মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২২ (২)

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২২ (২)
নওরিন কবির তিশা

রেডি হয়ে নিচে নামতেই শিশির দেখতে পেল, ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছেন তার বাবা-মা ও ফুফু। ফুফুর সামনে পড়ার কোনো ইচ্ছে নেই শিশিরের‌। তাই পিছন দিয়ে নিঃশব্দে চলে যাচ্ছিল সে। কিন্তু দরজার কাছাকাছি যেতেই বাবার গলা ভেসে এলো,,
— “কোথায় যাচ্ছিস, মামনি?”
শিশির পিছন ফিরে কিছু বলার আগেই ফুফু, শিরিন শাহ, বললেন তীক্ষ্ণ কণ্ঠে—
— “ওকে কিছু বলছিহ কেন, সিকদার?দেখছিস না, আমার সাথে কথা না বলার জন্যই নিঃশব্দে পিছন দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে!”
শিশির তার স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,

— “আমি কেন কথা বলতে চাইবো না, ফুপ্পি?তুমিই তো বরং আমার সঙ্গে কথা বলো না!”
শিশিরের এই সোজাসাপ্টা কথায় শিরিন শাহ মুখ গোমড়া করে বললেন,
— “দেখেছো? মেয়ের মুখের কথা?বড়দের সম্মান দিতে জানে না—উল্টো মুখের ওপর কথা বলে।এই জন্যই রোদেলাকে বলি, মেয়েকে এত আস্কারা দিও না!”
রোদেলা জামান নরম গলায় বললেন,
— “আপা, ও একটু এরকমই…”
তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— “এটা কী, নুয়া?তুমি ফুপ্পির সঙ্গে কথা না বলে বেরিয়ে যাচ্ছিলে কেন?আর এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছ?”
শিশিরের কিছু বলার আগেই ফুফু আবারও বললেন,
— “ও একটু ওইরকম মানে?কি বোঝাতে চাইছো তুমি, রোদেলা?বড়দের সম্মান করবে না? তাই তো বলেছিলাম, আমার ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও—একেবারে শাসন করে ঠিক করে দেব!”
রোদেলা জামান এবার সামান্য গম্ভীর হয়ে বললেন,
— “না আপা, আমার মেয়েকে শাসন করতে হলে আমি নিজেই পারি।আর সবচেয়ে বড় কথা, আমার মেয়ে বড়দের ঠিকই সম্মান করে।”
শিরিন শাহ এবার একটু চটেই বলে উঠলেন,

— “মানে তুমি কী বোঝাতে চাইছো রোদেলা? এই তোমার মেয়ের সম্মানের নমুনা?”
এই তীব্র মুহূর্তের মাঝে সিকদার শাহ শান্ত গলায় বললেন,
— “তোমরা এখন নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করবা নাকি?আমি তো শুধু জানতে চাইলাম, নুয়া কোথায় যাচ্ছে—তাকে অন্তত দুটো কথা বলতে দাও।”
বাবার কণ্ঠে হালকা অনুযোগ শুনে শিশির ধীরে বলল,
— “বাবা-মা, আমি নওরিফা আন্টির বাসায় যাচ্ছি।সকালে আমার কিছু জরুরি জিনিস নেওয়ার ছিল, তাই এসেছিলাম।এখন আমাকে যেতে হবে, আন্টি অনেক অসুস্থ।”
শিশিরের কথা শুনে সিকদার শাহ মাথা নেড়ে বললেন,

— “আচ্ছা মা, তুমি যাও।”
তারপর আনোয়ার সাহেবকে ডাকলেন,
— “আনোয়ার, তুমি মামণিকে নওরিফাদের বাসায় পৌঁছে দাও।আর সাবধানে যেও।”
আনোয়ার সাহেব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নেড়ে বললেন,
— “আচ্ছা ভাই, আমি মামণিকে নিরাপদেই পৌঁছে দেব।”
আনোয়ার সাহেব বেরিয়ে গেলেন।শিশিরও তার বাবা-মাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে যায় দরজা পেরিয়ে।

আনায়া.??
একটা পরিচিত কণ্ঠস্বরে আনায়া পিছন ঘুরে দেখল তার ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে সাইফ। তাকে দেখে আনায়া বলল,,
কিছু বলবি?
তুই এখানে?
সাইফের এমন কথায় আনায়া মুচকি হেসে বলল,
আরে।আপু এই রোডের একটা মেয়েকে পড়াতো। কিন্তু বিয়ের পর ভাইয়া আপুকে পড়াতে বারণ দিয়েছে।আর মেয়েটার সামনে এসএসসি এক্সাম। এজন্যই আপু আমাকে বলল পড়িয়ে দিয়ে যেতে। তাই আসলাম। কিন্তু তুই এখানে?
একটা ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি। সকাল থেকে কতবার কল দিলাম,ধরল না। তাই।
ওওহ আচ্ছা।

