মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৫

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৫
নওরিন কবির তিশা

যখন খোলা চুলে….
হয়তো মনের ভুলে…
তাকাতো সে অবহেলে…
দু’চোখ মেলে….
হায় হাজার কবিতা….
বেকার সবই তা…
তার কথা কেউ বলে না….
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা…….

ঢাকা শহরের‌ অন্যতম বিখ্যাত ক্যাফে The Delicious Café ।ক্যাফেটা শহরের ব্যস্ততম মোড়ের একটু ভেতরে। ক্যাফের ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই নজরে পড়বে তার ঠিক মাঝখানে রাখা পিয়ানোটার উপর।তারপর দৃষ্টি কাড়বে দেয়ালে টাঙানো ফ্রেম করা আর্টপিসগুলো যেখানে হাত কোটে লেখা “Coffee and dreams taste better when shared…”কাঠের চেয়ার-টেবিল, গা-ঢাকা উষ্ণ আলো,আর কোণার দিকে এক ছোট্ট লাইব্রেরি-স্টাইলের বুকশেলফ—সব মিলিয়ে জায়গাটা যেন মনের শান্তির জন্য গড়া হয়েছে। চতুর্ভুজ কাঁচের জানালাগুলো দিয়ে সূর্যের সোনালি আলো ধীরে ধীরে ছুঁয়ে যাচ্ছে কাঠের মেঝে, আর সুবাস ছড়াচ্ছে সদ্য বানানো ভ্যানিলা লাটে আর কারামেল সসের মিশ্র গন্ধ। তবে ক্যাফে আজ পুরো ফাঁকা, সেখানে শুধু আনায়া,শিশির আর তার বাকি বন্ধুরা।ক্যাফের কোণের এক কাঠের চেয়ারে ‌বসে গল্প করছিল তারা।হঠাৎ এমন পুরাতন গানের শব্দে সে সহ বাকি সবাই পিছন ফিরে তাকায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গিটার ‌হাতে নচিকেতার এই কালজয়ী গানটা গাইতে গাইতে ক্যাফেতে প্রবেশ করে রিদিত।পড়নে ধূসর টি-শার্ট, রোল করা ‌হাতা,গলায় এক স্লিম সিলভার চেইন, আর নেভি ব্লু জিন্স।চুলগুলো একটু এলোমেলো, তবুও যেন স্টাইলড। তাকে দেখে সবাই বেশ অবাক হয় তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হয় আনায়া।সে হচকিত নয়নে চেয়ে থাকে রিদিতের পানে।অন্যদিকে ভেতরে ঢুকে আনায়াকে দেখেই রিদিতের হৃদয়ে প্রনয়ের উষ্ণ পবন দোলা দিয়ে যায়। সে মুচকি হেসে এগিয়ে এসে শিশিরকে ধন্যবাদ জানায়। তা দেখে আনায়া কটমট দৃষ্টিতে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে,,
—”তুই না আমাকে বলেছিলি আজকে ভার্সিটিতে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস নেই তাহলে চল সবাই ঘুরে আসি কিন্তু এসব কি?”
শিশির:”তাইতো আজকে তো কোন ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল না!”
আনায়া:”তুই আগে থেকে সবটা জানতিস তাই না?”
শিশির:”হ্যাঁ তো!”
আনায়া:”আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলি?”
শিশির বেরিয়ে যেতে যেতে রিদিতের দিকে ফিরে বলল,,

—”ভাইয়া তোমার ফিওন্সি কে তুমি সামলাও তো আমার মাথা খারাপ করে ফেলছে!”
তারপর সাঈফ,সজল,আশা,লিজাদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”তোরা কি থাকবে নাকি কাবাব মে হাড্ডি হতে?”
সবাই একযোগে বলল,,
—”কখনোই না!”
শিশির:”তাহলে চল যাই!”
তারা সবাই একে একে বের হয়ে গেল। তারপর রিদিত ক্যাফের স্টাফদেরও ছুটি দিয়ে দিল, এমনিতেও সবাই জানতো যে ‌রিদিত আসার পর আজকে সবাইকে চলে যেতে হবে তাই সবাই নিজ থেকেই চলে গেল। এখন ক্যাফে জুড়ে শুধু দুইজন,দুইটা উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ, দুইটি হৃদয়ের উষ্ণ আলিঙ্গনের মুহূর্ত। হঠাৎই আনায়া বলল,,

—”কি হয়েছে? কেন করলে না এরকম?”
রিদিত:”কি করেছি?”
আনায়া:”ধোঁকাবাজি করে এখানে ডাকলেন কেন?”
রিদিত:”তাছাড়া আর কি করতাম তুমি তো আমার সামনে আসাই বন্ধ করে দিয়েছিলে!”
আনায়া:”আপনি কে?যে আপনার সামনে সবসময় আমার থাকতে হবে?”
রিদিত:”সেই জন্যই তো আমি তোমার হালাল পুরুষ হতে চাই যার সামনে তুমি সারাদিন থাকতে পারবে!”
আনায়া:”কিন্তু আমি চাইনা!”
রিদিত:”কেন?”

