মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২৪
নওরিন কবির তিশা
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি….
হোয়াইট হাউসের ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন অথচ অতুলনীয় অভিজাত এক হোটেল—Hay-Adams Hotel।এই হোটেলের The Lafayette রেস্টুরেন্টেরই সবচেয়ে রিসট্রিক্টেড অংশ—Private Diplomatic Lounge, যেখানে প্রবেশাধিকার কেবলমাত্র প্রোটোকল-লেভেল অনুমোদনপ্রাপ্তদের জন্য। এই ঘরে একসাথে বসা মানেই আলোচনার বিষয় হচ্ছে—রাষ্ট্রীয় সংকট, গোপন অপারেশন কিংবা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জরুরি সংকেত।
চুনাপাথরের দেয়ালে ঝোলানো ১৯ শতকের আমেরিকান রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিকৃতি, রোজগোলাপ কাঠের সিলিং, মেঝেতে হাতবোনা পারস্যের কার্পেট আর মখমলি সাদা টেবিল কাপড়ে মোড়ানো টেবিলে রাখা টাটকা অর্কিডের স্তবক—সব মিলিয়ে জায়গাটা যেন শতাব্দীর ঘ্রাণ মাখা নিঃশব্দ কোন এক সভাকক্ষ।
জানালার ওপারে হোয়াইট হাউসের ইতিহাস গড়া ছাদ, আর জানালার এপাশে—টেবিলের গ্লাসে প্রতিফলিত হয় গোপনতার প্রতিটি রেখা।
স্থানীয় সময় রাত ৮:৫৫ মিনিট।
সিলভার রিমের ওয়াইন গ্লাসে আলো পড়ে যেন জ্বলজ্বল করছে গোপন ইঙ্গিত।
টেবিলের কোণায় বসে আছেন সিআইডি অফিসার নাহিয়ান চৌধুরী সবার পরিচিত A.R.(Alpha Reaper) তার সামনে বসে আছে দুই বিদেশি অপারেটিভ—মেলোডি গার্নার—ব্রিটিশ স্পেশাল অপস ইউনিটের প্রাক্তন ডেটা অ্যানালিস্ট, বর্তমানে CIA লিঁয়াজোঁ অফিসার আর ড্যান লেভিন—জার্মান BKA’র সাবেক হোস্টেজ রেস্কিউ এক্সপার্ট, এখন “Hawkeye-9” টিমের ইউরোপ সেক্টরের কোঅর্ডিনেটর।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই স্পেশাল কর্নারটা এতটাই সুরক্ষিত যে রেস্টুরেন্টের অন্য অংশ থেকেও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। বাইরে নিরাপত্তা টিম প্রহরায়, আর ভেতরে—অডিও স্ক্র্যাম্বলড চেম্বার, যেন কোন শব্দও লিক না হয়।
মেলোডি চোখ নামিয়ে তার ট্যাবলেটে রিপোর্ট স্ক্রল করে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলে, —
“লা-লাস্ট ফরর্টি এইট আওয়ার, আমরা থিনটা লোকেশন ট্র্যাক খরেছি। থে-দের স্টেটমেন্টে এ..কটাই নাম বারবার আসে… ‘The black Jackal’। কিন্তু… উই ডোন্ট নো হু ইজ হি। হি ইজ… গোন। ভ্যানিশ।”
ড্যান একটু সামনে ঝুঁকে, কড়া গলায় বলে,
“ইটস নট অ্যা কিডন্যাপ অ্য্যানিমোর। ইটস আ… কী বলে? এখদম child-trafficking আর টেরর সেল! হি ইজ বিল্ডিং সামথিং বিগ—আই ক্যান ফিল ইট ইন মাই গাটস।”
নাহিয়ান ঠোঁটে এক চিলতে দৃঢ়তা নিয়ে বলে,
“আমি জানি। এবং আমি এটাও জানি এই হামলা কেবল আমেরিকান মাটিতে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ, আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো দেশ এই চক্রের শিকড়ে। আমরা যতই ওয়েলিংটন কেসের ভেতরে যাচ্ছি—তত বেশি বুঝতে পারছি, এটা আসলে Ghost Network।
কোনো নাম নেই, রেকর্ড নেই। শুধু রক্তে লেখা অস্তিত্ব।”
মেলোডি তাকিয়ে থাকে নাহিয়ানের দিকে, তারপর ধীরে বলে—
“ইউ… ইউ গোন সো ডিপ, নাহিয়ান।থোমার… থোমার ঢাকা মিশন থেকে পাওয়া ডাটা, এনক্রিপশন…হামাদের এখন help খরছে। ইউ আর… ফাস্ট। ফাস্টার দেন CIA এনালাইসিস।”
