুটো খোলা, আর হাতার অংশ ভাঁজ করে তোলা। উঁচু হয়ে থাকা কলার আর কনফিডেন্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি যেন একটা চরিত্র, যার সামনে বাকিদের অস্তিত্ব ফিকে হয়ে যায়।

সবাই তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। শিশির ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠছে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। লজ্জায় জিভ যেন গিলে ফেলেছে নিজেকে।
হঠাৎ করেই নাহিয়ান ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো—
— “তোমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে শপিং এর থিসিস জমা দিবা? কার কী লাগছে, কী কিভাবে কেনা হলো এসব গবেষণা করার মতো আমার হাতে একটুও সময় নেই। আমার আজকের দিনটা এমনিতেই নষ্ট হয়ে গেছে।”
তার কণ্ঠে ছিল কেমন যেন বিরক্তির ছোঁয়া। আশেপাশে যারা ছিল, তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হালকা অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
নাহিয়ানের মা, কণ্ঠে রাগ টেনে বললেন—

“নাহিয়ান, তুই যদি চলে যাস তাহলে শিশিরকে কে নিয়ে যাবে? আসার সময়ই তো জায়গা হচ্ছিল না, এখন আবার শপিংয়ের এত জিনিসপত্র! এগুলো কি আমি মাথায় করে নিয়ে যাবো??”
“তো আমি কি করব? তোমরাই তো দাঁড়িয়ে গসিপ করতেছ।
এই তীব্র উত্তপ্ত মুহূর্তে হঠাৎই রোদেলা জামান শান্ত গলায় বললেন—
— “আচ্ছা বাবা, নাহিয়ান, তুমি বরং শিশিরকে নিয়ে আগে যাও। আমরাও পরে আসছি। আর রাগ করো না, প্লিজ।”
নাহিয়ান তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা শান্ত হয়ে বলল—
— “আচ্ছা আন্টি।”

এরপর শিশিরকে ইশারা করে পার্কিংয়ের দিকে হাঁটা দিলো সে। শিশির পিছু পিছু এগোলেও তার মনে তখনো তীব্র অস্বস্তি। পার্কিং এ গিয়েই সে গর্জে উঠল—
— “আপনাকে কে বলেছিল এইসব জিনিসপত্র কিনে দিতে??”
নাহিয়ান একটুও না ঘাবরে, নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল—
— “আমার ইচ্ছা হয়েছে, তাই কিনেছি।”
শিশির ঠোঁট কামড়ে ধরে, তারপর গলা উঁচিয়ে বলে—
“আপনার ইচ্ছা হয়েছে তাই আপনি দিয়েছেন—কি সুন্দর যুক্তি না? তাহলে একটু আগে সবাই যখন আমাকে জেরা করছিল তখন আপনি কোথায় ছিলেন? তখন তো মুখে টুঁ শব্দ করেননি, দাঁড়িয়ে ছিলেন যেন কিছুই জানেন না।”
নাহিয়ান এবার কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। এরপর হালকা হাসল, চোখে একরাশ রহস্য নিয়ে বলল—
“ওটার উত্তর তোকে এখন দিচ্ছি না, কিছুদিন পরেই দিচ্ছি…আপাতত এখন চুপ করে বাইকে ওঠ, না হলে সকালে কী হয়েছিল ভুলে গেছিস মনে হচ্ছে।”

সকালের কথাটা মনে হতেই শিশিরের মুখ থমথমে হয়ে গেল। এক মুহূর্তেই চুপচাপ গিয়ে বসল নাহিয়ানের বাইকের পিছনে।অভিমান জমে আছে বুকের কোণে, কিন্তু সে জানে—এই মানুষটার সামনে বেশি কিছু বলা আর নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা।
আর অন্যদিকে নাহিয়ান তার দিকে না তাকিয়ে, কাঁচের রিফ্লেকশনে তার অভিমানে ভরা মুখটা দেখে মনে মনে বলল,,

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ১৪

“এই অভিমানের শিশিরই আমার সবচেয়ে প্রিয়।
রাগে তোর চোখ যখন জলেভেজা, ঠোঁট কাঁপে অভিমানে,,
তখন তোকে দেখায় ঠিক রক্তলাল রক্তজবা
যেন গর্বে মোড়া আগুনে ।
তোর এই ছোট ছোট অভিমানগুলোই আমার ভালোবাসার সবচে বড় সৌন্দর্য…
তুই বুঝিস না, কিন্তু আমি তো তোর প্রতিটা অভিমানেই আরও একবার প্রেমে পড়ে যাই।”

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ১৬