আনায়া:”কারণ পুরুষ মানুষ বিশ্বাসের যোগ্য নয়। তারা মনে করে আমরা খেলনা পুতুল দুইদিন ইচ্ছা মতন খেলবে তারপর ছুড়ে ফেলে দেবে!”
রিদিত:”তুমি হয়তো জানো না, আয়নিন সব পুরুষ এক নয় কেউ কেউ পুতুলটাকে আজীবনের জন্য নিজের করে সাজিয়ে রাখতেও জানে!”
আনায়া:”হয়তো! কিন্তু আমার মতে সবাই সমান”
রিদিত:”তাহলে তুমি ভুল করছ! আচ্ছা চলো আজকে তোমার সাথে একটা গেম খেলি। আমি কিছু প্রশ্ন করব আর তুমি তার উত্তর দেবে রাজি?”
আনায়ার এমনিতে কোন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু হঠাৎ কেন যেন মনে হলো এই রিদিতের কথাগুলো তার শোনা প্রয়োজন তাই সে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সে রাজি হল।
আনায়া:”আচ্ছা আমি রাজি!”
রিদিত:”তোমার মতে পৃথিবীর সব পুরুষ সমান রাইট?”
আনায়া:”হুম”

রিদিত:”আচ্ছা! তাহলে তুমি আমাকে একটা কথা বল তুমি তোমার বাবাকে ভালোবাসো না?”
আনায়া:”বাসি”
রিদিত:”কেন ভালোবাসো? সেও তো একজন পুরুষ!”
আনায়া কিছু বলতে পারল না। রিদিত মুচকি হেসে বলল,,
—”কারণটা আমি বলি! কারণ তোমার বাবাকে তুমি ভালো করে চেনো তাকে তুমি অন্ধ বিশ্বাস করো যে সে কখনোই তোমাকে ঠকাবে না, সে তোমাকে নিজের প্রাণের থেকেও ভালোবাসে যদিও সে কোনদিন বলেনি। তাই না?”
আনায়া:”হুম”
রিদিত:”তুমি ঠিক একই ভাবে তুহিনকে বিশ্বাস করেছিলে রাইট?”
তুহিনের নাম শুনেই মুখে বিষাদের কালো ছায়া নেমে এলো আনায়ার। তা দেখে রিদিত শান্ত কণ্ঠে বললো,,

—”ডোন্ট ওয়ারি আয়নিন আমি সবটা জানি। এখন বলো আমি যা বললাম সত্যি কিনা?”
আনায়া মাথা নিচু করে আস্তে বলল,,
—”হুমম”
রিদিত মলিন হেসে বলল,,
—”তুমি তুহিনকে ভালো করে না চিনেই অন্ধের মত বিশ্বাস করেছিলে! অথচ আমাকে তুমি এতদিন ধরে চেনো,আমি তোমাকে এত টাইম দিয়েছি, তুমি আমাকে বারণ করা সত্ত্বেও নিজের সময় নষ্ট করে সেই সময়গুলো তোমার পিছনে দিয়েছি যাতে তুমি অন্তত আমাকে চিনতে পারো! কিন্তু তুমি আমাকে চেনো নি কেন জানো?”
আনায়া জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। সে নিজেও জানে না কেন সে বিশ্বাস করতে পারেনি। রিদিত ফের মলিন হেসে বলল,,

—”কারণ তোমার জেদ,তোমার বিশ্বাস,যে তুমি জীবনে আর কোনদিন কোন পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারবে না। না হলে একটা মেয়ের জন্য যতটুকু সময় যথেষ্ট একটা ছেলেকে চেনার জন্য তার থেকেও বেশি সময় আমি তোমাকে দিয়েছি। তোমার জন্য পাগলামি করেছি আমি! কি না করেছি বলতো? এত বড় একজন বিজনেসম্যান হওয়া সত্ত্বেও নিজের পার্সোনালিটি ডুবিয়ে দিয়েছি তোমার পিছনে! আমার মনে হয় কোনো উন্মাদ প্রেমিক ও এত কিছু করেনা! কিন্তু তুমি সেই আমাকে চিনলে না।
রিদিতের বুক চিরে বের হয়ে আসলো দীর্ঘ নিঃশ্বাস। সে আয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল,,