আনায়ার সাথে কথা বলতে বলতে সাইফ সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
আচ্ছা তাহলে তুই যা ওই তো চলে এসেছে ওর বাসা।
আচ্ছা।
সাইফ মাথা নেড়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল।সাইফ চলে যেতেই আনায়া নিজের বাসার পথ ধরল নিঃশব্দে।চারপাশে সন্ধ্যার আলো ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছিল।রাস্তার বাতিগুলো জ্বলে উঠছিল একে একে।ঠিক তখনই, পেছন থেকে ভেসে এলো একটানা হর্নের শব্দ।আনায়া একটু পাশে সরে দাঁড়াল।কিন্তু তাতে হর্ন থামল না বরং বেড়েই চলল।আনায়া এবার বিরক্ত গলায় বলল,,
— “আরে, কী সমস্যা আপনার?পাশে তো সরে দাঁড়িয়েছি, তাও এত হর্ন কেন?”
কথাটা বলতে বলতে পিছন ঘুরেতেই আনায়া দেখতে পায় গাড়ির ভেতরে বসে আছে রিদিত।রিদিতকে দেখেই আনায়ার মুখটা মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে গেল।একটাও কথা না বলে, দ্রুত পা চালিয়ে সামনে এগিয়ে গেল সে।অন্যদিকে রিদিত জানালার কাঁচে কনুই রেখে তাকিয়ে থাকল আনায়ার দিকে।তার ঠোঁটে হালকা এক নিঃশব্দ হাসি, চোখে একরাশ বিস্ময় আর মুগ্ধতা।সে মনে মনে বলল,

— “ও আয়নিন!তুমি কতটা বোকা, জানো?
যেখানে আমার মনের সবচেয়ে নিরাপদ দরজায় কেউ কোনোদিন ধাক্কা দেয়নি—সেখানে তুমি নিঃশব্দে এসে দখল নিয়েছো।আর এখন ভাবছো, ওই ছোট ছোট পা টেনে আমার দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবে?হাহ… এমন ভাবনা ভাবাই তোমার সবচেয়ে বড় ভুল।”
রিদিত গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দিল।আনায়া যত দ্রুত হাঁটছিল, ততটাই দ্রুত রিদিত তাকে ছুঁয়ে ফেলল।গাড়ি নিয়ে একদম তার সামনে এসে দাঁড়াল।গাড়ির হেডলাইটে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা আনায়ার মুখে পড়ল হালকা আলো।তাতে তার চোখদুটো আরও বেশি গভীর দেখাল রিদিতের চোখে।আনায়া দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুখে বলল,

— “আবারও?কি সমস্যা আপনার??”
রিদিত জানালার কাঁচ নামিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল তার চোখে। তারপর এক নিঃশ্বাসে বলল,
— “গাড়িতে উঠো আয়নিন।সব কথা গাড়ির ভেতরেই হবে।রাস্তার উপর এই সিনক্রিয়েট করো না প্লিজ।”
রিদিতের এমন কথা শুনে আনায়া এবার একটু চটে গিয়ে বলল,
— “আমি কেন আপনার গাড়িতে উঠতে যাব?আর রাস্তার উপর সিনক্রিয়েট আমি করছি নাকি আপনি করছেন?এক্ষুনি আমার পথ ছাড়ুন, না হলে কিন্তু আমি চিৎকার করতে বাধ্য হবো!”
আনায়ার এমন হুমকিতে রিদিত ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে জানালার কাঁচ নামাল।চোখ নামিয়ে নয়, চোখে চোখ রেখে বলল—

— “চিৎকার?আহা, কী সুন্দর হবে জানো?
তুমি চিৎকার করবে, সবাই ভাববে আমি তোমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছি,তোমাকে বিরক্ত করছি… তোমার ক্ষতি করতে চাইছি।তারপর একে একে একশো জন জড়ো হয়ে যাবে… কেউ বিচার চাইবে, কেউবা সমাধান।
আর যদি দেখা যায়… এই ঝগড়া থেকেই তাদের মধ্যে থেকে কেউ বলে ফেলল’তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিলেই সব মিটে যায়।’ উফফফ তাহলেতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আমার তো লাভই, তাই না?চিৎকার করো না প্লিজ…
কারণ আমি এমন সুযোগগুলো হাতছাড়া করতে পারি না।”
রিদিতের এমন কথায় আনায়ার চোখ রাগে জ্বলতে লাগল।
চোয়াল শক্ত করে বলল,