ড্যান মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়—
“থোমার ভেতরে অন্যরকম এখ সেন্স আছে। থুমি শুধু শত্রু চেনো না, থুমি থাদের শ্বাসও শুনতে পাও। Hawkeye-9 তোমার প্ল্যানেই এগোবে। এখন থেকে থুমি পুরো অপারেশনের শ্যাডো-কমান্ড।”
নাহিয়ান জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। গ্লাসে ঠোঁট ছোঁয়ানোর আগে, তার কণ্ঠে ভেসে আসে এক চেপে রাখা অঙ্গীকারের মতো কণ্ঠস্বর—
“এই অপারেশন কেবল ডেটা উদ্ধার নয়।এটা একেকটা মায়ের বুকফাটা কান্নার জবাব।আর আমি সেই কান্নার কাছে মাথা নত করব না—তাদের সন্তানেরা ঘরে ফিরবেই।”
বাংলাদেশ—ঢাকায়…
ভোরের আলো সবে গাঢ় হতে শুরু করেছে। দূর থেকে শোনা যাচ্ছে কোলাহলপূর্ণ শহরের আওয়াজ।শিশির হিজাব বেঁধে, হাতে একপাশে ঝুলে থাকা বাদামি বইয়ের ব্যাগটা ঠিকঠাক করে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এল। দ্রুত পায়ে দরজার দিকে এগোতেই চোখ পড়ল সামনের এক পরিচিত মুখ—তানিম, তার ফুফু শিরিন শাহর একমাত্র ছেলে। পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি উচ্চতার এক পরিপাটি তরুণ। চোখে আত্মবিশ্বাস, আর মুখে সবসময় এক ধরণের চাপা হাসি লুকানো থাকে—যেন কোনো না বলা গল্প তার ঠোঁটে আটকে আছে। গায়ের রঙ শ্যামলা, কিন্তু তাতে তার ব্যক্তিত্ব যেন আরও গভীর হয়ে উঠেছে। চিবুকের কাছটায় হালকা দাড়ি। তানিমকে দেখে কিছুটা অবাক হয় শিশির। অন্যদিকে শিশিরকে দেখে মুচকি হেসে তানিম জিজ্ঞেস করে—
—”কেমন আছো, শিশির?”
—”এই তো ভালো। আপনি কেমন আছেন?”
তানিমের ঠোঁটে এক চাপা হাসি, কিন্তু চোখে ঝিলিকটা যেন একটুখানি বিষণ্ন। হালকা গলায় ফিসফিস করে বলে ফেলে—
—”তুমি যেমন রেখেছো…”
শিশির তানিমের কথা শুনতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে—
—”মানে?”
—”ভালোই। এত সকালে কোথায় যাচ্ছ?”
—”ভার্সিটিতে।”
—”এত সকালে ভার্সিটিতে? তুমি বায়োলজির প্রথম বর্ষে না?”
—”হ্যাঁ।”
—”তো, তোমাদের ক্লাস তো আটটা থেকে শুরু হয়। আর এখন তো সবে সাতটা বাজে।”
—”না মানে, আমি ভার্সিটি যাওয়ার আগে একবার আনায়াদের বাসায় যাব। একটা প্রজেক্টের কাজ ছিল, সেটা কমপ্লিট করতে হবে তাই।”
—”ওও,চলো, আমি ড্রপ করে দিই।”
—”না, থাক। আমি নিজেই যেতে পারবো, নিচে আনুচু আছে। উনি নিয়ে যাবেন।”
—”আচ্ছা, সাবধানে যেও। আল্লাহ হাফেজ।”
—”আল্লাহ হাফেজ।”
শিশির দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। যেন তাড়াতাড়ি পালিয়ে যেতে চায় অতীতের কোনো ঘূর্ণিপাক থেকে।আর ওপরে দাঁড়িয়ে থাকে তানিম…চোখে এক অনড় দৃঢ়তা শিশিরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে ফিসফিস করে বলে—
“পালিয়ে যাচ্ছ শিশির কনা? তুমি জানো না, তোমার জন্য এই তানিম কতটা বেপরোয়া। তোমার জন্য কতটা পাগল আমি! সেটা যদি একবার তোমাকে বোঝাতে পারতাম। ব্যাপার না—শপথ যখন করেছি, তখন তোমাকেই আমার অর্ধাঙ্গিনী বানাবো। না হলে, অন্য কাউকে নয়।”
অন্যদিকে, দ্রুত সিঁড়ি থেকে নেমে যেন হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলো শিশির। তানিমকে দেখলেই তার মনে পড়ে যায় আট বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটি—যে ঘটনার পর থেকে এখনও তানিমকে দেখলে অস্বস্তি হয় শিশিরের।
আট বছর আগে…..