—”তুমি হয়তো ভেবেছ এরকমটা সবাই করে কিন্তু বিশ্বাস করো আমার জন্য এটা একদম সত্যি নয় আমি জীবনে কোনো মেয়েকে পছন্দ তো দূর তাদের দিকে ভালো করে তাকাইও নি, আমার বাবার অনেক বিজনেস পার্টনার আছে জানো তাদের মেয়েরা আমার সাথে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য পাগলপারা থাকে আর তুমি?
সে একটু থামলো। তারপর ফের বলতে শুরু করলো,,

—”এই কারণেই আমি তোমাকে পছন্দ করেছিলাম! কারন তুমি সবার থেকে আলাদা,তুমিই প্রথম সেই নারী যে আমার হৃদয়ের গহীনে থাকা দরজায় টোকা দিতে পেরেছিলে। তাই তোমার পিছন পিছন পাগলের মতন ঘুরঘুর করে ছিলাম আমি।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি এটা তোমার জন্য যন্ত্রণাদায়ক ছিল। আর আমি কোনোদিন পারবো না আমি যে মেয়েটাকে নিজের প্রাণের থেকেও ভালোবাসি তারে জীবনে যন্ত্রণাদায়ক কাটা হয়ে থাকতে তাই আজ থেকে আমি সেই কাটা উপড়ে ফেললাম। সরে গেলাম তোমার পথ থেকে ভালো থাকো!”
একনাগারে কথাগুলো বলেই বের হয়ে যায় রিদিত। আনায়া শুধু তাকিয়েই থাকে। কি থেকে কি হয়ে গেল সে কিছুই বুঝতে পারেনা। তার কর্ন গহ্বরে একটা কথাই বারবার বাজতে থাকে,,
“সরে গেলাম তোমার পথ থেকে ভালো থাকো”
সে কি করবে বুঝতে পারে না। সে রিদিতকে পেছন থেকে ডাকতে যায় কিন্তু তার গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। যেন এক অজানা কিছু তার গলা চেপে রেখেছে। আচ্ছা সে তো এটা চায়নি তাহলে কেনো হল এরকম কেন তার সাথেই বারবার এরকম হয়?

শিশির,লিজা,আশা,সাইফ আর সজল সবাই মিলে আইসক্রিম খেতে খেতে হেঁটে যাচ্ছিল রাস্তার পাশ দিয়ে। তখনই তাদের থেকে একটু দূরে একটা ফাঁকা জায়গায় বাইক থামালো কেউ একজন। তারা অতটা খেয়াল করলো না নিজেদের মনে হেঁটে যাচ্ছিল তখনই বাইকার টা মাথা থেকে হেলমেট খুলে শিশিরকে ডাক দিল,,
—”ম্যাম..!”
ম্যাম ডাকটা শুনেই ব্যস্ত রাস্তার মাঝে থমকে দাঁড়ালো শিশির। সে ভালো করেই জানে ম্যাম বলে তাকে শুধু নাহিয়ানই ডাকে সে ঘুরে তাড়াতাড়ি দেখতে পেল বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাহিয়ান। নাহিয়ানকে দেখে সাইফ বলল,,

—”আরে শিশির ওইটা নাহিয়ান ভাইয়া না?”
শিশির সে দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”হুমমম”
নাহিয়ান নাম শুনেই বাদবাকি সবাই সেদিকে ঘুরে তাকালো। পাশ থেকে আশা নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ কন্ঠে বলল,,
—”শিশির… এটাই তোর নাহিন ভাই?”
শিশির আশার এমন কণ্ঠে তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো,,
—”হ্যাঁ তো?”
আশা ফের অবাক কন্ঠে বললো,,
—”আল্লাহ..এত সুন্দর! তুই তো আগে বলিস নি তোর এত সুন্দর একটা ভাই আছে! এতো ভাই পুরাই রানভীর কাপুর! এত সুন্দর! দোস্ত তোর এত সুন্দর ভাই আছে তাহলে আমার ননদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকিস! আমি কিন্তু ভাবি হিসেবে পারফেক্ট তোর সাথে একদম ঝগড়া করবো না!”
আশার এহেন কথাবার্তায় মেজাজ গরম হয়ে গেল শিশিদের। সে কোন কথা না বলে দুপদাপ পা‌ ফেলে এগিয়ে গিয়ে নাহিয়ানের সামনে দাঁড়ালো। নাহিয়ান তা দেখে মুচকি হেসে বলল,,