— “এসব বাজে কথা বন্ধ করুন।আর আমার পথ থেকে সরে যান।”
— “যদি না সরি, তাহলে?”
আনায়া রাগে আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে রাস্তার অন্য দিক ঘুরে যেতে চাইল।কিন্তু রিদিত যেন আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল—সে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আনায়ার সামনে এসে তার কব্জি চেপে ধরল।রিদিতের এমন আচমকা স্পর্শে ফুস করে উঠে আনায়া। আনায়া ফুস করে ওঠে।নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ধস্তাধস্তি শুরু করে সে ,
এক ঝাঁকুনিতে মুক্ত করতে চায় নিজের হাত—কিন্তু রিদিতের শৈল্পিক শরীরের মজবুত গ্রিপের কাছে।তার ক্ষীণ দেহ যেন এক অবুঝ প্রতিবাদ মাত্র।
রিদিত স্থির দৃষ্টিতে তার চোখে তাকিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,,,
—”চেয়েছিলাম তুমি ভালই ভালই নিজে থেকেই গাড়িতে উঠ। কিন্তু যেহেতু উঠলে না তাই এখন আমার শক্তির প্রয়োগ করতেই হচ্ছে।”
রিদিত এরপর আর কোনো কথা না বলে,প্রায় জোর করেই আনায়াকে গাড়ির ভেতরে বসিয়ে দেয়।আনায়া তখনও হাঁসফাঁস করছে,নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টায় লড়ছে নিজের সত্তার সঙ্গেই।কিন্তু রিদিতের কঠিন অথচ স্থির প্রতিক্রিয়ায় এক সময়‌ তার সব আপত্তি যেন থেমে যায়।অবশেষে সে নিজে থেকেই শান্ত হয়ে যায়।রিদিত তার দিকে তাকায়,মুখে খেলে যায় এক অদ্ভুত চাপা হাসি। তারপর সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় সে।

নরম মৃদু আলোয় সাজানো অভিজাত রেস্টুরেন্টের এক কোণে, জানালার পাশে রাখা টেবিলটায় মুখোমুখি বসে আছে রিদিত আর আনায়া।চারপাশে অল্প আলো, ঝকঝকে পরিবেশ, ক্লাসিক মিউজিক বাজছে মৃদুস্বরে—কিন্তু টেবিলের উপর যেন জমে আছে এক অদৃশ্য উত্তেজনা।
রিদিত ধীর কন্ঠে বলে,
— “আমি তোমাকে জোর করে গাড়িতে তুলিনি, আনায়া।
আমি শুধু তোমার থেকে একান্তে একটু সময় চেয়েছি কারণ… আমি চাই, তুমি জানো—সব পুরুষ একই রকম হয় না। আর সেরকমই আমিও ওই ছেলের মতো নই।
আমি তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য এখানে আসিনি।আমি চাই তুমি বিশ্বাস করো—আমাকে।”
রিদিতের কণ্ঠে এক অনুনয় ভরা দৃঢ়তা। আনায়া এক ঝলক তার দিকে তাকায়। সে বুঝতে পারে তার অতীতের সব কথাই শিশির রিদিতকে বলেছে। সে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে,তারপর একটু থেমে, গলা খানিকটা কাঁপিয়ে ধীরে বলে,

— “বিশ্বাস…?”
একটা চাপা হাসি ঝরে তার ঠোঁটের কোণে।
— “আমি তাকেও বিশ্বাস করেছিলাম… অন্ধের মতো।
জানেন?আমি এতটাই বিশ্বাস করেছিলাম যে চোখ বুজেও তার পাশে হাঁটতে প্রস্তুত ছিলাম।কিন্তু তার ফল…আমি একা না, আমার আপুও ভোগ করেছে।আমার জন্য আমার আপুর বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে গিয়েছিল সেদিন।”
আনায়ার গলা কেঁপে উঠল।
কথা থামিয়ে সে একবার চোখ বন্ধ করল, যেন কষ্টের ঢেউগুলো আটকাতে চায়।রিদিত নীরবে তাকিয়ে রইল তার দিকে।তাকে থামানোর মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেল না সে।শুধু অনুভব করল—এই মেয়েটা কতটা ভেঙে গেছে ভেতরে ভেতরে।আনায়া ধীরে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল রিদিতের চোখের দিকে।তার দৃষ্টিতে ছিল না কোনো অভিমান, ছিল কেবল নির্মম এক বাস্তবতা।

— “তাই বলছি…
আমার পক্ষে আর কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।আর
এই জীবনে তো নয়ই, কখনোই নয়।তাই দয়া করে আমার পিছনে ঘুরে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।”
কথাগুলো বলার সময় আনায়ার কণ্ঠে ছিল না কোনো রাগ,ছিল শুধুই গুমরে ওঠা এক নিঃশব্দ কান্না।এক মুহূর্ত নীরবতা নেমে এলো টেবিলের উপর।চারপাশের মৃদু হাসির শব্দ, মিউজিক, আলো…সবই যেন দূরে কোথাও মিলিয়ে গেল।রিদিত তাকিয়ে রইল আনায়ার মুখের দিকে।