শিশিরের বয়স ১০ পেরিয়ে সবে ১১-তে পড়েছে। ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী সে—ষষ্ঠ শ্রেণির প্রাণচঞ্চল, কিছুটা কৌতূহলী আর একটু তটস্থ এক কিশোরী। বইয়ের পাতায় আর খেলাধুলার মাঠে তার দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল নিরিবিলিতে। নাহিয়ানের সাথে সম্পর্কও তখন বেশ ভালোই।
একদিন বিকেলবেলা স্কুল ছুটির পর সে দেখতে পেল, তাকে নিতে আজ বাবা-মা কেউ আসেনি। এসেছে ১৮ বছর বয়সি এক তরুণ—তানিম। শিশির এগিয়ে গেল। তানিমকে দেখে সে বলল,
— “ভাইয়া তুমি? বাবা কোথায়?”
— “মামা বাসায়। আজকে সকালেই এসেছিলাম। তাই ভাবলাম, মামার আসার কী দরকার? এসেছি যখন, তখন তোকে একেবারে স্কুল থেকে নিয়েই যাই। তোকে নিয়েও যাওয়া হবে আর সাথে আমার একটু ঘুরাঘুরিও হয়ে যাবে—এমনিতেও সারাদিন ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম।”
— “ও আচ্ছা। চলো।”
তার স্কুলটা বাসা থেকে বেশি দূরে না হওয়ায় তানিম গাড়ি নিয়ে আসেনি। তাই শিশির আর তানিম একটা গলি দিয়ে হাঁটতে লাগলো। সেই গলিপথে বিকেলের রোদ পড়ে সোনালি ছায়া ফেলছিল চারপাশে। শিশির হাঁটছিল নিঃসংশয়ে, প্রতিদিনের স্বাভাবিক যাত্রার মতো।কিন্তু হঠাৎই তানিম বলল,
— “আচ্ছা শিশির, তুই কাউকে পছন্দ করিস?”
তানিমের প্রশ্নটা শুনে মুহূর্তে থমকে যায় শিশির। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী হলেও স্কুলজীবনের অভিজ্ঞতায় এই প্রশ্ন একেবারে অচেনা ছিল না তার কাছে। স্কুলের ক্লাসরুমে কিংবা বারান্দায়, সহপাঠীদের নিঃসঙ্কোচ হাসাহাসির ভেতর, সে বুঝে নিয়েছে—’ভালো লাগা’ বলতে কিছু একটা আছে। কারো চোখে তাকালে, কেউ কারো পাশে বসলেই খেপানো শুরু হয়।কিন্তু এসব শিশিরের একেবারেই পছন্দ নয়। তার ভেতরে তখনো শুদ্ধ একটা বিশ্বাস বেঁচে ছিল—ভালো লাগা মানে বন্ধুত্ব, আর প্রীতির নাম মানেই নির্ভরতা। ভালোবাসা নিয়ে যে খেলাধুলা চলে, তাতে শিশির কোনো আনন্দ খুঁজে পায় না।তাই গলাটা সামান্য টেনে, ভ্রু কুঁচকে, ধীরে সে বলল,
— “না ভাইয়া। আমার ওইগুলো পছন্দ না।”
— “কিন্তু তোকে যদি কেউ কোনদিন পছন্দ করে তাহলে তুই কী করবি?”
— “মানে?”
— “বলছি তোকে যদি কেউ কোনদিন পছন্দ করে, ধর কোন ছেলে তোকে প্রপোজ করছে, তাহলে তুই কী করবি?”
— “কিছুই করবো না, সোজা বাবা-মাকে গিয়ে বলবো।”
— “ধুর বোকা মেয়ে, বাবা-মাকে কেন বলবি?”
— “তা কাকে বলব?”
— “কাউকেই বলবি না। আমাকে বলবি।”
— “কেন?”
— “কারণ আমি তোকে পছন্দ করি।তাই কেউ তোকে পছন্দ করলে সেটা জানার অধিকার একমাত্র আমার।”
— “মানে কী ভাইয়া? কী সব বলছো এসব?”
— “মানে…”
তানিম কথাটা বলতে বলতে নিজের বুক পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে, তারপর শিশিরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
— “আই লাভ ইউ শিশির। আই রিয়েলি লাভ ইউ।”
আকস্মিক এমন ঘটনায় অবাক হয়ে যায় শিশির। সে তানিমকে বলে,
— “কি বলছ ভাইয়া? এসবের মানে কী?”