—”কি ব্যাপার এত দ্রুত আসলেন?”
শিশির রাগী কন্ঠে বলল,,
—”হেলমেট পরুন!”
নাহিয়ান অবাক হয়ে বলল,,
—”কেন?”
শিশির:”পরতে বলেছি তাই!”
নাহিয়ান:”ওকে ম্যাম আপনার যেমন ইচ্ছে”
নাহিয়ান হেলমেট পরে বলল,,
—”এবার কি বলা যাবে? কেন হেলমেট পরতে বললেন?”
শিশির গমগমে স্বরে বলল,,
—”এখানে কেন এসেছেন?”
নাহিয়ান:”নিজের বউকে নিয়ে ঘুরতে”
স্পষ্ট কথা নাহিয়ানের। শিশির অন্য সময় হয়তো রাগ করত না হয় লজ্জা পেতো কিন্তু এখন শুধুই রাগ হচ্ছে তার। সে ফের থমথমে গলায় বলল,,

—”আমাকে নিয়ে ঘুরতে এসে আশেপাশের মেয়েদের দেখাচ্ছেন তাই না কত সুন্দর আপনি?”
নাহিয়ান যেন আকাশ থেকে পড়ল সে আবার কি করল? সে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,,
—”কি বলছেন?”
শিশির:”যা বলছি একদম ঠিক বলছি!”
নাহিয়ান শিশিরের কথাবার্তার আগাগোড়া কিছুই বুঝল না। শুধু এটুকু বুঝল কোন একটা কারণে তার শিশিরবিন্দুর খুব রাগ হয়েছে। কি আর করার সে নিজেকেই নিজে দোষী সাব্যস্ত করে বলল,,
—”আচ্ছা নেন বুঝেছি!সব দোষ আমার!এবার কি মাফ করা যাবে?”
শিশির কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তারপর বলল,,

—”হ্যাঁ”
হঠাৎই লিজা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে শিশিরের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,
—”রাগ করেছিস?”
শিশির তার দিকে ফিরে গমগমে কন্ঠে বলল,,
—”না! কিন্তু তোর আবার এখানে কি?”
লিজা:”দেখ দোস্ত তুই তো জানিস আশা ঐরকম বল?”
শিশির কিছু বলার আগেই নাহিয়ান বলল,,
—”এক্সকিউজ মি আমাকে কি বলা যাবে কি হয়েছে?”
লিজা:”আসলে ভাইয়া আমাদের একটা ফ্রেন্ড আশা ও আপনাকে রাণবীর কাপুরের মতো বলেছে আর শিশিরকে নিজের ননদ বলেছে এই জন্যই ও রাগ করে চলে এসেছে..!”
নাহিয়ান হেলমেটের ভিতর দিয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে লিজাকে বলল,,
—”আচ্ছা থ্যাংক ইউ আপনাকে!”

লিজা শিশিরের দিকে ফিরে বলল,,
—”দোস্ত দেখার রাগ করে থাকিস না!”
নাহিয়ান তাকে আশ্বস্ত করে বলল,,
—” আপনি যান বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি!”
লিজা:”ওকে ভাইয়া!”
লিজা চলে গেল।সে চলে যাওয়ার সাথে সাথে নাহিয়ান শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দুষ্টুমি জড়িত কন্ঠে বলল,,
—”কি ব্যাপার ম্যাম!জেলাস?”
শিশির কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”কিসের জেলাস? আমি কেন জেলাস হতে যাব?”
নাহিয়ান:”ও আচ্ছা তারমানে আপনি জেলাস নন?”
শিশির:”না!”

নাহিয়ান:”ও আচ্ছা! তাহলে চলুন একটু ডাক্তারের কাছে যেতে হবে!”
শিশির:”কেন?”
নাহিয়ান:”মনে হয় আমার কোনো সমস্যা হয়েছে পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি!”
শিশির:”আসলেও আপনার ডাক্তারের কাছেই যাওয়া প্রয়োজন”
নাহিয়ান মুচকি হেসে লেডিস হেলমেটটি এগিয়ে দিল শিশিরের দিকে। শেষের হেলমেটটি পড়ে বাইকের পিছনে উঠে বসলো। নাহিয়ান বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল,,
—”তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
শিশির:”ঢাকার পুরাতন কলিজার বাজারে!”
নাহিয়ান:”কি? কিন্তু এত জায়গা ছেড়ে কলিজার বাজারে কেন?”
শিশির:”আজকে আমি ঐখান কলিজা কিনে বাসায় গিয়ে কালো কালো কলিজা ভুনা করব তাই”
নাহিয়ান:”বাপরে বাপ মেয়ে কি ডেঞ্জারাস!”