চোখের গভীরে জমে থাকা অভিমান আর কষ্টে শক্ত হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে দেখে মনে হলো,সে এই মুহূর্তে সমস্ত পৃথিবী দিয়ে হলেও তার ব্যথা মুছে দিতে পারলে হয়তো তার শান্তি লাগতো।কিন্তু আনায়া আর একটা মুহূর্তও বসে থাকল না।চুপচাপ উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে খুব নরম গলায় বলল,
— “আর দয়া করে…কখনো আমাকে আর যাই বলুন বিশ্বাস করতে বলবেন না।কারণ, আমি আর পারি না।”
এইটুকু বলে আনায়া ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করল।
নীরব পায়ে, অভিমানে ঢাকা মাথা উঁচু করে।রিদিত একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল তার চলে যাওয়া পথের দিকে—
চোখে একরাশ অপরাধবোধ, অসমাপ্ত কথা, আর অদৃশ্য প্রতিজ্ঞার রেশ নিয়ে।রেস্টুরেন্টের আলো মৃদু নরম রঙে জ্বলছিল।কিন্তু রিদিতের ভেতরটা ডুবে যাচ্ছিল…এক অপূরণীয় শূন্যতায়।নিজের মনে ফিসফিস করে রিদিত বলল—
“তোমার অবিশ্বাসের পাহাড় ভেঙ্গে…
আমার ভালবাসার নরম ছোঁয়ায়‌..একদিন ঠিকই আবদ্ধ করব তোমায়। শুধু দরকার কিছু সময়ের। যা আমি পার করবো ধৈর্যের সাথে হোক তা এক বছর কিংবা হাজার বছর।”

রাত প্রায় দশটা।নওরিফা খানমকে রাতের খাবার খাইয়ে ওষুধ দিয়ে নিজের রুমে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছে শিশির।
কিন্তু…তার চোখে ঘুম নেই।একটা প্রশ্ন বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,কে সেই ‘সুহাসিনী’?চিন্তার জটিলতায় সে আর বসে থাকতে পারে না।রুম থেকে বেরিয়ে সরাসরি নাহিয়ানের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা দেয়।
নাহিয়ানের রুমের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় শিশির।মনে পড়ে যায় প্রথমবারের সেই দিনের কথা,যেদিন এই রুমে নাহিয়ানের কাছ থেকে নিজের গিফট নিতে এসেছিল সে।
স্মৃতির গলিতে পা রাখতেই ঠোঁটের কোণে মিষ্টি এক হাসি খেলে যায় তার।আলতো হাতে দরজায় ধাক্কা দেয়।
দরজাটা শব্দ না করেই খুলে যায়, যেন আগেই অনুমতি নিয়ে রেখেছে।শিশির দ্রুত রুমে ঢুকে, সাবধানে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।
রুমে ঢুকেই প্রথমে তার চোখে পড়ে সেই লম্বা কাঠের ড্রেসিং টেবিল—যেটা একেবারে নাহিয়ানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক ঝলক নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নেয় সে।তারপর চুপচাপ এগিয়ে যায় বিশাল আলমারির সামনে।
নওরিফার রুম থেকে অনেক কষ্টে, অনেকটা গোপনে এনে রাখা চাবির গোছা হাতে নেয় শিশির।একটা একটা করে আলমারির কাবার্ড খুলতে থাকে।

কিন্তু…
কোথাও মেলে না কোনো খোঁজ।কোথাও নেই সেই কাঙ্ক্ষিত লাগেজের চিহ্ন।শেষমেশ যখন শেষ কাবার্ডের কাছে পৌঁছায়,তখনই সে দেখে—এই কাবার্ডের জন্য কোনও চাবিই নেই ওই গোছায়।শিশির বুঝে ফেলে,
এই কাবার্ডের চাবি শুধু নাহিয়ান চৌধুরীর কাছেই আছে।আর তার পরিকল্পনা ব্যর্থ। এটা ভেবেই মুখ মলিন হয়ে যায় শিশিরের। কিন্তু পরক্ষণেই ঠোঁটে এক বাঁকা হাসি টেনে সে এসে মনে মনে বলে,,

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২২

— “কি ভেবেছেন নাহিয়ান চৌধুরী?
আপনার সুহাসিনীর রহস্য আমি কোনোদিনই জানতে পারবো না?একদিন না একদিন আমি ঠিকই এই রহস্যের দরজা খুলে ফেলবো…আপনি চাইলেও থামাতে পারবেন না আমাকে।”

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২৩