— “তোকে আমি এখন আর এত কিছুর বিস্তারিত মানে বোঝাতে পারবো না, আমি শুধু এটুকু জানি যে আমি তোকে ভালো…”
কথাটা শেষ করতে পারে না তানিম। হঠাৎ, যেন ঘটে বজ্রপাত! সপাটে এক চড় এসে পড়ে তার চোয়ালে। এতটা অকস্মাৎ, এতটা জোরে, যে মুহূর্তে বোঝার সুযোগ পায় না সে। কেঁপে ওঠে গালটা, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে।আবাক হয়ে মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতেই দেখতে পায়—তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নাহিয়ান। তাকে দেখে তানিম কিছু বলতে যাবে, তার আগেই নাহিয়ান দ্বিতীয় থাপ্পড়টি বসিয়ে দেয় তার চোয়ালে, তবে এবার আরও জোরে।
তানিম হোঁচট খেয়ে পিছিয়ে যায় কিছুটা, চোখে মুখে বিস্ময় আর ভয় মিশে যায়, যেন কোনো অজানা দানব এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। শিশির হতভম্ব। তার চোখের সামনে যা ঘটছে, সেটা যেন একটা খারাপ স্বপ্ন—যেখানে সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
একটু কাঁপা গলায় সে বলে ওঠে,
— “ওনাকে মারছ কেন, নাহিন ভাই?”
নাহিয়ান সেদিকে তাকায় না, শুধু একটিই কথা ছুঁড়ে দেয়—গলা থেকে যেন অগ্নি ঝরে পড়ে,
— “তুই চুপ থাক!”
শব্দটা যেন শিশিরের বুক কাঁপিয়ে দেয়। নাহিয়ানের চোখ লাল, ঠোঁট কাঁপছে রাগে, আর শরীরটা উত্তেজনায় থরথর করছে।এই ছেলেটাকে সে চেনে, কিন্তু এই মুহূর্তে তার চোখের সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে যেন এক বিস্ফোরিত আগ্নেয়গিরি। শিশিরের গলা শুকিয়ে আসে, ঠোঁট নড়ে না, কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়।
আর তানিম? সে পালাবারও সুযোগ পায় না। নাহিয়ানের ঘুষি, কিল একের পর এক তার মুখে এসে পড়ে। রক্ত জমে ওঠে ঠোঁটে, ভেঙে পড়ে এক পাশের গাল। পথচারীরা থমকে দাঁড়ায়, কেউ দৌড়ে এগিয়ে আসে।সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে শোরগোল পড়ে যায় আশপাশে। তানিমকে আহত অবস্থায় টেনে সরিয়ে নিয়ে যায় দু’জন যুবক। রক্তে ভেজা তানিমকে হাসপাতলে নিয়ে যায় তারা। সঙ্গে সঙ্গে খবর পৌঁছে যায় পরিবারের কাছে।
কিছুক্ষণ পর
হাসপাতালের করিডোরে একে একে হাজির হন তানিমের বাবা-মা, শিশিরের ফুফু শিরিন শাহ আর তার স্বামী তোফাজ্জল ইসলাম। আসে নাহিয়ানের বাবা-মাও। চারপাশে উত্তেজনা, উদ্বেগ আর চাপা রাগের একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপারটা ঘটে তখনই—যখন ঘটনার দায় পুরোটা গিয়ে পড়ে শিশিরের ঘাড়ে।
একটিবারের জন্যও কেউ ভাবল না, শিশির তো নিজেও বিভ্রান্ত, আহত! কিন্তু না—তার কোনো বলার অধিকার নেই। অন্যদিকে শিরিন শাহ—যিনি এতদিনেও শিশিরের প্রতি বিশেষ স্নেহ দেখাননি, এবার যেন নিজের যাবতীয় তীব্রতা উগরে দেন। সবার সামনেই শিশিরকে কঠোরভাবে বকাঝকা করেন।তার মুখে উঠে আসে অভিযোগের পাহাড়। সেই দিনের পর থেকেই শিশিরের প্রতি তার ব্যবহারে যেন একটা সুস্পষ্ট পরিবর্তন আসে—আরও অবহেলা, আরও উপেক্ষা।
বর্তমান…
ফেলে আসা স্মৃতির ধুলো এখনো চোখে ধোঁয়া হয়ে ঝাঁপটা দিচ্ছে। সেসব ভেবেই শিশির এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে। আনোয়ার সাহেবকে সামনে দেখে গলা বাড়িয়ে বলে—
— “আনুচু, আনায়াদের বাসায় যাবো।”
মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ২৩ (২)
আনোয়ার সাহেব এগিয়ে আসেন। শিশির গাড়ির দরজা খুলে নিঃশব্দে ভিতরে গিয়ে বসে। আনোয়ার সাহেব ড্রাইভিং সিটে বসে ইঞ্জিন স্টার্ট দেন। গাড়ি চলতে থাকে নিজ গতিতে। শিশির জানালার কাচটা নামিয়ে দেয়। বাইরের এক ঝাপটা স্নিগ্ধ হাওয়া এসে ছুঁয়ে যায় তার মুখশ্রী, এক চিলতে স্বস্তি দিয়ে।