ল্যাব ক্লাস শেষ করে সিঁড়ি বেয়ে নামছিল ফারিন আরা আর নেহা।বাকিরা আগে আগে নেমে গেছে। হঠাৎই ফারিন দেখতে পায় তাদের থেকে মাত্র চার ধাপ নিচে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ,রিশান আর তাদের দুজন বন্ধু। হঠাৎই একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসে ফারিনের মাথায়।সে ধাক্কা মেরে নেহাকে রিয়াদের দিকে ঠেলে দেয়। নেহা গিয়ে পরে রিয়াদের গায়ের উপর। দুজনেই লজ্জা পায়। তাদের দেখে ফারিন দুষ্টু হেসে আরার হাত টেনে বলে,,
—”দেখ হাউ রোমান্টিক!”
কিন্তু হঠাৎই সে টের পায় আরার হাতটা কেনো যেন অন্যরকম লাগছে।
ফারিন:”কি ব্যাপার আরু তোর হাতটা এমন…”

সে অবাক কন্ঠে কথাটা বলতে বলতেই ঘুরে তাকায়। কিন্তু ঘুরে সে যা দেখতে পায় তাতে তার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপদ্রব,গলা শুকিয়ে কাঠ। নির্ঝরের হাত!নির্ঝরের হাত ধরে রেখেছে ফারিন। তার মানে এতক্ষণ তার ঘটানো সব কান্ড নির্ঝর দেখে ফেলেছে! হায় আল্লাহ! আজকে ফারিন শেষ! সে কি করবে বুঝতে পারছে না অন্যদিকে নির্ঝর রাগের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে ফারিনের দিকে। আর একটু দূরেই আরা দাঁড়িয়ে আছে, সে তো নির্ঝরকে দেখেই থমকে গিয়েছিল।এক কোনায় দাঁড়িয়ে মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছে সে। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছে,,

“ইয়া আল্লাহ এবারের মতন ফারুকে বাঁচিয়ে দাও?”
হঠাৎই ফারিন শুকনো ঢোক গিলে আর এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”আরু বল ফোর!”
আরা বুঝতে পারল না। এই সময়েও ফারিন কি বলছে? নাকি নির্ঝরকে দেখে ওর মাথা পুরোই খারাপ হয়ে গেছে! যাইহোক এখন এখানে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না তাই সে আস্তে করে বলল
—”ফোর”
ফারিন এবার দ্রুত নির্ঝরের হাত ছেড়ে দিয়ে আরার হাত ধরে বলল,,
—”এবার দ্রুত দে দৌড়!”
ফারিন আরার হাত ধরে দ্রুত দৌড় দিয়ে চলে গেল। এত দ্রুত যে নির্ঝর তাদের দেখতেই পেল না। অন্যদিকে দৌড়ে নিচে এসে নিজেদের রুমের একটা বেঞ্চের উপর বসে পাশের মেয়ের থেকে একটা পানির পট নিয়ে
ঢকঢক করে তার সমস্ত পানি খেয়ে ফেলল ফারিন। তা দেখে মেয়েটি বলল,,

—”কি হয়েছে ফারিন?”
ফারিন জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ পর বলল,,
—”সিংহের মুখ থেকে পালিয়ে এসেছি!”
মেয়েটির বুঝতে বাকি রইল না যে ফারিন আবার নির্ঝরের কাছ থেকে বকা খেতে খেতে বেঁচে গেছে। কিছুক্ষণ পর নেহা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এসে বলল,,
—”ফাইজলামির একটা লিমিট থাকে ফারু! কি করলি তুই?”
ফারিন:”কি করেছি বুঝতে পারিস নি তোদের কেমিস্ট্রি দেখতে গিয়ে আমি আরেকটু হলে সাইনাইট খেয়ে ফেলছিলাম! ভাগ্যিস রক্তচোষাটা ধরতে পারেনি আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া!”
আরা এতক্ষণ চুপ ছিল এবার সে বলল,,
—”আল্লাহর রহমত ঠিক আছে কিন্তু একটু পর গজবের জন্য তৈরি থাকিস! একটু পরেই ওনার হায়ার ম্যাথ ক্লাস আছে!”
ফারিন বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে বলল,,
—”কিইইইই!”
আরা:”জ্বী”

কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরেছেন ইমরান চৌধুরী। হাসনা চৌধুরী তার জন্য লেবুর শরবত তৈরি করে এনে পাশে রাখলেন। ইমরান চৌধুরী তখনও ল্যাপটপে কাজ করছে। হাসনা চৌধুরীকে দেখে মুচকি হেসে বললেন,,
—”কিছু বলবে?”
হাসনা চৌধুরী:”হ্যাঁ বলার তো অনেক কথা আছে!তুমি কি ব্যস্ত?”
ইমরান চৌধুরী চটজলদি একটা কাজ করে ল্যাপটপ অফ করে বললেন,,
—”এবার বলো”
হাসনা চৌধুরী কাচুমাচু করে বললেন,,
—”আসলে হয়েছে কি! আমাদের নির্ঝর তো অনেক বড় হলো ওর বিয়ের ব্যাপারে!”
ইমরান চৌধুরী হেসে পাশ থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে খেতে খেতে বললেন,,
—”ও এই কথা! তা তুমি বললে কালকেই পাত্রী দেখতে যাই!”
হাসনা চৌধুরী:”কি বলো হঠাৎ করে পাত্রী কোথায় পাবে?”

ইমরান চৌধুরী:”কেন তুমি কি ভুলে গেছো? পাত্রী তো ঠিক করাই আছে”
হাসনা চৌধুরী ঠিক মনে করতে পারলেন না ইমরান চৌধুরী কার কথা বলছে। তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।তা দেখে ইমরান চৌধুরী বললেন,,
—”আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মোস্তফা ওর মেয়ে আছে না তার সাথেই তো নির্ঝরের বিয়ে ঠিক করা বহু আগে।”
হাসনা চৌধুরীর এবার মনে পড়লো।মেজর মোস্তফা কামালের কথা। ইমরান চৌধুরীর বহু পুরাতন বেস্ট ফ্রেন্ড। তিনি ইমরান চৌধুরীর দিকে তাঁকিয়ে বললেন,,

—”মোস্তফা কামাল ভাইয়ের মেয়ে মানে পুতুল?”
ইমরান চৌধুরী:”হ্যাঁ এই তো মনে আছে”
হাসনা চৌধুরীর মুখটা কেন যেন মলিন হয়ে গেল। তা দেখে ইমরান চৌধুরী বললেন,,
—”কি হলো হাসনা কোনো সমস্যা?”
হাসনা চৌধুরী:”না..”
ইমরান চৌধুরী:”তাহলে তোমার মুখ এমন মলিন হয়ে গেল কেন?”
হাসনা চৌধুরী:”কিছু না মনে করলে একটা কথা বলি!”
ইমরান চৌধুরী:”হ্যাঁ বলো”
হাসনা চৌধুরী:”আমার না ফারিন মেয়েটাকে অনেক পছন্দ”
ইমরান চৌধুরী:”ফারিন কে?”
হাসনা চৌধুরী:”ওই যে বলছিলাম না নির্ঝরের কলেজের”
ইমরান চৌধুরী:”ওওহ আচ্ছা”
হাসনা চৌধুরী:”তো..”

ইমরান চৌধুরী:”তো তুমি কি শুনতে চাচ্ছ? আগে থেকেই বলি হাসনা মোস্তফা আমার অনেক পুরাতন ফ্রেন্ড আর ওর মেয়েকে যখন বলেছি নির্ঝরের বউ করে আনব তখন পুতুল যে রকমই হোক না কেন সেই এবাড়ির বউ হবে।”
খানিকটা তেজি শোনালো ইমরান চৌধুরীর কন্ঠ। হাসনা চৌধুরী আর কিছু বললেন না কারণ তিনি ভালো করেই জানেন ইমরান চৌধুরী যখন একবার বলেছেন তখন পুতুল ব্যতীত অন্য কেউ এই বাড়ির বউ হতে পারবে না তিনি যতই চান ফারিনকে কোনদিনই নির্ঝরের বউ করতে পারবেন না।

রাতের আকাশের তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে তানিম। একাকী দাঁড়িয়ে আছে ছাদের কর্নারে। সাইডে মোবাইলে গান চলছে,,
“একাকী মন আজ নিরবে…
বিবাগী তোমার অনুভবে..
ফেরারি প্রেম খোঁজে ঠিকানা..
আকাশে মেঘ মানে বোঝো কিনা…”
হঠাৎই পিছন থেকে কেউ তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে। তানিম দ্রুত গান অফ করে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে মেয়েটি আরো জোরে তাকে জড়িয়ে ধরে। তানিম এবার রেগে গিয়ে বলে ওঠে,,
—”কে? ছাড়ো বলছি!”
ফুপিয়ে কেঁদে উঠে মেয়েটি। তানিমা আস্তে করে বলে,,

—”রিমঝিম!”
এবার আর সহ্য করতে পারেন আর রিমঝিম জোরে জোরে কেঁদে ওঠে। তা দেখে তানিম বলে,,
—”ওই কাঁদছিস কেন?”
রিমঝিম কাঁদতে কাঁদতে বলে,,
—”আমি তোমাকে ভালোবাসি তামিম ভাই! পাগলের মতো, আমি মারাই যাবো তোমাকে না পেলে!”
তানিম চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর রিমঝিমকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,
—”পাগলামি করিস না রিমঝিম!”
রিমঝিম:”আমার সব জিনিস যখন তোমার পাগলামি মনে হয় তখন জেনে রেখো আর তোমার ভালোবাসার পাগল তানিম ভাই!”

তানিম:”কি হয়েছে তোর কেমন পাগলামি করছিস কেন?”
রিমঝিম:”নিচে আব্বু আম্মু আমার আর ইফাজ ভাইয়ের বিয়ের কথা বলছেন কিন্তু বিশ্বাস করো তানিম ভাই তোমাকে না পেলে আমি মারাই যাব বাঁচব না আমি দয়া করে আমাকে বাঁচাও।”
তানিম:”ভালো তো ইফাজ ভালো ছেলে, কত বড় ডাক্তার বলতো তুই সারা জীবন সুখে থাকতে পারবি। আর আমাকে বিয়ে করলে কি পাবি আমি না তো কোনোদিন তোকে ভালবাসতে পারব আর না তো সুখ শান্তি দিতে পারব!”
রিমঝিম কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো,,

—”তুমি আমাকে কোনদিন ভালো না বাসো আমি তাই সই! কিন্তু তুমি ব্যতীত অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়!”
তানিম:”পাগলামি করছিস কেন?”
রিমঝিম:”তোমার ভালোবাসার জন্য!”
তানিম:”রিমঝিম!”
রিমঝিম চোখের পানি মুছে বলল,,

—”আচ্ছা তোমার মনে হচ্ছেন আমি পাগলামি করছি! তাহলে জেনে রাখো আমি পাগলামিই করছি। তুমি যদি এ বিয়ে না থামাও তাহলে এখনি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আমি মারা যাব!”
কথাটা বলেই রিমঝিম সব থেকে লাফ দেওয়ার জন্য উদ্ভূত হলো। তখনই পিছন থেকে তানিম ওকে টান দিয়ে নিজের কাছাকাছি নিয়ে এসেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারল ওর বাঁ চোয়ালে। রিমঝিম এবার আর কাঁদলো না বরং অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তানিমের পানে। যে কোনদিন জোরে কথা পর্যন্ত বলে না সেই আজকে ওকে থাপ্পর মারলো! বিশ্বাস হলো না রিমঝিমের। তখনই তানিম বলল,,
—”এখনই যদি নিচে না যাস তাহলে আরও একটা পড়বে তোর ডান চোয়ালে। আর জেনে রাখ শিশির ব্যতীত অন্য কাউকে আমি নিজের বউ হিসেবে কোনদিন মানতে পারব না বুঝতে পেরেছিস!”
রিমঝিমের চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়লো নোনা জল। চটজলদি হাতে তা মুছে সে মলিন হেসে বলল,,
—”বুঝেছি!”
কথাটা কোনরকমে বলেই দৌড় দিয়ে নিচে নেমে গেল রিমঝিম। তানিম রাগীদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রইল তার পানে।

রাত সাড়ে দশটার কিছু বেশি। শিশির কুঞ্জ আজকে পুরো ফাঁকা। সবাই যে যার বাসায় চলে গেছে। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে নিজের বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে সারা দিনের ঘটে যাওয়া সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত গুলোর কথা কল্পনা করছিল শিশির। আজকে নাহিয়ান আর সে মিলে সারা সকাল জুড়ে ঢাকার বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর জায়গা ঘুরেছে। সেইসবই ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে সে তখনই তার ফোনে টুং করে একটা শব্দ হলো। হয়তো মেসেজ এসেছে তা দেখার জন্য শিশির পাশে থাকা ফোনটি হাতে নিতেই সে দেখতে পায় মেসেজ এসেছে নাহিয়ানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে। শিশির চট জলদি উঠে বসে মোবাইল আনলক করতেই দেখতে পায় নাহিয়ানের মেসেজ,,

—”কি করেন ম্যাম?”
ম্যাম.. নাহিয়ানের মুখের এই শব্দটা শিশিরের যে কি ভালো লাগে তা হয়তো সে কোনদিন ব্যাখ্যা করতে পারবে না। সে মুচকি হেসে রিপ্লাই লিখে,,
—”বসে আছি!”
রিপ্লাই সেন্ড হতে না হতেই ওই পাশ থেকে ফের মেসেজ আসে,,
—”একটু কষ্ট করে বেলকনিতে আসতে পারবেন?”
শিশির দ্রুত বিছানা থেকে নেমে রাস্তার ধারের বেলকনির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। রাস্তার ওইপাশে নিজের রোলস রয়ালসের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাহিয়ান। শিশিরকে দেখে সে মুচকি হাসলো। অন্যদিকে নাহিয়ান কে এত রাতে নিজের বাসার সামনে দেখে শিশির তাড়াতাড়ি মেসেজ টাইপ করে বলল,,
—”এত রাতে এখানে কেন?”
সাথে সাথে ওই পাশ থেকে রিপ্লাই,,

—”আপনাকে দেখার জন্য ম্যাম একবার একটু নিচে আসেন!”
শিশির ব্যালকনি থেকে না বোধক মাথা নাড়ালো। তা দেখে নাহিয়ান ফের মেসেজের বলল,,
—”আপনি যদি না আসেন তাহলে কিন্তু আমিই বাসার ভেতরে চলে আসবো!”
শিশির কি করবে বুঝতে পারল না‌। কিন্তু এত রাতে তার পক্ষে কোনো মতেই বাসার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। বাবা মা যদি একবারে দেখে তাহলে হাজারটা প্রশ্ন করবে। আর রিয়াও এখন সম্ভবত পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই কোনমতেই সে বাসার বাইরে যেতে পারবে না। সে মেসেজের দ্রুত টাইপ করলো,,
—”সারাদিন তো একসাথে থাকলাম এখন তো যান। আবার কালকে দেখা হবে বাই”
সাথে সাথে ওই পাশ থেকে রিপ্লাই,,

—”কই সারাদিন শুধু তো সকালটা। আর এমনিতেও আপনি যেহেতু এখন আমার বউ সেহেতু আপনাকে সারাদিন নিজের সামনে বেশি রাখার অধিকার আমার আছে। তাই এখন যেহেতু আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করছে তাই আপনি নিচে আসুন না হলে কিন্তু আমিই উপরে চলে আসব।”
কি করবে বুঝতে পারল না। এই লোকটা সবসময় যন্ত্রণা দিতে থাকে। হয়তো সামনাসামনি নয়তো কল্পনায়। সে বিছানার উপরে গিয়ে বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর 🥀🥀🥀

নাহিয়ান চলে গেছে কিনা তা দেখার জন্য না শিশির গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। কিন্তু রাস্তার ঐ পাশে আর নাহিয়ান নেই, এমনকি তোর গাড়িটাও।তার মানে নাহিয়ান চলে গেছে। শিশির স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। কিন্তু সে পিছন ঘুরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো, ভেসে আসা চন্দন কাঠ,গোলাপ কাঠ আর আগর কাঠের মিশালে তৈরি এক তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে সে বুঝতে পারে এটা নাহিয়ান। বুক ধড়ফড় করে ওঠে তার। তার মানে নাহিয়ান সত্যি সত্যি তাদের বাসায় চলে এসেছে। অন্যদিকে নাহিয়ান কিছু না বলে শিশিরের কোমরে হাত দিয়ে তাকে সামান্য উঁচু করে নিয়ে যায় রুমের ভেতর। তারপর আলতো হাতে রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। তা দেখে শিশির ভীত কন্ঠে বলল,,

—”ক-ক-কি করছেন?
নাহিয়ান তার দিকে তাকিয়ে বলল,,
—”নিজের বিয়ে করা বউয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করছি বুঝতেছোনা জান!”
শিশির:”ক-ক-ক-ক-কিন্তু বাসায় তো বাবা মা আছে!”
নাহিয়ান:”হ্যাঁ তো!”
শিশির:”তো-মানে আপনি কি বলে আমার রুমে এসেছেন?”
নাহিয়ান বাঁকা হেসে বলল,,
—”বলেছি শশুড়আব্বা শাশুড়িআম্মা আপনার মেয়ে বায়োলজিতে দুর্বল তো তাই প্রাকটিক্যাল ক্লাস নিতে যাচ্ছি।”
শিশির:”ইয়ার্কি করবেন না সত্যি কথা বলুন!”

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৪

নাহিয়ান শিশিরের চুলের ভাজে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিতে দিতে বলল,,
—”তোমার কেন মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা কথা বলছি?এটাই সত্যি কথা, আর অনেকক্ষণ পরে নিজের বউকে কাছে পেয়েছি তাই উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে মুড খারাপ করে দিও না।”
শিশির:”কিন্তু..”
আর কিছুই বলতে পারল না সে। নাহিয়ান দ্বিতীয়বারের মতো নিজের অধর দিয়ে তীব্রভাবে দখল করল শিশিরের নরম কোমল ওষ্টদ্বয়। হঠাৎই সবকিছু থমকে গেল। কেবল প্রণয়ের ‌এক দমকা উষ্ণ হাওয়া ছুঁয়ে গেল তাদের।

মাঝরাতের রোদ্দুর পর্ব ৩৬